কোনো এক শ্রাবণে পর্ব-০১

0
48

সূচনা পর্ব
#কোনো_এক_শ্রাবণে
লেখনীতে #মেহরিমা_আফরিন

(১)

‘শুনো আরহাম! রাজনীতি শব্দে নীতি থাকলেও বাস্তবে রাজনীতিতে এসব নীতি খাটে না।পলিটিক্সে ভালো কিছু করতে হলে নীতি ফিতি গুলি মেরে কেবল নিজের টার্গেটে ফোকাস করতে হবে।সেই টার্গেট অর্জন করার জন্য মাঝে মাঝে একটু পাষাণ,একটু অবিবেচক,একটু বেপরোয়া হতে হবে।মনে রাখবে,তোমার কর্মীরাই তোমার শক্তি।তুমি কিন্তু সব জায়গায় থাকতে পারবে না।তোমার কর্মীরাই তোমার ভরসা।সুতরাং কিছুতেই এমন কাজ করবে না যেটাতে তোমার দল হালকা হয় কিংবা তুমি কর্মী হারাও।বুঝেছো?’

মহানগর কার্যালয়ের যুগ্ম সম্পাদক জালালুর রহমান কথা শেষ করেই ধোঁয়া ওঠা চায়ের কাপে চুমুক দিলেন।আরহামের চিন্তিত মুখটা দেখে বললেন,’আরে তুমি এতো টেনশন করছ কেন?নাও চা টা খাও।ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে চা।’

আরহাম চায়ের কাপ হাতে নিল।কিন্তু চুমুক দিলো না।ভীষণ ভাবুক হয়ে বলল,’যতো দিন ঘনাচ্ছে,চারপাশ থেকে চেনা অচেনা শত্রুরা সব মুখিয়ে আছে কিছু একটা করার জন্য।’

জালাল সাহেব শব্দ করে হাসলেন।চায়ের কাপে দ্বিতীয় চুমুক বসিয়ে বললেন,’পলিটিক্স ইজ নট আ কাপ অফ টি আরহাম।’

আরহাম মাথা ঝাকালো।তাই তো।কথা সত্য।জালালুর রহমান উঠে দাঁড়ালেন।হাত ঘড়িতে সময় দেখে বললেন,’আজ তাহলে আসি আরহাম।পরে আবার কথা হবে।’

আরহাম চেয়ার থেকে উঠল না।বসে থেকেই জবাব দিলো,’জ্বী আঙ্কেল।আসসালামু আলাইকুম।’

জালালুর রহমান চলে যেতেই আরহাম বেশ আয়েশ করে পুরোটা চা শেষ করল।তার থেকে কিছুটা দূরে সোফায় ওয়াজিদ বসা,যে কি-না আধঘন্টা যাবত মাথা নিচু করে পা নেড়ে যাচ্ছে অনবরত।আরহাম তাকে একনজর দেখে আবার চোখ সরিয়ে নিল।চারদিকে চোখ মেলে একবার তোফায়েল কে খোঁজার চেষ্টা করল।

রাশেদ নিচু গলায় জানতে চাইলো,’কাকে খুঁজছেন ভাই?’

আরহাম এদিক ওদিক দেখতে দেখতেই জবাব দিলো ‘তোফায়েল কে।’

তোফায়েল এলো মিনিট দশেকের মাথায়।আরহাম ইজি চেয়ারে গা এলিয়ে দিয়ে জানতে চাইলো আজ কি কোনো মিটিং হচ্ছে নাকি?
তোফায়েল জানাল আজ যেই একটি মিটিং হওয়ার ছিল,সেটা বৃষ্টিতে বাতিল করা হয়েছে।

আরহাম মৃদু হেসে আবেশে চোখ বুজে নিল।আজকের জন্য তবে একটু শান্তি পাওয়া গেল।এই কয়দিন টানা মিটিংয়ে শরীরে বিরক্তি ধরে গেছে।শেখ শাহরিয়ার আরহাম ইদানিং টের পাচ্ছে রাজনীতি বিষয়টা অত্যন্ত কঠিন।দেখতে বড্ড সহজ মনে হয়,তবে একবার এসবে ঢুকে গেলে বের হওয়া মুশকিল।আরহাম অবশ্য সেসব নিয়ে বিচলিত নয়।রাজনীতি তার রক্তে মিশে আছে।এই জিনিসটা সে তার প্রতিটা ইন্দ্রিয় থেকে অনুভব করতে পারে।আরহাম রাজনীতিতে নতুন না।সে জন্ম থেকেই রাজনীতি দেখে আসছে।রাজনীতি তার নেশা,ইদানিং আবার পেশাও।

সময়টা তখন শ্রাবণের মাঝামাঝি।শ্রাবণের দিনগুলো কেমন যেন ছন্নছাড়া।সকাল বেলা আবহাওয়া কিছুটা ভালো যেতেই বিকেল হতে না হতেই ঝুম বৃষ্টিতে পুরো শহর ভেসে যায়।

আজও তেমনই একটি দিন।সকালবেলা আকাশ ছিল স্বচ্ছ,একবারে পরিষ্কার।সেই আকাশই দুপুরের পর থেকে মেঘলা আর কালো হতে হতে শেষ পর্যন্ত মুষলধারে বৃষ্টিতে রূপ নিয়েছে।টানা একঘন্টা ঝমঝম বৃষ্টির পর আকাশ কিছুটা শান্ত হয়েছে।একটু আগেই থেমে থেমে বাজ পড়ছিল।এখন সবকিছুই শান্ত,নিবিড় আর কিছুটা থমথমে।

টানা বৃষ্টিতে রাস্তাঘাট ভিজে এখানে সেখানে পানি জমে ছিল।এলাকার চায়ের দোকান গুলোতে তখন কমবেশি মানুষের ভিড়।রাস্তায় স্বাভাবিকের তুলনায় লোকজনের সংখ্যা খুব সীমিত।

আতিক হোসেনের চায়ের দোকানে তখন চুমুকে চুমুকে রাজনৈতিক আলাপ আলোচনার ঝড় উঠেছে।রনি দোকানের সামনে থাকা রঙ উঠে যাওয়া বেঞ্চিতে বসেই দুই আঙুল উঁচু করে বলল,’আতিক মামা।আরো দু’কাপ চা দেও।’

আতিক নামের মধ্য বয়স্ক লোকটি হাসিমুখে চা বানানোর কাজটি করে যাচ্ছিলেন।বৃষ্টিতে সব ব্যবসা বন্ধ হলেও চায়ের ব্যবসায় প্রচুর লাভ।লোকে বৃষ্টির দিনে কয়েকদফা চা খায়।আকাশের অবস্থা দেখে আতিক হোসেনের মনে হচ্ছে আজ তার ব্যবসা খুব ভালো জমবে।

ঠিক তখনই তার ছোট্ট টং দোকানে আবির্ভাব হলো জীর্ণ শীর্ণ দেহের অল্পবয়স্কা একটি তরুণীর।তরুণীর পরনে হালকা বেগুনি রঙের সাদামাটা পোশাক।হাতে একটা সাদা রঙের পার্স।গলায় ধূসর রঙের স্কার্ফ প্যাঁচানো।কোমর সমান চুলগুলো বেণী করে অতি অবেহেলায় একপাশে ফেলে রাখা হয়েছে।ছোট ছোট কিছু চুল বেণী ছেড়ে বেরিয়ে এসে বারবার মুখের উপর পড়ছে।তরুণীটি একটু পর পর বিরক্ত হয়ে সেগুলো কানের পিছে গুজে দিচ্ছে।

আতিক দু’কাপ চা রনির হাতে তুলে দিয়ে পাশ ফিরতেই মেয়েটি মৃদু স্বরে ডাকল,’আসসালামু আলাইকুম চাচা।একটা দরকার ছিল।একটু সাহায্য করতে পারবেন?’

আতিক তীক্ষ্ণ চোখে মেয়েটিকে আগাগোড়া পরোখ করে নিল।পোশাক দেখে ভদ্র ঘরেরই মনে হচ্ছে।এক দুইবার দেখে নেওয়ার পরেই সে সন্দিহান গলায় জানতে চাইলো কি সাহায্য?

মেয়েটি এদিক ওদিক দেখে ঠান্ডা গলায় বলল,’আপনি কি আমাকে জনাব শাহরিয়ার আরহামের পার্টি অফিসের খোঁজ দিতে পারবেন?আমার একটা দরকার ছিল।’

তার প্রশ্নে কেবল আতিক না,পুরো দোকানের ছেলেপেলেরা চোখ বাঁকিয়ে তাকে দেখলো।দোকানে তখন তোফায়েলও ছিল।সে তৎক্ষনাৎ উঠে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করল,’কেন?আরহাম ভাইয়ের অফিসে যাবেন কেন?সেখানে আপনার কি কাজ?’

তোফায়েল আশা করেছিল তার প্রশ্নে মেয়েটি কিছুটা বিব্রত কিংবা অপ্রস্তুত বোধ করবে।কিন্তু তেমন কিছুই হলো না।উল্টো মেয়েটি তার দিকে এক কদম এগিয়ে এসে শক্ত মুখে জবাব দিলো,’কাজ কি সেটা আপনাকে কেন বলব?আপনি কি শেখ আরহাম?’

পাল্টা প্রশ্নে তোফায়েল বিষম খেল।চোখ বড় বড় করে দেখলো তার সামনে দাঁড়ান মেয়েটির কঠোর মুখখানা,অনুভব করল মেয়েটির কন্ঠে ভীষণ তেজ।সেই তেজের কাছে তোফায়েলের টিকে থাকার সাধ্যি নেই।সে কথা বাড়ায় না।কেবল সামনে এগিয়ে যেতে যেতে বলে,’আমার সাথে আসুন।আমি শেখ আরহামের অফিসেই যাচ্ছি।’

বাইরে বৃষ্টি থেমেছে অনেক আগে।বৃষ্টির পরে একটা মিষ্টি আর শরীর জুড়ানো বাতাসে আরহামের চোখ বুজে এলো।বারবার ঘুমে তার শরীর অবসন্ন হয়ে ওঠছে।আরহাম তামজিদ কে ডেকে বলল রুমের জানালাটা খুলে দিতে।এই নাতিশীতোষ্ণ বাতাসটা বেশ উপভোগ্য।এই বাতাস গায়ে মাখলে শরীর খুব ফুরফুরে আর চাঙা থাকে।

স্নিগ্ধ,ঘোলাটে আর বৃষ্টিমুখর আবহাওয়ায় যেই না আরহামের দু’চোখ তন্দ্রাঘোরে লেগে আসছিল,ঠিক তখনই কলিং বেলের কর্কশ শব্দে সেই ঘুম পুরোটাই উবে গেল।আরহাম দাঁতে দাঁত চেপে কয়েকটা অশ্রাব্য গালি দিলো।ওয়াজেদ সোফায় হেলান দিয়ে বলল,’কেউ এসেছে মনে হয় তোর সাথে দেখা করার জন্য।’

আরহাম ঘাড় মালিশ করতে করতে তামজিদ কে ডেকে নিদ্রাচ্ছন্ন কন্ঠে আদেশ দিলো,’যা গিয়ে দেখ কে এসেছে।ভেতরে নিয়ে আয়।’

আরহাম একহাত চোখের উপর রেখে ইজিচেয়ারে গা ছেড়ে দিয়ে বড়ো করে দু’বার শ্বাস নিল।কিছু গানের লাইন মাথায় আসছে হঠাৎ।গাইবে কি?এখানে কেউ নেই তেমন।সামান্য গাইতে দোষ কোথায়?
আরহাম গুনগুন করে সুর তুলল,

“তুমি আকাশের বুকে,
বিশালতার উপমা।
তুমি আমার চোখেতে,
সরলতার প্রতিমা।
আমি তোমাকে গড়ি,
ভেঙেচুরে শতবার।”

‘আসসালামু আলাইকুম’

রিনরিনে মেয়েলি কন্ঠটি কানে যেতেই আরহাম গুনগুন বন্ধ করে চোখের সামনে থেকে হাত সরালো।ঠিকঠাক চোখ খুলতেই দেখলো তার টেবিলের সামনে ছিমছাম গড়নের একটি মেয়ে দাঁড়ানো।চোখ মুখ শক্ত।ভাব এমন যেন আরহাম আর তার এই পার্টি অফিসের সাথে তার দীর্ঘদিনের শত্রুতা।

আরহাম গম্ভীর মুখে দু’চোখ সরু করে মেয়েটিকে আপাদমস্তক দেখে নিল।মেয়েটি অধৈর্য হয়ে নিজ থেকেই আবার বলল,’আমার একটা কথা ছিল জনাব।বিশেষ প্রয়োজনে একপ্রকার বাধ্য হয়েই এখানে আসতে হয়েছে আমার।’

আরহাম মাথা নাড়ল।তাচ্ছিল্য ভরা কন্ঠে জানতে চাইলো,’তো আপনার প্রয়োজনটা কি মিস?’

বেগুনি পোশাক পরা তরুণী কিছু বলার আগেই আরহাম নিজ থেকে প্রশ্ন করল,’নম্বর বাড়িয়ে পাশ করিয়ে দিতে হবে তাই তো?’

তার প্রশ্নে মেয়েটি ভড়কে গেল।আশ্চর্য হয়ে জানতে চাইলো,’জ্বী?নম্বর বাড়াতে হবে মানে?’

আরহাম বিরক্ত হলো।তৎক্ষনাৎ মুখ কুঁচকে নিল।সুদর্শন মুখটার পরতে পরতে বিরক্তি মিশিয়ে বলল,’মানে আবার কি?এসব ভণিতা ছাড়ো।তোমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেমেয়ে গুলোর এই এক সমস্যা।পড়াশোনা করো না ঠিকঠাক,তারপর পরীক্ষায় পাও আন্ডা।সেই ক্যাচাল সহ্য করতে হয় আমাকে।ভাই আর এমন হবে না,এবার থেকে মন দিয়ে পড়ব,এবারের মতো পাশ করিয়ে দিন স্যারকে বলে-তোমাদের এসব ঘ্যান ঘ্যান শুনতে শুনতে আমার কান পচে গেছে।দেখি বলো,তোমার রোল বলো।প্রফেসরের সাথে কথা বলে পাশ করিয়ে দিব।আর শোনো,পরবর্তীতে ভার্সিটিতে যখন আমাদের দলের মিছিল হবে,তখন যেন তোমায় অবশ্যই সেখানে দেখতে পাই।মনে থাকবে?’

আরহাম কথা শেষ করেই কলমদানি থেকে একটা মার্কার পেন হাতে নিয়ে ড্রয়ার থেকে একটা কাগজ বের করল।দীর্ঘসময় অতিবাহিত হওয়ার পরেও যখন মেয়েটির তরফ থেকে কোনো জবাব এলো না,তখন আরহাম একপ্রকার বিরক্ত হয়ে প্রশ্ন করল,’কি সমস্যা তোমার?স্পিক আপ!রোল কতো তোমার?’

তরুণী মেয়েটি কিছুক্ষণ অবিশ্বাস্য চোখে তাকে দেখলো।তারপর নিরব নিস্তব্ধ ঘরটির ঠিক মাঝামাঝি দাঁড়ানো তরুণীটি অকস্মাৎ দাঁতে দাঁত চেপে বলল,’আমি কোনো নম্বর বাড়ানোর উদ্দেশ্যে এখানে আসিনি।আমার অবৈধভাবে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার কোনো ইচ্ছে নেই।অতীতেও কোনোদিন হইনি,আর ভবিষ্যতেও কখনো হবো না।’

মেয়েটির কন্ঠে তেজ ছিল,অহংকার ছিল,সেই সাথে ছিল প্রতিবাদ আর বিদ্রোহ।সেই কন্ঠের তীব্রতা এতো বেশি ছিল যে আরহাম তার তিন আঙুলে চেপে রাখা মার্কারটা ফেলে সোজাসুজি মেয়েটির দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করল।

মেয়েটি আরো এক কদম এগিয়ে একেবারে টেবিল ঘেঁষে দাঁড়াল।একবার জোরে শ্বাস টেনে সোজা আরহামের চোখ বরাবর দেখে বলল,’সিটি কলেজের সামনে আপনার দলের ছেলেরা মেয়েদের উত্ত্যক্ত করে।এটা আজকে কালকের ঘটনা না,এই কাজটা তারা রোজ রোজ করে।আজকে আমার ছোট বোন কলেজ শেষে বাড়ি ফেরার সময় তারা আমার বোনের সাথে অসভ্যতা করেছে।আপনি তাদের কিছু বলেন না কেন?এরা এতো সাহস পায় কোথা থেকে?’

আরহাম পুরোটা সময় গভীর মনোযোগ সহকারে তার কথা শুনল।সে লক্ষ করল মেয়েটা যখন কথা বলে তখন তার চোখ দু’টোও কথা বলে।এই মুহূর্তেও তার দু’চোখ কথা বলছে।আরহাম চুপচাপ তার কথা শুনল।কথা শেষ করার পর মেয়েটি জ্বল জ্বল চোখে কিছুক্ষণ চেয়ে রইল।আরহাম তার কথার উত্তর দিলো না।উল্টো নিজ থেকে প্রশ্ন করল,’নাম কি তোমার?’

মেয়েটি সম্ভবত এই প্রশ্নের জন্য প্রস্তুত ছিল না।সে আশ্চর্য হয়ে বিচলিত কন্ঠে বিড়বিড় করল,’জ্বী?’

আরহাম জানে তার প্রশ্ন মেয়েটি শুনেছে।তা স্বত্তেও কেনো দ্বিতীয়বার প্রশ্ন করেছে সেটা জানার কোনো ইচ্ছে তার নেই।সে বেশ সাবলীলভাবে আবারো বলল’নাম কি?হোয়াটস ইউর নেইম গার্ল?’

মেয়েটি কিছুটা ধাতস্থ হলো।নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,’নবনীতা।আমার নাম নবনীতা নূর।’

‘গুড।নাইস নেইম।সো নবনীতা,তোমার সমস্যা আমি শুনেছি।মাথায়ও রেখেছি।এবার তুমি যেতে পারো।’

নবনীতার মনে হলো শুভ্র পাঞ্জাবি পরা ভদ্রলোকটি তার উপর বিরক্ত।অথচ তার বিরক্ত হওয়ার মতো কোনো কাজ নবনীতা এখন অব্দি করেনি।সে কেবল একটা নালিশ জানাতে এসেছে যেটা জানানো তার প্রয়োজন মনে হয়েছে।অথচ ভদ্রলোকের সে নিয়ে কোনো ভ্রুক্ষেপ কিংবা মাথাব্যথা কোনোটাই আছে বলে মনে হচ্ছে না।

নবনীতা শুকনো মুখে জানতে চাইলো,’তারা আর কলেজের বাইরে ঝামেলা করবে না তো?আমি কিন্তু পুলিশে না গিয়ে আপনার কাছে এসেছি।আপনি এর একটা বিহিত করবেন আশা করছি।’

আরহাম এবারো সোজাসাপ্টা জবাব দিলো না।কেবল ঘাড় কাত করে বলল,’আমি আপনার কথা শুনেছি বললাম তো।এবার আপনি আসুন।’

সূক্ষ্ম এবং ধাঁরালো অপমানে নবনীতার শরীর ঝা ঝা করে ওঠল।লোকটা রীতিমতো তাকে তাড়িয়ে দিচ্ছে।তাকে কিছু বলার সুযোগ পর্যন্ত দেয়নি।অন্তত একবার বলতো যে তিনি এর একটা ব্যবস্থা করবেন।তাতেই তো নবনীর দুশ্চিন্তা কিছুটা দূর হতো।কিন্তু এই লোক কোনো কথাই বলছেন না ঠিক করে।

নবনীতা তার পার্স ব্যাগটা খাঁমচে ধরল।আশাহত হয়ে আরহামের ডেস্কের সামনে থেকে সরে যাওয়ার আগে কেবল ছোট করে বলল,’ভালো থাকবেন।আসসালামু আলাইকুম।’

আরহাম পুনরায় আরাম কেদারায় গা এলিয়ে দিলো।তার ঠোঁটের কোণে দুর্বোধ্য হাসি।সেকেন্ডের ব্যবধানেই সে হাসি মিলিয়ে গেল।সে ঘুম জড়ানো গলায় জবাব দিল,’ওয়ালাই কুমুসসালাম নবনীতা।’

চলবে-

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে