কোনো এক শ্রাবণে পর্ব-০৭

0
21

#কোনো_এক_শ্রাবণে
লেখনীতে #মেহরিমা_আফরিন

(৭)

রাজনীতির বিষয় গুলো বেশ জটিল।বাইরে থেকে যতখানি বোঝা যায়,ভেতরে ভেতরে ঘটে যায় তার ঠিক উল্টো।অনানুষ্ঠানিক ভাবে আরহাম মনোনয়ন প্রায় পেয়েই গিয়েছিল।কিন্তু নবনীতা নামের একটি মেয়ের দু’মিনিটের একটা ভিডিও ফুটেজ পাল্টে দিল পুরো চিত্র,সমস্ত মানচিত্র।

আরহাম সবদিক থেকে প্রস্তুত ছিল।সব রাস্তা ঝামেলামুক্ত করেই সে মাঠে নেমেছিল।নিজ দলের ভেতরেও তার অনেক প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল।কিন্তু আরহাম সেসবের তোয়াক্কা করেনি।বাবার পলিটিক্যাল ব্যাকগ্রাউন্ড,নিজের ক্ষমতা সবকিছুকে কাজে লাগিয়ে আরহাম তার সমস্ত প্রতিদ্বন্দ্বীদের ছাপিয়ে গিয়েছিল।

কোথাও তো কোনো খাদ ছিল না।তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার মতো কোনো জায়গা তো সে রাখেনি।সবাই মোটামুটি নিশ্চিত ছিল যে এইবার দল থেকে সেই মনোনয়ন পাবে এবং নির্বাচনে জয়ীও সেই হবে।কিন্তু কোথা থেকে একটা উটকো ঝামেলায় আরহামের সব পরিকল্পনায় জল ঢেলে দিল।

যদিও সে ঘটনা কিছুটা সামাল দিয়ে দিয়েছিল,প্রশাসনিক কর্মকর্তারাও তাকে আশ্বাস দিয়েছে মনোনয়ন টা নিশ্চিতভাবে সেই পাবে,কিন্তু আরহাম নিশ্চিত হতে পারছিল না।মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল ফাহাদ।ফাহাদ বহুদিন ধরে রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত।বয়স আর অভিজ্ঞতাও আরহামের চেয়ে ঢের বেশি।

ফাহাদ চাইছিল এইবার নির্বাচনে অংশ নিতে।কিন্তু উপরমহল থেকে তাকে অনুমতি দেওয়া হয়নি।তার নামে মাদক আর অর্থ পাচারের বেশ কিছু মামলা দায়ের করা হয়েছিল।প্রার্থী হিসেবে এই সূক্ষ্ম বিষয়গুলো পরবর্তীতে সমস্যা আর সমালোচনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।এই সমস্যা গুলোকে কারণ হিসেবে দেখিয়ে আরহাম খুব সহজেই ফাহাদ কে রাস্তা থেকে সরিয়ে দিয়েছিল।যত কিছুই হোক,পাবলিকের সামনে আরহামের ইমেজ ক্লিয়ার।সে তরুণ।সে যেই আসন থেকে লড়বে সেখানে বিপুল পরিমান তরুণ ভোটার।তাদের সাথে আরহামের সম্পর্ক ভালো।এছাড়া আরহামের বাবারও বেশ ভালো পরিচিতি আছে।সবদিক বিবেচনায় আরহাম যোগ্য,সবচেয়ে বেশি যোগ্য।

আরহাম প্রায় সবকিছু অর্জন করেই নিয়েছিল কিন্তু এই নবনীতার ঘটনার পর থেকে তার প্রতিদ্বন্দ্বীরা আবার পুরোদমে তার বিরুদ্ধে চক্রান্ত শুরু করেছে।যারা এতোদিন টু শব্দটুকু করে নি,তারাও নালিশ করার সুযোগ পেয়ে গেল।প্রশ্ন ওঠল নির্বাচনের আগেই যে এমন ভাবে আলোচিত হয়েছে,তার হাতে মনোনয়ন পত্র কতোটা নিরাপদ।

সবচেয়ে বেশি তৎপর হলো ফাহাদ।এই মন্ত্রনালয় সেই মন্ত্রনালয় ঘুরে সে আপ্রাণ চেষ্টা চালাতে লাগল মনোনয়ন টা যেন তাকেই দেওয়া হয়।সে যা কিছু করেছে সেটা আরো অনেক আগের ঘটনা।জনগণ হয়তো এতোদিনে ভুলেও গেছে।কিন্তু আরহাম যেটা করেছে সেটা জনগণ কিছুতেই ভুলবে না।এই ঘটনার পর তার মতো অনভিজ্ঞ লোকের হাতে মনোনয়ন দেওয়া মানে নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারা।

আরহাম দুই হাত দিয়ে কতোক্ষণ নিজের চুল টানল।ডেস্কের উপর যা কিছু রাখা ছিল সব মাটিতে ছুড়ে ফেলল।সকাল থেকে এই নিয়ে সে শ’খানেক বার সামনে যা কিছু পাচ্ছে তাতেই কিল বসাচ্ছে।মাঝে মাঝে আবার রাগে,প্রচন্ড ক্রোধে হায়নার মতো চেঁচাচ্ছে।

ওয়াজিদ তখন থেকে তাকে পর্যবেক্ষণ করে যাচ্ছে।বেচারার নাকের ডগা লাল হয়ে আছে।ওয়াজেদ তাকে শুরুতে দুইবার বোঝানোর চেষ্টা করেছে।কিন্তু আজ সে কিছু বুঝবে বলে মনে হচ্ছে না।

আরহাম শেষ পর্যন্ত হাতের কাছে কিছুই না পেয়ে ইজিচেয়ারে একটা জোরালো লাথি বসাল।ফলস্বরূপ চেয়ারটা একহাত দূরে গিয়ে ছিটকে পড়ল।তোফায়েল এক চোখ বন্ধ করে মুখ খিঁচে নিল।আরহামের থমথমে মুখ।তোফায়েল অনুমান করল ইজিচেয়ারের চেয়ে বেশি ব্যাথা আরহামের পা ই পেয়েছে।

আরহাম আবারো দু’হাতে মুঠ করে তার চুল টেনে ধরল।ফুসঁতে ফুসঁতে বলল,’ঐ ষ্টুপিড অসভ্য বেয়াদব মেয়েটাকে যেদিক থেকে পারিস ধরে নিয়ে আয়।আমার হাত নিশপিশ করছে।তার গলা চে/পে ধরলে শান্তি পাব।আমার মাথা ফেটে যাচ্ছে যন্ত্রণায়।ঐ অসভ্যটাকে ধরে নিয়ে আয়।’

রনি বিচলিত বোধ করল।ভাই কি সত্যি সত্যি বলছে নাকি কথার কথা বলছে?সে নিশ্চিত হওয়ার জন্য জানতে চাইল,’ভাই সত্যিই ধরে আনতে বলছেন?’

আরহাম ঘাড় বাঁকিয়ে থমথমে মুখে তার দিকে তাকাল।দু’টো শুকনো ঢোক গিলে মিইয়ে গেল রনি।আমতা আমতা করে বলল,’না মানে ইয়ে আরকি।’

‘কি মনে করে ঐ নবনীতা?সে একাই পুরো দেশের সিস্টেম পাল্টে দিবে?’ তিরিক্ষি মেজাজে জানতে চাইল আরহাম।

তোফায়েল কাঁপা গলায় শুধু বলল,’না না।তেমন কিছু না।ভাই আপনি একটু ঠান্ডা হন।’

‘ঠান্ডা মাই ফুট!’
আরহাম থামল।পরক্ষনেই আবার গজরাতে গজরাতে বলল,’অসভ্য আন কালচারড বদমাশ মেয়ে! সামনে পেলে তার মাথাটা চিবিয়ে খেতাম।একবার একে সামনে পাই।এর সাথে আমার হিসেব বাকি আছে।’

বাকিরা সবাই যার যার জায়গায় দাঁড়িয়ে তার অস্থিরতা দেখে গেল।তাকে কোনো প্রশ্নই ঠিক ঠাক মতো করা যাচ্ছে না।যেই প্রশ্ন করতে আসছে,তার উপরই চড়াও হচ্ছে।

আরহাম রাগে কষ্টে আর জেদে ফোঁপাতে ফোপাঁতে বলল,’আই উইল কিল নবনীতা।সে আমার সব সাজানো প্ল্যানে পানি ঢেলে দিয়েছে।ফালতু মেয়ে কোথাকার!’
.
.
.
.
শুভ্রানী কলেজ থেকে বেরিয়ে মূল সড়কে কেবলমাত্র পা রেখেছিল।এরই মাঝে কালো রঙের একটা মাইক্রো এসে তার সামনে থামল।ঘটনার আকস্মিকতায় চমকে উঠে শুভ্রা দু’কদম পিছিয়ে গেল।

ক্যাচক্যাচ শব্দ তুলে গাড়ির দরজা খুলে গেল।সেখান থেকে একটি লোমশ পুরুষালি হাত বেরিয়ে এসে শুভ্রার বাম হাতটা শক্ত করে চেপে ধরল।

চিৎকার করে উঠল শুভ্রা।এক ঝাটকায় হাত ছাড়িয়ে নিতে চাইল,ছুটে পালাতে চাইলো সেখান থেকে।কিন্তু তার আগেই তার হাত চেপে ধরা ব্যক্তিটা তাকে হ্যাঁচকা টেনে গাড়িতে তুলে নিল।শুভ্রা ভয়ে,অজানা আতংকে গাড়ির ভেতর থেকেই চেঁচিয়ে ওঠল।তার মুখ বন্ধ।সেই বিভৎস চিৎকার গাড়ির ভেতরই সীমাবদ্ধ থাকল।

****

শাহিন হতভম্ব।সে তার দুই গালে হাত চেপে আড়চোখে একবার আরহামের অভিব্যক্তি বোঝার চেষ্টা করল।আরহাম ভাই তাকে মেরেছে?কিন্তু সে মারার মতো কি করেছে?সে তো ভালো কাজই করেছে।

আরহাম দাঁত কিড়মিড় করে বলল,’মূর্খ! গর্দভ! ব্রেইনলেস! কু/ত্তার বাচ্চা! তুই এটা কাকে তুলে এনেছিস? এটা নবনীতা? শালা গর্দভ! অশিক্ষিত!’

শাহিন দুইটা শুকনো ঢোক গিলল।আবার একটা ভুল করে ফেলেছে সে।আগ বাড়িয়ে নতুন আরেকটা বিপদ বাধিয়েছে শাহিন।সে ভাইকে খুশি করতে গিয়ে উল্টো ভাইকে আরো রাগিয়ে দিয়েছে।শাহিন হতাশ,ভীষণ হতাশ।

আরহাম কপাল চাপড়ে বলল,’হোয়াটস নাও?এখন কি?এখন এই মেয়ের আমি কি করব?’

তোফায়েল সামনে এসে শাহিনের মাথায় একটা গাট্টা মেরে কটমট করে বলল,’গাধা এটা কাকে এনেছিস তুই?নবনীতা কে আনলেও একটা কথা ছিল।তার বোনকে কেন এনেছিস?আর ভাই তো তখন রেগে ছিলেন।কথার কথা বলেছেন।এসব তোলা তুলি করতে কে বলেছে তোকে?দিলি তো কেসটা আরো বেশি ঘেটে।’

আরহাম রাগে গিজগিজ করতে করতে কতোক্ষণ এদিক সেদিক পায়চারি করল।তারা মাথা এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে।নমিনেশনের আগে যদি ভুলেও এই কথা জানাজানি হয়,তবে আরহামের পরিনতি ভাবলে সে নিজেই শিউরে ওঠে।

অবশেষে সব রাস্তা যখন ঘোলাটে হয়ে আসে তখন আরহাম ফোন করে জালালুর রহমানের নম্বরে।মহানগর কার্যালয়ের যুগ্ম সম্পাদক জালাল কল রিসিভ করতেই আরহাম ব্যস্ত হয়ে বলল,’আঙ্কেল একটা বিশাল ঝামেলা হয়ে গেছে।’

জালাল সাহেব উদ্বিগ্ন হয়ে শুধালেন,’সেকি! আবার কি হয়েছে?’

কিছুটা অস্থির,কিছুটা ব্যাকুল হয়ে আরহাম জানাল,’আমি কেবল রাগে,হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে বলেছিলাম যে নবনীতাকে তুলে আমার কাছে নিয়ে আসতে।শাহিন গর্দভ সেটাকে সত্যি ভেবে আসলেই তুলে এনেছে,তাও আবার নবনীতা কে নয়,তার বোনকে।আমি এখন কি করব আঙ্কেল?ট্রাস্ট মি,আমি এসব কিছুই চাইনি।টেনশনে আমার মাথা হ্যাঙ হয়ে যাচ্ছে।’

আরহাম থামল,অন্যপাশ থেকে জবাবের আশায়।কিছু সময় নিরব থেকে জালাল সাহেব বললেন,’আরহাম! তুমি কিন্তু চাইলে এই ভুল টা থেকে চমৎকার একটা আউটকাম বের করে আনতে পারো।’

ভ্রু কুঁচকালো আরহাম।জানতে চাইলো,’মানে?একটু বুঝিয়ে বলুন প্লিজ।’
.
.
.
.
দুই আঙুলের সাহায্যে চেপে রাখা সিগারেট টা শেষবারের মতো টেনে ফাহাদ সেটাকে অ্যাশট্রে তে ছুড়ে ফেলল।পুরো ঘরে সিগারেটের ধোঁয়া ঘুরপাক খাচ্ছে।সেই ধোঁয়ার বিদঘুটে গন্ধে তার সামনে বসে থাকা মেয়েটির দম বন্ধ হয়ে আসছে।

ফাহাদ পায়ের উপর পা তুলে পুনরায় জানতে চাইলো,’তা কি বলছিলেন আপনি?কি নাম আপনার?’

‘নবনীতা।নবনীতা নূর’,তরুনীর সোজাসুজি জবাব।

ফাহাদ মাথা নাড়ল।তার ঠিক বরাবর সামনে চেয়ারে বসে থাকা মেয়েটি গত পনেরো মিনিট যাবত একই কায়দায় বসে আছে।না নড়ছে,না একটু অন্য কোথাও দেখছে।মেয়েটির চুল বেশ লম্বা।বেণী করে রাখা চুলগুলো সে কাঁধের পাশ দিয়ে এনে বুকের উপর ফেলে রেখেছে।তার উপর আবার পরনের ওড়নাটি শালের মতো গায়ে জড়িয়েছে।প্রসাধনী মুক্ত একটা ঝকঝকে মুখ,চোখ দু’টো রক্তিম।কেঁদেছে নিশ্চয়ই।তবে এখানে এসে নয়,এখানে আসার আগে।

ফাহাদ দু’হাতের আঙুল গুলো আড়াআড়ি ভাবে রেখে একটু ঝুঁকে বসল।জানতে চাইল অভিযোগ কি?

নবনীতার ব্রহ্মতালু অব্দি জ্বলে উঠল তার এই বারবার একই প্রশ্নে।সে কোনোরকম রাগ সংবরণ করে বলল,’আমার বোনকে আজ দুপুর থেকে কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না।কলেজ ছুটির পর তার বাসায় আসার কথা ছিল।কিন্তু সে এখনো আসেনি।আমি জানি না সে কোথায় আছে,কেমন আছে।আমার বান্ধবীর ভাই আমাকে আপনার খোঁজ দিয়েছে।বলেছে আপনি নাকি এই এলাকার মাফিয়া।আপনার কাছে সব নিখোঁজ মেয়েদের লিস্ট আছে।আপনি কি আমায় আমার বোনের খবর দিতে পারবেন দয়া করে?’

এক টানা নিঃসংকোচে কথাগুলো শেষ করে দম নিল নবনীতা।এই জায়গাটা খুব একটা সুবিধার না।তবুও তাকে বাধ্য হয়ে এখানে আসতে হয়েছে।শুভ্রা কে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না দুপুর থেকে।নবনীতার বুক ফেটে কান্না আসছে।পুরো রাস্তা সে মুখ চেপে কেঁদেছে।এখন কিছুটা শক্ত হয়েছে।বিপদ এসেছে,কিন্তু নবনীতা এতো অল্পেই ভেঙে পড়বে না।সে মনে মনে একনাগাড়ে বলে যাচ্ছে,’শুভি ভালো আছে।একদম ভালো আছে।বেশি চিন্তা করিস না নবনী।শুভি একদম ঠিক আছে।’

ফাহাদ ফোন বের করে কোথাও একটা কল করল।তারপর অন্য আরেক জায়গায় কল দিলো।শেষমেশ কয়েকজনের সাথে কথা শেষে সে নবনীতার দিকে মুখ করে বলল,’নাহ।আপনার বোনের কোনো খোঁজ আমার কাছে নেই।আমি জানি না আপনার বোন কোথায়।’

নবনীতা অনুনয় করে বলল,’প্লিজ একটু দেখুন না।কিছু একটা করা যায় কিনা দেখুন।প্রয়োজনে আমি টাকাও দিতে রাজি।’

‘আহা! বললাম না আমি কিছু জানি না।আপনি বাজে না বকে যান তো এখান থেকে।’

নবনীতা গেল না।উল্টো জেদ ধরল।দু’হাত জোড় করে বলল,’প্লিজ আমাকে এভাবে নিরাশ করবেন না।আপনি ছাড়া এই ব্যাপারে আমাকে আর কেউ সাহায্য করতে পারবে না।পুলিশে চব্বিশ ঘন্টা না হলে মিসিং ডায়রি করা যাবে না।আপনি তো জানেন,চব্বিশ ঘন্টায় কতো কি হয়ে যেতে পারে।প্লিজ আপনি কিছু একটা করুন।’

ফাহাদ বিরক্ত হলো।চোখ মুখ খিঁচে বলল,’উফফ! ভারি বেয়াদব মেয়ে তো আপনি! বললাম না আমি কিছু জানি না?আবার এক কথা বলে যাচ্ছেন।যান নিজের রাস্তা নিজে মাপুন।আমি কিছু করতে পারব না।’

‘প্লিজ একবার একটু আমার দিকটা,,,,’
মুঠোফোন টা কর্কশ শব্দে বেজে ওঠল।নবনীতা তার কথা ঠিক মতো শেষও করতে পারল না। প্রথম বারেই সে কলটা রিসিভ করে নি।দ্বিতীয়বারে একপ্রকার বিরক্ত হয়ে সে ফোনটা রিসিভ করে কানের সাথে চেপে ধরল।নিরাসক্ত কন্ঠে বলল,’জ্বী কে বলছেন?’

অন্যপাশ থেকে কি উত্তর এসেছে সেটা বোঝা গেল না।কিন্তু অন্যপাশের কথা শুনতেই নবনীতা এক লাফে বসা থেকে উঠে দাঁড়াল।ফাহাদ তার হঠাৎ এমন লাফিয়ে ওঠাতে ভড়কে গেল।চোখ বড় বড় করে বলল,’কি হয়েছে?’

নবনীতা সেসব পাত্তা দিল না।সে ফোনটা কানে চেপেই দিগবিদিক শূন্য হয়ে ছুটতে শুরু করল।চোখের নিমিষে সে ফাহাদের পার্টি অফিস থেকে বেরিয়ে তিনতালা বেয়ে নিচে নেমে এলো।ফাহাদ ভ্রু কুঁচকে মনে মনে আওড়াল,’কি অদ্ভুত মেয়ে! দৌঁড়ে দৌঁড়ে এলো,আবার দৌঁড়ে দৌঁড়েই চলে গেল।
.
.
.
.
নবনীতার ফোনে মেসেজ করে যে লোকেশান টা পাঠানো হয়েছিল,নবনীতা জিপিএস অন করে ঘন্টাখানেকের মধ্যেই সেখানে পৌঁছে গেল।

সিএনজির ভাড়া মিটিয়ে কপালের ঘাম মুছে সে ফোনে থাকা লোকেশানের সাথে আশেপাশের লোকেশন মিলিয়ে নিল।তাকে যেই জায়গায় আসতে বলা হয়েছে সেটা একটা নির্মাণাধীন দশতালা বাড়ি।এখনও সবগুলো দেয়াল ঠিকভাবে দেওয়া হয়নি।

নবনীতা নিচতলায় পা রেখে চারদিকে চোখ ঘুরিয়ে আশপাশ দেখে নিল।এতো নিরব কেন এই জায়গা?যদিও দিনের বেলা,তবুও তার গা ছমছম করছে।সে মোবাইলের স্ক্রীনে আঙুল চালিয়ে তাকে যেই নম্বর থেকে ফোন করা হয়েছিল সেই নম্বরে ডায়াল করল।

রিং হওয়ার আগেই তাকে পেছন থেকে কেউ ডাকল,’মিস নবনীতা!’

চকিতে পেছন ফিরল সে।চোখ গেল সাদা শার্ট গায়ে একটি ছেলের দিকে।ছেলেটি নিজ থেকে এগিয়ে এলো।কাছে আসতেই নবনীর মনে হলো সে এর আগেও তাকে দেখেছে।

ছেলেটি কোনোরকম বাড়তি কথায় না গিয়ে শুরুতেই বলল,’আসুন আমার পেছন পেছন আসুন।’

নবনীতা তার পেছন পেছন হাঁটা ধরল।হাঁটতে হাঁটতেই তার মনে পড়ল এই ছেলেটি তার চেনা।শাহরিয়ার আরহামের পার্টি অফিসে সে একে দেখেছে।হঠাৎ করেই কেমন অজানা আতঙ্কে নবনীতার চিত্ত ব্যাকুল হয়ে ওঠল।শুভির নিখোঁজ হওয়ার সাথে কি কোনোভাবে আরহাম জড়িয়ে আছে?নবনী আর সামনের কথা ভাবল না।ভাবতে নিলেই সবার আগে বাজে কথা মাথায় আসে।

নির্মাণাধীন ভবনটির সেকেন্ড ফ্লোরে একটা রুম আছে।আশ্চর্যের বিষয়,রুমে দরজাও আছে।ছেলেটি দরজা খুলে সরে দাঁড়ালো,যার অর্থ নবনীতাকে যেতে হবে ভেতরে।নবনীতা এক সেকেন্ড কিছু একটা ভেবে চুপচাপ ভেতরে পা বাড়ালো।

নবনীর ভাবনাই সত্যি বলে প্রমাণিত হয়েছে।ঘরের ভেতর আরহাম আর তার সঙ্গী সাথীরা ছিল।সেই সাথে আরো একজন ভদ্র মতোন লোক ছিলেন।তার হাতে ক্যামেরা আর মাইক্রোফোন।

নবনীতা চোখ মুখ শক্ত করে ঘরের ঠিক মাঝামাঝি এসে দাঁড়ালো।আরহামকে এখনো ভালোমতো দেখেনি সে।লোকটা আরহাম বুঝতেই সে চোখ নামিয়ে নিয়েছে।আরহাম অবশ্য চোখ সরায়নি।নবনীতা তার দৃষ্টিসীমার মধ্যে আসার পর থেকে সে একটানা শুধু তাকেই দেখে গেল।আরহাম আবিষ্কার করল এই মেয়েটির সাথে তার রাগের সম্পর্ক সমানুপাতিক।যতবেশি সে নবনীতাকে দেখে,ততবেশি তার মাথায় খু/ন চেপে যায়।মাথায় টগবগ করে রক্ত ফুটে।মনে হয় এক চড় মেরে নবনীতার সব দাবাংগিরি বের দিতে।

আরহাম তার রাগটুকু বহু কষ্টে গিলে নিল।নবনীতা মেঝেতে চোখ রেখেই বলল,’শুভি কোথায়?আপনারা আমার শুভিকে কোথায় রেখেছেন?’

‘আছে।সে ভালোই আছে।নিরাপদে আছে’,চুল ঠিক করতে করতে জবাব দিল আরহাম।

‘আমার বোনের সাথে কেন এমন করছেন?তার কি দোষ?আমার অন্যায়ের শাস্তি শুভিকে কেন দিচ্ছেন?’বলতে বলতেই নবনীর কথা জড়িয়ে এলো।যেই কঠোরতা সে চোখে মুখে জড়িয়ে রাখতে চাইছে,কিছুতেই সেটা সম্ভব হচ্ছে না।শুভি আরহামের কাছে আছে।এই অবস্থায় নবনীতার হঠকারিতা পরিস্থিতি আরো বিগড়ে দিতে পারে।আরহামকে তার চেনা হয়েছে।শাহরিয়ার আরহাম ক্ষমতা পাওয়ার জন্য সবই করতে পারে।

আরহাম পকেটে হাত গুজে ঠিক নবনীতার মুখোমুখি এসে দাঁড়ালো।বাঁকা হেসে বলল,’তোমার শুভিকে ধরতে চাইনি।ইনফেক্ট তোমাকেও ধরে আনার কোনো উদ্দেশ্য ছিল না।কিন্তু আমার আহাম্মক ছেলেরা ভুলে তোমাকে তুলে না এনে তোমার বোনকে তুলে এনেছে।’

নবনীতা দাঁতে দাঁত চেপে ক্ষোভটুকু ভেতরে চেপে রাখল।শুভিকে না পাওয়া পর্যন্ত সে কোনো বোকামি করবে না।সে ক্লান্ত স্বরে বলল,’এখন তো জেনেছেন ভুল করেছেন।এখন শুভিকে ছেড়ে দিন।’

‘দিব,তার আগে তুমি একটা কাজ করবে।’

‘কি কাজ?’ অস্থির শোনাল নবনীতার কন্ঠ।

আরহাম তার তর্জনী তুলে ক্যামেরা হাতে দাঁড়ানো ভদ্রলোককে দেখিয়ে বলল,’তুমি উনার কাছে এখানে বসে একটা ইন্টারভিউ দিবে।’

নবনীতা হকচকিয়ে গেল।কপাল কুঁচকে বলল,’কি?ইন্টারভিউ?’

‘হু।ইন্টারভিউ।সাক্ষাৎকার আরকি।’

‘আমি কিসের ইন্টারভিউ দিব?আমি কে?’

আরহাম চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,’সেটাই তো আমারও প্রশ্ন তুমি কে?হু আর ইউ যে তোমার এক কথায় আমাকে এতো ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে?’

নবনীতা এবার সোজাসুজি তাকাল আরহামের দিকে।ক্রোধে ফেটে পড়া দু’টো চোখের সাথে অজানা আতঙ্কে দমে যাওয়া দু’টো চোখের দৃষ্টি বিনিময় ঘটল অতি অল্প সময়ের জন্য।

নবনীতা ক্ষীণ গলায় বলল,’কি করতে হবে আমায়?কি বলব ইন্টারভিউ তে?’

আরহাম ফিচেল হাসল।জানতে চাইল,’সেটা আমাকে জিজ্ঞেস করছ কেন?সেদিন মিডিয়ার সামনে ভাষণ দেওয়ার আগে আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলে?’

একশোটা উত্তর নবনীতার মুখের সামনে এসে তার অনুমতির অপেক্ষা করছিল।অনুমতি দিলেই সেগুলো সে আরহামের মুখের ওপর উগলে দিল।কিন্তু নবনীতা তার কিছুই করল না।উল্টো বাধ্য মেয়ের মতো বলল,’কোথায় বসে ইন্টারভিউ দিতে হবে?এখানে?’

‘হ্যাঁ এখানেই।রাশিদ তোমার কথা রেকর্ড করবে।তারপর বাকিটা আমি নিজ দায়িত্বে পৌঁছে দিব বাকি নিউজ চ্যানেলের কাছে।’

নবনীতা রোবটের মতো হেঁটে চেয়ারে গিয়ে বসল।একবার কেবল চোখ তুলে জানতে চাইল,’কি বলব?আমার মিস আন্ডারস্ট্যান্ডিং হয়েছিল তাইতো?’

আরহাম একটু ভেবেচিন্তে বলল,’তা বলতে পারো।সাথে আমার প্রশংসা করবে বুঝেছ?বলবে এইবারের নির্বাচনে আমার চেয়ে পারফেক্ট আর কেউ হতেই পারে না।বুঝেছ তো?’

রাশিদ এগিয়ে এসে ক্যামেরা সেট করল।ছোট্ট মাইক্রোফোনটা নবনীর জামার গলায় সেট করে বলল,’জ্বী ম্যাম এখন বলুন।’

নবনীতা দুই হাত মুঠ করে দু’টো দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলা শুরু করল,’গত পরশুদিন আমি একটা ভুল করেছি।আমার ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল।জনাব শাহরিয়ার আরহাম আসলে রাস্তা ব্লকের ব্যাপারে কিছুই জানতেন না।বিষয়টা আমি বুঝতে পারিনি।যা কিছু হয়েছিল সেদিন,পুরোটাই উনার অজানা ছিল।উনাকে এসবে জড়ানো ঠিক হয়নি আমার।আমি বুঝতে পারি নি।আপনারা দয়া করে উনাকে খারাপ ভাববেন না।উনার সাথে ঐ ঘটনা গুলোর কোনো সম্পৃক্ততা নেই।’

‘হয়েছে।এবার আমার একটু প্রশংসা করে দাও।’ পাশ থেকে বলে উঠল আরহাম।

নবনীতা কটমট চোখে একনজর তাকে দেখে পুনরায় বলতে শুরু করল,’জনাব আরহাম আসলে খুবই জনদরদী মানুষ।উনি নির্বাচনে জয়ী হলে আমরা খুব ভালো কিছু পাবো বলেই আশাবাদী আমি।’

‘হয়েছে?প্রশংসা হয়েছে ঠিক মতো?’ গোমড়া মুখ করে জানতে চাইল নবনীতা।

আরহাম ডানহাত টা এপাশ ওপাশ নেড়ে মুখ বাঁকা করে বলল,’হয়েছে কোনোরকম।বিলো এভাররেজ।চালিয়ে দেওয়ার মতো।কিন্তু আমার অতোটা পছন্দ হয়নি।খুবই চাপা চাপা প্রশংসা।তোমাকে মন খুলে প্রশংসা করা শিখতে হবে।যাকগে,,আমি অতো প্যাচ ধরার মানুষ না।এটাতেই কাজ চালিয়ে নিব।’

‘শুভি কোথায়?এবার অন্তত তাকে দিন আমার কাছে।’

আরহাম ডানদিক ফিরে চুল ঠিক করতে করতে বলল,’শাহিন যা তো।শুভ্রাকে নিয়ে আয়।’

শাহিন চলে গেল আর মিনিট দু’য়ের মাথায় শুভ্রাকে সাথে নিয়ে ফিরল।শুভ্রা তার কলেজ ব্যাগটা শক্ত করে জাপটে ধরে জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িয়েছিল।নবনীতাকে দেখেমাত্রই সব ভয় ভুলে সে এক দৌঁড়ে ছুটে এসে তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল।জড়ানো গলায় বলল,’আপাই! তুমি এসেছ?’

নবনীতা তার দুই বেণী করা মাথায় হাত ছুঁয়িয়ে তাকে শান্ত করতে করতে বলল,’তুই ঠিক আছিস তো শুভি?কেঁদে কেটে কি হাল করেছিস নিজের?’

শুভ্রা হয়তো আরো কিছু বলতে চাইছিল,কিন্তু তার আগেই নবনীতা শক্ত করে তার হাত ধরে তাকে টানতে টানতে বলল,’বাড়ি গিয়ে সব কথা হবে।এখন চল এদিক থেকে।’

দুই বোন চোখের নিমিষেই উধাও হয়ে গেল।যাওয়ার আগে সৌজন্যসূচক একটা শব্দ পর্যন্ত বলে গেল না।শাহিন চোখ বড় বড় করে বলল,’বাপরে! আপার দেখি খুব তেজ।’

আরহাম তাচ্ছিল্য করে বলল,’তেজ মাই ফুট! পুরাই বেয়াদব একটা!’
.
.
.
.
রিকশাতে উঠেই নবনীতা অনবরত প্রশ্ন শুরু করল,
‘ওরা তোর সাথে উল্টাপাল্টা কিছু করে নি তো?’
‘ছোঁয় নি তো তোকে?’
‘বাজে কথা বলেনি তো?’
‘ছবি টবি কিচ্ছু তোলেনি তো?’
‘তোর দিকে বাজে চোখ করে দেখেনি তো?’

শুভ্রানী এতো এতো প্রশ্নের রোষানলে পড়ে ভড়কে গেল।নবনীতা আর কিছু প্রশ্ন করার আগেই সে তার মুখ চেপে ধরল।ব্যস্ত হয়ে বলল,’থামো আপাই,থামো।আমি একদম ঠিক আছি।আমার কিচ্ছু হয়নি।ওরা আমায় কিছু করেনি।কেবল চুপচাপ একটা রুমে বসিয়ে রেখেছিল।আর কিছু করেনি।’

‘ঐ আরহামের সাথে তোর দেখা হয়েছে?কি বলেছে সে তোকে?’

শুভ্রা কেবল কিছু একটা বলতেই যাচ্ছিল,তার আগেই নবনীতা মাথায় হাত চেপে বলল,’থাক হয়েছে।মাথা ব্যথা করছে,পরে শুনব এসব।’

বাড়ি ফিরেই নবনীতা গোসল করে একটা ঢিলেঢালা আকাশী রঙের সুতির জামা গায়ে জড়িয়ে বেরিয়ে এলো।ঘরে এসেই সে দেখল শুভ্রানী আর চিত্রা খাটের এক কোণায় বসে আছে।শুভ্রার হাতে একটা প্যাকেট।

নবনীতা চুল মুছতে মুছতে তাদের সামনে এসে দাঁড়ালো।জানতে চাইল,’হাতে কি?কি আছে এতে?’

শুভ্রা চোরের মতোন মুখ করে বলল,’প্যাটিস।চিকেন প্যাটিস।’

নবনীতা চোখ পাকালো।জিজ্ঞেস করল,’কোথায় পেলি?কে দিলো?’

শুভ্রা কাচুমাচু মুখ করে জবাব দিলো,’শাহরিয়ার আরহাম ভাই দিয়েছে।’

নবনীতা উত্তর শুনেই আকাশ থেকে পড়ল।একমুহূর্ত দেরি না করে এক ধাক্কায় প্যাটিসের প্যাকেট টা শুভ্রানীর হাত থেকে ফেলে দিল।সেটা গিয়ে পড়ল মেঝেতে।নবনীতা দাঁতে দাঁত পিষে কিড়মিড় করে বলল,’আরহাম ভাই দিয়েছে মানে?তার দেওয়া জিনিস তুই নিয়েছিস কেন?সে তোকে কেন দিবে এসব?’

শুভ্রা চোখ পিটপিট করে বলল,’আমাকে ধরে নেওয়ার পর আরহাম ভাই যখন জানল যে ভুল করে আমাকে তুলে আনা হয়েছে তখন সে আমাকে এই প্যাকেট টা দিয়েছে।সাথে একটা কোল্ড ড্রিংকসও দিয়েছে।ঐটা ব্যাগে আছে।আর বলেছে__’

জিভ কাটল শুভ্রা।নবনীতা চোখ রাঙিয়ে বলল,’কি থামলি কেনো?আর কি বলেছে?’

‘ইয়ে মানে বলেছে যে তোমার ঘ্যান ঘ্যান শুনতে শুনতে যখন আমি ক্লান্ত হয়ে যাবো,তখন যেন আমি এটা খেয়ে নেই।এটা নাকি শহরের সবচেয়ে মজার প্যাটিস।’ বলতে বলতেই ফিক করে হেসে দিল শুভ্রা।

নবনীতা থম মেরে কয়েক পল সেভাবেই দাঁড়িয়ে রইল।শুভি হাসছে?ঐ জানোয়ারের জিম্মায় থেকেও শুভি হাসছে?সে কি জানে না ঐ লোক কি পরিমান বদ?

শুভ্রা মাথা নিচু করে হাসি থামাল।আপাই খুব রেগে যাচ্ছে।আপাই রেগে গেলে ঠিক মতো কথা বলে না।আপার রাগের যথাযথ কারণ আছে।আরহামের চ্যালাপেলা গুলো আসলেই জঘন্য।কিন্তু অদ্ভুত কারনে আজ সে ভয় পায়নি।শুরুতে যদিও ভয়ে তার শ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল,কিন্তু ঐ ছোট্ট রুমটায় বসার পর কিংবা শাহরিয়ার আরহামকে দেখার পর তার একবারও মনে হয়নি তার সাথে খুব খারাপ কিছু ঘটে যাবে।

শুভ্রা মুখটা মলিন করে কানে হাত দিয়ে বলল,’সরি আপাই!এরপর থেকে ঐ বদলোক যদি আমায় পিৎজা বার্গারও দেয়,আমি তবুও নিব না।বলব তোর পিৎজা তুই খা।তোর মতো জন্তুর কাছ থেকে আমি পানিও খাব না।ঠিক আছে?এবার অন্তত রাগারাগি বন্ধ করো প্লিজ।’

নবনীতা চোখ মুখ শক্ত করে একনজর তার দুই বোনকে দেখে চুল মুছতে মুছতে হনহনিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।তার মেজাজ বিগড়ে যাচ্ছে,তার ভয়ানক রকম রাগ হচ্ছে শুভির ওপর।

চলবে-

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে