কোন এক প্রণয় প্রহরে পর্ব-০২

0
25

#কোন_এক_প্রণয়_প্রহরে
#পর্ব২
#মহুয়া_আমরিন_বিন্দু
এতো মরা,র সখ তোর!তোকে তো আমি নিজে হাতে খু*ন করবো,তুই যা করেছিস তার পর এখনও তোকে বাঁচিয়ে রেখেছি এটাই তো অনেক!ফাহমিদ আল প্রত্যেয়ের একটা নখ ছোঁয়ার সাহস কেউ করে না আর তুই তার একমাত্র পছ,,,!
কথা সম্পূর্ণ না করে গাড়ির স্টেয়ারিং এ জোরে এক
ঘু ষি বসিয়ে দিলো প্রত্যেয়, ফর্সা চেহারায় যেনো রক্তের ছোপ ছোপ দাগ পড়ে গেছে।রাগের ফলে পুরো মুখ এতোটাই লাল বর্ণ ধারন করেছে তা দেখে রীতিমতো কাঁপছে ফিহা।
ফিহা যখনই গাড়ির দরজা খুলে ঝা*প দিতে যাবে ঠিক সেই মুহুর্তে প্রত্যেয় গাড়ির দরজা ওপর পাশ থেকে লক করে জোরে ব্রেক কষে।ভরা রাস্তায় আচমকা ব্রেক করায় ট্রাফিক পুলিশের কবলেও পড়তে হয়।প্রত্যেয় সব কিছু সামলে এক পাশে নির্জন জায়গা দেখে গাড়ি পার্ক করে।
ফিহা মাথা নিচু করে বসে আছে,তাকানোর মতো সাহস পাচ্ছে না প্রত্যেয় নিজের চুল টেনে ধরেছে রাগ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য।
কিছুসময় পর গাড়ি স্টার্ট দেয় প্রত্যেয়।ফিহার আর কিছু করার সাহস হয় না।এখন মনে হচ্ছে সে যদি ম*রেও যায় কবর থেকে উঠিয়ে সমস্ত শক্তি দিয়ে গালে চ*ড় বসাবে এই প্রত্যেয় নামক মানুষটা।ফিহার বুঝে আসছে না কেনো এই ছেলে তার সাথে এমন করছে।তার সাথে তো এই লোকের কোনো দিন দেখা ও হয়নি, কোন সময়ের শ ত্রুতা ফলাচ্ছে এখন!

ফিহা চোখ বন্ধ করে সিটে মাথা এলিয়ে দিলো,কিছুক্ষণ পরই গাড়ি থামলো।প্রত্যেয় নেমে ফিহার পাশের দরজাটা খুলে দিলো,ফিহা নেমে গেলো প্রত্যেয় ফিহার এক হাত চেপে ধরে সাথে এক প্রকার টেনে নিয়ে যাচ্ছে।এখানেই সে রাতে ছিলো আবছা হলেও বাড়িটা দেখে চিনতে পারছে।লিফটে উঠলো না প্রত্যেয় সিঁড়ি বেয়ে উঠছে,যেনো সব রাগ পা দিয়ে সিঁড়ির উপর ঝাড়ছে ছেলেটি, ফিহার মনে হলো তার হাত ব্যাথায় এবার খসে পড়ে যাবে।দাঁত দিয়ে ঠোঁট চেপে ধরেছে যতই হোক তার মনে হলো সে এখন আর্তনাদ করলেও পাশের মানুষটি রেগে যাবে।ফ্লাটের দরজা টা খোললো সশব্দে। ফিহাকে সোফার কাছে নিয়ে ছুঁড়ে মারলো প্রত্যেয়।নিজে চলে গেলো রুমের ভিতরে,কিছু সময় পর হাতে শপিং ব্যাগ নিয়ে হাজির হয়,ব্যাগ গুলো ফিহার দিকে এগিয়ে দিয়ে ভরাট পুরুষালী কন্ঠে বলে

,,যাও গিয়ে রেডি হয়ে আসো!

ফিহা তাকালো ব্যাগের দিকে ব্যাগের ভিতর বেনারসি শাড়ি আর প্রয়োজনীয় সব কিছু আছে,চোখ বড় বড় করে তাকালো ফিহা,ও বউ কেনো সাজবে!নিজের উৎকন্ঠা চেপে রাখতে না পেরে ফিহা চেচিয়ে বলে উঠলো
,,আমি বউ কেনো সাজবো?কি মতলব আপনার!

প্রত্যেয় শান্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো ওর উপর, এতেই যেনো মেয়েটি ভয়ে কুঁকড়ে গেলো তবুও নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

,,তুমি কি আমার সাথে লিভ ইন এ থাকতে চাচ্ছো ফিহু!আমার কিন্তু কোনো সমস্যা নেই।
প্রত্যেয় কথাটি বলেই বাঁকা হাসলো।ফিহা অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে,ছেলেটির কি মাথায় কোনো সমস্যা আছে নাকি, অস ভ্যের মতো কি সব বলে যাচ্ছে।

,,আমি আপনার মতো লোকের সাথে কোনো ভাবেই থাকতে চাই না।আমাকে যেতে দিন বাসায় যাবো আমি।

,,ফেরত পাঠানোর জন্য নিয়ে আসিনি তোমায়।বেশি কথা না বলে রেডি হয়ে এসো,আমাকে রাগিয়ে দিবে না এর পরিনাম ভালো হবে না বলে দিচ্ছি।যদি সোজা কথায় রাজি না হও তো এমন কিছু করবো যাতে তুমি বিয়ে করতে বাধ্য হও।

,,আমি ম*রে গেলেও আপনাকে বিয়ে করবো না।আমি সাদাব কে ভালোবাসি অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারবো না আমি!

প্রত্যেয় এক টানে ফিহাকে নিজের কাছে নিয়ে আসে,নিজের ওষ্ঠধর দিয়ে চেপে ধরে ফিহার ফিনফিনে পাতলা ঠোঁট! ফিহা হতভম্ব হয়ে যায় কি হয়েছে বুঝতে ওর কিছু সময় ব্যায় করতে হয়।নিজেকে ছাড়ানোর জন্য ফিহা নিজের হাত পা ছুটাতে থাকে,এলোপাতাড়ি কি ল ঘু ষি মারতে থাকে প্রত্যেয়ের বুকে।তবুও মানুষটিকে এক চুল পরিমাণ ও সরাতে পারেনি সে,বেশ সময় পর প্রত্যেয় এক প্রকার ছুঁড়ে দূরে ফেলে দেয় ফিহা কে।ফিহার চোখ থেকে অনবরত পানি পড়ছে।সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই প্রত্যেয়ের, প্রত্যেয় কিছু সময় পর শক্ত কন্ঠে বলে

,,আর কোনো দিন যদি আমার সামনে অন্য কাউকে ভালোবাসার কথা মুখেও আনার চেষ্টা করিস তো এখানেই মে*রে পুঁতে দিবো।

ফিহা কান্না ভেজা কন্ঠে ফুপিয়ে বলে

,,আপ,,নি একটা নি কৃষ্ট লোক। আপনার মুখ ও দেখতে চাই না আমি।

,,শুধু মুখ কেনো বেবি তোমাকে তো আরো অনেক কিছুই দেখতে হবে।
বলেই চোখ টিপ মারে।ফিহা কান্না করতে করতে হেঁচকি তুলে ফেলেছে,প্রত্যেয়ের কপালে সুক্ষ্ম ভাজ পড়ে

,,বিয়ে করে বাসর করতে চাও নাকি বিয়ের আগে!

একটা চুমু তে মনে হয় কোনো কাজ হয়নি, বিয়ে করা পর্যন্ত ওয়েট করতে পারছো না বুঝি ফিহু বেবি?আগে আগেই সব করার ইচ্ছে থাকলে মুখ ফুটেও তো বলতে পারো,এভাবে কান্না করে আদাই করার কি আছে।

,,আমি বিয়ে করবো না।প্লিজ আমাকে যেতে দিন!

প্রত্যেয় মুখ দিয়ে চ মূলক শব্দ করে,ফিহার দিকে তাকিয়ে বলে

,,ফিহা দেখো আমাকে রাগাবে না,যদি পাঁচ মিনিটের মধ্যে রেডি না হও তো নিজ হাতে পড়িয়ে দিবো।এটা যে আমি করতে পারবো আশা করি এটা এতোক্ষণে বুঝে গেছো!এখন সিদ্ধান্ত নেও নিজে পড়বে নাকি আমার হাতে।

ফিহা রেগে বলে উঠে

,,বললাম না পড়বো না,কোনো বিয়ে টিয়ে করবো না আমি।তোর মতো খারা প লোকের কোনো কথাই শুনবো না আমি!

,,ফিহা!

প্রত্যেয়ের এতো জোরে ডাক দেওয়াটা যেনো অন্তর আত্মা কাঁপিয়ে দিয়েছে ফিহার,তবুও সে নড়লো না, কান্না করতে করতে উজ্জ্বল শ্যামলা ত্বকের উপর পানির ছাপ পড়ে গেছে, চোখ দুটো ফুলে গেছে,পাতলা ঠোঁট গুলো সমান তালে কাঁপছে, নাক ডগা রক্ত জবার ন্যায় বর্ণ ধারন করেছে।

প্রত্যেয় হাত মুষ্টিযুদ্ধ করলো,নিজেকে যথাসম্ভব শান্ত করে নরম কন্ঠে বললো

,,ফিহা সাদাব যদি তোমায় সত্যি সত্যি ভালোবাসতো তো আমি কখনো এমন কাজ করতাম না।যদি সে তোমায় ভালোবাসতো তাহলে আজ তোমাকে ওভাবে রেখে চলে যেতো না।তোমার সিদ্ধান্ত শোনার আশায় আমি বসে থাকবো না, মাত্ররো বিশ মিনিট সময় দিচ্ছি এর মধ্যে তৈরি হয়ে আসবে,না হয় সত্যি খারা প কিছু ঘটে যাবে আজকে!সব কিছু বাদ দিয়ে নিজের কথা ভাবো!

ফিহা ধীর পায়ে হেঁটে যায় রুমের দিকে,তার পা টলছে, তার চিন্তা করার শক্তি লোপ পেয়েছে,ফিহা সত্যি সাদাব কে ভালোবাসে, মানুষটির এভাবে প্রত্যাখ্যান সে মেনে নিতে পারেনি মনের কোনে কোথাও একটা খচখচ করছিলো, প্রত্যেয়ের বলা কথাটা যেনো খুব গভীর ভাবে কানে এসে বারি খেলো,যদি তোমায় ভালোবাসতো তো ছেড়ে চলে যেতো না!তবে কি সব কিছুই মিথ্যা ছিলো সাদাব তাকে ভালোবাসে না?তার অনুভূতি গুলো যে এই একটা মানুষের নামেই উৎসর্গ করেছিলো,সে মানুষটা তাকে অবিশ্বাস করলো,জনসম্মুখে একবারও হাত ধরার সাহস করলো না,এতোটা ঠুনকো ছিলো ওর বিশ্বাস, ভালোবাসা তো টিকে থাকে বিশ্বাসে।তবে কি ভালোবাসাটাই ছিলো না কোনোদিন!
ফিহা চিন্তায় ডুব দিয়ে এলোমেলো হাতে শাড়ি পড়ছে,কোনো রকম পেচিয়ে বেরিয়ে আসে রুম থেকে, কাঁধ থেকে একটু লম্বা চুল গুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে,চোখে মুখে বিষন্নতার ছাপ।

প্রত্যেয় দেখলো বিরহে ভেঙ্গে পড়া এক নারীকে,বিদ্ধস্ত মুখশ্রীর এই নারীর পুরোটা জুড়েই আছে এক অদ্ভুত মায়া।প্রত্যেয় চোখ সরিয়ে নেয় সহসা,চায় না জড়াতে এমন কিছুতে যা তার নয়!তার হয়েও যে অন্য কারোর।এ যে ভীষণ রকম যন্ত্র*ণার!

ফিহা চুপচাপ এসে দাড়ালো প্রত্যেয়ের সামনে,প্রত্যেয় আবারো আপাদমস্তক দেখলো মেয়েটিকে।বুক ভরে এক দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো সে,ফিহাকে সাথে করে নিয়ে বের হলো আবার।
****
গাড়ি চলছে আপন গতিতে,ফিহার সিল্কি চুল গুলো উড়ে যাচ্ছে তাল মিলিয়ে, মুখে নেই কোনো প্রসাধনীর ছোঁয়া।সদ্য ফোঁটা একটি শিশির ভেজা পদ্মের মতো লাগছে মেয়েটিকে, কারো অবাধ্য চক্ষু বার বার অমান্য করছে সব বাঁধা বিপত্তি। মেরুন রঙের শাড়িতে মেয়েটির সৌন্দর্য কেনো এতো বৃদ্ধি পেলে,আগে জানলে এই রঙের শাড়ি কিনতো না প্রত্যেয়!
যেদিন এই পদ্ম নিজে এসে ধরা দিতো তার প্রেম নদীতে সেদিন না হয় এরকম করে সাজিয়ে বসিয়ে রাখতো সামনে,দেখতো চোখ ভরা মুগ্ধতা নিয়ে।আজ যে সে অন্য কারোর জন্য আকাশ সমান স্বপ্ন বুনেছে,মন প্রাণ ওই ব্যক্তি টাকে দিয়ে, অনিচ্ছায়, অবহেলায় একরাশ
ঘৃ ণা নিয়ে তাকে গ্রহণ করছে।ভালোবাসার মানুষের মুখ ফিরিয়ে নেওয়াটা হয়তো সহ্য করা সবার সাধ্যর বাহিরে।কাউকে পাওয়া না পাওয়ার সমীকরণে পেয়ে গিয়েও ছুঁয়ে দেওয়ার অধিকার না পাওয়া,ভালোবাসার অধিকার নিয়ে সামনে দাঁড়াতে না পারার মতো অসহনীয় অনুভূতি আর কি দশটা আছে!

গাড়ি এসে থামলো, কাজি অফিস নামক সাইনবোর্ড টানানো একটা গেইটের সামনে।ফিহা অনুভূতিহীন যন্ত্রের ন্যায় হেঁটে যাচ্ছে কেনো যাচ্ছে সে জানে না।নিজেকে এক বদ্দ উন্মা দ মনে হচ্ছে।কেনো সে প্রত্যেয়ের কথা শুনছে জানে না।বার বার একটা কথাই ভিতর থেকে বেরিয়ে আসছে, এটাই তোর নিয়তি, একবার বিশ্বাস করে দেখ ঠকবি না।ভাগ্যটা তার বরাবরই বিপরীত প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে তার পরও আজ সে ভাগ্য পরীক্ষা করতে জীবনের সব চেয়ে বড় একটা ধাপে পা দিতে এসেছে।

কাজী অফিসের ভিতরে ঢুকলো দুজন।ফিহা তখন মৃদু কাঁপা কন্ঠে বললো

,,বাবা মায়ের অনুমতি ছাড়া বিয়ে করাটা কতোটা যুক্তিযুক্ত প্রত্যেয়?এই বিয়েটা হয়তো আপাতত দৃষ্টি ঠিক হবে, কিন্তু কি হবে এর ভবিষ্যৎ?

প্রত্যেয় চুপ রইলো কিছুক্ষণ, গম্ভীর কন্ঠে কাউকে ডাকলো সে

,,ভিতরে আসুন!

তখন ভিতরে আসলো এক মধ্য বয়স্ক মহিলা।ফিহা তাকালো সেদিকে নিজের মাকে এখানে দেখে অবাকের চরম সীমানায় পৌঁছে গেছে সে।
কাঁপা কন্ঠে ডাকলো একবার
,,মা!
ফিহার দিকে ফিরেও তাকালেন না তিনি,চুপচাপ পাশের চেয়ারটায় বসে পড়লো,প্রত্যেয়ের হয়ে সাক্ষী হিসেবে এসেছে তার ফ্রেন্ড।প্রত্যেয়ের বাবা মা এখানে নেই, ফিহা শুধু অপলক তাকিয়ে আছে তার মায়ের দিকে। কাজী সাহেব সব কাজ শেষ করে সাইন করার জন্য রেজিষ্ট্রি পেপার এগিয়ে দিলো ফিহার দিকে।
ফিহার হাত কাঁপছে অনবরত, কোনো ভাবেই ধাতস্থ করতে পারছে। পর পর গড়িয়ে পড়লো কয়েক ফোঁটা অশ্রু। ফিহার মা শান্ত কন্ঠে বললেন

,,সাইন কর ফিহা।
ফিহা তাকালো তার মায়ের দিকে পৃথিবীতে এই একটা মানুষই তাকে সব চেয়ে বেশি ভালোবাসে, ভরসা করে।মা ছাড়া ফিহার দুনিয়া যেনো শূন্য, মা ছাড়া বাড়ির বাকি সদস্য কখনো তাকে ভালো ভাবে গ্রহণ করেনি, নিজের বাবাও কোনো দিন স্নেহের হাত বাড়িয়ে বলে নি মা এতো চিন্তা কিসের তোর বাবা আছে তো!ভালোবাসা
নামক জিনিস টা খুবই কম আছে ওর জীবনে,ফিহা দৃষ্টি অনুসরণ করলেন রুমানা চোখ দিয়ে আস্বস্ত করলেন মেয়েকে।ইশারা করলেন সাইন করার জন্য। ফিহা মন্ত্রমুগ্ধের ন্যায় কলম চালালো কাজটায়।প্রত্যেয় সাইন করে দিলো ফটাফট।বিবাহ সম্পূর্ণ হলো তিন কবুল বলার মাধ্যমে। ফিহার তার মাকে জড়িয়ে ধরে বসে আছে শক্ত করে মনে হচ্ছে ছেড়ে দিলে বুঝি তার মা হারিয়ে যাবে অরেক দূরে।

প্রত্যেয় নিজের বন্ধুর সাথে একটু বাহিরে যায়,রুমের বাহিরে বেঞ্চে বসে আছে ফিহা আর রুমানা। রুমানা ফিহার মাথায় হাত রেখে বললেন

,,জানি তোর মনে অনেক প্রশ্ন জমেছে কেনো এতো কিছু হলো,তোর সাথেই কেনো হলো?আমি এখানে কেনো আসলাম,প্রত্যেয় কেনোই বা তোর সাথে এমন করেছে?
সব কিছুর উত্তর সময় হলে পেয়ে যাবি।
মা হিসাবে তোর খা রাপ চাই না আমি,মনে রাখবি পৃথিবীতে তুই আমার জন্য সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ফিহা পরে বাকিরা।আমি শুধু তোর জন্যই বেঁচে আছি।আমার মেয়ে যেনো পৃথিবীর সর্বোচ্চ সুখ পায় সে জন্যই আজ আমি এখানে এসেছি।তুই অনেক ভালো থাকবি মা প্রত্যেয় অনেক ভালো ছেলে।
আমি জানি তোর মনে কি চলছে,ভালোবাসাটা অন্যায় না মা ভুল মানুষকে ভালোবাসাটা নিজের জন্য
ক্ষ তিকর। প্রত্যেয় কে আমি বলছি বলে তোকে মেনে নিতে হবে না,তুই নিজে ওর সাথে থেকে নিজ থেকে উপলব্ধি কর মানুষ টা কেমন।বাহ্যিক দিক দিয়ে বিচার না করে ওর মনটাকে চিনতে শিখ, ওকে বুঝার চেষ্টা কর এইটুকুই বলবো।বলবো না সব কিছু ইচ্ছের বিরুদ্ধে মেনে নে।তবে আমার বিশ্বাস তোরা দুজন দুজনের জন্য পার্ফেক্ট।ভালোবাসা দ্বিতীয় বারও আসে যদি পাশের মানুষটি মন মতো হয়।
আমি খুশি হবো যদি তুই নিজের জীবন কে আরো একটা সুযোগ দেস তো।সাদাব কে কেনো তোর অযোগ্য বলছি সে প্রশ্নের উত্তর ও সময় হলে পেয়ে যাবি।আমি এখন চলে যাবো,তুই এখন থেকে প্রত্যেয়ের দায়িত্ব ওর অর্ধাঙ্গীনি কথাটা মনে রাখবি।নিজের ভালো নিজেকেই দেখতে।এখন অনেক দিক দিয়েই তোর নিজেকে স্বার্থপর মনে হতে পারে।
তবে মনে রাখবি কিছু কিছু ক্ষেত্রে নিজের জন্য হলেও স্বার্থপর হতে হয়।সময় কঠিন একটা সত্য যা মানুষের জীবনের মোড় অনেক দিকেই ঘুরিয়ে দিতে পারে।মনে রাখবি তোর মা সব সময় তোর পাশে ছিলো থাকবে।আমি আমার ফিহা কে বিশ্বাস করি সে আমার বেস্ট বাচ্চা।

ফিহা শক্ত হাতে নিজের মাকে জড়িয়ে ধরলো।রুমানা ভেজা চোখে মেয়ের মুখে হাত বুলিয়ে উঠে দাঁড়ালেন।
তাকে যে যেতেই হবে পিছুটান জিনিস টা বড্ড অবাধ্য।

প্রত্যেয়ের ফ্রেন্ড চলে গেছে প্রত্যেয় নিজেই মিষ্টি নিয়ে ফিরেছে।রুমানা তার জন্যই অপেক্ষা করছিলো,ফিহা কিছুটা দূরে বসে আছে।

বাবা প্রত্যেয় কিছু কথা ছিলো
প্রত্যেয় বিনয়ের সাথে বললো
,,হ্যাঁ আন্টি বলুন।

,,তুমি তো সবই জানো বাবা!ফিহা অনেকটা জেদি আর ছেলেমানুষ আমি জানি তুমি তাকে ভালো রাখবে,ওকে তোমার হাতে তুলে দিয়ে যাচ্ছি বাবা আমার মেয়েটাকে আগলে রেখো। জীবনে কারো ভালোবাসা পায়নি।যখন ভালোবাসার মতো বুঝ হলো সেখানেও সে ভুল করেছে।ওর বাবার কারনেই ওর শত্রু*র অভাব নেই,আমার মেয়েটার আজ থেকে কেউ নেই তুমি ছাড়া।আমি থেকেও নেই।ওকে দেখে রেখো বাবা,যেনো সে সব কিছু ভুলে আবার নতুন করে হাসতে পারে, জীবনের সব দুঃখ ভুলে যেতে পারে, তোমার মাঝেই নিজের সর্বোচ্চ সুখ খুঁজে পায়! এটা এক মায়ের অনুরোধ বাবা। আমার মেয়েটাকে ভালো রেখো।

,,কথা দিলাম!

রুমানা প্রত্যেয়ের দিকে তাকিয়ে তৃপ্তির হাসি হাসলেন, ফাহমিদ আল প্রত্যেয় কখনো মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেয় না।ধীর পায়ে প্রস্থান করলেন তিনি।ফিহা দূর হতে দেখলো মায়ের চলে যাওয়া।প্রত্যেয় কাজি সাহেবের সাথে কথা বলা শেষ করে বের হলেন।

,,মিসেস প্রত্যেয় সন্ধ্যা হয়ে এসেছে আপনি কি এখানেই থাকার প্ল্যান করছেন নাকি রাতে?

প্রত্যেয়ের কথায় ফিহা বিরক্তি নিয়ে তাকালো সে কি এখানে সুখে বসে আছে নাকি আজব লোক কোনো কথা ভালো ভাবে বলতে পারে না নাকি!

ফিহা উঠে গটগট করতে করতে সামনে চলে গেলো,প্রত্যেয় ঠোঁট কামড়ে হাসলো।গাড়িতে উঠে বসে পড়লো ফিহা, এই অসহ্যকর ছেলেটার সাথে একই বাসায় থাকতে হবে ভেবে সে হতাশ হলো।মা যে কোন বুঝে এটাকে ভালো বললো কে জানে।

প্রত্যেয় গাড়িতে উঠে ফিহার উপর ঝুঁকে গেলো।ফিহা চোখ গরম করে তাকায়,প্রত্যেয় ফিহার কানের কাছে ফিসফিস করে বলে

,,তোমার এই রেগে টমেটো হয়ে যাওয়া রূপ টা আমার বেশি পছন্দ। মন তো চায়,,,,,,

প্রত্যেয় সিট বেল্ট লাগিয়ে দিয়ে আবার নিজের জায়গায় বসে যায়।
ফিহার দিকে না তাকিয়ে বলে

,,শুধু বেল্ট লাগাতেই গিয়েছিলাম।তুমি যে এতো দুষ্টু তা তো তোমাকে দেখে বুঝাই যায় না ফিহু সোনা!
তুমি কি ভেবেছিলে? যা ভেবেছো তা কি করবো নাকি জান!

ফিহা বোকার মতো চেয়ে আছে প্রত্যেয়ের দিকে, প্রত্যেয় চোখ টিপে আবার ড্রাইবিং এ মন দেয়।
চলবে……

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে