কোনো এক শ্রাবণে পর্ব-৬৮

0
7

#কোনো_এক_শ্রাবণে [তৃতীয় অধ্যায়]
লেখনীতে #মেহরিমা_আফরিন

(৬৮)
[বড় পর্ব,পরে রিচেক দিবো]

কোনো আসামি যদি আদালতে কেস চলমান থাকা অবস্থায় মৃ’ত্যৃবরণ করে,তবে তার বিচার প্রক্রিয়ার সেখানেই ইতি টানা হয়।বাংলাদেশের আইন এমনটাই বলে।এই দেশে জীবিত মানুষই ন্যায় বিচার পায় না।সে জায়গায় মৃত ব্যক্তির বিচার করা বিলাসিতা ছাড়া আর কিছুই না।আরহামের কেসটা তার মৃ’ত্যুর সাথে সাথেই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।কিন্তু তার আইনজীবী সানাউল হকের অনুরোধের প্রেক্ষিতে তার কেস রি-ওপেন করা হয়েছে।সানাউল হকের দাবি,আরহাম নির্দোষ।আর একজন নির্দোষ ব্যক্তি কোনো ক্রমেই খু’নের দায় কাঁধে নিয়ে মৃ’ত্যুবরন করতে পারে না।

এই নিয়ে আদালতে আরো একটা শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে।খুব সম্ভবত আশ্বিনের আঠারো তারিখ সজীব খন্দকার হ*ত্যার দ্বিতীয় দফায় শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছিল।

ওয়াজিদ বেশ সকালেই আদালতে গিয়ে উপস্থিত হলো।ইদানিং তার শরীর ভীষণ ক্লান্ত লাগে।হাত পা কেমন ভেঙে ভেঙে আসে।রিমির শরীরটাও খুব একটা ভালো না।জ্বর ঠান্ডা এসব লেগেই আছে।আর তার মনের অবস্থা? এই নিয়ে আলাদা করে কিছু বলার নেই।সে আর আদি রোজ রাতে ছাদে গিয়ে বসে।আকাশ দেখে,তারা দেখে,অথচ তারা কিছুই দেখে না।একটা মানুষ এমন দুম করে হারিয়ে যেতে পারে?এমন হুট করে একটা মানুষ নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারে?তেইশ বছরের বেশি সময়ের বন্ধুত্ব এমন চোখের পলকে হারিয়ে যাওয়া আদৌ সম্ভব?ওয়াজিদের বুক ভার ভার লাগে।নবনীতার মতো তারও মনে হয় তার বুকে কেউ এক মণ বোঝা চাপিয়ে দিয়েছে।দীর্ঘশ্বাস ব্যতীত এই নিষ্প্রাণ প্রাণ গুলোতে আর কিছুই অবশিষ্ট নেই।

সানাউল হক কেন পুনরায় এই কেস রি-ওপেন করিয়েছে ওয়াজিদ জানে না।সে যতদূর জানে আরিশ কিংবা নবনীতা কেউই এখন মানসিকভাবে অতোটা মজবুত নেই যে তারা এসব নিয়ে মাথা ঘামাবে।আর এধরনের আপিল কেবল মাত্র আসামির পরিবারের অনুরোধের প্রেক্ষিতেই হয়।তাহলে সানাউল হক কার অনুরোধে এই কেস পুনরায় চালু করার আবেদন করেছেন?

সে আর মাথা ঘামায় না।যা হয়েছে ভালোই হয়েছে।সেও এর শেষ দেখতে চায়।দেখতে চায় সানাউল হক ঠিক কি উপায়ে আরহামকে নির্দোষ প্রমাণ করে।

নবনীতা এসেছে একটু আগে।আসার পরই কোনোদিকে না দেখে সে সোজা কোর্ট রুমের ভিতরে গিয়ে বসল।তার দুই চোখের নিচে কালি জমেছে।কতোগুলো দিন হয়েছে সে প্রাণভরে শ্বাস নেয় না।এই বাতাসে বিষ মেশানো।নবনীতা শ্বাস নিবে কেমন করে?

আদালতের বিচারকার্য শুরু হলো আরো আধঘন্টা পরে।শুরুতেই সাক্ষ্য প্রমাণের পর্ব।সানাউল হক কিছু প্রত্যক্ষ দর্শীর মতামত,সজীব খন্দকারের ফরেনসিক রিপোর্ট,আরহামের সেখানে যাওয়ার সময়-সবকিছুকে একত্রে দেখিয়ে যেই তথ্য দাঁড় করালেন তা হলো এই যে,রিপোর্ট অনুযায়ী সজীবের মৃত্যু যেই সময়ে হয়েছিল,আরহাম সেই সময় তার বাড়িতে ছিলোই না।সুতরাং,আরহাম তাকে মে’রেছে এটা একেবারেই অসম্ভব।

বাদী পক্ষের আইনজীবীর নাম খালেদ।তিনি সানাউল হকের কথা শেষ হতেই বিদ্রুপ করে বললেন,’আর কোনো তথ্য প্রমাণ না পেয়ে এসব ফরেনসিক রিপোর্ট নিয়ে এসেছেন?ফরেনসিক রিপোর্ট কখনোই এক্যুরেট টাইম মিয়েজার করতে পারে না।’

তিনি থামলেন।সামনে ফিরে বিচারকের দিকে দৃষ্টি তুলে আত্মবিশ্বাসী গলায় বললেন,’ইউর অ’নার! আমার কাছে এমন একজন সাক্ষী আছে,যার বয়ানে পুরো কেসটা পানির মতো পরিষ্কার হয়ে যাবে।আমার মনে হয় না এরপর আর কারো কোনো প্রশ্ন থাকবে।’
কথা শেষে তিনি তীর্যক চোখে সানাউল হককে দেখতে ভুললেন না।

সানাউল হক দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন।চুপচাপ গিয়ে তার জন্য নির্ধারিত আসনে বসলেন।বিচারকের অনুমতি পেতেই খালেদ হাতের ইশারায় একটি মেয়েকে আদালতের মূল কক্ষে প্রবেশের জন্য ডাকলো।সে ছোট ছোট কদমে ভেতরে আসতেই পুরো কক্ষের মানুষজন ঘাড় ঘুরিয়ে তাকে দেখল।নবনীতা এলোমেলো চোখে একবার সেদিকে তাকাতেই তার দিকে চোখ পড়লো।মেয়েটাকে দেখতেই তার মুখ বিস্ময়ে হা হলো।সে অবাক কন্ঠে শুধায়,’প্রভা! তুমি?’

প্রভাতি স্থির চোখে একনজর তাকে দেখল।তারপর একটা শ্বাস ছেড়ে বড় বড় পায়ে কাঠগড়ার দিকে এগিয়ে গেল।তার হৃদস্পন্দন সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে।একটা ঢোক গিলে নিজেকে ধাতস্থ করল সে।

সে কাঠগড়ায় উঠে দাঁড়াতেই খালেদ দুই ঠোঁটে চওড়া হাসি ঝুলিয়ে তার দিকে এগিয়ে গেলেন।এই মেয়ের সাথে কালকে রাতেই তার কথা হয়েছে।মেয়েটা মাত্র দুই হাজার টাকার বিনিময়ে মিথ্যা সাক্ষী দিতে রাজি হয়েছে,তাও আবার নিজেরই বিরুদ্ধে।সে একবার তার সাক্ষ্য দিয়ে দিলেই খালেদ এই কেসটা জিতে যাবে।আলাউদ্দিন আর জালাল তাকে মোটা অঙ্কের টাকা দিবে যদি সে এই কেস টা জিততে পারে।

তিনি একটা হাত কাঠগড়ায় রেখে জানতে চাইলেন,’তো প্রভাতি,তুমি বলো সজীবের মার্ডার কেস নিয়ে কি জানো তুমি?তুমি কি কিছু দেখেছো?’

প্রভাতি শান্ত চোখে কয়েক পল তাকে দেখল।ভেতরের জ্বলন্ত অগ্নিশিখাকে দমিয়ে রেখে ধিমি স্বরে বলল,’আরহাম ভাইকে আমি অনেক আগে থেকেই চিনি।আমি তাদের অরফানেজ সেন্টারে বড়ো হয়েছি।যেদিন সজীব খন্দকার কে খু’ন করা হয়,সেদিন আরহাম ভাই আমাকে তার বাড়ির এড্রেস পাঠায়।আমাকে বলে আমি যেন সেখানে গিয়ে তার সাথে দেখা করি।’

নবনীতা রুদ্ধশ্বাসে তার কথা শুনে।সে থামতেই বিক্ষুব্ধ কন্ঠে চেঁচিয়ে উঠে,’মিথ্যা কথা।এতো মানুষ থাকতে সে তোমায় কেন ফোন দিবে?’

খালেদ কঠোর চোখে তার দিকে তাকালো।চোখ মুখ শক্ত করে বলল,’আপনি সবকিছুতে কথা বলেন কেন?প্রভাতি কথা বলছে,তাকে বলতে দিন।’

‘আপনার প্রভাতি ভুলভাল কথা বলছে।’ ফুঁসতে ফুঁসতে জবাব দিলো নবনীতা।

জজের আদেশে শেষপর্যন্ত সে দমে গেল।বিক্ষিপ্ত মেজাজে ধাম করে পুনরায় তার আসনে গিয়ে বসল।প্রভাতি একটু কেশে নিয়ে পুনরায় বলতে শুরু করল,’আমি যখন সেখানে যাই,তখন আরহাম ভাই আমাকে বলে যে সে সজীবকে খু’ন করবে।আমি যেহেতু তার পূর্ব পরিচিত,তাই এই কাজে সে আমার সাহায্য চায়।সাথে এটাও বলেছে যে আমি যদি তাকে সাহায্য করি,তবে সে আমায় নগদ পঞ্চাশ হাজার টাকা দিবে।আমার সেসময় টাকার অনেক প্রয়োজন ছিলো,তাই আমিও রাজি হয়ে গিয়েছিলাম।আর তারপর আমরা দু’জন মিলে সেদিন দুপুরে সজীব খন্দকার কে ছু’রি মে’রে খু’ন করেছি।’

সে থামল।ঘন ঘন শ্বাস টেনে নিজের অস্থিরতা কমিয়ে আনার চেষ্টা করল।ওয়াজিদ এক লাফে নিজের বেঞ্চ ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো।ক্ষুদ্ধ হয়ে বলল,’হোয়াট ননসেন্স! যা তা বলছো তুমি।’

আদির মাথা ঘুরে গেল।এই মেয়ে কি পাগল নাকি?কিসব উল্টা পাল্টা বকছে।সে দাঁতে দাঁত চেপে খেঁকিয়ে উঠলো,’যতসব পাগল ছাগল!টাকা খেয়ে বানিয়ে বানিয়ে সাক্ষী দিচ্ছে।আমাদের মতো বন্ধু থাকতে আরহাম এই মেয়ের সাহায্য কেন নিবে?সে নিশ্চয়ই তাকে আমাদের চেয়ে বেশি বিশ্বাস করে না?’

খালেদ সাহেব উঠে দাঁড়ালেন।সামনে দেখে বিনীত কন্ঠে বললেন,’দেখলেন তো ইউর অনার।কিভাবে এরা আক্রমনাত্মক কথা বলে মেয়েটাকে ভয় দেখানোর চেষ্টা করছে?’

ওয়াজিদ ধপ করে বেঞ্চে গিয়ে বসল।একটানে আদিকেও তার পাশে বসালো।আদি এক ঝাড়ায় নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে গজরাতে গজরাতে বলল,’হাত ছাড় বাল।এমন ভুলভাল কথা বললে আক্রমণ করবো না তো কি করবো?ফালতু মেয়ে একটা!’

প্রভাতি একগাল হাসল।তার কথায় কোনোরকম ভ্রক্ষেপ না করে সামনে দেখতে দেখতে বলল,’কিন্তু এটা আংশিক সত্য।পুরো সত্য আমি এখনো বলিনি।’

খালেদ সাহেবের কপালে ভাঁজ পড়ল তৎক্ষনাৎ।এই মেয়ের সাথে তার এইটুকু কথা বলারই চুক্তি হয়েছিল।সে আবার অন্য কি সত্য নিয়ে এসেছে?তিনি ললাট কুঞ্চন করে জানতে চাইলেন,’সেটা কি?’

প্রভাতি দম নিল।আর কোনো দিকে না দেখে বিচারকের আসনে থাকা ভদ্রলোকের দিকে চোখ রেখে দ্ব্যর্থহীন কন্ঠে বলল,’আমি আর আরহাম ভাই একা সবকিছু করিনি।সজীব খন্দকারকে খু’ন করার কাজে আমাদের আরো একজন সাহায্য করেছিল।’

আপনাআপনি চোয়াল ঝুলে গেল খালেদের।তিনি থতমত খেয়ে জানতে চাইলেন,’সে কে?’

‘সজীব খন্দকারের বাড়ির কেয়ার টেকার মনসুর।মনসুরই দরজা খুলে আমাদের ঢুকতে দিয়েছিলো,আর মনসুরই সবার প্রথমে তাকে আঘাত করেছিল।’

মনসুর তখন কোর্ট রুমেই ছিলো।প্রভাতির মুখে এই কথা শুনতেই সে তব্দা খেল।এক লাফে উঠে দাঁড়িয়ে চিৎকার করল,’এ্যাই মেয়ে! কিসব মিথ্যা বলছো তুমি?আমি তোমাকে কেন সাহায্য করব?আমি তো তোমাকে চিনিই না।’

প্রভা দুই হাতের আঙুলগুলো আড়াআড়ি করে প্রশ্ন করল,’তুমি আমাকে চেনো না?’

মনসুর গলা উঁচু করে চেঁচায়,’না চিনি না।’

প্রভার চোখ সরু হলো।সে গম্ভীর হয়ে বলল,’মিথ্যে বলছ তুমি।তুমিই প্রথম দরজা খুলেছ,আর প্রথম ছু’রির আঘাতটাও তুমিই করেছো।সেই হিসেবে তুমিও আমাদের মতো সমান দোষী।ভালো হয় যদি তুমিও আমার মতো নিজের দোষ স্বীকার করে নাও।’

মনসুর খেই হারালো।কিসব উল্টাপাল্টা বলছে এই মেয়ে!খালেদ নিজেও ভড়কে গেল কিছুটা।কেবল এক চিলতে হাসির দেখা মিলল সানাউল হকের ঠোঁটে।

যখন নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার আর কোনো পথই অবশিষ্ট রইলো না,তখন ভরা কোর্ট রুমে সবাইকে বিস্মিত করে দিয়ে মনসুর চেঁচিয়ে উঠল,’সব মিথ্যা!আমি কাউকে মারি নি।সবার আগে সজীব স্যারকে মা’রছে জালাল স্যার।তারপর শফিক স্যার।আমি শুধু দরজা খুলছি।আর কিছু না।’

পুরো ঘরটায় একটা বজ্রপাত হলো।সেই বজ্রপাতে লণ্ডভণ্ড হলো জালালুর রহমানের সমস্ত পরিকল্পনা।খালেদ ধপ করে তার আসনে গিয়ে বসলেন।শেষ,তিনি হেরে গেছেন।এই মেয়ে মোটেও তার হয়ে সাক্ষ্য দিতে আসেনি।পুরোটাই সানাউল হকের পরিকল্পনার অংশ।তিনি আড়চোখে সানাউল হককে দেখলেন।যার ঠোঁটে এখন রাজ্য জয়ের হাসি।তিনি সফল।একজন নিরপরাধের নামের পাশ থেকে আসামির তকমা সরাতে তিনি সক্ষম।

নবনীতা স্তব্ধ হয়ে প্রভাকে দেখল,তারপর দেখল মনসুর কে।তারপরই নিচের ঠোঁট টা দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরল।কতো অবলীলায় নিজের করা খুন আরেকজনের নামে চাপিয়ে দিলো! একবার ভাবলো না ঐ ছেলেটা এই কয়দিন কি পরিমান মানসিক পীড়ার ভেতর দিয়ে গিয়েছে! শুধু মানসিক পীড়া?মানুষ যে কতো বাজে বাজে কথা বলল তার নামে,ঐসবের কি হবে?নবনীতা ঘন ঘন নিশ্বাস ছাড়ে।ছলছল চোখে প্রভাতির মুখটা দেখে! এতো চমৎকার কেন এই মেয়ে?

মনসুরকে কাঠগড়ায় তুললেই সে কান্নায় ভেঙে পড়লো।দুই হাত জোড় করে নতজানু হয়ে বলল,’আমার কোনো দোষ নেই স্যার।আমি শুধু দরজা খুলছি।তাদের কাজে বাঁধা দিলে আমাকেও মাইরা ফেলতো।আমি শুধু দেখছি,কিন্তু কিছু করি নাই।বিশ্বাস করেন,স্যারের গায়ে একটা আঁচড়ও আমি দেই নাই।’

সানাউল হক তার দিকে এগিয়ে গেলেন।খানিকটা রাগত স্বরে প্রশ্ন করলেন,’তাই যদি হয়,তবে মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়েছিলেন কেন?আপনি জানেন আপনার একটা মিথ্যা সাক্ষ্যর কারণে একজন মানুষকে কি পরিমান হেনস্তার স্বীকার হতে হয়েছিল?’

‘আমাকে টাকা দিয়েছিল স্যার।আমরা গরীব মানুষ।অতোগুলো টাকা দেখে নিজেকে সামলাতে পারি নাই।’

মনসুর পুনরায় কান্নায় ভেঙে পড়ল।ধরা যখন পড়েই গেছে,তখন কান্না ছাড়া আর উপায় কি?আজ তার কোর্টে আসাই উচিত হয় নি।এই ধিঙি মেয়ে যে তাকে ফাঁসানোর জন্যই এখানে এসেছে,সেই খবর কি মনসুরের জানা ছিলো?

****

আদালতের কার্যক্রম সেদিনের মতোন শেষ হলো।সকল সাক্ষ্য প্রমানের ভিত্তিতে শাহরিয়ার আরহামকে আদালত নির্দোষ বলে রায় দিয়েছে।সেই সাথে সজীব খন্দকারকে হত্যার দায়ে জালালুর রহমান,শফিক সিকদার সহ আরো ছয় জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।আদালত প্রাঙ্গণে থাকা পুলিশ ভ্যানটা রায় ঘোষণার পর পরই ছুটে গেছে তাদের খোঁজে।

পুরো আদালত ফাঁকা হতেই নবনীতা এক দৌড়ে গিয়ে প্রভাতিকে জড়িয়ে ধরল।আনত কন্ঠে বলল,’প্রভা! তোমার সাথে দেখা করার আমার খুব ইচ্ছে ছিলো।’

প্রভাতি স্মিত হাসল।একটা হাত নবনীতার গালে রেখে বলল,’তোমার সাথে দেখা করে খুব ভালো লাগছে।কেমন আছো আছো আপু?’

মেয়েটার মুখের হাসি মিলিয়ে গেল সহসা।সেখানে এসে ভীড় জমালো রাজ্যের মলিনতা।তার বিষন্ন,বিবর্ণ মুখশ্রী দেখে প্রভাতি আপনাআপনি জবাব পেল সে ভালো নেই।এতো ঝড় ঝাপটার পর কেউ ভালো থাকতে পারে না।সে কোনোরকমে বলতে চাইল,’প্রভাতি! আরহাম আমাকে,,,’

অথচ মুখের কথা শেষ না করেই সে একটা বেঞ্চে গিয়ে বসল।তার রোগা শরীর এই কয়দিনে আরো বেশি ভর হারিয়েছে।বড্ড রোগা লাগে তাকে আজকাল! মানসিক অবস্থার বিধ্বস্ত ছাপ মুখের উপরও এসে পড়ছে।মা বাবার মৃ’ত্যু সে মুখ বুজে সহ্য করেছে।এই যন্ত্রণা কি যথেষ্ট ছিলো না?এখন স্বামীর মৃ’ত্যুর যন্ত্রনাও তাকে সহ্য করতে হবে?আর কতো যন্ত্রনা সহ্য করে উঠে দাঁড়াতে পারলে প্রমাণ হবে যে সে খুব সাহসী আর ধৈর্যশীল?নবনীতা আর পারছে না।সবকিছু গুছিয়ে পুনরায় উঠে দাঁড়ানোর মতো জোর সে পাচ্ছে না।আজকাল সবকিছুই তার বিরক্ত লাগে।কেমন অনুভূতিশূন্য লাগে সবকিছু।চারদিকে কতো কিছু ঘটে যাচ্ছে।সে কেবল শূন্য চোখে সেসব দেখছে,দেখেই যাচ্ছে।

শুভ্রা কিছুদিন আগে ময়মনসিংহ চলে গেছে।মেডিকেল হোস্টেলের গণরুমই আপাতত তার ঠিকানা।নবনীতা প্রথমদিন গিয়ে তাকে রেখে এসেছিল।তারপর আর সেখানে যাওয়া হয়নি।মেয়েটা কোথায় আছে,কেমন আছে জিজ্ঞেস করা হয়নি।একবার গিয়ে দেখে আসলে মন্দ হতো না।কিন্তু নবনীতার শরীর কিছুতেই সায় দেয় না।বড্ড ক্লান্ত লাগে আজকাল।

প্রভার ফোনে একটা শব্দ হতেই সে দ্রুত সেটা হাতে নেয়।একনজর স্ক্রীন দেখেই দ্রুত পায়ে নবনীতার দিকে এগিয়ে এসে বলল,’আপু ঔষধ খেয়েছো?তোমার না এন্টিবায়োটিক এর কোর্স চলছে?’

নবনীতা চমকালো কিছুটা।আশ্চর্য হয়ে মাথা তুলে বলল,’তুমি কেমন করে জানো আমার যে ঔষধের কোর্স চলছে?’

***

একেবারে নতুন শহর,নতুন মানুষজন।পড়াশোনার ধরনও নতুন।শুভ্রানী সেসবের সাথে একদম মানিয়ে নিতে পারছিল না।শেষমেশ দাঁতে দাঁত চেপে মানিয়ে নেওয়ার প্রতিযোগিতায় নামল সে।একে তো নতুন শহর,তার উপর আপাইয়ের এই অবস্থা।শুভ্রা রীতিমতো অসুস্থ হয়ে পড়েছে।

তার এখানে ভীষণ একা একা লাগে।আপাইয়ের কথা খুব মনে পড়ে।মন চায় আপাইকে জড়িয়ে ধরে গাঢ় ঘুমে তলিয়ে যেতে।কিন্তু সেটা সম্ভব না।আপাই মানসিকভাবে বিধ্বস্ত।শুভ্রানীর ইদানিং ভয় লাগে।মনে হয় আপাই ধীরে ধীরে পাগল হয়ে যাচ্ছে।তার কাজ-কর্ম,আচার আচরণ সেই ইঙ্গিতই দিচ্ছে।শুভ্রার তাকে নিয়ে বড্ড ভয় হয়।অবেলার বৃষ্টিতে আপাইয়ের জীবনটা এমন ছন্নছাড়া হয়ে যাক,সে চায় না।আপাইকে সাত বছর আগে সে যেমন বিধ্বস্ত রূপে দেখেছিল,আজ এতোগুলো বছর পর আপাই আবার সেই এলোমেলো রূপে ফিরে গেছে।এই মুর্ছা যাওয়া মানুষটাকে দেখতেই শুভ্রার ভেতরটা ধ্বক করে উঠে।

সেদিন বিকেলে একজন তাকে ডেকে বলল,’পুষ্পিতা নূর! তোমার সাথে দেখা করার জন্য কে যেন এসেছে।’

সে কপাল কুঁচকে বলল,’আমার সাথে দেখা করতে এসেছে?’

পুরো রাস্তা সে ভাবতে ভাবতে গেল কে এমন হতে পারে যে তার সাথে দেখা করতে এসেছে! তার তো পরিচিত কেউ এখানে নেই।অন্যভাবে বলতে গেলে তার জীবনে চেনা জানা মানুষের সংখ্যা একেবারেই সীমিত,হাত দিয়ে গুনে ফেলা যায় এমন।

ওয়েটিং রুমে পা রাখতেই তার কদম থামল।সে থমকে গিয়ে সামনের দিকে তাকায়।নবনীতা বেঞ্চ ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো।এক প্রকার ছুটে এসে তাকে শক্ত আলিঙ্গনে জড়িয়ে ধরে বলল,’কেমন আছিস আমার সোনা বাচ্চা?আপাই এই কয়দিন একদমই তোকে সময় দিতে পারি নি।’

শুভ্রা সেসব কিছু শুনল না।কেবল শক্ত করে তাকে জড়িয়ে ধরে ঠোঁট ভেঙে বলল,’আমার এদিকে একদম ভালো লাগে না আপাই।আমি তোমার কাছে থাকতে পাই।’

নবনীতা তার কপালের চুলগুলো সরিয়ে আলতো করে সেখানে দু’টো চুমু খেল।জড়ানো কন্ঠে বলল,’এসব বলে না শুভি।জীবনে কিছু হওয়ার জন্য তো কষ্ট করতেই হয়।তাই না?’

শুভ্রা মাথা তুলল।আশপাশ দেখে চিন্তিত হয়ে বলল,’তুমি একা এসেছো?সাথে কেউ আসেনি?’

‘এসেছে।আরিশও এসেছে সাথে।’

‘উনাকে আনো নি কেন এখানে?’

‘গার্লস হোস্টেল।আরিশের ভেতরে আসার অনুমতি নেই।’

‘ওহহ।চিত্র কোথায়?আনো নি চিত্রকে?’

‘নাহ।কাল রাত থেকে চিত্রর গলা ব্যাথা।ঠান্ডা লেগেছে বোধ হয়।তাই আর আনিনি।মামির কাছেই রেখে এসেছি।’

শুভ্রা ছোট করে জবাব দিলো,’ওহ।’

হোস্টেলের গেইটের কাছে আসতেই আরিশের সাথে তার দেখা হলো।আরিশ স্মিত হেসে জানতে চাইল,’কেমন আছো শুভ্রা?’

‘আলহামদুলিল্লাহ ভালো।আপনি?’

‘আছি।আলহামদুলিল্লাহ।’

সেদিন তারা তিনজন মিলে খুব ঘুরাঘুরি করল।হুট করে ময়মনসিংহ আসার এই সিদ্ধান্ত নবনীতার।শুভ্রা নতুন শহরে এসেই একা একা চলতে শিখুক,এটা সে চায় না।সে চায় শুভ্রা আস্তে ধীরে বুঝে শুনে চলুক।তাই এমন কোনো কিছু না ভেবেই সে এই শহরে চলে এসেছে।

সে ভেবে নিয়েছে নিজের ভেতরের অসহ্য যন্ত্রণা সে আর প্রকাশ করবে না।সে বয়সে বড়।তার উপর শুভ্রা আর চিত্রর দায়িত্বভার আছে।নবনীতা আর যাই হোক,সেই দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পারে না।স্বামী মরল কি বাঁচলো,নবনীতা বদ্ধ উন্মাদ হলো কি না হলো,এসবে তার উপর চাপানো দায়িত্বভার হালকা হবে না।তাকে পেন্ডুলামের মতো চিরকাল চলতে থাকতে হবে।তার কোনো বিশ্রাম নেই,কোনো বিরাম নেই,কিচ্ছু নেই।শুভ্রার যখন মন খারাপ হবে,তখন সে নবনীতা কে জড়িয়ে ধরে কাঁদবে।চিত্র যখন পড়ে গিয়ে ব্যাথা পাবে,তখন সে আপাইকে এসে জড়িয়ে ধরবে।তাসনুভার যখন রাতে হুট করে ঘুম ভেঙে যাবে,তখন সে ভাবির কোলে মাথা রেখে নাক টানতে টানতে পুনরায় ঘুমিয়ে যাবে।আর সাংঘাতিক মানসিক যন্ত্রনায় যখন নবনীতার সমস্ত পৃথিবী আধার হয়ে আসবে,তখন সে একা একটা বন্ধ ঘরের ফ্লোরে শুয়ে চিৎকার করে কাঁদবে।কারণ তার কোনো যাওয়ার জায়গা নেই।এমন কেউ নেই যাকে জড়িয়ে ধরে নবনীতা হাউমাউ করে নিজের মনের অবস্থা বোঝাবে।সে একা,ভীষণ একা।শীতের রাতে স্টেশনের বেঞ্চিতে শুয়ে থাকা অনাথ বাচ্চাটা যেমন একা,সেও ঠিক তেমনই একা।
.
.
.
.
‘এই বাচ্চা! এদিকে তাকাও।’

আদির ডাকে সামনে থাকা মেয়েটার কোনো ভাবোদয় হলো না।সে অসহায় চোখে ইজমার দিকে তাকালো।ইজমা একটু ঝুকে একটা হাত হুইল চেয়ারের হাতলে রেখে ডাকল,’তাসনুভা?শুনতে পাচ্ছো তুমি?’

তাসনুভা এলোমেলো চোখে তার দিকে তাকায়।ইজমার সাথে চোখাচোখি হতেই আরো এক দফা তার চোখ ভিজে উঠল তার।একেবারে ভেঙে আসা কন্ঠে সে বিড়বিড় করল,’বাড়ি চলো।ভালো লাগছে না কিছু।’

আদি মাথায় হাত রাখলো।ইজমা মলিন চোখে তার দিকে তাকালো।ইশারায় বোঝালো কিছুতেই কাজ হবে না।আদি কেবল বিনিময়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল।

আরহামের ঐ দুর্ঘটনার প্রভাব সবচেয়ে বেশি যে দুইজনের উপর পড়েছে তারা হলো নবনীতা আর তাসনুভা।নবনীতা যদিও ঠোঁট কামড়ে সবটা সহ্য করে নেওয়ার চেষ্টা করে,তবে তাসনুভা এই ব্যাপারে প্রচন্ড আবেগপ্রবণ।সে প্রতিদিন এক নাগাড়ে হাউমাউ করে বড় ভাইয়ার জন্য কান্না করে।এবং এই দুই মাসেও তার আচরণে কিঞ্চিৎ পরিবর্তন আসে নি।তার কান্না শুরু হয় সকালে,সেই কান্না থামে রাতে।তার চকলেট,চিপস কিচ্ছু চাই না।শুধু বড় ভাইয়াকে চাই।আর কিচ্ছু না।সে যখন একদম কোনো কিছুতেই শান্ত হচ্ছিল না,তখন আদি একটা ভয়ংকর কাজ করল।সে তাসলিমার সাথে তাসনুভার দেখা করালো।তার উদ্দেশ্য ছিল মেয়েটার মন ভালো করা,যেহেতু সে তার মা কে পছন্দ করে।

কিন্তু হলো এর উল্টা।তাসলিমা সামনে আসতেই তাসনুভা চটে গেল।চেঁচিয়ে উঠে বলল,’তুমি কেন এসেছো এখানে?আমি তোমার সাথে দেখা করতে চেয়েছি?’

আদি হতভম্ব হয়ে বলল,’তুমিই তো তোমার মায়ের সাথে দেখা করতে চাইতে।’

‘আগে চাইতাম।এখন চাই না।লাগবে না আমার মা।আমার বড় ভাইয়াকে লাগবে।মা কে না।’

তাসলিমা অপমানিত হলেন ভীষণ।তবে মেয়েটা তার সেই অপমানের পরোয়া করল না।শুধু জড়ানো কন্ঠে বলল,’আমার ভাইয়া যাকে ভালোবাসে না,আমিও তাকে ভালোবাসি না।আমার কিচ্ছু লাগবে না।শুধু বড় ভাইয়া হলেই হবে।’

আদি এই অবুঝ মেয়েটাকে কেমন করে বোঝাবে যে বড় ভাইয়াকে নিয়ে আনা আদৌ সম্ভব না।তাসনুভাকে বোঝাতে গেলে তার নিজেরই গলা ভেঙে আসে।এই কথা কোনো ভাবেই সে বলতে পারে না যে আরহাম আর নেই।তার পক্ষে বলা সম্ভব হয়ে উঠে না।কন্ঠনালি ছিঁড়ে যায়,বুক ধুকধুক করে।

ইজমা আশাহত হয়ে বলল,’চল আমরা দু’জন সামনের দোকান থেকে চিপস টিপস কিছু কিনে আনি।দেখি তারপর মন একটু ভালো কয় নাকি?’

আদি বিনিময়ে কেবল মাথা নাড়ল।আজ তারা ধানমন্ডির একটা পার্কে এসেছে।তাসনুভার মন ভালো হবে এই আশাতেই তাদের এখানে আসা।অথচ সেই আশা পূরণ হবে বলে মনে হচ্ছে না।তাসনুভার বড় ভাইয়া ব্যতীত আর কিছুই চাই না।এখন এই পার্কের ভেতর বড় ভাইয়াকে কোথায় পাবে তারা?

সে আর ইজমা তাসনুভাকে একটা গাছের সামনে রেখে দোকানে গেল কিছু কেনার জন্য।তাসনুভা শূন্য চোখে চারপাশ দেখে।বাচ্চারা সব ছুটোছুটি করছে,খেলাধুলা করছে।এই দৃশ্য দেখতেই পুনরায় তার মন খারাপ হলো।সে,বড় ভাইয়া আর মেঝো ভাইয়া ছোট থাকতে এমন দৌড়াদৌড়ি করতো তাদের বাগানে।মুহূর্তেই তার চোখ ভিজে যায়।বড় ভাইয়াকে ছাড়া পৃথিবী এতো মলিন কেন?

হঠাৎই কেউ তার সামনে এসে হাঁটু মুড়ে বসল।তাসনুভা হকচকিয়ে গেল এক প্রকার।চমকে উঠে সে তার দিকে তাকালো।সে তাকাতেই ছেলেটা তার মুঠ করে রাখা হাতটা তাসনুভার সামনে মেলে ধরল।তাসনুভা অবাক হয়ে দেখল তার হাতের মুঠো ভরে আছে শত শত বেলি ফুলে।সে ফ্যালফ্যাল চোখে সামনে তাকায়।দেখে কালো শার্ট গায়ে জড়ানো ছেলেটার মাথায় একটা হেলমেট চাপানো।চোখ দু’টো পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না।তার বুক ধড়াস করে উঠল।সে জিজ্ঞাসু হয়ে তার দিকে তাকালো।

হাতে থাকা এক মুঠো ফুল অতি সন্তর্পণে তাসনুভার কোলের উপর রাখল সে।বেলি তাসনুভার প্রিয় ফুল।এই কথা কি সে জানে না?তাসনুভা নিশ্বাস বন্ধ করে একবার তার কোল,আর একবার তার সামনে থাকা আগন্তুক কে দেখল।তার দুই চোখ চিকচিক করছে।মনে হচ্ছে ভেতরে সবকিছু ছাড়খাড় হয়ে যাচ্ছে।

সে কাঁপা হাতে তার হেলমেট স্পর্শ করল।তৎক্ষনাৎ ছেলেটা এক লাফে উঠে দাঁড়ালো।তাসনুভা ভাঙা গলায় বলল,’তুমি কি সে যাকে আমি চাই?’

ছেলেটা জবাব দিলো না।উল্টো ঘুরে দাঁড়িয়ে দ্রুত কদমে তাসনুভার দৃষ্টির আড়াল হতে চাইল।তাসনুভা গলা ছেড়ে চেঁচিয়ে উঠল,’বড় ভাইয়া দাঁড়াও! আমাকে ফেলে যেও না প্লিজ।’

সে থামল।কিন্তু পেছন ফিরল না।বড় করে একটা শ্বাস টেনে আরেক কদম সামনে যেতেই তাসনুভা পেছন থেকে চিৎকার করল,’বড় ভাইয়া! দোহাই লাগে ভাইয়া।একটু করুণা করো!’

সে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করল নিজ থেকে।কোনোরকমে এক পা ঘাসের উপর রেখে ভর দিতেই সে ধপাস করে মাটিতে গিয়ে পড়ল।আপনাআপনি সে মৃদু আর্তনাদ করে উঠল।সঙ্গে সঙ্গে ছেলেটা ঘুরে দাঁড়ালো।তীব্র বেগে ছুটে এসে তাসনুভার দুই হাত আঁকড়ে ধরল।ভীষণ চিন্তিত হয়ে বলল,’এ্যাই তাস! পাগল নাকি তুই?একটা চড় দিবো ধরে।বেয়াদব কোথাকার!’

তাসনুভা গোল গোল চোখে তার কথা শুনল।সে থামতেই তাসনুভা খিলখিল হাসিতে ফেটে পড়ল।তার দুই হাতে ভর দিয়ে সেকেন্ডের মাথায় তাকে শক্ত করে জাপ্টে ধরল।কান্না মিশ্রিত সুরে বলল,’আচ্ছা ঠিক আছে।চড় দাও।তবুও হারিয়ে যেও না।’

সে কতোক্ষণ স্তব্ধ হয়ে পড়ে রইল।পরে একটু স্থির হতেই দুই হাতে গভীর মমতায় তাসনুভাকে আগলে নিল।চারপাশ দেখে কিছু সময়ের জন্য হেলমেটটা খুলল।তারপর তাসনুভার কপালে একটা ছোট্ট চুমু খেয়ে বলল,’চুপ থাক তাস।এখনই ধরা খাইয়ে দিস না আমায়।আমার এখনো একটা কাজ করা বাকি আছে।প্লিজ ততদিন চুপ থাক।আই বেগ।’

চলবে-

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে