কৃষ্ণচূড়া পর্ব-০৩

0
1670

গল্পের নামঃ- #কৃষ্ণচূড়া😍😍

লেখিকাঃ- #konika_islam

part:03

অদ্রিজার সাথে জমিয়ে আড্ডা দিয়ে সন্ধ্যায় রুমে ঢুকতে যাবো তখনই আদ্রের সাথে ধাক্কা লাগে,,, আদ্র নিচে পরে যায় আর আমি তার উপরে। ইশশশশ কি রোম্যান্টিক ঘটনা,, কিন্তু ঐ যে বর টা আমার নিরামিষ । আমাকে বলে

—– আহহহহহ,,,, উঠো এভাবে কেউ কারো উপর পরে। আমি তাড়াতাড়ি করে উঠে দাড়াই। সে উঠেতেই আমি বলি

—- আপনা কি ব্যাথা পেয়েছেন। আদ্র আমার দিকে তাকিয়ে বলে

—- না তেমন কিছু না একটা ছোট খাটো হাতির বাচ্চা পড়েছে তাতে কি ব্যাথা লাগে। কথাটা শুনেই মেজাজটা বিগরে যায়। তাকে আমি একটু কড়া গলায় বলি

—- আপনি কিন্তু আমাকে ইনডিরেক্ট অপমান করছেন। আমি ভেবেছিলাম কই সরি বলবে তা না সে বলে

—- ইনডিরেক্ট কোথায় করলাম? যা বলার তো সরাসরি বললাম। যাও পড়তে বসো। আমি কিছু বললাম না। তাই চুপচাপ গিয়ে বসে পড়লাম । সে হঠাৎ করেই বলে

—- বই উল্টো ধরেছ। এর জন্যই তো বলি সব এমন ভয়ংকর লাগছে কেন!! এমন লেখা তো আগে দেখেনি। তার দিকে তাকিয়ে বলে

—- আমি জানতাম আপনাকে দেখলাম আর কি আপনি কতটা খেয়াল রাখেন। আদ্র ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলে

—- ইস্টুপিট একটা।

বুঝিনা এই ইস্টুপিট ইস্টুপিট কেন বলে,,,সে কি একাই ইংরেজি পারে!!আমিও পারি। তাই ভাব নিয়ে বললাম

—- আপনার থেকে আমি ইংরেজি ভালো পারি,,, শুধু ইস্টুপিট ছাড়া তো আর কিছু বলতে পারেন না। আদ্র বলে

—– অহহহ আচ্ছা তাই বুঝি!?

আমি কিছু বললাম না। ব্যাটা হারামি এখন না আবার সেই ইংরেজদের মতো আমাকে শাসন করা শুরু করে। তখনই অদ্রিজা এসে কফি দিয়ে যায়। আদ্র কফিটা হাতে নিয়ে বলে

—- তো তোমার ব্রেক জাস্ট কফিটা শেষ করা অব্দি,, আর এতটুকু সময় তোমাকে আমার সাথে ইংরেজিতে কথা বলতে হবে। আমিও শিখতে চাই।

এইরে,, এখন কি হবে। কিন্তু আমিও দমে যাওয়ার পাত্রী না তাই জিজ্ঞেস করলাম

—- আচ্ছা,,, How was your day today? উনি কফির মগে চুমুক দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলে

—- I am feeling Tired today…আমিও কফিতে চুমুক দিয়ে বলি

—- Ok rest in peace…. মুহূর্তে আমার কথা শুনে আদ্র কাশতে লাগে,, কাশুক আমার কি ইচ্ছে করেই বলেছি। আরো বলবি ইংরেজি বল। তোকে এই ইংরেজি শুনিয়েই মারবো। আদ্রের কাশি থামে। সে বলে

—- হয়েছে আর বলতে হবে না কফি শেষ করে পড়ায় মনযোগ দাও। আমার কি আমিও পড়তে লাগলাম। রাত ১০ টার দিকে উনি বলে

—- তুমি তো কল দিতে চেয়েছিলে,,,বাসায়,, এই নাও ফোন আর আমি দুধ নিয়ে আসছি। তাড়াতাড়ি।

আমিও খুশি মনে ফোনটা হতে নিয়ে কল দিলাম আম্মুকে,, কিন্তু একটা জিনিস খেয়াল করলাম আদ্রের ফোনে এক নাম্বার থেকে অনেক কল + তাও সেটা প্রাইভেট নাম্বার। অন্য কোনো মেয়ের সাথে চক্কর চলছে নাতো?? আর না তা হবে কেন,, যেই নিরামিষ বর। আম্মুর সাথে কথা বলে ফোনটা রেখে দিলাম। কি মনে করে ফোনটা তুলে গ্যালারি ওপেন করতে চেষ্টা করছি কিন্তু সেটা লক করা। কি আছে এমন এই ফোনে। হঠাৎ করেই আদ্র এসে আমার হাত থেকে ফোনটা ছু মেরে নিয়ে নেয় আর বলে

—- মানুষের প্রাইভেসি বলতে কিছু আছে,,আর এই ফোনটা আমার কাজে ব্যবহার করা হয়,, তোমাকে কথা বলতে দিয়েছি কথা বলে রেখে দেওয়াটা তোমার কাজ ছিল। তুমি কেন ফোন ঘাটাঘাটি করছ?

মুহুর্তে মনটা ছোট হয়ে গেলো কি এমন করলাম আমি। মানি তার প্রাইভিসি আছে কিন্তু তাই বলে এইভাবে বলবে। সে আমার দিকে তাকায় আর গ্লাসটা হাতে ধরিয়ে ধমক দিয়ে বলে

—- এট শেষ করে,,পড়তে বসো। আমিও কথা বাড়ালাম না চুপচাপ খেয়ে নিলাম। তারপর পড়তে বসলাম। কিন্তু পড়ায় মন বসছে না তাই দাঁত দিয়ে নখ কামড়াতে লাগি। হঠাৎই করেই সে আমার থেকে বইটা নিয়ে বলে

—- এমন অমনোযোগী হলে পড়া লাগবে না,,, যাও গিয়ে শুয়ে পরো।

মানে পেয়েছে টাকি আমাকে??? আমার কি কোনো,মূল্য নেই,, এতো ধমক দেয়। আমি ও রাগ দেখিয়ে গিয়ে শুয়ে পরলাম লাইটাও ওফ করে দিলাম। সে বলে

—- এমন হলে পড়ালেখা হবে না।

তার এই উক্তি শুনার আমার কোনো ইচ্ছে নেই তাই পাশে বালিশটা মাথার সাথে চেপে ধরলাম। অনেক কান্না পাচ্ছে। আদ্রে পশে এসে কোলবালিশটা রেখে শুয়ে পরে। ঘুম আসছে না তাই উঠে চলে এলাম বারান্দায়। আদ্রের বারান্দাটা বেশ সুন্দর সামনে তাকালেই একটা সুন্দর ভিউ,,,, সাথে একটা দোলনা অদ্রিজা বলেছে এটা নাকি সে লাগিয়েছিল। আমিও গিয়ে বসে পরি আর রাতের আকাশ দেখতে লাগি।

স্কুল লাইফে বেস্ট ফ্রেন্ডদের দেখতাম বয়ফ্রেন্ড নিয়ে ঘুড়তে যেত এটা করতো ঐটা করতো। আর আমি ভাবতাম বিয়ের পর হাসবেন্ডেকে বয়ফ্রেন্ড বানাবো। কিন্তু আমিতো হাসবেন্ড না একটা হিটলার হাসবেন্ড আর টিচার পেয়েছি। এইসব ভাবতে ভাবতে চুপচাপ কখন যে ঘুমিয়ে পরি মনে নেই।

_____________

সকাল সকাল ঘুম ভেঙে আদ্রের ডাকে,, চোখ মেলে তাকিয়ে দেখি সে দাড়ানো আর আমি বিছানায়। আমার তো মনে আছে আমি কালকে দোলনায় ছিলাম। পরে কি হলো!? আমি তার দিকে তাকিয়ে আছি। সে কিছু ভ্রুক্ষেপ না করে বলে

—- যাও ফ্রেশ হয়ে এসে পড়তে বসো।

আল্লাহ,,,, তুমি এতো মানুষকে হেদায়েত দান করো এই আদ্র নামক অভদ্র বাদর টাকে কেন করোনা?? তারদিকে তাকিয়ে তাকিয়ে ওয়াশরুমের দিকে যাচ্ছি আর হঠাৎ করে দেওয়ালের সাথে বাড়ি লাগে। আল্লাহ,,,, গো । আদ্র আমার দিকে তাকিয়ে বলে

—- কি হলো?? আমি বললাম

—- না কিছু না। আদ্র ঠোঁট চেপে বলে

— হুমমম দেখাই যাচ্ছে ,,,, আচ্ছা তুমি মিষ্টি আলু খেয়েছ?? আমার সাথে মজা করছে ভাবা যায়। কিছু বললাম না। তার দিকে তাকিয়ে তাকাতে গিয়ে আবার বাড়ি খেলাম। আম্মুগো। আদ্র অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে নেয়,,, ওয়াশরুম ঢুকতেই পা পিছলি পরে যাই।

—— আহহহহহহহ আম্মু। আদ্র এবার আমার দিকে তাকিয়ে না পেরে হেঁসেই দেয়। আমি উঠে ঠাস করে মুখের উপর দরজাটা লাগিয়ে দেই। আর অন্য দিকে আদ্রের হাসির শব্দ আহহহহহ বিরক্তি কর। কিন্তু হাসলে হিটলারটাকে কিউট লাগে। কিন্তু এমন লজ্জা আমি বৃষ্টির দিনে পড়েও পায়নি যতটা তার সামনে পেয়েছি। শাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে আসি সামনে তাকাতেই আদ্র টিভিতে নিউজ দেখছে। আমাকে দেখেই মিটমিট করে হাসছে। অসহ্য একটা মনতো চাচ্ছে চাইনিজ কুড়াল দিয়ে কুটি কুটি করে রোদে শুকিয়ে শুটকি দেই তারপর ভর্তা করে সবাইকে ট্রিট দেই। চুলটা ড্রাই করে পড়তে বসবো। তখনই আদ্র বলে

—- শিশ (শিশিরের সংক্ষিপ্ত) দেখ প্রতিদিন তোমার এমন হেলামি চলবে না। আজ ফ্রাইডে তো খেয়ে দেয়ে পড়তে বসো। যেন দুপুরে খাওয়ার আগে আর উঠতে না হয়। নিচে যাও সবার খাবার হয়ে গেছে শুধু তুমিই বাকি।

🙂কি আর করার,, চুপচাপ অত্যাচার গুলো হজম করতে হচ্ছে।কেমন হাসবেন্ড নতুন বউ আমি আমার সাথে যাবে তা না তার পুরোনো বউ লেপটপ নিয়ে বস আছে। তোমাদের বলি আমার হাসবেন্ড মানে আদ্রের তিনটা বউ,,, মানে আমার দুইটা শতিন ১ম এই লেপটপ যাকে ছাড়া তার চলেই না। ২য় এই কোলবালিশ।

ডাইনিং এ পৌঁছে চেয়ার টেনে বসলাম। আদ্রে মা মানে আমার শাশুড়ী মা আমাকে খেতে দিয়ে রান্না ঘরে চলে গেলো।

—- ধ্যাত এইটুকুতে আমার চলে?? মাত্র তিনটা টোস্ট আর জুস,, নতুন বউ আমি!! কারো কি সেই খেয়াল আছে?? আমাকে ভুল প্রমান করে দিয়ে নীলের মা মানে আমার চাঁচি শাশুড়ী এক বাটি নুডলস দিয়ে বলে

—- মারে একটু কষ্ট করে খেয়েনে। রান্না ঘরে অনেক কাজ,,। ছোট আসতে পারেনি,,,। কিছু লাগলে বলিস।

প্রতি উত্তরে মুচকি হাসি দিলাম। কাকীমা চলে যেতেই যেই না এক চামচ নুডলস মুখে দিব,,, ওমনি আদ্র এসে হাত থেকে বাটিটা নিয়ে বসে পরে পাশের চেয়ারে আর আমাকে দেখিয়ে দেখিয়ে খেতে লাগে। এই নুডলস আমার প্রিয় খাবার ,, আমাকে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলে

—- অন্য দিকে তাকাও যেই নজর দিচ্ছ নিশ্চিত আমার পেট খারাপ হবে। আমি এবার কাঁদো কাঁদো ভাব নিয়ে বলি

—- এমন করছেন কেন? ঐটা তো আমার। আদ্র খেতে খেতে বলে

—- এটা কাল রাতের ঘারত্যড়ামির শাস্তি। আহহ নুডলস টা যা হয়েছে না। আমাকা তাকিয়ে থাকতে দেখে এক ভ্রু উচু করে ইশারাতে জিজ্ঞেস করে খাবো কি না। আমি মাথা দোলালাম। উনি বলেন

—- দিতে পারি এক শর্তে,,, কালকে রাতের পড়া আজকে কম্পিলিট করে দিবে + আজকের সব পড়া, রাতেও পড়তে বসতে হবে। আমি খাবোই না নুডলস ,,, তুমিই খাও তোমার নুডলস।
চেয়ার ছেড়ে উঠে সোজা রুমে চলে আসি। বেটা বজ্জাত।

অপর দিকে আদ্র হাসছে,, আদ্রের মা এসে আদ্রকে দেখে বলে

—- কিরে তুই এখানে?? শিশির কোথায়? আর নুডলস তুই খাচ্ছিস মেয়েটাকে না করে দিলাম। আদ্র বলে

—- কালকে রাতের শাস্তি এটা কালকে রাতে কি করেছে জানো না৷ আদ্রের মা বলে

—- কি করেছে?? আদ্র নুডলস টা নিয়ে দাড়িয়ে যায় আর বলে

—- মা হয়ে ছেলের বেড রুমের কাহিনি শুনতে চাচ্ছো?? আদ্র বরাবরই তার মার সাথে ফ্রি। আদ্রের মা আদ্রের কান ধরে বলে

—- কে নালিশ করলো,, দিবো কানের নিচে। তখনই নিচে শিশির নামছিল,,,,পানির জন্য , আদ্রের মাকে আদ্রের কান ধরতে দেখে বলে

—- আম্মু আরো জুড়ে ধরো,,,। আদ্র নিচে থেকে বলে

—- দাঁড়াও আজ তোমাকে কেমিস্ট্রি পড়াবো। শিশির একটা ঢুক গিলে বলে

—- শাশুড়ী মা তোমার এত লক্ষ্মী ছেলেটাকে তুমি তার বউয়ের সামনে মারছো এটাকি শুভা পায় বলো,,, ছেড়ে দাও এত বড় ছেলে,, দুদিন পর নিজের ছেলের বাবা হবে। শিশিরের কথা শুনে আদ্রের মা মুচকি হাসি দিয়ে চলে যায়। আদ্র শিশিরের দিকে তাকাতেই শিশির দৌড়

চলবে

ভুলত্রুটি ক্ষমার চোখে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে