কোনো এক শ্রাবণে পর্ব-২৪(খ)

0
10

#কোনো_এক_শ্রাবণে
লেখনীতে #মেহরিমা_আফরিন

(২৪)[দ্বিতীয় অংশ]

নবনীতা তার ফ্ল্যাটে এসেই এক দৌঁড়ে নিজের ঘরে গেল।দরজা বন্ধ করে দীর্ঘসময় সে দরজার সাথে ঠেস দিয়ে বসে থাকল।পুরো রাস্তা যে কান্না সে আটকে রেখেছিল,দরজা বন্ধ করার সাথে সাথেই সেটা বাঁধ ভাঙা জলের মতো তার চোখ ছাপিয়ে গাল পর্যন্ত নেমে এলো।সে এতোটাই উদ্ভ্রান্তের মতো ছুটে এসেছে যে শুভ্রাকে সাথে আনার কথাও তার মাথায় ছিল না।

ঘরের বাইরে শুভ্রার কন্ঠ শোনা যাচ্ছে।নবনীতা তবুও দরজা খুলল না।ঘড়ির কাঁটা তখন সন্ধ্যা সাতটা ছুঁয়েছে কেবল।নবনীতা চোখ মুছে তার কপালে হাত ছোঁয়ায়।এখানটায় ই তো ঐ লোকটা চুমু খেয়েছিল তাই না?সে দুই হাঁটুতে মুখ গুজে আবারো কিছুক্ষণ কাঁদলো।সে এখন কি করবে?নিশ্চয়ই এই খবর মানুষের কাছে দাবা’নলের মতো ছড়িয়ে যাবে?এরপর?এরপর কি হবে?

ঘন্টা খানেক সেভাবেই বসে থাকার পর সে উঠে দাঁড়ায়।বারান্দা থেকে তোয়ালে হাতে নিয়ে বাথরুমে গিয়ে শাওয়ার ছেড়ে দাঁড়ায়।সে গোসল থেকে বেরিয়েই দু’টো ঘুমের ঔষধ খেয়ে ঘুমিয়ে যাবে।এরপর কি হবে সে জানে না।আপাতত একটু ঘুমাতে না পারলে সে পা’গল হয়ে যাবে।

***

আরহামের যখন ঘুম ভাঙে তখন সে নিজেকে আবিষ্কার করে নিজের ঘরে,তার খাটে।পুরো ঘরে তখন ডিম লাইটের মৃদু হলদে আলো আভা ছড়াচ্ছিল।আরহাম চোখ ডলতে ডলতে উঠে বসল।তার শরীর এখনও কেমন মেজমেজ করছে।সে আড়মোড়া ভাঙে।এদিক সেদিক তাকায়।টের পায় বারান্দায় কেউ দাঁড়িয়ে আছে।সে খাটে বসে থেকেই সেদিকে উঁকি দেয়।জড়ানো কন্ঠে জানতে চায়,’কে?আদি?’

আদি তার ডাক শুনেই পেছন ফিরে।শম্বুক গতিতে এগিয়ে এসে তার খাটের এক কোণায় এসে বসে।আরহাম চোখ পাকিয়ে বলল,’কি রে?এমন মন খারাপ করে আছিস কেন?’

আদি বেডশিটের দিকে চোখ রেখেই ঠান্ডা স্বরে বলল,’তুই জানিস আজ কি হয়েছে?’

আরহাম পুনরায় চোখ ডলতে ডলতে বলল,’কি হয়েছে?’

আদি আগের চেয়েও শীতল কন্ঠে উত্তর দেয়,’তুই আর নবনীতা সিটি কলেজের টিচার্স রুমে ছিলি।দুই তাকে জড়িয়ে ধরেছিস।কলেজের টিচার আর অথোরিটি নিজ চোখে সবটা দেখেছে।আমাকে একটা কথা বল তো।তুই কি সেখানে গিয়ে কোনো ড্রাগস নিয়েছিস?তুই এসব খাস আরহাম?লাইক ওয়াইন কিংবা হুইস্কি না।সেগুলো খেয়ে কেউ এমন করে না।তুই কি কো’কেইন টাইপ কিছু খাস?’

আরহাম চোখ বড় বড় করে কতোক্ষণ তাকে দেখল।আদি এসব কি বলছে?সে নিজেকে কিছুটা সামলে নিয়ে অস্থির হয়ে বলল,’তোর মাথা খারাপ হয়েছে আদি?তুই আমাকে কতো ভালো করে চিনিস।তবুও এসব কেন বলছিস আমার নামে?আমি সেরকম হাই পাওয়ার ড্রাগস কখনোই নেই না।নেভার।’

‘সেটা আমিও জানি।বাট তোকে যখন বাড়িতে আনা হলো,তুই পুরাই আউট অব সেন্স ছিলি।ইভেন তুই কি করেছিলি তুই নিজেও জানিস না।’

আরহাম দুই হাত মাথার দুই পাশে রাখল।দুই পক্ষই দীর্ঘসময় নিশ্চুপ বসে থাকল।কিছু সময় যেতেই নিরবতা ভেঙে আরহাম চাপা স্বরে বলল,’আমাকে আর নবনীকে নিয়ে মানুষ বাজে কথা বলছে?’

আদি ক্লান্ত শ্বাস ছেড়ে জবাব দেয়,’এটা বাংলাদেশ।এতো বড়ো কাহিনী হবে আর মানুষ কিছু বলবে না এটা তো হতে পারে না।’

‘নবনীতা কেমন আছে?’

‘আমি কি করে জানবো?আমার সাথে তো কথা হয়নি তার।’

আরহাম এদিক সেদিক দেখে।ব্যস্ত হয়ে বলে,’আমার ফোনটা কোথায়?’

ফোন পেতেই সে দ্রুত কাউকে কল দেয়।কল রিসিভ হতেই অধৈর্য হয়ে জানতে চায়,’সে কেমন আছে রিমি?তুমি প্লিজ একবার তার কাছে যাবে?’

***

একটা মেয়েকে হেনস্তা কিংবা অপমান করার সবচেয়ে সহজ উপায় কি?অবশ্যই সেটা তার চরিত্রে দাগ লাগিয়ে দেওয়া।ছেলেদের কখনো চরিত্রে দাগ লাগে না,মেয়েদের লাগে।দুই বাচ্চার বাপ হয়ে যাওয়া ছেলেটা ডিভোর্সের পরেও অনায়াসে ষোলো বছর বয়সের অল্পবয়স্কা মেয়েটিকে বিয়ে করে ফেলতে পারে।সমাজ তাতে বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ করে না।কিন্তু সদ্য বিবাহিত মেয়েটি,যার হাতের মেহেদির রঙ শুকানোর আগেই স্বামী পরকালে পাড়ি জমান,তার নতুন করে সংসার বাঁধা নিয়ে সুশীল সমাজের বহু ফতোয়া আছে।

একটি মেয়ে,যাকে কিছুতেই দমানো যায় না,কোনো ক্রমেই হারানো যায় না,তাকে হারানোর একটি সহজ উপায় তার চরিত্রে কাদা ছুড়ে দাও।যেকোনো অন্যায়ের তীব্র প্রতিবাদ করা মেয়েটি মিথ্যা অপবাদ থেকে নিজেকে কেমন করে বাঁচাবে?কেমন করে প্রমাণ করবে তার চরিত্র খারাপ না?মানুষের ভেতরে যে বিশ্বাস একবার ঢুকে যায় সেটা কি কোনোভাবেই দূর করা যায়?

নবনীতার পরবর্তী দু’টো দিন কেমন গিয়েছে সে নিজেও জানে না।তার প্রতিনিয়ত মনে হয়েছে সে ম’রে যাচ্ছে।আতঙ্কে ভয়ে লজ্জায় সে নিজের মুঠোফোন টা হাতে পর্যন্ত নিতে পারত না।মানুষ তাকে নিয়ে যা তা বলছে।যেভাবে পারছে সেভাবে হেনস্তা করছে।নবনীতা এদের মুখ কেমন করে বন্ধ করাবে?কেউ যখন তোমায় বলে তুমি একটা চরিত্র’হীনা,তখন তাকে কেমন করে জবাব দিতে হয়?কেমন করে তাকে বিশ্বাস করানো যায় যে সে ভুল?বিশ্বাসের উপর তো কারো নিয়ন্ত্রণ নেই।

নবনীতা,প্রখর আত্মসম্মানে ভরপুর একটি মেয়ে,যে দৃপ্ত কদমে আত্মবিশ্বাসের সাথে শহরের রাস্তায় হেঁটে বেড়াতো,সে মেয়েটা একটা সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত ঘটনার জের ধরে নিজেকে গৃহবন্দী করল।সে নিজের সোশ্যাল মিডিয়াতেও যেতে পারত না।কারণ তার ভয় হয়।নিজেকে নিয়ে বানানো কুৎসিত কেচ্ছা গুলো পড়তে তার গা ঘিনঘিন করে।

মূলধারার নিউজ চ্যানেল গুলো কখনোই মানুষের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে বাড়াবাড়ি করে না।এসব বিষয়ে তারা বরাবরই নির্লিপ্ত থাকে।তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সংবাদ চ্যানেল গুলো কেবল মুখিয়ে থাকে এধরনের ঘটনার নিউজ করার জন্য।দেখা গেল ঘটনা যা ঘটেছে,তার চেয়েও দ্বিগুন ভাবে সেটা প্রকাশ করা হচ্ছে।’নেতার সাথে তরুণীর বন্ধ ঘরে ভিডিও ফাঁস’ এধরনের কুৎসিত শিরোনামে সংবাদ প্রচার করা হচ্ছে।নবনীতা এসব দেখতেই দুই হাত মুখে চেপে ধরে।

সে অফিসে ফোন করে জানিয়ে দিয়েছে সে কয়দিন ছুটি চায়।বরাবরের মতোই অফিস বিনাবাক্যে তার ছুটি মঞ্জুর করেছে।সে ইদানিং চব্বিশ ঘন্টা নিজের ঘরেই থাকে।একটা বন্ধ ঘর।যেখানে নবনী নিস্তেজ হয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা পড়ে থাকে।

তার মাঝে মাঝে মনে হয় এই ফেইসবুক চ্যানেল গুলো যারা চালায়,তাদের কি সামান্য বিবেকটুকুও নেই?শুধুমাত্র সামান্য ভিউয়ের আশায় এতো বড় মিথ্যা কথা ছড়াচ্ছে?নবনীতার চরিত্রে কালি মাখিয়ে নিজেদের ব্যবসা জমাচ্ছে?সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত একটি ঘটনাকে তারা রীতিমতো অবৈধ সম্পর্ক বলে চালিয়ে দিচ্ছে।কিসের অবৈধ সম্পর্ক?তার সাথে আরহামের কবেই বা সম্পর্ক ছিল?

নবনীতা পুরোপুরি হাল ছেড়ে দিলো।সে হেরে যাওয়ার মানুষ না।কিন্তু নিজের চরিত্রের সাফাই গেয়ে গেয়ে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার বৃথা চেষ্টাও সে করবে না।সে জানে,তার কথা কেউ মানবে না।সে যতোই চিৎকার করে বলুক সে ন’ষ্ট মেয়ে না,তবুও সমাজ এটাই বলবে তুমি নষ্ট,তুমি নেতাদের ভোগ্যপণ্য।

রিমি দু’দিন ধরেই তার কাছে।সে একটু পর পর তার ঘরে যায়,কথা বাড়ানোর চেষ্টা করে।কিন্তু কথা আগায় না।নবনীতার মাথার নিচের বালিশ টা তার চোখ বেয়ে নেমে আসা পানিতে ভিজে উঠে বারবার।রিমি হতাশ হয়ে সে দৃশ্য দেখে।বিগত দিনগুলোতে সে কখনোই এমন করে কাঁদেনি।রিমি তাকে কখনো কাঁদতে দেখেনি।এমনকি যেদিন ঘটনা ঘটেছে সেদিনও সে খুব শক্ত ছিল সবার সামনে।কেবল মোবাইল ফোন হাতে পাওয়ার পর থেকেই সে পুরোপুরি বি’ধ্বস্ত হয়ে পড়েছে।

রিমি দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।মেয়েটা জীবনের শত শত প্রতি’ঘাতে এমন করে ভেঙে পড়েনি কখনো।সে তো বার বার পড়ে গিয়ে পুনরায় উঠে দাঁড়ানোর মানুষ।প্রখর রোদে ঝলসে গিয়েও শক্ত হয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটা অবেলার বৃষ্টিতে বার বার মূর্ছা যাচ্ছিল।যত বারই সে রিমিকে দেখল,ততবারই একটা কথাই বলল।সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাকে নিয়ে ভুল বলা হচ্ছে।সেদিন সেখানে এমন কিছু হয় নি।সে কিছু করে নি।সে এসবের কিছুই জানে না।সে চরিত্র’হীনা নয়।

রিমি ক্লান্ত শ্বাস ছেড়ে তাকে দেখে।একটা সম্পূর্ণ মিথ্যা অপবাদে মেয়েটা নিজেকে এমন করে গুটিয়ে নিচ্ছে।সে বার কয়েক তার হাত থেকে মোবাইল ফোন কেড়ে নিল।এটা দেখেই সে আরো অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে।দুই দিন নির্ঘুম থাকার পর তৃতীয় দিন নবনীতা ঘুমের ঔষধ খেয়ে ঘুমায়।

রিমি বারান্দায় গিয়ে ফোন হাতে নেয়।আরহাম কল রিসিভ হতেই ব্যস্ত ভঙ্গিতে বলে,’পরী কেমন আছে রিমি?’

‘ভালো না ভাইয়া।সেই এক কথাই বার বার বলছে।সে কিছু করে নি।মানুষ মিথ্যা বলছে।মানুষ তাকে ভুল ভাবছে।সে কোনো নেতার সাথেই কিছু করে নি।’

আরহাম ঠান্ডা গলায় বলল,’ফোন দেখতে দিচ্ছ কেন?কয়দিন মোবাইল হাতে না নিলে কি হয়?মানুষের কথায় সে এতো কান দিচ্ছে কেন?’

‘জানি না ভাইয়া।এই এতো বছরে তার চরিত্র নিয়ে কেউ কিছু বলে নি।এখন বলছে।সে এটা নিতে পারছে না।’

আরহাম কেবল দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।দীর্ঘসময়ের নিরবতা ভেঙে রিমি নিজ থেকে বলে,’ভাইয়া! সে যদি অফিস আর ফ্ল্যাটের বিষয়টি জেনে যায়,তখন?’

আরহাম মাথা নিচু করে চাপা স্বরে বলল,’জানি না রিমি।লোকাল চ্যানেল গুলো যেভাবে আমাকে আর পরীকে নিয়ে ঘাটাচ্ছে,খুব দ্রুতই সে সবকিছু জেনে যাবে মনে হচ্ছে।আমি সমালোচনা নিয়ে ভয় পাই না।রাজনীতিবিদ দের নামে এমন তকমা লাগেই।নাথিং সিরিয়াস।কিন্তু আমার তার জন্য খারাপ লাগে।শি ওয়াজ ইনোসেন্ট।তার কোনো দোষ নেই।’

***

শ্রাবণের কোনো এক বৃষ্টি মুখর দিনে নবনীতার সুন্দর করে গোছানো এপার্টমেন্টে তিনজনের অতিথির আগমন হয়।শুভ্রা দরজা খুলে তাদের দেখেই অবাক হয়ে বলে,’তোমরা?’

রিমি রান্নাঘর থেকে ছুটে এসে তাদের দেখেই আশ্চর্য হয়ে বলল,’তোমরা এসে গেছ?আসো আসো।ঘরে এসে বসো।’

নবনীতা তখনও তার খাটের এক কোণায় জড় পদার্থের মতো পড়েছিল।রিমি গিয়ে তার শিয়রে বসে।তার হাত টা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে কোমল গলায় বলে,’নবনী! তুই কি একটু বসার ঘরে আসতে পারবি?’

নবনীতা নিরুত্তর।তার চোখ দু’টো সিলিংয়ের দিকে।চোখের পানি শুকিয়ে গালের কাছটায় লেপ্টে আছে।একটু আগে সে ফুঁপিয়ে কেঁদেছে।একটি চ্যানেলে নিউজ করা হয়েছে কলেজের টিচার্স রুমে নাকি তরুণীকে হাতে নাতে ধরা হয়েছে।এটা দেখার পর নবনীতা বালিশে মুখ চেপে গলা ছেড়ে চিৎকার করেছে কতোক্ষণ।হাতেনাতে?এই শব্দটা কি আদৌ তার সাথে যায়?সে কি কোনো পাপ করেছে যে ধরা খাবে?তার সাথে এতো অবলীলায় এই বিশেষণ জুড়ে দিলো?

রিমি আবারো বলল,’আদি ভাইয়া,আরিশ আর তাসনুভা এসেছে নবনী।তুই একটু কথা বল প্লিজ।’

নবনীতা সিলিং দেখতে দেখতেই ক্ষীণ স্বরে বলল,’তাদের চলে যেতে বল রিমি।আমার কোনো কথা নেই তাদের সাথে।’

‘প্লিজ নবনী।অতো দূর থেকে এসেছে।একটু তো কথা বল।’

নবনীতা তক্ষুনি উঠে নি।আরো কিছু সময় শুয়ে থেকে সে অবশেষে উঠে বসে।শুভ্রার সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আগের দিন সে সোফা কিনেছিল।আদি,আরিশ সোফার মাঝামাঝি বসে ছিল।তাসনুভা আর কষ্ট করে হুইলচেয়ার ছেড়ে সোফায় যায়নি।নবনীতা তাদের সামনে আসতেই তাসনুভা আঁতকে উঠে বলল,’আপু! তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেন?তুমি ঠিক আছো তো?’

নবনীতা উত্তর না দিয়ে চুপচাপ সামনের সোফায় গিয়ে বসে
আদি তার এলোমেলো ছন্নছাড়া মুখটা দেখেই কোমল গলায় বলল,’প্লিজ নবনীতা।তুমি এমন মন খারাপ করে থেকো না।প্লিজ,আই অ্যাম রিকোয়েস্টিং।’

তাসনুভা তার হাত টা চেপে ধরে বলল,’আপু তুমি কেন এমন অদ্ভুত আচরণ করছ?আমরা তো কথা বলেও সবটা ঠিক করতে পারি তাই না?’

নবনীতা পাশ ফিরে।আশ্চর্য হয়ে বলে,’কথা দিয়ে কেমন করে সব ঠিক হবে তাসনুভা?কিসের কথা?কথা বললে আমার সম্মান ফিরে আসবে?লোকে বিশ্বাস করে নিবে যে আমি কোনো ন’ষ্টা নই?’

‘আপু প্লিজ।এধরনের শব্দ বলো না প্লিজ।’

নবনীতা কথা না বাড়িয়ে উঠে দাঁড়ায়।একনজর সবাইকে দেখে নিরাসক্ত কন্ঠে বলে উঠে,’প্লিজ তোমরা চলে যাও।তোমরা বাড়িতে এসেছ এই খবর জানা জানি হলে আরো এক দফা ঝামেলা হবে।সেই ঘুরে ফিরে আমার উপরই সবটা আসবে।আমার তোমাদের করুণা চাই না।তোমরা যেতে পারো।’

কথা শেষ করেই সে সোজা নিজের ঘরের দিকে হাঁটা দেয়।সে একটু দূর যেতেই আদি উঠে দাঁড়িয়ে তাড়াহুড়ো করে বলল,’আমরা কোনো করুণা করতে আসি নাই নবনী।আমরা একটি কথা বলার জন্য এসেছি।’

নবনীতা নিজ থেকে আর কিছু জিজ্ঞেস করল না।সে জানে আদি নিজেই খুলে বলবে সবটা।সে অপেক্ষা করে আদির মুখ থেকে কথাটা শোনার।আদি একটু ধাতস্থ হয়ে স্পষ্ট গলায় বলল,’নবনীতা আরহাম তোমাকে বিয়ে করতে চায়।’

একেবারে নিষ্ক্রিয় জড় পদার্থের ন্যায় অনুভূতিশূন্য হয়ে থাকার পর নবনীতা এবার একটু নড়ে চড়ে উঠে।চোখ মেলে সামনে দেখেই কাঠকাঠ গলায় বলে,’ইয়ার্কি হচ্ছে?’

আদি শান্ত মুখে বলল,’আমি ইয়ার্কি করছি না।আম সিরিয়াস।এগুলা আমার কথা না।আরহামই আমাকে বলেছে তোমাকে এটা বলার জন্য।হি ওয়ান্টস টু ম্যারি ইউ।’

নবনীতা হুট করেই হেসে ফেলল।তার হাসি দেখেই আদি ভড়কে যায়।অদ্ভুত! সে হাসছে কেন?নবনীতা হাসি থামিয়ে তাচ্ছিল্য করে বলল,’ঐ তো।ঘুরে ফিরে করুণাই করা হচ্ছে।’

নবনীতা কয়েক দফা টেনে টেনে শ্বাস নেয়।নিজেকে একটু সামলে নিয়ে সে চোখ মুখ শক্ত করে বলল,’আপনার বন্ধুকে বলবেন নবনীতা এতোও পচে যায়নি যে লোকের নিন্দে থেকে বাঁচ’তে তার মতো উচ্ছন্নে যাওয়া মানুষের সাথে বিয়ে করবে।আমার জীবনে খারাপ সময় যাচ্ছে।সেই খারাপ কেটে যাবে।কিন্তু নিজের জীবন কে তার মতো লোকের সাথে জড়িয়ে আমি সারাজীবন এভাবে কাঁদতে পারব না।’

সে কথা শেষ করে আর জবাবের অপেক্ষা করে না।সোজা হেঁটে পা বাড়ায় নিজের ঘরের দিকে।ঐ লোক এখন করুণা দেখাচ্ছে।মহান সাজার ভন্ডামি করছে।

আদি অবশ্য হাল ছাড়েনি।সে সেদিন সাদেক সাহেবের সাথে ঘন্টা খানেক কথা বলল।কথা শেষে লিভিং রুমে এসেই আরিশ আর তাসনুভা কে নিয়ে বেরিয়ে গেল।রিমি দরজা বন্ধ করেই শুভ্রার দিকে তাকায়।এই ক’দিনে নবনীতার সাথে সাথে সেও কেমন চুপশে গেছে।রিমি রান্নাঘরে যেতে যেতে আদুরে গলায় বলল,’কিছু খেয়ে নাও শুভি।শরীর খারাপ করবে না হয়।’
.
.
.
.
ডেস্ক ক্যালেন্ডারে আরো চারটে দিনের সমাপ্তি হয়েছে।কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি শেষে ঝলমলে রোদ্দুর উঁকি দিয়েছে মেঘের আড়াল থেকে।এমনই এক রৌদ্রজ্বল দিনে নবনীতা নূর লম্বা গোসল শেষে খুবই প্রাণবন্ত মুখে আলমারির তাক থেকে নিজের বাইরে পরার একটি জামা বের করল।তাকে দেখাচ্ছে খুবই স্বাভাবিক,সেই সাথে ভীষণ হাস্যোজ্জ্বল।

টানা এক সপ্তাহ নিজেকে ঘরের ভেতর বন্দি রাখার পর নূর আহমেদের সাহসী মেয়েটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে সে আর নিজেকে লুকিয়ে রাখবে না।সে মুখোমুখি হবে।সবকিছুর মুখোমুখি হবে।হাসিমুখে জীবনের সকল সংঘাত সে মোকাবিলা করবে।লোকে বললেই কি সে খারাপ হয়ে গেছে নাকি?লোকে তো কতো কথাই বলে।নবনীতা সাহসী।সে কেনো এসবে মূর্ছা যাবে?সে ভেবে নিয়েছে এসব আর সে গায়ে মাখবে না।সব অপবাদ গায়ে মাখলে এক সময় দেখা যাবে লোকে বলছে নবনীতা খু’নী।তখন কি সে সেটা মেনে নিয়ে নিজেকে গৃহবন্দী করবে?নাহ,কক্ষনো না।

রিমি চায়ের কাপ হাতে ঘরে ঢুকেই বলল,’তুই তাহলে আজ থেকেই অফিস যাওয়া শুরু করবি?’

নবনীতা হাসি মুখে বলল,’উহু,আজ থেকে নয়।কাল থেকে।’

‘তাহলে রেডি হচ্ছিস যে?’

নবনীতা হাতের জামাটি নেড়ে চেড়ে দেখতে দেখতে বলল,’ভাবছি শুভি আসলে আজ আমরা বাইরে যাবো।একটু ঘুরে আসবো।মাইন্ড ফ্রেশ হবে।’

রিমি স্মিত হেসে বলল,’ভালোই ভেবেছিস।গুড ডিসিশন।’

কলেজ শেষে শুভ্রার একটা প্রাইভেট থাকে।সে আজ প্রাইভেটে না গিয়ে সোজা বাড়ি ফিরেছে।নবনীতা তাকে দেখেই কপাল কুঁচকে বলল,’কি রে?তুই কোচিং-এ যাসনি?’

শুভ্রা কাঁধের ব্যাগটা যথাস্থানে রেখে ধপ করে তার টেবিলের সামনে রাখা চেয়ারটায় বসে পড়ল।ছোট করে জবাব দিলো,’না, যাই নি।’

‘কেন?’ কড়া গলায় প্রশ্ন করল নবনীতা।
সে তার সামনে গিয়েই বুকে হাত বেঁধে খানিকটা ধ’মকে উঠে বলল,’কেন যাসনি?কোচিং কি কোনো ঘুরার জায়গা?যে মন চাইলে যাবি,আর মন না চাইলে যাবি না?’

শুভ্রা উত্তর না দিয়ে কেবল মাথা নামিয়ে চুপচাপ বসে রইল।নবনীতা কঠিন মুখে বলল,’কি হচ্ছে কি শুভি?উত্তর চাইছি না?কেন যাসনি?’

শুভ্রা শেষ পর্যন্ত অধৈর্য হয়ে বলল,’যাইনি কারণ গেলেই বাজে কথা শুনতে হয়।ওসব কথা আমি নিতে পারি না।’

নবনীতা দুই কদম পিছিয়ে গেল।ভাঙা গলায় বলল,’কি বলে শুভি?কি বাজে কথা বলে?’

শুভ্রা বড় করে শ্বাস ছেড়ে জবাব দেয়,’ছাড়ো এসব।কাল থেকে মিস দিব না প্রাইভেট।’

নবনীতা অস্থির হয়ে বলল,’শুভ্রা আমার কথার উত্তর দে।কি বলে তারা?বল আমাকে।’

‘কিছু না আপাই।তুমি যাও।তুমি জেনে কি করবে?’

‘শুভি! বলতে বলেছি না?’

শুভ্রার ধৈর্যচ্যুতি ঘটল।সে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে এক প্রকার চেঁ’চিয়ে উঠে বলল,’শুনতে চাও তারা কি বলে?তারা বলে আমি নাকি শাহরিয়ার আরহামের প্রেমিকা নবনীতার বোন।আমার বোনের সাথে আরহামের বহু দিনের অবৈধ সম্পর্ক।আমার বোন দেখতে হেব্বি সুন্দর।সেই শরীর দিয়েই সে শাহরিয়ার আরহামকে কাবু করেছে।আরহাম জাস্ট তাকে ভো’গ করে।কিন্তু বিয়ে করে না।’

শুভ্রার প্রতিটা বাক্য নবনীতার বুকে গিয়ে বিঁধলো ধাঁরালো কোনো তীরের মতো।তার মনে হচ্ছে তার হৃদযন্ত্রে কেউ ছু’রি বসিয়ে বারংবার তাতে আঘাত করছে।তার চোখ ছলছল করে ওঠে।সে কাঁপা কন্ঠে বলে,’শুভি!’

‘আমাকে বলে কোনো লাভ নেই আপাই।মানুষ এটাই ভাবে।আমার কলেজের প্রতিটা মানুষ এটাই ভাবে তোমাদের মধ্যে খুব ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক।তোমাদের কে তো বহুবার একসাথে দেখা গিয়েছে।তুমি হচ্ছো তার প্রেমিকা,যাকে সে কোনোদিনই বিয়ে করবে না।’

‘শুভি! তুই তো জানিস এগুলো সব মিথ্যা।তাহলে কেন তাদের মুখের উপর কোনো জবাব দিলি না?’

শুভ্রা একহাত সামনে তুলে তাকে থামিয়ে দিয়ে বলল,’থাক আপাই।হয়েছে।এতো শত মানুষের মুখের উপর জবাব দেওয়ার গাটস আমার নেই।আমি কয়জনের মুখ বন্ধ করাবো বলো?আমার পক্ষে তোমার মতো এতো সাহসী হওয়া সম্ভব না।ক্ষমা করবে আমায়।তুমি তোমার প্রতিবাদ চালিয়ে যাও।আমি পারবো না।’

শুভ্রা থামল।কয়েকবার শ্বাস ছেড়ে পুনরায় বলতে লাগল,’তোমার তো কোনো সমস্যা নেই আপাই।তোমার সামনে তো কেউ কিছু বলে না।বলে তো সবাই তোমার পেছনে।সেগুলো আমাদের শুনতে হয়।তোমার কি?তুমি তো দিব্যি সুখে আছো।’

নবনীতা নির্বাক হয়ে কেবল তার কথা শুনল।এতো জোর গলায় শুভি তার সাথে কথা বলছে?তার বোন শুভ্রা তাকে এমন করে বলছে?নবনীতাকে চূড়ান্ত রকমের হতবাক করে দিয়ে শুভ্রা তার তর্জনী নবনীতার দিকে তাক করে বলল,’তুমি জানো আপাই তুমি যে মাঝে মাঝে অতিরিক্ত জেদ ধরো?আরহাম ভাইয়ের সাথে বিয়েতে রাজি হলে কি এমন হতো?তুমি ম’রে যেতে?ভাইয়া তোমায় জানে মে’রে ফেলতো?নাহ কিছুই হতো না।মাঝখানটায় আমি,মামা,চিত্র আমরা সবাই বেঁচে যেতাম।কিন্তু নাহ,তুমি তো জেদ ধরবেই।তেজ তো তুমি দেখাবেই।তোমার এই ইগো আর তেজের কারণে তুমি বিয়েটা ভেঙে দিলে।যাও একটু সবকিছু ঠিক হওয়ার সম্ভাবনা ছিল,তুমি সব ভেস্তে দিয়েছ।খুব ভালো করেছ।তুমি জিতে গেছ আপাই।কিন্তু কখনো সময় পেলে আমাদের কথাও ভাববে আপাই।আমরা কোনো কু’কুর বিড়াল না।আমাদেরও একটু শান্তিতে রাস্তাঘাটে যাওয়ার অধিকার আছে।আমরাও,,,’

শুভ্রা কথা শেষ করার আগেই নবনীতা গায়ের সর্বশক্তি দিয়ে তার গালে একটা চড় বসায়।শুভ্রা ধাতস্থ হওয়ার আগেই সে তাকে আরো একটা চড় দেয়।রিমি আওয়াজ শুনেই হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এলো।নবনীতা তাকে তৃতীয় বার প্র’হার করার আগেই রিমি তাকে শক্ত করে জাপ্টে ধরল।একপ্রকার ধ’মকে উঠে বলল,’কি করছিস এসব?তোর কি মাথা নষ্ট হয়ে গেছে নবনীতা?তুই শুভ্রাকে মারছিস?’

নবনীতা নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে নিতে চিৎকার করে বলল,’আমি ঠিক আছি রিমি।আমি খুব ঠিক আছি।আমার চোখের সামনে একটা বে’ঈমান দাঁড়িয়ে আছে।নিজে না খেয়ে ঐ বে’ঈমান কে খাইয়েছি।নিজের ভাগের খাবার সব ঐ বে’ঈমান কে দিয়েছি।নিজে ঔষধ কিনি না,কিন্তু বোনের টিউশন ফি মিস যায় না।সেই বোন আমাকে সুন্দর প্রতিদান দিয়েছে।সে জানতে চাইছে আমি কি করেছি।’

শুভ্রা সাথে সাথে বিরোধ করে বলল,’মিথ্যে কথা।আমি সেটা বলি নি একবারও।’

নবনীতা ছুটে গিয়ে তাকে আরেকটা চড় মে’রে দাঁতে দাঁত পিষে বলল,’একদম চুপ।একদম মে’রে ফেলব বলে দিলাম মুখের উপর তর্ক করলে।আমি মিথ্যেবাদী তাই না?বেয়াদব কোথাকার!তুই আর কোনোদিন আমাকে বোন ডাকবি না।যাহ,চোখের সামনে থেকে দূর হ।’

রিমি নবনীতার দুই কাঁধে হাত চেপে শুভ্রার কাঁদো কাঁদো মুখটা দেখেই তড়িঘড়ি করে বলল,’আচ্ছা শুভি তুমি এখন অন্য রুমে যাও আপু।তোমার আপাই একটু শান্ত হোক।তুমি আপাতত যাও আপু।’

শুভ্রা চোখ ভর্তি পানি নিয়েই সেখান থেকে চলে গেল।সে যেতেই নবনীতা কাঁপতে কাঁপতে বলল,’মানুষ ঠিকই বলে।মা বাপ ছাড়া দুনিয়াতে কেউ কারো আপন না।সব ঐ ঘুরেফিরে নিজের স্বার্থই দেখে।’

‘নবনীতা! তুই দিনদিন মেন্টালি সিক হয়ে যাচ্ছিস।এই নবনীতা আর সত্যিকারের নবনীতার মাঝে অনেক তফাৎ।তুই ইদানিং অস্বাভাবিক আচরণ করছিস।’

নবনীতা তার কথা শুনেই মুখ শক্ত করে বলল,’আমি এমনই।ভালো লাগলে থাক,নয়তো যা।আমার তোদের কাউকে প্রয়োজন নেই।’

______

রাত আটটার পরে সাদেক সাহেব রিমিকে দিয়ে নবনীতাকে তার ঘরে ডেকে পাঠালেন।নবনীতা ঘরে এসেই তাকে সালাম দিলো,স্মিত হেসে তার পাশ ঘেঁষে বসল।

সাদেক সাহেব হাসিমুখে বললেন,’কেমন আছিস পরী?’

নবনীতা জোরপূর্বক হেসে জবাব দেয়,’আলহামদুলিল্লাহ ভালো।’

সাদেক সাহেব একটু হাসলেন।কোমল গলায় ডাকলেন,’পরী!’

নবনীতা তপ্ত শ্বাস ছাড়ে।সে জানে তাকে কেন ডাকা হয়েছে।সে নির্বিকার ভঙ্গিতে জবাব দেয়,’জ্বী?’

সাদেক সাহেব বলতে থাকেন,’বিয়ে মানুষের জীবনের একটি অংশ পরী।আমরা কেউই একে উপেক্ষা করতে পারি না।একজন মানুষ বাহ্যিক দিক থেকে কেমন,তার উপর বিচার করে আমরা তার বৈবাহিক স্বত্তার বিচার করতে পারি না মা।অনেক মানুষ বাইরে থেকে খুবই একরোখা প্রকৃতির হয়,কিন্তু স্বামী হিসেবে চমৎকার হয়।আমরা কেউই বিয়ের আগে জানি না আমাদের বিবাহিত জীবন কেমন হবে।তাই না মা?’

নবনীতা ছোট করে জবাব দেয়,’জ্বী মামা।’

‘বিয়ে জিনিসটা আল্লাহর থেকে নির্ধারিত।আমাদের জোড়া আসমানেই বানানো হয়।তোমার জোড়াও বানানো হয়েছে কারো সাথে।তাই না?তুমি যতোই পালাও।তার সাথেই তোমার বিয়ে হবে এটা জানো?’

‘জ্বী জানি।’

সাদেক সাহেব একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন,’তোমার মনের অবস্থা মামা বুঝি।কিন্তু সেই সাথে মামা পরিস্থিতিও বুঝি।তোমার চেয়ে জীবনের জ্ঞান আমার বেশি।আমি জানি পরী,সামনের দিনগুলো তোমার খুব একটা ভালো যাবে না।সব ক্ষেত্রে জেদি হওয়া যায় না পরী।মাঝে মাঝে একটু শান্ত থেকে বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত নিতে হয়।পরিস্থিতি এখন যেই জায়গায় আছে সেই জায়গা থেকে আরহামকে তোমার বিয়ে করে নেওয়া উচিত বলে আমার মনে হয়।অবশ্যই সেটা আমার মনে হয়।বাকিটা আমি তোমার উপর ছেড়ে দিলাম।তুমি যথেষ্ট বুদ্ধিমতি।তোমার যা ভালো মনে হয় তাই করবে।’

নবনীতা ফিচেল হাসল।মাথা নিচু করে মলিন হাসি মুখে মেখে বলল,’না মামা।আমার আর কিছু মনে হয় না।তোমাদের সিদ্ধান্তই আমার সিদ্ধান্ত।তুমি যা ভালো বলে মনে করছ,তাই হোক।এই বিয়েতে আমার কোনো আপত্তি নেই।আমি রাজি মামা।তুমি তাদের বলে দেও।আমার বিয়েতে কোনো আপত্তি নেই।’

সাদেক সাহেব একদৃষ্টিতে তাকিয়ে তার মুখশ্রী দেখেন।নবনীতা নিচের ঠোঁট কা’মড়ে ধরে কান্না গিলে নেয়।আনমনে হেসে জড়ানো কন্ঠে বলে,’আমি আর তোমাদের স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকতে বাঁধা সৃষ্টি করতে চাই না।আমার জন্য এতোগুলা মানুষের অসুবিধা হোক আমি চাই না।সবাই সুখে থাকুক।কেবল দোয়া করবে,আল্লাহ যেন আমায় আরো বেশি ধৈর্য দেয়।’

চলবে-

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে