কোন_সুতোয়_বাঁধবো_ঘর পর্ব-০৩

0
670

#কোন_সুতোয়_বাঁধবো_ঘর
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব-৩
রান্নার সব গুছিয়ে দিয়ে শেফালী বেগমকে ডাকতে গেলে৷ শেফালী বেগম বলে, যাও যাও আরাম করো পাইছো এক ছুতা। আমরা তো আর মা হইনাই। পোলাপান বাতাসে উইড়া আসছে৷ যত কুয়ারা আর ঢং৷
নাদিম সবে মাত্র ঢুকেছে। বোনের সাথে বোনের শ্বাশুড়ির আচরণ দেখে হতবাক।
‘ভাইয়া তুমি কখন আসলা!
‘তা বাবা আসছো একটু কাশি বা টোকা দিয়া তো আসবা। মানুষের বাসায় এভাবে দুম করে কেউ ঢুকে পরে!
‘দরজা খোলা ছিলো আন্টি তাই নক করিনি।
‘হইছে বুঝচ্ছি আসো বসো। ইরহা তোমার ভাইয়ের হাত থেকে ব্যাগগুলো নাও। আর শরবত করে এনে দাও। তা বাবা এতো কি নিয়া আসলা।
‘খাবার নিয়ে আসছি আন্টি। আজকে বাসায় অনেক কিছু রান্না হলো তাই পাঠিয়ে দিলো মা।
‘ও আমরা কি না খেয়ে থাকি!
‘না না তা কেন হবে! মায়ের মন তো। এরজন্য।
‘আমারও মেয়ে আছে কই আমার মনতো এসব কয় না। থাক বাদ দাও। আইছো যখন খেয়ে যেও।
‘না আন্টি বাসায় মেহমান আমাকে যেতে হবে। অন্য এক সময় আসবে।
‘দেহো তোমার যেইডা ভালো মনে হয় করো। এহন কার পেলাপান মুরব্বিদের কথা শুনে নাকি।
ইরহার শরবত বাড়িয়ে দিয়ে বলল, ভাইয়া শরবতটা খাও। খেয়ে উনার সাথে দেখা করবা চলো৷
‘হ্যা-রে রবিনের সাথে দেখা করেই চলে যাবো৷ আয় তুই বস আমার পাশে।
নাদিম রবিনের রুমে এসে রবিনের খোঁজ খবর নিয়ে, আবার বেশি দেরি করলো না। বের হওয়ার আগে ইরহাকে উদ্দেশ্য করে বলে গেলো, ভালো থাকিস বোন।

নাদিম চলে যেতেই শেফালী বেগম তেড়ে এসে বলে,দেখলি তোর বউয়ের কান্ড!বাপের বাসায় ফোন করে খাবার আনাইছে। কে আমরা কি ফকির না খেয়ে থাকি!
‘আম্মা আপনি ভুল ভাবছেন, আমি বলিনি এসব পাঠাতে। মা নিজে থেকে পাঠালো৷
‘আর শাক দিয়া মাছ ঢাকতে হবে না।তোমারে কইছিলাম রান্না গোছাও। ভাবছো তোমারই বুঝি রান্না করা লাগবো। তাই খাবার আনাইছো। আমার চুল কি বাতাসে পাঁকছে বয়স-কি এমনি বাড়ছে? কিছু বুঝিনা ভাবছোে।নিম নিমা সয়তান তুমি।
‘থামো তো মা কি শুরু করলা।খাবারই তো দিয়ে গেছে৷ তাতে কি হইছে।
‘এই তোর কারণে লাই পাইছে। কিছু না বলতে বলতে মাথায় উঠিয়েছিস।এখন আর মায়ের কথা ভালো লাগে না। বউ যা করে তাই ঠিক। হ্যা-রে এই দিন দেখার জন্য তোরে এতো বড় করছি!
রবিন ইরহাকে উদ্দেশ্য করে বলে,তোমাকেও বলি, কিছু হলেই বাপের বাসায় জানাতে হবে কেন! রান্না করতে তোমার এখন সমস্যা হয়। রান্না তো মা-ই করে। তুমি শুধু একটু গুছিয়ে দাও এরজন্য বাপের বাড়ি ফোন দিয়ে খাবার পাঠাতে বলবা!
ইরহা কিছু না বলে কিচেনে চলে গেলো।খাবার গরম করে টেবিলে খাবার সাজিয়ে দিয়ে, রবিনের জন্য নিয়ে গেলো রুমে।
‘খাবার দেখেই রবিন বলে, গেস্টকে খাবার দিয়েছো?

সবার জন্য আমি টেবিলে খাবার দিয়ে তোমার জন্য নিয়ে আসলাম। আচ্ছা আর কেউ তোমাকে দেখতে আসলো না৷ এই মেয়েটা কেন আসলো!
‘ইরহা তুমি এখনো সন্দেহ করছো?
‘দেখো আমি নিজেকে ভুল বোঝাতেই পারি, কিন্তু নিজের চোখকে অবিশ্বাস করবো কিভাবে! জানো চোখ হলো সবচেয়ে নিখুঁত ক্যামেরা। মোবাইলে তোলা ফটো এডিট করে এদিক সেদিক করা যায়। কিন্তু চোখের ক্যামেরা যা বন্দী করে, তা কিন্তু বিন্দু মাত্র নড়চড় হয় না। আবার সেই ছবি সেভ হয় মস্তিষ্ক নামক ম্যামোরিতে। যা চাইলেই ডিলিট করা যায় না৷
‘সম্পর্কে বিশ্বাস থাকা জরুরি, তুমি আমাকে বিশ্বাস করো না!তাহলে কেমন ভালোবাসো?
‘বিশ্বাস আর ভালোবাসা দু’টোই খুব নাজুক বিষয়। ভালোবাসা সহজ হলেও বিশ্বাস করা সহজ নয়। বিশ্বাস অর্জন করা কঠিন তবে তা ধুলোয় মিশিয়ে দেয়া সহজ৷ আর রইলো একে অপরকে বিশ্বাস করার কথা? তুমিও তো আমাকে বিশ্বাস করো না। বললাম আমি বলিনি খাবার পাঠতে, মা নিজেই পাঠিয়েছে। তুমি কি বিশ্বাস করেছিলে?
‘আচ্ছা আমার বউটার অভিমান জমেছে আমার উপর! ছারো তো সব আসো আমাকে নিজ হাতে খাইয়ে দাও।
‘তোমার ওই অফিসের কলিগ যাবে কখন!
‘আমি বলে দিচ্ছি ও খেয়েই চলে যাবে।
‘ও মানে?
‘ইরহা কি শুরু করলে !সব কিছুতে দোষ ধরছো? ভুলে বের হয়ে গেছে মুখ থেকে। তোমাকে একদম এমন মানায় না বউ। তুমি তো আমার সুইট বউ। এবার তাড়াতাড়ি খাইয়ে দাও খুব খিদে পেয়েছে৷


লামা আর শেফালী বেগম একসাথে খেতে বসেছে। দু’জনের মদ্যে ভাব জমে গেছে। খাওয়ার চেয়ে হাসাহাসি বেশি করছে। কথার ফাঁকে লামা হুট করে শেফালী বেগমকে জিজ্ঞেস করে বসে, আন্টি আপনি
রবিন স্যারের জন্য এমন একটা মেয়েকে কিভাবে বউ করে আনলেন!
‘আর বইলো না মা। সব রুপের মায়া৷ দেখোনা দেখতে কত সুন্দর চকচক করে চেহারা। কথা বলে কত ছোট ছোট করে, কি মায়া ভরা মুখ। এসব দেখেই এনেছিলাম। কে জানতো আসলে নিমনিমা সয়তান। তারচেয়ে তোমার মত কেউ বউ হয়ে আসলে, ভালোই হতো।
‘এখনো কিন্তু সময় আছে আন্টি। স্যারকে যে কেউ মেয়ে দেবে।
‘তোমার স্যার করলে তো! তার তো বউ অন্ত প্রাণ। যতসব আদিখ্যেতা
‘তা যা বলেছেন আন্টি কি ঢং এসব সহ্য করার মত না।
‘বাদ দাও তুমি খাও। এসবই আছে আমার কপালে।
ইরহা টেবিল থেকে আরো খাবার নিচ্ছে। এমন সময় লামা বলে, ম্যাম আমি যে খাবারটা এনেছি, সেগুলো দেখছি না যে!
‘সরি, সরি আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম, এক্ষুনি নিয়ে আসছি৷
‘তাতো ভুলে যাবেই। সারাদিন মন যদি বাপের বাড়ি পরে থাকে তাহলে মনে থাকবে কি করে। কঠিন কন্ঠেই কথাগুলো বললেন, শেফালী বেগম।
‘আম্মা সত্যি মনে ছিলো না৷ আমি এখন নিয়ে আসছি।
লামা ন্যাকা স্বরে বলে, আন্টি আমি কত কষ্ট করে রবিন স্যারের জন্য তার পছন্দের, দম বিরিয়ানি, পাবদা মাছের ঝোল,ইলিশ পাতুরি। রান্না করে নিয়ে এসেছিলাম।
‘থাক মন খারাপ করে না। রাতে আমি নিজে রবিনকে তোমার রান্না করে আনা খাবার খাওয়াবো।
‘ধন্যবাদ আন্টি। আপনি অনেক সুইট।

ইরহা কিচেন থেকে লামার খাবার গুলো এনে টেবিলে রেখে রুমে চলে গেলো।
রুমে এসে নিজের মত খাবার খাচ্ছে। আর গভীর ভাবে কিছু ভাবছে।
রবিন বলল,কি ভাবছো এতো মনযোগ দিয়ে?
‘আসলে মস্তিষ্ক আর মনের মধ্যে যদি দ্বিধা তৈরি হয়।তখন নিজের মধ্যে কঠিন যুদ্ধ চলে, আসলে কোনটা সঠিক মনে করবো? যা মস্তিষ্ক বলছে, নাকি যা মন বলছে?
‘তুমি এখনো সকালের ঘটনায় পরে আছো! তুমি এমন কবে হলে?আমি বললাম তো যাস্ট ভুলবোঝাবুঝি। আর কিছু না। ছিহহহহ আমার ভাবতেও ঘৃণা লাগছে। তুমি আমাকে এতো নিচু ভাবছো। তোমার মত বউ থাকতে আমি অন্য কারো সাথে এসব করা তো দূর। ভাবতেও পারিনা।
‘ইরহা কিছু না বলে খাবার শেষ করে কিচেনে সব রেখে এসে,রবিনের পাশে শুয়ে পরলো।

রবিন আলতো করে ইরহার কপালে চুমু খেয়ে বলে,আমার ইরহা থাকতে আমার আর কাউকে দরকার নেই। আর একটুও মন খারাপ করে থাকবে না।
‘ইরহা শান্ত স্বরে বলল,মেয়ে মানুষের মন মমের মত। আর পুরুষ মানুষ দেশলাইকাঠি। তোমরা প্রথমে আগুন জ্বালাও। তারপর আবার ফু দিয়ে নিজেরাই নেভাও।আমরা তো জ্বলে শেষ হই আবার আদরে গলে যাই। তাই খুব সহজ আমাদের বোকা বানানো।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে