গল্পঃ কে তুমি ( ৮ম বা শেষ পর্ব )
লেখাঃ ইমতিয়াজ আহমেদ চৌধুরী
নিলয়ের পাশে বেডে বসে নাবিলা তার ব্যাগ থেকে একটি সাদা শাড়ী বের করলো, সেটা দেখে নিলয় অবাক হয়ে বললো,– এই তুমি কি বিধবা নাকি?
নাবিলা ভ্রু কুচকে বললো,– বিয়ের আগে কেউ বিধবা হয় নাকি!
নিলয় আরও অবাক হয়ে বললো,– তাহলে অবিবাহিত বালিকার ব্যাগে বিধবা শাড়ী কেন শুনি?!
“ দরকার আছে ” বলে নাবিলা ব্যাগ থেকে লম্বা সাদা নকল চুল, পাউডার, এবং আলতা বের করলো!
সেসব দেখে নিলয় আবার বললো,– এগুলোর মানে কি নাবিলা! এসব দিয়ে কি হবে শুনি?
নাবিলা বললো,– শুনতে হবেনা, পরে জানবেন! এবার ঘুমানোর চেষ্টা করুন।
শাড়ী এবং বাকি সব টেবিলের ওপর রেখে নিলয়ের পাশেই শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে শুয়ে পড়লো নাবিলা।
রাত বারোটার জানান দিলো দেয়াল ঘড়ি, নাবিলা চোখ বন্ধ করে ঘুমের ভান ধরে আছে। নিলয়ের মাথায় ঘুরছে নাবিলার কোমরের সেই জন্মদাগ চেক করার বিষয়টি।
নিলয় ধীরে ধীরে নাবিলার কোমরে হাত রাখলো। নাবিলা তো ঘুমের ভান ধরে আছে, নিলয়ের হাতের স্পর্শে নাবিলার পুরো শরীরে কেমন একটা কামনার অনুভুতি খেলে গেল। নিলয় ঝুকে পড়ে নাবিলার কোমরের কাপড় সরালো, নিলয়ের গরম নিশ্বাস নাবিলার কোমর ছুয়ে দেহে কেমন এক অনুভূতি জাগিয়ে তুলছে, নাবিলার ইচ্ছে হচ্ছে এই স্পর্স আর নিশ্বাস দীর্ঘ সময় ঘিরে রাখুক তাকে।
নাবিলার কোমরে ভালো করে দেখলো নিলয়, কোনো জন্মদাগ নেই! তবুও একান্তে এভাবে নবযৌবনা একটা শরীর নিলয়ের মনে অন্য কিছু পাবার আকাঙ্খা প্রবল করে জাগিয়ে তুললো।
নিলয়ের কি হলো নিজেই জানেনা, আলতো করে নাবিলার পেটে হাত বুলোতে বুলোতে ধীরে ধীরে নিলয়ের হাত নাবিলার বুকে! অন্যরকম এক নেশায় এবং উত্তেজনায় দুজনেই বুদ হয়ে আছে। নাবিলার মন নিষেধ করলেও দেহ ভীষণ করে চাইছে নিলয়ের হাতের এই স্পর্শ অনুভব করুক তার সারা শরীর। এই স্পর্শে নাবিলা যেন বশীভূত হয়ে আছে। ধীরে ধীরে নিলয়ের ঠোঁট স্পর্শ করলো নাবিলার ঠোঁট। কিছুক্ষণ এভাবে চলার পরে বিষয়টি আরও গভীরে যাবার আগেই নাবিলা নিলয়কে ঠেলে সরিয়ে দিয়ে বললো,– কিছু সময় ভালোলাগার লোভে আজীবন দুজনের কাছে দুজন ছোট হয়ে থাকার চেয়ে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
নিলয়ও বিষয়টা বুঝতে পেরে আর কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ শুয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।
দেয়াল ঘড়ি রাত তিনটার জানান দিলো।
নাবিলা উঠে সেই সাদা শাড়ী পড়ে নকল চুল লাগিয়ে, পাউডার মেখে তার ওপর নাকে মুখে এবং বিভিন্ন স্থানে আলতা মেখে নিলো রক্তের মতো করে।
নিলয়ের রুম থেকে বেরিয়ে রাকিবের রুমে এসে ঢুকলো নাবিলা, রাকিব গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন, রুমে ডিমলাইটের মৃদু আলো। খাট থেকে দূরে দরজার পাশে আরও একটু অন্ধকারে দাড়িয়ে গলার স্বর ভারী করে নাবিলা কয়েকবার রাকিবকে ডাকলো। হঠাৎ রাকিবের ঘুম ভেঙে গেল, ধড়ফড়িয়ে উঠে বসে দরজার কাছে নাবিলার ভৌতিক অবয়ব দেখে ভীষণ ভড়কে গেল রাকিব, হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেলে মস্তিষ্ক সম্পুর্ন অপ্রস্তুত থাকে এমন কিছু দেখার জন্য, কিন্তু এরকম কিছু দেখে ভয়ে রাকিবের গলা শুকিয়ে কাঠ, গলা দিয়ে কথা বের হচ্ছে না। রাকিবের হঠাৎ করে মনে পড়লো, মীরা বলেছিল হিমি ভাবীর আত্মার কথা। তাহলে এটা কি সেই মীরা ভাবীর আত্মা! রাকিব আরও ভীষণ ভড়কে গেল।
নাবিলা আবারও সেই ভারী কন্ঠে বললো,– আমি তোমাদের কি ক্ষতি করেছিলাম রাকিব যে আমাকে তোমরা বাঁচতে দিলেনা?
রাকিব ভীষণ ভয়ে আতঙ্কিত, গলা দিয়ে কথা বের হচ্ছে না।
এবার নাবিলা ধীরে ধীরে রাকিবের দিকে অগ্রসর হতে লাগলো, তাই দেখে ভয়ে কাঁদো কাঁদো কন্ঠে রাকিব কোনমতে বললো,– আমাকে মেরো না হিমি ভাবী, বাবা মা প্ল্যান করেই তোমাকে আর নিলয় ভাইকে শেষ করে দিতে চেয়েছিল, কারণ তোমরা না থাকলেই নিলয় ভাইয়ের সবকিছু আমাদের হতো। প্ল্যান অনুযায়ী ট্রাকটা তোমাদের গাড়িতে ধাক্কা দিয়ে চলে যায়, তুমি মারা যাও কিন্তু নিলয় ভাই ভাগ্যক্রমে বেঁচে যায়।
রাকিব ভয়ে গুটিশুটি মেরে চোখ বন্ধ করে আছে, এই ফাকে নাবিলা দ্রুত রাকিবের রুম থেকে বেরিয়ে চলে আসে। নাবিলার উদ্দেশ্য ছিল রাকিবের কথা রেকর্ড করার, সেটা কমপ্লিট।
ভোর হবার আগে আগে নাবিলা নিলয়কে জাগিয়ে বেরিয়ে পড়লো।
অফিসে বসে আছে নিলয়, গতরাতে করা রেকর্ড নিলয়ের সামনে প্লে করলো নাবিলা।
রেকর্ডের কথা শুনে থমকে গেছে নিলয়, চোখে জল টলমল। নিজেকে সামলে নিয়ে নাবিলাকে বললো,– যেটাকে সবাই এক্সিডেন্ট হিসেবে মেনে নিয়েছিলাম, তোমার সেটাকে মার্ডার কিভাবে মনে হলো, আর তার আগে প্রশ্ন আসলে কে তুমি।
নাবিলা রহস্যময় হাসি হেসে বললো,– আপনার স্ত্রী হিমি আগে থেকেই টের পেয়েছিল আপনার চাচা চাচী এবং চাচাতো ভাই এর ষড়যন্ত্রের আভাস, আর প্রতিদিনের ঘটনা সে সন্ধ্যায় লিখে আমাকে মেইল করে দিতো। ওর সন্দেহ সত্যি হলো, আপনার আত্মীয় স্বজনের লালসার শিকার হয়ে ওকে পৃথিবী ছাড়তে হলো।
নিলয় সাথে সাথে থানায় ফোন করে পুলিশ ঢেকে চাচা চাচী এবং চাচাতো ভাইকে এরেস্ট করালো।
খুব ভেঙে পড়েছে নিলয়, সন্ধ্যা ছুঁই ছুঁই। নিলয়ের পাশে দাড়িয়ে নাবিলা বললো,– এবার সময় এসেছে আপনার সেই প্রশ্নের উত্তর দেবার, জানতে চান?
নিলয় ভাঙা ভাঙা গলায় বললো,– হ্যাঁ, এবার বলো কে তুমি?!
নাবিলা বললো,– আমি হিমির জমজ বোন। আপনাকে হঠাৎ কোনদিন সারপ্রাইজ দেবার জন্য হিমি কখনও আমার কথা জানায়নি, এবার পেয়েছেন উত্তর!
নিলয় অবাক চোখে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে নাবিলার দিকে।
নাবিলা বললো,– এবার আমার ফেরার পালা, আমায় লন্ডনে ফিরে যেতে হবে। অবশ্য লাস্ট ইমেইলে হিমি লিখেছিল ওর যদি কিছু হয়ে যায় আমি যেন আপনার পাশে থাকি, ওর মতো করে আপনাকে আগলে রাখি। হিমির শেষ ইচ্ছা এবং আবদার পূর্ণ করতে আমার আপত্তি নেই। এবার আপনি বিদায় দিলে চলে যেতে পারি, আর আপনি চাইলে থেকে যেতে পারি।
নিলয় নাবিলার হাত ধরে বললো,– তুমি থেকে যাও,হিমির প্রতিচ্ছবি তুমি, তোমার মাঝেই হিমিকে খুঁজে পাই আমি। আর কিছু না হোক সম্পর্ক বৈধ করে দিনরাত দুচোখ ভরে তোমায় দেখতে চাই।
অবশেষে নিলয় ও নাবিলার বিয়ে হয়ে গেল।
সমাপ্ত।