#কোন_সুতোয়_বাঁধবো_ঘর
#নুসাইবা_ইভানা
পর্ব-২
ইরহার মাথায় কথাটা আসতেই দ্রুত নিজের রুমের দিকে আসে। দরজার সামনে দাঁড়াতেই পা থমকে যায়। নিজের চোখে দেখছে রবিনের ঠোঁটের সাথে সেই মেয়েটার ঠোঁটের আলিঙ্গন। হাতে থাকা চায়ের ট্রেটা নিচে পরে যেতেই। সামনের মানুষ দু’টো নিজের মধ্যে কিছুটা দূরত্ব বাড়িয়ে নেয়।
রবিন ইরহার দিকে তাকিয়ে বলে, তুমি যা ভাবছো তা ঠিক না৷ আসলে একটা ভুলবোঝাবুঝি ক্রিয়েট হচ্ছে ।
ইরহা নিজেকে সামলে নিয়ে বলে,কি এমন ভুলবোঝাবুঝি! যার কারণে চার ঠোঁটের মিলন ঘটাতে হয়?
‘লামার হাতে একটা ফাইল, রবিন ফাইল দেখিয়ে বলে,এই ফাইলের জন্য যতসব হয়েছে। এটা চেক করাতে চেয়ে মিস লামা আমার উপর বেশি ঝুঁকে পরেছে। আর দূর থেকে দেখে তুমি ভুল ভাবছো।
‘তুমি বলতে চাইছো আমার চোখের দেখা ভুল!
‘হুম ভুল। ইরহু তোমার কি হয়েছে!তুমি আমাকে বাহিরের মানুষের সামনে ছোট করছো? কি ভাববে মিস লামা! যে তুমি আমাকে বিশ্বাস কর না? সরি মিস লামা, আমার ওয়াইফের বুঝতে ভুল হয়েছে।
‘ইট’স ওকে স্যার। তবে এভাবে সত্যিটা না জেনে ভুল বোঝাটা ম্যামের ঠিক হয়নি। আমি তো কারেকশনের জন্য আপনাকে ফাইলের মেইন পয়েন্টগুলো দেখাচ্ছিলাম। কিন্তু বুঝতে পারিনি ম্যাম এতো নিচু মানসিকতার। সরি ম্যাম আমারই ভুল হয়েছে। আপনাদের বাসায় আর আসবো না। আসি স্যার সুস্থ হয়ে দ্রুত অফিসে আসুন। সবাই আপনার অপেক্ষায়।
ইরহা পুরোপুরি বোকা বনে গেলে! কি হলো এটা? চোখের সামনের দৃশ্যটা মূহুর্তে মিথ্যে হয়ে গেলো! আসলেই কি আমার চোখের দেখা ভুল ছিলো?
‘কি ভাবছো ইরহা। আমাকে তো ছোট করেছোই, আর কি চাও?
ইরহা কোন কথার উত্তর না দিয়ে রুম থেকে বের হয়ে আসলো। ডাইনিং রুমের একটা চেয়ারে থম মেরে বসে পরলো। বারবার মনে মনে দৃশ্যটা রিপিট করছে। নাহহহ এতো বড় ভুল তো হতে পারে না। তাহলে কি আমি যা ভাবছি তাই সঠিক? হাত বাড়িয়ে জগ থেকে গ্লাসে পানি ঢেলে কয়েক চুমুক পান করলো। নিজের সাথে এখন যুদ্ধ চলছে। আসলে সত্যিটা কি? যেটা চোখের দেখা নাকি যেটা রবিন বলছে! মানুষ তো বলে, চোখের দেখাও ভুল হয়।
ইরহা রুম থেকে বের হতেই রবিন নিম্ন কন্ঠে রাগী স্বরে বলে, মানা করেছিলাম আমার বাসায় আসতে! কেন এসেছো?
‘আই নিড ইউ রবিন। আমি আর তোমাকে না দেখে থাকতে পারছিলাম না। আর তোমাকে এভাবে এতোদিন পর দেখার পর কন্ট্রোল করতে পারিনি। তোমাকে একটু আদুরে চুম্বন করার থেকে নিজেকে আটকাতে পারিনি। সরি রবিন তোমাকে ভালোবাসতে যেয়ে বিপদে ফেলার জন্য!
‘যাস্ট পাঁচ দিন হয়েছে আমাদের দেখা হয় না।কিন্তু কথা তো বন্ধ নেই টেক্সট চলছে। কথা হচ্ছে, তারপরেও এতো ডেস্পারেট হওয়ার কি আছে!
‘বুঝেছি বউয়ের আঁচলের তলে পাঁচদিন থেকে আমার ভালোবাসা ভুলে গেছো। তাই এভাবে কথা শোনাচ্ছ। আমার ভালোবাসা আর আবেগের কোন মূল্য নেই!
‘লামা তোমার সাথে আমি পরে কথা বলবো এখন তুমি প্লিজ চলে যাও।
‘চলে যাবো! এই রবিন তুমি সত্যি আমাকে ভুলে যাচ্ছো! আর তোমার ওয়াইফ আজ জানুক কাল জানুক জানতে পারবেই। এটা নিয়ে এতো ভাবার৷ কি আছে?
‘এখন ইরহার যা কন্ডিশন, এই অবস্থায় ওর সামনে এসব আসলে বিষয়টা আরো ঘোলা হবে। প্লিজ তুমি চলে যাও আর দু’চার দিনের মধ্যে আমি তো আসছি।
‘যাকে ছেড়ে দিয়ে আমাকে বিয়ে করতে চাইছো। তারজন্য এখনো এতো দরদ!আর আমার ভালোবাসার দু’পয়সার দাম নেই,তোমার কাছে?
‘তুমি ভুলে যাচ্ছো লামা আমাদের মধ্যে কি কথা হয়েছিল, আই লাভ ইউ। এটাই সত্য। তবে ইরহা আমার প্রথম স্ত্রী প্রথম দ্বায়িত্ব সেটা আমি অস্বীকার করতে পারিনা৷ তাই প্লিজ পাগলামো করো না। এখন যাও।
লামা আর কিছু না বলে বের হয়ে আসবে এমন সময় ভাঙ্গা কাপের টু’ক’রোতে পা কে’টে যায় বেশ খানিকটা। সাথে সাথে চিৎকার করে লামা।
লামার চিৎকারের আওয়াজ শুনে, শেফালি বেগম ছুটে আসে, ইরহাও উঠে আসে,
শেফালী বেগম লামাকে ধরে বেডের উপর বসায়। বেশ খানিকটা কেটে গেছে, রক্ত দেখে রবিনও হাইপার হয়ে যায়।
শেফালী বেগম বলেন, কি ইরহা তোমার বোধ বুদ্ধি কি দিনদিন লোপ পাচ্ছে! হাতে থেকে না হয় পরে গেছে কাউকে বলে পরিস্কার করাবে তো। তুমি না পারলে আমাকে বলতে।
ইরহা ঠায় দাঁড়িয়ে আছে, রবিন ধমকের সুরে বলে, দাঁড়িয়ে না থেকে ফাস্টএইড বক্স নিয়ে এসো। দেখছোই তো কত খানি কেটে গেছে।
ইরহা ভায়োডিন দিয়ে পরিস্কারর করে একটু মলম লাগিয়ে,বেন্ডেজ করে দিলো। সরি আপু আমার খেয়াল ছিলো না৷ আমার জন্য আপনি এতোটা আঘাত পেলেন৷
‘এখন সরি বলে কি হবে!আমার যন্ত্রণা আর ঝড়া রক্ত ফিরে আসবে? স্বামীকে সন্দেহ করার কাজ ছাড়া আর কোন কাজ পারেন আপনি?
‘ইরহা ইটের জবাবে পাটকেল দিতে পারে, কিন্তু নিজের হ্যাসবেন্ডের জন্য চুপ রইলো।
‘রবিন বলল, মিস লামা এবার বেশি বেশি হয়ে যাচ্ছে। বেখেয়ালি ভাবে হয়ে গেছে। এতো প্যানিক করার কি আছে! ইট’স ওকে। ইরহা তুমি এক কাজ করো, মিস লামা কে গেস্ট রুমে নিয়ে যাও।
লামা কটমট চোখ করে রবিনের দিকে তাকালো। রবিন চোখ দিয়ে কিছু ইশারা করছে।
‘এই দৃশ্যটুকু ইরহার দৃষ্টিগোচর হয়নি। কথায় আছে না। অনেক সময় দেখেও চুপ থাকতে হয়। ইরহা ভদ্রতার খাতিরে চুপ করে রইলো। নম্র স্বরে বলল, আপু চলুন আমার সাথে।
শেফালী বেগম কাঁচ পরিস্কার করতে করতে বলে, আর কত রঙ দেখবো।প্রথম মহিলা মনে হয় যে মা হচ্ছে। যত্ত রঙ ঢং আমার কপালে জুটলো।আর তুমি কই যাও। তোমার নিতে হবে না। এইটুকু পরিস্কার৷ করে আমি নিয়ে যাচ্ছি। নবাব নন্দিনী তুমি যে দুপুরের রান্না বসাও। ফ্রিজ থেকে মাছ, মাংস বের কর, সব গুছিয়ে নাও।
ইরহা কিচেনে এসে সব গুছিয়ে নিচ্ছে এমন সময় ইরহার ফোনটা বেজে উঠলো। ফোন কানে তুলতেই ফরিদা বেগম ( ইরহার মা) বললেন, কিরে মা কেমন আছিস?
‘এতোক্ষণের চেপে রাখা কষ্ট যেনো মূহুর্তে জেগে উঠলো। নিজের অজান্তেই চোখ দুটো ভরে উঠলো, গলা আটকে আসছে, মনে হচ্ছে গলায় কিছু বিঁধে আছে। যার দরুন কথা বের হতে চাইছে না৷
‘কিরে মা চুপ করে আছিস কেন? শরীর ভালো নেই?
‘ইরহা ফোনটা কানের পাশ থেকে একটু দূরে সরিয়ে।নিজেকে একটু স্বাভাবিক করে বলে, এই তো মা ভালো আছি।
‘কিরে মা তোর কি হয়েছে বল তো!তোর গলা এমন শোনাচ্ছে কেন?
‘ঘুমিয়ে ছিলাম তো তাই৷ মা, তোমাকে বললাম লাবিবাকে পাঠাতে কবে পাঠাবে?
‘লাবুর তো পরিক্ষা। তবে আজ নাদিম কে পাঠিয়েছি তোদের বাসায়। আজ তোর মেজো ফুপি এসেছিল।কত কি রান্না করলাম। অসুস্থ মেয়েটাকে রেখে কি ভাবে মুখে তুলি! তাই পাঠিয়ে দিলাম।
‘এসবের কি দরকার৷ ছিলো। ভাইয়ার অফিস নেই।
‘নারে আজ যায়নি।নিশাত বলল আজ ছুটি নিয়েছে।
‘আচ্ছা মা পরে কথা বলবো। এখন রাখি। বলে কল কেটে দিয়ে কেঁদে ফেললো। ইরহা চিন্তা করছে, ইশশ মেয়ে হওয়া কত কঠিন৷ ঠোঁটের কোণে আসা কথাটাও গিলে ফেলতে হয়। চোখের জলকে আটকে দিতে হয়।বলতে চেয়েও থেমে যেতে হয়। সংসার বুঝি এতোই কঠিন৷ মা’গো তুমি জেনে কেন এই কঠিন পথে পাঠালে! এরচেয়ে একা থাকাই তো ঢের ভালো। একহাতে ওড়নার আঁচল মুখে চেপে রেখে কেঁদে যাচ্ছে ইরহা।
#চলবে