কে তুমি পর্ব-০৫

0
1060

গল্পঃ কে তুমি (পঞ্চম পর্ব )
লেখাঃ ইমতিয়াজ আহমেদ চৌধুরী

নিলয়কে তার বেডরুমে শুইয়ে দিয়ে নাবিলা উঠতেই নিলয় নাবিলার হাত টেনে ধরলো। নাবিলা ভীষণ অবাক হয়ে বললো,– কী ব্যাপার!

নিলয় বললো,– আজ রাতটা নাহয় এখানে থেকে যাও।

চোখ বড়ো বড়ো করে নাবিলা বললো,– মনে আবার কু মতলব নেই তো আপনার। আমি কি আপনার বিয়ে করা বউ যে রাতে আপনার সাথে আপনার শয্যার সঙ্গী হবো!

নিলয় মুচকি হেসে বললো,– মতলব জিনিসটাই নেই, কু মতলব তো দুরের কথা!

নিলয় ধীরে ধীরে উঠে গিয়ে ড্রয়ার থেকে ফ্রেমে বাঁধানো একটি ছবি এনে নাবিলার হাতে দিলো। ছবিটার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নাবিলা। ছবির মেয়েটি দেখতে হুবহু নাবিলার মতোই!

নাবিলা ছবিটা বেডের ওপর রেখে নিলয়কে বললো,– গোপনে আমার ছবি তুলে ফ্রেমে বাঁধাইলে কি আমি পটে যাবো ভাবছেন! অতটাও বোকা নই, আর আপনার মতলব ভালো মনে হচ্ছে না আমার।

নিলয় ঠোঁটের কোনে হাসির রেখা ফুটিয়ে বললো,– ঐ ছবিটা তার, যাকে হারিয়ে বেঁচে থেকে মৃত আমি!

: মানে?

: মানে যার মাঝে নিজেকে হারিয়েছি, তাকে হারিয়ে নিজেকে ঠিক খুঁজে পাচ্ছিনা!

: কিসব বলছেন এসব নিলয়, আপনার হার্টে সমস্যা মাথায় না, ভুলভাল কথা বন্ধ করুন!

: হা হা হা, ভুলভাল বলছিনা নাবিলা, ছবির ঐ মেয়েটি আমার স্ত্রী হিমি। যে আমার বুকের ওপর মাথা না রাখা পর্যন্ত আমার চোখে ঘুম আসতো না, যার কপালে হাজারটা চুমু না খেলে মনে শান্তি হতোনা, জানো আমরা কপালে কপাল, নাকে নাক, ঠোঁটে ঠোঁট লাগিয়ে ঘুমাতাম, দুজনের নিশ্বাস প্রতি মুহূর্তে দুজন অনুভব করে গভীর প্রেমে ডুবতাম। রাতে দুজনের শরীর অনাবৃত, দুজন দুজনকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে মিশে যেতাম দুজন দুজনায়। সেই মানুষটি আজ দূর থেকে বহুদূর, বাইরে থেকে আমাকে জীবন্ত মনে হলেও ভেতর থেকে মরে গেছি সেই কবে নাবিলা!

নিলয়ের কথা শুনতে শুনতে নাবিলা একটা ঘোরের মধ্যে পড়ে গেল।

নিলয় আবার বললো,– ছবির এই মেয়েটি তুমি নও, ও হিমি, আমার স্ত্রী।

হঠাৎ নিলয়ের রুমে ঢুকে নাবিলাকে দেখে হিমির আত্মা মনে করে ভূউউউউউত বলে জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে পড়ে গেল মীরা!

নিলয় হেসে ফেলে নাবিলাকে বললো,– হঠাৎ করে তোমাকে হিমি ভেবে মীরার এই দশা!

নাবিলা অবাক হয়ে বললো,– কিন্তু নাবিলা তো আমায় চেনে, আমাকে দেখতে হিমির মতো লাগে তা-ও নিশ্চয় সে জানে, তবু কেন!

নিলয় বললো,– হঠাৎ হঠাৎ আকস্মিক এমন হয়ে যায়, মানুষের সেন্স সবকিছু গুলিয়ে ফেলে!

নাবিলা বললো,– আচ্ছা, তাহলে একটা প্ল্যান করি, আমি লুকিয়ে পড়ি, আপনি মীরার হুশ ফিরলে বলবেন আপনার পাশে কেউ ছিলনা, তারপর শুরু হবে খেলা!

নিলয় অবাক হয়ে বললো,– কিন্তু কেন নাবিলা!

নাবিলা উঠে দাড়িয়ে বললো,– সুযোগ এড়িয়ে যেতে নেই, কাজে লাগাতে হয়, যা বলেছি তাই করেন!

নাবিলা গিয়ে আলমারির পেছনে লুকিয়ে পড়লো।

নিলয় উঠে মীরার মুখে জল ছিটিয়ে দিতেই হুশ ফিরলো, উঠে বসে নিলয়ের খাটের দিকে নজর বুলিয়ে মীরা বললো,– সে কই ভাইয়া?

: সে মানে কে মীরা?

: আরে তোমার পাশেই তো বসা ছিল, হিমি ভাবির মতো কেউ একটা, আচ্ছা তাহলে কি নাবিলা আপু এসেছিল?

: সে আমাদের বাসায় আসতে যাবে কেন, আর আসলে আবার গায়েব হয়ে যাবে কেন! কিসব ভুলভাল বকিস তুই?!

: ভাইয়া তোর রুমে মনে হয় হিমি ভাবীর আত্মা আছে!

: থাক্তেও পারে মীরা, অনেক বেশী ভালোবাসি তো, সেই ভালোবাসার টানে হিমির আত্মা ছুটে এসেছে, তা-ও ভালো, হিমি নেই কিন্তু হিমির আত্মা তো আছে। একেবারে কিছু না থাকার চেয়ে কিছু থাকা ভালো।

: ভাইয়া কিসব বলো!

: যেসব শুনছিস সেসব!

“বাবাগো আমি নাই” বলে মীরা উঠে দ্রুত পায়ে চলে গেল।

নিলয় উঠে রুমের দরজা বন্ধ করে এসে বিছানায় বসলো, নাবিলা আলমারির পেছন থেকে বেরিয়ে এসে নিলয়কে বললো,– এবার শুরু হবে আসল খেলা।

নিলয় অবাক হয়ে বললো,– তার মানে কি নাবিলা, তুমি কি করতে চাইছো?

নাবিলা বললো,– মৃত হিমি আপুকে আবার সবার চর্চায় আনতে চাইছি, মুখে মুখে তার নামের উপস্থিতি থাক।

এদিকে আজকে হার্টের সমস্যার যে অভিনয় করেছিল নিলয়, সেটার উদ্দেশ্য ছিল নাবিলাকে বাসা পর্যন্ত নিয়ে আসা, যেভাবে হোক নাবিলার কোমর চেক করতে হবে তার কোমরে জন্মদাগ আছে কি নেই!

নিলয়ের হার্টে সামান্য সমস্যা আছে, কিন্তু আজ আদৌ কোনো সমস্যা ছিলনা!

নিলয় নাবিলাকে বললো,– নাবিলা খুব কফি খেতে ইচ্ছে করছে, দুটো কফি করে আনবে! পাশের রুমে কফি মেকার আছে।

“জ্বি অবশ্যই” বলে নাবিলা উঠে রুমের দরজা খুলে পাশের রুমে চলে গেল নাবিলা।

নাবিলা চলে যেতেই উঠে গিয়ে একটা ঘুমের ওষুধ এনে আবার বিছানায় শুয়ে পড়লো নিলয়।

কিছুক্ষণ পরে দু’হাতে দুকাপ কফি নিয়ে ফিরলো নাবিলা, বেডের পাশে টেবিলে কফির কাপ রেখে মিষ্টি হেসে নাবিলা বললো,– নিন, খেয়ে দেখুন!

কফির কাপ হাতে নিয়ে নিলয় বললো,– ইশ! আর একটু কষ্ট করবে!

: কি বলুন!

: কফি মেকারের পাশেই আমার হার্টের ওষুধ রেখেছিলাম, যদি একটু নিয়ে আসতে!

: আচ্ছা যাচ্ছি!

নাবিলা আবার পাশের রুমে চলে যেতেই ঘুমের ওষুধ গুরো করে নাবিলার কফির সাথে গুলে দিলো নিলয়।

অনেকক্ষণ খোঁজাখুঁজি করে কোথাও ওষুধ না পেয়ে ফিরে এসে নাবিলা বললো,– কই পেলাম না তো ঘুমের ওষুধ কোথাও!

নিলয় অবাক হবার ভান করে বললো,– ইশ! হয়তো অন্য কোথাও রেখেছি, মনে নেই ঠিক! আচ্ছা পরে দেখা যাবে, তুমি কফি খেয়ে নাও, ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে তো!

নাবিলা কফির কাপে চুমুক দিলো, নিলয়ের ঠোঁটে রহস্যময় হাসির রেখা ফুটে উঠলো এই ভেবে যে সফলতার দ্বারপ্রান্তে প্রায় পৌঁছে গেছে সে।…

চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে