কেশের মায়া পর্ব-০১

0
3

#সূচনা_পর্ব
#গল্পঃ #কেশের_মায়া
#লেখিকা – #চন্দ্রাবতী

(18 + সতর্কতা 🚫)

আমার বর আমায় বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। আর এর পিছনের কারনটা হলো আমি আমার হাঁটুসম চুল কেটে মাজাসম করে ফেলেছি।

আমি পৃথ্বিশা। আমার বর মেজর দেবরাজ সেনগুপ্ত। তার পোস্টিংয়ের কারণে তার আসার কথা ছিল আরও তিন মাস বাদ। কিন্তু বউয়ের টানে তিনি তার দুইমাস আগেই ফিরে পড়েছেন। তারপর বউকেই ঘর থেকে বের করে দিয়েছেন।

আমি এখন বাপের বাড়ি না গিয়ে ঝিলপাড়ে এসে বসে আছি। কারণ বাপের বাড়ি গেলে মায়ের বকা খাবো চুল কাটার জন্য। আর রাজের কাছে তো যেতেই পারব না। সে খোঁচে বোম হয়ে আছে আমার উপর। আমি বেচারা অবলা প্রাণী, যার নিজের চুলের উপর নিজেরই কোনো অধিকার নেই। কই ভেবেছিলাম রাজ আসার আগেই চুল ঠিক বেড়ে যাবে তা না মহারাজা আমায় বকাঝকা করার জন্য আগেই এসে হাজির হয়েছেন।

আমি জানি রাজ আমায় ঠিক খুঁজতে আসবে। কিন্তু আজ আমি নিজের সিদ্ধান্তে অটল। কিছুতেই ফিরবনা ওই বেয়াবপ লোকের সাথে আমি। আমায় বাড়ি থেকে বের করা..?

কিছুক্ষণ পর আমার ভবিষ্যৎবাণী অনুযায়ী রাজ আমায় খুঁজতে এলো। দেখেই বোঝা যাচ্ছে বিধ্বস্ত সে। গায়ে ঘামে শার্ট লেপ্টে,চুল এলোমেলো। হয়তো ফোন দিয়ে জেনেছে আমি বাপের বাড়ি যায়নি। বেশ হয়েছে ভুগুক একটু। আমি আরেকটু আড়াল করে বসলাম নিজেকে। দেখি সে কতক্ষন খোঁজে।

রাজ চারিপাশে আরও একবার খুঁজলো। নাম ধরে ডাকলোও বারকয়েক কিন্তু না মহারানীর কোনো পাত্তা নেই। রাজ এবার নিজেকে অপরাধী ভাবলো। সে কি আসলেই বেশি করে ফেললো নাকি..? কিন্তু সেই বা কি করবে মেয়েটা তার দূর্বলতা জেনেও বার বার একই কাজ করে।

কিছুক্ষণ পর চেনা অবয়ব আর শাড়ির আঁচল দেখতে পেয়ে বুক ভরে নিঃশ্বাস নিলো রাজ। দম আটকে এসেছিল আরেকটু হলেই যেন তার।

– ” ইশা..? ”

ইশা চমকে পিছনে ফিরে তাকাতেই চমকে উঠলো । শক্ত কঠিন মুখাবয়ব নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা মানবটির দিকে তাকিয়ে শুকনো ঢোঁক গিলে রাগ দেখানোর চেষ্টা করলো। মুখ ফিরিয়ে নিলো পুনরায়।

– ” ঘরে চলো ইশা ”

– ” কেনো যাবো..? ওইটা কি আর আমার ঘর..? ”

– ” না ওটা আমাদের ঘর। চলো এখন বাড়ি ”

শান্ত কন্ঠস্বর শুনে ইশার ভয় হলেও রাগ বজায় রাখলাম সে।

– ” মোটেই না। আমাদের ঘর হলে তুমি কখনোই এইভাবে আমাকে বের করে দিতে পারতে না…”

– ” পারি চাইলে তুমিও আমায় বের করে দিতে পারো। কিন্তু সেটা গ্রান্টেড হবে যখন আমি কোনো অপরাধ করবো। কিন্তু এখন তুমি অপরাধী ”

– ” হ্যাঁ হ্যাঁ, আমার চুলে আমার চেয়ে বেশি তো অন্যদের অধিকার। নিজের বলতে আর কিইবা আছে আমার..? ”

রাজ দাঁতে দাঁত চেপে হিসহিসিয়ে উঠলো

– ” বেশি বলছো ইশা। বাড়ি চলো এক্ষুণি বাকি কথা বাড়ি গিয়ে বলবে। ”

– ” বললাম তো যাবো না ”

রাজ কোমরে এক হাত রেখে নিজের দুই আঙুলের সাহায্যে নিজের কপাল ঘষে বলল

– ” ওকে ফাইন ”

বলেই ইশাকে এক কাঁধে তুলে নিয়ে হাঁটা ধরলো সামনের দিকে। ইশা বুঝে উঠতেই নিজেকে ছাড়ানোর জন্য জোরাজুরি শুরু করলো। চেঁচালোও খানিক। তবে বলিষ্ঠ দেহের কাছে বেশি সুবিধে করতে পারল না।

রাজ ইশাকে বাড়িতে এনে সোফায় বসিয়ে ক্ষান্ত হলো। ইশা এখনও ফুলে আছে। বিড়বিড় করে চোদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করছে রাজের।

– ” খাবার আনো ইশা ”

– ” পারবনা আমি ”

– ” আমি দুইদিন ধরে না খেয়ে টানা জার্নি করে এখানে এসেছি ইশা ”

ইশা একবার রাজের মুখের দিকে তাকালো। আসলেই রাজের মুখে ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট। সে বিরক্ত হয়ে ” ধুর ” বলে চলে গেলো রান্নাঘরে। খাবার বাড়তে বাড়তে এইভাবে হবে না ভেবেই মনে মনে আলাদা ছক কষলো সে।

খাওয়ার সময় রাজ নিজের পাশে বসিয়ে নিজের হাতেই খাইয়ে দিল ইশাকে। ইশা চুপচাপ খেয়ে নিলো। রাজ ভেবেছিল ইশা রাগ দেখাবে কিন্তু এইভাবে চুপচাপ সব মেনে নিতে সে অবাক হলো বেশ।
.
.
আমি রোজকার মতো খাওয়া দাওয়া শেষে থালা বাসন ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে ড্রেস চেঞ্জ করে নিলাম। বলাবাহুল্য অন্যদিনের তুলনায় একটু খোলামেলাই ড্রেস পড়লাম। তারপর টাওয়াল দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে রুমে ঢুকে আয়নার সামনে দাঁড়াতেই আয়নাতে দৃশ্যমান হলো রাজ বেডে ল্যাপটপ নিয়ে বসে কেমন নেশালো দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আমি বাঁকা হাসলাম। আমার মিশন সফল হয়েছে। তারপরই বেডের সাইডে গিয়ে নিজের বালিশ নিয়ে ফিরতেই রাজ হাত টান দিয়ে ধরলো।

অস্থির গলায় জিজ্ঞেস করলো ” কোথায় যাচ্ছ..? ”

আমি এবার একটু ঢং করে বললাম ” কেনো বাড়ি থেকে বের করার আগেই তো বললে চুল বড়ো না হওয়া অবধি যেনো তোমার ধারে কাছে না ঘেঁষি। ”

– ” ওসবের জন্য তো আমি সরি বললাম ”

– ” আচ্ছা সেসব বাদ দিলাম। তুমি না বললে তুমি দুই দিন জার্নি করে এসেছ..? এখন রেস্ট নাও আমি থাকলে আবার যদি ডিস্টার্ব হও ”

রাজ আমার হাতে আরও চাপ দিয়ে বলল

– ” কোনো ডিস্টারবেন্স হবে না। তুমি কোত্থাও যাচ্ছ না ”

– ” না আমি যা………..”

আর কিছু বলার আগেই রাজ আমায় টেনে তার কোলে ফেলে ডুব দিলো আমার ঠোঁটে। আমিও বারণ করলাম না। তিষ্ণার্ত যে আমিও ছিলাম। কিন্তু এর মধ্যে আমার মিশনের কথা ভুললে হবে না। দীর্ঘ চুম্বনের পর রাজ আমার ঘাড়ে মুখ গুঁজে আমার নাইট ড্রেসের ফিতেতে হাত দিতেই আমি আটকে দিলাম সেই হাত। রাজ তোয়াক্কা না করলেও আমি ছাড়াতে দিলাম না এবার।

– ” আগে বলো পরের বার চুল কাটলে বাড়ি থেকে বের করবে না। ”

রাজ এবার বিরক্ত হয়ে বলল ” কি হচ্ছেটা কি ইশা..?”

আমি না না করে উঠলাম ” প্রমিজ না করলে আমি কিছুতেই অনুমতি দেবো না ”

রাজের মাথায় এখন নেশা চড়ে। সে মহা বিরক্ত হয়ে আগে পিছে কিছু না ভেবে বলল ” ওকে কিন্তু দুই ইঞ্চি এর বেশি না ”

– ” না না তাহলে হবে না ”

– ” উফ ইশা পাগল করে দেবে তুমি আমায়। ঠিক আছে যাও আড়াই ইঞ্চি কেটো। শান্তি..? হাত সরাও এবার ”

আমি প্রথমে মুখ বেজার করলেও মেনে নিলাম। যাই হোক অনুমতি তো পেয়েছি। এতেই হবে। এবার নিজে থেকেই রাজকে জড়িয়ে ধরলাম। যতোই রাগ ক্ষোভ দেখাই না কেনো দিনশেষে দুজনের দুজনকে ছাড়া যে চলে না।
.
.
.
.
সকাল থেকেই আমার মেজাজ ফুরফুরা। ভাবা যায় রাজের কাছ থেকে চুল কাটার অনুমতি নিয়েছি বলে কথা। রাজ এর মধ্যেই এসে বসলো ডাইনিং টেবিলে। আমি প্রজাপতির মতো উড়ে গিয়ে তার পাশে বসে আহ্লাদ করে ফোনের একটা হেয়ার স্টাইল দেখিয়ে বললাম

– ” এই দেখো পরের বার এইটা করবো কেমন লাগবে…? ”

রাজ এবার ফটোটায় চোখ বুলিয়ে প্লেট সোজা করতে করতে বলল

– ” হুম ভালোই। তবে হাফ ইঞ্চির বেশি যেনো না কাটা হয়। ”

আমি হাঁ…কি বলে কি এই লোক..?

– ” এই এই তুমি কাল প্রমিজ করেছো আড়াই ইঞ্চির”

– ” আমি করিনি তুমি দুর্বলতার সুযোগ নিয়েছ আমার। তাই ওটা প্রমিজের কাতারে পড়ে না ”

আমার রাগে চোখের কোনায় জল এসে গেছে। এতো বড়ো ধোঁকা আমার সাথে..? আমি ধপ করে উঠে দাঁড়ালাম চেয়ার থেকে। হাত ঠুকে বললাম

– ” এমন পাল্টিবাজের সাথে আমি কিছুতেই সংসার করবো না। আমি আজই বাপের বাড়ি চলে যাব। গিয়ে যা চুল আছে সব ঘাড় অবধি কেটে তোমায় পার্সেল করে পাঠানো। কি করার করে নাও ”

বলেই আমি রেগে হনহনিয়ে নিজের রুমে চলে এলাম। যদিও বলা কথাটা আমি বাস্তবে রূপান্তরিত করতে পারবো না। কারন চুলটা আমারও বড়ো সাধের। তাও ভয় তো দেখাতে পারব।

রাজ বিরক্তিসূচক আওয়াজ বের করলো মুখ দিয়ে। এই মেয়েকে তার বিশ্বাস নেই যদি সত্যি চুল ঘাড় অবধি কেটে ফেলে..? না না এতো রাজ হতে দেবে না। ওই ঘন কালো কেশ যে তার অতি প্রিয়। যদি তাকে তার প্রিয় জিনিস বলতে বলা হয় তখন সে গর্ব করে বলে ” আমার প্রিয়তমা ওই কালো কেশ। যা দেখে আমি মুগ্ধ হই বারংবার। ”

রাজ এবার উঠে রুমে এসে আমায় পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো। আমি রেগে ছাড়ানোর চেষ্টা করলাম। শেষমেশ না পেরে সাপের মত রাগে ফোঁস ফোঁস করতে লাগলাম।

– ” আর বউ রাগ করো কেনো..? আমি তো মজা করছিলাম। তুমি তোমার ইচ্ছে মতো চুল কাটতে পারো। শুধু তিন ইঞ্চির বেশি না হলেই হবে। ”

আমি আড়চোখে তার দিকে তাকিয়ে বললাম

– ” সত্যি..? ”

– ” তিন সত্যি ”

____________________________________

সেই ঘটনার এক বছর গড়িয়েছে। আমি এখন বসে আছি বাপের বাড়িতে। রাগে ফোঁস ফোঁস করছি। কারন রাজের কথা মতো আমার নাকি তিন ইঞ্চির চুল কাটার কথা ছিল আমি কেটেছি সাড়ে তিন ইঞ্চি। তাই সে এবার নিজের দায়িত্বে মায়ের বোকা খাওয়ানোর জন্য আমায় বাপের বাড়ি বসিয়ে দিয়ে গেছে। মানা যায়..? এই পুরুষ গুলো হয়ই এমন,পাল্টিবাজ। নাহ্ এইবারে আর ছোটো খাটো বদলা নিলে হবে না দেখছি।

#চলবে..?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে