কোনো এক শ্রাবণে পর্ব-২৬ [২]

0
27

#কোনো_এক_শ্রাবণে [দ্বিতীয় অধ্যায়]
লেখনীতে #মেহরিমা_আফরিন

(২৬)[প্রথম অংশ]

বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হওয়ার পর রিমি ব্যস্ত হয়ে পড়ল খাবার দাবারের আয়োজন নিয়ে।সারাহ চারদিক দেখে ঘাম মুছতে মুছতে হাঁসফাঁস করে বলল,’কি একটা অবস্থা! এসি পর্যন্ত নেই এখানে।’

তাসনুভা তার কথা শুনেই মুখ ভেংচায়।মনে মনে বিড়বিড় করে,’ফকিন্নি একটা!’

নবনীতা বিয়ের যাবতীয় কাজ শেষ হতেই চুপচাপ উঠে নিজের ঘরে চলে গেল।চিত্রা হেঁটে গিয়ে বসল ঠিক আরহামের পাশে।আরহাম তার চুলে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল,’কেমন আছো চিত্র?’

চিত্রা হাসল।মাথা নেড়ে জানাল সে ভালো আছে।আরহাম আগ্রহী হয়ে জানতে চাইল,’তোমার এখন কেমন লাগছে চিত্র?’

চিত্র দুই হাত প্রসারিত করে উৎফুল্ল কন্ঠে বলল,’এতো বেশি ভালো।তুমি এখন থেকে সত্যি সত্যিই আমার ভাইয়া।’

আরহাম তাকে তার এক কোলের উপর বসিয়ে টুপ করে তার দুই গালে চুমু খেয়ে হাসি হাসি মুখ করে বলল,’একদম একদম।আজ থেকে আমি অফিসিয়ালি তোমার আরাম ভাই চিত্র।’

____

শাড়ির আঁচল রিমিকে ভীষণ বিরক্ত করছিল।সে অবশেষে বিক্ষিপ্ত মেজাজে আঁচলটা কোমরে গুজে নিল।বসার ঘরটা কেমন নোংরা দেখাচ্ছে।সবাই এখন টেবিলে বসে খাচ্ছে।শারমিন তাদের বেড়ে দিচ্ছে সবকিছু।এই ফাঁকে রিমি দ্রুত ঝাড়ু নিয়ে বসার ঘরটা একটু ঝেড়ে নিল।ঝাড়া শেষেই সে চোখ বুলিয়ে একনজর পুরো ঘর দেখল।দেখেই গর্ব করে বলল,’সাব্বাশ রিমি।কি চমৎকার কাজ করিস তুই!’

সে ঝাড়ু টা কাঁধের উপর রেখে পেছন ঘুরল।ওয়াজিদ খাওয়া শেষে টিস্যু দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে কেবলই বসার ঘরে এসেছিল।রিমি এই ঘরে আছে জানলে সে কোনোদিনই আসত না।আসা মাত্র কোথা থেকে একটি ঝাড়ু শূন্যে ভেসে তার কাঁধে এসে ধাক্কা খায়।

সে ধাক্কা খেয়েই হকচকিয়ে উঠে।তবে সে চোখ বন্ধ করে বলে দিতে পারে এই কাজ কার।সে থমথমে মুখে সামনে তাকায়।রিমি হতভম্ব হয়ে গোল গোল মুখ করে তাকেই দেখছে।সে মুখ খোলার আগেই ওয়াজিদ একটানে বলে উঠে,’সরি ভাইয়া।মিস্টেক হয়ে গেছে।নেভার মাইন্ড।’

রিমি থতমত খেয়ে মুখ বন্ধ করে নেয়।কি অদ্ভুত! সে এটাই বলতে যাচ্ছিল।অথচ ওয়াজিদই নিজ থেকে সেটা বলে দিয়েছে।তার হতবাক চাহনি কে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে ওয়াজিদ সোফায় গিয়ে বসল।তাসনুভা বসার ঘরে এসেই রিমি কে দেখামাত্র বলল,’সে কি! তুমি এই শাড়ি পরেই এতো কাজ করছ?’

ওয়াজিদ একটা ম্যাগাজিন হাতে নিয়ে বসেছিল।সে তাসনুভার কথা শুনতেই ম্যাগাজিন থেকে চোখ সরায়।একবার রিমিকে দেখে।দেখতেই একবার মুখ টিপে হাসল।কোমরে আঁচল গুজে ঝাড়ু হাতে তাকে অদ্ভুত দেখাচ্ছে।সে আনমনে ম্যাগাজিনের পাতা উল্টাতে উল্টাতে বিড়বিড় করে বলে,’পুরাই কাজের বেটি সখিনা।’

রিমির সাথে ওয়াজিদের নেভার মাইন্ড রিলেশন তখনো চলমান।সে খাবার শেষে সবাইকে ক্ষীর দিচ্ছিল।সবাই ঠিক মতোই দেখেশুনে হাতে নিল।একমাত্র ওয়াজিদ ম্যাগাজিনে চোখ রেখে আন্দাজে বাটিটা হাতে নিল।সে ঠিক মতো ধরার আগেই রিমি বাটিটা ছেড়ে দিলো।ফলাফল-সমস্ত ক্ষীর গিয়ে পড়লো ওয়াজিদের কোলের উপর।

রিমি আঁতকে উঠল।পরক্ষণেই চেঁচিয়ে উঠে বলল,’এইবার আপনার দোষ।একটু দেখে নিবেন না?’

ওয়াজিদ একবার নিজের কোল,আর একবার রিমির মুখ দেখল।তারপরই দাঁত কিড়মিড় করে বলল,’তুমি এরপর থেকে আমার ধাঁরের কাছেও আসবে না।গর্দভ একটা!’

রিমি তেঁতেঁ উঠে কিছু বলতেই যাচ্ছিল,কিন্তু হঠাৎই কিছু মনে পড়ায় সে থেমে গেল।ওয়াজিদ তার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক ফোরামের সদস্য।কোনো কাজ লাগলে তার কাছেই যেতে হবে।খামোখা ঝগড়া করে সম্পর্ক খারাপ করে লাভ নেই।শেষে ভোগান্তি ঐ রিমিকেই পোহাতে হবে।

***

‘হচ্ছে টা কি শুভি?আধঘন্টা ধরে টানাটানি করছিস।কানা নাকি তুই?’

নবনীতার গায়ের সমস্ত গয়না শুভ্রা অতি সন্তর্পণে খুলে এনেছে।কেবল ঝাপটা টা এমন ভাবে চুলের সাথে আটকে গেছে যে শুভ্রার পক্ষে সেটা এক টানে বের করা সম্ভব হচ্ছিল না।সে মুখ কাচুমাচু করে বলল,’একটু ধৈর্য ধরো আপাই।হয়ে যাবে।’

নবনীতা চটে গিয়ে বলল,’সেটা তো সেই তখন থেকে শুনছি।হয়ে যাবে,হয়ে যাবে।আর কখন হবে?তাড়াতাড়ি কর।’

শুভ্রা হতাশ চোখে তার বোনকে দেখে।বিয়ের পর সে একছুটে নিজের ঘরে এসেছে।এসেই নিজের গয়না নিয়ে টানাটানি শুরু করেছে।কানের দুল নিয়ে এমন টান দিচ্ছিল যে শুভ্রা ছুটে না এলে সে নির্ঘাত কান ছিঁড়ে সেটা বের করে আনতো।

অবশেষে শুভ্রা সক্ষম হয়েছে ঝাপটা টা তার মাথা থেকে আলাদা করতে।নবনীতা অলংকার মুক্ত হতেই দ্রুত উঠে দাঁড়ায়।শাড়ির কুচি সামলে আলমারির দিকে এগিয়ে যায়।শুভ্রা হাতে থাকা গয়না গুলো নবনীতাকে দেখিয়ে বলল,’এগুলো কি করব আপাই?’

নবনীতা আলমারিতে কাপড় খোঁজার ফাঁকে একবার ঘাড় ঘুরিয়ে সেদিকে দেখে।তার থমথমে মুখ দেখেই শুভ্রা তব্দা খায়।নবনীতা বরফ শীতল গলায় উত্তর দেয়,’এগুলো সব খেয়ে ফেল।’

বলেই আবার সে নিজের কাজে মন দেয়।আলমারি ঘেটে একটা সাদামাটা জামা বের করে ওয়াশরুমের দিকে এগিয়ে যায়।শুভ্রা তার হাতের জামা দেখেই মুখ কুঁচকায়।বিয়ের দিন কেউ এমন জামা পরে?যাক গে,বিয়ে যে করেছে এটাই তো অনেক।জামা নিয়ে বললে আবারও একটা ত্যাড়া উত্তর দিবে।শুভ্রা গয়না গুলো বাক্সে রেখে রান্নাঘরে গেল।রিমি আপু একা একা সব করছে।সে সাহায্য করলে কাজ একটু এগিয়ে যাবে।

নবনীতা লম্বা সময় নিয়ে গোসল করে যখন বের হলো,তখন দেয়াল ঘড়িতে সময় দেখাচ্ছিল বিকেল পাঁচটা পনেরো।নবনীতা খাটের উপর রাখা ওড়না টা গায়ে চাপিয়ে বসার ঘরের দিকে উঁকি দেয়।সবাই সেখানেই আছে।রিমি আবার তাদের জন্য খাবারও অর্ডার করেছে।

নবনীতা একবার যাবে ভেবেও পরে আর গেল না।তাসনুভার সাথে একটু কথা বলতে ইচ্ছে হচ্ছে।সেদিন মেয়েটা বাড়ি এলো।একটু কথা বলার জন্য কতো অনুনয় বিনয় করল।নবনীতা তো তার দিকে ফিরেও তাকায়নি।তার এখন ইচ্ছে করছে তাসনুভার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলতে।কিন্তু সেটা সম্ভব না।তার কারণ হচ্ছে তাসনুভার বড় ভাই।যে কি-না তাসনুভাকে আগলে ধরে বসে আছে।এখন অবশ্য সে তাসনুভার ভাই না কেবল,তার স্বামীও।নবনীতা তাচ্ছিল্য করে হাসল।এ নাকি স্বামী! একে দেখে মনে হচ্ছে একটু আগে এর বিয়ে হয়েছে?

নবনীতা তাড়াতাড়ি দরজা ভিড়িয়ে নিজের খাটে গিয়ে বসল।তার কি?সে নিজেও তো কোনো বিবাহিত মেয়ের মতো আচরণ করছে না।সে পাখা ছেড়ে দিয়ে বালিশে মাথা রাখে।তার সাথে একটা অদ্ভুত বিষয় হচ্ছে কিছুক্ষণ যাবত।বিগত কয়েকদিন তার কেমন অশান্তি অশান্তি লাগছিল।কিন্তু বিয়ের পর থেকেই সে অশান্তি ভাবটা কেটে গেছে।খুবই অদ্ভুত! তার এখন আরো বেশি কষ্টে থাকার কথা।কিন্তু অবাক করা বিষয় তার অতোটাও খারাপ লাগছে না।উল্টো হালকা লাগছে।কবুল বলার আগেও তার মুখ দিয়ে শব্দ আসছিল না।অখচ বিয়ে হওয়ার পর মনে হচ্ছে এমন কি হয়েছে?বিয়েই তো হয়েছে।সবার হয়,তার হয়েছে।সে তো আর সংসার করছে না।

নবনীতার শান্তি অবশ্য দীর্ঘস্থায়ী হয় নি।সন্ধ্যার পরই রিমির ঘর গোছানো দেখে নবনীতা কপাল কুঁচকায়।অবাক হয়ে বলে,’এতো গোছগাছ করছিস কেন?তোর বিয়ে লেগেছে?’

রিমি গোছাতে গোছাতেই নিরেট স্বরে বলল,’না আমার লাগেনি।তোর লেগেছে।’

নবনীতা হাই তুলতে তুলতে অলস ভঙ্গিতে উত্তর দেয়,’সে তো শেষ ও হয়ে গেছে।’

রিমি আড়চোখে একবার তাকে দেখে।তারপরই মুচকি হেসে বলে,’বিয়ে হয়েছে।বাসর তো আর হয়নি।সেটার ব্যবস্থা করছি।’

নবনীতা এক লাফে উঠে দাঁড়ায়।চেঁচিয়ে উঠে বলে,’কি?বাসর হবে মানে?ইয়ার্কি হচ্ছে নাকি?’

রিমি নির্বিকার হয়ে জবাব দেয়,’না ময়না।কোনো ইয়ার্কি হচ্ছে না।বিয়ের পর সবারই বাসর হয়।ইটস ভেরি সিম্পল ডার্লিং।’

নবনীতা দুই কদম এগিয়ে আসে।নিশ্বাস বন্ধ করে বলে,’রিমি! আমাদের এটা কোনো নরমাল বিয়ে না।বিয়ের সময় এমন কিছু বলা হয় নি।বলেছিল যে যার মতো যার যার ঘরে থাকবো।’

‘সেটা তো থাকবিই।’

‘তাহলে এসব বাসর টাসর কেন?’

‘আরহাম ভাই আজ তোর ঘরে থাকবেন।’

নবনীতা চাপা স্বরে চেঁচিয়ে উঠে,’কিন্তু কেন?’

রিমি তার সামনে তুই হাত জোর করে মাফ চাওয়ার ভঙ্গিতে বলল,’আমি জানি না রে বইন।তুই গিয়ে তোর মামাকে জিজ্ঞেস কর।তোর মামাই আমাকে বলেছে সব করতে।বিয়ের রাতে বর বউ একসাথেই থাকে।এটাই নিয়ম।’

নবনীতা কতোক্ষণ থম মেরে দাঁড়িয়ে রইল।তারপরই জেদ দেখিয়ে বলল,’করব না আমি বাসর।ঐ নেশা’খোরের সাথে এক ঘরে আমি কিছুতেই থাকবো না।’

‘ভেরি গুড।এখন এই ক্যাচাল আমার কাছে না করে তোর মামার কাছে গিয়ে কর।আমাকে বলছিস কেন?’

নবনীতা অসহায় মুখে হেঁটে এসে ধপ করে খাটে বসে পড়ল।আতঙ্কিত চোখে রিমিকে দেখে বলল,’ঐ বদমাশ টা যদি কিছু করে?তখন?’

রিমি তার কথা শুনেই খিলখিল করে কতোক্ষণ হাসল।শেষটায় পেটে হাত চেপে বলল,’বিয়ে হয়েছে তোর নবনী।কিসব যা তা বলছিস।কিছু করে মানে?পা’গল নাকি তুই?’

‘বার বার এক কথা বলবি না তো।আমাদের কোনো স্বাভাবিক বিয়ে হয়নি।এসব নিয়ে আমি একবারও ভাবিনি।’

‘না ভাবলে এখন ভেবে ফেল।’চটপট উত্তর দেয় রিমি।

নবনীতা আশাহত হয়ে কতোক্ষণ খাটে বসে থাকল।মামাকে কিছু বলে লাভ নেই।সে মামাকে বলেছে সে সব কথা শুনবে।নবনীতা ক্লান্ত চোখে পুরো ঘরটা একবার দেখল।খাটের সাইড বক্সের দিকে চোখ পড়তেই সে থামল।সেটার উপর একটা পিতলের ফুলদানি আছে।নবনীতা সেটা নেড়ে চেড়ে দেখে।সে প্রথমে ঐ বদমাশ টা কে মুখ দিয়ে বারণ করবে।তাতেও যদি কাজ না হয় তাহলে সে সোজা এটা দিয়ে তার মাথা ফা’টিয়ে দিবে।সে মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে।সে এটাই করবে।এরপর যা হওয়ার হবে।

***

রাত প্রায় নয়টার দিকে আদি ঘড়ি দেখতে দেখতে উঠে দাঁড়াল।আরহাম তখন সাদেক সাহেবের ঘরের সাথে থাকা বারান্দায় কারো সাথে ফোনালাপে ব্যস্ত।বিকেলের পর থেকেই তার একটার পর একটা ফোন আসছে।সে সেগুলোর জবাব দিতে দিতে হয়রান।

আদি আরো একবার সময় দেখে বলল,’চল আমরা মিলে আরহামকে লুট করি।’

তাসনুভা চোখ তুলে অবাক হয়ে জানতে চায়,’লুট করব মানে?’

‘আহা! শা’লা একটু পরে বউয়ের কাছে যাবে না?আমরা যাওয়ার আগে তার রোড ব্লক করে দিব।মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করব।টাকা না দিলে বউয়ের কাছে যেতে দিব না।’

তাসনুভা আপত্তি করে বলল,’কিন্তু ভাইয়াদের বাসর তো নরমাল বাসর না।’

আদি খ্যাক করে উঠে বলে,’এসব আবার কেমন কথা?নরমাল এব-নরমাল আবার কি জিনিস?বাসর বাসরই।ভেতরে গিয়ে এরা চুলোচুলি করুক,মারামারি করুক,একটা আরেকটা কে খু*ন করে ফেলুক।আমাদের কি?’

আরিশ তার কথা শুনে কিছুটা ভাবুক হয়ে বলল,’ভাইয়া নিজেও তো বউয়ের কাছে যেতে চায় না।সেক্ষেত্রে আমরা বাঁধা দিলে সে তো আরো খুশি হবে উল্টো।’

আদি গালে হাত রাখে।গম্ভীর হয়ে বলে,’রাইট।কথায় যুক্তি আছে।দাঁড়া অন্য কিছু ভাবি।’

আরহাম সব কাজ শেষ করে বারান্দা থেকে বেরিয়ে বসার ঘরের দিকে যেতেই আদি সহ বাকিরা তাকে ঘিরে ধরল।সারাহ বাদে সবাই সেখানে উপস্থিত ছিল।সারাহ দুপুরে কোনোরকমে খেয়েই চলে গিয়েছে।তার নাকি এখানে ভীষণ গরম লাগছে।এসি ছাড়া থাকার তার অভ্যাস নেই।

আরহাম চোখ সরু করে বলল,’কি?সমস্যা কি?’

আদি বুকে হাত বেঁধে বলল,’সমস্যা কিছু নেই।’

‘তাহলে এমন ঘিরে ধরেছিস কেন মৌমাছির মতো?’

আদি কোনো ভূমিকায় গেল না।সোজা হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল,’টাকা দে।’

‘কি?টাকা দিব মানে?কোন সুখে টাকা দিব তোকে?যা সর।’

আরহাম তাকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার আগেই আদি দ্রুত তার দুই কাঁধ চেপে ধরল।আরিশ জেদ ধরে বলল,’না ভাইয়া,আজকে আমাদের টাকা দিতেই হবে।বাসর ঘরে যাওয়ার আগে এমন টাকা দেওয়ার নিয়ম আছে।’

আরহাম তার কথা শুনেই কুটিল হেসে বলল,’কেন কেন?না দিলে কি করবি?আমার প্রাইভেসি নষ্ট করবি?কর।আমার কোনো আপত্তি নাই।’

‘জ্বী না।তোমার প্রাইভেসি নষ্ট করব না।তোমার সিকিউরিটি নিশ্চিত করব।’

আরহাম বিস্মিত হয়ে শুধায়,’আমার সিকিউরিটি আবার কি?’

আদি দায়সারাভাবে জবাব দেয়,’তোর ডন বউ যদি তোকে মে’রে ফেলে?তখন আমরা গিয়ে তোকে বাঁচাবো,বুঝলি?আর টাকা না দিলে মরে ভূত হয়ে গেলেও আমরা তোকে বাঁচাতে যাবো না।হুহ।’

আরহাম স্তব্ধ হয়ে তার কথা শুনে।গুনে গুনে তিন সেকেন্ড পরে সে শব্দ করে হেসে উঠে উপহাস করে বলে,’হোয়াট?সে আমাকে মা’রবে?আর আমি চুপ করে বসে থাকবো?’

ওয়াজিদ আশ্চর্য হয়ে বলল,’তুইও উল্টো আরো কয়েকটা দিবি নাকি?’

আরহাম পাঞ্জাবির কলার টেনে ঠিক করল।ভাব নিয়ে বলল,’শোন।আমি আরহাম।শাহরিয়ার আরহাম।বউ কেমন করে পোষ মানাতে হয় সেটা আমি জানি।’

সে থামল।গোল গোল কয়েক জোড়া চোখের দৃষ্টি তারই দিকে।আরহাম গম্ভীর হয়ে বলল,’মাত্র তো বিয়ে হয়েছে।দেখবি এমন টাইট দিব,গর্জন টর্জন ভুলে সারাদিন শুধু ম্যাও ম্যাও করবে।’

আরিশ কৌতূহলী হয়ে জানতে চাইল,’কে?তুমি না ভাবি?’

আরহাম থতমত খায়।আদি হো হো করে হেসে উঠে বলে,’এক্সাক্টলি।সেটাই জানতে চাইছিলাম।’

আরহাম সেসব কথা গায়ে মাখল না।পরিস্থিতি বেগতিক দেখে তার পকেটে থাকা মানিব্যাগের পুরোটাই তাদের হাতে তুলে দিলো।আদি দুই হাত দিয়ে সেটা বুকের সাথে চেপে ধরল।প্রশস্ত হেসে বলল,’ইশশ শান্তি! যা যা শুভ বাসর মোবারক।ম’রে গেলে জেনে রাখিস আমরা তোকে খুব ভালোবাসতাম।’

আরহাম কুটিল হাসে।এক হাতে তুড়ি মেরে তাচ্ছিল্য করে বলে,’মাত্র তো বিয়ে হয়েছে।এই তেজ এই জেদ আর ক’দিন পর থাকবে না।দেখবি আমি পাত্তা দিব না,তাও নবনীতা আরহাম আরহাম করে হেদিয়ে মরবে।দেখে নিস।’

আরহাম নবনীতার ঘরে ঢোকার আগে তিনবার দোয়া ইউনুস পাঠ করে গায়ে ফু দিলো।বলা তো যায় না।যেই মেয়ে! ঘরে ঢুকতেই দা বটি নিয়ে ঝাপিয়ে পড়তে পারে।

আদি দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।গম্ভীর হয়ে বলে,’ভবিষ্যৎে যে কি হবে,তার একটু আভাস এখনই পাওয়া যাচ্ছে।’

আরহাম কটমট করে বলল,’চুপ থাক।তুই বেশি বুঝিস।’

সে ধীর পায়ে এগিয়ে আস্তে করে দরজার সামনের লক ঘোরায়।আদি পেছন থেকে সতর্ক করে বলল,’সাবধান বন্ধু! বেশি চুটকি ফুটকি বাজাতে যাস না আবার।মেয়ে কিন্তু সুবিধার না।’

আরহাম নবনীতার ঘরে যেতেই আদি দ্রুত তার মানিব্যাগ খুলল।খুলতেই তার চোয়াল ঝুলে গেল।সে আঁতকে উঠে বলল,’কি রে?এটা তো খালি।’

সে পুরো ব্যাগ হাতড়ে একটা চিরকুটের মতো কিছু পেল।সেটা খুলতেই দেখল সেখানে বড়ো করে লিখা “ঘোড়ার আন্ডা”
আদি খ্যাক খ্যাক করে উঠে বলল,’শা’লা একটা জাত ছ্যাচড়া।ছ্যাচড়ামোর ও একটা সীমা থাকে।’

তাসনুভা চোখ সরু করে বলল,’কাগজের পেছনেও তো কিছু লিখা আছে।দেখো তো।’

আদি দ্রুত কাগজ টা উল্টে নেয়।মাথা নেড়ে বলে,’তাই তো’
কাগজের পেছনে গোটা গোটা অক্ষরে লিখা,’সব টাকা আমার বড় শ্যালিকা কে দিয়ে দিয়েছি।সব কাজ তো সে ই করেছে।তোদের মতো ঘোড়ার আন্ডা সার্ভিস দেওয়া পাবলিকের জন্য আমার পক্ষ থেকেও ঘোড়ার আন্ডা সালামি দিলাম।’

চিরকুটের লিখা পড়েই রিমির হাসি পেল।বিকেলেই আরহাম তাকে তার মানিব্যাগের সব টাকা বের করে দিয়ে দিয়েছে।সে সেগুলো আলমারিতে যত্ন করে রেখেছে।আদি চিরকুট পড়েই রিমির দিকে দেখে গজরাতে গজরাতে বলল,’শা’লা কতো বড়ো বাটপার! যাহ,এবার তোর বউ তোকে মে’রে ফেলুক।আমরা কেউ কিছু বলব না।তোর বড় শ্যালিকা গিয়ে তোকে বাঁচাবে।’

রিমি তার কথা শুনেই চোখ পাকিয়ে বলল,’মে’রে ফেলবে মানে?আমার দুলাভাই কি সস্তা নাকি?’
কথা বলেই সে এক আঙুল তুলে মিছেমিছি হুংকার দিয়ে বলল,’আমার দুলাভাইয়ের গায়ে যদি আজ একটা আঁচড়ও লাগে,তাহলে লা’শ পড়বে লা’শ।এ আমি বলে দিলাম।’

তার কথার ধরনে কিছু একটা ছিল।যেটা শত অস্বস্তির মাঝেও ওয়াজিদের মন ভালো করে দিলো।সে তার কথা শুনতেই হো হো করে হেসে ফেললো।বাকিরা সব চোখ ঘুরিয়ে তাকে দেখছিল।ওয়াজিদ মুখে হাত চেপে হাসি থামানোর চেষ্টা করল।রিমি অবাক হয়ে কয়েক পলক তাকে দেখে গেল।কতো সুন্দর হাস্যোজ্জ্বল একটি মুখ! অথচ এই সুন্দর প্রাণবন্ত হাসি এতোদিন গাম্ভীর্যের আড়ালে ঢাকা পড়ে ছিল।এই প্রাণবন্ত ওয়াজিদ কে রিমির ভালো লাগছে,বেশ ভালো লাগছে।

চলবে-

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে