কোনো এক শ্রাবণে পর্ব-২৮

0
14

#কোনো_এক_শ্রাবণে [দ্বিতীয় অধ্যায়]
লেখনীতে #মেহরিমা_আফরিন

(২৮)
[রিচেক নাই]

স্যাতস্যাতে একটা ঘর।বহুদিনের পরিত্যক্ত দালান।দালানের শৈবাল জন্মানো দেয়ালগুলো থেকে চুয়ে চুয়ে পানি পড়ে।পুরো ঘরেই কেমন উটকো আর গুমোট গন্ধ।

ঘরটা খুব বেশি বড় না।আবার একেবারে আটসাটও না।ঘরে একটা জানালা আছে,লোহার শিক কাঠের কপাট।ঘরের মাঝামাঝি জায়গায় একটা চেয়ার।সেই চেয়ারে একজনকে শক্ত করে বেঁধে রাখা হয়েছে।তার দুই হাত পেছনের দিকে মুড়িয়ে তারপর বাঁধা হয়েছে।ছেলেটার মাথা নুয়ানো।মুখ দেখা যাচ্ছে না।পরনের সাদা রঙের গেঞ্জির জায়গায় জায়গায় ধুলো মেখে নোংরা দেখাচ্ছে।তার লম্বা মতোন শরীরটা কোনো এক অজানা আতঙ্কে একটু পর পর কেঁপে উঠছে থরথর করে।

তাকে এখানে এনে শুরুতেই কয়েক দফা চড় থাপ্পড় দেওয়া হয়েছে।তারপর থেকে দীর্ঘসময় সে এভাবেই আছে।ঘরে না কেউ আসছে,আর না তার হাতের বাঁধন খোলা হচ্ছে।

আরো অনেকটা সময় গড়ানোর পর ঘরের দরজা খুলল।মাথা ঝুকিয়ে ঘরের ভেতর প্রবেশ করল একজন যুবক।চেয়ারে বেঁধে রাখা ছেলেটা কেবল তার পা জোড়া দেখল।মুখ তুলে আর চেহারা দেখার চেষ্টা করল না।সে জানে এটা কে।পা জোড়া এগিয়ে আসে তার দিকে।ছেলেটা টের পায় সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে তার হৃদস্পন্দন বাড়ছে।তাকে কি আজ মে’রে ফেলবে?ফেলতেও পারে।অসম্ভব কিছু না।এদেশে সবই সম্ভব।

পা জোড়ার মালিক কাছাকাছি আসতেই কোনো কথা না বলে শুরুতেই ঠাটিয়ে তার দুই গালে দুইটা চড় বসায়।সেই শব্দ আসবাবপত্র বিহীন বন্ধ ঘরে বার কয়েক প্রতিধ্বনিত হয়।সে মাথা তুলে।সামনের ব্যক্তির হিংস্র মুখখানা একটি বারের জন্য অবলোকন করে।দু’জনের চোখ মিলতেই যুবকটি দাঁতে দাঁত পিষে গা’লি দেয়,’কু’ত্তার বাচ্চা একটা!’

নাফিস পুনরায় মাথা নামিয়ে নিল।দুই চড়েই তার মাথা ঘুরছে।আরহাম একহাতে তার কলার ধরে অন্যহাতে তার চুল মুঠ করে ধরে তার মাথা টেনে তুলে।থমথমে গলায় বলে,’আমাকে সেদিন তুই শরবত দিয়েছিলি তাই না?শরবতে কি ছিল সত্যি সত্যি বল তো।’

নাফিস জবাব না দিয়ে গোল গোল চোখে শুধু সামনে দেখে যায়।আরহামের মেজাজ বিগড়ায়।নিরবতার পুরষ্কার স্বরূপ নাফিজ পেল আরো একটি জোরাল প্রহার।আঘাতে আঘাতে তার শরীর অবসন্ন হতে শুরু করে,চোখ দু’টো বুজে আসে।কিন্তু তাতে কার কি?সামনে থাকা মানুষটা থোড়াই সেসব গায়ে মাখে।

আরহাম ধৈর্য ধারণে চূড়ান্ত রকমের ব্যর্থ হয়ে দাঁত কিড়মিড় করে চেঁচিয়ে উঠে,’কু’ত্তার বাচ্চা! প্রশ্ন কানে যায় না?তোকে কিছু জিজ্ঞেস করেছি আমি।এতোক্ষণ কিন্তু হাতে মে’রেছি,মুখ না খুললে কিন্তু এরপর ডোজ বাড়াবো।দেখি,তাড়াতাড়ি বল তো।তোরও সময় বাঁচবে,আমারও।’

নাফিজ টেনে টেনে কয়েকবার শ্বাস নেয়।অস্ফুটস্বরে বলে,’জ্বী আমিই শরবত দিয়েছিলাম।’

আরহাম দুই হাত মুঠ করে তপ্ত শ্বাস ছাড়ে।ওয়াজিদ দরজা খুলে ভেতরে এসে দেয়াল ঘেঁষে দাঁড়ায়।আরহামের কোনো ভরসা নাই।রাগের মাথায় সে যা-তা করে ফেলতে পারে।আশেপাশে কেউ না থাকলে সবকিছু ঘেটে ঘ বানাবে এই ছেলে।

আরহাম থমথমে গলায় প্রশ্ন করে,’শরবতে কি ছিলো?’

নাফিজ কিছু সময় নিরব থাকে।আরহাম তার চুল টেনে ধরে আবারো গর্জন করে বলে,’এ্যাই জানোয়ার! এক প্রশ্ন কয়বার করতে হয় তোকে?এরপরের বার একদম জানে মেরে দিব এক কথায় উত্তর না দিলে।’

নাফিজ টেনে টেনে শ্বাস নিয়ে বলে,’কি ছিল জানি না।আমাকে শুধু মেশাতে বলা হয়েছিল।’

‘কে বলেছে?’

‘মিলন ভাই’

আরহাম ভ্রু কুঁচকায়।জানকে চায়,’কোন মিলন?ফাহাদের চ্যালা মিলন?’

‘জ্বি’

আরহাম দু’হাতে নিজের মাথা চেপে ধরে।ওয়াজিদ পেছন থেকে চাপা স্বরে বলে,’কোনো হাই পাওয়ারের ড্রাগস দিয়েছে সম্ভবত।ফাহাদের কাছে তো এসবের অভাব নেই।’

আরহাম ক্লান্ত হয়ে একটা নিঃশ্বাস ছাড়ে।পুনরায় নাফিজ কে দেখে প্রশ্ন করে,’মিলন তোকে কি কি বলেছিল খুলে বল তো।’

নাফিজ পরাজিত সৈনিকের ন্যায় একে একে সব খুলে বলে।শেষটায় কাঁপা স্বরে বলে,’মিলন ভাই বলেছিল আপনাকে শরবত টা খাওয়াতে পারলে পাঁচ হাজার টাকা দিবে,আর নবনীতা আপুকে টিচার্স রুমে পাঠিয়ে দরজা বন্ধ করতে পারলে বাকি পাঁচ হাজার দিবে।’

আরহাম তার কথা শুনল।নাফিজের প্রতিটা বাক্যে,প্রতিটা শব্দে তার মাথায় খু’ন চেপে যাচ্ছিল।সে নাফিজের নাক বরাবর একটা ঘুষি মেরে ক্ষিপ্ত হয়ে বলল,’ব্যাস পাঁচ হাজার?এইটুকু টাকার লোভে এতো বড় অন্যায় করে ফেললি?একবার মনেও হয়নি যে ধরা খাবি?’

নাফিজ নিরুত্তর।সে জানত না আরহাম বিষয়টা নিয়ে এভাবে ঘাটাবে।কিংবা আরহাম তার চেহারা মনে রাখবে।অতো দূর পর্যন্ত ভাবলে সে নিশ্চয়ই এতো অবলীলায় এই কাজটা করত না।

আরহাম সজোরে তার গালের দুই পাশ চেপে ধরে ক্ষেপাটে সুরে বলল,’তোর এই সামান্য টাকার লোভে একটা মেয়ে কি পরিমান হেনস্তা হচ্ছে জানিস?বিনা দোষে মেয়েটা কি পরিমান মানসিক নিপীড়নের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে একবার চিন্তা করেছিস?একটা মেয়ে,যার কোনো দোষ নেই,যে কিচ্ছু জানে না,যার কোনো রাজনৈতিক মোটিভ নেই,সেই মেয়েটাকে তুই কেবল পাঁচ পাঁচ দশ হাজারের জন্য এমন নরক যন্ত্রণা দিয়ে দিলি?জানিস ঐ মেয়েটা কিসের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে?কেমন আছে?’

বলতে বলতেই তার মুখ র’ক্তিম হয়।মুখোভঙ্গি হয় আগের চেয়েও হিংস্র।ভালোমন্দ কিছু না ভেবেই সে সোজা নাফিজের গলা চে’পে ধরে।ক্রোধান্বিত হয়ে চেঁচিয়ে উঠে,’একেবারে পুতে দেব শা’লা।শু’য়োর একটা।শুধুমাত্র তোর জন্য আজকে পরীর এই অবস্থা।ফাহাদ আর তার দলের ছেলেরা তো জানোয়ার।সেটা আগে থেকেই জানি।তুই কলেজের ছাত্র হয়ে ঐ কুকুরদের কথা কেন শুনেছিস?’

নাফিদ নিভু নিভু চোখে একটু সামনে তাকানোর চেষ্টা করে।তার গলা দিয়ে শব্দ বের হচ্ছে না ঠিকঠাক।কেবল ঘট ঘট শব্দ হচ্ছে।তার চোখ কোটর ছেড়ে বেরিয়ে আসার উপক্রম।ওয়াজিদ দ্রুত ছুটে যায় তাদের দিকে।আরহাম কে টেনে তার থেকে দূরে সরায়।খানিকটা ধমকের সুরে বলে,’হচ্ছে টা কি আরহাম?ছাড় ওকে।’

আরহাম হাত ছাড়িয়ে এক দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকে দেখল।ওয়াজিদ তার কাঁধে হাত রেখে বলল,’খামোখা মারামারি তে যাচ্ছিস কেন?এতে কি নবনীতার সম্মান ফিরে আসবে?যেটা করলে নবনীতা বেটার ফিল করবে সেটাই কর।’

আরহাম কয়েকবার জোরে জোরে শ্বাস ছেড়ে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে।ফুঁসতে থাকা শরীরটা ধীরে ধীরে শান্ত হয়।গভীর চোখে একবার নাফিজ কে দেখেই সে বরফ শীতল কন্ঠে বলল,’আমাকে যা যা বলেছিস,পুরোটা কলেজ অথোরিটির সামনে গিয়ে আবার বলবি।যদি একটা শব্দও এদিক সেদিক করেছিস,তো দেখিস আমি তোর কি করি।’

সে একটু পিছিয়ে গেল।নাফিজ কে শেষ আরেকবার দেখেই নাক ছিটকে বলল,’শা’লা ছাচড়া! দশ হাজারের জন্য আমার পিছে লেগেছে।আমি কি এতোই সস্তা?’
.
.
.
.
সিটি কলেজের টিচার্স রুমে তখন মোটামুটি সব শিক্ষকই উপস্থিত ছিলেন।ক্লাস ইন্টারভাল চলছে।সবার সামনেই চায়ের কাপ রাখা।চুমুকে চুমুকে নানারকম আলোচনা চলছিল।মহিলা শিক্ষকরা এক জায়গায় জটলা বেঁধে গুনগুন করে যাচ্ছিল।ঠিক তখনই কলেজের পিয়ন কাদের একপ্রকার দৌঁড়ে দৌঁড়ে টিচার্স রুমে এলো।এসেই হড়বড় করে বলল,’আরহাম স্যার এসেছেন কলেজে।প্রিন্সিপাল স্যার বলেছেন সবাই কে ঠিক ঠাক হয়ে বসতে।উনি একটু পরেই এখানে আসবেন।’

মুহুর্তেই পুরো ঘরে সাড়া পড়ে গেল।আড্ডা ছেড়ে সবাই যে যার কাজে লেগে গেল।নিজেদের ডেস্ক গুছিয়ে পরিপাটি হয়ে যার যার চেয়ারে বসল।কোনো নোটিশ ছাড়াই কলেজে এমপি এসেছে,এটা মোটেই স্বাভাবিক ব্যাপার না।

আরহাম ধুপধাপ পায়ে টিচার্স রুমে প্রবেশ করল।তার পেছন পেছন আসলো কলেজ প্রিন্সিপাল আর তোফায়েল।তাকে দেখেই সবাই উঠে দাঁড়িয়ে সালাম দিলো।আরহাম সবার উদ্দেশ্যে ছোট করে সালামের জবাব দেয়।

কোনোরকম ভণিতা কিংবা মেকি সৌজন্যে না দেখিয়ে শুরুতেই সে প্রশ্ন ছুড়ে,’নিতু ম্যাডাম কে এখানে?’

পুরো রুমের শিক্ষকরা তার প্রশ্ন শুনেই ঘাড় ঘুরিয়ে একজনের দিকে তাকায়।তাদের সবার দৃষ্টি অনুসরণ করে আরহামও সেদিকে তাকায়।দেখতে পায় একজন অল্পবয়স্কা রমণীকে।যার পরণে সবুজ রঙের শাড়ি।সবার গোল গোল চোখ দেখে সে কিছুটা অপ্রস্তুত,আবার কিছুটা দ্বিধাগ্রস্থ।

আরহাম এগিয়ে যায় তার দিকে।ঠিক মুখোমুখি হতেই বুকে হাত বেঁধে জানতে চায়,’মিসেস নিতু সারোয়ার।আপনাকে কিছু প্রশ্ন করতে পারি?’

নিতু মাথা নামিয়েই মিনমিনে গলায় জবাব দেয়,জ্বী।

আরহাম একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আবারো নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে।দুই হাত মুঠ করে ভেতরের ক্রোধটুকু হজম করে নেয়।ওয়াজিদ তাকে বার বার সাবধান করেছে কোনোরকম হঠকারিতা না করতে।সেও ভেবে নিয়েছে অকারণে সিন ক্রিয়েট করবে না।সে একজন পলিটিক্যাল পারসন,পাবলিক ফিগার।জনসম্মুখে যে কোনো কিছু তাকে ভেবে চিন্তে করতে হয়।সে মিসেস নিতুকে ঠান্ডা গলায় প্রশ্ন করে,’উনিশ তারিখ বিকেলে এই রুমে একটা ঘটনা ঘটেছিল।আপনি নিশ্চয়ই জানেন।’

নিতু বাড়তে থাকা হৃদস্পন্দন কে নিজের নিয়ন্ত্রণে আনতে আনতে জবাব দেয়,’জ্বী।’

‘ওকে ফাইন।সেদিন অনেকেই টিচার্স রুমে এসেছিল।টিচার্স রুমে আমি আর আমার ওয়াইফ ছিলাম।আই ওয়াজ ড্রাঙ্ক এন্ড শী ওয়াজ টোটালি ফাইন।রাইট?’

নিতু এবার আর উত্তর দিলো না,উল্টো নামিয়ে রাখা মাথাটা আরো একটু নামিয়ে নিল।

আরহাম শক্ত মুখে পুনরায় ডাকল,’মিসেস নিতু!’

তার কন্ঠে যেই চাপা ধমক মিশে ছিল,সেই ধমকেই নিতু ঈষৎ কেঁপে উঠল।কাচুমাচু হয়ে বলল,’জ্বী স্যার।’

‘সেদিন সবাই দেখেছে।ইউ ওয়্যার ইন দ্যা সেইম রুম।এক ঘরে ছিলাম আমরা।কিন্তু আমরা কি খুব বেশি অপ্রীতিকর অবস্থায় ছিলাম?মাই হেড ওয়াজ অন হার শোল্ডার(আমার মাথা তার কাঁধে ছিল)।এই দৃশ্য তো পার্কে গেলে অহরহই দেখা যায়।এই সাধারণ বিষয়টি কে আপনি কতোখানি টেনেছেন আমি কি নিজের মুখে বলব নাকি আপনি নিজে বলবেন?’

অতিশয় শীতল কন্ঠের রেষানলে পড়ে নিতুর সমস্ত শরীর হিম হয়ে আসে।তিরতির করে কাঁপতে থাকা শরীরটা সময়ের সাথে একেবারে ঠান্ডা হয়ে এলো।টের পেল গলা দিয়ে শব্দ আসছে না।বলার মতো কিছু তার কাছে নেই।

আরহাম তার থেকে চোখ সরিয়ে পুরো রুমে থাকা বাকি মানুষদের দেখে।খানিকটা উঁচু স্বরে বলে,’এই মহিলা,অর্থাৎ মিসেস নিতু ঠিক কারণে জানি না,সেদিনের ঘটনাকে সম্পূর্ণ বিকৃত করে,রংচং মাখিয়ে এমন নোংরা ভাবে মানুষের কাছে উপস্থাপন করেছে যে তার কথা শুনে আমার মনে হচ্ছিল নবনীতা আর আমি কতো কিছুই না করে ফেলেছি।জাস্ট এক রুমে ছিলাম আমরা।এছাড়া নবনীতার সাথে এমন পরিস্থিতিতে কখনোই কোনোদিনই আমাদের দেখা যায়নি।কিন্তু মিসেস নিতুর ভাষ্য মতে নবনীতার এপার্টমেন্টে নাকি প্রায়শই আমার যাতায়াত হতো।আমি আর নবনীতা নাকি আগেও বহুবার ধরা খেয়েছি।লাইক সিরিয়াসলি?ধরা খেয়েছি মানে?আমরা কি চোর নাকি ডাকাত যে ধরা খাবো?শুধু তাই না।মিসেস নিতু সোশাল প্ল্যাটফর্মে এই কথাও বলেছেন যে নবনীতা নাকি সব নেতাদের সাথেই সুসম্পর্ক বজায় রাখে।সে নাকি,,,’

আরহাম আর বাক্যটা শেষ করতে পারল না।তার মুখ দিয়ে বের হচ্ছে না।সেসব ভাবলেই শরীর ঘিন ঘিন করে।সে নিজেকে আরেক দফা সামলে নিয়ে বলল,’একটা মেয়েকে অপদস্ত করতে ইচ্ছে হলো।আর যা নয় তাই বলে দিলাম।ব্যাস হয়ে গেল।তাই না?’

তোফায়েল বড় বড় চোখ করে তাকে দেখল।পুরোটা সময় আরহাম শুধু নবনীতাকে নিয়েই বলল।কোথায়,একবারো তো নিজের জন্য কিছু বলল না।অথচ বিয়ের আগে সে বলেছিল বউয়ের গুন গাওয়া ছেলেদের তার অসহ্য লাগে।অথচ অবাক করা ব্যাপার সে এখন নিজের বউয়ের গুনই গাইছে।

আরহাম নিজের চুল ঠিক করে।থমথমে আর পিনপতন নিরবতা বিরাজ করা কক্ষের মাঝামাঝি দাঁড়িয়ে গাঢ় স্বরে বলে,’একটি মেয়ে নিজের আত্মসম্মান নিয়ে বেঁচে আছে।জীবনের বহু আনন্দের জলাঞ্জলি দিয়ে সে শিরদাঁড়া উঁচু করে দাঁড়ানোর প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে গেছে।সেই মেয়েটাকে চরিত্রহীনার তকমা দিয়ে পুরোপুরি ভেঙে দেওয়া হলো।কেন?কারণ তার তো কেউ নেই।মা নেই,বাবা নেই কেউ নেই।তাই না?তাকে কে ডিফেন্ড করবে?যা মন চায় বলে দেই।আওয়াজ তোলার আছেই বা কে?’

রুম ভর্তি টিচাররা একবার চোখ তুলে তাকে দেখে।কেউ কেউ আশ্চর্য হয়ে তার কথা শুনে।পুরো রুমভর্তি মানুষদের আরো বেশি বিস্মিত করে দিয়ে আরহাম গাঢ় স্বরে বলে উঠে,’যারা মনে করে পরীর কেউ নেই,তাই তাকে যা খুশি বলা যাবে।তারা সবাই জেনে রাখুক পরীর জন্য আমি আছি।আমি পরীর হাসবেন্ড।আমার স্ত্রীর গায়ে কালি ছুড়লেই সে নোংরা হবে এটা ভাবার কোনোই কারণ নেই।পালক ছিঁড়ে ফেললেই ময়ুর কাক হয়ে যায় না,ডানা থাকলেই প্রজাপতি পাখি হয় না।যে যা সে তাই থাকে।’

প্রিন্সিপাল আকরামুল হক ব্যস্ত হয়ে তার দিকে এগিয়ে যান।অমায়িক স্বরে বলেন,’নবনীতা ম্যামকে তো কটু কথা বলার কোনো কারণ দেখছি না।সিসি টিভি ফুটেজে স্পষ্ট দেখা গেছে উনি রুমে ঢুকার পর নাফিজ নামের একটি ছেলে বাইরে থেকে তার দরজা বন্ধ করেছে।যেহেতু দরজা বাইরে থেকে বন্ধ ছিল,সেক্ষেত্রে এসব কথা বলার তো প্রশ্নই আসে না।’

আরহাম তপ্ত শ্বাস ছাড়ে।পুনরায় মিসেস নিতুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে তাকে সতর্ক করে বলে,’আপনার চাকরি থাকবে নাকি থাকবে না জানি না।আমার মতে এমন গুজব ছড়ানো মানুষের চাকরি না থাকাই ভালো।যাকগে,আপনার চাকরি নিয়ে আমার মাথাব্যথা নেই।কিন্তু আপনি যদি জনসম্মুখে এসে নিজের অপরাধ স্বীকার না করেন,তাহলে আমি আপনার বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নিব।’

নবনীতা কে নির্দোষ প্রমাণ করা খুব বেশি কঠিন ছিল না।সমস্ত কিছু নবনীতার পক্ষেই কথা বলছিল।নাফিজের অকপট স্বীকারোক্তি,মিসেস নিতুর ভুল স্বীকার করে ক্ষমা প্রার্থনা,সিসি টিভি ফুটেজ অনুযায়ী নবনীতার সবকিছুর সাথে অসম্পৃক্ততা-সবকিছুই প্রমাণ করে দেয় নবনীতা নূরের নামে যা কিছু ছড়ানো হয়েছে তার সবটাই ভিত্তিহীন,বানোয়াট।পুরোটাই স্রেফ গুজব।

আরহাম সিটি কলেজে তার কাজ শেষ করেই আবার গাড়িতে উঠে। মোতাহের তাকে কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই সে নিজ থেকে বলে উঠে,’সমতট লেনে যাও মোতাহের।’

****

তিনদিন জ্বরের ঘোরে আচ্ছন্ন হয়ে থাকার পর চতুর্থ দিন নবনীতা কিছুটা সুস্থ বোধ করল।এই তিনদিন সে হাতে গোনা কয়েকবার নিজের ঘর থেকে বেরিয়েছে।তার শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করার জন্য শাহানা খাতুন প্রায় প্রতিদিনই দুইবার করে তার বাসায় আসতেন।আরহামই তাকে এই কয়েকদিন নবনীতার খেয়াল রাখার দায়িত্ব দিয়েছে।

আগের দুই দিন তাকে স্যালাইন দিতে হয়েছিল।একবার অবশ্যও অক্সিজেনও নিতে হয়েছে।এখন সে কিছুটা সুস্থ।জ্বরও কমে গেছে অনেকটা।সে ঘুম ভাঙার পরেই তার পাশে শাহানা খাতুন কে দেখে ম্লান হাসল।অসুস্থ গলায় বলল,’আন্টি আপনি আজকেও এসেছেন?’

শাহানা খাতুন তার মাথায় হাত রাখেন।মিষ্টি স্বরে বললেন,’তুমি একেবারে চাঙা না হওয়া পর্যন্ত রোজই আসবো আমি।’

সেদিন বিকেলে নবনীতা নিজে নিজেই পুরো বাড়ি হাঁটার শক্তি পেল।শুভ্রা তখন তার কোচিং-এ,চিত্রা কে রিমি নিজের সাথে তার বাসায় নিয়ে গেছে দুপুরের দিকে।বলেছে সন্ধ্যার দিকেই আবার চলে আসবে।পুরো বাড়িতে কেবল নবনীতা আর সাদেক সাহেব বাদে আর কেউ নেই।নবনীতা বসার ঘরের সোফাতে চুপচাপ বসেছিল।তার মাথায় অসংখ্য চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছিল।তার কি করা উচিত এ নিয়ে সে দ্বিধান্বিত।রাগের বশে সে চাকরি ছেড়ে দিতে পারে,এপার্টমেন্ট ছেড়ে দিতে পারে।কিন্তু রাগ দিয়ে জীবন চলে না।সবকিছু ছেড়ে সে যাবে কোথায় এই চিন্তাও তার করতে হবে।এই জীবনটা তার হলেও এই জীবনের সব সিদ্ধান্ত সে নিজের মন মতো নিতে পারে না।তার সাথে আরো কয়েকটা প্রাণ জুড়ে আছে।যেই প্রাণগুলোর দায়িত্ব নবনীতা নিজের কাঁধে নিয়েছে।যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে হলে তার তাদের কথা ভাবতে হয়।

তার ভাবনার মাঝেই কলিং বেল বেজে উঠে।নবনীতা কিছুটা চমকায়।এসময়ে কে আসবে?সে রুগ্ন শরীরটা কোনোরকমে টেনে টেনে দরজার কাছে যায়।আলতো হাতে লক ঘুরিয়ে দরজা খুলে।দরজার অন্য পাশে দাঁড়ানো মানুষদের দেখে সে আগের চেয়েও বেশি আশ্চর্য হয়।

লুবনা আর মিসেস ইয়াসমিন এসেছে তার এপার্টমেন্টে।তাকে দেখামাত্রই মিসেস ইয়াসমিন সবেগে ছুটে এসে তাকে জড়িয়ে ধরলেন।নবনীতা অকস্মাৎ জড়িয়ে ধরায় কয়েক কদম পিছিয়ে গেল।পরক্ষণেই আবার তাল সামলাতে নিজেও তার পিঠে এক হাত রাখল।

মিসেস ইয়াসমিন জড়ানো গলায় বললেন,’নবনীতা,তুমি আমাকে ভুল বুঝো না মা।আমি তোমায় অনেক ভালো মন্দ বলে ফেলেছি।তাও কোনো যাচাই বাছাই ছাড়া।তুমি আমাকে মাফ করে দাও মা।আমি রাগের মাথায় একটা ভুল করে ফেলেছি।’

নবনীতা ফ্যালফ্যাল চোখে সবকিছু দেখে।মিসেস ইয়াসমিন তাকে ছেড়ে দিয়ে হাত জোড় করে মাফ চাইল।নবনীতা কেবল ক্লান্ত গলায় বলল,’মাফ চাওয়ার প্রয়োজন নেই আন্টি।এসব নিয়ে আর আমার কোনো অনুভূতি কাজ করে না।’

সে চুপচাপ সোফায় গিয়ে বসে।লুবনা বসে তার ঠিক পাশে।তাকে দেখতেই লুবনা মলিন মুখে বলে,’প্লিজ আপু।আমার সাথে আর রাগ করে থেকো না প্লিজ।’

নবনীতা তার মাথায় হাত ছোঁয়ায়।মিষ্টি হেসে বলে,’না লুবনা।তোমার সাথে আমি কখনোই রাগ হয়নি।’

মিসেস ইয়াসমিন তার কাছে এগিয়ে এসে তার হাতে একটা আইসক্রিমের বক্স আর কয়েকটা মিষ্টির প্যাকেট ধরিয়ে দিলেন।নবনীতা আশ্চর্য হয়ে বলে এসব কি?
মিসেস ইয়াসমিন তার গালে হাত ছুঁয়িয়ে ভরাট গলায় বললেন,’বাহ রে! তোমার নতুন সংসারে কি খালি হাতে আসবো নাকি?যদিও খুব বেশি কিছু আনতে পারি নি।এই কয়েকটা জিনিসই এনেছি।’

নবনীতা ধিমি স্বরে প্রতিউত্তর করে,’এসবের কোনো দরকার ছিলো না আন্টি।’

মিসেস ইয়াসমিন জোরপূর্বক সবগুলো প্যাকেট তার হাতে চাপিয়ে দিলেন।প্রশস্ত হেসে প্রশ্ন করলেন,’বর কোথায়?’

নবনীতা প্রশ্ন শুনেই ভড়কে গেল।বর কোথায় সে জানে না।বরের সাথে তার কথা হয় নি।বর নিজের কথা ভেঙে রোজ রাতেই তার বাড়ি আসে।আর এসেই তার পাশাপাশি বালিশে হাত পা ছেড়ে ঘুমায়।সে এতোটাই অসুস্থ আর মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত ছিল যে বরের সাথে এই নিয়ে ঝগড়া করারও সময় পায়নি।

সে অপ্রস্তুত হেসে জবাব দেয়,’এই তো আছে।কথা হয়নি আজ।’

সে তাদের সোফায় বসিয়ে রান্নঘরে গেল।বাড়িতে তো মনে হয় না কিছু আছে।কি খেতে দিবে তাদের?তাদের খাবারই তাদের খেতে দিবে?ছিহ! কি লজ্জার বিষয়!

‘হ্যালো সেনোরিটা!’

ডাক শুনেই পেছন ফিরে নবনীতা।অবাক হয়ে প্রশ্ন করে ‘আপনি?’

আরহাম নিঃসংকোচে রান্নাঘরে এলো।জোরে জোরে মাথা নেড়ে বলল,’হ্যাঁ আমি।খবর পেলাম তুমি নাকি মুখে মুখে বেয়াদবি করার ক্ষমতা ফিরে পেয়েছ? তাই চলে এলাম পায়ে পা লাগিয়ে ঝগড়া করতে।ভালো করেছি না বলো?’

নবনীতা কপাল কুঁচকায়।অন্যদিকে ফিরে বিরক্তি ধরা গলায় বলে উঠে,’খুব ভালো করেছেন।’

কথা শেষ করেই সে আরহামের হাতের খাবারের প্যাকেট গুলো দেখে।কপালে ভাঁজ ফেলে জানতে চায়,’এসব কি?’

আরহাম ঝটপট জবাব দেয়,’এসব খাবার।চিবিয়ে চিবিয়ে খায়।’

নবনীতা অধৈর্য হয়ে বলল,’সেটা আমি জানি।কিন্তু এতো কিছু কার জন্য এনেছেন?’

‘আপাতত লুবনা আর তার মা কে দাও।বিকেলে শুভ্রা আর চিত্র বাড়ি এলে তাদের কেও দিবে।’

নবনীতা মুখের উপর কিছু বলতে গিয়েও আর বলল না।বসার ঘরে লুবনা আর মিসেস ইয়াসমিন অনেকক্ষণ যাবত বসে আছেন।সে তাড়াতাড়ি খাবার গুলো প্লেটে নিয়ে বসার ঘরের দিকে এগিয়ে যায়।টি টেবিলে সেগুলো রেখে সে সোফায় গিয়ে বসল।আরহামও হেলেদুলে গুনগুন করে হেঁটে এসে ঠিক তার পাশটায় বসল।নবনীতা কটমট চোখে একবার তাকে দেখে।তার চোখ রাঙানিতে আর যাই হোক,শাহরিয়ার আরহাম বিচলিত হয় না।সে উল্টো আরো আয়েশ করে বসল।নবনীতা গোমড়া মুখ করে অল্প একটু সরে এলো।আরহাম কথার ফাঁকেই উঠে এসে পুনরায় সে দূরত্বটুকু মিলিয়ে নেয়।নবনীতা অগ্নিচোখে তাকে দেখে।দাঁত কিড়মিড় করে বলে,’বেশি বেশি হচ্ছে কিন্তু।এখনো আগের হিসেব কিছু বাকি আছে।’

আরহাম সেসব উড়িয়ে দিয়ে এক গাল হেসে বলল,’বেশি বেশি করাই আমার স্বভাব।আর আগের হিসেব আমারও বাকি আছে।রাতে সব হিসেব হবে।এক চুলও ছাড় দেওয়া হবে না।’

‘সহমত।’

‘আমিও সহমত।’

লুবনা আর তার মা আরো কিছুক্ষণ থেকেই চলে গেল।শুভ্রা একটু আগে বাড়ি ফিরেছে।চিত্রা আর রিমি এখনো আসেনি।নবনীতাকে আরেক দফা বিস্মিত করে দিয়ে সে রাতে সিটি কলেজের প্রিন্সিপাল আর দু’জন শিক্ষক তার বাড়ি এলেন।একজনের নাম সুপর্ণা,অন্যজনের নাম নিতু।

প্রিন্সিপাল আকরামুল হক প্রচন্ড বিনয়ী ভঙ্গিতে তার কাছে ক্ষমা চাইলেন।নবনীতা লোকজনের এমন হঠাৎ পরিবর্তনে হকচকিয়ে যায়।সে দ্রুত হাত নেড়ে বলে,’না না প্লিজ।হাত জোড় করার কিছু নেই।আপনি আমার অনেক সিনিয়র।আপনার এসবের সাথে কোনো সম্পৃক্ততা নেই স্যার।’

‘না থাকুক।আমার কলেজে ঘটনা টা ঘটেছে।আমার আরো আগেই পদক্ষেপ নেওয়া উচিত ছিল।যাই হোক,নাফিজ সবকিছু স্বীকার করেছে।নিতুও নিজের ভুল স্বীকার করেছে।আশা করি তোমাকে আর মিথ্যা অপবাদ নিয়ে চলতে হবে না।সত্যটা সবাই জেনে গেছে।তুমি কোনো অপরাধ করো নি নবনীতা।নিজেকে কখনোই সেরকম কিছু ভাববে না।তোমার জন্য আমার অনেক অনেক শুভকামনা।’

এতো কিছুর উত্তরে নবনীতা কেবল বোকা বোকা হাসে।জীবনটা হুট করেই রোলার কোস্টারের রাইডের মতো হয়ে গিয়েছে।হঠাৎ একেবারে একটার পর একটা ভালো ঘটনা তাকে খুশিতে আসমানে তুলে দিচ্ছে।তারপরই একটার পর একটা বাজে ঘটনা তাকে এক আছাড় দিয়ে জমিনে এনে ফালাচ্ছে।আপাতত সে আসমানে আছে।সন্ধ্যার পর পর একটার পর একটা মানুষ তার বাড়িতে আসতে থাকল।হাত জোড় করে নবনীতার কাছে ক্ষমা চাইল।অথচ নবনীতা এদের চিনেও না।এরা নিজেরাই নিজেদের ভুল স্বীকার করে মাফ চেয়েছে।নবনীতা আশ্চর্য হয়।এসব হচ্ছে টা কি?তার মতো এতো সাধারণ একটা মানুষের সাথে এতো নামি দামি লোকজন কেন দেখা করতে আসছে?এতো ভিআইপি ট্রিটমেন্টের যোগ্য তো সে না।সে সবাই কে ‘ইটস ওকে’ বলতে বলতে ক্লান্ত।শেষটায় সে শুধু সৌজন্যসূচক হেসে মাথা নাড়ল।আর কতোবার ইটস ওকে বলবে?

আরহাম দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তার চোখে মুখের উজ্জ্বলতা দেখে।মলিন আর মূর্ছা যাওয়া মুখটা হঠাৎই কেমন আনন্দ আর উচ্ছ্বাসে জ্বল জ্বল করছে।তার চোখের ঝলমলে দৃষ্টি বলে দিচ্ছে তার মন ভালো।আরহাম মন ভরে সে দৃশ্য দেখে।সে চায় তার মন সবসময়ই ভালো থাকুক।

সবাইকে বিদায় করার পর নবনীতা অবশিষ্ট খাবার গুলো সব টেবিলে বেড়ে দেয়।সবার খাওয়া শেষে সবকিছু গুছিয়ে সে ক্লান্ত পায়ে হেঁটে নিজের ঘরে গেল।ঘরে যেতেই সে দেখল আরহাম খাটের একপাশে শুয়ে আছে।তার হাতে ফোন।একমনে সে স্ক্রল করেই যাচ্ছে।

নবনীতা তার মুখোমুখি এসে দাঁড়ায়।চাপা স্বরে বলে,’কি সমস্যা আপনার?’

আরহাম স্ক্রিন থেকে চোখ সরায়।অবাক হয়ে শুধায়,’আমার আবার কিসের সমস্যা?’

‘আপনি এখানে শুয়ে আছেন কেন?’

‘তো কোথায় শুবো?’

‘অদ্ভুত! রোজ রোজ এদিকে কি?আপনার ফ্ল্যাট বলে যা খুশি করবেন নাকি?আপনি আপনার বাড়ি যান।’

আরহাম চোখ বড় বড় করে বলল,’এতো বড় অপমান! তুমি আমায় অপমান করছ?’

নবনীতা শান্ত চোখে তাকে দেখে।গম্ভীর মুখে জবাব দেয়,’জ্বী অপমান করছি।লজ্জা থাকলে এরপর থেকে যখন তখন বাড়ি আসবেন না,আর আমার খাটে ঘুমাবেন না।যান নিজের বাড়ি যান।’

আরহাম তৎক্ষনাৎ খাট ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো।দারাজ কন্ঠে বলল,’তুমি আমায় অপমান করে তাড়িয়ে দিচ্ছ?’

নবনীতা খাটের এক কোণায় গিয়ে বসে দায়সারাভাবে জবাব দেয়,’জ্বী তাড়িয়ে দিচ্ছি।মানসম্মান থাকলে আর এমন ডেইলি ডেইলি এখানে আসবেন না।’

আরহাম গজরাতে গজরাতে জবাব দেয়,’তুমি আমাকে এমন করে বলতে পারলে?যাও আর আসবো না।জীবনেও কোনোদিন এখানে পা দিবো না।তোমার এদিকে না আসলেই কি?আমার কি জায়গার অভাব আছে?’

‘সেটাই তো।অভাব নেই।তবুও কেন রোজ রোজ এখানে এসে বসে থাকেন বুঝি না।’

আরহাম চোখ পাকিয়ে তাকে দেখে।দরজার দিকে গিয়ে নবনীতাকে ডেকে বলে,’আমি কিন্তু চলে যাচ্ছি পরী।’

‘জ্বী যান।’

‘আর কখনো আসবো না কিন্তু।’

‘অনেক উপকার হবে।ধন্য হবো আমি।’

‘আমি সিরিয়াস।’

‘আমিও সিরিয়াস।এখন যান।’

আরহাম হনহনিয়ে বেরিয়ে গেল।লিফটের বাটন চেপেই রাগে গজ গজ করে বলল,’যাহ আর আসবো না তোর ফ্ল্যাটে।ভালো ব্যবহার করি দেখে আমার কোনো দাম নাই।এবার আর ডাকলেও আসবো না।মরে ভূত হয়ে গেলেও আসবো না।কিছুতেই আসবো না।হুহ।’

চলবে-

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে