#কোন_সুতোয়_বাঁধবো_ঘর
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -১৩
বাস থেকে নামতেই একজনের চেহারা দেখে ইরহার পা’থমকে গেলো। হঠাৎ করে মনে হলো কেউ তাকে আটকে দিয়েছে।
প্রাঙ্গণ শব্দটা আমাদের সাথে এমন ভাবে মিশে থাকে মনে হয় যেন অতি প্রিয় দুঃখ। ইরহা অতি কষ্টে কয়েক কদম সামনে এগুলো। সেই প্রিয় মুখ, সেই প্রিয় মানুষ, কিন্তু আজাব সে আর প্রিয় নেই! যাকে দেখলে মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে চলতে হয় এখন!একটা সময় ছিল যখন তাকে দেখার জন্য,মনের মধ্যে ব্যাকুলতা সৃষ্টি হতো। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে সবকিছু কেমন পাল্টে গেছে জীবনটা আসলেই অন্যরকম, প্রিয় থেকে অপ্রিয়, নিজের থেকে অন্যের, বর্তমান থেকে প্রাঙ্গণ। সবকিছু কেমন আবহাওয়ার মত পাল্টে যায়। শুধু আমাদের মনের কোণে রয়ে যায় গভীর ক্ষত অথবা আফসোস প্রিয় মানুষটিকে নিজের করে না পাওয়ার। আমার মানিয়ে নিতে চেষ্টা করি কিন্তু কতটা পারি হয়তো সমাজ, মানুষ সবাই আমাদের সুখটা দেখে, কিন্তু হুট করে বিষন্ন বিকেলে প্রাঙ্গন কে ভেবে বুকের ভেতর দগ্ধ ক্ষত কেউ দেখেনা! আমরা ভীষণভাবে মানিয়ে নিয়ে বেঁচে থাকি অথবা নতুন করে স্বপ্ন বুনি।
ইরহা দ্রুত প্রস্থান করলো। আজকে আরো তিনটা ইন্টারভিউ। জীবন কত কঠিন হয়ে গেলো। একটা চাকরির জন্য পাগলের মত ছুটছে তবুও চাকরির ব্যাবস্থা হচ্ছে না।
কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না, ইরহা। কিন্তু একটা চাকরির খুব প্রয়োজন। এতো, এতো টেনশন,কষ্ট নিজের মধ্যে চেপে রেখে, ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই। জীবন এতো সহজ না। যেমন আমরা কল্পনা করি! কতশত স্বপ্ন আজ সব মিথ্যে। যেই স্বামীকে পেয়ে নতুন পৃথিবী সাজিয়েছিলো আজ তার জন্য জীবনের কঠিন বাস্তবতার সমানে দাঁড়িয়ে। জীবন ভয়ংকর সুন্দর।
বাস থেকে নেমে রিকশা নিলো।কালকে যখন নীলুফার সাথে দেখা হয়েছিল। তখন নিলুফা উপহাস করে বলেছিল,”অতি রাঁধুনি না পায় ঘর,অতি সুন্দরী না পায় বর!!
গ্রামের মুরুব্বিদের মুখে এমন কথা কত শুনেছি, আজ নিজের চোখে দেখছি। তুই কি রুপে,গুণে কম! তবুও তোর ঘর ভেঙে গেলো!তবে আর একটু ধৈর্য ধরে স্বামীর সংসার টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করতে পারতি। সমাজে ডিভোর্সী মেয়েদের মানুষ ভালো চোখে দেখে না-রে!
ইরহা মুচকি হেসে বলেছিল,তুই কোন চোখে দেখিস! আর বলতো সমাজ আমার কোন উপকার করেছে?
‘তুই রাগ করলি!আমি তো ভালো মনে কথাগুলো বললাম৷ থাক বাপু আমার আর কোন কথা বলে কাজ নেই।এ পাড়ায় আমারও বাপের বাড়ি, শ্বশুর বাড়ি থেকে আসলেই তোর সাথে দেখা হবে। তুই না চাইলে কথা হবে না।
‘দেখ নীলু আমি বলিনি কথা বলিস না। শুধু জিজ্ঞেস করলাম, ডিভোর্সী মেয়েদের কোন চোখে দেখিস?
“আমার দেখা দিয়ে কি সমাজ চলবে? আচ্ছা যাই আজ ভালো থাকিস।
নীলুর কথাগুলো মনে করে তাচ্ছিল্য হেসে মনে মনে বলে,সময়ের সাথে, সাথে সব পাল্টে যায়। পরের কথায় আঘাত না থাকলেও কাছের লোকের কথার আঘাতে হৃদয় ছি’ন্ন’ভি’ন্ন হয়ে যায়।
✨কলেজের ক্লাস শেষ করে আনমনে হাঁটছে লাবিবা। ইরহার কথাগুলো সে গভীর ভাবে উপলব্ধি করেছে। কিন্তু রাতুলকে সে ভালোবাসে। এখন তার কি করা উচিৎ। ভাবতে ভাবতে নিজের মোবাইল বের করে দেখে, রাতুলের বেশ কয়েকটা মিসড কল। সাথে সাথে রাতুল কে ব্লক করে দিলো। মন খারাপ করে একটু সামনে আসতেই কলেজের ক্যাম্পাসের কাঠগোলাপ গাছটার সামনে এসে দাঁড়ালো।বুকের বা’পাশটায় কেমন ব্যাথা হচ্ছে। হুট করে মনে পরে গেলে রাতুলের সাথে প্রথম ব্রেকআপের কথা।সামান্য বিষয় নিয়ে ব্রেকআপ করেছিল……. তোমার কেমন চুল পছন্দ?
‘আমার ছোট চুল পছন্দ।অবাক হলে!মেয়ে হয়েও আমার লম্বা চুল পছন্দ না বলে?
‘নাহহ তা কেন হবো!আসলে আমারও মেয়েদের ছোট চুল পছন্দ।
“মানে কি? তুমি কেমন ছেলে!কোথায় রোমান্টিক ভাবে বলবে,প্রিয়তমা আমার জন্য তুমি দীঘল কেস রাখবে, তোমাকে বড় চুলে ভিষন মায়াবী লাগবে। তা-না তুমি বলো তোমার ছোট চুল পছন্দ! যাও ব্রেকআপ।
” এই এতোটুকু কথায় কেউ ব্রেকআপ করে?
‘দেখুন ব্রেকআপ মানে ব্রেকআপ। রস কষ ছাড়া ছেলের সাথে আমি প্রেম করবো না।
কথটা ভাবতেই ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠলো। ঠিক সে সময় একজন বলে,মহারানী এখানে দাঁড়িয়ে হাসছেন! আর আপনাকে পুরো কলেজ খুঁজে বেড়াচ্ছি। আজকে ব্লক করার কারণ কি? নিব্বা প্রেমিকা নিয়া আমি অসহায় প্রেমিক বড় জ্বালায় আছি।
‘তাহলে ব্রেকআপ করে নাও।
‘কি হয়েছে লাবু? আজকে তোমার মন খারাপ?
‘রাতুল আমার পক্ষে রিলেশন কন্টিনিউ করা সম্ভব না।
‘কি হয়েছে বলবা তো!
‘আমি বুঝতে পেরেছি এটা আমার প্রেম করে বেড়ানোর বয়সা না। তাই আজকে থেকে আমাদের মধ্যে কোন সম্পর্ক নেই।
‘এই লাবু তুমি না বললে আমি বুঝবো কি করে?
‘বাংলা ভাষায় স্পষ্ট উচ্চারণে বলেছি এরপর না বুঝলে আমার কিছু করার নেই।
‘রাতুল লাবুর কানের সামনে এসে বলে,রাগ কমলে ফোন করিস, আমি রাত জেগে তোর অপেক্ষায়।
‘লাবিবা কোন কথা না বলে চলে যাচ্ছে
‘রাতুল পিছু পিছু আসছে। লাবিবা থেমে যেয়ে বলে,এভাবে পিছু আসবে না। দয়া করে আমাকে ভুলে যাও।
রাতুল যেয়ে রইলো লাবিবার চলে যাওয়ার পথে। সব সময় দুষ্টমিতে মেতে থাকা মেয়েটা হঠাৎ এতোটা গম্ভীর হলে কি করে? সেই হিসেব মেলাতে ব্যাস্ত রাতুলের মন মস্তিষ্ক।
✨রুবির হ্যাসবেন্ড তামিম সারাদিন অনেক চেষ্টা করেও জামিন করাতে পারলো না রবিনের। শেষ প্রহরে রুবি আর তামিম রবিনের কাছে এসে বলে,আজতো কিছু করতে পারলাম না। দেকি আবার আগামীকাল চেষ্টা করবো।
‘তোদের কিছু করতে হবে না। বাসায় চলে যা।আর হ্যা শোন মা’য়ের খেয়াল রাখিস। আমি এখানেই ঠিক আছি। যেমন কর্ম তেমন ফল। কথাটার মর্মার্থ আজ বুঝতে পারছি।
‘এখন বুঝে যদিও কোন লাভ নেই। আর এসব কথা এখন আমি বলতেও চাইছি না। নিজের খেয়াল রাখো। তামিম চেষ্টা করছে, দু-একদিনের মধ্যে জামিন পেয়ে যাবে আশাকরি। একটু ধৈর্য ধরো। কথায় আছে, “গর্তে পরিলে হাতি, ব্যাঙেও মা’রে লাথি। গর্তে যখন পরেছো ধৈর্য ধরা ছাড়া উপায় নেই।
রুবিদের কথার মাঝেই,ফোরন কেটে লামা বলে,মুখেই বড় বড় কথা! কাজের কাজ তো কিছুই করতে পারলে না।
‘আপনার মত মেয়েদের সাথে কথা বলার রুচি আমার নেই।
‘কথা বলবে না, শুধু পায়েও পরবে। নিজের ভাইয়ের ভালো চাইলে মুখটা বন্ধ রাখো।
‘তামিম বললো,রুবি চলো, এখানে আর থাকা যাবে না।
‘তা জামাই বাবু এতো তাড়া কিসের? ওয়েট করেন আর একটু।
লামা রবিনকে ছাড়িয়ে নিলো। তবে রবিনকে শর্ত নামায় সাইন করতে হয়েছে। আর কখনো এমন করবেনা।
সবাই মিলে বাসায় আসলো। রবিন বাসায় না এসে সোজা চলে গেলে ইরহাদের বাসার উদ্দেশ্য। যেভাবেই হোক ইরহাকে ফেরাতে হবেই।রবিন জানে কাজটা সহজ না তবুও যত কষ্ট হোক সে এটা করবেই। ভুল যেমন করেছে তেমন শুধরে নেবে।রবিন হয়তো জানেনা, কিছু ভুল কখনো শুধরে নেয়া যায় না। বিয়ে কোন পুতুল খেলা নয়! চাইলেই বিয়ে দিলাম আবার ভালো না লাগলে ভেঙে দিলাম। ডিভোর্স /তালাক হওয়ার পরে ফেরার পথ ধর্ম মতে বন্ধ। অনুতপ্ত হলেও কিছু,কিছু ভুলের ক্ষমা হয় না,চাইলেও সব ভুল শুধরে নেয়া যায় না!
“যে ঘর অগোছালো হয়, তা গোছানো যায়। যে ঘর বানের জলে ভেসে যায়! তা কখনো ফিরে পাওয়া যায় না৷
✨ইন্টারভিউ শেষ করে বাড়ি ফিরছে ইরহা। আজকের ইন্টারভিউয়ের শেষেরটায় আশা করা যায় চাকরিটা হবে। গুমোট আকাশ হয়তো এক্ষুনি ধরনি কাঁপিয়ে বৃষ্টি নামবে। ইরহা রিকশায় বসে আছে আর বিশ মিনিটের পথ। মনে মনে চাইছে যাতে বৃষ্টি না হয়। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই বৃষ্টি শুরু হয়ে গেলো।
ভাড়া মিটিয়ে বাসায় ঢুকতে ঢুকতে প্রায় ভিজেই গেলো ইরহা।
ইরহা বাসায় ঢুকে সোজা নিজের রুমে চলে গেলো। কাভার্ড থেকে ড্রেস নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকলো ফ্রেশ হতে।
বসার রুমে বসেছিল এক যুবক যে বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে ছিলো ইরহার দিকে। ইরহা চলে যেতেই লোকটি বলে,আন্টি ইরহা এখানে?
“হ্যাঁ বাবা ও তো এখানেই থাকে।
#চলবে
হ্যাপি রিডিং 🥰