কোন_সুতোয়_বাঁধবো_ঘর পর্ব-১৪

0
604

#কোন_সুতোয়_বাঁধবো_ঘর
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -১৪

ড্রেস চেঞ্জ করে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে,নওশাবাকে কোলে নিলো,সারাদিন পর নিজের মেয়ের মুখটা দেখে আদরে ভরিয়ে দিলো। এতো, এতো অশান্তি আর কষ্টের মাঝে এই মুখটাই যেনো একমাত্র প্রশান্তি। ইরহা নাওশাবাকে লাবিবার কাছে রেখে,কিচেন থেকে প্লেটে খাবার বেড়ে নিয়ে টেবিলে বসলো। কয়েক লোকমা মুখে তুলতেই কলিং বেল বেজে উঠলো।

✨আন্টি ইরহা এখানেই থাকে মানে?
‘সেসব জেনে আর কি করবে! এখন থেকে এটাই ওর স্থায়ী ঠিকানা।
‘কিছু মনে না করলে কারণ বলা যাবে?
‘কি কারণ শুনবা বাবা!ডিভোর্স হয়ে গেছে ওদের।
আহনাফের কানে ডিভোর্স শব্দটা বর্জ্যপাতের ন্যায় ঠেকলো। অবাক হয়ে বলে ডিভোর্স মানে?
‘সবই কপাল, জামাই আরেকটা বিয়ে করেছে।
‘আহনাফ স্তব্ধ হয়ে গেলো,ইরহাকে যেদিন বলেছিলো, তুমি কি আমাকে ছেড়ে অন্য কোন সংসার করতে পারবে?
‘আমাদের মত মেয়েরা সব পারে,সামান্য সংসার কি এমন জিনিস!খড়কুটোর বাসা ঠিক সামলে নিতে পারবো। আমার তো আর অতোশত চাহিদা নেই। সাধারণ ভাবে জীবনটা ঠিক টেনে নিতে পারবো।
তাহলে হুট করে ডিভোর্স কেন?

ফরিদা বেগম, আহনাফকে ডেকে বলে,কি ভাবছো বাবা? আমার মেয়েটার মত এতো শান্ত শিষ্ট মেয়েটা এই পথ কেন বেছে নিলো?দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে মানুষ গর্জে ওঠে।

‘আমি কি ওর সাথে দেখা করতে পারি?
‘তুমি বসো আমি ওকে ডেকে দিচ্ছি।

ইরহা দরজা খুলতেই রবিন হড়বড় করে ঘরে ঢুকে গেলো।

‘আপনি আবার কেন এসেছেন?
‘দেখো অনেক হয়েছে মান অভিমান। আমার তোমাকে লাগবে মানে তোমাকেই লাগবে। চলো আমার সাথে।
‘দু’দিন জেলে থেকে মাথার তাড় সব ছিড়ে গেছে মনে হয়। আপনার পাগলামি অন্য কোথাও যেয়ে দেখান৷ এটা ভদ্রলোকের বাসা।
‘তুমি জানতে আমি জেলে ছিলাম তবুও গেলেনা দেখা করতে! কিভাবে এতো পরিবর্তন হয়ে গেলে? মাত্র কয়েকদিনে আমার প্রতি সব ভালোবাসা ধুঁয়ে মুছে শেষ।
‘আপনি কে?আপনি জেলে থাকেন নাকি মর্গে থাকেন তাতে আমার কি?
কবুল বলে যেমন আপনি আমার স্যার সম্পর্ক তৈরী করেছিলেন,তালাক নামায় সিগনেচার করে ঠিক সম্পর্ক শেষ করেছেন। আর বর্তমান আপনি আমার অপরিচিত। তাই এই মূহুর্তে আমার বাসা থেকে বের হন।
‘তোকে কতবার করে বলছি, যা হয়েছে তার জন্য আমি দুঃখিত তাও তোর তেজ কমে না! এতো কিসের তেজ তোর? কয়েকদিন আগেও তো আমার আগে পিছে ঘুরেছিস আমার এট্যানশন পাওয়ার জন্য। আর এখন তেজ দেখাস? তোর আমার সাথে তেজ দেখানোর মত আর কি আছে?আরো বাজে কিছু ওয়ার্ড ব্যাবহার করছে রবিন।

আহনাফ পাশের রুম থেকে আওয়াজ শুনে ডাইনিং রুমে আসতেই ইরহা আর রবিনের বাকবিতন্ডা দেখতে পায়।ফরিদা বেগম ও তার পাশেই। কিছু বলা উচিৎ হবে কি না সেটা ভাবছে আহনাফ।

ইরহা আর ধৈর্য ধরে রাখতে পারলো না। ঠাসসসস করে পরপর দু’টো চড় বসিয়ে দিলো রবিনের বা গালে। আপনি যেমন ঠিক তেমন আপনার ভাষা। আর কখনো যদি আমার বাড়ির সীমানায় আপনাকে দেখি, তাহলে আইনি ব্যাবস্থা নিতে বাধ্য হবো।
রবিন কয়েক মূহুর্তের জন্য থমকে যেয়ে বলে,তোর এতো সাহস তুই আমার গায়ে হাত তুলিস। আজ তোর তেজ বের করবো আমি। বলেই ইহার চুলের মুঠি ধরতে যায়। হাত চুলে পৌঁছনোর আগেই আহনাফ রবিনের হাত শক্ত করে ধরে বলে,যদি গণধোলাই খেতে না চান তাহলে মানে, মানে কেটে পরুন।
‘রবিন বলে,বাহহহ মাস না পেরুতেই নতুন নাগর যেগাড় করে ফেলেছিস?
আহনাফ রবিনকে ধাক্কা দিয়ে বেড় করে দিয়ে বলে,এরপরে যেনো এই এলাকায় না দেখি।
ইরহা হঠাৎ আহনাফ কে দেখে থমকে গেলো। চেয়ারের হাতল শক্ত করে আঁকড়ে ধরলো। আহনাফ দরজা লক করে, ইরহার কাছে এসে বলে,তুমি ঠিক আছো?
‘ইরহা চুপ করে রইলো। মনে, মনে বলে, কেন আমার দূর্বলতা তোমার সামনে আসলো? আমি তো বলেছিলাম ভালোই থাকবো। তাহলে তুমি কেন আজকে সবচেয়ে খাবার সিচুয়েশনে আমার সামনে আসলে!নিজের অজান্তেই চোখের কার্নিশ বেয়ে আশ্রু গড়িয়ে পরতে লাগলো।

‘সরি এই সময়ে আমার উপস্থিতির জন্য।আমি জানতাম না তুমি এ বাড়িতে।

‘ইরহা চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষণ সময় নিয়ে বলে,কেন এসেছেন?
‘আন্টিকে ইনভাইট করতে।
‘কাজ হয়ে গেলে আসতে পারেন।
‘ইরহা আমি তোমার সাথে একটু কথা বলতে চাই।
‘আমি চাইনা৷ আর তাছাড়া আপনার ওয়াইফ যখন জানতে পারবে, আপনি আপনার প্রাক্তন প্রেমিকার সাথে আলপ করেছেন, সেটা তার জন্য সুখকর হবে না নিশ্চয়ই?
‘সাধারণ কথাকে তুমি কোথায় নিয়ে যাচ্ছো?
‘প্লিজ এভাবে তুমি করে ডেকে বিব্রত করবেন না৷ অপরিচিত কেউ আপনি বললে ডাকটা ভালো শোনায়।
‘আমরা কি ফ্রেন্ড হিসেবে নরমাল কথা বলতে পারি না?
‘আসসালামু আলাইকুম। আহনাফ ভাইয়া কেমন আছেন? ভাবি কেমন আছে?
‘আহনাফ কোন কথার উত্তর না দিয়ে বলে,আন্টি তাহলে আজ আসি। অন্য কোন সময় আবার আসবো৷
আহনাফ চলে যেতেই ফরিদা বেগম বলে,এটা কেমন ব্যাবহার ইরহা?
‘মা’ যে ভালোবাসা ছেড়ে এসেছি, যে মানুষটাকে পর করে দিয়েছি,তার সামনে নিজের দূর্বলতা আমি প্রকাশ করতে পারবো না। আমার জীবনে যা হচ্ছে তা আসি একা শয়ে যাবো। যত কষ্ট হোক একাই লড়াই করবো। আমার পাশে কেউ থাকলে তোমরা আছো। যাকে অতীতে হেলায় হারিয়েছি। তাকে অসময়ে কষ্টের ভাগ দিতে চাই না৷
‘ফরিদা বেগম বলেন, সব দোষ আমাদের এতো,সোনার টুকরো ছেলেকে অবহেলা করে কয়লা বেছে নিলাম।
‘বাদ দাও মা’এসব বলে কি হবে? ভাগ্যে যা ছিলো তাই হয়েছে। এসব ভেবে এখন আফসোস করে লাভ নেই।

✨রাতুলের চোখে ঘুম নেই ষোড়শী কন্য লাবিবাকে রাতুল অনেকটা ভালোবাসে। কিন্তু হুট করে তার লাবুর কি হলো! কেন সব সম্পর্ক মূহুর্তে শেষ করে দিলো। সব জায়গা থেকে ব্লক করে দিয়েছে রাতুলকে। মন খারাপ করে নিজের রুম অন্ধকার করে শুয়েছিল রাতুল। ঠিক তখন জারিফ এসে লাইট অন করে বলে,কিরে তোর কি হয়েছে?
‘কই কি হয়েছে ভাইয়া!
‘আমাকে মিথ্যে বলবি না! সত্যটা বল।
‘রাতুল কিছু সময় চুপ করে থেকে বলে,আমি একটা মেয়েকে ভালোবাসি। হুট করে মেয়েটা আজ আমার সাথে ব্রেকআপ করে ফেললো। কোন কারণ ছাড়াই। আমি ওকে সত্যি ভালোবাসি ভাইয়া।
‘তোর বড় হয়ে আজ পর্যন্ত একটা প্রেম করতে পারলাম না৷ আর তুই প্রেম থেকে ব্রেকআপে চলে গিয়েছিস?
“ভাইয়া আমি সিরিয়াস!
‘কতটা সিরিয়াস?
‘প্লিজ ভাইয়া তুমি কিছু করো। শুধু জানতে চাই আমার ভুলটা কোথায়?
‘নাম্বার দে কল করে জিজ্ঞেস করি।
রাতুল খুশি হয়ে জরিফকে জড়িয়ে ধরে বলে,তুমি আমার বেস্ট ভাইয়া। নাম্বার বলছি টাইপ করো।
‘জরিফ নাম্বার নিয়ে বলে,এবার নিচে আয় রাতের খাবার খাবো। তারপর তোর সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করবো।
‘কিভাবে করবে? এখন কে আমাকে মেয়ে দেবে!আমি তো বেকার।
‘জরিফ হেসে বলে,বাহহহ কত চিন্তা আমার ভাইটার। তা তোর ভাই আর বাপের টাকা আছে কি করতে?তোদের মত দুইটা কবুতরের বাচ্চা আমরা অনায়াসে পালতে পারবো।
‘তোদের মত মানে?
‘তুই আর তোর বউ। এবার চল।

✨লাবিবা নওশাবাকে, শুয়ে দিয়ে পড়ার টেবিলে উদাস মনে বসে আছে। রাতুলের সাথে অল্প দিনের সম্পর্ক তবে ভালোবাসাটা মনে হচ্ছে বহু যুগের। আচ্ছা ষোল বছর বয়সে প্রেমে পরলে,সবাই সেটাকে আবেগ কেন বলে? ষোল বছর বয়সে কেউ কি গভীর প্রেমে পরতে পারে না?

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে