#কোন_এক_প্রণয়_প্রহরে
#পর্ব১
#মহুয়া_আমরিন_বিন্দু
“বিশিষ্ট শিল্পপতি বেলায়েত খন্দকারের মেয়ে বিয়ের আগের দিন রাতে বাড়ি থেকে পালিয়েছে! ”
কথাটি বাতাসের গতিতে ছড়িয়ে পড়েছে শহরে,বাড়ির সামনে ভীড় করেছে সাংবাদিকের দল।এক পাশে দাড়িয়ে আছে পাত্র পক্ষের লোকজন। লজ্জায় মাথা তুলতে পারছে না খন্দকার বংশের কেউ। সাংবাদিকরা বার বার প্রশ্ন করেই যাচ্ছে “মেয়েকে কি মতের বিরুদ্ধে বিয়ে দিচ্ছিলেন খন্দকার সাহেব?নাকি মেয়ে প্রেমিকের সাথে পালিয়েছে?
এতো মানুষের ভীড় ঠেলে হলুদের সাজে একটি মেয়ে বাড়িতে ঢুকলো খুব তাড়াহুড়ো করে, সাথে রয়েছে অতি সুদর্শন এক পুরুষ। সাংবাদিকদের মধ্যে কয়েকজন মেয়ে রিপোর্টার ইতিমধ্যে তার দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছে।হাঁ হয়ে দেখে যাচ্ছে যুবকটিকে।যুবকটির সাথে থাকা মেয়েটি এক প্রকার ছুটে যায় বেলায়েত খন্দকারের কাছে হাঁপাতে হাঁপাতে বলে
,,আ,,ব্বু আমি এসেছি, বিশ্বাস করো আমি ইচ্ছে…..
মেয়েটির মুখ থেকে আর কোনো কথা বের হওয়ার সুযোগ পেলো না কেউ একজন সর্বশক্তি দিয়ে তার গালে ক ষিয়ে এক চ*ড় বসিয়ে দিয়েছে।
মেয়েটি গিয়ে ছিটকে পড়লো মাটিতে,পুরো দৃশ্য হতভম্ব নেত্রে দেখে যাচ্ছে সবাই।সাংবাদিকদের ক্যামেরায় বন্দী হচ্ছে অকপটে সবকিছু।মেয়েটি আবার উঠে দাঁড়ালো ঠোঁটের কোন থেকে রক্ত পড়া শুরু হয়ে গেছে।মেয়েকে দেখে সদর দরজা দিয়ে বেরিয়ে আসলো রুমানা খন্দকার কিন্তু তার পা স্থির হলো স্বামীর বলা কথায়
,,তুমি যদি ওই মেয়ের দিকে এক পা বাড়াও তো আমি ভুলে যাবো তোমার সাথে আদো আমার কোনো সম্পর্ক ছিলো রুমা!
এবার হু হু করে কেঁদে দিলো ফিহা,চোখের পানি গড়িয়ে পড়ছে তার নেতিয়ে পড়া গাল বেয়ে, এক রাতে মেয়েটির এই করুন অবস্থা দেখে আঁচলে মুখ চেপে কেঁদে উঠলো রুমানা।
ফিহা উদভ্রান্তের ন্যায় আবার ও বলতে শুরু করলো
,,আব্বু বিশ্বাস করো আমি কারো সাথে পালিয়ে যাইনি, আমাকে কিড নাপ করা হয়েছিলো!
ফিহার কথায় তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন বেলায়েত খন্দকার। পাশে দাড়িয়ে থাকা লম্বা চওড়া সুদর্শন ছেলেটির দিকেও একবার তাকালো,ছেলেটি কেমন নিরব দর্শকের ন্যায় সব কিছু দেখে যাচ্ছে! তার চোখে মুখে বিরক্ত, রাগ, ভয় কিছুই দেখতে পাচ্ছেন না তিনি।উল্টে এতোকিছুর মাঝে একধ্যানে সে তাকিয়ে আছে নিজের হাতে থাকা মোবাইলটির দিকে!
বেলায়েত খন্দকার কঠিন কন্ঠে এক প্রকার ধম কের সুরে বললেন
,,তোমার কথার কি প্রমান আছে যে তুমি পালিয়ে যাওনি?
ফিহা এবার পাশ ফিরে তাকালো যেখানে দাড়িয়ে আছে যুবকটি।ফিহা তার সামনে গিয়ে বললো
,,আপনি তো আমাকে কথা দিয়েছেন বাসায় নেওয়ার পর বাবাকে সব কিছু খুলে বলবেন।আপনি আসলে ভুলে অন্য কেউ ভেবে আমাকে তুলে নিয়ে গিয়েছিলেন এখানে আমার কোনো দোষ নেই।আপনি তো আমার হ্যাল্প ও করেছেন নিজের ভুল বুঝতে পেরে আমাকে বাসায় পৌঁছে দিতে এসেছেন।প্লিজ সব ঘটনা বাবাকে খুলে বলুন।
,,কি সব বলছো ডার্লিং!কবে এরকম কথা হলো আমাদের মাঝে।
প্রত্যেয়ের কথায় যেনো মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো ফিহার,ছেলেটি রাস্তায় ও তাকে আস্ব স্ত করেছে, সব কিছু খুলে বলবে,তবে এখন মিথ্যা কেনো বলছে!
,,আপনি এমন করছেন কেনো মিস্টার প্রত্যেয়?আপনি তো সব কিছু বললেন এখানে নিয়ে আসলেন এখন মিথ্যা কেনো বলছেন?প্লিজ এমন করবেন না আপনার জন্য আমি চাই না আমার বাবার কোনো অসম্মান হোক।দয়া করে সত্যি টা বলুন।
,,তুমি কেনো মিথ্যা বলছো ফিহা,আমাদের এতোদিনের সম্পর্ক তুমি অস্বীকার করছো?তোমার বাবার ভয়েই তো তুমি পালিয়েছিলে, আর তুমিই তো আমায় বলেছো বাসায়া গিয়ে বাবাকে তুমি জানাবে তুমি যাকে ভালোবাসো তাকে বিয়ে করতে যাচ্ছো।তুমি তার হাতে কাঠ পুঁতলি নও!
ফিহা এবার জোরে শব্দ করে কেঁদে দিলো,সে তার বাবাকে ভীষণ ভালোবাসে, তার বাবা তাকে পছন্দ না করলেও তার প্রতি মানুষটির বিশ্বাস ছিলো,যা কিনা এই ছেলেটির জন্য ভেঙ্গে চূড় মার হয়ে গেছে।এই মুহুর্তে নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে অসহায় মানুষ বলে মনে হচ্ছে তার।কেনো তার সাজানো গুছানো জীবনে প্রত্যেয় নামক ঝড় আসলো সব কিছু লন্ড ভন্ড করে দিলো।ফিহার চোখ গেলো দূরে দাড়িয়ে থাকা সাদাবের দিকে।মানুষ টিকে দেখেই ফিহার চোখ চকচক করে উঠলো এই মানুষটি হয়তো তাকে ফিরিয়ে দিবে না।
ফিহা দৌড়ে গেলো সাদাবের সামনে সাদাবের এক হাত ধরে বললো
,,সাদাব আপনি আমার কথা বিশ্বাস করুন প্লিজ।সত্যি আমি ওই লোকটার সাথে যাইনি,আমি তাকে এর আগে কখনো দেখিনি পর্যন্ত, বিশ্বাস করুন আমাদের মাঝে কোনো সম্পর্ক নেই,উনি মিথ্যা কথা বলছেন!
সাদাব তাকালো প্রত্যেয়ের দিকে,প্রত্যেয়ের মুখে বাঁকা হাসি বিদ্যমান,সে এক হাতে নিজের চুল ঠিক করতে ব্যস্ত সাদাব রাগে নিজের হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নিলো,চোখ বুজে নিয়ে ভিতরে থাকা রাগটা দমানোর চেষ্টা করলো, মনে মনে বললো তুই কাজটা ঠিক করিসনি প্রত্যেয় এর মূল্য তোকে দিতে হবে।
ফিহার কান্নারত মুখের দিকে তাকিয়ে যেই না সাদাব কিছু বলতে যাবে।পেছন থেকে সাদাবের মা এক প্রকার চিৎকার করে উঠলেন।এক প্রকার তেড়ে এসে ফিহার হাত সাদাবের হাত থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে তাকে ধাক্কা মেরে দিলো।তাল সামলাতে না পেরে যখনই পড়ে যেতে নিবে পিছন থেকে এক জোড়া বলিষ্ঠ হাত তাকে আগলে নিলো।ফিহা ভয়ে চোখ বন্ধ করে নিয়েছে।সাদাবের মায়ের মুখে যেনো কথার খৈ ফুটেছে তিনি বলেই চলেছে
,,বেহায়া মেয়ে মানুষ, এক ছেলের সাথে এক রাত কাটিয়ে এসে আবার আমার ছেলেকে ফুসলানো হচ্ছে।আমার ছেলের সাথে ভালোবাসার নাটক করার কি দরকার ছিলো এক জনে মন ভরে না নাকি?কয়জন লাগে তোর।নির্লজ্জ মেয়ে মানুষ বাপ মা সঠিক শিক্ষা দিতে পারেনি।প্রেমিক নিয়ে পালিয়ে গিয়ে আবার এখন এই মুখ নিয়ে এখানে যাত্রা পালা করতে এসেছে।ওই মেয়ে তোর মাঝে কি লজ্জার ছিটেফোঁটা নেই নাকি।আমার ছেলের থেকে দূরে থাক।ছেলের পছন্দ বলে বিয়েতে মত দিয়েছিলাম।দেখেতো বুঝাই যায়নি মেয়ের পেটে পেটে এতো শয়*তানি!
ফিহা চোখ খুলে দেখলো নিজের অবস্থান নিজেকে প্রত্যেয় বাহুতে আবদ্ধ দেখেই গা গুলিয়ে আসলো,শুধু একটা কথাই ধরা দিলো মন মস্তিষ্কে “প্রতারক!”
নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলো পুরো দমে।কিন্তু ছেলেটির শক্তির কাছে পেরে উঠলো না তার ছোট খাটো দেহটা।বাধ্য হয়ে রাগ মিশ্রিত কন্ঠে বলে উঠলো
,,ছাড়ুন বলছি ছাড়ুন!আমাকে ধরার সাহস হয় কি করে আপনার?দূরে সুরন!
প্রত্যেয় হাসলো কি অমায়িক ভাবে হাসে ছেলেটি, এই হাসিতে ঘা য়েল হবে হাজারো রমনী,তবে ফিহার কাছে এই হাসিটি বিষা ক্ত লাগছে।এর থেকে বিদঘুটে কিছু হয়তো দেখেনি কখনো।
সাদাবের মা সাদাবের হাত টেনে বললো আর এক মুহুর্ত ও নয় এখানে, তোর জন্য এর থেকে সুন্দর ভালো ভদ্র মেয়ে খুঁজে এনে দিবো।তোর ভাগ্য ভালো এরকম একটা মেয়ে কে বিয়ে করা থেকে বেঁচে গেলি।সাদাবের চোখ মুখ লাল হয়ে এসেছে।সে কিছু বলতে ও পারছে না, মায়ের বাধ্য ছেলে সে।তাকিয়ে আছে অন্যের বাহু বন্ধনে আবদ্ধ দাড়িয়ে থাকা মেয়েটিকে।মেয়েটির চোখে মুখে আকুতি,টানাটানা চোখ দুটো যেনো বলে যাচ্ছে
” প্লিজ আমাকে রেখে যাবেন না সাদাব,বিশ্বাস করুন আমার ভালোবাসা মিথ্যা নয়।আমাকে একবার বিশ্বাস করুন,দয়া করে আমাকে ভুল বুঝবেন না!”
নিজেকে এই মুহুর্তে বড় কাপুরুষ মনে হচ্ছে সাদাবের।কেনো সে মুখ ফুটে মায়ের বিরোধীতা করতে পারছে না, কেনো ভালোবাসার মানুষের পাশে দাড়াতে পারছে না।
ফিহা অশ্রু সিক্ত নয়নে দেখলো ভালোবাসার মানুষের প্রস্থান।
যে মানুষটিকে ঘিরে ছিলো তার হাজারো রঙিন স্বপ্ন, যে মানুষটিকে ভালোবেসে সে বুঝেছিলো ভালোবাসা কি প্রেম কি।সে মানুষটিও আজ তাকে ভুল বুঝলো,বাকি সবার মতোই দূরে ঠেলে দিলো!এতোটা নিষ্ঠু র কেনো সব কিছু।কাল সন্ধ্যায় তো সব কিছু ঠিক ছিলো,কিছু মুহুর্তে এভাবে সবটা শেষ না হলেও তো পারতো।
ফিহাকে এবারে টেনে নিয়ে গেলো প্রত্যেয় নামক মানুষটি,ফিহা রক্তশূন্য চোখে তাকিয়ে আছে শুধু,মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেছে উজ্জ্বল শ্যামলা বর্ণের মেয়েটির চোখ দুটি ফুলে গেছে,নাকের পাটাতনটি যেনো টকটকে টমেটো।ফুঁপানোর ফলে থেমে থেমে কেঁপে উঠছে লাল হয়ে যাওয়া ওষ্ঠদ্বয়।
প্রত্যেয় ফিহাকে নিয়ে এসে দাড়ালো বেলায়েত খন্দকারের সামনে,বাড়িতে নিরবতা বিরাজমান কারো মুখে কোনো রা নেই।কিছু সময় পর পর শোনা যাচ্ছে সাংবাদিকদের ফিসফিসানির শব্দ।
বেলায়েত খন্দকার তাকালেন মেয়ের দিকে,তবুও তার
পা ষাণ মন গললো না,ধরেই নিলেন মেয়ের চোখ জল শুধু লোক দেখানো।তিনি তাচ্ছিল্যের সুরে বললেন
,,আর কি করার বাকি আছে তোমাদের যা তামশা দেখানোর তা তো দেখিয়েই ফেলেছো ইতিমধ্যে। আর কতো লোক হাসাবে তোমরা,এবার বেরিয়ে যাও আমার বাড়ি থেকে,এই মুখ নিয়ে আর আমার কাছে ফিরবে না তুমি, মনে রেখো আজ থেকে আমার এক মেয়ে আর কেউ নেই।যে ছিলো সে কাল রাতেই মা রা গেছে।
প্রত্যেয়ের মুখে সুক্ষ্ম হাসি দেখা গেলো,সে এক হাতে শক্ত করে চেপে ধরেছে ফিহার হাত অন্য হাত পেন্টের পকেটে গুঁজে দিয়ে বললো
,,আহ্! শ্বশুর মশাই,এই মুখ দেখার কি দরকার!
দরকার পড়লে প্লাস্টিক সা র্জা রি করে আপনার মেয়েকে আবার নতুন মুখ সমেত নিয়ে আসবো।আপনার মেয়ের একমাত্র জামাই বলে কথা।তার জন্য আমি সব কিছুই করতে পারি।আপনি কোনো চিন্তাই করবেন না,তাকে আমি সুখে শান্তিতেই রাখবো।একটা মাত্র বউ আমার।আপনি শুধু দোয়া করবেন শ্বশুর মশাই!
বলেই এক লাফে পা ছুঁয়ে আবার উঠে গেলো, মাথায় হাত বুলিয়ে,চোখ মুখ শক্ত করে চিবিয়ে চিবিয়ে বললো
,,শুধু আপনি আমার কলিজার বাবা বলে ছেড়ে দিচ্ছি, না হয় যে হাত দিয়ে তাকে আ ঘাত করেছেন সে হাত আমি ভে ঙ্গে গুঁড়িয়ে দিতাম!
ফিহা ভীষণ ক্ষি প্ত হলো কে এই ছেলে কোথা থেকে উড়ে এসে জুড়ে বসেছে,কখন থেকে বউ বউ করে যাচ্ছে কে তার বউ?কবের বউ,কিসের বউ?বিয়ে হলো কোন সময়!তার বাবা তাকে মারুক কা টুক যাই করুক সে তাকে ছেড়ে কোথাও যাবে, বুঝালে একদিন ঠিক বুঝবে।
,,এই আপনার সাহস হয় কি করে আমার আব্বুর সাথে এভাবে কথা বলার।কি সব বলে যাচ্ছেন কখন থেকে আপনি এখান থেকে চলে যান বলছি, আমার আব্বু আমাকে মে রে ফেললেও আমি তার কাছেই থাকবো!
বেলায় খন্দকার এবার চিৎকার করে বললেন
,,তোমরা কি, এখান থেকে যাবে নাকি আমি দারোয়ান ডেকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিবো?
ফিহা করুন কন্ঠে ডাকলো
,,আব্বু!
,,কে তোমার আব্বু?তোমার আব্বু মা রা গেছে! এখান থেকে চলে যাও।
বলেই বাড়ির ভিতর চলে গেলেন তিনি,ফিহা সেদিকে তাকিয়ে রইলো অপলক।রুমানার চক্ষু শীতল, চেয়েও তিনি মেয়েকে আগলে রাখতে পারলেন না।চলে গেলেন দৃষ্টিগোচরে!
ফিহা তাকিয়ে দেখলো বাবা মায়ের প্রস্থান।হাতে টান অনুভব করলো সে,প্রত্যেয় নামক ব্যক্তি তাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে নিজের সাথে।ফিহা হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে মুখে বলছে ছাড়ুন আমায় কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন?আমি যাবোনা আপনার সাথে।
কিন্তু কোনো লাভ হলো না,প্রত্যেয় তাকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে গরু র মতো।
—-
প্রত্যেয় গাড়ির দরজা খুলে ভিতরে এক প্রকার ছুঁড়ে
মা রলো ফিহাকে।হাতের ব্যাথায় মৃদ্যু আর্তনাদ করে উঠলো মেয়েটি।প্রত্যেয় গাড়িতে উঠেই গাড়ি স্টার্ট দিলো,তার চোখে মুখে রাগের ছাপ স্পষ্ট, গাড়ি চালাচ্ছে ফুল স্প্রিডে, ফিহা চোখ বন্ধ করে ফুপিয়ে কেঁদে চলেছে।
প্রত্যেয় ধম*কে বললো
,,একদম ফ্যাসফ্যাস করবে না কানের নিচে এক ধাক্কাতে গাড়ি থেকে ফেলে দিবো বলে দিলাম।
কেঁপে উঠলো ফিহা তবে কান্না বন্ধ করলো না,
তা দেখে আরেক দফা ধ*মক দিলো প্রত্যেয়।ফিহা এবার মুখ চেপে ধরেছে নিজের যাতে শব্দ না হয়।অন্য পাশে মুখ ফিরিয়ে ভেবে চলেছে রাতের কথা।
______
গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান শেষে রুমে গিয়ে ফ্রেশ হওয়ার পর তার এক কাজিন এসে বললো নিচে সাদাব এসেছে তাকে দেখতে।সে না গেলে নাকি সাদাব উপরে উঠে আসবে,ফিহা সাত পাঁচ না ভেবে এক ছুটে গিয়ে ছিলো প্রিয় মানুষটির কাছে।
ফিহা সেই ভার্সিটি লাইফের প্রথম থেকেই পছন্দ করতো সাদাব কে,ছেলেটি ছিলো ভার্সিটির সিনিয়র, তারা ভর্তি হওয়ার সময়ই গ্র্যাজুয়েট কমপ্লিট করে ফেলেছে।লম্বাচওড়া ফর্সা এক যুবক, যে কোনো নারীর মনেই সহজে ধরা দেওয়ার মতো।ফিহা শুধু তার রূপের প্রেমে পড়েনি ছেলেটির ব্যক্তিত্ব ও ছিলো নজর কাড়া, ভার্সিটির ছাত্রদলীয় সব কিছুতে থাকতো সে, কারো কোনো অসুবিধে হলে সলভ করে দিলো হাতের তুরিতে, সেই মানুষটির সাথে নিজের বিয়ে ঠিক হবে বিষয়টি সে কল্পনাও করতে পারিনি।ছেলে নিজে থেকে প্রস্তাব পাঠিয়েছে বাড়িতে,এতো সহজে ভালোবাসার মানুষটিকে পেয়ে যাবে ভেবেই খুশিতে আত্মহারা হয়ে পড়েছিলো তার অবচেতন মন।
সেদিন সাদাবের সাথে দেখা করতে বাড়ির বাহিরে গিয়েছিলো ঠিকই কিন্তু পরবর্তীতে নিজেকে আবিষ্কার করেছিলো কারো রুমে তাকে বিছানায় রাখা হয়েছে।তবে বেঁধে রাখেনি, রুম ও লক করা ছিলো না।খুবই পরিপাটি একটা গুছানো ঘর।সেখানেই তার দেখা হয় প্রত্যেয়ের সাথে,প্রত্যেয় তার সাথে খারা প কিছু করেনি,ফিহার কান্না করা দেখে সে বলেছিলো সকালেই তাকে বাড়ি পৌঁছে দিবে আর নিজের ভুল স্বীকার করে নিবে।কিন্তু কিছুই ঘটলো না,যে মানুষটির ব্যক্তিত্বের প্রেমে পড়েছিলো সে মানুষটিও তাকে একা করে চলে গেছে, নিজের বাবা মাও তাকে বিশ্বাস করেনি। তার পরবর্তী জীবনে কি হবে তাও সে জানে না।এই রকম মূল্যহীন জীবনের দায় সে বয়ে বেড়াতে পারবে না, মনে মনে এক কঠিন সিদ্ধান্ত নিলো ফিহা,একবার তাকালো ড্রাইভিং সিটে বসে থাকা মানুষটির দিকে পরেই চোখ বুজে প্রস্তুতি নিলো গাড়ি থেকে ঝাপ দেওয়ার যে স্প্রিডে গাড়ি চলছে আর মেইন রোডে একবার নিচে পড়লেই সব শেষ।যে ভাবনা সে কাজ ফিহা জোরে প্রেস করলো দরজার লকের উপর, ঝা*প দিলো বাহিরে।
চলবে,,,,