কোন এক প্রণয় প্রহরে পর্ব-০৪

0
98

#কোন_এক_প্রণয়_প্রহরে
#পর্ব৪
#মহুয়া_আমরিন_বিন্দু

ফিহা কে ভার্সিটি নামিয়ে এক প্রকার গাড়ি নিয়ে ছুটে চলে যায় প্রত্যেয়,তার এমন কান্ডে কিছুক্ষণ থ মেরে দাড়িয়ে থাকে সে,কি হলো ব্যাপার টা, এই ছেলে এমন অদ্ভুত কেনো।ফিহা তাকিয়ে আছে ছুটে চলা গাড়িটির দিকে,তখনই তার মাথায় একটা গাট্টা মারে সৌরভ।সৌরভ কে হঠাৎ দেখে কিছুটা চমকে যায় ফিহা।

,,কিরে পে’ত্নী এতো মনোযোগ দিয়ে কি এমন দেখছ রাস্তায়?কখন থেকে তোর অপেক্ষায় বসে আছি আমরা,ভেবেছিলাম তো তুই বিয়ে করতে গিয়ে একদম উপরে টপকে গেছিস

ফিহা নিরস কন্ঠে বলে
,,কিছুটা ও রকমই!
সৌরভ সন্দিহান কন্ঠে বলে
,,কি হয়েছে বল তাড়াতাড়ি।
,,মিতা কই? তোকে একবার বলি আবার ওকে একবার আমাকে তো সরকারি পেয়েছিস তোরা।

এর মধ্যে মিতা হাজির,এসেই ফিহাকে ঝাপটে জড়িয়ে ধরে।টাল সামলাতে না পেরে ফিহা প্রায় পড়েই যাচ্ছিলো, মেকি রাগ দেখিয়ে বললো

,,ওফ!মে রে ফেলতে চাস নাকি?যে ভাবে ধরেছিস মনে হয় পালিয়ে যাচ্ছি কোথাও!
মিতা ছাড়লো না উল্টো আরো কিছুটা শক্ত করে ধরে বললো
,,সত্যি দোস্ত তোকে এখন দেখে কি যে শান্তি লাগছে কি বলবো।চিন্তায় চিন্তায় খাওয়াই হয় নাই সকালে।তা এখন বল সাদাব জিজুর কি খবর?

ফিহার মুখটা চুপসে গেলো মুহুর্তে, সে কিছু না বলে চলে গেলো ভার্সিটির ভিতরে, সৌরভ,মিতা দুজন একবার নিজেদের মুখ চাওয়া চাওয়ি করলো পরক্ষণেই রহস্যের গন্ধ পেয়ে ফিহার পেছনে দৌড় লাগালো।

ক্যাম্পাসের মাঠে ঘাসের উপর বসে পড়লো তিনজন।

,,ফিহু বলনা জান কি হয়েছে,সাদাব ভাইয়ার সাথে কি তোর বিয়ে হয়নি? আমি ওইদিন যেতে না পারায় কি রাগ করে আছিস?সরি ইয়ার হঠাৎ করে তোর বিয়ে আমার ও এক আত্মীয় অসুস্থ তাই সেখানে যেতে হয়েছে।

ফিহা থমথমে কন্ঠে বললো
,,কেনো টিভি তে কিছু দেখায় নি?
মিতা অবাক হয়ে গেলো কিছুটা কি এমন হলো যা টিভিতে দেখাবে!

,,কই না তো কিছুই তো দেখলাম না!

ফিহা নিজেই আশ্চর্য হলো, এটা কিভাবে সম্ভব!

সৌরভ বললো
,,কি কিভাবে সম্ভব?

ফিহা ওইদিনের সকল ঘটনা বর্ণনা করে দম নিলো, সৌরভ,মিতা হা করে তাকিয়ে আছে।দুজনই এক সময় চিল্লিয়ে বললো
,,কিহ্!

,,হুম!

,,আমার তো বর্তমান দুলাভাই কে দেখার শখ জেগেছে বন্ধু!

,,তো গিয়ে দেখ আমাকে কেনো বলছিস।
সাদাব কাপুরুষের মতো কাজ করবে ওটা এখনো মেনে নিতে পারি নি আমি।কিছু কিছু মানুষ দুনিয়ার সামনেই ভালো মানুষ সাজে, মহৎ সাজে, কঠিন সময় ঠিক সুযোগ বুঝে হাত ছেড়ে দেয়।
ফিহার কথায় মিতার খা রাপ লাগলো মেয়েটা সত্যি পছন্দ করতো সাদাব ভাই কে আর মানুষ টা কিনা।

,,তোর এই বিয়ের কাহিনি শুনে আমার এখন হাত পা ছুঁড়ে কাঁদতে মন চাচ্ছে বইন!

সৌরভের কথায় তেতে উঠলো ফিহা

,,তুই এই সিরিয়াস মুহুর্তে মজা নিচ্ছিস।বে দ্দপ পোলা তুই জীবনে বউ পাবি না দেখিছ।

,,যা খুশি দোয়া করে নে এসব আমি গায়ে মাখি না,বল দুলাভাইয়ের সাথে কবে পরিচয় করিয়ে দিবি।

,,কাল তো আবার দিতে আসবে তখন,বুঝলাম না লোকটা এমন ভুতের মতো উবে গেলো কেনো,আজকেই তো দেখা করতে পারতি তোরা।

মিতা চিন্তত কন্ঠে বললো
,,এখন তুই কি করবি? সব মেনে নিবি,সাদাব কে ভুলে যাবি?

ফিহা চুপ রইলো কতক্ষণ হতাশ কন্ঠ শোনালো তার
,,ভুলে যাওয়া টা কি যুক্তিযুক্ত নয়?বিয়ে যে ভাবেই হোক আমি প্রত্যেয়ের স্ত্রী এখন,না চাইলেও একদিন না একদিন তো স্বামী হিসাবে মানতেই হবে বল।

সৌরভ কিছু চমকে উঠে বললো

,,কি নাম বললি?

,,কোথায় কি নাম বললাম?

,,আরে তোর অদ্ভুত জামাইয়ের নাম।

,,প্রত্যেয়! কেনো কি হইছে?

সৌরভ মিতার দিকে তাকিয়ে বললো মিতা তুই কি সেটাই ভাবছিস যেটা আমি ভাবছি?
মিতা বিরক্তি নিয়ে বললো
,,তোর মতো উদ্ভট চিন্তা আমি করি না।তা বল কি এমন মহান চিন্তা উদয় হলো তোর মনে।

,,ভাইয়ার নাম ও তো প্রত্যেয়!

মিতা না বুঝে বললো
,,কার ভাই?
,,গা ধী আমার ভাই প্রত্যেয়!
,,কি যা তা বলছিস?প্রত্যেয় ভাই করবে বিয়ে দুনিয়ায় আর মানুষ পাইলি না তুই।খালামনির ভয়ে তো বাসায় যায় না ঠিক মতো যদি ধরে বিয়ে করিয়ে দেয় সে ভয়ে।উনি করবে এমন ভাবে বিয়ে।দুনিয়ায় কি একজনের নামই প্রত্যেয় নাকি?আজাইরা চিন্তা বাদ দে তো।

সৌরভ মাথা নাড়লো,ফিহা বললো

,,দুটোতে থাম এবার, প্রত্যেয়ের সাথে দেখা করিয়ে দিবো তখনই সব ক্লিয়ার হয়ে যাবে।চল ক্লাসে যাই।

,,,,,,,,,,,,,
সেদিন ফিহাকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে,প্রত্যেয় আবার চলে গেছে,একা বাসায় বসে বসে বিরক্ত হচ্ছে ফিহা, প্রত্যেয়ের বিষয়ে তো কিছুই জানে না সে,তার মা, বাবা, ভাই, বোন সবাইকে না জানিয়ে বিয়ে করলো কেনো?নাকি তার কেউ নেই!

রাত নয়টা অলস ভাবে কেটেছে ফিহার পুরোটা বিকাল সন্ধ্যা নিজের জীবনের হিসাব মিলাতে ব্যস্ত সে।হঠাৎ কলিং বেল বেজে উঠায় কিছুটা চমকালো।কে আসলো
প্রত্যেয়ের কাছে তো চাবি আছে তাহলে?
ফিহা উঠে দরজার কাছে গেলো,কাঁপা কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো

,,কে,,কে?

,,আমি!

কন্ঠটা চিনতে কিছুটা অসুবিধে হলো,আন্দাজে বলে উঠলো

,,প্রত্যেয়!

,,হুম।

ফিহা দরজা খুলে পাশে দাঁড়ালো, প্রত্যেয় কপালের ঘাম মুছে ভিতরে ঢুকলো, তাকে ভীষণ ক্লান্ত মনে হলো ফিহার,গায়ের শার্ট লেপ্টে আছে ঘামে।কপালে ছড়িয়ে আছে এলোমেলো চুল।
ফিহা চোখ সরিয়ে নিলো সহসা,ভেতরে গিয়ে ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা পানি নিয়ে আসলো।প্রত্যেয় সোফায় গা এলিয়ে দিলো,প্রত্যেয়ের দিকে ফিহা গ্লাস বাড়িয়ে দিলো
প্রত্যেয় মুখের সামনে ধরে রাখা গ্লাসটা দেখে সেদিকে তাকালো,মুখে হালকা হাসি ঝুলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ফিহা, ঠান্ডা বাষ্পে কাঁচের গ্লাস ধোঁয়াসা হয়ে আসছে, কিছু পানি পড়ছে গ্লাসের প্রাচীর ঘেঁষে।

প্রত্যেয় হাত বাড়িয়ে নিলো,তৃপ্তি সহকারে পানি খেলো।পুরোটা সময় তাকিয়ে ছিলো ফিহা।

প্রত্যেয় হাসি মুখে বললো

,,বাহ্ আমার উপর দরদ দেখাচ্ছো যে হঠাৎ? কি ব্যাপার মেডাম!

ফিহা আবার ও হাসলো,গ্লাস নিয়ে যাওয়ার সময় বললো
,,বন্ধুর এতটুকু করতেই পারি আমি!
*****
সময় যেনো এক অদৃশ্য রেখা,কতো দ্রুত পেরিয়ে যায় তা বুঝাই যায় না মনে হয় এই চোখ বুজলাম,সেকেন্ডেই সকাল হয়ে গেলো।ফিহা,প্রত্যেয়ের সম্পর্কের সুতো বুনতে শুরু করেছে, এক মাস কেটে গেলো,দুজন মানুষ একই ছাদের নিচে থাকছে, সকাল সন্ধ্যা রাত একে অপরের সাথে কথা বলছে, অপছন্দের জিনিস গুলোও কখনো কখনো এতো প্রিয় হয়ে উঠে তা মানুষ কল্পনাও করতে পারে না।তেমনই হয়তো প্রত্যেয় নামক মানুষটার ব্যক্তিত্বে আটকে গেছে ফিহা।সৌন্দর্য, ধন, দৌলত, ঐশ্বর্য ছাড়াও মানুষ কে যে কিছু একটা খুব করে মুগ্ধ করতে পারে তা হলো মানুষের মন।মন ছুঁয়ে দেওয়ার মতো কিছু মানুষের আগমনে একটা বিদগ্ধ হৃদয় ও সেরে উঠতে চায়, নতুন করে হাসতে শিখে।ভালো থাকতে শিখে,ফিহার সাথে প্রত্যেয়ের বন্ধুত্ব গাঢ়তর হয়েছে।দুজনের মাঝে অন্য কোনো সম্পর্ক আছে কিনা তা জানা নেই।তবে তারা যেনো একজন অপর জনকে বুঝতে পারে।এই এক মাসে ফিহার বিশ্বাস অর্জন করে নিয়েছে প্রত্যেয়।মেয়েটা যে নিজেকে শক্ত খোলসে আবৃত করে রেখেছে নিজের দুঃখ আড়ালে রেখেছে তা হয়তো বন্ধুত্বের মতো একটা জিনিস না থাকলে কখনো জানা হতো না প্রত্যেয়ের।

ফিহা জানতে পারে ওইদিনের মিডিয়া কনফারেন্স গুলো যাতে সবার মাঝে প্রকাশ না হয় সে জন্য সব প্রদক্ষেপ সে নিয়েছে,একটা মেয়ের সম্মান নষ্ট করাটা উচিত নয়।তার কথা সাংবাদিকরা কেনো শুনেছে ফিহা জানে না।তবে মানুষটা তার সম্মানের কথা এতোটা চিন্তা করে ভেবেই তার মন অজানা আবেশে পুলকিত হয়েছিলো।অদ্ভুত বিষয়ে হলেও সাদাব তার সাথে এই এক মাসে একবারও যোগাযোগ করার চেষ্টা করেনি।ভার্সিটেতেও আগে প্রায়ই আসতো কিন্তু এই এক মাসে তাকে দেখেনি,যার ফলে প্রত্যেয়ের সাথে তার সম্পর্কটা নিয়ে কোনো দ্বিধায় পড়তে হয়নি তার।

রোজকার মতো ভার্সিটি যাচ্ছে আজও,সৌরভ,মিতা আগে ভাগে দাড়িয়ে আছে গেইটে তাদের মনোভাব এমন আজ তো দেখেই ছাড়বো!কিন্তু ফিহাকে একা আসতে দেখে হতাশ হলো

মিতা তো রেগেই বললো
,,কি শুরু করেছিস ফিহা তোর জামাই কি ডায়মন্ড নাকি, এই এক মাস ধরে ঘুরাচ্ছিস কিন্তু মহাশয়ের মুখ দেখাতে পারলি না।
ফিহা নিজেও বিরক্ত, প্রত্যেয় কে যতবার বলেছে ততবারই সে বাহানা দিয়ে কেটে পড়েছে

,,আমি ভাবছি দোস্ত, এই আজব ছেলের সব কিছুতে রহস্য জানিস ওনার বাবা মায়ের কথা কতোবার জিজ্ঞেস করেছি শুধু বলছে সময় হলে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিবো।এখন এসব বলেও লাভ নেই।

সৌরভের সন্দেহ যেনো বাড়লো,সে ভেবেই নিয়ে তার ভাইয়ের ফ্লাটে গিয়ে চেক করবে এবার, যদি তার ধারনা সঠিক হয় তো হাতে নাতে ধরা।
—–
মন মেজাজ বিক্ষিপ্ত হয়ে আছে ফিহার কেনই বা হবে না যখন একটা মানুষের পুরো পৃথিবী আরেকটা মানুষ হয়, তার সব কিছু জুড়ে ওই মানুষটা বিরাজ করে।তখন যদি কাঙ্ক্ষিত সে ব্যাক্তি ব্যস্ততা দেখায়,সকাল থেকে রাত অব্দি একটা কল না দেয় একদম এরিয়ে চলে তখন কি মেনে নেওয়া যায় নাকি।লোকটা এমন কেনো? এখন ফিহা একটু ভালো ব্যাবহার করছে তো তাই ভাব বেড়ে গেছে, একবার আসুক আজ বাড়িতে সকাল সকাল একটা চিরকুট ধরিয়ে সারাদিন এরিয়ে যাওয়ার শা স্তি তো দিতেই হবে।রাগে একদম টইটম্বুর ফিহা নাকের পাটাতন লাল হয়ে উঠেছে এগারোটার কাটা ছুঁই ছুঁই আর এর বাড়ি ফেরার নাম নেই।দরজাই খুলবো না আজ।
কলিং বেল বাজলো কয়েকবার ফিহা খুলতে যায়নি অগত্যা প্রত্যেয় চাবি দিয়ে লক খুলে ঢুকেছে।ফিহা ড্রয়িং রুমে দাড়িয়ে আছে উল্টো দিক মুখ করে।প্রত্যেয় দেখলো কিছুক্ষণ, ফিহা কে চমকে দিয়ে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো হঠাৎ। মায়া ভরা কন্ঠে ফিসফিস করে বললো

,,সরি সরি সরি,আর এমন ভুল কখনো হবে না মহারানী প্লিজ রাগ করে থাকবেন না।আপনি রেগে কথা না বললে আমার মতো মানুষের যে ম রা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না!

ফিহা প্রত্যেয়কে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো,রাগী ভাবে বললো

,,আমাকে এসব বলছেন কেনো?বাসায় আসার কি দরকা ছিলো যেখানে ছিলেন সেখানেই থাকতেন। সুন্দরী কলিগদের ছেড়ে আসতে তো মন চায় না আপনার!

,,জেলাস হচ্ছেন বুঝি?

,,আমার এতো ঠেকা পড়ে নি।সরুন কথা বলবেন না আমার সাথে। আমি একাই থাকতে পারি কাউকে দরকার নাই আমার।

প্রত্যেয় কান ধরে দাড়িয়ে পড়লো সামনে,মুখ টা বাচ্চাদের মতো করে বললো

,,আজকেই তো প্রথম, কথা দিচ্ছি আজই শেষ,মিটিং এর পর মিটিং তাই সময় হয়ে উঠেনি। দরকার পড়লে চাকরি ছেড়ে দিবো তাও বউ কে রাগাবো না আর।এবারের মতো মাফ কি পেতে পারি আমি?

ফিহা মুখ ভেংচি কাটলো।ছোট করে বললো ঠিক আছে।
চলবে…..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে