কোন_সুতোয়_বাঁধবো_ঘর পর্ব-১৯+২০

0
646

#কোন_সুতোয়_বাঁধবো_ঘর
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -১৯
নিশাত তার ভাইয়ের পাশে বসে আছে, মঞ্জু বললো,কিরে বোন তোর মুখ এমন হয়ে আছে কেন? দেখে মনে হচ্ছে খুব কান্নাকাটি হয়েছে!
‘নাহহহ ভাইয়া কান্না করবো কেন!
তোহা একটু দূরেই দাঁড়িয়ে আছে, নিশাতের কথা শুনে মনে মনে বলে,কি হলো এখনো ন্যাকা কান্না জুড়ে দিয়ে বিচার দিচ্ছে না কেন?
‘এখন কি ভাইয়ার কাছ থেকে কথা লুকাবি?
‘আগামীকাল সকালে চলে যাবো তো তাই একটু মন খারাপ।
‘ওহহহ এই ব্যাপার, তাহলে নাদিমকে কল করে বলে দেই আর কয়েকদিন পর নিতে আসতে।
‘নাহহহ যেতে হবে ভাইয়া, অন্যের বাসায় কতদিন থাকবো?
‘অন্যের বাসা মানে? এই বাসা তোর ছিলো তোর আছে, তোরই থাকবে।
‘নাহহ ভাইয়া বিয়ের পর মেয়েদের বাপের বাড়ি হয়ে যায় পর৷ তখন সেখানে আমরা মেহমান।
‘নিহা নিশাতকে তোমরা কেউ কিছু বলেছো?
‘আসলে তোহা ভুল করে বলে ফেলছে। ও আর কখনো এমন ভুল করবে না।
‘তোহা এদিকে এসো।
‘জ্বি ভাইয়া।
‘তোমারও বিয়ে হয়েছে, তুমিও এ বাড়ির একজন। তাই বলে, তোমার বাবার বাড়ি তোমার জন্য পর হয়ে যাবে?
‘আসলে ভাইয়া আমি ওইভাবে বলতে চাইনি।
‘এ বাড়ির মানুষ স্বার্থে আঘাত লাগলে তোমাকে পর করে দিতে দু’বার ভাবে না। কিন্তু তোমার বাড়িতে কেউ তোমাকে ফেলে দিবেনা৷ যত যাইহোক তোমার বাবা, মা’য়ের কাছে সব সময় তোমার আশ্রয় অক্ষুণ্ণ। আমার বোন আমাদের দুই ভাইয়ের অনেক আদরের। তাই ওরসাথে কখনো বাজে ব্যাবহার করবে না। বছরে এক,দু’বার আসে এ বাড়িতে এই কয়েকদিন তোমরা সহ্য করে নেবে। আর যদি সহ্য না করতে পারো যতদিন নিশাত এ বাড়িতে থাকবে ততদিন তোমরা ওই বাড়িতে থাকবে। আমার বোন সারা বছর এখানে এসে বসে থাকবে না।
‘সরি ভাইয়া আর কখনো এমন হবে না।

সবার কথার মাঝেই কলিং বেল বেজে উঠলো, নিশাত বললো,তোমাদের জামাই এসেছে মনে হয়৷ ওর সামনে কেউ এসব কথা বলবে না। আগামীকাল সকালে চলে যাবো। দরকার পরলে কিছুদিন পর আবার আসবো।
‘নাদিম বেশ অনেক কিছু নিয়ে এসেছে, শ্বশুর বাড়ি বলে কথা দু’হাত ভরে নিয়ে এসেছে। তারাও তো কম আদর যত্ন করে না।একসাথে সবার সাথে খাবার খেয়ে রুমে আসলো, রুমে এসেই নিশাতকে জড়িয়ে ধরে বলে,আজ আমার বউটার কি হয়েছে বলো দেখি!
‘কি হবে?
‘তুমি তো এভাবে কখনো বলো না।
নিশাত নাদিমকে জড়িয়ে ধরে বলে,আজকে তোমার প্রতি ভালোবাসা উতলে উঠেছে বুঝলে।
‘নাদিম পর পর কয়েকটা চুমু খেলো নিশাতের গালে, কপালে, ঠোঁটে। নিশাত রবিনকে আর একটু গভীর আলিঙ্গন করে বলে,আমাকে ক্ষমা করে দিও, এতোদিন তোমার মা,বোনদের সাথে কত বাজে ব্যাবহার করেছি।
‘নাদিম অবাক হয়ে বলে,বিবিজান আপনি সত্যি বলছেন!
‘এভাবে অবাক হবা নাতো,সত্যি বলছি আর কখনো এমন হবে না। কত ভাগ্য করে এমন একটা শ্বাশুড়ি আর ভালো মনের দুটো ননদী পেয়েছি, এবার থেকে তাদেরকে নিজের বোনের মত আগলে রাখবো।আমার নিজের তো আপন বোন নেই।
‘নাদিম নিশাতে কোলে তুলে নিয়ে বলে,বিবিজান এইদিনটার অপেক্ষায় ছিলাম। আজকে তোমাকে ভালোবাসার জোয়ারে ভাসিয়ে নিয়ে যাবো জান৷


রবিন আর লামার মধ্যে সম্পর্ক চলছে নামের চলা। এরমধ্যেই বেশ ঋণের মধ্যে পরেছে রবিন৷ তবে সেদিকে কোন ভ্রূক্ষেপ নেই রবিনের। তার মাথায় চলছে অন্য কিছু।
অন্যদিকে টাকার নেশায় একের পর এক পরকীয়া জড়িয়ে পরেছে লামা৷ যেনো ঠিক ভুল সেই বিষয়টি আর তার মধ্যে নেই৷সকাল আটটা বাজে ঘুম থেকে উঠে খাবার টেবিলে যেয়ে বসলো।
শেফালী বেগম লামার জন্য কফি,পরোটা আর অমলেট এনে প্লেটে সাজিয়ে দিলেন।
‘রবিন গেস্ট রুম থেকে বের হয়ে বলে,বেবি আর একটু ঘুমিয়ে নিতে এতো তাড়াতাড়ি উঠে গেলে? রাতের দু’টো পর্যন্ত পার্টি করে এসে দিনের একটা পর্যন্ত অনন্ত ঘুমাবে তো! নয়তো শরীর খারাপ করবে৷
‘আমি ভাবছিলাম কি চলো আমরা সিলেট থেকে একটু ঘুরে আসি। কি বলো?
‘আমি ভেবে রেখেছি আমরা কক্সবাজার যাবো।
আর হ্যা মা’তুমি রেডি হও তো তোমাকে এক্ষুনি রুবির বাসায় দিয়ে আসবো।একাএকা বাসায় থাকতে হবে না তোমার।
‘শেফালী বেগম কোন কথা না বলে চুপচাপ রেডি হতে চলে গেলেন। এ বাড়িতে তারও আর ভাল্লাগে না। শখের সংসার থেকে তার মন উঠে গেছে। দিনের পর দিন ইরহা তাকে কত সেবা যত্ন করেছে, আর বিনিময়ে তাকে কষ্ট দেয়া ছাড়া আর কিছুই দেয়নি৷ আজ বুঝতে পারছে,মুরুব্বিরা যে বলতো, একটা মেয়ে চাইলে যেমন সংসারকে সুখে ভরিয়ে দিতে পারে ঠিক একটা মেয়েই যথেষ্ট একটা সংসারকে অশান্তিতে তলিয়ে দেয়ার জন্য। নিজের কর্মে নিজেই অনুতপ্ত। মনে মনে ভাবলেন যাওয়ার আগে একবার নাতনীটাকে দেখে যাবে আর ইরহার কাছে ক্ষমা চাইবে।


ইরাহা কিচেনে নাস্তা বানাতে ব্যাস্ত বাকিরা সবাই ঘুমে। সবে সকাল আটটা বাজে। নাস্তা বানানো শেষ করে শাওয়ার নিলো, আজ অনেক দিন পর ফরিদা বেগমের একটা কাঁচা হলুদ আর কালো রঙের মিশ্রণে জামদানী শাড়ী পরলো। ফর্সা শরীরে ইরহাকে বেশ মানিয়েছে শাড়ীটায়। ইরহাকে দেখলে বোঝার উপায় নেই এক বাচ্চার মা। এখনো এতো রূপবতী। যদিও ইদানীং টেনশনের ফলে চোখের নিচে কালচে দাগ পরতে শুরু করেছে। শাড়ীর কুচি ঠিক করতে করতে বসার রুমে আসতেই কলিং বেল বেজে উঠলো, ইরহা দরজা খুলে দিতেই রবিন আর শেফালী বেগমকে দেখে, মূহুর্তে চেহারার রঙ পাল্টে যায়।
‘আপনার লজ্জা নেই আবার বাসায় চলে এসেছেন!
‘শেফালী বেগম বললো,মা আমি এসেছে, তোমাকে বিরক্ত করবো না৷ আমার নাতনীর মুখটা একটু দেকেই চলে যাবে। আর কোনদিন তোমাকে বিরক্ত করবো না।
‘রবিন ইরহার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে কোমড় সমান চুলগুলো ছড়িয়ে আছে, দেখেই বোঝা যাচ্ছে সদ্য শাওয়ার নিয়েছে৷ পরনে শাড়ী অপরুপা লাগছে ইরহাকে।
‘ইরহা বললো,আন্টি আপনি চাইলে ভিতরে আসতে পারেন তবে আপনার ছেলেকে ভেতরে ঢুকতে দেয়া হবে না।
রবিনের ইচ্ছে করছে একছুটে ইরহাকে নিজের বাহুতে আবদ্ধ করে নিতে।”কয়লার পিছু ঘুরতে, ঘুরতে হিরে যে হারিয়ে ফেলছে,সেদিকে নজর ছিলো না!!
শেফালী বেগম বাসায় প্রবেশ করতেই ইরহা দরজা বন্ধ করে দিলো।
নওশাবা তখনও ঘুমে, ইরহা নওশাবাকে কোলে তুলে নিয়ে এসে শেফালী বেগমের কোলে দিলো,নওশাবার চেহারার সাথে রুবির চেহার অনেক মিল। শেফালী বেগমের চোখ দুটোতে অশ্রু টলমল করছে। নিজের নাতনীকে চুমু খেলেন, গালের সাথে গাল মিলিয়ে রাখলেন,ততক্ষণে চোখের কার্নিশ বেয়ে নোনা জল গড়িয়ে পরতে লাগলো। শেফালী বেগম ইরহার কোলে নওশাবাকে দিয়ে বলে,পারলে এই বুড়ো মা’টাকে ক্ষমা করে দিও। তোমার সাথে যা অন্যায় করেছি, তার শাস্তি এখন কড়ায়গণ্ডায় ফেরত পাচ্ছি৷ নিজের ব্যাগ থেকে ,স্বর্নের চেইন, আংটি, ব্রেসলেট, চুড়ি বেড় করে ইরহার হাতে দিয়ে বলে,আমার নাতনীর জন্য এসব,তুমি কিন্তু মানা করতে পারবে না।
‘ইরহা বলে,আন্টি এসবের দরকার নেই আমার মেয়েটার জন্য দোয়া করে দিন তাতেই হবে৷
‘দোয়াতো সব সময় করি, এগুলো আমার স্বামী আমাকে বানিয়ে দিয়েছিল, আমি আমার নাতনীকে দিলাম৷ ভালো থেকো মা।
‘আপনিও ভালো থাকবেন,নিজের খেয়াল রাখবেন,সময় মত মেডিসিন নিবেন।
‘শেফালী বেগম কিছু বললো না, চলে আসলো। কি বলবে,কি-ই বা বলার আছে।
‘শোফালী বেগমকে দেখেই রবিন বলে,কি হলো,মা রাজি করাতে পারলে ইরহাকে?ওকি আসতে রাজি হয়েছে। এই প্রথম শেফালী বেগম নিজের ছেলেকে চড় মারলেন। রাগান্বিত স্বরে বললেন,বিয়েটাকি তোর কাছে ছেলে খেলা মনে হয়! তালাক হয়ে গেছে তোদের ইরহাকে আর এজন্সে পাবিনা। ধর্ম বলতেও তো কিছু আছে! নাকি সে-সব বিবেকও তোর মধ্যে আর নেই!
গাড়ীতে এসে বসে রবিন বলে,মা’ এই থাপ্পড়টা আগে কেন দিলে না! কেন বললে না এসব ভুল করছিস এতো ভালো মেয়েকে রেখে অন্য দিকে নজর দিস না। লাগলে কয়েকটা থাপ্পড় দিয়ে বলতে, সময় থাকতে নিজেকে শুধরে নে।
‘তখন তো নিজেই ছিলাম ভুলের মধ্যে। আজ নিজের ভুলে তোর জীবন আমার জীবন থেকে সব আনন্দ শেষ। এখন বাকি জীবনে শুধু আফসোস নিয়ে বাঁচতে হবে।

#চলবে

#কোন_সুতোয়_বাঁধবো_ঘর
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -২০

শেফালী বেগম চলে যাওয়ার পর,ইরহা একদম নিশ্চুপ হয়ে গেলো।সোফায় মাথা নিচু করে বসে আছে, চোখ থেকে নিজের অজান্তেই টুপটুপ করে আশ্রু গড়িয়ে পরছে।নওশাবা নিজের মায়ের দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে মুখ দিয়ে কেমন শব্দ বের করছে,তার অস্পষ্ট শব্দ হয়তো বলতে চাইছে,তুমি কাঁদছো কেন মা’!
ইরহা,নওশাবাকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে বলে,কেন এমন হলো আমার সাথে?এখন তাদের ভুল বুঝতে পারলো, তাতে কি আমার সাজানো সংসার ফিরে পাবো? নাকি আমার মেয়ে ফিরে পাবে তার বাবার আদর। সমাজের কটু কথা না হয় বাদই দিলাম।
‘ফরিদা বেগম নিজের মেয়ের কাঁধে হাত রেখে বলেন,মা’রে ভাগ্যে কি আছে কেউ জানেনা। আমরা যদি আগেই বুঝতে পারতাম জামাই এমন হইবো তাইলে কি তোর বিয়ে সেখানে দিতাম! সব বাপ,মা’ সবচেয়ে ভালো ছেলের কাছে দিতে যায়। কিন্তু চকচকে আপেলের ভেতরের খবর তো কেউ জানেনা। এসব নিয়ে আর ভাবিস না, জীবন হলো বহমান নদী,সে থামতে জানেনা চলতেই থাকে।তার চলমান শ্রোতে কখনো একুল ভাঙে ও কুল গড়ে।

‘ইরহা চোখের পানি মুছে, ফরিদা বেগমকে বলল,নাও তোমার নাতনীকে একটু সুজি খাওয়াও আমি রুমে ঠান্ডা করার জন্য রেখে আসছি।
ফরিদা বেগম নওশাবাকে নিয়ে চলে গেলেন। ইরহার চুল বতাসে বেশ এলোমেলো হয়ে গেছে হাত দিয়ে চুলগুলো খোঁপা করবে এমন সময় আবার কলিং বেল বেজে উঠলো।
‘ইরহা কোনমতে চুলে প্যাচ দিয়ে উঠে দরজা খুলল।

সমানের মানুষ টিকে দেখে রেগে গেলো,বিরক্তি নিয়ে বলে আপনি!

✨সকালের রোদ ছড়িয়ে দুপুর হচ্ছে, নাদিম এখনো ঘুমাচ্ছে,আজকে অফিস থেকে ছুটি নিয়েছে, সারাদিন শ্বশুর বাড়ি থেকে বিকেলে বাসায় যাবে৷
‘নিশাত এসে নাদিমের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে,দিতে বলে,তা শ্বশুর বাড়ির বেড বুঝি এতোই আরামদায়ক যে আমার বর বেড ছেড়ে উঠতেই পারছে না?
‘নাদিম এক হাত দিয়ে নিশাতকে টান দিয়ে নিজের বাহুতে জড়িয়ে নিয়ে বলে,জান আমার কাল রাতের পর থেকে মনে হচ্ছে আমি নতুন বিয়ে করেছি,তুমি আমার সদ্য বিবাহিতা স্ত্রী। তোমাকে এত্তো এত্তো ভালোবাসতে ইচ্ছে করছে।
‘তো আমি তো নতুন বউ-ই মাত্র দুই বছরে কি আমি পুরোনো হয়ে গেছি!
‘এতো আদুরে কথা বললে,এই দিনদুপুরে কিন্তু… আর কিছু বলার আগেই নিশাত নিজের হাত দিয়ে নাদিমের মুখ চেপে রেখে বলে,আপনি এতো ঠোঁট কা’টা জানা ছিলো না।
‘এখন থেকে জেনে নাও।
‘নিশাত হুট করে নামিদকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে উঠে পরে বলে,তাড়াতাড়ি উঠে নাস্তা করুন। সকালের নাস্তা দুপুরে করলে, দুপুরের খাবার রাতে খাবেন! এরপরে কিন্তু আজকেও থেকে যেতে হবে।
‘আনরোমান্টিক বউ আমার। মুডের চৌদ্দটা বাজিয়ে দিলো। তবে জানো আজকে নিজেকে সবচেয়ে সুখী মানুষ মনে হচ্ছে। তোমাকে আমি এই রুপেই দেখতে চেয়েছিলাম।
‘একটু দেরি হয়ে গেলো,,তোমার মনের মত হতে, তবে এখন থেকে তুমি কল্পনাও করতে পারবে না, যে এটা সত্যি আমি! নিজেকে এমন ভাবে উপস্থাপন করবো।
‘লাভ ইউ বউ।
‘হেট ইউ বর, তাড়াতাড়ি উঠে পরুন
‘এই এটা কিন্তু ঠিক হলো না। লাভ ইউ টু বলে যাও।
‘এহহহ কচু বলবো।
‘নিশাত রুম থেকে বের হয়ে গেলো। সত্যিই আজ নাদিমের কাছে জীবনটা নতুন মনে হচ্ছে। এতোদিনের স্বপ্ন আজ পূরণ হলো।

✨রবিন সোফায় বসে আছে, রুবি রবিনের সামনে খাবার দিয়ে বলে,খেয়ে নাও ভাইয়া,চেহারা দেখেই বোঝা যাচ্ছে কতদিন ঠিকমত খাওয়া দাওয়া করোনি।
‘রবিন নিম্ন স্বরে বলল,আমার পাশে একটু বসবি?
রুবি রবিনের পাশে বসলো, রবিন রুবির দিকে না তাকিয়ে রুবির হাতটা ধরে বলে,পারলে ভাইকে ক্ষমা করে দিস।আর আজ থেকে মায়ের খেয়াল রাখিস। আমার কিছু হয়ে গেলে কখনো আমার খোঁজ নিবি না৷ মনে করবি আমার কর্মের ফল।রবিন নিজের পকেটে থেকে বেশ কিছু টাকা বের করে রুবির হাতে দিয়ে বলে,তোর আর মায়ের খেয়াল রাখিস৷ মনে করবি এই পৃথিবীতে তোর ভাই আর নেই।
‘রুবি কেঁদে দিয়ে বলে, কি বলছো তুমি এসব!তুমি ভেবো না সব ঠিক হয়ে যাবে। আমরা সবাই মিলে এই সমস্যা থেকে বের হওয়ার রাস্তা বের করবো৷
‘আর কিছু ঠিক হবে না। সব আমি নিজের হাতেই শেষ করে দিয়েছি। আমার মেয়েটা আজ আমার কারণে বাবার পরিচয় থেকে বঞ্চিত। যেদিন আমার রাজকন্যা পৃথিবীতে আসলো,সেদিন আমি তার থেকে সব কেড়ে নিলাম। কিভাবে করলাম আমি! রুবি বিশ্বাস কর আমি খারাপ কাজগুলো করেছি এটা ঠিক। কিন্তু লামাকে বিয়ে করতে চাইনি৷ তবে কথায় আছে, পাপ তার বাপকেও ছাড়েনা। আমাকেও আমার পাপ ধ্বংস করে দিলো৷ আমি কিভাবে আমার রুবিকে ছেড়ে এরকম একটা মেয়ের পিছু ছুটলাম?
‘যা হয়েছে ভুলে যাও।আজকে রাতটা আমাদের বাসায় থেকে যাও।আমরা সবাই মিলে একটা সলিউশন ঠিক বের করতে পারবো।
‘আমি ঠিক করে নিয়েছি আমি কি করবো। তেরা ভালো থাকিস আমার যা হয়ে যাক। যে খেলায় আমি নেমেছি সেখান থেকে ফেরার রাস্তা বন্ধ।
‘একটা ভুলের মাশুল গুণতে যেয়ে তারচেয়ে আরো বড় ভুল করো না। জীবন একটাই ভুল শুধরে ঠিক পথে ফিরে এসো। আর তুমি ছাড়া আমাদের আপন আর পৃথিবীতে কেউ নেই, অন্তত আমাদের জন্য ফিরে এসো।
‘রবিন বললো,তোর হাতে খাইয়ে দিবি আজ?
‘রুবি হাত ধুয়ে রবিনকে খাইয়ে দিলো। রুবির মনের ভেতর কেমন হাহাকার করছে। মনে হচ্ছে খুব বাজে কিছু হবে। চোখের কার্নিশ গড়িয়ে নোনাজল পরছে৷ শেফালী বেগম দূর থেকে দাঁড়িয়ে দেখছেন। তার মনেও শান্তি নেই, কেন যেন মনে হচ্ছে তার ছেলেকে শেষ দেখা দেখছে।
খাবার খেয়ে রবিন নিজের মায়ের কাছে এসে জড়িয়ে ধরে বলে,পারলে আমকে ক্ষমা করে দিও মা। রুবির দিকে তাকিয়ে বলে,তোর ভাবিকে একটা কল করবি! একটু জিজ্ঞেস কর আমার মেয়েটা বাবা বলতে পারে নাকি?
‘রুবি একটা ভিডিও অন করলো,যেখানে নওশাবা অস্পষ্ট শব্দে বাবা, বা বা বা করছে। রবিন মোবাইলটা কেড়ে নিয়ে বলে,কেন আমি তোর মায়ায় আরো আগে জড়ালাম না। আমার দুনিয়ায় বেঁচে থাকার আর কোন অধিকার নেই।
‘নিজেকে সামলে নে ভাইয়া।
‘ভিডিওটা আমার মোবাইলে সেন্ট করে দিস। মা’য়ের আর তোর খেয়াল রাখিস। কথা শেষ করে দ্রুত পায়ে বের হয়ে গেলো।
‘লামা নিজের মা বোনের সাথে দেখা করতে এসেছে,
‘তুই এখান থেকে চলে যা আর কখনো আমাদের সামনে আসবি না।
‘মা’আমি নিজের জন্য একটা সুন্দর জীবন চেয়েছি এটাই কি আমার দোষ? আর এই গরীব জীবনে তোমরা অনেক ভালো আছো?লামা নিজের ব্যাগ থেকে টাকার বান্ডিল বের করে বলে,এই দেকো,সুখ কেনার চাবি। নাও কত চাও নাও।
‘ তুই এখান থেকে চলে যা। না তোর টাকা আর না তুই, কোনটাই আমার দরকার নেই। তোরমত মেয়ে আমার জন্য মৃত।
‘হ্যা, হ্যা চলে যাচ্ছি,ভুলেই গিয়েছিলাম, কু’কু’রের পেটে ঘী হজম হয় না।
‘লিজা বললো, আপু আমরা দরিদ্র তবে তোরমত বিবেকহীন না। জানিস তো বিবেকহীন মানুষ প’শুর মত। তাই যেই বাক্যটা আমাদের জন্য ব্যাবহার করলি, সেটা তোর সাথেই বেশি যায়। বাড়িতে যা তবে মুখ ডেকে বের হোস। মানুষ কিন্তু থুথু নিক্ষেপ করবে।
‘লামা লিজার গালে থাপ্পড় দেয়ার জন্য হাত উঠালো, লামার মা,লামার হাত আটকে দিয়ে বলে,এই সাহস করবি না৷ আমার মেয়ের শরীরে আঘাত তোর মত কেউ করতে পারবে না। দূরহ চোখের সামনে থেকে।
‘মেয়ে মানুষ সম্মান হলো লজ্জায়, তুই তো টাকার কাছে তোর লজ্জা বিক্রি করে দিয়েছিস৷ লজ্জাহীন মেয়ে আর খোসা ছাড়া কলা দুটোরই কোন মূল্য নেই বাজারে।
‘লামা চলে আসলো, বের হতে হতে খেয়াল করলো অনেকেই তার দিকে কেমন দৃষ্টিতে যেনো তাকাচ্ছে।

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে