কৃষ্ণচূড়া পর্ব-১০ এবং শেষ পর্ব

0
1970

গল্পের নামঃ- #কৃষ্ণচূড়া😍😍

লেখিকাঃ- #konika_islam

part:10 Last part

আদ্রের ফোনটা বেজেই চলেছে। ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে একটা প্রাইভেট নাম্বার। আদ্র ফোনটা রিসিভ করতেই অপর পাশ থেকে গম্ভীর কন্ঠে সোহেল বলে

—- রক্ত দিয়ে হলি খেলবি? বেশ তো তুই আমার কাছ থেকে একটা পেয়াদাকে মেরে দিয়েছিস আর আমি তোর রাণীকে। খেলায় একটা ভাব চলে এসেছে না?

আদ্র কিছু না বলে কল কেটে দিয়ে সোজা হসপিটালে চলে আসে। শার্টে রক্তের ছাঁপ। চোখ মুখ শুকিয়ে আছে। চুলগুলো এলোমেলো। আদ্র এসে দেখে ডক্টর বের হচ্ছে ওপরেশন রুম থেকে। আদ্র কাউকে কিছু বলতে না দিয়ে ডক্টরের কাছে এসে শান্ত কন্ঠে বলে

—- জানতে চাইবো না শিশ কেমন আছে। শুধু এতোটুকুও বলবো। যদি আমার বাবার মতো সাদা কাপড়ে মুরিয়ে ওকে বের করা হয়, বেশি না আপনাকে জেন্ত মাটিতে পুতে দিব।

ডক্টর ঢুক গিলে বলে

—- কি বলছেন মি.আদ্র। নিজেকে শান্ত রাখুন আমরা আমাদের বেস্ট টা দিতে চেষ্টা করব।

আদ্র বলে

—- চেষ্টা না দিতে হবে। আর শিশকেও ঠিক হতে হবে মাইন্ড ইট।

নীল এসে আদ্রেরর কাঁধে হাত রাখতেই আদ্র নীলকে ধরে কেঁদে ফেলে।

আদ্র আগে কখনো এতোটা ভেঙে পরেনি আজ তার এমন লাগছে কেন? যেই আদ্র এতটা হিংস্র দুনিয়ার বুকে আজ সে অসহায়। নীল বলে

—- আদ্র দেখ এভাবে ভেঙে পরলে চলবে।

__________

প্রায় ৭ ঘন্টা পর ডক্টর হাসি মুখে বেরিয়ে আসে আর বলে

—- সি ইজ আউট ওফ ডেন্ঞ্জার। কালকে সকালের মাঝেই পেসেন্টের সেন্স ফিরবে।

সবাই একটা শান্তি নিশ্বাস নিল।

___________

আদ্রের আকাশে আবার রোদের ঝিলিকে ঝলকে উঠছে “কৃষ্ণচূড়া” ।
আবার সেই আদ্রের অন্ধকারাচ্ছন্ন চোখে আলোর আশা, । শিশিরের ভালোবাসাময় এক মুঠো রোদের আলো ছড়িয়ে পড়ছে আকাশের প্রতিটি কোণায়, মেঘেরাও মেতে উঠেছে বৃষ্টির খেলায় । দীর্ঘ রজনীর ঘন অন্ধকার কাটিয়ে ফুটছে এক নতুন “কৃষ্ণচূড়া” । ভোর হয়েছে সুত্রপাত ঘটেছে নতুন এক ভালোবাসার গল্পের। ভালোবাসায় সেই কৃষ্ণচূড়া ফুলের রঙে রাঙানিত নতুন এই ভালোবাসার রংমহল।

আদ্রের আবার মত্ত হবে তার ভোরের শিশিরের সাথে ভালেবাসায়। ঘোর কুয়াশা কাটিয়ে রোদের প্রথম কিরণ এসে পরবে তার ভোরের শিশিরের মুখ পানে।

______________

ধীরে ধীরে চোখ মেলে তাকায় শিশির। গলাটা শুকিয়ে কাঠ হয়ে আছে। পেটে ব্যাথা করছে। পাশে তাকাতেই দেখে আদ্র শিশিরের হাত ধরে ঘুমিয়ে আছে। হসপিটালে সবাই থাকতে চাইলে আদ্র বারণ করে, পরে নীল সবাইকে নিয়ে বাসায় চলে যায়।। সারা রাত জেগে ছিল আদ্র কখন শিশির চোখ খুলবে তার সাথে দুষ্টামি করবে। শেষ রাতে ঘুমিয়ে পরে আদ্র। শিশির একটু মুভ করতেই আদ্র জেগে উঠে।

শিশিরকে দেখে, খুশিতে চোখ মুখ ভরে উঠে। শিশিরের কাছে এসে শিশিরের সারা মুখ চুমুতে ভরিয়ে দেয় আর মাথাটা বুকে রেখে বলে

—– জানো কতটা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। শিশির এইসব বাদ দিয়ে বলে

—- আমি বেঁচে আছি? নাকি মারা গেছি? আদ্র শিশিরের দিকে ছোট ছোট চোখ করে বলে

—- ইস্টুপিট তুমি মারা যাবা কেন? বাজে না বকলে ভালো লাগে না কমন সেন্স নেই?

শিশির রাগ করে বলে

—- আপনি আমাকে বকতেই পারেন যদি মরে যেতাম ভালো হতো। আদ্র শিশিরের কথা শুনে শিশিরকে বেডে শুয়ে দিয়ে বাইরে চলে আসে।

মেয়েটা কেন বুঝেনা সে আদ্রের জন্য কি? রাগ হচ্ছে খুব অসুস্থ শুধু নয়তো আজ চড় একটাও বাকি থাকতো না। কিছু না পেয়ে পাশে থাকা চেয়ার টায় লাথি মারে আদ্র। পায়ে অবশ্য নিজেই ব্যথা পায়। আদ্র বলে

—- ধ্যাত এই ইস্টুপিট তাড় ছিঁড়া টার সাথে থাকতে থাকতে আমারও জ্ঞান বুদ্ধি লোপ পেয়েছে। আহহ। আদ্র তোকে পেসেন্স রাখতে হবে। কিন্তু তার আগে।

বলেই কল দেয় কাউকে

_____________

আজ সপ্তাহ খানিক হবে বাসায় ফিরছে শিশির। এখন আর কেঙ্গারুর মতো সারাবাড়ি লাফাতে পারে না বলে তার আফসোস হয়। আদ্রও এই কয়দিন কোনো রকম পেসার দেয়নি পড়ারার। বা এই সমন্ধে কিছুই বলেনি। আদ্র ব্যস্ত লেপটপ নিয়ে আর শিশির বিরক্ত হয়ে তাকিয়ে আছে আদ্রের দিকে। শিশির বলে

—- না মানে আমাকে বিয়ে করছেন কেন? আদ্র লেপটপ থেকে মুখ সরিয়ে বলে

—- মানে?? শিশির চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে বলে

—- মানে খুব সোজা৷ আপনারতো দুইটা বউ ছিলই এই লেপটপ আর কোলবালিশ!! তাহলে আমাকে বিয়ে করারা মানে কি? আদ্র লেপটপ টা সাইডে রেখে শিশিরের বরাবর এসে বসে বলে

—– তা তোমাকে বিয়ে করা ঠিক হয়নি? তা অবশ্য ঠিকি বলেছ, তোমার মতো একটা ইস্টুপিট বউ জুটবে জানলে কখনোই বিয়ে করতাম না। শিশির পাশে থেকে একটা বালিশ নিয়ে আদ্রকে মেরে বলে

—- আমি ভেবে ছিলাম আল্লাহ বরকত করেছে, রহম করেছে কিন্তু না আপনি কখনোই ভালো হবেন না। সেদিন কি কিউট করে প্রপোজ করছিলন আর ঐ সময়। আচ্ছা একটা কথা ঐদিন কি হয়েছিল বা কেই বা আমাকে সুট করল?

আদ্রের চোখ মুখ মুহূর্তেই শক্ত হয়ে আসে। আদ্র বলে

—- খবরের মাধ্যমে জানা গিয়েছে সেখানে কিছু সন্ত্রাসী হামলা করেছিল আর তোমাকে এইসব নিয়ে ভাবতে হবে না। রেষ্ট করো। আমি বের হব।

_____________

শিশিরকে কিছু বলতে না দিয়ে আদ্র চলে যায় তার সিক্রেট অফিসে আদ্র ঢুকতেই সবাই স্যালুট করে। আদ্র সোজা গিয়ে বসে পরে সোহেলের সামনের চেয়ারে। আদ্রকে দেখে ক্ষিপ্ত চোখে তাকিয়ে আছে। তা দেখে আদ্র বলে

—- তোর এই চোখ আমি তুলে নিব। কি মনে করিস নিজেকে? অনেক চালাক? তোর প্লানিং সব ঠিক ছিল কিন্তু ভুল করেছিলি তুই আমাকে কল দিয়ে প্রাইভেট নাম্বার থেকে কল দিয়েছে কিন্তু যে নাম্বারে কল দিয়েছিলি ঐটা ডিপার্টমেন্টের অফিসারা ছাড়া কেউ জানতো না। আর আমি যে বলেছিলাম রক্ত দিয়ে হলি খেলব সেটাও শুধু অফিসারদেরই জানার কথা৷
ব্যাস ঐ অফিসার নামক অমানুষ টাকে খুঁজে তোকে পেয়ে যাই। তখন তুই নেশায় ব্যস্ত।

সোহেল বলে

—- আমারই ভুল ছিল সেদিন তোর বউয়ের সাথে তোকেও গুলি করে দিলে। আদ্র বাঁকা হাসি দিয়ে বলে

—- আমি জানতাম এমন কিছুই হবে তুই এ্যটাক করবি কিন্তু সেটা যে শিশিরের উপর তা ভাবতেও পারেনি কারণ এই ব্যাপারে কেউ জানতো না।।।

সোহেল বলে

—– তুই আমাকে ছেড়েদে তারপর দুইজন মিলে এই শহরে রাজ করব। আদ্র বাঁকা হাসি দিয়ে বলে

—– তাই, আগে এটা বল আমার বাবা কি দোষ করেছিল তাকে কেন মারলি? সোহেল বলে

—– তোর বাবা ছিল একজন বিজনেসম্যান তার সাথে আমার একটা ডিল ছিল।

আদ্র বলে

—– কফি আনাবো গলা শুকিয়ে গিয়েছে? নাকি বিরিয়ানি ওর্ডার করব থামলি কেন? সোহেল বলে

—- তখন সেয়ার মার্কেটে তোর বাবার নাম ডাক অনেক। শেখ কোম্পানির সাথে আমার একটা ডিল হয় তোর বাবাকে বিজনেসের কথা বলে এনে মেরে ফেলতে হবে, ফলে তোর বাবা মারা যাবে কোম্পানি তখন ডুবতে বসবে, আর শেখ তখন সেটা কিনে নিজে সেয়ার মার্কেটের রাজা হবে। কিন্তু তার আগেই আমি শেখকে মেরে ফেলি তার কারণ এই সেয়ার মার্কেটে আমার রাজ চলবে। আর কিছু বলতে যাবে তার আগেই আদ্র সোহেলকে সুট করে দেয়

—– তারপর আরকি আমার জানতে হবে না। আর এক শহরে দুই রাজা বড্ড বেমানান। এই শহরটাও আমার এই শহরের রাজাটাও আমি।

_____________

দেখতে দেখতে কেটে যায় ৮ বছর

ঐদিনের পর আদ্র সিআইডি অফিসারের পদ ত্যাগ করে বিজনেসে হাত দেয়। শিশির আজ একজন ফ্যাসশন ডিজাইনার। আর তারজন্য সে আজ একটা এওয়ার্ড ও পাবে। কিন্তু এইসব কিছুর ভিতর শিশিরের কোল আলে করে এসেছে সাদীফ। সাদীফের ২ বছর বয়স। এতটুকু বয়সেই বাবার মতো রাগ আর জীদ। নীলের সাথে বিয়ে হয়েছে অদ্রিজার কারণ আদ্রের মা চায়নি তাদের মেয়ে তাদের থেকে দূরে থাক।

ইন দ্যা প্রোগ্রাম~

শিশিরের নাম এনাউন্সমেন্ট করা হয়েছে।
শিশির আদ্রের হাত ধরে স্টেজে গেলো।স্টেজে গিয়েও আদ্রের হাত ছাড়েনি। বাসার সবাই উপস্থিত, অদ্রিজার কুলে বসে আছে সাদীফ।এওয়ার্ড নেওয়ার আগে বললো,
—-আমি কিছু বলতে চাই তারপর এওয়ার্ড নেবো।

—-জ্বি শিওর।

শিশির মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে বললো,
—-আমার লাইফের শ্রেষ্ঠ উপহার আমার হাসব্যান্ড মি.আদ্র। এর চেয়ে বড় উপহার কেউ আমাকে কোনোদিন দিতে পারবেনা।নেভার।হি ইস দ্যা রিয়েল হিরো অফ মাই লাইফ।মাই লাইফলাইন।আমি কোনোদিন ভাবিনি আমি একজন ডিজাইনার হবো।স্কুলে পড়াকালীন সময় আমি ছিলাম নিতান্তই একটা বেপরোয়া স্টুডেন্ট। পড়া লেখা আমার কাছে বরাবরই ছিল ভ্যাজাল, বাসায় থেকে বিয়ের জন্য বলে আমিও সব মেনে বাধ্য মেয়ের মতো রাজি হয়ে যাই।।ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারেই পড়াকালীন আমাদের বিয়ে হয়ে যায়।কিন্তু আমাদের বিবাহিত জীবন আমার পড়াশোনার মধ্যে আসতে দেয়নি।সংসার দায়িত্ব কর্তব্য সবকিছু থেকে আমাকে দূরে রেখেছে।কোনো কিছুর প্রভাব আমার উপর পড়তে দেয়নি।তার চেষ্টায় আজ আমি এখানে।এই স্টেজে এই পজিশনে।কয়জন হাসব্যান্ড চায় তার স্ত্রী শিক্ষিত হোক।সমাজে মাথা উচু করে বাচুক।চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলুক।নিজের অধিকার আদায় করুক।নিজের ভিতরের ভয়-ভীতি দূর করে নিজের মনের কথা বলুক,নিজের স্বপ্নের কথা বলুক।নিজের পরিচিতি গড়ে তুলুক।নিজের একটা আলাদা দুনিয়া গড়ুক।নিজের দুনিয়া প্রসারিত করুক।একজন স্বার্থক নারী হিসেবে পরিচিতি পাক।আমার হাসব্যান্ড করেছে।এন্ড নাও আইম হেয়ার।( আদ্র এক চোখে তাকিয়ে আছে )আমি আমার পরিবার থেকেও অনেক সাপোর্ট পেয়েছি।আমার বাবাই।সবাইকে আমার অন্তর থেকে ধন্যবাদ।
আমি চাই এই এওয়ার্ড আমার হাসব্যান্ডকে দেওয়া হক কারণ এটার মূলে তো উনি।

আদ্র কানে কানে বলে

—- কি করছ শিশ। শিশির সেটা পাত্তা না দিয়ে বলে

—- এটা আপানর জন্য। এওয়ার্ড টা আদ্রের দিকে দিয়ে। ধন্যবাদ আমাকে এতো সুন্দর একটা পরিচয় দেওয়ার জন্য, ধন্যবাদ আমাকে রোজ সন্ধ্যায় বকে পড়তে বসানোর জন্য। ধন্যবাদ আমার সাথে এতোটা পথ চলার জন্য। ধন্যবাদ আমাকে আমি বানানোর জন্য। ধন্যবাদ আমাকে আমার সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য। যেটা আমি নিজের মাঝে দেখতে পায়নি সেটা আমাকে দেখানার জন্য।

আদ্র এওয়ার্ড টা নিয়ে জড়িয়ে ধরে শিশিরকে। আর সবাই কড়া তালিতে ভরিয়ে দেয়। আদ্রের চোখে আজ খুশির পানি। তার কৃষ্ণবতি আজ বড় হয়েগিয়েছে আজ আর সেই ছোট বাচ্চাদের মতো করে কাঁদে না বরংচ তাকে সামলায়।

শিশির কি আদ্রের লোকানো সত্যি টা জানে না? সে জানে কিন্তু তার সেই হিংস্র আদ্রকে নিজের ভালেবাসার খাঁচায় খুব যত্নে বন্দি করে রেখেছে যেখান থেকে সেই হিংস্র আদ্র কখনোই বেড়িয়ে আসতে পারবে না।

আদ্র শিশিরের কানে কানে বলে

——কৃষ্ণচূড়া ফুলের মতো

ফুটবো তোমার গগনে

সব কিছু পরেয়ি চাইবো

শুধুই তোমাকে

ভালোবাসার রঙমহল

সাজাবো কৃষ্ণচূড়ার রঙে

আমি শুধু চাইবো এই তোমাকে।

#কৃষ্ণচূড়া

কলমেঃ #konika_islam

________°_সমাপ্ত _°____________

গল্পটা আর বেশি বড় করার ইচ্ছে ছিল না তাই এখানেই ইতি টানলাম। ভালো থেকো সবাই। আল্লাহ হাফেজ। আবার দেখা হবে নতুন কোনো গল্পে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে