গল্পঃ কে তুমি ( ষষ্ঠ পর্ব )
লেখাঃ ইমতিয়াজ আহমেদ চৌধুরী
নাবিলাকে ধরে নিজের বেডে শোয়ালো নিলয়, উদ্দেশ্য হাসিল করার এই তো মোক্ষম সময়, নাবিলার কোমরের ওপর সতর্কতার সাথে হাত রাখলো।
পাওয়ারফুল ঘুমের ওষুধ মিশ্রিত কফি খেয়ে খুব দ্রুত ঝিম মেরে এসেছিল নাবিলার মাথা, দুচোখ ঝাপসা হয়ে এসে কেমন ঢলে পড়েছিল।
আসলে নিলয় যখন হার্টের ওষুধ আনতে বলেছিল, কফি মেকারের পাশে হার্টের ওষুধ পেলেও প্রেসক্রিপশনে ঘুমের ওষুধ লেখা ছিল, সেটা পায়নি দেখেই ফিরে এসে বলেছিল ঘুমের ওষুধ পাইনি, এবং নিলয়কে বিশ্বাস করে বলেই ওটা নিয়ে তেমন সন্দেহ করেনি নাবিলা, কিন্তু সেই ওষুধ সরিয়ে এনে আগেভাগেই রেখে দিয়েছিল নিলয়।
নাবিলার কোমরের কাপড় সরাবে এমন সময় দরজার বাইরে থেকে আওয়াজ করে মীরা বললো,– ভাইয়া রাতের খাবার খেতে আসো, সবাই তোমার জন্য অপেক্ষা করছে।
“ তুই যা আমি আসতেছি ” বলে নিলয় বেড থেকে নামলো।
সবাই অপেক্ষা করে বলতে নিলয়ের চাচা, তার স্ত্রী এবং দুই ছেলেমেয়ে মীরা ও রাকিব। নিলয়ের পুরো পরিবার সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাবার পর থেকে নিলয় নিজের বাড়ি ছেড়ে এখানেই থাকে চাচার বাসায়, এখানে থেকেই বাবার রেখে যাওয়া বিজনেস সামলায়। আসলে পরিবার হারিয়ে পরিবার সম্পর্কে ধারণা আরও স্পষ্ট নিলয়ের, তাই চাচার পরিবার নিজের পরিবার ভেবে নিজের আলিশান বাড়িঘর ছেড়ে এখানেই থাকে নিলয়।
ডাইনিং টেবিলে এসে বসলো নিলয়, চাঁচি খাবার সার্ভ করে নিজেও বসলো। মীরা নীরবতা ভেঙে সবার উদ্দেশ্যে বললো,– জানো, আজকে নিলয় ভাইয়ার রুমে হিমি ভাবীর আত্মা এসেছিল!
নিলয় বাদে বাকিরা ভীষণ অবাক হয়ে বললো,– এ্যা!
মীরা বললো,– এ্যা নয় হ্যাঁ, তারপর আবার গায়েব হয়ে গেল!
নিলয় বাদে সবাই সমস্বরে বললো,– বলিস কি!
মীরা মুখ গম্ভীর করে বললো,– তোমরা যা শুনছো সেটাই বলেছি।
মীরার বড়ো ভাই বললো,– মুখে মেকাপ ঘষতে গিয়ে চোখে ঘষে ফেলছিস মনে হয়, তাই ভুলভাল দেখছিস, কতবার বলছি মেকাপ কম করে মাখ, আমার কথা শুনলে আর আর তোর মুখে এসব আজগুবি গল্প শুনতে হতোনা!
মীরা ভেঙচি দিয়ে বললো,– তোর বউকে যেন কোনদিন মেকাপ ঘষতে না দেখি।
মীরার বড়ো ভাই রাকিব খুবই চালাক এবং উচ্ছনে যাওয়া যুবক, বাজে আড্ডা এবং নেশায় ডুবে থাকা ছাড়া তার আর কাজ নেই! রাকিব ও নিলয় সমবয়সী প্রায়।
খেতে খেতে রাকিব নিলয়কে বললো,– নিলয়, এতগুলো ফ্যাক্টরি পরিচালনা করতে নিশ্চয়ই তোর হিমশিম খেতে হয় মনে হচ্ছে, তাছাড়া হিমি ভাবীকে হারিয়ে তোর মানসিক অবস্থাও ভালো নেই বোধহয়, বলছিলাম আপাতত কেমিক্যাল ফ্যাক্টরিটা আমি দেখভাল করি, একটু হলেও তোর প্রেশার কমবে!
নিলয় সবার সামনেই রাকিবকে বললো,– তোর হাতে ফ্যাক্টরি ছাড়া মানেই কদিন পরে তোকে খুঁজে পাওয়া গেলেও ফ্যাক্টরি আর পাওয়া যাবেনা, সুতরাং আগে এই বিশ্বাস অর্জন করো যে তুমি পারফেক্ট, তারপর দেখা যাবে। অসৎ সঙ্গ ত্যাগ করো, নেশাপানি ছাড়ো। কারণ আমি বেঁচে থাকতে আমার বাবার রেখে যাওয়া কোনকিছুরই বিন্দুমাত্র ক্ষতি হতে দেবোনা।
সবার সামনে এ কথা বলার কারণে রাকিব ভীষণ রেগে গিয়ে টেবিল ছেড়ে উঠে চলে গেল। রাকিবের বাবাও উঠে চলে গেল, তার ছেলেকে নিলয়ের বলা কথায় তারও খারাপ লেগেছে তাই।
নিলয়ের চাচি নিলয়কে বললো,– ওদের কথা বাদ দে তো বাবা, শোন বহুদিন তোকে একটা কথা বলবো বলবো করেও বলা হয়না, এটা আমার আর তোর চাচার ইচ্ছে, তুই পূর্ণ পূরণ করবি বল!
নিলয় বললো,– কি ইচ্ছে বলেন!
চাচি বললো,– তোর সাথে মীরার বিয়ে।
এই কথা শুনে নিলয় এবং মীরা দুজনেই হ্যাং হয়ে গেল। মীরা ভাবছে এরকম কিছু হলে তার ভালোবাসার মজনু তো ছ্যাঁকা খেয়ে দেবদাস হয়ে যাবে। এই দৃশ্য দেখার আগে হারপিক সেবন করে মরে যাওয়াও ভালো!
নিলয় বললো,– এসব কি বলেন চাচিমা, এটা কি করে সম্ভব! আমি মীরাকে নিজের ছোট বোনের মতো ভালোবাসি, এটা অসম্ভব! আপনাদের এই ইচ্ছেটা পূরণ করা আমার পক্ষে সম্ভব না।
মীরারও বললো,– বিষয়টি বেদনার মা, আমিও নিলয় ভাইয়াকে বড়ো ভাইয়ের মতো মানি।
মা চোখ গরম দিতেই মীরা চুপ হয়ে গেল।
চাচি আবার নিলয়কে বললো,– চাচাতো ভাই বোনের মধ্যে বিয়েসাদী হয়তো নিলয়, এটা দোষের কিছু না, তুই একটু ভেবে দেখিস, তা নাহলে আমার চেয়ে বেশি কষ্ট পাবে তোর চাচা।
নিলয় চুপচাপ উঠে বেসিনে গিয়ে হাত ধুয়ে প্রতিরাতের মতোই ড্রইং রুমে গিয়ে সোফায় বসে টিভি দেখতে লাগলো, ঘুমানোর আগে এটা নিলয়ের রোজকার অভ্যাস। নিলয়ের চাচি প্রতিরাতের মতোই দুধ গরম করে এক গ্লাস দুধ মীরাকে দিয়ে নিলয়ের জন্য পাঠালো। কিন্তু আজকের দুধ প্রতিদিনের মতো স্বাভাবিক নয়, ঘুমের ওষুধ মেশানো দুধ, সেটা মীরাও জানেনা।
ড্রইং রুমে এসে নিলয়ের হাতে দুধের গ্লাস দিয়ে মীরা বললো,– ভাই, বিয়ের আগে মজনুকে বিধবা করিসনা আব্বু আম্মুর কথায় প্লিজ, মজনুর প্রেমে অলরেডি লায়লা আমি!
: হা হা হা, কি বলিস এসব মীরা!
: হ্যাঁ ভাই, আব্বা আম্মার কথায় তুমি আবার রাজি হইয়ো না, তাইলে কিন্তু আমার নিরীহ নিষ্পাপ মজনু অকালে দেবদাস হইয়া ঝরিয়া পড়িবে ভাই!
: হা হা হা, তোর মাথা খারাপ! এমন কিছুই হবেনা।
মীরা আবার কিচেনে মায়ের কাছে চলে আসলো, মা মীরাকেও এক গ্লাস দুধ খেতে দিলো, এবং এই দুধেও ঘুমের ওষুধ মেশানো।
দুধ খেয়ে মীরা মায়ের সাথে কাজে হেল্প করছে এবং ধীরে ধীরে মীরারও ঘুম পাচ্ছে!
ওদিকে ঘুমের ওষুধ মেশানো দুধ খেয়ে নিলয় সোফায় ঘুমিয়ে পড়েছে!
মীরাও চেয়ারে বসে ঘুম।
রাকিবকে ডেকে মা বললো,– শোন, নিলয়কে ধরে মীরার রুমে শুইয়ে দিয়ে আয়।
রাকিব অবাক হয়ে বললো,– কি বলছো এসব মা, মাথা ঠিক আছে তো!
রহস্যময় হাসি হেসে মা বললো,– তোর বাবার আর আমার প্ল্যানটা ব্যর্থ হবে মনে হয়, তাই ভিন্ন পদ্ধতি। তোকে খাবার টেবিলে অপমান করলো, আমি মা হয়ে সহ্য করবো বুঝি! নিলয়কে মীরার রুমে শুইয়ে দিয়ে আয়, তারপর সকালে এমন একটা ব্লাস্ট হবে,হয়তো নিলয় মীরাকে বিয়ে করবে, নয়তো জেলে যাবে, তারপর ওর সবকিছু তোর।
নিলয় গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন, রাকিব নিলয়কে নিয়ে গিয়ে মীরার রুমে মীরার বেডে শুইয়ে দিয়ে নিজের রুমে চলে গেল।
মা মীরাকে নিয়ে নিলয়ের পাশে শুইয়ে দিয়ে বাইরে থেকে দরজার ছিটকিনি লাগিয়ে দিয়ে রহস্যমাখা হাসি হেসে চলে গেলো…
চলবে…