#কোনো_এক_শ্রাবণে [তৃতীয় অধ্যায়]
লেখনীতে #মেহরিমা_আফরিন
(৭৩)
চিত্রা ওয়ালে ঝুলানো বিশালাকার ফ্রেমে বাঁধাই করা ছবিটার দিকে দেখে বলল,’এই লোক আমার বাবা?’
তার প্রশ্নের ধরন শুনে শুভ্রা বিরক্ত হলো।কপাল কুঁচকে বলল,’এই লোক আবার কি?বল বাবা।’
চিত্রা কোমরে হাত রেখে কটমট করে বলল,’আচ্ছা ঠিক আছে।তাহলে এখন বলো,এই বাবা কি আমার বাবা?’
শুভ্রা তার মাথায় একটা গাট্টা মেরে কটমট করে বলল,’তুই আসলেই একটা ত্যাড়া।’
চিত্রা সেই কথায় কান না দিয়ে পুনরায় দেয়ালে থাকা ফটোফ্রেমটা দেখল।সেখানে বাবার পাশে আরেকটা মানুষ আছে।শুভ্রা বলল,’দেখি বলতো,বাবার পাশে যে দাঁড়িয়ে আছে,সে কে?’
চিত্রা ভেঙচি কেটে বলল,’সে আমার মা।’
‘বাপরে! মা কে তো ঠিকই চিনেছিস।’
‘মামা সারাক্ষণ মায়ের কথা বলে,মায়ের ছবি দেখায়।মা কে না চিনে উপায় আছে?’
আরেক দফা বিরক্তিতে শুভ্রার মুখ ছেয়ে গেল।সে চোখ বাঁকা করে বলল,’এতো পাকনা পাকনা কথা বলিস কেন চিত্র?তোর বয়সের সাথে এসব যায় না।’
চিত্রা সামনের দিকে হেঁটে গেল।ভাবলেশহীন হয়ে বলল,’না গেলে নাই।’
চিত্রা ধুপধাপ আওয়াজে হেঁটে একটা সোফার কাছে গিয়ে পা তুলে বসলো।শরীর দোলাতে দোলাতে বলল,’জানো শুভি! আমার মনে হয় আমাদের মা বাবা না থাকাতেই ভালো হয়েছে।’
প্রচন্ডরকম বিস্ময়ে শুভ্রার চোয়াল ঝুলে গেল,চোখ গুলো কোটর ছেড়ে বেরিয়ে আসতে চাইলো হঠাৎ।সে মুখ হা করে বলল,’কি বললি?কি বললি তুই এটা?’
চিত্রা ভাবলেশহীন হয়ে পুনরায় জবাব দেয়,’বললাম আমাদের মা বাবা না থাকাতে ভালোই হয়েছে।’
‘সেকি!কেন?’ চোখ কপালে তুলল শুভ্রা।
চিত্রা ফোকলা দাঁতে প্রশস্ত হেসে বলল,’মা বাবা থাকলে আপাই আমাকে এতো ভালোবাসতো না।আমার কাছে মা বাবার চেয়েও আপাইকে বেশি ভালো লাগে।’
শুভ্রা অবাক হয়ে বলল,’মা বাবার সাথে তো তোর কোনো স্মৃতিই নাই।মা বাবা কেমন তুই জানিস?’
‘নাহ,জানতে চাইও না।আমার মাও আপাই,বাবাও আপাই।আপাইয়ের মতো ভালো আমাকে মা বাবাও বাসতো না।আপাইয়ের মতো আদরও করতো না আমাকে।আপাই যে সত্যিই একটা পরী সেটা কি তুমি জানো শুভি?’
শুভ্রা দৌড়ে গিয়ে তার পাশে বসলো।চোখ বড় বড় করে বলল,’তোর সত্যিই মা বাবার কথা মনে পড়লে কষ্ট হয় না?’
চিত্রা নির্বিকার হয়ে বলল,’না,হয় না।’
‘কি অদ্ভুত!’
শুভ্রা নিজ থেকেই আবার বলল,’একবারো মনে হয় না যে মামার বাড়িতে না থেকে এই বাড়িতে থাকলে আমাদের সময়টা আরো ভালো কাটতো?’
চিত্রা মুখ বাঁকা করে বলল,’নাহ।আপাইয়ের বুকে ঘুমিয়েই আমার সময় সবচেয়ে বেশি ভালো কেটেছে।পৃথিবীতে আমি সবচেয়ে বেশি ভালো আপাইকেই বাসি।যদি পুরো পৃথিবী ডানদিকে আর আপাই বাম দিকে থাকে,তাহলে আমি বাম দিকেই যাবো শুভি।’
শুভ্রা মন্ত্রমুগ্ধের মতো তার কথা শুনল।সে শেষ করতেই একহাত মুখে চেপে বলল,’তুই আপাইকে এতোখানি ভালোবাসিস?’
চিত্রা গালভর্তি হেসে বলল,’আপাইও আমাকে এতোখানি ভালোবাসে।তোমার থেকেও বেশি আমাকে বাসে।’
শুভ্রা তেঁতে উঠল,’মিথ্যা কথা।সমান সমান বাসে।’
‘কচু।তোমাকে কম,আমাকে বেশি।মনে নাই আপাই আমার ব্যাংকে নিজের টাকা ফেলতো।তোমার ব্যাংকে কখনো আপাই নিজের টাকা ফেলেছে?’
শুভ্রার কষ্ট হলো কেমন যেন।সে মাথা নামিয়ে বলল,’সেটা অবশ্য ঠিক বলেছিস।আপাই তোকেই সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে।’
নবনীতা শম্বুক গতিতে হেঁটে এসে ঘরের দরজায় উঁকি দিলো।ধিমি স্বরে ফিসফিস করে বলল,’আপাই আসবো?’
সঙ্গে সঙ্গে দুই বোন ঘাড় ঘুরিয়ে তাকে দেখল।চিত্রা দ্রুত মাথা নেড়ে বললো,’এক্ষুণি আসো আপাই।’
নবনীতা এসে তাদের মাঝখানটায় বসলো।সে বসতেই চিত্রা তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল।হাসিমুখে বলল,’আমার আপাই।’
শুভ্রা উদাস চোখে তাদের দু’জনকে দেখে।মাথায় এখনো চিত্রার সেই কথাটা ঘুরছে,’আপাই আমাকে বেশি ভালোবাসে।’
তাই তো।ভুল কিছু বলে নাই তো।আপাই চিত্রকেই বেশি ভালোবাসে।চিত্র’র কাছে তো আপাই ই তার মা,আবার আপাই ই তার বাবা।আপাই তাকে তেমন করেই বড়ো করেছে।
নবনীতা তার মলিন মুখটা দেখেই এক হাতে তার থুতনি স্পর্শ করল।শুভ্রার মুখটা সামান্য উঁচু করে ধরে বলল,’কিরে?তুই এমন চুপ মে’রে আছিস কেন শুভি?’
শুভ্রা অন্য দিকে চোখ সরিয়ে নিলো।নাক টেনে টেনে বলল,’কিছু না।এমনিই।’
‘এ্যাই শুভি! এদিকে তাকা।আপাইকে বল কি হয়েছে।’
শুভ্রা হঠাৎই ঠোঁট ভেঙে কেঁদে ফেলল।বলল,’তুমি চিত্র কে বেশি ভালোবাসো।তুমি তাকে তোমার বাচ্চার মতো আদর করো।’
বলতে বলতেই তার কন্ঠ ভেঙে আসে।নবনীতা হেসে উঠে বলল,’কি রে শুভি?তুই কি এখনো ক্লাস টু তে আছিস?কিসব বোকা বোকা কথা বলছিস।’
শুভ্রা অভিমান করে বলল,’আমি ঠিকই বলছি।’
নবনীতা চিত্রকে ছেড়ে তার কাছে গেল।তাকে পেছন থেকে আলতো করে জড়িয়ে ধরে বলল,’তুই না আমার লক্ষী সোনা বোন?মন খারাপ করে না শুভি।আপাই তোদের দু’জনকে একদম সমান সমান ভালোবাসি।’
শুভ্রার চোখ ভিজে উঠল।সে পেছন ফিরে শক্ত করে নবনীতাকে জড়িয়ে ধরল।জড়ানো কন্ঠে বলল,’চিত্র বার বার বলে তুমি তাকেই বেশি ভালোবাসো।আমাকে না।’
নবনীতা ঘাড় ঘুরিয়ে চিত্রার দিকে তাকায়।খানিকটা শাসনের সুরে বলে,’এ্যাই চিত্র!উল্টা পাল্টা কথা বলিস কেন?’
সে খুব যত্নে শুভ্রার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো।আরশাদ খাটে দুই হাত ছড়িয়ে শান্তিতে ঘুমাচ্ছে।হঠাৎই তার ঘুম ভেঙে গেল।শুভ্রা দ্রুত তার কাছে ছুটে গেল।তার বুকে আলতো করে মালিশ করতে করতে বলল,’কান্না করে না আরশু।এই যে শুভি খালামণি এদিকে।’
চিত্রা একনজর শুভ্রা আর আরশাদকে দেখে নবনীতার কাছে এগিয়ে গেল।তাকে পুনরায় শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ডাকলো,’আপাই!’
নবনীতা তার চুলে বিলি কাটতে কাটতে জবাব দেয়,’কি?’
চিত্রা বলল,’আরশাদ আসার পর থেকে তুমি আর আমাকে আদর দাও না আপাই।’
নবনীতা চোখ উল্টে বলল,’সেকি! তোরা দুই বোন এসব কি শুরু করেছিস?’
চিত্রা হঠাৎই কেমন শান্ত হয়ে গেল।আপাইয়ের জীর্ণ আর দুর্বল বক্ষে মাথা রেখে বলল,’আপাই! একটা কথা বলি?’
নবনীতা তাকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরল।আদুরে গলায় বলল,’বলো না সোনা।’
‘মিস বলেছে এই পৃথিবীতে সাতশো কোটি মানুষ আছে।আর এই সাতশো কোটি মানুষের মধ্যে আমি তোমাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি আপাই।আমার বাবার কথা মনেই পড়ে না।কারণ আমার কাছে তুমিই আমার বাবা।আমি স্কুলে সবাইকে বলেছি পরী আপাই ই আমার বাবা,পরী আপাই ই আমার মা।’
নবনীতা অকস্মাৎ নিজের নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরল।তার দুই চোখ ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে।চিত্রা আবার তার বাচ্চা বাচ্চা কন্ঠে বলল,’আপাই! তুমি আমাকে আগের মতো ভালোবাসো না।তুমি আমাকে আর বুকে নিয়ে ঘুমাও না।তোমার শরীরের একটা সুন্দর গন্ধ আছে আপাই।আমি ঘুমুতে গেলে ঐ গন্ধ আর পাই না।আরশু নিশ্চয়ই পায়, তাই না?তুমি তাকেই ভালোবাসো।আমাকে বাসো না।আরহাম ভাই আর আমাকে কোলে নেয় না।’
‘তুমি নাকি ভীষণ লজ্জা পাও কোলে নিলে?’
‘তো তাই বলে নিবে না?আরশাদ আসার পরেই তোমরা আর আমাকে আদর দাও না।আরহাম ভাই আর আমাকে চকোলেট চিপস খাওয়ায় না।’
নবনীতা নিশ্চুপ।মেয়েটা এতো গুছিয়ে কথা বলছে কেমন করে?তার বয়স তো মাত্র আট।আট বছরের মেয়ে এতো সুক্ষভাবে অনুভূতি প্রকাশ করছে কেমন করে?চিত্রা নাক টেনে বলল,’আমি যদি জানতাম তুমি বিয়ের পর আমাকে ছেড়ে চলে যাবে,তাহলে কখনো তোমার বিয়েতে বিভার সাথে নাচতাম না।না নেচে শুভির মতো কাঁনতাম।’
সে থামল।একটু পরেই আবারো বলতে শুরু করল,’আপাই!শুভি তো আর আমার সাথে থাকে না।আরেক শহরে চলে গেছে।তুমি আমাকে তোমার সাথে আরহাম ভাইয়াদের বাসায় নিয়ে যাও না আপাই।ভাইয়াদের কতো গুলো রুম।একটা রুমেও বুঝি আমার জায়গা হবে না?আমি দরকার হয় আমার সব খেলনা
মামার বাড়িতে রেখে আসবো।তবুও আমাকে তোমার সাথে রাখো আপাই।আমি দুষ্টুমিও কম করবো।আমি স্কুলেও যাবো,আমি পড়াশোনাও করবো আপাই।তবুও আমাকে তোমাদের সাথে নিয়ে চলো।আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারি না আপাই।তুমিই বলো,মা কে ছাড়া কি বাবুরা থাকতে পারে?ওয়াসিফ কি রিমিপু কে ছাড়া থাকতে পারে বলো?’
আট বছরের ছোট্ট মেয়েটি কোনোরকম ভণিতা ছাড়া নিজের মনের কথা উজাড় করে তার বোনের কাছে প্রকাশ করল।তার দুঃখ,তার যন্ত্রনা,তার আক্ষেপ-সবকিছু।নবনীতা আচমকাই হাউমাউ করে কেঁদে উঠল।চিত্রাকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিতে নিতে ধরা গলায় বলল,’আপাই সরি,সোনা।অনেক অনেক সরি।আপাই তোমাকে আলাদা রাখতে চাই না।কখনো চাই নি।তুমি জানো না,তুমি একা থাকবে ভেবে আমি বিয়েও করতে চাই নি।কিন্তু পরিস্থিতি ওমনই ছিলো।বিশ্বাস করো চিত্র।আপাই কখনো বিয়ে করে আলাদা হতে চাই নি।কিন্তু,,কিন্তু,,’
কান্নার দমকে তার কথা থেমে আসে।সে চিত্রকে জাপ্টে ধরে কতোক্ষণ ফোঁপায়।
‘আপাই তোমাকে ভালোবাসি চিত্র।তুমি আপাইকে এই অপরাধবোধে ফেলো না।তুমি আমার জান।আমিও সাতশো কোটি মানুষের মধ্যে তোমাকেই সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি।তুমি আমার মিষ্টি একটা বাচ্চা।’
চিত্রা হাত বাড়িয়ে তার চোখের পানি মুছে দিলো।ক্ষীণ স্বরে বলল,’আপাই কান্না না করে আগে এটা বলো আমাকে তোমাদের সাথে নিবে নাকি?আমি আরহাম ভাইয়াদের বাসায় থাকতে চাই।’
‘তোমার আপাই কি বলবে?’
দরজার কাছ থেকে ভরাট পুরুষালি কন্ঠের গম্ভীর আওয়াজ ভেসে এলো।নবনীতা আর চিত্রা দু’জনেই ঘাড় ঘুরিয়ে সেদিকে তাকায়।আরহাম ট্রাউজারের পকেটে হাত গুজে দু’জনের সামনে এসে দাঁড়ালো।তার চুল থেকে টপটপ করে পানি পড়ে কাঁধের কাছটা ভিজে যাচ্ছে।
আরহাম চিত্রার পাশ ঘেঁষে বসলো।কপালে ভাঁজ ফেলে বলল,’আপাই কে কেন বলছো পাখি?তুমি আমার বাসায় থাকতে চাইছো,আর আমি তোমায় রাখবো না?তুমি অবশ্যই অবশ্যই আমার বাসায় থাকবে।এটাই আমার শেষ কথা।’
চিত্রা খুশিতে হাততালি দিয়ে বলল,’সত্যিই?’
আরহাম হাসল।মাথা নেড়ে বলল,’একদম তিন সত্যি।’
বলেই সে একটানে চিত্রকে কোলে নিলো।চিত্রা লাজুক হেসে তার গলা জড়িয়ে ধরল।পরক্ষণেই আবার তাড়াহুড়ো করে বলল,’লজ্জা পাচ্ছি দেখে নামিয়ে দিও না আবার।’
তার কথা শুনেই আরহাম হো হো করে হেসে উঠল।নবনীতা নিজেও কান্নার মাঝে শব্দ করে হেসে ফেলল।কান্নার শব্দের সাথে তার হাসির শব্দ মিশে কেমন অন্যরকম শোনাল।আরহাম হাসতে হাসতেই বলল,’একেবারে তাসনুভার কপি।দুইটাই অকালপক্ব।’
সে চিত্রকে কোলে নিয়েই উঠে দাঁড়ালো।ভ্রু উঁচু করে বলল,’কি চিত্র?লং ড্রাইভে যাবে?আগেই বলে দিচ্ছি,শুধু তুমি আর আমি।আপাই বাদ।’
চিত্রার দুই চোখ খুশিতে ঝলমল করে উঠল।সে পুনরায় হাততালি দিয়ে খুশিতে গদো গদো হয়ে বলল,’হ্যাঁ হ্যাঁ।তুমি আর আমি।আমরা চিপস চকলেটও কিনবো কিন্তু।’
আরহাম একটু ভেবে বলল,’আচ্ছা কিনবো।কিন্তু এই রাতে কোনো স্টোর খোলা পাবো বলে মনে হচ্ছে না।’
‘আচ্ছা তাহলে শুধু ঘুরবো।এখন চলো না।’
চিত্রার কন্ঠে চঞ্চলতা,একই সাথে এতো এতো বিরক্তি।আরহাম কড়া গলায় বলল,’যাবো।কিন্তু একটা শর্ত আছে।’
চিত্রা চিন্তিত হয়ে বলল,’আবার কি শর্ত?’
আরহাম চোখ সরু করে বলল,’তুমি পুরো রাস্তা আমাকে আরাম ভাই বলে ডাকবে।যদি একবারও আরহাম ভাই বলে ডেকেছো,তবে সেখানেই ফেলে রেখে চলে আসবো।রাজি?’
চিত্রা খিলখিলিয়ে হেসে ফেলল।আরহামের কাঁধে মাথা রেখে বলল,’আচ্ছা রাজি।’
.
.
.
.
রাতের শেষ ভাগ চলছে।শুভ্রা আরশাদকে ঘুমা পাড়াতে গিয়ে নিজেই ঘুমে তলিয়ে গেছে।আরহাম আর চিত্র বেরিয়েছে একটু আগে।শ্যালিকা আর দুলাভাইয়ের লং ড্রাইভ,নবনীতা জায়গা পায় নি।পুরো ঘর এখন রাতের নিস্তব্ধতায় ডুব দিয়েছে।
নবনীতা আস্তে করে চেয়ার টানলো।পাশের ঘরেই শুভ্রা আর আরশাদ ঘুমাচ্ছে।কোনোভাবে যদি আরশাদ এই সময়ে জেগে যায়,তবে নবনীতার পক্ষে তাকে ঘুম পাড়ানো প্রায় অসম্ভব।সে একেবারে নিঃশব্দে টেবিলের উপর হাত রাখল।টেবিলটা একেবারে ঝকঝকে পরিষ্কার।আজ সকালেই বোধহয় মোছা হয়েছে।
ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে ছোট্ট ডায়রি আর কালো বল পয়েন্ট টা বের করেই নবনীতা এক মিনিট কিছু একটা ভাবলো।তারপরই রোজকার মতো নিয়ম করে লিখতে শুরু করলো,
“বাবা,
আশা করি তুমি ভালো আছো।আমার বিশ্বাস তুমি অবশ্যই ভালো আছো।আজ হঠাৎ অনেক গুলো দিন পর তোমার কথা খুব বেশি মনে পড়ছে।তুমি আবার ভেবো না অন্যান্য দিন তোমার কথা মনে পড়ে না।এমন কিছু না বাবা।তোমার কথা রোজই আমার মনে পড়ে।
বাবা,আজ আমরা প্রায় আট বছর পর নিজেদের বাড়িতে ফিরে এসেছি।ভাবা যায়?আটটা বছর! আমাদের সেই সুন্দর বাড়ি,যেখানে আমরা খুব যত্ন করে স্বপ্ন বুনতাম।কতো গুলো দিন কেটে গেছে তাই না বাবা?আরহামের মতো আমারো ডেস্ক ক্যালেন্ডার দেখলে ভয় লাগে ভীষণ।সে বত্রিশের ঘর থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে আর আমি পঁচিশের ঘর থেকে।বয়স হয়ে যাচ্ছে আমাদের।
চিত্র আর শুভিও কতো বড় হয়ে গেছে বাবা।তুমি তো কিছুই দেখলে না।চিত্র’র মতোন মিষ্টি একটা মেয়েকে তুমি কোলেপিঠে বড়ো করতে পারো নি,এই আক্ষেপ আমার চিরকাল থাকবে।তুমি জানো,চিত্র এখন স্কুলে যায়।আমার বড্ড শখ ছিলো চিত্র আর তোমাকে একসাথে দেখার।এই ধরো চিত্র স্কুল ড্রেস পরলো,আর তুমি কোট প্যান্ট।তারপর আমি তোমাদের সুন্দর সুন্দর কিছু ছবি তুলতাম।কিন্তু সেই স্বপ্ন আর পূরণ হলো কোথায়?তুমি নেই,আর তোমার মেয়েরা একেকজন একেক জীবনে ব্যস্ত হয়ে গেছে।
শুভ্রা মেডিকেলে চান্স পেয়েছে বাবা।খুব বড়ো ডাক্তার হবে ভবিষ্যতে।ডাক্তার হয়ে আমার চিকিৎসা করবে।এই কথা আমি বলি নি।সেই বলেছে।আমি তাকে কেমন করে বোঝাই জিনগত ব্যাথির কোনো চিকিৎসা নেই?আমারও কোনো চিকিৎসা নেই।যাকগে,এসব কথা ছাড়ো।শুভ্রা যখন এপ্রোন গায়ে জড়িয়ে ক্লাস করতে যায়,তখন আমার সমস্ত শরীর অবশ হয়ে আসে।তোমার মেয়ে ডাক্তার হচ্ছে বাবা।অথচ তুমি সেই দৃশ্য দেখতে পারছো না।এর চেয়ে কষ্টের আর কি হতে পারে?মা কে বলে দিও তার ছোট্ট শুভি ডাক্তারি পড়ছে।ইশশ! মা যদি বেঁচে থাকতো,তবে কতো খুশি হতো।আমি জানি,মা শুভিকে সবসময়ই একটু বেশি ভালোবাসতো।
বাবা,তুমি শুনছো?আমার বিয়ে হয়েছে বাবা।আমার সংসার জীবন নিয়ে যদি আমি লিখতে শুরু করি,তবে কোনোদিন লিখে শেষ করতে পারব না।শুধু এইটুক বলবো,আমি ভালো আছি বাবা।অনেক বেশি ভালো আছি আমি।আমার বর কে তুমি দেখো নি।ভালোই হয়েছে দেখো নি।সে একটু রগচটা স্বভাবের।আমার ধারণা তুমি বেঁচে থাকলে তার সাথে কোনোদিনই আমার বিয়ে হতো না।তুমি এমন লোকের সাথে আমার বিয়ে হতেই দিতে না।আমার বিশ্বাস সে প্রথমদিনই এমন কিছু উদ্ভট কাজ করতো,যেটা দেখে তুমি সসম্মানে তাকে বিদায় করে দিতে।সে এমনই লোক।এবার তোমায় একটা গোপন কথা বলি।সে বাইরে থেকে ভীষণ কাটখোট্টা স্বভাবের হলেও ভেতর থেকে একদম নরম মনের মানুষ।ঐ যে নারিকেল আছে না বাবা?সে পুরো ওমন।তার মনটা খুব ভালো বাবা।বর বলে বাড়িয়ে বলছি না।সে সত্যিই এমন।একটু বাচ্চা বাচ্চা স্বভাবের।সে তথাকথিত গাম্ভীর্যপূর্ণ সুপুরুষ না।সে একেবারেই এলোমেলো আর ছন্নছাড়া একটা মানুষ।আমি গুছিয়ে না নিলে সে সারাজীবন এমন ছন্নছাড়াই থাকবে।আমার কি ধারণা হয়েছে জানো?আমার ধারণা সে তোমাকে মারাত্মক রকমের হিংসে করে।আমি যখনই বলি আমি আমার বাবাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি,তখনই তার মুখটা গ্যাস বেলুনের মতো চুপসে যায়।এবার ভাবো,সে কেমন অবুঝ প্রকৃতির মানুষ।
তাকে আমি খুব ভালোবাসি বাবা।সেও আমাকে ভীষণ ভালোবাসে।যতোখানি ভালোবাসলে নিজের বাবা হওয়ার আনন্দকে মাটিচাপা দিয়ে হাসি মুখে সংসার করা যায়,আরহাম আমাকে ঠিক অতোটাই ভালোবাসে।তুমি সবসময় আমাদের জন্য দোয়া করবে বাবা।দোয়া করবে যেন আরহামের ভেতরের এই স্নিগ্ধ সুন্দর মানুষটা যেন আর কখনোই হারিয়ে না যায়।
আরেকটা দোয়া করবে বাবা?জানি আমি লোভ করছি।তবুও বলি।আমি চাই আমিও চিত্র আর শুভির মতো ফুটফুটে একটা কন্যা সন্তানের মা হই।সে হবে আমার আর আরহামের ছোট্ট সংসারের একটা সুন্দর পূর্ণতা।সে আমাদের একটা মিষ্টি পরী হবে।আমি খুব চাই বাবা,খুব চাই।তুমি দোয়া করো আমার জন্য।আমি রোজ দোয়া করি।আল্লাহ কি কোনোদিনই আমার দোয়া শুনবে না?রিমির মতো কি কোনোদিন আমি মা হতে পারব না?ওয়াজিদ ভাইয়া যেমন করে ওয়াসিফকে মাথায় তুলে ঘুরেন,আমার আরহাম কি কোনোদিন কাউকে এভাবে আদর যত্নে বড় করতে পারবে না?
আর লিখবো না বাবা।তোমার উপর আমার অভিমান জন্মাচ্ছে।তোমার মেয়েরা এতো বড়ো হয়ে গেছে তোমাকে ছাড়া,অথচ তুমি তার কিছুই দেখে যেতে পারো নি।কেন তুমি আমাদের সাথে নেই বাবা?তুমি থাকলে এখন তুমি আর আমি লং ড্রাইভে বের হতাম।চিত্র ঘুরুক তার আরাম ভাইয়ের সাথে।আমি ঘুরবো আমার বাবার সাথে।
পৃথিবী অনেক এগিয়ে গেছে বাবা।নূর আহামেদের তিন মেয়ে সেই পৃথিবীর সাথে খুব ভালো মানিয়ে নিয়েছে।তবুও কেন যে মাঝে মাঝে কেমন অদ্ভুত অনুভূতি হয় বাবা।দুই চোখ ফেটে কান্না আসে।বারবার মনে হয়,’আজ যদি বাবা থাকতো,তবে এই আচরণ কেউ করতে পারতো না আমাদের সাথে।’
আমরা ভালো আছি বাবা।প্রবাহমান স্রোতের সাথে ভাসতে ভাসতে আমরাও নিজেদের একটা অস্তিত্ব বানিয়ে নিয়েছি।আমি চাকরি করছি,ব্যবসা সামলাচ্ছি।কিন্তু মাঝে মাঝেই হুটহাট মনে হয় আমার কি যেন নেই।তখনই আমার বুক ফেটে কান্না আসে।যখন ভাবি এই পৃথিবীতে কোনোদিন আর আমাদের দেখা হবে না,তখন আমার পুরো পৃথিবী আধার হয়ে আসে।মনে হয় আমি এক্ষুনি মা’রা যাবো।
কবে তোমার সাথে আমার দেখা হবে বাবা?তোমার দুই মেয়েকে বুকে আগলে বড়ো করার পুরষ্কার স্বরূপ তুমি কবে আমায় বাহবা দিবে?কবে বলবে,’পরী! মাই ড’টার।আই অ্যাম প্রাউড অফ ইউ?’
কবে আসবে সেই দিন?আদৌ কি কোনোদিন আমাদের মূলাকাত হবে বাবা?
যেখানেই থেকো,ভালো থেকো।তোমার পরী ভালোই আছে।শুধু জেনে রেখো,তোমাকে আর মাকে ছাড়া আমাদের জীবনটা আর কোনোদিনই পরিপূর্ণ হবে না।আমরা বরাবরই অসম্পূর্ণ।এই অসম্পূর্ণতার মাঝে থেকেই আমরা সবচেয়ে বেশি ভালো থাকার চেষ্টায় মশগুল।
ইতি
তোমার আদরের মেয়ে নবনীতা”
চলবে-
#কোনো_এক_শ্রাবণে [তৃতীয় অধ্যায়]
লেখনীতে #মেহরিমা_আফরিন
(৭৪)
জীবনের এক জটিল সমীকরণে আটকে পড়ে চূড়ান্ত রকমের দোলাচালে ভুগছিলো ফারাজ রহমান আদি।তার মনে হলো জীবনে এর চেয়ে বিব্রতকর,আর ভয়ংকর পরিস্থিতিতে সে আর দ্বিতীয়বার কখনো পড়েনি।সে টের পেল,সে একটি মেয়েকে ভালোবাসে,তাও আবার যে কি-না বয়সে তার চেয়ে বারো বছরের ছোট।বারো বছর,মানে এক যুগ।ভাবা যায়?
আদি বরাবরই নিজের অনুভূতি বুঝতে ব্যর্থ।সে কখনোই নিজের দিক থেকে বিষয় গুলো অনুভব করে নি।কিন্তু যেই না সেদিন মেয়েটা তার সম্মুখে একটা জীর্ণ গোলাপ বাড়িয়ে দিলো,ওমনি তার সব এলোমেলো হয়ে গেল।সে তাকে বলেছিল তুমি যাকে ভালোবাসো,তাকে গোলাপ দিয়ে নিজের অনুভূতি জানাও।ওমনি মেয়েটা তাকে গোলাপ দিয়ে দিলো।তাহলে দুইয়ে দুইয়ে চার মেলালে কি দাঁড়ায়?এটাই যে মেয়েটা তাকে ভালোবাসে।গোলাপটা দেখার পর সে কয়েক মিনিট সেভাবেই দাঁড়িয়ে ছিলো।কিছু বলার জন্য নড়তে গিয়ে টের পেল,সে পুরোপুরি জমে গেছে।কি অদ্ভুত ব্যাপার! বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে এতো এতো মেয়েদের সাথে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে এখন এই ছোট্ট মেয়েটার সামনে তার মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না?
তাসনুভা,আদির চোখে পৃথিবীর সবচেয়ে অন্যরকম একটা মেয়ে।মেয়েটা মায়াবী,মেয়েটা চটপটে,মেয়েটা অভিমানী,মেয়েটা চঞ্চল।আদি তাকে বরাবরই স্নেহ করে আসছে।তাসনুভাকে সে তার জন্মের সময় থেকে চেনে।তার ভাবতেই কেমন অদ্ভুত অদ্ভুত লাগে যে এই মেয়ের জন্মের সময় সে ক্লাস সিক্সে ছিলো।ছিহ ছিহ! কি লজ্জা! বারো বছরের বয়সের ব্যবধান! আদির মন চাইছে মাটি ফাঁক করে ভেতরে চলে যেতে।
তাসনুভা তাকে ফুল দেওয়ার আগ পর্যন্তও পৃথিবীটা বেশ সরল ছিলো।যেই না সে তাকে ফুল দিলো,অমনি পৃথিবীটা জিলাপির মতো পেঁচিয়ে গেল।আদি কাঁপা হাতে ফুলটা হাতে নিতেই মেয়েটা এক প্রকার পালিয়ে তার দৃষ্টির আড়াল হলো।সে তো চলে গেল,কিন্তু যেতে যেতে আদিকে এক অথৈ সমুদ্রে ফেলে গেল।সেখান থেকে উঠে আসার সাধ্যি তার নেই।
আদি সেই রাতে আর ঘুমুতে পারলো না।সে গভীর মনোযোগ দিয়ে সবটা ভাবলো।খুব সুন্দর করে চিন্তা করলো কিভাবে সে তাসনুভা কে বোঝাবে তাসনুভা আসলে যেটাকে ভালোবাসা বলছে,সেটা স্রেফ ইনফ্যাচুয়েশন।এর বেশি কিছুই না।
কিন্তু কথা সাজাতে গিয়েই সে টের পেল,এটা কোনো ইনফেচুয়েশন না।সাব কনশাস মাইন্ডে সে কখন এই মেয়েটিকে পছন্দ করে ফেলেছে সে নিজেও জানে না।
তাসনুভার তার প্রতি অনুভূতি আছে,এটা জানার পর পৃথিবী ছিলো জিলাপির মতো।কিন্তু সেও মনের অজান্তে ঐটুকু মেয়ের প্রতি অনুভূতির জন্ম দিয়েছে,এই কথা বোঝার পর তার পৃথিবী হয়েছে তড়িৎ চুম্বকের সেই কয়েলের মতো,যার প্যাঁচ সংখ্যা কতো,আদি নিজেই জানে না।
আরহাম তার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু।আরহামের বোনকে সে বোনের নজরেই দেখে।মাঝখানে এসব কি হলো,কেন হলো সে জানে না।তাসনুভা আরহামের বড়ো আদরের বোন।আদি যদি তাকে তাসনুভার ব্যাপারে কিছু বলে,তাহলে তার প্রতিক্রিয়া কি হবে,এটা নিয়েও আদির কোনো ধারনা নেই।কারণ ভাই বোনের ব্যাপারে আরহাম সবসময়ই ভীষণ সিরিয়াস।
আদির ভয় অন্য জায়গায়।আরহাম স্বভাবতই একটু গরম মেজাজের।অল্পতেই রেগে যায়।সে যদি কখনো শুনে তার বোনের প্রতি আদির একটা ভিন্ন অনুভূতি আছে,তখন সে সেটা কিভাবে দেখবে?সে যদি মনে করে আদি আগে থেকেই তাসনুভা কে পছন্দ করে তার পেছন পেছন ঘুরতো,তাহলে তো সে তাকে খুবই জঘন্য ভাববে।কিন্তু সত্য কথা এটাই যে আদি কখনো তাকে বন্ধুর বোন ব্যতীত অন্য কোনো চোখে দেখেনি।তাসনুভা তাকে ফুল না দিলে সে কোনোদিন তাসনুভার সাথে প্রেম জাতীয় কোনো কিছু কল্পনাই করতো না।
তারা প্রায় দুই দিনের মতো চট্টগ্রাম ছিলো।তারপর আবার ঢাকায়।ঢাকা আসার পরেও সে পুরোটা সময় তার আত্মীয়ের বাড়িতেই ছিল।একটিবারের জন্যও আরহামদের বাড়িতে সে যায়নি।তার অস্বস্তি হতো,এর চেয়েও বেশি যেটা হতো তা হলো ভয়।বন্ধুত্ব নষ্ট হওয়ার ভয়।ক্লাস ওয়ান থেকে হওয়া বন্ধুত্বের ভেতর কোনো ফাটল আদি কখনোই চায়নি।তার কাছে তার পরিবার আর আরহাম-ওয়াজিদের মাঝে কোনো পার্থক্য নেই।সে তাদেরকে পরিবারের মতোই দেখেছে সারাজীবন।কিন্তু হঠাৎই এই তাসনুভার ব্যাপারটাতে আদি এমনভাবে আটকে গেল,যে তার মনে হলো আরহামের সাথে তার সম্পর্কটা পুরোপুরি ভাবে শেষ হয়ে যাবে যদি সে তার অনুভূতিদের প্রশ্রয় দেয়।
তার সম্পূর্ণ মস্তিষ্ক যখন অদ্ভুত রকমের দোলাচালে ভুগছিলো,তখনই এক বিকেলে ওয়াজিদের নম্বর থেকে তার ফোনে কল এলো।আদি অস্থিরতায় ছটফট করছিলো।ওয়াজিদ ফোন দিতেই সে ফোনটা রিসিভ করে তাড়াহুড়ো করে বলল,’কি হয়েছে রে?সব ঠিক আছে তো?’
ওয়াজিদ হেসে বলল,’রিল্যাক্স ম্যান।সব ঠিকই আছে।’
আদি কিছুটা নিশ্চিন্ত হয়ে বলল,’আচ্ছা বল কি বলবি?’
‘আরহাম ফোন দিয়েছিলো।বলল আমি যেন তোকে নিয়ে তার বাড়িতে যাই।তুই এক কাজ কর।আমার এখানে চলে আয়।তারপর আমরা দু’জন একসাথে তার বাড়ি যাবো।’
আদিরের বুক মোচড় দিয়ে উঠল।সে একটা শুকনো ঢোক গিলে বলল,’কেন?হঠাৎ তার বাড়িতে ডাকলো কেন?’
‘আমি কি জানি।সেটা গেলেই দেখা যাবে।’
আদি ক্ষীণ স্বরে বলল,’আচ্ছা ঠিক আছে।’
ফোন কাটার পর আবারো রাজ্যের অস্বস্তি আর দুঃশ্চিন্তা জেঁকে ধরল তাকে।কি কারণে আরহাম তাকে ডাকতে পারে তার জানা নেই।হুট করেই তার মনে হলো সে নিজেকে চোরের মতো ভাবছে,আর আরহামকে ভাবছে পুলিশের মতো।কি আশ্চর্য বিষয়! সে নিজেকে বোঝালো,’শোন আদি! তুই আগে যেমন করে আরহামের সামনে যেতি,অমন করেই যাবি।ভয়ের কি আছে?জাস্ট চিল।’
অথচ এতো স্বান্তনা বাণীতেও কোনো কাজ হলো না।একটু পরেই তার মন খারাপ হয়ে গেল।অত্যন্ত বিষাদগ্রস্ত মনে সে কোনোরামে বাড়ি থেকে বের হলো।আজকের দিনটাই বোধহয় খারাপ।সকাল থেকে শুধু খারাপই হচ্ছে তার সাথে।
.
.
.
.
আরহাম দুই চোখ সরু করে বলল,’সংসার কি?কিভাবে করে?’
তাসনুভা ভ্যাবাচেকা খেয়ে বলল,’কি?সংসার কি মানে?’
আরহাম তার মাথায় আস্তে করে চাটি মে’রে বলল,’সংসার বুঝিস না?বিয়ের পর যা হয়,তাই সংসার।এবার বল,সংসার কিভাবে করে?’
তাসনুভা মুখ বাঁকা করে বলল,’কিভাবে করে মানে?ভাবি যেভাবে করছে ঐভাবেই করে।সবকিছু মানিয়ে,গুছিয়ে,সুন্দর করে সাজিয়ে নিয়ে তারপর সংসার করে।’
আরহাম ব্যঙ্গাত্মক হাসল।তিরষ্কার করে বলল,’ভাবির উদাহরণ টেনে লাভ আছে?তুই তোর ভাবির মতো?কই আগরতলা,আর কই চৌকির তলা।’
তাসনুভার দুই চোখ জ্বলে উঠল।সে তেঁতেঁ উঠে চেঁচালো,’ভাইয়া! অপমান করছো তুমি আমাকে।’
‘হ্যাঁ করছি।কি করবি তুই?’
‘আমি রাগ করব।’
‘কর।পাকনামি না করে একটু রাগ কর,তাও ভালো।’
তাসনুভা বলল,’তুমি ভর দুপুরে এমন অদ্ভুত প্রশ্ন করছো কেন?’
আরহাম বড় করে একটা শ্বাস ছাড়ল।হেঁটে এসে তাসনুভার খাটে পা ঝুলিয়ে বসল।দুই পা নাড়াতে নাড়াতে উত্তর দিলো,’কারণ আমি তোর বিয়ে দিবো।বিয়ে দেওয়ার পর তুই সংসার করবি।তাই জানতে চাইলাম তুই সংসারের মানে বুঝিস নাকি?’
তাসনুভা চমকে তার দিকে তাকায়।চোখ বড় বড় করে বলে,’বিয়ে?’
‘হ্যাঁ বিয়ে।তোর কোনো সমস্যা আছে?’
তাসনুভার হাত পা ঠান্ডা হয়ে এলো।সে কাঁপা গলায় বলল,’কার সাথে বিয়ে দিবে তুমি আমার?’
আরহাম নির্বিকার হয়ে জবাব দেয়,’সেটা আমার চিন্তার বিষয়।তুই জেনে কি করবি?অতো ভাবিস না।বড়োলোকের সাথেই দিব।’
তাসনুভা নাক ছিটকে বলল,’আমি এতো বড়োলোক চাই না।আমি বিয়ে করব না।’
‘কেন বিয়ে করবি না?বয়স হয়েছে,বিয়ে করবি না কেন?’
তাসনুভা ভেঙচি কেটে বলল,’কারণ আমি ল্যাংড়া,তাই।’
আরহাম হঠাৎই কেমন শান্ত হয়ে গেল।সহসা তার মুখের হাসি উবে গেল।তার থম মারা মুখটা দেখেই তাসনুভা চিন্তিত হয়ে বলল,’সেকি! তুমি এমন মন খারাপ করছো কেন?’
আরহাম চোখ তুলে তার দিকে তাকালো।তাসনুভার মনে হলো এতো নরম চোখের ভাষা আর হয় না।সে মিনমিনে স্বরে বলল,’সরি ভাইয়া।মজা করেছি।’
আরহাম একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,’প্লিজ তাস! ঐসব ওয়ার্ড বলিস না।নিতে পারি না আমি।’
তাসনুভা চট করে বলল,’আচ্ছা বলব না।কিন্তু তুমি বলো যে তুমি আমার এখনই বিয়ে দিবে না।করব না আমি বিয়ে।’
আরহাম জেদ ধরে বলল,’একশোবার দিবো।তোর কি?বললাম তো ছেলে বড়োলোক,আরামে থাকবি তুই।সারাদিন খাবি,আর সারারাত ঘুমাবি।এমন জীবন আর পাবি কোথাও?’
‘চাই না আমার এমন জীবন।আমি তোমাদের সাথেই থাকবো।’
আরহাম মুখ কুঁচকে বলল,’সারাজীবন আমার ঘাড়ে বসে বসে খাবি?’
‘হ্যাঁ খাবো।’
‘চড় খাবি।তোকে এতো বছর পালতে পারব না।অনেক বড় হয়েছিস।এখন বিদায় হ।’
নবনীতা দরজা সামনে এসেই ভেতরে উঁকি দিলো।আরহাম তাকে দেখেই ভ্রু উঁচিয়ে বলল,’তোমার আবার কি চাই?’
‘আমার কিছু চাই না।আদি ভাইয়া আর ওয়াজিদ ভাইয়া এসেছে।যান গিয়ে কথা বলুন।’
আরহাম উঠে দাঁড়ালো সাথে সাথে।সে ঘর থেকে বেরিয়ে যেতেই তাসনুভা ব্যস্ত গলায় বলল,’আদি ভাইয়া এসেছে?’
নবনীতা ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে জবাব দিলো,’হ্যাঁ,এলো তো দেখলাম।’
‘তার চেহারা কেমন ছিল?’
নবনীতা ভড়কে গিয়ে বলল,’চেহারা কেমন ছিলো মানে?চেহারা যেমন হওয়ার এমনই ছিলো।কিসব অদ্ভুত কথা বলো তুমি!’
তাসনুভা বিরক্ত হয়ে বলল,’ধুরু! সেটা বলিনি।মানে দেখে কেমন মনে হলো?রাগী?নাকি দুখী?নাকি খুশী?’
নবনীতা একটু ভাবল।তারপর তাসনুভা কে দেখে বলল,’এক কাজ করো।তুমি গিয়ে দেখে আসো।এতো কিছু আমি খেয়াল করি নি।তোমার মন চাইলে দেখে আসতে পারো।’
তাসনুভা মুখ কালো করে অন্যদিকে চোখ সরিয়ে নিলো।নবনীতা খাটে বসে পা দোলাতে দোলাতে বলল,’আমার কি মনে হয় জানো?’
তাসনুভা তার দিকে না ফিরেই কাঠখোট্টা গলায় বলল,’না জানি না।কি মনে হয় তোমার?’
‘আমার মনে হয় তোমার আদি ভাইয়াও মনে মনে তোমাকে পছন্দ করে।মানে আমার মনে হলো আরকি।’
তাসনুভা সঙ্গে সঙ্গে পাশ ফিরে তার দিকে তাকালো। হড়বড় করে বলল,’সত্যি?সত্যি তোমার এমন মনে হয়?’
নবনীতা হেসে ফেলল।মাথা নেড়ে বলল,’হ্যাঁ সত্যি।আমার এমনটাই মনে হয়।’
তাসনুভা চঞ্চল হয়ে বলল,’কেন মনে হয় বলো না?মানে কি দেখে তোমার এমনটা মনে হলো?’
নবনীতা খিলখিল করে হেসে ফেলল।তাসনুভার গালে আলতো করে ঠুকনো মে’রে বলল,’আরে বাবারে! এই মেয়ের কতো আগ্রহ দেখো না।আরহাম ঠিকই বলে।পুরাই অকালপক্ব।নাক টিপলে দুধ পড়ে,আর সে আছে প্রেম ভালোবাসা নিয়ে।’
তাসনুভা মুখ ফুলিয়ে বলল,’মোটেই না।বিশ্বাস না হলে তুমি আমার নাক টিপে দেখতে পারো।সর্দি ছাড়া কিছুই পড়বে না।’
.
.
.
.
আরহামের দৃষ্টি শান্ত।আদির সামনে বসতেই একদম ভণিতা ছাড়া প্রশ্ন করল,’তাস কে তুই পছন্দ করিস?’
আদির ইচ্ছে করল মাটি ফাঁক করে তার ভেতর ঢুকে বসে থাকতে।কি অদ্ভুত প্রশ্ন! কি অস্বস্তিকর প্রশ্ন! সে কি উত্তর দিবে?
আরহাম অধৈর্য হয়ে আবারো বলল,’বল না?করিস পছন্দ?’
আদি মাথা নামিয়ে নিল।কিছুক্ষণ চুপ থেকে ধীর গলায় বলল,’করি।’
তার উত্তর এতোটাই ক্ষীণ কন্ঠের ছিলো যে সে নিজেই নিজের উত্তর শুনতে পেল না।আরহাম আবার বলল,’তোর মুখ নাই শালা?আমার বিয়ের সময় তো পুরো বাড়ি কাঁপিয়ে ষাঁড়ের মতো চেঁচাচ্ছিলি।এখন তোর গলা দিয়ে আওয়াজ বের হচ্ছে না?বল।পছন্দ করিস তুই তাস কে?’
আদি চোখ মুখ খিঁচে ধরল।মিইয়ে যাওয়া কন্ঠে স্পষ্ট করে বলল,’করি।’
তাসনুভা আর নবনীতা ভীষণ কৌতূহল নিয়ে লিভিং রুমের ভেতরে উঁকি দিলো।তাসনুভার চোখ জোড়া ভীষণ চঞ্চল।আদির উত্তর সে শুনেছে।শোনার পর থেকেই তার বুকে জোয়ারের ঢেউ উঠছে।সবকিছু তীরে এসে আছড়ে পড়ছে বার বার।
আরিশ ভার্সিটি থেকে বাড়ি ফিরল সন্ধ্যার একটু আগে।লিভিং রুমের সামনে ভাবি আর তাসনুভা কে দেখেই সে এগিয়ে গেল।নবনীতার পেছনে দাঁড়িয়ে দুই পা উঁচু করে ভেতরের দৃশ্য দেখার চেষ্টা করল।ফিসফিস করে বলল,’তোমরা কি করছো এদিকে?’
নবনীতা পেছন না ফিরেই উত্তেজিত স্বরে বলল,’কথা বলিস না আরিশ।শুনতে দে কি বলছে।’
আরিশ মাথা চুলকে বলল,’কিন্তু কি নিয়ে বলছে?’
‘আদি ভাইয়া আর তাসনুভার ব্যাপারে।’
মুহূর্তেই আরিশের দুই চোখে অদ্ভুত দ্যুতি খেলে গেল।সে লাফিয়ে উঠে বলল,’ওরেব্বাস! সেই ইন্টারেস্টিং টপিক! দেখি দেখি,আমাকে একটু জায়গা দাও তো।’
সে ঠেলেঠুলে নিজের জন্য একটা জায়গা বের করে নিল।এই আলোচনা শোনা তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।বড় ভাইয়া বিয়ে নিয়ে কেমন চিন্তাধারা পোষণ করে,এটা তার জানা প্রয়োজন।সে নিজেও একই নৌকার মাঝি।
আরহাম পায়ের উপর পা তুলে বসল।একেবারে ঠান্ডা গলায় জানতে চাইল,’কয়দিন ধরে এসব চলছে?’
আদি চমকে উঠে চোখ তুলে।হতভম্ব কন্ঠে বলে,’কয়দিন মানে?তুই ভুল বুঝছিস।এসব কিছু প্ল্যান করে হয় নি।যতখানি হয়েছে,পুরোটাই সাব কনশাস মাইন্ডে হয়েছে।আমি জেনে বুঝে কিছু করি নি।’
আরহাম মন দিয়ে তার কথা শুনলো।সে থামতেই গম্ভীর হয়ে বলল,’গুড।ভেরি গুড।এবার যা কিছু হয়েছে,সব সাবকনশাস মাইন্ড থেকে ডিলিট করে দে।’
আদি পুনরায় মাথা নামিয়ে নিল।তার আর কিছু বলার নাই।এমনটাই হওয়ার ছিলো।সে আগে থেকেই জানতো।ওয়াজিদ আড়চোখে একবার আরহামের দিকে তাকায়।যে কি-না তার চোখে মুখে একটা মেকি ভাবগাম্ভীর্য ধরে রেখেছে।আদি বেকুবটা সেই নাটক ধরতে না পারলেও ওয়াজিদ খুব ভালোই বুঝতে পেরেছে।সে নিজেও মাথা নামিয়ে ঠোঁট চেপে হাসল।
তাসনুভার মন ভেঙে গেল।সে কাঁদো কাঁদো হয়ে বলল,’ভাবি।কিছু করো না প্লিজ।ভাইয়া এসব কি বলছে?’
আরিশ নিজেও সুর মেলালো,’হ্যাঁ ভাবি।বলো না কিছু।ভালোবাসা কি কোনো অপরাধ?সে নিজেও তো লাফিয়ে লাফিয়ে বিয়ে করেছে।আমাদের বেলায় এমন করে কেন?ভালোবাসা যদি কোনো অপরাধ হয়,তাহলে সে নিজেও তো একটা অপরাধী।বয়কট বড় ভাইয়া!’
নবনীতা ফিক করে হেসে ফেলল।হাসির শব্দ যেন লিভিং রুম পর্যন্ত না যায়,সেই চিন্তা করে দ্রুত মুখ চেপে ধরল।চাপা কন্ঠে বলল,’তোমরা দুই ভাই বোন সবকিছুতে ভাবি ভাবি করো কেন?তোমাদের ভাইয়ার সিদ্ধান্ত।আমার এখানে কি করার আছে?’
তাসনুভা কাটকাট গলায় বলল,’কারণ ভাইয়া তোমার কথা পাত্তা দেয়।আমাদেরকে তো ভাইয়া মানুষ বলে গুনেই না।’
আরহাম কতোক্ষণ থম মেরে বসে থাকলো।শেষে থমথমে মুখে বলল,’তুই আর আমার বাড়িতে আসবি না আদি।’
পুরো ঘরটায় একটা বজ্রপাত হলো।নবনীতা নিজেও ভড়কে গেল।হতবাক হয়ে বলল,’এসব কি উল্টা পাল্টা বলছে?’
আরিশের চোয়াল ঝুলে গেল।একহাত মুখে চেপে সে বিড়বিড় করল,’শেষ শেষ।আপন ভাইকে ভায়রা ভাই বানানোর স্বপ্ন তোর স্বপ্নই থেকে যাবে রে আরিশ।’
তাসনুভা মনে হয় কেঁদেই ফেলবে এক্ষুনি।সে নবনীতার একটা হাত চেপে ধরে অভিমানী গলায় বলল,’আমি আর জীবনেও বড় ভাইয়ার সাথে কথা বলব না।অভিশাপ দিলাম,কালকে সকালেই বড় ভাইয়ার মাথার দুই পাশে দুইটা শিং গজাবে।ভাইয়া সেই শিং দিয়ে সবাইকে ঢু মারবে।’
নবনীকা খিলখিল করে উঠে বলল,’অভিশাপটা কিউট ছিলো অনেক।’
আদি মাথা নামিয়ে রাখা অবস্থাতেই একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল।তার দৃষ্টি মেঝের দিকে।আরহাম কথা শেষ করতেই সে অল্প করে মাথা নেড়ে বলল,’আচ্ছা ঠিক আছে আসবো না।’
আরহাম তাকে আগাগোড়া পরোখ করল।একবার চোখ ঘুরিয়ে দরজার দিকে দেখল।নবনীতার সাথে চোখাচোখি হতেই সে কুটিল হাসল।নবনীতা কটমট চোখে তার দিকে তাকালো।সব জায়গায় এমন ফাইজলামি ভালো লাগে না।
আরহাম সোফায় গা এলিয়ে দিয়ে বলল,’বিয়ের আগে পাত্রের ঘন ঘন শ্বশুরবাড়িতে আসা ভালো দেখায় না।এজন্য তুই কম কম আসবি।বুঝতে পেরেছিস?’
আদি তড়িৎ গতিতে মাথা তুলল।তার চোখে রাজ্যের বিস্ময়।আরহামের কথা সে পুরোপুরি শুনেছে,কিন্তু এর ভাবার্থ তার বুঝতে সমস্যা হচ্ছে।বার বার মনে হচ্ছে সে কি ভুল কিছু শুনেছে?
আরহাম উঠে দাঁড়ালো সহসা।এগিয়ে এসে আদিকে একটানে দাঁড় করিয়ে তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল।তার পিঠ চাপড়ে ভারি গলায় বলল,’কাম অন ম্যান।তাসনুভার জন্য তোর চেয়ে বেটার আর কে হতে পারে?আমাদের বাসার মানুষদের পর তাসনুভার সবচেয়ে বেশি যত্ন তুই করেছিস।তুই আর তাসনুভা মিলে ঘর করবি,এটা নিজ চোখে দেখা আমার জন্য একটা ব্লেসিংস।’
আদি কিংকর্তব্যবিমুঢ়।কতোক্ষণ সেভাবেই খাম্বার মতো দাঁড়িয়ে থাকলো।রাস্তার মোড়ে থাকা খাস্বা গুলো যেভাবে সোজা দাঁড়িয়ে থাকে,একদম সেভাবে।শেষে যখন হুশ ফিরলো,তখন সে নিজেও আরহামকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল।জড়ানো কন্ঠে বলল,’আরহাম! ট্রাস্ট মি।তাসনুভাকে আমি সবসময় স্নেহের চোখেই দেখেছি।আমি কোনোদিন তাকে নিয়ে সেরকম কিছু ভাবি নি।মাই ইনটেনশন ওয়াজ নেভার রং।সে সত্যিই আমার কাছে বাচ্চাদের মতো।মিষ্টি,নিষ্পাপ আর খুব বেশি সরল।’
তাসনুভার চোখ ভরে এলো।সে ঘাড় ঘুরিয়ে নবনীতাকে জড়িয়ে ধরে জড়ানো কন্ঠে বলল,’ভাবিইই! রাজি হয়েছে।’
নবনীতা নিজেও তাকে জড়িয়ে ধরল।কপালে একটা চুমু এঁকে বলল,’জানতাম রাজি হবে।’
আরিশ একটা স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়লো।নাহ,এখনো তার আশা টিকে আছে।তার বিশ্বাস বড় ভাইয়া তার প্রেমেও বাগড়া দিবে না।এইটুকু কনসিডার সে নিশ্চয়ই করবে।সে চোখ বাঁকা করে নবনীতাকে দেখল।ভাবি আবার কোনো সমস্যা করবে না তো?
পরমুহূর্তেই তার মনে হলো,’ধ্যাত।ভাবি কেন সমস্যা করবে?আমি কি কোনো খারাপ ছেলে?আমি তো কতো জেন্টেল একটা ছেলে! এমন ছেলে ভাবি তার বোনের জন্য আর দু’টো পাবে?
সে নবনীতাকে ডেকে জানতে চাইলো,’ভাবি! এ্যাই ভাবি।আমাকে তোমার কেমন লাগে?’
নবনীতা তার দিকে ফিরে হাসি মুখে বলল,’আমার দেবর আর ননদ দু’জনকেই আমার ভীষণ আদর লাগে।তুমি তো একটা লক্ষী ছেলে।’
আরিশ লাজুক হাসল।যাক,পাত্রীর অভিভাবক তাকে গ্রীন সিগনাল দিয়েছে।এবার নিজের অভিভাবক গ্রীন সিগনাল দিলেই হলো।
চলবে-