গল্পের নামঃ- #কৃষ্ণচূড়া😍😍
লেখিকাঃ- #konika_islam
part:07
সন্ধ্যা হয়ে গেছে,,,, শিশির এখনো সেই ছাঁদের দোলনায় বসে আছে। ঠান্ডা বাতাসে চুলগুলো হাওয়ার সাথে তালমিলিয়ে উড়ছে। মনটা আজ ভিষণ খারাপ। শিশিরকে এখনো রুমে আসতে না দেখে আদ্র নিচে নামে দেখে শিশির নেই। অদ্রিজার কে জিজ্ঞেস করলে অদ্রিজা বলে
—- শিশির এখনো হয়তো ছাঁদেই। আর তুই যা বলেছিস ঠিক বলেছিস কিন্তু এইভাবে না বললেও পারতি। আদ্র কিছু না বলে পা বাড়ায় ছাঁদের দিকে কিন্তু উপরে উঠতেই দেখে শিশির রুমে ঢুকছে।
আদ্র রুমে গিয়ে দেখে শিশির চুপচাপ নিজের মতো পড়তে বসে পড়ে। আদ্র খোঁচা মেরে বলে
—- বাহ আজকে সূর্য কোনদিকে উঠেছে??
শিশির কিছু বলতে চেও বলে না নিজের মতো পড়ায় মনযোগ দেয়। প্রতিদিন রাতের মতো আদ্র দুধের গ্লাস এগিয়ে দিলে সেটা একবারে ফিনিশ করে ফেলে।
রাত ২ টা বাজতেই আদ্রের বলার আগে বই রেখে ঘুমাতে চলে যায়। কিন্তু মাঝে কোলবালিশটা আজ শিশিরই দেয়। আদ্র বুঝতে পারছে আজ হয়তো একটু না বেশি রুড হয়ে গেছে।
মেয়েটা তার হালকা ঝাড়ি সহ্য করতে পারে না। যখন সে তার বন্য হিংস্র রাগ-খুবের দিকটা দেখবে তখন কি করবে৷ আদ্র লেপটপ টা সাইডে রেখে বিছানায় যায়। আর বলে
—– শিশ তুমি এখনো ছোট ( তো একজনের প্রশ্ন শিশ কেমন নাম? ভাই এটা আদ্র ডাকে শিশিরকে আশা করি উত্তর পেয়ে গেছ)।
শিশির উঠে বসে আর হালকা জোর গলায় বলে
—- হ্যা জানি আমি ছোট,, আমার সংসার করার বয়স হয়নি। আর আপনি ঠিকই বলেছেন এত সুযোগ কে পায়? তাই সুযোগটা কাজে লাগাতে চাচ্ছি। হয়েছে।
বলেই শুয়ে পড়ে। আদ্রতো অবাক এর আগেও শিশির তার সাথে কথা বলেছে বেশ রেগেই বলেছে কিন্তু আজ তার চোখ মুখে রাগ ছিলনা ছিল একরাশ অভিমান। আদ্রও ভাবে তার পিচ্চি বউটাকে একটু রাগালে মন্দ হয়না। তাই লেপটপ নিয়ে এস ওন করে ফুল সাউন্ডে গান প্লে করে দেয়। শিশির বিরক্ত হয়ে উঠে সোজা বারান্দার চলে যায় আর বারান্দার দরজাটা ঠাসস করে খুব জুড়ে লাগায়।
আদ্রের পেট ফেটে হাসি আসছে কিন্তু তাও নিজেকে কন্ট্রোল করে। অনেক সময় হয়ে যায় কিন্তু শিশির রুমে আসে না। আদ্র রুম থেকে বারান্দায় গিয়ে দেখে শিশির ঘুমিয়ে গেছে দোলনায়। তা দেখে মুচকি হাসি দিয়ে শিশিরকে কোলে তুলে নেয়।
________
আদ্র শিশিরকে বেডে শুয়ে দেয়। শিশিরের সামনে কাটা চুলগুলো মুখটা ঢেকে রেখেছে। আদ্র তা দেখে সরিয়ে কানের পিঠে গুজে দেয় আর কপালে একটা কিস দিয়ে বলে
—- সরি শিশ এখনো আমি চাইলেও তোমাকে আমার সাথে জড়াতে পারবো না,,কিছুটা সময় লাগবে। নতুন করে আমার জীবনে বাঁচার আলো নিয়ে এসেছ তুমি। তোমাকে আমি হারাতে পারবে না। ভালোবাসি আমার এই শিশিরকে। আমার ভোরের শিশির। ।
তখনই আদ্রের ফোনে কেউ কল দেয়। আর আদ্র বেড়িয়ে যায়।
______________
অন্ধকারে ঘেরা ব্যাস্ত শহরে আজ বৃষ্টির প্রতিটা ফোটার শব্দ স্পষ্ট ,,,,,,,, অন্ধকার রুমে চেয়ারে গাত পা বাঁধা অবস্থা বসে আছে রিফাত৷
আন্ডার এওয়াল্ডের ভয়ংকর কিংবদন্তি এক মাফিয়া। যার মনে না আছে কোনো মায়া দয়া না আছে কোনো রকম আবেগ। এমন কোনো খারাপ কাজ নেই যে সে করেনি।
। তার সামনেই কালো রেনকোট হাতে কালো গ্লাভস পড়ে বসে আছে একজন।। রেনকোট পরা ব্যক্তিটা হাতের ইশারা করতেই একটা লোক এসে পানি ছুড়ে মারে রিফাতের মুখে। সাথে সাথে রুমের লাইট ওন হয় রিফাতের হুস আসতেই নিজেকে বাঁধা অবস্থায় দেখে চমকে যায়। কারণ সে তার নিজের এক ক্লাইন্টকে এল.এজ.ডি দিতে গিয়েছিল কিন্তু হঠাৎ করেই কেউ তার ঘাড়ে কিছু পুশ করে আর রিফাতের কিছু মনে নেই। রিফাত বলে
—– আগুন নিয়ে খেলতে আসিস না। পুরে যাবি।
কোট পড়া ব্যক্তিটা রিফাতের পায়ে গুলি মারে ব্যাথায় চিৎকার করে উঠে ব্যক্তিটা বলে
—- আগুন নিয়ে না,, রক্ত দিয়ে হলি উৎসব পালন করব। সোহেল রহমান তোর বস কোথায়?
রিফাত তাচ্ছিল্যর হাসি দিয়ে বলে
—- তার খবর তুই কখনো জানবি না। আমাকে ছেড়ে দে। কোটপরা ব্যক্তিটা বলে
—- তোকে জানে মেরে ছেড়ে দিব। বলেই আরেকটা গুলি করতে আসলে। রিফাত বলে
—– তোর বাবার মতো তুই মরবি আদ্র। আদ্র কিছু না ভেবেই রিফাতের মুখে গানটা ঢুকিয়ে সুট করে দেয়। আর লাথি দিয়ে চেয়ারটা ফেলে দিয়ে বলে
—– আমি আমার বাবার মতো এতো ভালো না।আমি যে কতটা হিংস্র তোদের ধারনা নেই। অফিসার।
আর সাথে সাথে একটা সিআইডি অফিসার এগিয়ে আসে। আদ্রকে স্যালুট দিয়ে বলে
—– জ্বি স্যার। আদ্র বলে
—- লাশটা যেন সেই জায়গায় পাওয়া যায় যেখানে আমাদের অফিসারের লাশ পাওয়া গিয়েছে।
বলেই আদ্র বেড়িয়ে যায়। আদ্র একজন সিক্রেট সিআইডি অফিসার। নিজের বাবার এক্সিডেন্ট টা যে খুন ছিল সেটা বুঝতে আদ্রের বেশি টাইম লাগেনি। কারণ তার কিছু সময় আগেই তার সাথে আদ্রের কথা হয়েছিল। আদ্রেরর বাবার যেই ট্রাকের সাথে লেগে এক্সিডেন্ট হয়েছ সেটা সামনে থেকে না বরং পিছন থেকে আসে। আইন আদ্র নিজ হাতে নিতে চায়নি তাই নিজেই আইনের একজন অন্যতম অফিসার হয়ে যায়।
কালকে রাতে রিফাতের কিছু লোক আদ্রের বাসায় ঢুকে আর সেটা আদ্র টের পেয়ে যায় আর তখনই সেই সময় শিশির চলে আসে আর বাধ্য হয়ে আদ্র ওদের ছেড়ে দেয়। শিশির এতটাই ভয় পেয়ে গিয়েছিল সে সেখানেই সেন্স হারায়। যদি শিশির না আসতো তাহলে ওদের মৃত্যু নিশ্চিত ছিল।
_________
সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে শিশির হাই তুলছে। তখনই আদ্র ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে আসে আর বলে
—— মুখে মাছি ঢুকবে। আর শিশির সাথে সাথে ঠিকঠাক হয়ে বসে। আদ্রকে বলে
—- আমি আমাদের বাসায় যাবো। আদ্র চুলগুলো মুছতে মুছতে বলে
—- কোনো দরকার নেই। শিশির বলে
—- আমি যাবো মানে যাবো। আপনার সাথে আমি থাকবো না আপনার সাথে থাকা সম্ভব না । আদ্র তোয়ালেটা ফ্লোরে ছুড়ে মারে আর শিশিরের কাছে এসে দুই গাল চেপে ধরে বলে
—- না মানে না৷। আর এখন চাইলেও তুমি কিছু বলতে পারবেনা তোমার উপর আমার সব অধিকার আছে। আমি তোমার হাসবেন্ড তুমি চাইলেও আমার সাথে থাকতে হবে না চাইলেও। শিশির আদ্রের হাত ছাড়িয়ে বলে
—– শুধু দায়িত্বের চাপে পরে আপনার এইসব করতে হবে না। আর কিছু বলতে যাবে তখনই আদ্র শিশিরের গালে একটা কিস দিয়ে বলে
—- দায়িত্বের চাপে না নিজের বউয়ের ভালোর জন্য সব করতে রাজি। এখন যাওতো সোনা গিয়ে রেডি হয়ে পড়তে বসো কলেজে যেতে হবে তো?
শিশির অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে শিশিরের দিকে। শিশিরকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে আদ্র বলে
—- বেশি রোমান্টিক হয়েগেছি তাই? তুমিতো বলো আমি নিরামিষ বর!! দাড়াও। একটু গম্ভীর ভাব নিয়ে আদ্র আবার বলে
—– যাও ১০ মিনিট টাইম। শিশির পাশে থাকা বালিশটা নিয়ে আদ্রেকে দুই/তিনটা মেরে বকতে বকতে ওয়াশরুম যাচ্ছে
—– হারামি,, ফাজিল, আদ্র নামক৷ অভদ্র বাদার,, আমি আজই চলে যাবো থাকবো না। একটা নতুন বর খুঁজে বিয়ে করে নিব। আর আমার বিয়েতে আপনাকে থালাবাসন ধোয়ার দায়িত্ব দিব।।
আদ্র পিছন থেকে বলে
—- শিশ তুমি মাথা মোটা জানতাম এমন মাথামোটা আগে জানতাম না। তোমার একবার বিয়ে হয়ে গেছে। আবার কেন বিয়ে করবে?
শিশির ওয়াশরুমের দরজা খুলে মাথাটা হালকা বের করে বলে
—- ঐযে কথায় আছে না ফোন আর বিয়ে একটু দেরি করে করলে ভালোটা পাওয়া যায়। তাই ভালো একটা ভার্সনের জন্য আবার বিয়ে করব।
আদ্র বলে
—– মাসে মাসে আপডেট দিলেই হয়। শিশির বলে
—- অসভ্য একটা।
চলবে