কোনো এক শ্রাবণে পর্ব-২৯

0
13

#কোনো_এক_শ্রাবণে [দ্বিতীয় অধ্যায়]
লেখনীতে #মেহরিমা_আফরিন

(২৯)

আকাশে মেঘের গর্জন শোনা যাচ্ছে।সেই গর্জন খানিক বাদেই বর্ষণ রূপে ধরণী কোলে নেমে এলো।সময়টা শরৎের শুরুর দিকে হলেও বর্ষার আধিপত্য তখনও বিরাজমান।রাত বাড়তেই আকাশ কালো করে মেঘ জমলো।এগারোটা নাগাদ সেই মেঘ বৃষ্টিরূপে ঝর ঝর করে ভূপৃষ্ঠে নেমে এলো।

নবনীতা জানালায় মুখ নিয়ে সেই বৃষ্টি দেখে।ক্ষনিকের ব্যবধানে রীতিমতো ঝড় শুরু হয়েছে।দূরের নারিকেল গাছটা বাতাসের দাপটে একেবারে কয়েক ফুট পর্যন্ত নিচে নুয়ে এলো।নবনীতা উদ্বিগ্ন হয়ে বাইরে তাকায়।এই কিছুক্ষণ আগেই আরহাম বেড়িয়েছে বাড়ি থেকে।

তার গাড়ি দুপুরের দিকেই নষ্ট হয়ে গিয়েছে।সেটা মেকানিকের কাছে পাঠিয়ে সে অন্য গাড়ি দিয়ে এখানে এসেছিল।সেই গাড়িটা পরে আবার আরিশের ভার্সিটিতে গিয়েছে তাকে আনতে।

নবনীতা চিন্তিত হয়ে নিজের দু’হাত কচলায়।আরহাম তো গাড়ি সব পাঠিয়ে দিয়েছে।এই ঝড়ের মাঝে সে যাবে কেমন করে?নবনীতা একবার জানালা দিয়ে নিচে উঁকি দেয়।বিল্ডিংয়ের খোলা জায়গায় একবার আরহাম কে খোঁজার চেষ্টা করে।প্রথম বারে সে তাকে দেখতে পায়নি।অন্য জানালা দিয়ে খোঁজার পর সে তাকে খুঁজে পেয়েছে।বেচারা ঝুম বৃষ্টিতে কাকভেজা হয়ে কাউকে ফোন দিচ্ছিল।নবনীতা মুখ দিয়ে বিরক্তিসূচক শব্দ করে।এভাবে বৃষ্টির মাঝে দাঁড়িয়ে থাকার কি প্রয়োজন?পার্কিং এরিয়ার ভেতরে ঢুকে গেলেই তো পারে।নবনীতা একবার এগিয়ে যায় দরজার দিকে।তারপর আবার হনহনিয়ে নিজের ঘরে চলে আসে।ডেকে আনলে ঐ লোকের ভাব বেড়ে যাবে।ভিজুক গিয়ে বৃষ্টির পানিতে।তার কি?

আরহাম কাকভেজা হয়ে আরো একবার রোকনের নম্বরে ডায়াল করল।রোকন জসিম কাকার বড় ছেলে।সে মূলত বাড়ির গাড়ি ড্রাইভ করে।আরহাম তাকে কল দিয়েই খানিকটা বিরক্ত হয়ে বলল,’কোথায় তুই রোকন?’

রোকন কল রিসিভ করেই বলল,’ভাই আমি একদম গেইটের সামনে।ভেতরে আসছি।’

আরহাম তাকে বাধা দিয়ে বলল,’থাক আর দরকার নেই।এমনেই ভিজে গেছি।তুই থাক।আমি আসি।’

সে কল কেটে সামনে এগিয়ে যায়।আচমকা পেছন থেকে সুমিষ্ট নারীকন্ঠ ভেসে আসে,’এ্যাই শুনুন।’

আরহাম পেছন ফিরে।দেখতে পায় পার্কিং এরিয়ার একপ্রান্তে নবনীতা দাঁড়িয়ে আছে।তার হাতে একটা ছাতা।সে সেটা খুলে আরহামের দিকে এগিয়ে গেল।ছাতাটা আরহামের মাথার উপর ধরে খানিকটা বিরক্ত হয়ে বলল,’কোথায় যাচ্ছেন আপনি?আপনার গাড়ি না নষ্ট?’

আরহাম প্রথম কয়েক সেকেন্ড চুপচাপ তাকে দেখে।পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করে।তারপরই হাসি মুখে বলে,’হু।নষ্ট।আমি ক্যাব বুক করে যাবো।’

নবনীতা ছাতার নিচ থেকে বাইরে উঁকি দিয়ে বৃষ্টির গতি দেখে।তারপর আরো একবার আরহামের দিকে তাকায়।একটা বাক্য গলা পর্যন্ত এসে আটকে আছে।সেটা মুখ দিয়ে বের হচ্ছে না।সে কিছুক্ষণ ইতিউতি করে শেষ পর্যন্ত তাড়াহুড়ো করে বলল,’এই ঝড়ের মাঝে আর ক্যাব ট্যাব বুক করতে হবে না।ঘরে আসুন।’

আরহাম বিস্ফারিত নয়নে তাকে দেখে।মুহুর্তেই তার ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠে।সে দুই ঠোঁটের মাঝে সে হাসি ঝুলিয়ে গর্ব করে বলল,’জানতাম।জানতাম তুমি আমায় ফিরিয়ে নিতে আসবা।আমাকে তাড়িয়ে দেওয়া তোমার পক্ষে সম্ভব না।তুমি কেন,আমাকে কেউই এমন অপমান করে তাড়িয়ে দিতে পারে না।’

নবনীতা হতাশ চোখে তাকে দেখে।এর কথার জবাব দিয়ে সময় নষ্ট করার কোনো মানে নেই।মানুষ নিজেকে নিয়ে দুই রকম কম্পেক্সিটি তে ভুগে।হয় সুপেরিয়র,নয়তো ইনফেরিয়র।আরহাম ভুগছে সুপেরিয়র কম্পেক্সিটি তে।যেখানে সবকিছুতেই তার নিজেকে সেরা মনে হয়।

সে খুব সাবলীল ভঙ্গিতে আরহামের হাতের কবজি চেপে ধরে তাকে পার্কিং এরিয়ার ভেতরে নিয়ে এলো।তারপর ছাতা বন্ধ করে চুপচাপ লিফটের দিকে এগিয়ে গেল।

সে লিফটের বাটন চাপতেই আরহামের মুঠোফোন যান্ত্রিক শব্দে বেজে উঠে।আরহাম তড়িঘড়ি করে কলটা রিসিভ করেই কানে চেপে ধরে।অন্যপাশ থেকে রোকন উদ্বিগ্ন হয়ে বলছে,’ভাইয়া আপনি কোথায়?’

আরহাম মুঠোফোন টা নিজের আরো কাছাকাছি এনে চাপা স্বরে বলে উঠল,’আমি আজ বাড়ি যাব না রোকন।তুই যেই পথে এসেছিস,ঐ পথেই ফিরে যা।আর কোনো প্রশ্ন করবি না বাল।’

বলেই সে কল কেটে দেয়।কিসের রোকন কিসের কি?বউ বলেছে বাড়ি আসতে।আরহাম তাকে কেমন করে মানা করবে?সে তো খুব ভদ্র মানুষ।মুখের উপর কাউকে মানা করা তার স্বভাব বিরুদ্ধ কাজ।

সে খুশি মনে লিফটে এসে নবনীতার পাশাপাশি দাঁড়ালো।নবনীতা তাকে উপরনিচ থেকে সন্দিহান হয়ে বলল,’সব তো ভিজিয়েছেন।পরার মতো আর কোনো কাপড় আছে?’

আরহাম হাই তুলতে তুলতে জবাব দেয়,’সব আছে।তুমি কি আলমারি খুলো নি?’

‘খুলেছি।তবে আপনার কাপড়ে হাত দেইনি।’

সে থামে।পুনরায় নিজ থেকে প্রশ্ন করে,’কবে এনেছেন এগুলা?’

আরহাম চোখ বন্ধ করে ম’রার ভান করে বলল,’তুমি যখন ফিফটি পার্সেন্ট ম’রে গিয়েছিলে,তখন এনেছি এসব।’

নবনীতা কড়া চোখে একবার তার দিকে তাকায়।থমথমে মুখে জানতে চায়,’এটা কোনো মজা করার জিনিস?’

আরহাম জিভ কাটে।ফিচেল হেসে বলে,’সরি সরি।জাস্ট জোকিং।’

লিফট টেনথ ফ্লোরে আসতেই নবনীতা বড় বড় পা ফেলে নিজের এপার্টমেন্টে ঢুকে গেল।আরহাম একটু গা ঝেড়ে গায়ের অতিরিক্ত পানি টা মেঝেতে ফেলে তারপর ঘরে প্রবেশ করল।রুমে আসতেই নবনীতা তার তোয়ালে টা আরহামের দিকে বাড়িয়ে দিলো।খানিকটা জিজ্ঞাসু হয়ে বলল,’লাগবে?নাকি এটাও বাড়ি থেকে নিয়ে এসেছেন?’

আরহাম এক টানে সেটা হাতে নেয়।গম্ভীর মুখে বলে,’না আনি নি।’

সে ওয়াশরুমে গিয়েই বেসিনের কল ছেড়ে আঁতকে উঠে।দ্রুত বেরিয়ে এসে বড়ো বড়ো চোখ করে বলে,’সর্বনাশ! গিজার নেই?’

নবনীতা বাঁকা চোখে তাকে দেখল।অলস ভঙ্গিতে জবাব দিলো,’জ্বী না জনাব।গিজার ফিজার নেই।বালতি আর মগ যে আছে সেটাই আপনার ভাগ্য।’

আরহাম আতঙ্কিত মুখে বলল,’এই পানিতে গোসল করলে আমি ম’রে যাবো পরী।’

নবনীতা খাট ঝাড়ার ফাঁকে একনজর তাকে দেখে শান্ত গলায় জবাব দেয়,’ঠান্ডা পানিতে গোসল করলে কেউ ম’রে না।’

‘তবুও।মারাত্মক ঠান্ডা।তুমি ধরে দেখ একবার।’

নবনীতা এগিয়ে এসে পানি ধরল না।উল্টো ঘর থেকে বেরিয়ে গেল সোজা।আরহাম ভড়কে গিয়ে নিজে নিজে বলে উঠল,’কিরে ভাই! পাত্তাই দিলো না।’

সে আরেক দফা পানি ছেড়ে হাত ভিজিয়ে কাঁপতে কাঁপতে বেরিয়ে এলো।তার পক্ষে এই পানিতে গোসল করা সম্ভব না।সে বেরিয়ে এসেই কাউকে ফোন দিলো।মৃদুস্বরে জানতে চাইল,’অবস্থা কি?’

অপর পাশ থেকে ভরাট গলায় জবাব এলো,’এখনো মরে নি।’

আরহাম ক্রুর হেসে প্রতিউত্তর করে,’থাক।জানে মা’রিস না।বাঁ’চিয়ে রেখে একটু কষ্ট দে।ম’রে গেলে আবার ঝামেলা।’

সে নিঃশব্দে ফোনটা কেটে সাইড বক্সের উপর রাখে।কারো পায়ের আওয়াজ পেতেই ঘুরে দাঁড়ায়।নবনীতা এসেছে।তার হাতে একটা পাতিল।পাতিলের পানি থেকে ধোঁয়া উঠে চারপাশ ঘোলা হয়ে যাচ্ছে।নবনীতা সেই পানিটুকু বালতি তে গিয়ে ঢাললো।আরহাম তার পেছনে এসে প্রশ্ন করল,’এসব কি?’

নবনীতা ক্লান্ত স্বরে জবাব দেয়,’নিন।পানি গরম করে দিয়েছি।এটা দিয়ে গোসল করে নিন।’

আরহাম পানি থেকে ওঠা ধোঁয়া দেখেই বলল,’সাংঘাতিক! এই পানিতে তো আমার গা পু’ড়ে যাবে।’

নবনীতা কটমট চোখে তার দিকে তাকায়।চটে যাওয়া মেজাজে উত্তর দেয়,’অদ্ভুত তো! সাথে ঠান্ডা পানি মিক্স করে নিবেন।কমন সেন্স নেই নাকি?’

আরহাম ফিচেল হাসে।মনে মনে জবাব দেয়,’আছে।সবই আছে।কিন্তু তোমায় ক্ষেপাতে ভালো লাগে।’

সে আর কথা না বাড়িয়ে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ায়।নবনীতা পা বাড়ায় রান্নাঘরের দিকে।সারাদিনে একবারও মামির কথা মনে হয় না।কেবল রান্নাঘরে পা দিলেই তার কথা মনে আসে।মনে হয় এই একটা কাজ তো ছিল যেটা মামি থাকলে তার করা লাগতো না।এখন সবকিছু সামলে রান্নাবান্না করতে সে হিমশিম খাচ্ছে।যা বানায় সেটাই খাওয়ার অযোগ্য হয়।সে করবে টা কি?

আরহাম বেরিয়ে এসেই চুল মুছতে মুছতে বারান্দায় চলে গেল।নবনীতা চুপচাপ খাটে এসে বসে।বিয়ের দিন সে বসে বসে ঘুমিয়েছে।এরপর কিছুদিন সে জ্বরের ঘোরে কাঁপতে কাঁপতে ঘুমিয়েছে।আজ সে একদম সুস্থ।বিয়ের পর এই প্রথম সে সজ্ঞানে আরহামের সাথে ঘুমাবে।

আরহাম খাটের অন্যপাশে বসতেই সে কোলবালিশ এনে খাটের ঠিক মাঝামাঝি রাখল।আরহাম সেটা দেখেই কপাল কুঁচকে বলল,’এটা আবার কেমন ফাইজলামি?তুমি কি হিন্দি সিরিয়ালের মতো কাজ কারবার শুরু করেছ নাকি?’

নবনীতা আশ্চর্য হয়ে উত্তর দেয়,’অদ্ভুত তো! আপনি রোজ রোজ খুঁজেন।তাই আগে থেকেই এনে দিলাম।’

‘ওহহ আচ্ছা।ধন্যবাদ।’

নবনীতা ঘরের এলইডি লাইট বন্ধ করে ডিম লাইট জ্বালিয়ে চুপচাপ শুয়ে পড়ল।পাশ থেকে আরহাম গাঢ় স্বরে জানতে চায়,’ঔষধ খেয়েছ পরী?’

সে পাশ ফিরে।একনজর আরহাম কে দেখেই কিছুটা অবাক,কিছুটা দ্বিধাগ্রস্থ হয়ে উত্তর দেয়,’না।ভুলে গিয়েছিলাম।’

‘এখন খেয়ে নাও।’

‘ঠিক আছে।’

নবনীতা চুপচাপ উঠে গিয়ে ঔষধের বক্স টা হাতে নিল।হাতে নিয়েই আড়চোখে একবার আরহামকে দেখল।আরহামের কাছ থেকে এই ছোট্ট দায়িত্ববোধ টুকুও সে আশা করেনি।তার ঔষধ নিয়ে কেউ ভাববে,এমনটা আগে কখনো হয়নি।সে টের পায়,স্বামীর কাছ থেকে এই সামান্য যত্ন পেয়ে তার মন ভালো হয়ে গেছে।সে ঔষধ খেয়েই আবার চুপচাপ শুয়ে পড়ল।

রাতের মাঝামাঝি সময়ে আরহামের ক্রমাগত একের পর এক হাঁচির শব্দে নবনীতার ঘুম ভেঙে যায়।সে দ্রুত পাশ ফিরে।আরহাম আরেকটা হাঁচি দিয়েই নাক চেপে ধরে।দাঁত দাঁত পিষে একটা অশ্রাব্য গালি দেয়।নবনীতা চোখ মুখ শক্ত করে তার দিকে তাকায়।আরহাম তাকে দেখতেই বিরক্ত হয়ে বলে,’এভাবে দেখছ কেন?হাঁচিকে গালি দিয়েছি,তোমাকে না।’

নবনীতা গম্ভীর হয়ে বলল,’সেই গালিতে হাঁচি অনেক অপমানবোধ করেছে।যতোসব।’

আরহাম আরো কয়েকটা হাঁচি দিলো।টিস্যু বক্স থেকে টিস্যু নিয়ে নাক মুছে বলল,’শা’লার বৃষ্টি।বা’লের বৃষ্টি।’

নবনীতা চোখ মুখ খিঁচে ধরে উঠে যায়।দ্রুত পা চালিয়ে আবার রান্নাঘরে যায়।মিনিট দশেকের মাথায় চায়ের কাপ হাতে তার ঘরে আসে।এসেই কাপটা আরহামের দিকে বাড়িয়ে দেয়।

আরহাম ভ্রু উঁচু করে জিজ্ঞেস করে,’এটা আবার কি?’

‘আদা লেবুর চা।খেয়ে নিন।আরাম পাবেন।’

আরহাম চটপট সেটা হাতে নিল।নিয়েই চোখ তুলে নবনীতাকে দেখে মিষ্টি হেসে বলল,’থ্যাংকস।আল্লাহ তোমার বরকে দীর্ঘজীবী করুক।’

বলেই সে চায়ের কাপে একটা চুমুক দেয়।প্রথম চুমুকেই সে নাক মুখ ছিটকে চেঁচিয়ে উঠে,’ইসসস ছি! কি বানিয়েছ এসব?এটা তোমার মুখের ভাষার চেয়েও তিতা।ইসসস! বমি পাচ্ছে আমার।’

নবনীতা বুকে হাত বেঁধে নির্বিকার হয়ে জবাব দেয়,’আদা লেবুর চা এমনই হয়।এটা তো কেউ মজার জন্য খায় না।সুস্থ হওয়ার জন্য খায়।’

আরহাম তার একহাত ধরে কাপটা তার হাতে তুলে দিয়ে তাড়াহুড়ো করে বলল,’তুমি খাও এসব।আমি প্রয়োজনে দেরিতে সুস্থ হবো,তাও এই অখাদ্য খাবো না।’

বলেই সে পুনরায় শোয়ার জন্য উদ্যত হয়।নবনীতা তার অন্য হাত দিয়ে খপ করে আরহামের বাহু চেপে ধরে।চোখ পাকিয়ে রাগী স্বরে বলে,’খেতে হবে।কষ্ট করে বানিয়েছি না?নিন খেয়ে নিন।না খেলে কষ্ট পাব।’

আরহাম চোখ সরু করে প্রশ্ন ছুড়ে,’তুমি কষ্ট পেলে আমার কি?যাও কতোক্ষণ কান্না করো।’

নবনীতা থমথমে মুখে বলল,’এটা না খেলে বাকি রাত এমন হাঁচি দিতে থাকবেন।এই হাঁচিতে আমার ঘুম হবে না।নিন এটা খেয়ে আমাকে উদ্ধার করুন।’

আরহাম চুপচাপ লটকানো মুখে কাপটা হাতে নেয়।নবনীতা শান্ত গলায় বলল,’নাক বন্ধ করে একটানে খেয়ে নিন।এতো খারাপ লাগবে না আর।’

আরহাম তার কথা মতো শ্বাস বন্ধ করে একটা চুমুক দেয়।নাহ,আগের মতো জঘন্য লাগছে না।তবে শ্বাস ছাড়তেই আবার বিচ্ছিরি একটা গন্ধ নাকে এসে লাগছে।আরহাম নাক মুখ খিঁচে পুরোটা চা শেষ করল।পাশ ফিরতেই দেখল নবনীতা ঘুমিয়ে কাদা।

সে আনমনে হাসে।বিগত কয়েকদিন মেয়েটা তার কাঁধে মাথা রেখে ঘুমিয়েছে।আজকে মনে হয় না এমন কিছু হবে।কারণ আজকে সে নিজের আগের ফর্ম ফিরে পেয়েছে।সে এখন আর তার দিকে ফিরেও তাকাবে না।

আরহাম সাইডবক্সের উপর চায়ের কাপ টা রেখে এক হাতের উপর ভর দিয়ে সামান্য ঝুঁকে নবনীতা কে দেখে।দেখেই বিড়বিড় করে বলে,’ম্যাডাম মহা সুখে ঘুমাচ্ছে।’

সে আর রাত জাগলো না।কোলবালিশ টা জড়িয়ে ধরেই আরো কয়েকটা হাঁচি দিয়ে গভীর ঘুমে তলিয়ে গেল।কাল সকালে আবার এক জায়গায় যেতে হবে।সড়ক পরিদর্শন করতে।কি হাস্যকর ব্যাপার! রাস্তা হবে রাস্তার মতো।সে পরিদর্শন করে কি করবে?সে কি ইঞ্জিনিয়ার?নাকি মিস্ত্রি?
.
.
.
.
মাঝরাতের একটা ফোন কলেই ফাহাদ এক প্রকার ছুটতে ছুটতে হসপিটালে আসল।তাকে দেখতেই অন্যান্য ছেলেরা সরে দাঁড়ায়।সে এগিয়ে এসে একজনের কাছে জানতে চায়,’কি অবস্থা এখন মিলনের?’

তার সামনাসামনি দাঁড়ানো ছেলেটা মলিন মুখে জবাব দেয়,’খুব একটা ভালো না।’

‘হয়েছা টা কি?কিভাবে হলো এসব?’

‘আরহামের দলের ছেলেরা সন্ধ্যার দিকে তাকে ধরে নিয়ে গেছে।তারপর কয়েক ঘন্টা যাবত মে’রে মে’রে এই হাল করেছে।আমরা কয়েকজন যখন তাকে হসপিটালে নেওয়ার জন্য আনতে গিয়েছি তখন আমাদের শা’সিয়ে দিয়েছে।বলেছে ভুল করেও যেন তাদের ভাবির নামে কোনো নোংরা কথা না ছড়াই।’

ফাহাদ কথা শুনেই চিৎকার করে উঠে,’তারা এতো কিছু বলল,আর তোরা কি করছিলি?আঙুল চুসছিলি?’

ছেলেটা কাচুমাচু হয়ে জবাব দেয়,’আমরা কি করব ভাই?তাদের কাছে কতো রকমের অ’স্ত্র আছে।আরহাম তো তাদের সবকিছুর বৈধতা দিয়ে রেখেছে।এরা একেকজন নিজেকে মন্ত্রী মিনিস্টার ভাবা শুরু করেছে আজকাল।’

ফাহাদ দুই হাত মুঠ করে এগিয়ে যায়।মিলন কে আইসিইউ তে রাখা হয়েছে।ফাহাদ গলা উঁচু করে একবার ভেতরের দৃশ্য দেখে।দেখতেই সে আঁত’কে উঠে।আজ ক্ষমতা হাতে নেই বলে আরহাম যা খুশি তা করছে।

সে দেয়ালে একহাত রাখে।টেনে টেনে বড়ো করে দু’টো শ্বাস নেয়।হিংস্র শ্বাপদের ন্যায় ফুঁসতে ফুঁসতে বলে,’কাজটা ভালো করিস নি আরহাম।সামান্য কারণে তুই র’ক্তপাত করেছিস।এই র’ক্তের বদলা আমি র’ক্ত দিয়েই নিব।’

বলেই সে একপেশে হাসল।ঠোঁটের কোণায় সেই সূক্ষ্ম হাসি ফুটিয়ে ভরাট স্বরে বলল,’তুই আমার শক্তিতে হাত দিয়েছিস।আমি তোর কলিজায় হাত দেব।আর যাই হোক,খু’নের হাত আমার তোর চাইতে বেশি পাকা।’

***

‘আমি আর এই চাকরি টা করব না আরহাম।’

সকালে ঘুম থেকে উঠে হাত মুখ ধুয়ে বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছিল আরহাম।তখনই নবনীতা তার পাশাপাশি এসে দাঁড়ায়।আরহাম পাশ ফিরে তাকে দেখে।কপালে ভাঁজ ফেলে জানতে চায়,’কেন বলো তো?তোমাকে তো চেহারা দেখে চাকরি দেওয়া হয়নি।যোগ্যতা দেখেই দেওয়া হয়েছে।তাহলে সমস্যা টা কোথায়?’

‘সমস্যা আছে।আপনি বুঝবেন না।’

‘ঠিক আছে।তুমি যা ভালো মনে করো।রেজিগনেশন লেটার জমা দিয়ে দিয়ো।তারপর অন্য চাকরি খুঁজো।’

নবনীতা হতাশ হয়ে মাথা নামিয়ে নেয়।নিরেট স্বরে বলে,’বাড়িটাও আমি ছেড়ে দিতে চাই।’

আরহাম তার থেকে চোখ সরিয়ে সামনে দেখে।সূর্যের আঁচ একটু একটু করে বাড়ছে।আরহাম সামনে দেখতে দেখতেই জবাব দেয়,’বাড়ি ছেড়ে যাবে টা কোথায়?সবকিছুতে এতো ইগো দেখানোর কোনো প্রয়োজন নেই।’

‘ইগো না।বিষয়টা লজ্জার।’

‘কেমন লজ্জা?তুমি আমার মালিকানাধীন ফ্ল্যাটে থাকছো।এটা লজ্জার বিষয়?তাহলে আর বউ বলে পরিচয় দিও না।সেটাও লজ্জার।’

নবনীতা গম্ভীর হয়ে বলল,’মোটেই নিজেকে নিয়ে লজ্জা পাচ্ছি না।আমি এখানে একা থাকছি না।আমার পুরো পরিবার থাকছে।তাদের থাকার খরচা আপনি দিবেন এই বিষয়টা লজ্জার।’

নবনীতা কথা শেষ করেই ঘরে গিয়ে বসল।আরহাম আরো কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে শেষটায় ধীর পায়ে ঘরে এসে নবনীতার থেকে সামান্য কিছুটা দূরে গিয়ে বসল।বসতেই গম্ভীর হয়ে বলল,’আমি তোমাকে একটা সাজেশন দিতে পারি।’

নবনীতা ভ্রু উঁচিয়ে জানতে চায়,’সেটা কি?’

‘তুমি আপাতত কিছুদিন টাকার চিন্তা ছেড়ে দাও।আই মিন জব করো।বাট ইনকামের বিষয়টা নিয়ে ভেবো না।ভালো না লাগলে আমার অফিসের জবও ছেড়ে দাও।আপাতত এমন একটা চাকরি নাও যেটা কেবল তোমার হাত খরচের টাকা টা এনে দিবে।যেই চাকরি টা তোমাকে মানসিক প্রশান্তি এনে দিবে।চাকরির ফাঁকে একটু স্কিল ডেভেলপ করো।তারপর বড়ো কোনো মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি তে এপ্লাই করবে।এই ধরো আরো বছর দুয়েক পরে।ঐসব কোম্পানিতে বেতন হয় লাখের উপরে।তুমি তখন নিজের মতো করে চলবে।তোমার পরিবারের পুরো খরচা তুমিই বহন করবে।আপাতত আইনত অভিভাবক হিসেবে তোমার সকল দায়িত্ব আমি নিলাম।তোমার দায়িত্বের মধ্যে যেহেতু তোমার ফ্যামিলির দায়িত্ব আছে,তাই আমি সেই দায়িত্বও নিলাম।পার্মানেন্ট না।কিছুদিনের জন্য।তুমি তো মাত্র গ্রেজুয়েশন শেষ করেছ।দুই টা বছর সময় নেও।এই সময়টুকু আমি তোমার দায়িত্ব নিলাম আরকি।এরপর তুমিই সবকিছু সামলে নিও।ঠিক আছে?’

নবনীতা চুপচাপ কিছুক্ষণ ভাবলো।মাথা তুলে সন্দিহান গলায় বলল,’দুই বছর পর তো পরিস্থিতি এমন নাও থাকতে পারে।’

‘না থাকুক।তুমি বলো প্রস্তাব পছন্দ হয়েছে নাকি?’

নবনীতা হাই তুলতে তুলতে অলস গলায় জবাব দেয়,’অপছন্দ হলেও কিছু করার নেই।আপাতত এটাই মেনে নিতে হবে।’

আরহাম স্মিত হাসে।প্রসন্ন চিত্তে বলে উঠে,’এই যে বেয়াদবি না করলে তোমাকে কতো ভালো দেখায় জানো?সবসময় এমন আমার কথা শুনবে,বুঝেছ?মেয়ে মানুষ বেশি ফটর ফটর করলে আমার অসহ্য লাগে।’

নবনীতা তীর্যক চোখে তাকে দেখে।দাঁত কিড়মিড় করে শক্ত মুখ করে বলে,’আর ছেলেরা মেয়েদের এমন হেয় করলে আমার অসহ্য লাগে।’

আরহাম সে কথা গায়ে মাখল না।উল্টো সবকিছু উড়িয়ে দেওয়ার ভান করে উঠে দাঁড়ালো।নবনীতাকে সে আকাশ পরিমান স্বাধীনতা দিয়েছে।সে নিজের সব গোড়ামি থেকে বেরিয়ে তাকে চাকরির অনুমতি দিয়েছে।স্বামী হিসেবে এর চেয়ে বেশি করা তার পক্ষে সম্ভব না।নবনীতাকে সে অসম্ভব পছন্দ করে।কিন্তু সে ভেবে নিয়েছে সে কখনোই সেটা তাকে বুঝতে দিবে না।মেয়ে মানুষ অনুভূতি বুঝে নিলেই অপরপাশের মানুষটাকে পুতুলের মতো ব্যবহার করে।আরহাম কেন পুতুলের মতো ব্যবহৃত হবে?বাবা যেই ভুল করেছে আরহাম সে ভুল করবে না।

সে সামান্য কিছু খেয়েই তার কাজে বেরিয়ে পড়ল।তার হাঁচি কিছুটা কমেছে।তবে এখনো ঠান্ডা লেগে আছে।নাকের কাছটায় কিছু এতটা সুরসুরি দিচ্ছে।সব মিলিয়ে তার অসহ্য রকম অনুভূতি হচ্ছে।

আরহাম বেরিয়ে যাওয়ার একটু পরেই নবনীতা রান্নাঘরে গিয়ে আরো কয়েকটা পরোটা ভেজে নেয়।আরহাম কালকে রেডিমেড ফ্রোজেন পরোটাও এনেছে।নবনীতা যদিও সামনাসামনি কিছুটা বিরক্ত হয়েছে,কিন্তু মনে মনে সে খুশিই হয়েছে।তার অর্ধেক কষ্ট কমে গেছে।মাঝে মাঝে আরহাম এমন হাত ভরে ভরে খাবার আনলে মন্দ হয় না।

সে লক্ষ্য করছে ইদানিং সে আরহামের সাথে মেজাজ দেখাতে পারে না।রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের তার ভালো লাগে না।পুরোনো কিছু ঘটনার জের ধরে সে আরহামকেও খুব একটা পছন্দ করে না।কিন্তু তা স্বত্তেও আরহামকে তার আগের মতো বিরক্ত লাগে না।এর কিছু সুনির্দিষ্ট কারণ আছে।

সে অসুস্থ অবস্থায় আরহাম প্রায় সময়ই তার আশে পাশে থাকতো।নিজের রাজনৈতিক ব্যস্ততার মাঝেও সে মনে করে নবনীতার নিয়ম করে ঔষধ খাওয়ার ব্যাপার টি মাথায় রেখেছিল।রোজ রাতে সে অসংখ্য বার পাতলা কাপড় ভিজিয়ে তার মাথায় জলপট্টি দিয়ছে।এই সামান্য সহমর্মিতা টুকুও নবনীতার জন্য অনেক।এই এতো গুলো বছরে মামা বাদেও সে একজন অভিভাবক পেয়েছে।সেই অভিভাবক হয়তো নিরেট ভদ্রলোক না,কিন্তু নবনীতার তো তাকে মন্দ লাগছে না আজকাল।

দুপুরের একটু পরে রিমি বাড়ি এলো বিভাকে সঙ্গে করে।বিভা এখন মোটামুটি সবাইকেই চিনতে পারে।কিন্তু তার উচ্চারনে ভয়াবহ সমস্যা।সে আধো আধো বুলিতে অনেক কথা বলে।কিন্তু সেই কথা বুঝতেই নবনীতা আর রিমির বিশাল সময় লেগে যায়।

নবনীতা বিভাকে দেখতেই হাত বাড়ায়।হাসি হাসি মুখ করে বলে,’আসো তো বিভু।পরী আপুর কাছে আসো।’

বিভা এক ডাকেই ঝাপিয়ে তার কোলে এলো।নবনীতা টুপ করে তার গালে দু’টো চুমু খেয়ে বলল,’বলো তো আমার নাম কি?’

বিভা একটু ভাবে।পর পরই হাত নেড়ে ক্ষীণ স্বরে বলে,’পয়ী।’

নবনীতা তার সম্বোধন শুনেই হেসে ফেলল।তারপর রিমির দিকে আঙুল তুলে বলল,’আর এটা?এটা কে?’

বিভা আগের মতো করেই জবাব দেয়,’লিমি।’

রিমি চোখ পাকিয়ে বিরক্ত হয়ে বলল,’ধ্যাত! এর উচ্চারনে অনেক সমস্যা।র আর ল গুলিয়ে ফেলে।স্কুলে না দিলে ঠিক হবে না।’

নবনীতা একগাল হাসল।বিভাকে কোল থেকে নামিয়ে খাটে রেখে বলল,’ব্যাপার না।আরেকটু বড় হোক।সব শিখে যাবে।’

চিত্রা গোল গোল চোখ করে একবার বিভাকে আর একবার তার আপাইকে দেখে।কোনো এক অজানা কারণে তার বিভাকে ভালো লাগে না।শুরুতে লাগত।সে নিজেই গিয়ে গিয়ে তাকে কোলে নিত।এখন আর লাগে না।বিভা তার সব খেলনায় হাত দেয়।এটা যদিও চিত্রা মেনে নিয়েছে।কিন্তু বিভা তার আদরেও ভাগ বসিয়েছে।এটা সে মানতে পারে না।

নবনীতা আর রিমি অন্য ঘরে যেতেই সে এক থাবায় নিজের কালার বক্স টা বিভার হাত থেকে কেড়ে নেয়।বিভা পিটপিট চোখে তাকে দেখে।আবারো এগিয়ে এসে তার কালার বক্সে হাত দেয়,চেষ্টা করে নিজের কাছে টেনে নিতে।চিত্রা বিরক্ত হয়ে তাকে ধাক্কা দেয়।মুহূর্তেই দু’জনের মাঝে হাতাহাতি শুরু হলো।শেষমেশ চিত্রা বিরক্ত হয়ে তার গালে একটা খাঁমচি দিলো।

এক খাঁমচি তেই বিভা ঠোঁট ভেঙে ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কেঁদে ফেলল।চিত্রা ভীষণ ভড়কায়।এইটুকুতেই কেঁদে দিলো?নবনীতা এক ছুটে ঘরে আসে।আঁতকে উঠে বলে,’কি হয়েছে সোনা?কে মেরেছে?’

____

দীর্ঘসময় ধরে কলিং বেল বেজে যাচ্ছে।ভেতরে নবনীতার গলার আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে।অথচ কেউ দরজা খুলছে না।আরহাম বিরক্ত হয়ে আরো একবার বেল বাজায়।

দরজা খুলল আরেকটু পরে।দরজা খুলেছে রিমি।আরহাম কে দেখেই সে সৌজন্যসূচক হাসল।আরহাম ভেতরে এসে আশপাশ দেখে বলল,’ডন কোথায়?তার আওয়াজ পাচ্ছিলাম।’

রিমি চোখ দিয়ে ইশারা করে নবনীতার ঘরটা দেখায়।চাপা স্বরে বলে,’ডন আজকে হেব্বি রেগে আছে।’

‘কি বলো?কার উপর?’

‘চিত্র’

আরহাম হকচকায়।আশ্চর্য হয়ে বলে,’কিহ! চিত্র’র উপর?’

সে দ্রুত এগিয়ে যায় নবনীতার ঘরের দিকে।নবনীতা তার আওয়াজ শুনে মাত্রই ঘর থেকে বেরিয়েছিল।আরহাম তাকে দেখেই জিজ্ঞাসু হয়ে বলল,’হয়েছে টা কি?’

নবনীতা কোনো জবাব না দিয়ে তার হাত চেপে ধরে।তাকে টানতে টানতে নিজের রুমে নিতে নিতে বলে,’নিজেই দেখুন হয়েছে টা কি।’

ঘরে গিয়েই আরহামের চক্ষু চড়াকগাছ।চিত্রা ঘরের এক কোণায় কান ধরে দাঁড়িয়ে আছে।তার চোখ ছলছল করছে।আরহাম দ্রুত তার কাছে এগিয়ে যায়।একটানে তাকে কোলে নিয়ে তার চোখ মুছে দিয়ে নবনীতার দিকে ফিরে আশ্চর্য হয়ে বলে,’এসব কি পরী?তুমি এইটুকু বাচ্চাকে পানিশমেন্ট কেন দিচ্ছো?’

নবনীতা গটগট করে হেঁটে তার মুখোমুখি এসে দাঁড়ায়।কোমরে হাত রেখে বলে,’আপনার চিত্র কি করেছে শুনবেন?’

‘কি?’

নবনীতা বিভাকে সামনে এনে তার গালটা দেখিয়ে রাগে গজরাতে গজরাতে বলল,’দেখুন।চিত্র সামান্য একটা কালার বক্সের জন্য তাকে খাঁমচি মেরেছে।আঁচড়ের দাগ বসিয়ে দিয়েছে বেয়াদব টা!’

আরহাম একবার বিভাকে দেখল।তারপরই চিত্রার দিকে ফিরে মন খারাপ করে বলল,’ভেরি ব্যাড চিত্র।বিভু কতো ব্যথা পেয়েছে বলো।’

নবনীতা এক টানে চিত্রাকে আরহামের কোল থেকে নামিয়ে নিচে এনে দাঁড় করায়।নামিয়েই আরহামকে চোখ রাঙানি দিয়ে বলে,’হয়েছে।এতো মিষ্টি মিষ্টি কথায় কাজ হবে না।চিত্র’র শাস্তি হচ্ছে সে আজকে আর আপনার কোলে উঠতে পারবে না।আপনি এখন থেকে শুধু বিভু কে আদর করবেন।’

আরহাম বিচলিত চোখে একবার বউকে,আরেকবার তার ছোট শ্যালিকা কে দেখে।চিত্রা নবনীতার কথা গ্রাহ্য না করে পুনরায় আরহামের দিকে ছুটে যায়।

সে আসার আগেই নবনীতা শক্ত করে আরহামকে জড়িয়ে ধরে তাকে চিত্রার কাছ থেকে আড়াল করে নেয়।জড়িয়ে ধরেই সে কড়া গলায় বলে,’না,আজ আর টুপ করে কোলে চড়তে দিব না।’

আরহাম ঘটনার আকস্মিকতায় স্তব্ধ হয়ে কতোক্ষণ সেভাবেই দাঁড়িয়ে থাকে।সে বাঁধা পড়েছে নবনীতার সুদৃঢ় হাতের বন্ধনে।এই একত্রিশ বছরের দীর্ঘ জীবনে এই প্রথম কোনো নারী কায়া তার এতো বেশি ঘনিষ্ঠ হয়েছে।সে টের পায় মেয়েটির হৃদপিণ্ড ধুক ধুক শব্দে স্পন্দিত হচ্ছে।তার মাথা এসে ঠেকেছে আরহামের কাঁধের কাছে।অথচ তার সমস্ত মনোযোগ চিত্রার দিকে।চিত্রাকে আজ কিছুতেই সে আরহামের সাথে আহ্লাদ করতে দেবে না।

আরহাম বিমুগ্ধ চোখে আয়নায় নিজের প্রতিবিম্ব দেখে।তাকে জড়িয়ে ধরে রাখা মেয়েটি তার হাতের বন্ধন আরো জোরাল করে।আরহাম হাত বাড়িয়ে কেবল আলতো হাতে তার পিঠ ছোঁয়।চোখ মেলে মন ভরে আয়নার দৃশ্য টুকু দেখে।দৃশ্যটা চমৎকার।তার দেখতে ভালো লাগছে।চোখের ক্যামেরায় সে চটপট সেই দৃশ্যের ছবি তুলে নেয়,যেটা জীবনভর সংরক্ষিত থাকবে মন নামক মেমোরিতে।

চলবে-

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে