কোনো এক শ্রাবণে পর্ব-০৪

0
21

#কোনো_এক_শ্রাবণে
লেখনীতে #মেহরিমা_আফরিন

(৪)

রিমির কলটা প্রথমবারেই নবনীতা ধরতে পারেনি।গোসল শেষে যখন সে ফোনটা হাতে নিল,তখন নিজ থেকেই আবার কল দিলো তাকে।রিমি জানাল আজ বিশ্ববিদ্যালয়ে একবার আসতে হবে।একটা ফর্ম পূরণ করতে হবে।

নবনীতা কলটা রেখেই আলমারি ঘেটে একটা গেরুয়া রঙের কামিজ বের করল।জামা পরে সে প্রথমেই সাদেক সাহেবের ঘরে গেল।সাদেক সাহেব তখন আধশোয়া হয়ে পত্রিকা পড়ছিলেন।নবনীতা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে চাপা স্বরে বলল,’মামা আসি?’

সাদেক সাহেব পত্রিকা থেকে চোখ সরিয়ে নবনীতাকে দেখামাত্রই উঠে বসার চেষ্টা করলেন।নবনীতা এক ছুটে তার কাছে গিয়ে তার কাঁধে দু’হাত রেখে বারণ করল,’আহা মামা করছ কি?উঠতে হবে না।শুয়ে থাকো তুমি।’

সাদেক সাহেব আর ওঠার জন্য কোনো তাড়া দেখালেন না।উল্টো নবনীতার দু’হাত নিজের দু’হাত দিয়ে আঁকড়ে ধরলেন।ক্ষীণ কন্ঠে বললেন,’কেমন আছিস পরী মা?’

নবনীতা নিশ্চুপ হাসল।মিষ্টি করে জবাব দিলো,’আমি ভালো আছি মামা।তুমি কি রাগ হয়েছ গত দু’দিন তোমার কাছে আসিনি বলে?আমার খুব মাথাব্যথা ছিল মামা।তুমি কষ্ট পাওনি তো?’

সাদেক সাহেব মলিন মুখে হাসলেন।কাশতে কাশতে বললেন,’রাগ কেন করব মা?তুই বাদে আর আমার কাছে আসে কে?’

নবনীতা মিনিট কয়েক সেভাবেই চুপ করে বসে রইল।তারপর মেঝের দিকে চোখ নামিয়ে ধীরে ধীরে বলল,’মামা তুমি চিন্তা করো না।আমি চাকরি খুঁজছি।ভালো বেতনের একটা চাকরি পেলেই তোমার অপারেশন করাব।এরপর আর তোমায় এমন সারাদিন শুয়ে থাকতে হবে না।তুমিও সবার মতো করে হাঁটবে।একটু অপেক্ষা করো মামা।চাকরিটা শুধু পেতে দাও আমায়।’

সাদেক সাহেব আলতোছে চোখ মুছলেন।নবনীতা আশ্চর্য হয়ে বলল,’কি হয়েছে মামা?তুমি কাঁদছ কেন?’

সাদেক সাহেব কান্না থামালেন।দু’টো তপ্ত শ্বাস ছেড়ে বললেন,’কাঁদছি না রে মা।তোর কথা ভাবছি।এই যে আমরা এতোগুলো মানুষ তোর ওপর বোঝা হয়ে আছি,আর তুই কতো হাসিমুখে সবকিছু সামলে নিচ্ছিস।এইটুকু শরীরটার উপর আর কতো অত্যাচার করবি?আমার চেয়ে চিকিৎসাটা তোর বেশি প্রয়োজন পরী।’

‘আহ মামা।রাখো তো এসব কথা।আমি একদম সুস্থ আছি।’

নবনীতা কিছুসময় নিরব থেকে আবার নিজ থেকে বলতে লাগলো,’বাবা মা’র মৃত্যুর পর পৃথিবীটা কেমন ভেঙে চুরমার হয়ে গিয়েছিল মামা।তখন শুভি আর চিত্রকে নিয়ে আমার মনে হচ্ছিল আমি কোনো মরুভূমিতে দাঁড়িয়ে আছি।শুকনো মরু,ধু ধু প্রান্তর,চারিদিকে কোথাও কেউ নেই।সেই দিনগুলোর মতো অসহায় আমার আর কোনোদিন লাগেনি মামা।মা নেই,বাবা নেই,মাথার উপর কোনো ঠাই নেই।সেই চরম দুর্দিনে তুমি আমাদের একটা ঠাঁই দিয়েছ মামা।মাথার উপর একটা ছাদ জোগাড় করে দিয়েছ।তোমার অসুস্থতার আগ পর্যন্ত তুমি আমাদের আগলে রেখেছ,কোনোদিন একটাও মন্দ কথা বলোনি।অসুস্থ হওয়ার পরেও আমার অনুপস্থিতিতে চিত্র আর শুভিকে দেখে রেখেছ।তুমি বাদে আমাদের আর আছে কে মামা?আমরা কি করে তোমার অবদান ভুলতে পারি?’

সাদেক সাহেব জড় পদার্থের মতো নিশ্চুপ বসে রইলেন।নবনীতার কন্ঠ জড়িয়ে আসল,কিন্তু চোখ দিয়ে সামান্য জলও এলো না।সেই দু’টো চোখে সাদেক সাহেব বহু বছর ধরে জল দেখেন নি।সাদেক সাহেব টের পেলেন মেয়েটি অনন্যা।প্রেম আর প্রতিবাদের এক অনন্য মেলবন্ধনে তার নারীসত্ত্বাটি ঝলমল করে ওঠে।দুই বোনের জন্য তার ভেতরে আদর আর ভালোবাসার কোনো সীমা নেই,,ঠিক একইভাবে অন্যায়ের প্রতিবাদে তার মধ্যে প্রতিরোধ আর বিদ্রোহের কোনো কমতি নেই।সে সত্যিই পরী,মানুষের মাঝে মিশে থাকা একটা চমৎকার সুন্দর পরী।

সাদেক সাহেব আবারো তার আগের কথার পুনরাবৃত্তি করলেন।শ্বাস টেনে বললেন,’নিজের স্বাস্থ্য নিয়ে অবহেলা করিস না পরী।পারলে এই সপ্তাহেই একবার চেক-আপ টা করিয়ে নে।’

নবনীতার হাসিহাসি মুখটার হাসি মিলিয়ে গেল সহসা।সে দাঁত দিয়ে নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে তার ভ্যানিটি ব্যাগটা একপলক দেখল।এই মাসে তার হাতে একটা টাকাও অবশিষ্ট নেই।যাতায়াতের জন্য শ’আটেক টাকা আছে বোধহয়।বাকি টাকা পুরোটাই খরচা হয়ে গেছে।ডাক্তার দেখানোটা আর সম্ভব না,অন্তত এই মাসে না।

সে সাদেক সাহেবের হাত থেকে তার দু’টো হাত ছাড়িয়ে নিয়ে নিরবে উঠে দাঁড়ালো।মুখে জোরপূর্বক হাসি ফুটিয়ে বলল,’ঠিক আছে মামা,দেখাব ডাক্তার।এখন আমি আসি।ভার্সিটিতে একটা কাজ আছে।তুমি কিছু খাবে?কিছু খেতে ইচ্ছে হয়?আমি আসার সময় নিয়ে আসব।’

সাদেক সাহেব হাত নাড়লেন,ব্যস্ত হয়ে বললেন,’আমার কিচ্ছু লাগবে না পরী।তুই তোর চেক-আপ টা করা মা।’

নবনীতা কথা না বাড়িয়ে দ্রুত বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল।যাওয়ার আগে মনে করে একটা প্যারাসিটামল খেয়ে নিল।কাল রাত থেকেই তার মাথা ঘুরছে।বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছাতে পৌঁছাতে তার ঘন্টাখানেক লেগেছে।এই রাস্তায় বাস চলে না।হাঁটতে হাঁটতে তার পা ব্যথায় ছিঁড়ে যাচ্ছিল।অবশেষে তার পথ ফুরালো।নবনীতা তার গন্তব্যে পৌঁছুল।

কার্জন হলের ভেতর প্রবেশ করেই নবনী চারদিকে চোখ বুলিয়ে রিমিকে খোঁজার চেষ্টা করল।শেষটায় বাধ্য হয়ে তাকে কল করল।রিমি কল ধরেই চেঁচালো,’ডানদিকে ফির নবনী।এই যে আমি।লাল কুর্তি।’

নবনী ফোন কানে চেপেই ডানদিকে ফিরল।অনেক দূরে লাল জামা গায়ে একটি মেয়েকে দেখা যাচ্ছে।নবনীর থেকে তার দূরত্ব এতোটাই বেশি যে নবনী তার মুখটাও স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিল না।রিমি প্রায় দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে ছুটে এলো।নবনীতার মুখোমুখি হতেই কপট রাগ দেখিয়ে বলল,’নবনী তুই কি কোনোদিনই সময় মতো আসতে পারিস না?কতোক্ষণ ধরে বসেছিলাম আমি!’

নবনীতা কথা না বাড়িয়ে অফিস কক্ষের দিকে এগিয়ে গেল।যেতে যেতে বিরক্ত মুখে বলল,’এখন তো এসে গিয়েছি।এখন চল।এমনিতেই মাথা ঘুরছে।আগে কাজটা শেষ করে নেই।’

অফিস থেকে ফর্ম তুলে সেটা পূরণ করে পুনরায় অফিসে জমা দিতে আরো ঘন্টা খানেক সময় লাগল।কাজ শেষ হতেই রিমি প্রস্তাব দিলো টিএসসির মোড়ে যাওয়ার।নবনীতা একহাত মাথায় চেপে কাঁপা গলায় বলল,’আজ না রে রিমি।ভীষণ মাথা ব্যথা করছে আজ!’

রিমি আর জোরাজুরি করল না।নবনীতা জোরাজুরির মেয়ে না।তাছাড়া সে মিথ্যা বলে না।সে সত্যিই অধিকাংশ সময় অসুস্থ থাকে।রিমি আলতো করে তার হাতটা নবনীতার কাঁধে রাখল।এই সামান্য সহমর্মিতায় নবনীতার মুখটা খুশি খুশি হয়ে গেল।সে একগাল হেসে রিমির গাল টেনে বলল,’খুব সুখি হ রিমি।আচ্ছা একটা কথা,বাড়িতে যে বলছিলি বিয়ের আলোচনা চলছে সেটা কতোদূর?’

‘গত সপ্তাহে ছেলে পক্ষ এসেছিল।মনে হচ্ছে বিয়েটা হয়েই যাবে এইবার।’

‘আরে বাবা!চমৎকার ব্যাপার তো!! বিয়ে করে আবার আমায় ভুলে যাসনে রিমি।’

রিমি ম্লান হাসল।সাইড ব্যাগের ফিতা টানতে টানতে বলল,’কেবল কথাই চলছে।এখনো কিছু শিওর না।শিওর হলে সবার আগে তোকেই জানাব।’

জবাবে নবনীতাও মিষ্টি করে হাসল।রিমি হচ্ছে গোলাপজামের মতো মিষ্টি একটা মেয়ে।শহরে তাদের একটা বাড়িও আছে।রিমির বিয়ে নিশ্চয়ই রাজপুত্রের মতোই কারো সাথে হবে।নবনীতা চায় রিমি সুখে থাকুক,ভালো থাকুক।অসহ্যকর পৃথিবীতে যে গুটি কয়েক মানুষকে নবনীতার ভালো লাগে তাদের মাঝে রিমি একজন।

রিমির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে নবনীতা সোজা সিটি কলেজের পথ ধরল।দোয়েল চত্ত্বরে আসতেই যানবাহনের বিশাল লাইন দেখে আপনাআপনি তার কপালে ভাঁজ পড়ল।

সিএনজি আর গাড়ির ভিড়ে ঠিক মতো পা ফেলা যাচ্ছে না।মাথার উপর সূর্যের তেজ সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়ে যাচ্ছে।নবনীতা একহাত শক্ত করে মাথায় চেপে ধরল।ব্যাগের মধ্যে পানির বোতল রাখা ছিল।সে ঢকঢক করে একটানে পুরোটা পানি খেয়ে শেষ করল।

চারদিক থেকে গাড়ি আর সিএনজির হর্ণে এলাকাটা মুহূর্তেই মাছ বাজারের রূপ নিয়েছে।সে কোনোরকম এলোমেলো পা ফেলে সামনে এগিয়ে এলো।সিগন্যালে দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশ সদস্যটি কে জিজ্ঞেস করল,’সামনের রাস্তা তো ফাঁকা।তাহলে গাড়ি থামিয়ে রেখেছেন কেনো?’

পুলিশ সদস্যটি পান চিবুতে চিবুতে দাঁত বের করে জবাব দিলো,’শাহবাগে আজ সমাবেশ চলছে।তাই এই রাস্তায় ঘন্টা দু’য়েকের জন্য যান চলাচল বন্ধ।’

নবনীতা হতবুদ্ধি হয়ে তার কথা শুনল।অভিব্যক্তি দেওয়াও তার জন্য দুষ্কর।এরকম একটা ব্যস্ত রাস্তায় যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকতে পারে?তাও এতো ঠুনকো কারণে?একটু পর যখন সে বুঝতে পারল ট্রাফিক পুলিশ সত্যি সত্যিই দুই ঘন্টা রাস্তা ব্লক করে রাখবে তখন তার মেজাজ ভয়ংকর রকম বিগড়ে গেল।সে ক্রুদ্ধ স্বরে বলল,’এসব কি ধরণের খেয়াল খুশি?সমাবেশ সম্মেলন যা খুশি হোক,তাই বলে রাস্তা ব্লক করবে?রাস্তা কি কারো পৈত্রিক সম্পত্তি?’

ট্রাফিক পুলিশটি তার কথা কানেও তোলেনি।উল্টো এমনভাব করল যেন নবনীতার কথায় সে ভীষণ বিরক্ত।নবনীতা পেছন ফিরে বিস্তীর্ণ গাড়ির সারি দেখে আবার সামনে ফিরে ট্রাফিক পুলিশের বুথের দিকে এগিয়ে গেল।সেখানে দুই জন পুলিশ অফিসার ছিল।নবনীতা তাদের কাছে অভিযোগ করল।জানতে চাইলো ঠিক কোন আইনে ঘন্টার পর ঘন্টা এভাবে রোড ব্লক করা হয়েছে।এটা অন্যায়,স্পষ্ট অন্যায়।

প্রথমেই তার দিকে যেই পুরুষ সদস্যটি এগিয়ে এলো তার বুকের কাছে ব্যাচের উপর নাম লিখা মোবারক।মোবারক নামের মাঝবয়সী লোকটা তার সামনে এসেই দায়সারা ভাব নিয়ে বলল,’দেখুন মেডাম।আমাদের এসব নিয়ে বলবেন না।আমরা কেবল উপর মহলের অর্ডার মেনে চলি।উপরমহলের নির্দেশ আছে।সমাবেশ শেষ হওয়া পর্যন্ত গাড়ি ছাড়া যাবে না।’

নবনীতা বাকরুদ্ধ হয়ে শুধু তার কথা শুনে গেল।তারপর বিনা বাক্য ব্যয়ে চুপচাপ সেখান থেকে সরে এলো।কয়েকটা গাড়ি থেকে যাত্রীরা বেরিয়ে এসে ট্রাফিক পুলিশদের সাথে তর্কে জড়িয়েছে।তবে পুলিশ সদস্যরা অনড়।উপরমহলের আদেশ,না মানলে চাকরি থাকবে না।

নবনীতা চলেই যাচ্ছিল,ঠিক তখনই কয়েকটা গাড়ি পেছনে কোনো একটা গাড়ি থেকে বিকট স্বরে কারো আর্তনাদের শব্দ তার কানে এলো।ভেতরটা ছ্যাঁৎ করে ওঠল সাথে সাথে।এই আর্তনাদ গুলো নবনী সহ্য করতে পারে না।তার মাথা ঘুরে,গলা শুকিয়ে যায়,মনে হয় এক্ষুনি সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলবে।

লোকজন ইতোমধ্যে গাড়ি থেকে বেরিয়ে আওয়াজের উৎস খোঁজার চেষ্টা করল।ভিড়ের মধ্যে থেকেই কেউ একজন বলে উঠল,’ভাই পেছনের অ্যাম্বুলেন্সে এক্সিডেন্টের রোগী।সময়মতো হাসপাতালে না নিলে পথেই মরে যাবে।’

মুহূর্তেই চারদিকে গুঞ্জন শুরু হলো।কেউ কেউ ঘটনা দেখতে এগিয়ে এলো,কেউ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তামাশা দেখল,কেউবা আবার নানারকম পরামর্শ দিলো।অ্যাম্বুলেন্সের ড্রাইভার গাড়ির জানালা গলিয়ে মাথা বের করে জানালেন গাড়িটা কোনোরকমে ঘুরিয়ে অন্য রাস্তায় নিতে পারলেও হবে।অন্তত সেই ব্যবস্থাটা যেন করা হয়।কিন্তু দেখা গেল রাস্তার অবস্থা এমন যে গাড়ি ঘুরানোর জায়গা পর্যন্ত নেই।

নবনীতা ভঙ্গুর কাঁপা কাঁপা পায়ে এগিয়ে গেল।গাড়ির ভেতর থেকে একটা মেয়ে হাউমাউ করে কাঁদছে।একটু পর পর আর্তনাদ করে যাচ্ছে।প্রচন্ড গরমে চারদিকে হাঁসফাঁস অবস্থা।দু’দিন আগেই তুমুল বৃষ্টি,এখন আবার কাঠফাটা রোদ।

আচমকা গাড়ি থেকে একটি মেয়ে হুড়মুড় করে বেরিয়ে এলো।তারপর এক দৌঁড়ে রাস্তার কিনায় গিয়ে গরগর করে বমি করল।নবনী বোকার মতো শুধু সবকিছু দেখেই গেল।সহসা তার চোখ গেল গাড়ির ভেতর।গাড়ির ভেতর একজন পুরুষ যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে।তার মাথা ফেটে অঝর ধারায় রক্ত গড়াচ্ছে।কি বিভৎস দৃশ্য! স্ট্রেচারে শুয়ে থাকা লোকটা কথা বলছিল না,কেবল মুখ দিয়ে অদ্ভুত রকম শব্দ করে যাচ্ছিল।শব্দের সাথে সাথে তার মুখ দিয়ে রক্ত ঝরছিল।

নবনীর গা গুলিয়ে এলো।লোকটার ঘোলাটে চোখ দু’টো দেখেই তার অন্তরাত্মা শুকিয়ে গেল।ইশশশ!! কতোটা কষ্ট পাচ্ছে লোকটা।হঠাৎ একটা অদ্ভুত ঘটনা ঘটল।স্ট্রেচারে শুয়ে গোঙাতে থাকা লোকটা হাত বাড়িয়ে নবনীকে ডাকল।কাতরাতে কাতরাতে বলল,’নবনী!! আমার সাহসী মেয়ে।শুভি আর চিত্র’র খেয়াল রেখ।বাবা হয়ত থাকব না।কিন্তু তুমি তাদের পাশে থাকবে।আর সবসময় মনে রাখবে বাবা তোমাদের খুব ভালোবাসি।’

নবনীতা ছিটকে দু’কদম পিছিয়ে গেল।কানের কাছে বিকট শব্দে কুকুরের ডাক ভেসে আসছে।আকাশে মেঘের গর্জন।সেই গর্জনের সাথে মাঝবয়সী লোকটার আর্তনাদ ভেসে এলো,’পালাও পরী! শুভি আর চিত্র কে নিয়ে দূরে কোথাও চলে যাও।বাবা হয়ত থাকব না।কিন্তু বাবার মেয়েরা থাকবে।পালাও পরী।তুমি আমার সাহসী মেয়ে।পালাও! পালাও! পালাও!’
নবনীতা দুই হাত কানে চেপে বিকট স্বরে চিৎকার করে ওঠল।পথচারীরা ঘাড় ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে তাকে দেখা শুরু করল।প্রচন্ড তেষ্টায় নবনীর গলা দিয়ে শব্দ পর্যন্ত আসছিল না।

নবনীতা আর কোনো দিকে দেখলো না।দু’হাতে কান চেপে সে উন্মাদের মতো ছুটল শাহবাগের দিকে।ট্রাফিক পুলিশরা হতভম্ব হয়ে রোবটের মতো কেবল দাঁড়িয়ে রইল যার যার জায়গায়।নবনী ছুটল তো ছুটতেই থাকল।তার কান দু’টোতে একই শব্দ বার বার এসে ধাক্কা খাচ্ছে,
‘পালাও! পালাও! পালাও!’

চলবে-

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে