কৃষ্ণচূড়া পর্ব-০১

0
2608

গল্পের নামঃ- #কৃষ্ণচূড়া😍😍
লেখিকাঃ- #konika_islam
part:01

ঐটাকি ডিভোর্স পেপার ছিল? না মানে,,,আপনি কি আমাকে। আদ্র ঠাস করে কাবার্ডটা লাগিয়ে বলে

—- হ্যা সেটাই তোমাকে ডিভোর্স দিয়ে নতুন আরেকটা বউ বিয়ে করে নিয়ে আসব। তারপর সুখে সংসার করব,, । ইস্টুপিট। বলেই রুম থেকে চলে যায়।

এই পর্যন্ত কান্না করতে করতে ২ বক্স টিসু শেষ করেছে শিশির তিন নাম্বারটা হাতে নিয়ে বসে আছে আর চোখের পানি মুছছে। তার শাশুড়ী মা,, চাঁচি শাশুড়ী, ননদ, দেবর সবাই তাকে থামাতে বৃথা চেষ্টা করছে। আদ্রের মা বলে

—- কি হয়েছে মা এভাবে কাদঁছ কেন? শিশির চোখ মুছে নাক টেনে টেনে বলে

—- উনি বলেছেন সে আমাকে ডিভোর্স দিয়ে দিবে। আমাকে ডিভোর্স পেপারে সাইনও করিয়াছে। তখনই বই হাতে রুমে প্রবেশ করে আদ্র,, সবাইকে দেখে অবাক হয় তার থেকে বেশি অবাক হয় শিশিরকে এইভাবে কাঁদতে দেখে। আদ্র ওর চাচতো ভাই নীলকে বলে

—- কি হয়েছে? আদ্রের চাচি বলে

—- তুই শিশিরকে কি বলেছিস তুই নাকি ওকে ডিভোর্স দিবি?,,,কোথায় নাকি সই করিয়েছিস??এইসবের মানে কি আদ্র??,

আদ্র কিছু সময় শিশিরের দিকে তাকিয়ে থেকে বইগুলো রাখে টেবিলে আর হাতের ঘড়ি খুলতে খুলতে বলে

—- এই জন্যই বলেছিলাম,, আমি কোনো পিচ্চি মেয়েকে বিয়ে করবো না,,,। শিশির এইটা শুনে আরো ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে দেয়। আদ্রের মা শিশিরকে জড়িয়ে ধরে আদ্রকে ধমক দিয়ে বলে

—- আহহহ আদ্র হচ্ছে টা কি? আদ্র বিরক্ত হয়ে বলে

—- সেটাইতো হয়েছে টাকি? এভাবে কান্না করারা কি আছে। শিশির এবার হালকা রেগে বলে

—- কান্না করার কি আছে মানে? আপনি আমাকে ডিভোর্স দিবেন। আদ্র বলে

—– তোমরা মেয়েরা এতো মাথা মোটা হও কেন? আর আমাকে কম বেশি সবাই চিনে ,,, তাই আমি চাইনা শিশির নিজের পড়ালেখার বারোটা বাজাক আর আমার সম্মানেরও,, । আর ঐটা ভর্তি ফ্রম ছিল,, এখন আশা করি উত্তর পেয়েছ সবাই? আমি এখন ফ্রেশ হয়ে এসে ঘুমাবো। কারো যদি আরো কান্না করার ইচ্ছে হয় তাহলে ড্রয়িং রুমে গিয়ে করতে পারে।
__________________

এই কথা বলেই চলে যায় ওয়াশরুমে। এর মানে ঐটা ভর্তি ফ্রম ছিল? এখনতো শিশিরের আরো কান্না আসছে,,, এই পড়ালেখার জ্বালায় থেকে বাঁচতে এই বিয়ে করেছিল আর এখন এই প্যারাই তাকে সহ্য করতে হবে। তাহলে লাভটা হলো কোথায়? এইতো কিছু ঘন্টা খানিক আগের কথা

★★★
হঠাৎ করেই আমার আদ্র মানে আমার স্বামী,হাসবেন্ড পাতীদেব রুমে আসে,, বিয়েটা হয়েছে বেশিদিন না সপ্তাহ খানিক হবে। তখন আমি শাওয়ার নিয়ে এসে চুল মুছ ছিলাম। হাতে ছিল তার একটা কাগজ,,, আর একটা কলম। আমাকে এসেই বলে

—- এখানে একটা সাইন কর। আমি তোয়ালেটা সাইডে রেখে বলি

—- এটা কি? আদ্র শুধু বলে

—- চুপচাপ যা বলি কর,,,, সাইন কর।

আমিও হাত থেকে কলমটা নিয়ে সাইনটা করে দেই। আদ্র কাগজটা দেখে রুম থেকে চলে যায় । কি হচ্ছে?!! মানুষটা বরই অদ্ভুত কখন কি বলে বা করে সব মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। বিয়ের আজ একসপ্তাহ পার হয়ে গেছে তার নামটা ছাড়া আর কিছু জানি না। বিয়ের পরেরদিন থেকে লেব আর কাজ নিয়ে ব্যাস্ত। কথা হয়নি বললেই চলে। বিয়েটা হয়েছে আমাদের পারিবারিক হিসাবে,,,,,,, আদ্রের মা-আর তার চাঁচি গিয়েছিল। আমাকে পছন্দ হওয়াতে তারপর সপিরবার গিয়ে উঠিয়ে নিয়ে আসে। আদ্র একজন ইন্জিনিয়ার,, তার সাথে আমার বয়সের তফাতটাও ভালোই তার ২৭ আর আমার ১৭ প্রায় ১০ বছরের বড় আমার উনি। কিন্তু তখন ভেবে ছিলাম সে সাইনটা আমায় কিসে করালো ? টিভি সিরিয়ালে অনেক দেখেছি,,, বাড়ির সবার চাপে পরে ছেলে বিয়ে করে কিন্তু পরে ডিভোর্স দিয়ে দেয়। কি হচ্ছে এইসব? আমাকে ডিভোর্স দিবেনাতে আম্মু,, । তখনই সে আবার আসে রুমে আমি এবার তাকে কৌতুহল নিয়ে জিজ্ঞেস করি

—- ঐটাকি ডিভোর্স পেপার ছিল? না মানে। আদ্র ঠাস করে আলমারিটা লাগিয়ে বলে

—- হ্যা সেটাই তোমাকে ডিভোর্স দিয়ে নতুন আরেকটা বউ বিয়ে করে নিয়ে আসব। ইস্টুপিট। বলেই রুম থেকে চলে যায়। আদ্রের আম্মু সবাই আমাকে বুঝিয়ে চলে জান।

____________

সন্ধ্যা বেলা জমিয়ে আড্ডা দিয়ে রুমে আসলাম ননদ টা আমার অনেক ভালো,, সমবয়সী হওয়াতে সম্পর্কটা বান্ধবীদের মতো। কিন্তু এমা কি দেখছি এইসব,,, আদ্র রুমে ঢুকতেই বলে

—- সন্ধ্যা কখন হয়েছে? পড়তে বসবে কে? আমি কি বলবো বুঝতে পারছিলাম না কি বলবো। আমাকে চুপ থাকতে দেখে বলে

—- চুপচাপ টেবিলে আসো। কি আর করার বাধ্য হয়েগেলাম। টেবিলে বসার সাথে সাথে সে বলে

—- তোমার এইটের থেকে টেন অব্দি রেজাল্ট কি ছিল?? এইরে। এইটে তো ভালোই গ্রেড ছিল কিন্তু টেনে তো বি মাইনাস। আদ্র আমার চোখের সামনে তুড়ি বাজিয়ে বলে

—- কি হলো? আমি তাকে রেজাল্টের কথা বলতেই সে বই বন্ধ করে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বলে

—- তা স্কুলে যেতে কেন? এই মুখ দেখাতে এইটের রেজাল্ট তো মানা যায়? রেজাল্ট খারাপ হওয়ার কারণ?

কি বললবো এখন? সত্যি কথা বলতে গণিতে ছিলাম ডাব্বা এইটের পর সব ফ্রেন্ডরা সাইন্স নিয়েছিল সেই চক্করে পরে আমি নিয়েছিলাম। আর সেই চক্করেই রেজাল্টের এই অবস্থা। তাই ভয়ে ভয়ে বলেই দিলাম। আদ্রের ফেস দেখে ঠিক বুজলাম না তার মাথায় চলছে টা কি? যা-খুশি চলুক। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি ১২টা বাজে। ঘুম আসছে হাই আসছে খুব। হঠাৎ করেই আদ্র উঠে রুম থেকে চলে যায়।

আমি কি করব?? আমাকে কাজটাতো দিয়ে যাবে? আচ্ছা উনিকি কথা কম বলে নাকি কথাই বলতে পারে না নাকি উচ্চারণ করতে সমস্যা হয়?? এমন অদ্ভুত বর আল্লাহ তুমি সবাইকে দাও। আমি একা কেন এই জ্বালা সহ্য করব? একটু পরই সে আবার হাজির হাতে কি ঐটা দেখেতে মনে হচ্ছে দুধ জাতীয় কিছু!! গ্লাসটা আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে

—– ফিনিস কর আর ঘুমাতে যাও। আমি অসহায় ভাব নিয়ে বলি।

—- আমি খাই না এগুলো,,,। আদ্র আমার হাত থেকে গ্লাসটা নিয়ে বলে

—- এটা শেষ না করলে ঘুমাতে হবে না। আমি বলি

—- ঠিক আছে আমি খাবো না। আদ্র আমাকে কিছু পড়া দাগিয়ে দেয় আর বলে

—- এভাবে বসে থাকার মানে হয়না আন্ডারলাইন করা আছে সেগুলো পড়,, আমি ধরব। আমারও তাই ভালো মনে হয় এভাবে বসে থাকার চেয়ে ভালো পড়ি। আদ্রও নিজের লেপটপ নিয়ে বসে পরে। আমাকে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলে

—- পড়া কি আমার মুখে? ব্যাটা বজ্জাত একটু সুন্দর করে কথা বলতে পারে না। হিটলারের নানার নানা।

___________

রাত ২ টা বাজে ঘুমে চোখ খুলে রাখা মুসকিল। আদ্র আমার পড়া নিচ্ছে আর আমিও ঘুম ঘুম চোখে পড়া দিচ্ছি। পড়া নেওয়া শেষ হতেই আমি বলি

—- এখন ঘুমাতে যাই? আদ্র বলে

—- আগে গ্লাসে রাখা দুধটা ফিনিশ কর। আমিতো খাবো না দাড়াও ট্রিক কাজে লাগাবো। আমি বললাম

—– ঠিক আছে কিন্তু এটা তো ঠান্ডা হয়েগিয়েছে। আদ্র ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে

—- এটাই পানিশমেন্ট তখন গরম ছিল খাওনি কেন? এখন এই ঠান্ডাটাই খাবে।

কথায় আছেনা মানুষ নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারে আমারও ঠিক সেম অবস্থা,,,, আমি আদ্রকে বলি

—- না খেলেকি হয় না?? আদ্র বলে

—- কেন হবে না সারারাত জেগে থাকো। বারণ কে করেছে? আমি এখন ঘুমাবো,, বলেই হাই তুলতে লাগে। একদম জুকের মতো লাগছে আমার সাথে। বাধ্য হয়ে ঠান্ডা দুধটাই খেয়ে নিলাম৷ ওয়াক থু।।। তারপর শুধু আমার এইটুকু মনে আছে। আমি বিছানায় গিয়ে শুয়ে পরি। আর কিছু জানিনা।

চলবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে