কোন_সুতোয়_বাঁধবো_ঘর পর্ব-২১+২২

0
650

#কোন_সুতোয়_বাঁধবো_ঘর
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -২১

আপনার সাহসতো কম না বাসা পর্যন্ত চলে এসেছেন?
‘আপনি এমন কেন? দরজায় অতিথি দাঁড়িয়ে আছে কোথায় তাকে ভেতরে নিয়ে বসতে দিবেন, তা-না করে ঝগড়া করছেন? ভেতরে আসতে দিন, ঠান্ডা মাথায় দুটো কথা বলি।
‘আপনার সাহস দেখে আমি অবাক হচ্ছি! একে তো হুট করে চেনা নেই জানা নেই একজনের বাসায় চলে এসেছেন।আবার বলছেন ঠান্ডা মাথায় কথা বলবো। এক্ষুনি চলে যান, নয়তো ত্রিপল নাইনে কল করবো।
‘আশ্চর্য আমি কি অপরাধী নাকি? এসেছে সু সংবাদ নিয়ে। আপনার বাসায় আপনি ব্যাতিত মুরুব্বি যারা আছে ডাকুন।আঙ্কেল আন্টি এনারা কোথায়?
‘ইরহা দরজা বন্ধ করে দিতে চাইলে। জারিফ দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে আন্টি, আন্টি বলে ডাকাডাকি শুরু করলো।
‘ফরিদা বেগম সামনের রুমে এসে অনেক সময় ধরে জারিফের মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে বলে, তোমাকে তো চিনলাম না বাবা!
জারিফ ফরিদা বেগমের কোল থেকে নওশাবাকে কোলে নিয়ে বলে, আন্টি আমি এই সুইট,কিউট বাচ্চাটার হবু চাচ্চু।
‘কি বলো বাবা, তোমার কথা তো কিছুই বুঝলাস না!
‘মা এই লোক পাগল, দ্রুত আমার মেয়েকে দিন।তাড়াতাড়ি দিন৷
‘এই একদম ঝগড়া করবেননা৷ আন্টি আমি সুস্থ একজন মানুষ। আপনার এই অসুস্থ মেয়ের জন্য আমার ভাইয়ের বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছি।
নওশাবা জারিফের শার্টের বাটন নিয়ে খেলায় ব্যাস্ত।

‘এসব তুমি কি বলো বাবা? আমার ডিভোর্সি মেয়ে আমার এক বাচ্চার মা।মাস ঘুরলো সবে ডিভোর্সের এহনি বিয়ের প্রস্তাব?
‘ আন্টি আমার ভাই আপনার মেয়েকে পছন্দ করে,সব জেনেই ও বিয়ে করতে রাজি।আর সবচেয়ে বড় ব্যাপার এই কিউট সদস্যকে আমার খুব পছন্দ হয়েছে নাম কি ওর?
‘নওশাবা
‘বাহহহ ভারি মিষ্টি নাম তো। তাহলে আন্টি আমরা পাঁকা কথা বলি।
‘আচ্ছা তোমার ভাই কি করে?
‘জরিফ একটু চুপ করে থেকে বলে, বিজনেস আমাদের ফ্যামিলি বিজনেস আন্টি।
‘বাসায় আর কে কে আছে তোমাদের?
‘বাসায় কে কে আছে বলতে,আমি আর আমার ভাই,বাবা,মায়ের মৃত্যুর পর আমরাই আছি আমাদের।
“ইরহা ট্রেতে করে চা আর বিস্কুট সাজিয়ে এনে বলে,এতো কথা বলছেন, আগে চা টুকু খেয়েনিন৷ আপনার জন্য স্পেশাল জাপানি চা।
‘এসবের কোন দরকার নেই, আমার আপনার সাথে একটু কথা ছিলো।
‘কথা তো কত বলতে পারবো আপনি চা পান করুন।
নওশাবাকে আমার কাছে দিন।

নওশাবে কোলে নিয়ে বলে, মা তুমি একটু রুম থেকে নওশাবার মাম পট-টা এনে দাও তো। আমি ততক্ষণ ওনার সাথে কথা বলি৷
‘ফরিদা বেগম চলে যেতেই ইরহা বলে, চা যত গরম খাওয়া যায় তত মজা৷ ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে দয়া করে পান করুন।
‘জারিফ চায়ে প্রথম চুমুক দিতেই পুরো মুখ জ্বলে উঠলো। সাথে সাথে উঠে দাঁড়িয়ে ইশারায় জিজ্ঞেস করছে বেসিন কোন দিকে।

ইরহা নির্লিপ্ত ভাবে দাঁড়িয়ে আছে। আর ভাবছে এতো কষ্টকরে ব্লেন্ডারে কাঁচামরিচ ব্লেন্ড করে তার সাথে পানি মিশিয়ে সেই পানি ছাকনী দিয়ে ছেকে নিয়ে দু’ধ আর চা পাতি মিশিয়ে স্পেশাল জাপানি চা বানালাম। এই চুমুক তো গিলতেই হবে।
‘ঝালে জারিফে চোখে পানি চলে এসেছে। সামনে তাকিয়ে দেখে এক গ্লাস শরবত রাখা দ্রুত গ্লাস উঠিয়ে এক ঢোক গিলতেই খবর হয়ে গেলো৷ নাক ঠোঁট লাল হয়ে গেছে। শরবতেও ট্যাংয়ের সাথে মরিচের গুড়ো মিশিয়ে দিয়েছিল।
‘ঝালে কথাও বলতে পারছে না। চোখ দু’টো লাল হয়ে আছে। কোনমত বলল আপনার মত দস্যি মেয়েকে কোনদিন আমার নিরীহ ভাইয়ের বউ করবো না।
‘আপনার ভাই তো ভালো কথা আর কোন পুরুষের ছায়াও পরতে দেবো না আমার জীবনে৷ ভালোয় ভালোয় চলে যান।

জারিফের রাগ আর কন্ট্রোল করতে না পেরে বলে,ছেলেদের ছায়া পরতে দেবেন না সেটা আগে মনে ছিলো না! একটা হাঁটুর বয়সি ছেলের সাথে রিলেশন করতে পারেন আর বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছি বলে নাকানিচুবানি খাওয়াবেন।মেয়েরা মায়ের জাত তাই সম্মান করি। নয়তো এর ফল আপনাকে বুঝিয়ে দিতাম। বলেই লম্বা লম্বা পা’ফেলে চলে গেলো জারিফ।
‘ইরহা বোকার মত তাকিয়ে থেকে বলে, কি বলে গেলো?

ফরিদা বেগম এসে বলে,এসব কি ঠিক হলো ইরহা?ছেলেটাকে দেখে ভদ্রই মনে হয়। কেন শুধু শুধু ছেলেটাকে নাজেহাল করলি?পুরো কথাটা শুনেতো নিবি যে কি বলতে চায়? হতে পারে অন্য কাউকে ভেবে তোর ঠিকানা বা আমাদের বাসায় চলে এসেছে?

‘ইরহা রাগের মাথায় এসব করলেও এখন মনে মনে অনুতপ্ত হচ্ছে। আসলেই একটু বেশি বেশি হয়ে গেলো।

✨নিশাত আর নাদিমের বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত ন’টা বাজলো।
নিশাত সবার সাথে হেসে হেসে কুশল বিনিময় করছে।

‘ফরিদা বেগম অবাক হলেও মুখে কিছু প্রকাশ করলেননা৷ অন্য সময় নিশাত বাপের বাড়ি থেকে ফিরলে তিন চারদিন কারো সাথে ঠিক ভাবে কথাই বলতো না।
রাতে খাওয়া দাওয়া শেষ করে সবাই ঘুমের প্রস্তুতি নিচ্ছে৷

লাবিবা সোফার রুমে পড়তে বসেছে। ইরহা নিজের রুমে মেয়ের সাথে দুষ্টমি করছে। যে যার মত ব্যাস্ত।

লাবিবা পড়ার ফাঁকে ফোন হাতে নিয়ে ফেসবুকে ঢুকতেই চোখে পরলো। রাতুল একটা মেয়ের সাথে রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস দিয়েছে৷ লাবিবার চোখ থেকে অশ্রু ঝড়তে লাগলো। চোখ বন্ধ করতেই রাতুলের সাথে বিভিন্ন স্মৃতি ভেসে উঠলো চোখের সামনে। হুট করে পড়া ছেড়ে কিচেনে এসে ছু’ড়ি নিয়ে নিজের ডান হাতের রগে টান দিলো। সাথে সাথে র’ক্তের ছড়াছড়ি। চিৎকার করে বলে,তুমি আমাকে ঠকিয়েছো এটা আমি মানতে পারবো না৷
লাবিবার চিৎকার শুনে ইরহা, ফরিদা বেগম, নাদিম নিশাত সবাই ছুটে এলো।

নাদিম দ্রুত লাবিবাকে কোলে তুলে নিলে, নিশাত নিজের ওড়না লাবিবার কা’টা জায়গায় বেঁধেদিলো৷ কোনমতে কষ্ট করে লাবিবা বলল,আমাকে ক্ষমা করে দিও তোমরা আমাকে ক্ষমা করে দিও। আর কিছু বলতে পারলো না।


জারিফ রাতুলের রুমে এসে বলে,ওই মেয়েকে ভুলে যা৷ এতোকিছুর পর ওই মেয়েকে বিয়ে করার প্রশ্নই উঠে না৷ ওই মেয়েকে ভুলে যা তোকে ভালো মেয়ে দেখে বিয়ে করাবো৷ এবার এসব থেকে বের হয়ে ঘুমা।
জারিফ এসব বলে চলে যেতেই রাতুল ওর ক্লাসমেট সনিয়ার সাথে রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস দিয়ে রাতুল মুচকি মুচকি হাসছে আর বলছে, এবার দেখি তুমি কি করে জেলাস না হও। এবার ঠিক তুমি ইনবক্সে আসবে,আর তখন তোমাকে জিজ্ঞেস করবো আমার ভাইয়ার সাথে এসব করার সাহস তুমি কোথায় পেলে? ভালোবাসো না বিয়ে করবে না, সুন্দর করে বলে দিলেই পারতে! আমার ভাইয়ার সাথে বাজে ব্যাবহার করার সাহস তোমার কি করে হলো এই উত্তর আমাকে দিতেই হবে?


লামা নিজের রুমে দরজা বন্ধ করে বসে, বসে হাউমাউ করে কাঁদছে। কে বা কারা লামার ন্যাুড ভিডিও নেট দুনিয়া ছেড়ে দিয়েছে। আর এসব মানেই মূহুর্তে ভাইরাল। কতজনের সাথে রাত যাপন করেছে কে এই কাজটা করলো। একা একা বাড়িতে অন্ধকারে বসে থেকে অনেক কান্নাকাটি করে ভাবে আমি এই মুখ আর কাকে দেখাবো কিভাবে সমাজে চলবো? রবিন ও আমাকে জায়গা দেবে না। মা,বোন দূর দূর করে তাড়িয়ে দিলে, তাহলে এ জীবন রেখে আমি কি করবো? আমার কাছে এখন একটাই রাস্তা খোলা আর সেটা ছাড়া কোন পথ নেই। আমি যা পাপ করেছি তার শাস্তি কি এতোটাই ভয়ানক যে আমার জীবন ছাড়া এর মূল্য চুকানো যাবে না! সবাই আমাকে ছিহহহ ছিহহ করবে।
রবিন প্রায় বাড়ির কাছে আসতেই রুবেলের মেসেঞ্জার থেকে রবিনের কাছে কিছু ভিডিও বার্তা এলো৷ নিচে লেখা…. ব্রো ব্যাবসা মন্দা বলে,বউ দিয়ে রমরমা ব্যাবসা চালাচ্ছো আমাদের বললে তো বাহিরের কাস্টমারের কাছে ভাবিকে যেতে হতো না৷ আর এভাবে মানসম্মান শেষ করতে হতো না৷
ভাবি কিন্তু অনেক হট৷ তুই চাইলে আমি এখনো রাজি টাকা যা লাগে দেবো।

#চলবে

#কোন_সুতোয়_বাঁধবো_ঘর
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -২২

‘লাবিবার মাথার পাশে বসে আছে ইরহা৷ দ্রুত হসপিটালে নিয়ে আসার৷ কারনে তেমন কোন ক্ষতি হয়নি।
ইরহা নরম কন্ঠে বললো, এইটুকুতেই তুই জীবন শেষ করে দেয়ার ডিসিশন নিলি! অথচ আমাকে দেখ এরচেয়ে কত খারাপ সিচুয়েশন পার করেছি৷ তখন মনে হতো আমার সাথে কেন এসব হচ্ছে! আমার সাথে তো এসব হওয়ার কথা না। আমি কতটা যন্ত্রণা সহ্য করে টিকে আছি কল্পনাও করতে পারবি না।এতো কষ্টের মধ্যেও কখনো নিজেকে শেষ করে দেবো এই চিন্তাটা আসেনি। আসলে কি জানিস, তোদের এই জেনারেশনটাই এমন, কথায় কথায় সু’ই,সা’ড। ‘তোদের কাছে জীবনটা মূল্যহীন তাই না? ভাালোবাসার মানুষকে পেলাম না আমার জীবন রেখে কি হবে? অথচ যে নিজেকে-ই ভালোবাসতো পারে না সে আবার অন্যের ভালোবাসার জন্য জীবন দেয়!বাবা কটু কথা বললো,মা শাসন করলো,বোন বকাঝকা করলো, এটা দিলো না ওটা পেলাম না। ব্যাস ঝুলে পরে নয়তো কোন না কোন ভাবে নিজেকে শেষ করেই দেয়। এটাই কি সমাধান?যারা এতো বছর ভালোবাসা দিয়ে আগলে রাখলো, তাদের ভালোবাসার কোন মূল্য নেই!
‘লাবিবা চুপ করে সব শুনে যাচ্ছে……
জীবনে এমন কিছু মূহুর্ত আসে,যখন অনেক কিছু বলার থাকলেও সেসব শব্দ হয়ে বের হয়না।সবটা বুঝেও আমরা চুপচাপ মেনে নেই, মানিয়ে নেই। তর্কে যাই না।এটা ঠিক, এটা ভুল এই কথাটুকুও বলতে ইচ্ছে করে না। আমরা নিশ্চুপ হয়ে যাই পুরোপুরি। বাকশক্তি থাকার পরেও যেনো আমরা বাকহীন।

এই মূহুর্তে লাবিবারও কিছু বলার ভাষা নেই।

ইরহা উঠে আসলো,নওশাবাকে নিয়ে সে এখন বাসায় চলে যাবে৷ বাকীরা সকালে আসবে। হসপিটালের গেটে এসে থমকে গেলো৷ এতো রাতে কি করে যাবে!তারচেয়ে থেকেই যাবে রাতটুকু।
রাত তখন প্রায় তিনটে হসপিটালের বাহিরের এক বেঞ্চে মেয়েকে নিয়ে বসলো। আকাশে পূর্ন চাঁদ, তারার সমারোহ, চারপাশে লাইটিং আরো কত কিছু আর কত আয়োজন এতো সব কিছুর মধ্যেও ইরহার বুকে এক আকাশ শূন্যতা। ইরহা মনে মনে বলছে….. এই তীব্র কষ্টে আমার একটা জড়িয়ে ধরে কাঁদার মত বক্ষ নেই। এই যে ইচ্ছে করছে কাউকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদি,কিন্তু আমার যে আমি ছাড়া কেউ নেই।
মানুষ যতই বলুক একাকীত্ব সুন্দর, তবুও নিজের একটা মানুষ লাগে।যার কাছে দিনশেষে নিজেকে খুচরো পয়সার মত জমা রাখা যায়।এই হাহাকার শোনার মত কোন মানুষ নেই।চোখের পানি মুছে দিয়ে বলবে,আমি আছি তো এতো চিন্তা কিসের এমন মানুষের শূন্যতা আমার এ জনমে আর ঘুচবে না।
নওশাবার নিষ্পাপ মুখের দিকে তাকিয়ে বলে,আমি খুব সাধারণ একটা মেয়ে,আমার স্বপ্নগুলোও ছিলে খুব ছোট, ছোট। কিন্তু কখনো ভাবিনি সেই ছোট স্বপ্নগুলো কোনদিন পূর্নতা পাবে না। তবে তোর ছোট,বড় সব স্বপ্ন আমি পূরণ করবো। আমি যা সহ্য করছি, সে আঁচ তোকে লাগতে দিবো না।
‘একজন নাইট গার্ড এসে বলে,এখানে রাতে থাকা যাবেনা। আপনি বরং পেশেন্টের কাছে যান। ইরহা উঠে হাঁটা শুরু করলো।


রুবেলের মেসেজ দেখে রবিন জোড়ে জোড়ে পাগলের মত হাসতে লাগলো। রাস্তায় সময় নষ্ট না করে দ্রুত বাসায় আসলো। মনের মধ্যে পৈশাচিক আনন্দ। বাসায় ঢুকে লামা, লামা বলে ডাকতে লাগলো। লামার উত্তর না পেয়ে নিজেই রুমে আসলো। লামা হাঁটুতে মুখ গুঁজে কাঁদছে। রবিন কোন কিছু না জানার ভান করে লামার কাছে এসে বলে,কি হয়েছে বাবু? পিরিয়ড তাই পেটে ব্যাথা।
‘এই মূহুর্তে রবিনের এমন স্বান্ত আচরণ লামার মনের মধ্যে ভীতি তৈরি করলো। লামা ভয়ে মাথা তুলছে না।
রবিন লামার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,আমাকে বলবা তো জান কি সমস্যা হচ্ছে।
‘লামা রবিনকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কান্না শুরু করে। রবিনের ইচ্ছে করছে এই মূহুর্তে লামাকে উচিৎ শিক্ষা দিতে কিন্তু সে তা করবে না। তার পরিকল্পনা আরো ভয়ংকর।
‘কান্না বন্ধ করে আমাকে বলো কি হয়েছে।
‘আমার অনেক বড় ভুল হয়েছে রবিন’ প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দাও। জানি এই ভুলের ক্ষমা নেই তবুও ক্ষমা করে দাও সারাজীবন তোমার গোলাম হয়ে থাকবো।
‘আহা বাবু তুমি হলে রানী তুমি গোলাম কেন হতে যাবে। বলো আমাকে হয়েছেটা কি?

লামা কাঁপা কাঁপা হাতে নিজের ফোন থেকে ভিডিও অন করে দেখালো।
‘রবিন বলে এই সামান্য সমস্যার জন্য তুমি এভাবে কান্নাকাটি করছো!এসব যে ফেইক ভাবে বানানো যায় আমি জানি। যাও তো উঠো ফ্রেশ হয়ে আসো,কাচ্চি নিয়ে এসেছি দু’জনে গরম, গরম খাবো।
লামা মূহুর্তের মধ্যে হেসে বলে,আমি জানতাম তুমি বুঝবে এসব ফেইক। তোমার বন্ধুরা আমাকে বাজে প্রস্তাব দিয়েছিল, আমি রাজি হইনি তাই আমার মান সম্মান নষ্ট করার জন্য এসব করেছে৷
‘বাদ দাও যাও ফ্রেশ হও খেয়ে ঘুমাতে হবে সকাল আটটার টিকিট কেটেছি আমরা কাল কক্সবাজার যাচ্ছি সব কিছু গোছাতে হবে তো।
সুন্দর ভাবে খেয়ে সব কিছু গুছিয়ে লামাকে জড়িয়ে নিয়ে ঘুমিয়ে পরলো।নারীর ছলনা যেমন ভয়ংকর তার চেয়ে বেশি ভয়ংকর পুরুষের প্রতিশোধ।

✨বেশ বেলা করে ঘুম ভাঙলো রাতুলের,চোখ খুলেই ফোন অন করে দেখে অনেকগুলো মিসডকল। রাতুল দ্রুত কল ব্যাক করতেই ওপাশ থেকে লাবিবার ফ্রেন্ড রাতের ঘটনা খুলে বলে। রাতুল দ্রুত ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে পরে৷

জারিফ আজ বেশ ভোরেই বের হয়েছে আজকে একটা ইম্পরট্যান্ট মিটিং আছে। মিটিং শেষ করে নিজের কেবিনে বসে রাতুল কে কল করলো।
বেশ খানিক ক্ষন পর রাতুল কল রিসিভ করে বলে,ভাইয়া লাবিবা সু’ই’সা’ইড করেছিল।সব দোষ আমার এসব আমার জন্য হয়েছে ভাইয়া৷
‘রিলাক্স লাবিবা এখন কোথায়? আর তুই কোথায়?
‘আমি লাবিবাকে দেখতে ওদের বাসায় যাচ্ছি তুমিও আসো। বলেই কল কেটে দিলো৷
জরিফ নিজেও দ্রুত বের হয়ে গেলো। জারিফ ভাবছে লাবিবা হয়তো আর বেঁচে নেই। জারিফের মায়া হচ্ছে ছোট বাচ্চাটার জন্য। মনে, মনে বলে,কালকেই কত ইগো দেখালো আর আজ সু’ই’সাইড! নিজের মেয়েটার কথা তো ভাববে ইশশ বাচ্চা মেয়েটা।


আজকে ইরহার জয়েনিং সবার সাথে বাড়ি ফিরে ফ্রেশ হয়ে ফ্রীজ থেকে পাউরুটি বের করে কোনমত একটা খেয়ে নওশাবাকে আদর করে বের হয়ে গেলো৷
নাদিম লাবিবার সাথে কোন কথা বলেনি৷নিজের বোনদের ভালোবাসায় কোন ত্রুটি রাখেনি। যখন যা চেয়েছে নিজের সাধ্য মত তখন তাই এনে হাজির করেছে।

নিশাত নাদিমের কাঁদে হাত রেখে বলে,ছোট মানুষ ভুল করে ফেলেছে রাগ না করে বুঝিয়ে দাও। তাহলে ভুলটা বুঝতে পারবে।

নাদিম নিশাতকে জড়িয়ে ধরে বলে,জানো এক মূহুর্তে জন্য আমার পৃথিবী থমকে গিয়েছিলো। ছোট বেলা থেকে কোলে পিঠে করে আদর স্নেহ দিয়ে বড় করেছি। কখনো কোন ইচ্ছে অপূর্ন রাখিনি আর সেই বোনকে মৃত্যুর মুখে দেখে আমার কি অবস্থা হয়েছিলো একবার বুঝো।
‘শোন বয়স কম তো তাই আবেগে গা ভাসিয়ে এমন উদ্ভট কাজ করে ফেলেছে। এবার বুঝিয়ে বলে দাও আর জীবনে এমন কাজ করবে না।

‘ফরিদা বেগমও একটাও কথা বলেনি, লাবিবার সাথে।মানুষ বলে আদরে বাঁদর তৈরি হয় আজ তার তাই মনে হচ্ছে। পরিবাবের সবার নয়নের মনি সবাই ওকে বেশি ভালোবাসতো কারণ ও বাবার আদর পায়নি৷ আর সেই মেয়ে কিনা এমন একটা কাজ করলো!
লাবিবা নিজের মায়ের হাতের উপর হাত রেখে বলে,ওমা’ মা’ আমাকে ক্ষমা করে দাও আর কখনো এমন ভুল হবে না। মা’শেষ বারের মত আমাকে ক্ষমা করে দাও।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে