কোন_সুতোয়_বাঁধবো_ঘর পর্ব-১৬

0
656

#কোন_সুতোয়_বাঁধবো_ঘর
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -১৬

ন’টা বাজেই রেডি হচ্ছে জারিফ।গোল্ডেন শার্ট আর ব্ল্যাক প্যান্ট। উজ্জ্বল শ্যামলা গায়ে বেশ ফুটেছে শার্ট-টা। চুলগুলো সেট করছিলো। তখন রাতুল এসে বলে,আজকে কি কোন বিদেশি ক্লাইন্টদের সাথে মিটিং আছে? সকাল সকাল এতো ফিটফাট হয়ে কোথায় যাচ্ছো?
‘একটা জরুরি কাজ আছে শনি আখড়ার দিকে যাবো।
‘ওদিকে কি কাজ?
‘এখন কি আমার কাজের শিডিউল তোকে দিতে হবে?
‘নাহহহ তা কেন হবে। তবে আজকে তোমাকে বেশ হ্যান্ডসাম লাগছে।
‘বয়স ত্রিশের কোটা পার করেছে, এখন হ্যান্ডাস লাগার কিছু নেই।
‘ভাইয়া এখন মানুষ পঁয়ত্রিশেও বিয়ে করে। আর ত্রিশতো নরমাল। তবে আঠাশেই করে নেয়া ভালো।
‘তা তোর বয়স কত? তুই যে সত্তুর বছরের বুড়োদের মত বিয়ে নিয়ে ভাষণ দিচ্ছিস!

‘এই তো বাইশের শেষ দিক আর তৈইশ উঁকি দিচ্ছে।
‘যদি এই বয়সে তোর পঁচিশ বা ছাব্বিশ বয়সি মেয়ের সাথে প্রেম হয় বা বিয়ে হয় তুই কি মেনে নিবি?
‘প্রেম ভালোবাসার জন্য বয়স লাগে নাকি? হতেই পারে আমার বয়সি কেউ এক বাচ্চার মা সহ কোন ডিভোর্সী মেয়েকে বিয়ে করলো। অথবা কোন বিধবা মেয়েকে বিয়ে করলো। নয়তো ভার্সিটির সিনিয়র মেয়ের সাথে প্রেম করে বিয়ে করলো। বয়সতো একটা সংখ্যা মাত্র। ভালোবাসা হলো রঙিন প্রজাপতি কখন তোমাকে ছুঁয়ে দিয়ে রাঙিয়ে দেবে বুঝতেও পারবা না।
‘তোর আজাইরা কথা শোনার সময় আমার নেই৷ আসছে লেকচার দিতে। এসব কথা মুখেই মানায় কাজে ঘটলে তখন দৃষ্টিকটু দেখায়। ভালোবাসার ভূত মাথা থেকে নামিয়ে নাস্তা করে ভার্সিটিতে যা।
‘ভাইয়া তুমি বলেছে, তুমি যেভাবেই হোক লাবিবাকে বোঝাবে। ওর সাথে কথা বলেছো?
‘তুই ভার্সিটিতে যা। আমি কথা বলে তোকে জানাবো।
জারিফ নিজেকে শেষ বারের মত আয়নায় পর্যবেক্ষণ করে বের হয়ে গেলো।

✨ইরহা নাস্তা বানিয়ে টেবিলে গুছিয়ে রেখে, নওশাবার জন্য সবজি খিচুড়ি রান্না করে নিয়ে আসলো। নওশাবাকে ফ্রেশ করিয়া খিচুড়ি খাওয়াচ্ছিলো। নওশাবা খেতে চাচ্ছে না ইরহা জোড় করে খাওয়াচ্ছে।
ফরিদা বেগম বললেন,মেয়েটা কাঁদিয়ে খাওয়াতে হবে না। দে ওকে আমার কাছে দে।

‘আচ্ছা মা’তিনদিন হয়ে গেলে ভাবির কোন খবর নেই।
‘নিশাত বাপের বাড়ি গেলে একসপ্তাহ তো থাকেই। সবে তিনদিন হলো। আর চার পাঁচ দিন যাক। নাদিম নিজেই যেয়ে নিয়ে আসবে৷

তুই যা হাত ধুঁয়ে নিজে খেয়েনে আর লাবুকেও ডেকে তুলে খেত বল। কলেজে যাবে না নাকি?

ফরিদা বেগম নওশাবে নিয়ে নিজের রুমে চলে আসলেন।

‘ইরহা রুটি ছিড়ে তরকারি নিয়ে মুখে দিবে আর তখনি ফোনটা বেজে উঠলো। রুটির টুকরো মুখে পুরে মোবাইলটা হাতে নিলো।নাম্বার দেখে টাইম খেয়াল করলো দশটা বিশ বাজে। ভুলেই গিয়েছিল ইরহা। একটু পানি মুখে দিয়ে নিজের রুমে এসে বোরকা আর হিজাব পরে বের হয়ে গেলো।
রাস্তায় বের হয়ে রিকশায় বসতেই আবার রিং বেজে উঠলো। রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে নরম কন্ঠে বলে,আপু প্লিজ দেখা করুন আমার খুব জরুরি কথা আছে।
‘আপনি হসপিটালের পিছনের গেটের সামনে অপেক্ষা করুন আমি আসছি।আমার আসতে ত্রিশ মিনিট লাগবে।
‘এতোক্ষণ আমি দাঁড়িয়ে থাকবো!
‘তাহলে চলে যান, নয়তো রাস্তায় বসে পরুন। আচ্ছা এক কাজ করুন রাস্তা পার হয়ে দেখনু একটা ছোটখাটো রেস্তোরাঁ আছে। সকালের নাস্তা না করে আসলে, করে নিন আমি আসতে, আসতে। বলেই কল কেটে দিলো ইরহা।
‘এই মেয়ের এতো জেদ কেন!কোন কথা বলার সুযোগ-ই দেয়না। জারিফ তোকেও এমন কাটকাট কথা বলতে হবে। যেভাবেই হোক এই মেয়েকে বুঝিয়ে তোর ভাইয়ের ঘাড় থেকে নামাতে হবে।

✨নিশাত বসে বসে নিজের মায়ের সাথে গল্প করছিলো। নিশাতের বড় ভাবি নিহা বলে,তুমি আর কতদিন থাকবা নিশাত? জামাইকেও বলো দুচারদিন তোমার সাথে এসে থাকতে। আসলেই চলে যায় নাদিম তো থাকেই না।
নিশাতের ছোট ভাবি তোহা বলে,তার একার জ্বালা কি কম মনে হচ্ছে ভাবি! যে দাওয়াত করে আরো একজন আনতে চাইছেন।
‘ভাবি একদম মুখ সামলে কথা বলেন,এটা আপনার বাড়ি না। এটা আমার বাপের বাড়ি।
‘মুখ সামলে কথা বলবো মানে!নিজের বাড়িতে দাঁড়িয়ে স্বামীর টাকায় খেয়ে তোমাকে ভয় পেয়ে কথা বলবো নাকি?ভুলে যেওনা বিয়ের পরে স্বামীর বাড়ি হলো নিজের বাড়ি। আর এ বাড়িতে তুমি দু’দিনের মেহমান তাই মুখ সামলে কথা তুমি বলো।
‘আমার বাড়িতে আমি মেহমান কেন হতে যাবো। এটা আমারও বাড়ি।
‘বললেই তো আর হয়ে যাবেনা। বিয়ের পরে মেয়েরা হয়ে যায় পর।
‘তুমিও কি তোমার বাপের বাড়ির পর হয়ে গেছো?
‘তাতো হয়েছি-ই এখন এটাই আমার বাড়ি।
‘ভাইয়া বাসায় আসুক আজ এর একটা বিহিত না করা পর্যন্ত খাবার মুখে তুলবো না।
‘আছে তো এই ঝামেলা করার গুন আর করবা কি এটা ছাড়া। যতবার আসবে ততবার ঝগড়া বাঁধিয়ে দিয়ে যাবে।
‘তোহা থাম তো কি শুরু করলি। এটা যতটা তোর বাড়ি ঠিক ততটাই নিশাতের বাড়ি। এসব নিয়ে বাচ্চাদের মত ঝগড়া করিস না। যাহহহ নিজের কাজ কর।
‘সব সময় আসবে খাবে আমাদের বিরক্ত করবে জ্বালাবে আবার যাওয়ার সময় অশান্তি বাধিয়ে রেখে যাবে। এই মেয়ে স্বামীর সংসারে টিকে আছে কিরে?
রাবেয়া বেগম বললেন,তোহা এবার তুমি বেশি বলে,ফেলছো,ছোট ননদ কই আদর যত্ন করবা তা-না মেয়েটা বাড়িতে আসলেই ওর পিছে পরে থাকো৷
‘তোহা কিছু বলার আগে নিহা বললো, আর একটা কথাও বলবি না তুই।তোকে আমি পরে দেখবো৷
তোহা রাগ দেখিয়ে চলে আসলো। মনে, মনে বলে এক বাড়িতে দু’বোন বিয়ে করাই ঝামেলা মনমত কথাও বলতে পারি না৷

তোহা চলে যেতেই নিহা বলে,মা’আপনি ওর কথায় কিছু মনে করবেন না।আপনি নিশাতের কাছে যান, আমি আপনাদের জন্য চা করো নিয়ে আসছি৷

✨ইরহা হসপিটালের সামনে এসে কল করলো,
‘জারিফ রিসিভ করে বলে আপনি যেখানে বলেছিলেন আমি সেখানে বসে নাস্তা করছি।
‘আচ্ছা ভিড় কেমন এখন?
‘অতো একটা ভিড় নেই কারন প্রায় বারোটা বাজে সবার সকালের নাস্তা করা শেষ।
‘আচ্ছা আমি আসছি।
‘ইরহা রেস্তোরাঁয় ঢুকলো। খুব ছোট একটা খাবের রেস্তোরাঁ হসপিটালের পাশে। এই মূহুর্তে চার-পাঁচজন মানুষ আছে বাকি পুরোটা ফাঁকাই। ইরহা কল করতেই কর্নারে টেবিলের উপর রাখা ফোনটা বেজে উঠলো৷ ইরহা দু’টো চায়ের অর্ডার দিয়ে জারিফের বিপরীত পাশে বসলো।
‘জারিফ বলে, আপনি?
‘হ্যা আমি দ্রুত খাবার শেষ করুন।
‘জারিফ টিস্যু দিয়ে হাত মুছে ইরহার দিকে তাকায়, পার্পল কালারের হিজাব,মুখটা মাক্স দিয়ে ঢাকা। তবে চোখ আর কপাল দেখে বোঝা যাচ্ছে মেয়েটা সুন্দরী।
‘ইরহা চামিচ দিয়ে টেবিলে বাড়ি দিয়ে বলে,আপনার জরুরি কথা কি আমাকে পর্যবেক্ষণ করা।
‘হ্যা, না, না তা কেন হবে! আমি এসেছে জরুরি কথা বলতে৷আচ্ছা মাস্কটা খুলে ফেলুন এমন মাস্ক পরা থাকলে কথা বলতে আনইজি লাগবে৷
‘আমি আপনার প্রেমিকা বা বিয়ে করা বউ না যে ইজি লাগবে কথা বলতে! বলার হলে বলুন নয়তো আমি চলে যাচ্ছি।
‘আচ্ছা বলছি।
‘আমি শুনছি শুরু করুন।
‘আপনি সত্যি বিবাহিতা? সত্যি আপনার মেয়ে আছে?
‘ইরাহা রেগে গিয়ে বলে, এই জরুরি কথা আপনার? একটা অপরিচিত মেয়েকে কল করে ডেকে এনে এসব জিজ্ঞেস করছেন? লজ্জা করে না আপনার!
‘জরুরি কথা বলার আগে এটাও জানা জরুরি। প্লিজ বলুন।
‘আমি ডিভোর্সী আর হ্যা আমার মেয়ে আছে আর কিছু?
‘এর মধ্যে চা দিয়ে গেলো ওয়েটার।
‘ইরহা মাস্ক খুলে চায়ের কাপটা হাতে নিলো।
‘জারিফ ইরহার চেহারা দেখেই বলে,নাহহ এটা হতে পারে না!
‘ইরহা বলে কি হতে পারে না?
‘আপনি এমন একটা কাজ কিছুতেই করতে পারেন না। আমি এটা মানতে পারছি না। আমারই হয়তো কোথাও একটা ভুল হয়েছে। জরিফ আর কোন কথা না বলে উঠে চলে গেলো।
ইরহার এতোবার ডাকলো একবারের জন্যও পিছু ফিরলো না।

ইরহা বিল পে করে, বের হয়ে আসে, কি আজব মানুষ বললো,জীবন,ম’র’নের কথা আছে, কিছু না বলেই চলে গেলো! অদ্ভুত কি বললো, এটা হতে পারে না! কিন্তু সেটা কি? কি হতে পারে না আর আমি কি করতে পারি না?

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে