কোনো এক শ্রাবণে পর্ব-০৫

0
121

#কোনো_এক_শ্রাবণে
লেখনীতে #মেহরিমা_আফরিন

(৫)

‘আমি শেখ শাহরিয়ার আরহাম।আমার বাবা প্রয়াত সংসদ সদস্য শেখ আজিজ হোসেন।আমার বাবাকে চেনে না এমন মানুষ হয়ত খুঁজে পাওয়া যাবে না।আমার বাবা জনমানুষের নেতা ছিলেন।তিনি তার জীবদ্দশায় জনমানুষের জন্যই কাজ করে গেছেন।বাবার মৃত্যুর পর আমি কিংবা আমার ভাই কেউই রাজনীতিতে আসতে চাইনি।কিন্তু রাজনীতির প্রতি যেই অপ্রতিরোধ্য টান আমি অনুভব করি,সেটাকে অস্বীকার করার সাধ্যি আমার নেই।আমি বেশি কিছু বলতে চাই না।শুধু বলতে চাই আমি আরহাম কেবলমাত্র আমার বাবার দেখানো পথে চলতে চাই,তার আদর্শ অনুসরণ করতে চাই।আমি আপনাদের মাঝে থেকেই আপনাদের প্রতিনিধি হয়ে উঠতে চাই।আমি কোনো মন্ত্রীত্ব চাই না।আমি চাই প্রতিনিধিত্ব।আমি আপনাদের সবার হয়ে কাজ করতে চাই।কাল হয়তো আনুষ্ঠানিক ভাবে মনোনয়ন পত্র পেয়ে যাব।তারপরই পুরোদমে নির্বাচনের প্রচারণা শুরু হয়ে যাবে।এই সময়টুকুতে আপনাদের আমার খুব প্রয়োজন।আপনারা এভাবেই আমার পাশে থাকবেন।আমাকে অনুপ্রেরণা আর ভালোবাসা দিয়ে যাবেন।আমি আপনাদের সাহায্য চাই,সেই সাথে আপনাদের উৎসাহ আর হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা চাই।আপনারা এই দুর্গম পথচলায় আমার পাশে থাকবেন তো?পাশে থেকে আমাকে সাহস জোগাবেন তো?’

আরহাম থামল।তার প্রশ্নের জবাবে সমাবেশে উপস্থিত লোকজন সমস্বরে চেঁচিয়ে ওঠল।স্পষ্ট করে জানাল তারা পুরোটা সময়ই আরহামের পাশে থাকবে।আরহাম পুনরায় মাইক্রোফোন হাতে নিল।মুখে চওড়া হাসি বজায় রেখে বলতে শুরু করল,’আমি জানি দেশ পরিচালনা করার জন্য অভিজ্ঞ আর সুবিবেচক ব্যক্তির প্রয়োজন।কিন্তু সেই সাথে আমি এটাও বিশ্বাস করি বর্তমানে পৃথিবী যে গতিতে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে,সেই গতির সাথে খাপ খাওয়ানোর জন্য আধুনিক চিন্তাধারার,অভিযোজন ক্ষমতা সম্পন্ন তরুণ নেতৃত্বের প্রয়োজন।তাই এইবারের নির্বাচনে আপনাদের পছন্দ হওয়া উচিত বর্তমান প্রজন্মের সাথে তাল মেলাতে পারে এমন ব্যক্তি।এখন আর সেই যুগ নেই যে কেবল বয়সের ভার দেখেই আপনারা প্রতিনিধি নির্বাচন করবেন।এখন থেকে,,,’

‘বন্ধ করুন এসব।’ আরহামের কথা শেষ না হতেই সমাবেশের অন্য পাশ থেকে চেঁচিয়ে ওঠল একটা সুমিষ্ট নারীকন্ঠ।

আরহাম স্তব্ধ হয়ে সামনে তাকালো।তার থেকে বেশ কয়েক হাত দূরে একটি মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে।তার হাতে একটা মাইক্রোফোন,যেটা সে সমাবেশে উপস্থিত একজন স্টাফ রিপোর্টারের কাছ থেকে চেয়ে নিয়েছে।

পুরো সমাবেশে উপস্থিত মানুষ আরহামের দিক থেকে চোখ সরিয়ে মেয়েটির দিকে মনোনিবেশ করল।মেয়েটির মাইক ধরে রাখা হাত থরথর করে কাঁপছে।আরহামের সাথে চোখাচোখি হতেই সে পুনরায় বলে ওঠল,’বন্ধ করুন এসব সমাবেশ।আপনারা এভাবে মানুষের পথরোধ করে,তাদের মূল্যবান সময় নষ্ট করে সমাবেশ করতে পারেন না।এটা অন্যায়।এটা হতে পারে না।’

যদিও তার হাত কাঁপছিল ভীষণ,কিন্তু কথাগুলো বলতে গিয়ে একটিবারের জন্যও তার কন্ঠ কাঁপলো না।সে একটানা বলে গেল,না থামল,আর না ভয় পেল।

সমাবেশ কভার করতে আসা মিডিয়াগুলো সঙ্গে সঙ্গে তাকে ঘিরে ধরল।অসংখ্য ক্যামেরার ফ্লাশ লাইটের আলোতে তরুণীটির চোখ বন্ধ হয়ে আসার উপক্রম।ডজন খানেক মাইক্রোফোন এগিয়ে দেওয়া হলো তার সামনে।রিপোর্টার’রা একের পর এক প্রশ্ন করে গেল।মেয়েটি কোনো প্রশ্নই কানে তুলল না।কেবল চোখ মুখ শক্ত করে বলল,’একটা দল কি করে রাস্তা অবরোধ করে সমাবেশ করতে পারে?সেই অধিকার কি তাদের আছে?শহরের সবচেয়ে ব্যস্ত রাস্তা গুলোর একটি ব্লক করে সস্তার সমাবেশ করা কোন ধরনের জনসেবার অন্তর্ভুক্ত?’

আরহাম চোয়াল শক্ত করে দু’হাত মুষ্টিবদ্ধ করে দাঁতে দাঁত চেপে ঠায় দাঁড়িয়ে রইল।থমথমে মুখে দু’চোখ স্থির রেখে সে নির্নিমেষ অবলোকন করে গেল নিউজ রিপোর্টার কতৃক ঘিরে ফেলা তেইশোর্ধ তরুণীর প্রতিটা বাক্য,প্রতিটা শব্দ।সেই প্রথম দিন থেকেই আরহাম লক্ষ করেছে,মেয়েটি যখন কথা বলে তখন তার চোখ দু’টোও একই সাথে কথা বলে।এই মুহূর্তেও নবনীতার চোখ কথা বলছে।যেই চোখে প্রতিবাদ আছে,ঘৃণা আছে,আর আছে আরহামের প্রতি ভয়ংকর রকমের বিরক্তি।

নবনীতা জড়ানো গলায় বলল,’দোয়েল চত্ত্বরে একটা অ্যাম্বুলেন্স আটকে আছে,ভেতরে এক্সিডেন্টের পেশেন্ট।হয়ত এতোক্ষণে তিনি বেঁচেও নেই।রাস্তা অবরোধ করে এই গাড়িটা আটকে রাখা হয়েছে কেবল সস্তার একটা সমাবেশের জন্য।কি হবে এই সমাবেশ করে?ঐ ভদ্রলোকের জীবন কি আপনাদের নেতার সস্তা দু’পয়সার ভাষণের চেয়েও বেশি মূল্যহীন?একটা দেশে এরকম অরাজকতা করে কোন সাহসে?এরা মানুষের জন্য কি করবে?নির্বাচিত হওয়ার পূর্বেই যাদের কাছে মানুষের সময় আর জীবনের কোনো মূল্য নেই,তারা নির্বাচিত হওয়ার পর কিসের জনসেবা করবে?আপনাদের নেতা কি পারবে ঐ ভদ্রলোকের প্রাণ ফিরিয়ে দিতে?তাকে বলুন যদি ন্যুনতম বিবেকবোধ থাকে তাহলে যেন এই ফালতু সমাবেশ বন্ধ করে এখনই দোয়েল চত্ত্বরে গিয়ে ঐ লোকটিকে বাঁচানোর চেষ্টা করে,তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করে।নয়তো বলুন তার এসব লোক দেখানো ভাষণ যেন তার কাছেই রাখে।’

নবনীতা একটানে পুরো কথা শেষ করল।মিডিয়ার লোকেরা তাকে আরো বেশি ঘিরে ধরার চেষ্টা করল।কিন্তু সে তার দুই হাত তার কাঁধের একপাশে ঝুলানো ব্যাগটা খাঁমচে ধরে দ্রুত সেখান থেকে বেরিয়ে এলো।

ঘড়ির কাঁটায় তখন একটা পনেরো বেজে গেছে।নবনীতা জোরে জোরে দু’বার টেনে শ্বাস নিল।তারপর কপালের ঘামটুকু ওড়নার একপ্রান্ত দিয়ে মুছে নিল।নিজেকে শান্ত করার প্রয়াসে নবনীতা দু’হাতে মুখ চেপে দু’চোখ বুজে এক মিনিট ঠায় দাঁড়িয়ে রইল।শুভ্রানীর কলেজ ছুটি হয়ে গেছে এতোক্ষণে।নবনীতা দ্রুত পা চালাল।শুভি নিশ্চয়ই তার জন্য অপেক্ষা করছে।

শুভ্রা কে তার কলেজের সামনে থেকে নিয়ে নবনীতা সোজা একটা রিকশা ঠিক করল।শুভ্রা অবাক হয়ে বলল,’তুমি আজ রিকশা দিয়ে যাবে আপাই?’

নবনীতা হুড টানতে টানতে বলল,’আমি কি কখনো তোদের লোকাল বাসে চড়িয়েছি শুভি?’

‘তা চড়াওনি।কিন্তু নিজে তো চড়ো।আর তাছাড়া আমারও এসবে চড়ার অভ্যাস আছে।’

‘থাকুক অভ্যাস।আমার সাথে যখন যাবি তখন আমি যেভাবে নিব সেভাবেই যাবি।বুঝেছিস?’

শুভ্রানী ঠোঁট টিপে হাসল।বলল,’ঠিক আছে।বুঝেছি।’

বাড়িতে আসতেই চিৎকার চেঁচামেচির শব্দে শুভ্রা আর নবনী আঁতকে ওঠল।চাবি দিয়ে লক খুলে দ্রুত ঘরে আসতেই তারা আবিষ্কার করল চিৎকার চেঁচামেচির উৎস সাদেক সাহেবের রুম।নবনীতা কাঁধের ব্যাগটা সোফায় ছুড়ে ফেলে একপ্রকার ছুটতে ছুটতে সাদেক সাহেবের ঘরের সামনে এসে দাঁড়ালো।

ঘরের ভেতর প্রথা কোনো কিছু নিয়ে তার বাবার সাথে অকথ্য ভাষায় কথা বলছে।নবনীতা এগিয়ে গেল।আশ্চর্য হয়ে বলল,’কি হয়েছে প্রথা?এভাবে কথা বলছ কেনো?’

প্রথা পেছন ফিরল।নবনীতাকে দেখামাত্রই তার চোখমুখ আরো বেশি হিংস্র হয়ে ওঠল।সে কর্কশ গলায় বলল,’তুমি?তুমি আবার এখানে এসেছ কেন?আমি আমার বাবার সাথে কথা বলছি।তোমার এখানে কি?আমি কি বাড়িতে আমার বাবার সাথে কথাও বলতে পারব না এখন থেকে?’

নবনী দুই কদম এগিয়ে এলো।দু’হাত বুকে বেঁধে থমথমে মুখে বলল,’কথা কেন বলবে না?অবশ্যই বলবে।কিন্তু চিৎকার কেন করবে?তুমি কে আমার মামার সাথে চিৎকার করে কথা বলার?তোমার সেই অধিকার নেই।শুধু তুমি না,এই বাড়ির কারোই সে অধিকার নেই প্রথা।’

কথার মাঝে নবনীর এই ঝাঁঝালো উত্তর প্রথার মেজাজ আরো বেশি বিগড়ে দিলো।সে প্রায় চিৎকার করে বলল,’জাস্ট শাট আপ! তুমি কেন বারবার ভুলে যাও তুমি,তোমার বোন,তোমরা সবাই এ’বাড়ির আশ্রিতা।আশ্রিতার মতোই থাকবে।সবকিছুতে কথা বলো কেন?’

‘আশ্রিতা কোথায় প্রথা?এটা আমার মামার বাড়ি।আমার মামা ভালোবেসে এ’বাড়িতে আমায় স্থান দিয়েছে।আমি তো নিজেকে আশ্রিতা ভাবছি না।’

‘তোমার ভাবা তে কি যায় আসে?তুমি অবশ্যই আশ্রিতা।’

‘ঠিক আছে।তুমি যদি তা ভেবে শান্তি পাও তবে তাই।কিন্তু আমার জানা মতে আশ্রিতারা বাড়ি ভাড়া দিয়ে বাজার করে ঘর চালায় না।তোমার সংজ্ঞাকৃত আশ্রিতারা বোধহয় সেসব করে তাই না?’

খোঁচা বিভিন্নভাবে দেওয়া যায়।নবনীতা যেহেতু ভণিতা পছন্দ করে না,তাই সে সোজাসাপ্টাই সবটা বলে দিলো।সে আশ্রিতা নয়।শুভি আর চিত্র কেউই আশ্রিতা নয়।তাদের নামের পাশে এ ধরণের শব্দ কেন সহ্য করবে নবনী?এই বাড়ির ভাত রুটি খাওয়ার জন্য নবনীকে অত্যন্ত পরিশ্রম করতে হয়েছে।জীবনের সব আনন্দ বিসর্জন দিতে হয়েছে।কেবল একটু সম্মানের আশায়,কটু কথা থেকে বাঁচার আশায়।

প্রথা রাগে গজরাতে গজরাতে বলল,’উদ্ধার করেছ তুমি আমাদের।আমরা ধন্য তোমার কাছে।এবার যাও নিজের ঘরে যাও।আমার বাবা আর আমার মাঝে ঢুকবে না।’

নবনীতা তাকে এড়িয়ে গেল পুরোপুরি।তার কথায় বিন্দুমাত্র কর্ণপাত না করে সে গিয়ে সাদেক সাহেবের মুখোমুখি দাঁড়ালো।বিনয়ী সুরে জানতে চাইলো,’কি হয়েছে মামা?তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেন?’

সাদেক সাহেবের দু’চোখ জলে টইটুম্বুর।মুখটা একদম পাংশুটে দেখাচ্ছে।বিবর্ণ চোখ দু’টো অনেক কিছু বলতে গিয়েও কিছুই বলতে পারছে না।শুধু নবনীতার সাথে চোখ মিলতেই ক্লান্ত স্বরে বললেন,’কিছু না মা।তুই ঘরে যা।সবে তো এসেছিস।যা গিয়ে হাত মুখ ধুয়ে নে।’

নবনী তক্ষুনি গেল না বরং আরো কিছু সময় চুপচাপ ঘরের এক কোণে দাঁড়িয়ে রইল।প্রথা নিজে নিজে কতোক্ষণ সাপের মতো ফোঁস ফোঁস করে শেষটায় হনহনিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।সে বেরিয়ে যাওয়ার পর নবনীতাও বিনা বাক্য ব্যয়ে দরজা ভিড়িয়ে দিয়ে শম্বুক গতিতে ঘর থেকে বেরিয়ে এলো।

নিজের ঘরে আসার পরই নবনী গলায় পেঁচানো ওড়নাটা খাটের উপর ফেলে হাত পা ছড়িয়ে খাটের উপর পড়ে রইল।চিত্র খাটের এক কোণায় ঘুমুচ্ছে।নবনীতা সামান্য উঠে এসে চিত্রার পাশাপাশি বালিশে মাথা রাখল।

শুভ্রা বাড়ি ফিরেই বই খুলে বসেছে।তার কালকে ক্লাসটেস্ট।নবনী বালিশে মাথা রেখেই নিচু গলায় বলল,’এতো কি পড়ছিস শুভি?আয় আপাইয়ের কাছে আয়।মাথায় বিলি কেটে দিব।

শুভ্রানী তৎক্ষনাৎ বই বন্ধ করে টেবিল ছেড়ে উঠে এলো।গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে এসে চিত্রাকে খাটের মাঝামাঝি এনে চিত্রার গা ঘেঁষে শুয়ে পড়ল।নবনীতা হাত বাড়িয়ে শুভ্রার চুলে আলতো হাতে বিলি কেটে দিচ্ছিল।চিত্রার গাল দু’টো চোখে পড়তেই নবনী আবার টপাটপ কয়েকটা চুমু খেল।মুচকি হেসে বলল,’চিত্রটা কি সুন্দর হয়েছে! তাই না শুভি?গাল দু’টো একদম মায়ের মতো হয়েছে দেখেছিস! কি সুন্দর লাগে আমার পাখিটাকে!তোরা দু’টোই হয়েছিস একেবারে রসগোল্লা।’

শুভ্রা ভেঙচি কাটল।গাল ফুলিয়ে বলল,’রসগোল্লা না ছাই! আমার আর চিত্র’র নাক বোঁচা।দেখতে কেমন যেন দেখায়।আমরা কেউ পরী আপাইয়ের মতো সুন্দর হতে পারিনি।’

নবনীতা গোল গোল চোখ করে তার কথা শুনল।দুষ্টুমি করে বলল,’তোরা কি আমাকে বিশ্ব সুন্দরী ভাবিস রে?’

শুভ্রা ঝটপট জবাব দিল,’ভাবি না।তুমি সত্যিই বিশ্ব সুন্দরী।জীবনে কতো জায়গায় গিয়েছি,কতো মানুষ দেখেছি।তোমার মতো এতো সুন্দর মানুষ দু’টো দেখিনি।আমি হলফ করে বলতে পারি খোলা চুলে যে ছেলে তোমাকে দেখবে,সে তোমার প্রেমে পড়বেই পড়বে।’

কথা শেষ হতেই শুভ্রানী জিভ কাটল।আবেগের চোটে সে একটা নিষিদ্ধ শব্দ উচ্চারণ করে ফেলেছে।সে ভয়ে ভয়ে পাশ ফিরল।দেখল নবনীতার হাসিহাসি মুখটা আচমকা কেমন গম্ভীর হয়ে গেছে।

নবনীতা চোখ পাকিয়ে জানতে চাইল প্রেম আবার কি শুভি?কেমন করে পড়ে?দেখি আমাকে একটু খুলে বল তো।’

শুভ্রা দ্রুত চোখ বন্ধ করে মুখের উপর কাঁথা টেনে নিল।এই মুহূর্তে যত দ্রুত সম্ভব ঘুমিয়ে পড়াই শ্রেয়।

সে চোখ মুখ ঢেকে ফেলতেই নবনীতা ঠোঁট টিপে হাসল।বেচারি নির্ঘাত ভয় পেয়েছে কিছুটা।সে হাতের উপর ভর করে আধশোয়া অবস্থায় চিত্রার কপালে ঠোঁট ছোঁয়ালো।শুভি তার মুখের উপর কাঁথা দিয়ে ঢেকে রেখেছে।নবনীতা কাঁথার উপর দিয়েই তার কপালে পর পর দু’বার চুমু খেল।তারপর নিজের বালিশে মাথা রাখতেই সেকেন্ডের মাথায় গভীর ঘুমে তার দু’চোখ বুজে এলো।
.
.
.
.
মিনিট দু’য়েকের একটা ভিডিও।সেই স্বল্প সময়ের ভিডিও ক্লিপটাই সচিবালয় থেকে শুরু করে শহরের একটা সাধারণ টং দোকান পর্যন্ত পৌঁছে গেল।

সাবেক এমপি আজিজ হোসেনের ছেলে শেখ আরহামের রাস্তা অবরোধ করে সমাবেশ করার প্রতিবাদে একজন তরুণীর অনর্গল কথোপকথন।পুরোটা সময় তরুনীটি এক নাগাড়ে কথা বলে গেল।এক মুহূর্তের জন্যও থামল না,দমল না।কেবল স্পষ্টভাবে তুলে ধরল রাজনীতির একটি নোংরা দিক।

শত শত মানুষের পথ আটকে রেখে নিজের দলের সমাবেশ করা কোনো প্রশংসার কাজ না।যদিও সব নেতারাই এই কাজ করে।তবে সব জায়গায় তো আর নবনীতা নামের বাঘিনীরা থাকে না।আরহামের কপাল খারাপ।ঘটনাটা ঘটেছে তার সমাবেশ কে কেন্দ্র করে।তার ভাগ্য আরো এক জায়গায় তার সহায় হয়নি।যেই অ্যাম্বুলেন্স টি দীর্ঘসময় জ্যামে আটকে ছিল,সেটার ভেতরে থাকা রোগী গাড়িতে থাকা অবস্থাতেই পরলোকগমন করলেন।একেবারে মরার উপর খরা বাগধারার মতো ব্যাপার।

চারদিক থেকে একেকটা ফোনকলে আরহাম জর্জরিত হয়ে ওঠল।প্রশাসনিক কর্মকর্তা থেকে শুরু করে রাজনৈতিক নেতা,নিউজ রিপোর্টার,আইনজীবি প্রায় সকলেই প্রশ্ন আর সমালোচনার তোপে ফেলে তাকে কুপোকাত করে দেওয়ার চেষ্টা করল।সারাদিন একটানা ছুটোছুটি করে আরহাম শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতি কিছুটা সামাল দিতে পারল।তবে এই পর্যন্ত আসার জন্য তাকে বহু বেগ পোহাতে হলো।দেখা গেল যেই মানুষ কোনোদিন আরহামের সামনে দাঁড়িয়ে কিছু বলতে পর্যন্ত পারেনি,আজ সেই মানুষই সুযোগ বুঝে তাকে কথা শুনিয়ে দিলো।কথায় কথায় বোঝাতে চাইল আরহাম রাজনীতি সামলানোর মতোন দূরদর্শী এখনো হয়ে ওঠেনি।

আরহাম সারাদিনের ক্লান্তি শেষে বাড়িতে ফিরে সোজা তার ওয়াশরুমে গিয়ে শাওয়ার ছেড়ে কিছুক্ষণ তার নিচে দাঁড়িয়ে রইল।চোখ তার সেই সকাল থেকেই রক্তিম।দীর্ঘসময় পানিতে ভেজার দরুন তা আরো বেশি ভয়ংকর দেখাল।

আরহাম মুষ্টিবদ্ধ হাতটা দেয়ালের সাথে চেপে ধরলো।সে আজকে এক মুহূর্তের জন্যও চোখ বন্ধ করতে পারছে না।চোখ বন্ধ করলেই তার চোখের সামনে ভেসে ওঠে আজ সকালের ঘটে যাওয়া সমস্ত দৃশ্য।আরহাম দাঁতে দাঁত চেপে সবটা সহ্য করেছে আজ।

ঝমঝম শব্দ করে শাওয়ার থেকে পানি পড়ছে ফ্লোরে।আরহাম শ্যাম্পুর বোতল থেকে শ্যাম্পু বের করে নিজের মাথা নিজেই কয়েকবার চটকালো।দুঃখে কষ্টে নিজেই কয়েকবার দেয়ালে মাথা ঠুকল।কেন?কেন?কেন?কেন এমনটা হলো?তার সাথে ঐ নবনীতার কি শত্রুতা?আরহাম তার কোন বাড়া ভাতে ছাই দিয়েছে?সব ছেড়ে ঐ মেয়ের চোখে শুধু আরহামই কেন পড়ে?

চলবে-

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে