গল্পঃ কে তুমি ( চতুর্থ পর্ব )
লেখাঃ ইমতিয়াজ আহমেদ চৌধুরী
নাবিলা চোখের পলকে মজনুর হাত থেকে চাকু কেড়ে নিয়ে মজনুর তলপেটে একটা কিক মারতেই মজনু কফিশপের চেয়ার টেবিল নিয়ে উল্টে পড়ে গেল। এই দৃশ্য দেখে মজনুর সাঙ্গপাঙ্গরা ফার্স্ট মোশনে গায়েব।
নাবিলা এগিয়ে গিয়ে মজনুর ঠ্যাং ধরে টেনে তুলে চেয়ারে বসিয়ে, আরও একটা চেয়ার টেনে নাবিলা মজনুর মুখোমুখি বসে বললো,– তোমরাই যদি মেয়েদের সন্মান না দাও, তাহলে পরের প্রজন্ম কি শিখবে, কাদের কাছ থেকে শিখবে? যে মেয়েটি তোমায় পাগলের মতো ভালোবাসে তার সাথে প্রতারণা করছো, আর তুমি ভুল কাউকে সিলেক্ট করে যখন সেখান থেকে প্রতারিত হবে, তখন তোমাদের কাছে পৃথিবীর সব মেয়েরা খারাপ! কি অদ্ভুত লজিক তোমাদের! মানে পজিটিভ থিংকিং ব্যাপারটা তোমাদের মাথায় আসেনা! সব মেয়েরাই তার প্রেমিককে প্রচন্ড ভালোবাসে বলেই একটু বেশী খেয়াল রাখে, কারণে অকারণে রাগ অভিমান করে, সন্দেহ করে, এসব ন্যাকামি নয়, প্রেমিকের প্রতি প্রবল ভালোবাসা এটা, বুঝতে পেরেছো?
মজনু কাতর গলায় বললো,– আপু আপনি কি ব্রুস-লি এর দূর সম্পর্কের আত্মীয় নাকি! কিকটা আর দুই ইঞ্চি নিচে লাগলেই আমার পিতৃত্বের সাধ গ্রহণ করা হইতো না আর এ জন্মে।
নাবিলা হেসে ফেলে বললো,– আত্মরক্ষার জন্য আমার স্পেশাল ট্রেনিং নেয়া আছে। যা-ই হোক, যে তোমায় পাগলের মতো ভালোবাসে তাকে ভালোবাসা দিয়ে বেঁধে রাখো, অবহেলা করে তার হৃদয় ভেঙে তুমি কখনও সুখী হতে পারবে না। বুঝছো?
মজনু মিনমিন করে বললো,– এভাবে এত সুন্দর করে ধোলাই দিয়ে বোঝালে কে না বোঝে আপু!
মজনু মীরার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিলো।
নাবিলা মীরাকে বললো,– তোমার প্রেমিক মজনু এভাবে ট-ট করে ঘুরে আড্ডাবাজী করলে চলবে! তোমার ভাইয়ার অফিসে এইচ-আর ডিপার্টমেন্টে একজন ম্যানেজার প্রয়োজন, সেখানে মজনুকে জয়েন করাও। নয়তো আজীবন বাবার হোটেলে খাওয়াবে তোমায়, নিজের গর্ব করার মতো কিছু থাকবে না।
মজনু আবেগে নাবিলাকে বললো,– আপু আপনি মানুষ না।
নাবিলা অবাক হয়ে বললো,– মানুষ নই তো কি! এলিয়েন!
মজনু বললো,– মানুষের ওপরে যদি কিছু থাকে তাই, ধোলাই দিলেন, সঠিক বুঝ দিলেন, এখন আবার জব, একদিনে আপনার কাছ থেকে কত প্রাপ্তি!
নাবিলা মুচকি হেসে বললো,– তুমি আসলেই মজার লোক মজনু, আচ্ছা আমি যাচ্ছি, তোমরা আড্ডা দাও।
নাবিলা কফিশপ থেকে বেরিয়ে চলে গেল।
নাবিলা চলে যেতেই মজনু মীরাকে বললো,–এমন ডেঞ্জারাস মেয়ে তোমার আত্মীয় স্বজনের লিস্টে আছে আগে যদি জানতাম!
মীরা মুচকি হেসে বললো,– এবার জানলে তো, বিষয়টি মনে রাখলেই হবে।
সকালে অফিসে এসে নিলয় চেয়ারে বসে ভাবছে হিমির কোমরের সেই জন্মদাগের কথা। নাবিলার আচার-আচরণ হুবহু হিমির মতোই একদম, তাহলে কি হিমি মারা যায়নি! সেটা কীভাবে সম্ভব, হিমিকে যে নিজের চোখের সামনেই কবর বাসী হতে দেখেছে। সে যা-ই হোক, অন্তত যেকোনো উপায়ে এটা শিওর হতে হবে যে নাবিলার কোমরেও জন্মদাগ আছে কিনা। নিলয় নিজেও জানে এটা পাগলামি, কিন্তু নিজের মনকে কিছুতেই শান্ত করতে পারছে না নিলয়। অবশেষে একটা ফন্দি আঁটতে সক্ষম নিলয়।
নাবিলাকে ডেকে সামনের চেয়ারে মুখোমুখি বসিয়ে আমতা আমতা করে বললো,– আচ্ছা নাবিলা, শাড়ী চেনো তো! নাকি?
নাবিলা ভীষন অবাক হয়ে বললো,– মিস্টার নিলয়, আপনার কি আমাকে এলিয়েন মনে হয়?!
: না মানে, ইয়ে নাবিলা সেরকম বলতে চাইনি!
: তো কি, শাড়ি চিনবো না মানে! একটা মেয়েকে তার সবচেয়ে পছন্দের বস্ত্রের কথা জিজ্ঞেস করছেন চেনে কিনা! হা হা হা, শরীরটা ঠিক আছে তো আপনার?
: হ্যা একদম নাবিলা, বিষয় হচ্ছে ড্রেস-ফেয়ার কাপড়ের ব্যবসার জন্য স্পেশালি শাড়িগুলো হাইলাইটস করার জন্য একজন মডেল দরকার ছিল। ভেবে দেখলাম এরার জন্য তুমি পারফেক্ট, মডেল হবে?
: মডেল হবার ইচ্ছে আমার নেই নিলয়!
: প্লিজ এবারের মতো, প্লিজ নাবিলা।
: আচ্ছা, তো কি করতে হবে?
: সুন্দর করে শাড়ি পরে ফটোশুট, এবং দুই তিনটা শর্ট স্লো-মোশন ভিডিও ক্লিপ। ভিডিও ক্লিপের জন্য অবশ্য কোমরের কাছের শাড়ী লুজ থাকবে, হালকা বাতাসে শাড়ী সরে যাবে এবং অল্প করে তোমার কোমরে সামান্য ওপরের অংশ দেখা যাবে।
: তাহলে তো এটা কোমরের বিজ্ঞাপন হয়ে যাবে মিস্টার নিলয়, আগে সিদ্ধান্ত নিন বিজ্ঞাপন ঠিক কোনটার দিতে চান, কোমরের নাকি শাড়ির!
নাবিলার কথায় থতমত খেয়ে চুপ হয়ে গেল নীলয়, নাবিলা মুচকি হেসে নিলয়ের সামনে থেকে উঠে গিয়ে নিজের ডেস্কে বসলো।
বিকেলে অফিসের কাজ শেষ করতে করতে দেরি হয়ে গেল। ঝুকে চেয়ারের নিচে পড়া কলমটা তুলতে গিয়ে বুক চেপে ধরে নিলয় হঠাৎ বসে পড়লো, নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। নাবিলা ছুটে এসে নিলয়কে তুলে চেয়ারে বসিয়ে হার্ট সোজা বুকের বামপাসে হাত রেখে বললো,– একদম রিল্যাক্স, অস্থির হওয়া যাবেনা, স্বাভাবিক ভাবে নিশ্বাস নেবার চেষ্টা করুন।
নিলয় অবাক হয়ে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে নাবিলার দিকে, হিমিও ঠিক এভাবেই বুকে হাত রেখে এই কথাগুলো বলতো।
নাবিলা বললো,– এক্ষুনি ডাক্তারকে ফোন করছি।
নিলয় বললো,– আসলে মেডিসিনটা সঙ্গে করে আনতে ভুলে গেছি নাবিলা, ডাক্তার ডাকতে হবেনা, আমাকে বাসা পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে আসলেই হবে যদি তোমার আপত্তি না থাকে!
“ওকে তাই হবে” বলে নিলয়কে ধরে ধীরে ধীরে অফিস থেকে বেরিয়ে এসে গাড়িতে বসিয়ে ড্রাইভ করছে নাবিলা। নিলয়ের ঠোঁটে রহস্যময় মুচকি হাসি…
চলবে…