#কোন_এক_প্রণয়_প্রহরে
#শেষ_পর্ব
#মহুয়া_আমরিন_বিন্দু
সকালে ফোনের বি*কট শব্দে ঘুম ভাঙ্গে ফিহার,পাশে তাকিয়ে দেখে এখনো ঘুমাচ্ছে প্রত্যেয়।ফিহা মোবাইলটা কানে নিতেই ওপাশ থেকে সৌরভ কিছুটা কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বলে
,,দোস্ত, প্রেমিকা কেমনে সামলাতে হয় টিপস দে!
,,আজব সকাল সকাল কি বুজরুকি শুরু করেছিস।আমাকে ঘুমাতে দে ভাই,এসবে আমার কোনো ধারনা নেই,আমি কি জীবনে প্রেম করছি নাকি।
,,দেখ মাত্র দুইদিন হইলো মিতার সাথে প্রেম করা শুরু করেছি, ও বলেছে যদি ভালো প্রেমিক না হতে পারি আমাকে ড্রেনের পানিতে চুবিয়ে অন্য ছেলেকে বিয়ে করে নিবে!
,,এই তোদের দুইটার ফালতু প্রেম কাহিনি শুনাবি না আমাকে,ফ্রেন্ড হইয়াই তো দুইটার জীবনে ঝ গড়া থামেনি এখন কি করে আবার প্রেম আসবে,আমি ঘুমাবো ভাই নিজেদের টা নিজেরা সামলা না হয় ব্লক মেরে দিবো দুইটাকে!
,,শোন শোন আরেকটা কথা ছিলো।
ফিহা বিরক্তি নিয়ে বলে
,,আচ্ছা বল।
,,তুই আজকে ভার্সিটি আসবি না,আমি আর মিতা আসবো তোরে নিতে।
,,আমার বাসা তুই চিনিস?আসবি কি করে?
,,যদি আন্দাজ ঠিক হয় তো ঠিক পৌঁছে যাবো।
,,যা খুশি কর।
ফিহা বিরক্তি নিয়ে বসে আছে,প্রত্যেয় ওর কথা বলার সময় উঠে গেছে এভাবে বসে থাকতে দেখে জিজ্ঞেস করে
,,কি সমস্যা?
,,কিছু না, ওই মিতা আর সৌরভ প্রেম করছে এখন আমার কাছে টিপস চায়।সকাল সকাল বিরক্ত করা ছাড়া আর কিছু পারে না এই ছেলে।আবার বললো তোর বাসায় আসতেছি তোকে নিয়ে যাবো।
,,কিহ্!
,,হ্যাঁ এতো অবাক হওয়ার কি আছে,আর আসতে পারবে নাকি সন্দেহ বাসার এড্রেসই তো কোনো দিন বলি নাই ওদের। দুইটার মাথার তার আগেই ছিঁড়া ছিলো এখন তো আবার করে প্রেম এবার পাবনার টিকিট বুক করতেই হবে।
,,সত্যি ওরা প্রেম করে?
,,হুম
,,ওকে চলো তাহলে আজ দুজন মিলে ওদের জন্য নাস্তা বানাবো!
ফিহা অবাক হয়ে বলে
,,ওরা বাসাই তো চিনে না, মজা করেও তো বলতে পারে নাকি।আপনি সিউর হচ্ছেন কিভাবে?
প্রত্যেয় উত্তর না দিয়ে ফিহার হাত ধরে ফ্রেশ হতে চলে যায়।ফিহা ভেংচি কাটে এই ছেলে যে কোনো প্রশ্নের জবাব ভালো ভাবে দিবে না তা জানা আছে ফিহার।
—–
সকাল নয়টা কলিং বেল বেজে উঠায় ফিহা যায় দরজা খুলতে, প্রত্যেয় গেছে ফ্রেশ হতে।ফিহা দরজা খুলতেই এক মেয়ে এসে দাঁড়ায় দরজায়।
ফিহা ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে
,,কাকে চাই?
মেয়েটি যেনো ভুত দেখার মতো চমকেছে,প্রত্যেয়ের বাসায় মেয়ে আসলো কোথা থেকে!মেয়েটা চিল্লিয়ে বলে
,,এই মেয়ে তুমি কে?এখানে কি করছো?প্রত্যেয় কোথায়?
,,উনি তো ভিতরে আপনি কে আগে বলুন।যাকে তাকে বাসায় ঢুকতে দিবো না আমি!
,,তোমার সাহস তো কম না, আমাকে ঢুকতে দিবে না মানে।জানো আমি কে?
,,না ওইটাই জানতে চাচ্ছি তখন থেকে।বলুন আপনি কে?
,,প্রত্যেয়ের হবু স্ত্রী!
,,আর আমি প্রত্যেয় বিয়ে করা স্ত্রী!
,,এই মেয়ে কি ধরনের মজা এটা, সরো সামনে থেকে।ফিহা কে পাশ কাটিয়ে মেয়েটা ভিতরে ঢুকে পড়লো, প্রত্যেয় বের হলো তখন মেয়েটি দেরি না করে গিয়ে প্রত্যেয়কে জড়িয়ে ধরলো।আকষ্মিক ঘটনায় প্রত্যেয় অবাক হলো ফিহা তো তাকে এখনো জড়িয়ে ধরা অব্দি যায়নি তাহলে কে,ফিহাকে সে ভালো করেই চিনে।এতো ভাবনার মধ্যে চোখ পড়ে দরজার সামনে,ফিহা রাগে লাল হয়ে গেছে,প্রত্যেয় বুঝলো ভুল কিছু হচ্ছে।
ফিহা দরজা ঠা স করে লাগিয়ে এসে রুমে চলে গেলো হন হন করে।
প্রত্যেয় নিজের থেকে মেয়েটিকে সরায় এক ঝটকায়। নিলা কে দেখে মেজাজ খারা প হয়ে ওর,এই মেয়েটার জ্বা লায় শেষ, এখন বাসায় চলে এসেছে না জানি কি কি বলেছে ফিহাকে এই মেয়ে।
প্রত্যেয় নিলাকে ধ মক দিয়ে বলে
,,কি ধরনের অভদ্রতা এগুলো,তোমার সাহস তে কম না আমাকে জড়িয়ে ধরেছো কেনো?সীমা অতিক্রম করতে মানা করেছিলাম তোমাকে।
নিলা মৃদু কেঁপে উঠে আওযাজে,ওই মেয়েটা কি বলছিলো প্রত্যেয় ও নাকি তোমার বউ?
,,হ্যাঁ ঠিকই বলেছে।তাতে তোমার কি সমস্যা?
,,তুমি তো সবই জানো আমি তোমাকে ভালোবাসি,খালামনি তোমার সাথে আমার বিয়ে ঠিক করেছে,আর তুমি এই মেয়েটা কে বিয়ে করে নিয়েছো!
,,আমি তো তোমাকে কোনো দিন বলিনি যে আমি বিয়েতে রাজি,আগ বাড়িয়ে উল্টা পাল্টা ভেবে নিয়োছো, এখন এসে সিনক্রিয়েট করছো।সরো সামনে থেকে।
প্রত্যেয় গেলো রুমের দিকে,ফিহা বো*ম হয়ে বসে আছে
প্রত্যেয় নরম গলায় ডাকলো
,,ফিহু।
,,আপনি এ কারনেই আপনার বাবা মাকে বিয়ের কথা জানাননি তাই তো?আপনি আমাকে কেনো বিয়ে করেছেন? যদি ওই মেয়েটাকে বিয়েই করার ছিলো আমার সাথে মিথ্যা অভিনয় কেনো করলেন প্রত্যেয়?
,,ফিহা কি বলছো এসব অভিনয় কেনো করতে যাবো?আমি তোমাকে ভালোবাসি!তাই বিয়ে করেছি।
এর আগে প্রত্যেয় একবারও ভালোবাসার কথা বলেনি ফিহাকে।ফিহা চমকে উঠলো কিছুটা,প্রত্যেয় এগিয়ে এসে জড়িয়ে ধরলো তাকে
,,এভাবে রাগ করছো কেনো?অন্য কারো সাথে সহ্য করতে পারছো না আমাকে?
,,না!পারছি না,পারবোও না।ওই মেয়েটা আপনাকে জড়িয়ে কেনো ধরবে,আপনি তো শুধু আমার ও কেনো তাহলে,,,
ফিহা আর কিছু বলতে পারলো না,ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না করে দিয়েছে।প্রত্যেয় জানে ফিহা তাকে ভালোবাসে, এই পৃথিবীতে ওর আপন বলতে প্রত্যেয়ই আছে,ওকে কারো সাথে দেখলেও মনে হয় ফিহার বুঝি কেউ নেই।একাকিত্বের ভয়টা ঝেকে বসে মনে।এইধরনের মানুষের যে জিনিসটা নিজের তার এক ফোঁটাও অন্যকে সে দিতে নারাজ।
প্রত্যেয় ফিহাকে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু দিলো।ফিসফিস করে বললো
,,বউ আমার এভাবে কাঁদলে কিন্তু আমার এখনই প্রেম প্রেম পেয়ে যাবে পরে কিন্তু আর বাঁধা দিতে পারবে না।
,,,,,
এতোকিছুর মাঝে দরজা লক করতে ভুলে গেছে ফিহা।সৌরভ, মিতা এসে হুড়োহুড়ি করে ঢুকলো ভিতরে, সৌরভ তো শতভাগ নিশ্চিত ফিহার জামাই তার নিজের ভাই আজ তো সে হাতে নাতে ধরবেই।
সৌরভ বাসায় ঢুকে প্রত্যেয়ের রুমের সামনে নিলা কে দাড়িয়ে থাকতে দেখে অবাক হয়, এই আপ দ এখানে আসলো কেন?কি দেখছে এমন করে রুমের ভিতর!
মিতা সৌরভ দরজায় উঁকি মারলো,মিতা তো চোখ বড় বড় তাকিয়ে আছে,
ফিহা আর প্রত্যেয় ভাইয়া এক সাথে!চোখে কি কম দেখা শুরু করেছে নাকি?মিতা কনুই দিয়ে গুঁতো মারে সৌরভ কে।সৌরভ দাঁত কেলিয়ে বলে
,,দেখলি তো আমার কথাই ঠিক।এদের রোমান্স বের করছি আমি।
সৌরভ চেচিয়ে বলে
,,এই ভাইয়া তুমি বিয়ে করে বউ নিয়ে তিন বেলা রোমান্স করছো আর আমাদের একবার জানানোর প্রয়োজন ও মনে করোনি?
নিলা তো প্রত্যেয় ফিহা কে এক সাথে সহ্যই করতে পারছে না,ন্যাকা কান্না করে মোবাইল হাতে ফোন লাগালো তার খালামনিকে।
,,খালামনি তোমার ছেলে বিয়ে করে নিয়েছে,তুমি জলদি আসো,এর একটা বিহিত করো।
মিতা আটকাতে গিয়েও ব্যার্থ এখন যদি ওর খালামনি এখানে চলে আসে তো সব ঘেঁটে যাবে।এই মেয়েটা এমন কেনো।বিরক্ত নিয়ে গিয়ে বসলো সোফায়।
ফিহা এগিয়ে এসে সৌরভের সামনে দাঁড়ায় ভ্রু উঁচিয়ে জিজ্ঞেস করে
,,তোরা উনাকে চিনিস?
,,চিনবো না আবার, একই মায়ের পেটের ভাই।কিন্তু এখন মনে হচ্ছে আমাকে চিনবেই না বউ পেয়েছে না।
তীব্র অভিমান সৌরভের কথায়।প্রত্যেয় নির্বাক, শান্ত হয়ে বসে আছে।
ফিহা এগিয়ে যায় প্রত্যেয়ের দিকে
,,আপনি বলেননি কেনো সৌরভ আপনার ভাই?
ফিহা কিছুটা ভাবুক হয়ে আবার বলে
,,ওহ এই জন্যই বুঝি ভার্সিটিতে আমাকে রেখে একদম ভুতের মতো উবে যেতেন!কথা বলছেন না কেনো এখন?
ডাকা*তের মতো বিয়ে করে এখন চুপচাপ বসে আছে, সৌরভ তোর ভাইকে নিয়ে চলে যা তো এটাকে এখন আমার একদম সহ্য হচ্ছে না!
সৌরভ বলে উঠে
,,আব্বু তো ভাইয়াকে মে*রে আকাশে পাঠিয়ে দিবে সে ভয়ে হয়তো লুকিয়ে বিয়ে করেছে।তাই না ভাইয়া?
প্রত্যেয় রাগী চোখে তাকায় সৌরভের দিকে
,,কারা যেনো প্রেম করছে,প্রেম প্রেম গন্ধ ছড়িয়েছে বলবো নাকি আব্বু কে হাওয়া সব বের হয়ে যাবে!
,,থ্রে ট দিচ্ছো তো দাও একবার আম্মু আসুক আজকে।
,,,এরই মধ্যে কলিং বেল আবার বেজে উঠলো নিলা ছুটে গিয়ে দরজা খুললো,বাকি সবাই সোফায় বসে আছে।
রুমে ঢুকেই চেচিয়ে উঠলেন সীমা বেগম
,,প্রত্যেয়ের এতো বড় সাহস বিয়ে করবে না করবে না করে একদম বিয়ে করে সংসার করছে তাও আমাকে কিছু জানায়নি আজ ওর এক দিন কি আমার একদিন।
ফিহা কে আগে থেকেই চিনতেন সীমা বেগম সৌরভের বন্ধু হিসাবে,তিনি ড্রয়িং রুমে উপস্থিত সবাইকে দেখলেন একবার,আবার বললেন
,,বউটা কোথায়?রুমে কি ঘাপটি মেরে বসে আছে নাকি,আজ দুটোকে ধরে দিবো আমি।আমাদের বললে কি বিয়ে দিতাম না নাকি!
এই মিতা,ফিহা বলতো ওর বউ কোথায় যা ধরে নিয়ে আয়।
ফিহা তো হাত কচলাচ্ছে বসে বসে। মিতার দিকে তাকালো সে কাচুমাচু হয়ে।এর মধ্যে নিলা বলে উঠলো
,,আন্টি তুমি বউ কে চোখে দেখতে পাচ্ছো না এখানেই তো আছে!
সীমা বেগম বললেন
,,এখানে তো সৌরভ আর ওর ফ্রেন্ড ছাড়া কেউ নাই।
,,ফিহা নামক মেয়েটাই তো তোমার ছেলের বউ!
,,কিহ্!!
সৌরভ ওর মাকে টেনে নিয়ে সোফায় বসায়,পানি খেতে দেয়।সীমা বেগম কিছুটা শান্ত হয়।
,,প্রথম থেকে সব বল আমায় কি হয়েছে?
,,সৌরভ সব গড়গড় করে বলে দিলো এই মুহুর্তে ভাইকে না বাঁচালে, ওর নিজের প্রেম করার সিক্রেট যে ফাঁস করে দিবে তা ভালো করেই জানে।
ফিহা মাথা নিচু করেই বলে
,,আন্টি বিশ্বাস করো আমার কোনো দোষ নাই।আমি তো জানতামই না এই দজ্জা ল মার্কা পোলাটা তোমার!
,,আজ আসুক তোর বাপ! উনি যা বলবেন তাই হবে বেশি বাড় বেড়েছে তোর প্রত্যেয়।
,,আব্বুকে ডাকার কি দরকার ছিলো আম্মু।
,,এখন গলার স্বর কমে গেছে কেনো, অফিস থেকে আসছে তোর আব্বু,ফিহার প্রতি আমার কোনো রাগ নেই,ওর মতো একটা ভদ্র শান্তশিষ্ট মেয়েকে যে তোর মতো একটা রাম ছা*গল কিভাবে বিয়ে করেছে তা তো বুঝতেই পারছি,না হয় সজ্ঞানে তোরে কে বিয়ে করতো!
নিলা বলে উঠে
,,আমি করতাম আন্টি!
,,এই চুপ কর তো নিলা।তোদের এই বিয়ে বিয়ের চক্করে আমার বি পি হাই হয়ে যাচ্ছে!
বাসায় প্রবেশ করেন তাজরুল চৌধুরী, ছেলের কর্মকান্ড শুনে বিশ্বাসই করতে পারছেন না তিনি।তার এই ছেলে এরকম করেছে বিশ্বাস হচ্ছে না সৌরভ হলেও তিনি বুঝতেন ওটা একটু দুষ্টু প্রকৃতির। মাথায় হাত তার নিজেরও।কিছুক্ষণ পর আসলো ফিহার মা সবাই মিলে বেশ কিছুক্ষণ আলোচনা করার পর সব কিছু মেনে নেওয়া হলো।তবে একটাই শর্ত সীমা বেগমের, ছেলের বউ নিয়ে তিনি বাসায় চলে যাবেন।প্রত্যেয় না করতে গিয়েও পারেনি,মা বেকে বসলে তার কপালেই শনি আছে।তাই সব কিছর ঝা মে লা মিটিয়ে বিকেলের মধ্যে নিজেদের বাড়িতে গিয়ে উঠলো ওরা।এতোটা দ্রুত সব কিছু ঘটেছে,যে ফিহা এখনো ঘোরের মধ্যেই আছে।
,,,,,,
দিন গুলো সুন্দর ভাবেই কাটছিলো ফিহার,যতদিন না সাদাব নামক কালো ছায়া আবার ফিরে আসে।প্রত্যেয়ের বাড়িতে যাওয়ার পর একমাস কেটেছে হেসে খেলে।বেলায়েত খন্দকার ও মেনে নিয়েছে সব কিছু শুধু মেয়ের জামাইকে মানতে পারেনি এখনো,বিয়ের প্রস্তাব দিলে তিনি ফিরিয়ে দিতেন না তিনি ওতোটাও কঠোর তো নন।
সেদিনের মতো ভার্সিটি থেকে ফিরছিলো ফিহা আজ সৌরভ মিতা ডেইটে গেছে দুটোর মাঝে হাড্ডি হতে চায়নি সে,প্রত্যেয়ও অফিসে তাই আর তাকেও বলেনি,একাই যাচ্ছে আজ কোথা থেকে সাদাব এসে সামনে দাড়ালো
ফিহা কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো,দু কদম পিছিয়ে গেলো সে।
সাদাব হেসে বললো
,,কেমন আছো ফিহা?অনেক দিন পর দেখছি তোমায়!
,,এ ই তো ভালো আছি!আপনি কেমন আছেন?
,,তা জানা বেশি জরুরি না।তা বিবাহিত জীবন কেমন চলছে?
,,ভালো।আমি এখন বাসায় যাবো দেরি হয়ে যাচ্ছে।
,,এতো পালাই পালাই করো কেনো?আমার সাথেও কিছু সময় থাকো!
,,না।রাস্তা ছাড়ুন আপনার সাথে আমার কথা সেদিনই শেষ হয়ে গেছে এখন আর বলার মতো কিছু নাই।আমি আমার স্বামীর সাথে ভালো আছি।
সাদাব ফিহার হাত টেনে ধরলো,ফিহা আঁতকে উঠলো হাত ছাড়ানোর জন্য মোচড়ামুচড়ি শুরু করে দিলো।
,,ছাড়ুন বলছি
,,না ছাড়বো না কি করবি তুই?তোকে তো কবেই আমি শেষ করে দিতাম, প্রত্যেয়টা মাঝখান থেকে এসে সব প্ল্যান বেস্তে দিলো।তোর বাপের জন্য আমার বাপের জেল হয়েছে, তোর বাপকে তো একটা না একটা শা স্তি দিতেই হবে,নিজের মেয়ের সম্মানের বিনিময়ে তাকে এর মূল্য দিতে হবে।ওইদিন তো খুব নিখুঁত পরিকল্পনা করে মিডিয়া ডেকে তোকে বেজ্জ ত করেছিলাম কিন্তু প্রত্যেয় সব মিডিয়া কোম্পানির মুখ বন্ধ করে দিলো। বিয়ে করে সারাজীবনের জন্য নর*ক দেখাতে চেয়েছিলাম তোকে৷ সেখানেও প্রত্যেয় তোকে বাঁচিয়ে নিয়েছে,আজ তোকে কে বাঁচাবে?এখন তো প্রত্যেয় ও নেই আর ও আসার আগে তুই হবি ধর্ষি*তা!পুরো দুনিয়া জানবে তুই কে। বলেই কুৎসিত হাসলো সাদাব।
ফিহা নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারলো না এই ছেলেটা এতো নিকৃষ্ট!
ফিহাকে টেনে নিয়ে গেলো সাদাব,আটকে রাখলো হাত পা বেঁধে।
এদিকে বিকাল হয়ে গেছে ফিহা বাড়ি ফিরেনি,সৌরভ নিজেও অবাক ফিহা তো কখন বাড়ি চলে আসার কথা।সীমা বেগম হন্তদন্ত হয়ে কল লাগালেন প্রত্যেয়ের ফোনে।প্রত্যেয় সব ছেড়ে বেড়িয়ে পরে,তার বুঝতে বাকি নেই কার কাজ। সে পুলিশ স্টেশনে যায় আগে,পুলিশ কে ইনফর্ম করে।ফিহার মোবাইল থেকে লোকেশন জেনে ছুটে সে দিকে।
,,,,,,
সাদাব এগিয়ে আসছে ফিহার দিকে, ফিহা প্রাণ প্রণে পিছিয়ে যাচ্ছে, বার বার হাত জোর করে বলছে যেনো তার এরকম ক্ষ তি না করে।সাদাব এসে ফিহাকে বিছানায় ফেলে দেয়,টান দিয়ে সরিয়ে ফেলে ওড়না, বুকে হাত দেওয়ার আগেই কেউ একজন এসে লাথি দিয়ে ফেলে দেয় ওকে।এলোপাতাড়ি মা,রতে থাকে সাদাব কে প্রত্যেয়।ফিহা ওড়না জড়িয়ে কাঁদতে থাকে এক পাশে দাড়িয়ে। পুলিশ এসে নিয়ে যায় সাদাব কে।ফিহা গিয়ে জড়িয়ে ধরে প্রত্যেয়কে।প্রত্যেয় রাগ দেখিয়ে বলে
,,এখন আমাকে একদম ধরবে না তুমি কতোবার বলেছি একা একা আসবে না,আমাকে একবার কল করে বলতে পারলে না তুমি!আজ যদি কিছু হয়ে যেতো তখন আমার কি হতো একবার ও ভেবে দেখেছো তুমি?প্রত্যেয় ফিহাকে ছাড়াতে চাচ্ছে ততই ফিহা প্রত্যেয়কে জড়িয়ে ধরছে শক্ত করে।
একটা সময় প্রত্যেয়ও জড়িয়ে ধরে ফিহা কে।
,,হুশ!আর কাঁদে না,আমি থাকতে আমার ফিহু পাখিকে কেউ ফুলের টোকাও দিতে পারবে না।
,,সরি!আমি আর কখনো একা একা আসবো না।আমার উপর রাগ করে থাকবেন না প্লিজ।
প্রত্যেয় জবাব না দিয়ে ফিহা কে নিয়ে বাসায় চলে যায়।
——
রাতের আকাশে আজ পূর্ণিমার চাঁদ উঠেছে, তাঁরা গুলো জ্বলজ্বল করে মুক্তোর মতো চিকচিক করছে,বারান্দায় দাড়িয়ে আছে প্রত্যেয়।ফিহার উপর উপরে উপরে রাগ দেখাচ্ছে সে আসার পর থেকে মেয়েটা কতোবার কথা বলার চেষ্টা করছে আর ও এরিয়ে যাচ্ছে বার বার।
প্রত্যেয় নিজের পিঠের উপর কিছু একটার ছোঁয়া পেলো,ফিহা পেছন থেকে তাকে জড়িয়ে ধরে দাড়িয়ে আছে।
প্রত্যেয় বলতে গিয়েও বলতে পারেনি ছাড়ো!ফিহার কথা শুনে
“আপনি বলেছিলেন কোনো এক প্রণয় প্রহরে আপনি অপেক্ষা করবেন আমার ভালোবাসার!তবে আজ এসেছে সে প্রহর, এই ভরা পূর্নিমার তিথিতে প্রণয় এসে ধরা দিয়েছে আমার মনে আপনার নামের।আমি ভালোবাসি প্রত্যেয়,আপনাকে অনেক বেশি ভালোবাসি”
প্রত্যেয় ফিহাকে টেনে নিজের মুখোমুখি দাড়ি করায় চাঁদের আলো এসে মুখে পড়ছে ফিহার চোখ বন্ধ করে দাড়িয়ে আছে মেয়েটি।লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছে নাকের পাটাতন,মৃদু কাঁপছে নেত্রপল্লব।
প্রত্যেয় মৃদু কন্ঠে ডাকলো
,,তাকাও ফিহা!
ফিহা চোখ খুলে তাকালো,দুজনের গভীর দৃষ্টি মিললো,যেখানে তাকিয়ে কাটিয়ে দেওয়া যাবে দীর্ঘতম সময়।
,,আবার বলো!
ফিহা নির্দ্বিধায় বললো
,,ভালোবাসি!
প্রত্যেয় জড়িয়ে ধরে বললো আমিও ভালোবাসি ফিহু পাখি।
~সমাপ্ত ~