কৃষ্ণকলি
পর্ব:- ০৯
Writer:- Anamika Islam Antora
বহুদিন পর সমধুর কন্ঠে প্রিয় রবীন্দ্র সংগীত!
আহ্, প্রাণটা জুড়িয়ে গেল!
আপু তুমি! তুমি এত্ত সুন্দর করে গাইতে পারো?
উফ্, অসাধারণ এক পারফরমেন্স দেখলাম। সত্যি আপনার কোনো তুলনায় হয় না মিস কৃষ্ণকলি ম্যাম!
উপস্থিত দর্শকের বিভিন্ন মন্তব্যে আপ্লুত আমি। আজ কেন জানি মনে হচ্ছে, সত্যি’ই আমি বোধ হয় ভালো গাইতে পারি!
গান+চা+আড্ডা। বেশ ভালো’ই জমছিল সেদিনের আড্ডার আসর। দীর্ঘ আড্ডাবাজির পর রাত্রি ঠিক ১০টায় সবাই হাতে ১টা করে চেয়ার নিয়ে রুমে চলে গেলাম। রাত্রি সাড়ে ১০টায় খাবারের জন্য ডাক পরল। রুমটার চারিপাশটা এত সুন্দর কারুকাজ দ্বারা খচিত ছিল যে আমি মন্ত্র মুগ্ধের মত এপাশ থেকে ওপাশে তাকাচ্ছিলাম।
কিগো নতুন গিন্নী?!!! শুধু কি রুম জুড়ে ঘুরঘুর করবে নাকি কিছু মুখেও দিবে?
বাঁধনের দাদার কথায় হুশ হয়। দেয়াল থেকে মুখ ফিরিয়ে দাদার দিকে তাকিয়ে একটা ছোট্ট হাসি দিয়ে চেয়ার টেনে নুসরাতের পাশে বসলাম। খাবার সামনে নিয়েও বারবার বাঁধনের দিকে তাকাতে লাগলাম। আজ বাঁধনকে উদাসীন লাগছে। কেমন যেন অন্যমনস্ক হয়ে খাবার হাত রেখে বসে আছে বাঁধন! আচ্ছা, তবে কি ওর হারিয়ে যাওয়া ভালোবাসা মায়ার কথা মনে পরছে? আচ্ছা, ও কি আজকে আমার নাম্বারে কল দিবে?
কিন্তু আমার নাম্বার তো বন্ধ! ও কি আমার নাম্বার বন্ধ পেয়ে সেই চিরচেনা মায়া আইডিতে নক করবে?
ও কি আমায় বলবে__
মায়া ভুল হয়ে গেছে। আমি তোমাকে শুধু শুধু কষ্ট দিয়ে ফেললাম।
চলো না মায়া আমরা আবার নতুন করে সব শুরু করি….!!!
অবুঝ মন এরকম হাজারো প্রশ্ন করে যাচ্ছে নিজে নিজেকেই।
রাত্রি ২.৪৫মিনিট_
সবাই হয়তো দিনের সমস্ত ক্লান্তি ভুলে নিদ্রাজগতে পাড়ি জমিয়েছে। কিন্তু আমি?
আমার চোখে ঘুম নেই। মেসেঞ্জার ওপেন করে ফিল্টার মেসেজের দিকে তাকিয়ে চাতকের মত বসে আছি। অচেনা আইডি থেকে আসা প্রতিটা মেসেজ রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করছি। মাঝে মধ্যে হাই, হ্যালোও করছি। কিন্তু চাতকের মত আশায় চেয়ে থাকা এই আমার আশা পূরণ হয়নি। কোনো আইডি থেকেই বাঁধন আমায় নক করে নি।
পরদিন লোকচক্ষুর আড়ালে নিয়ে যায় নুসরাত বাঁধনকে। জিজ্ঞেস করে ওর হারিয়ে যাওয়া ভালোবাসা মায়ার ব্যাপারে। কিছুক্ষণের জন্য বাঁধন স্তব্ধ হয়ে যায়। এক পা দু’পা করে নুসরাতের থেকে সামনে এগিয়ে যায়। দীঘির কাছাকাছি পলাশ গাছের নিচে দাঁড়িয়ে নির্বাক দৃষ্টিতে দুর অজানায় তাকিয়ে আছে। কিছু বলতে গিয়েও চুপসে যায় নুসরাত। ভয়ে বাঁধনের সামনে থেকে কেটে পরার সিদ্ধান্ত নেয়। বাঁধন ঠিক তখন’ই পিছন থেকে ডাক দেয়। নুসরাত থমকে দাঁড়ায়। কাঁপা কাঁপা দৃষ্টি নিয়ে বাঁধনের দিকে ফিরে তাকায় নুসরাত।
– কি হয় মায়া আপনার?
বাঁধনের প্রশ্ন শুনে মাথা তুলে সামনের দিকে তাকালো নুসরাত। এদিকে প্রশ্নের পর প্রশ্ন করে যাচ্ছে বাঁধন। নুসরাত ঠান্ডা মাথায় ভাবছে, আচ্ছা! আগে তাহলে ওনার মনের কথাটা জেনে নেই। জেনে নেওয়া যাক ওনি এখনো মায়াকে ভালোবাসেন কি না?!!! তারপর’ই না হয় সত্যের মোড়ক উন্মোচন করা যাবে। আর সেজন্য কথা ঘুরিয়ে
নুসরাত জবাব দেয়-
আপনার পূর্বের একটা আইডির ফ্রেন্ড ছিলাম আমি। ঐখানে মায়াকে নিয়ে আপনার অসংখ্য স্ট্যাটাস দেখেছিলাম। তাই আর কি জানতে চাইছিলাম কি খবর আপনার সেই মায়ার?
– Okey, আমি আমি আপনার কৌতূহল মিটিয়ে দিচ্ছি মিস নুসরাত। আপনি শুধু নিরব শ্রোতার মত মন দিয়ে শুনে যান। বাঁধন বলা শুরু করে_
মায়া আমার জীবনের এক দুঃসর্হ অতীতের নাম। মায়া এরকম এক মেয়ে ছিল যার কাছে আমার চাওয়া-পাওয়ার কোনো মূল্য ছিল না। ও আমায় অনেক কাঁদিয়েছে। শুধু কাঁদিয়েই শান্ত হয়নি নিজ হাতে আমার ভালোবাসাকে গলা টিপে হত্যা করেছে। প্রথম প্রথম ওর জন্য কাঁদতাম। কিন্তু এখন আর কাঁদি না। কেন কাঁদব? আর কার জন্য কাঁদব? যার জন্য কাঁদব সেতো আমায় কখনো’ই ভালোবাসেনি।
বাঁধনের কথা শুনে আর চুপ থাকতে পারল না নুসরাত। কথার মাঝখানে বাঁধনকে থামিয়ে দিল সে।
” ১মিনিট বাঁধন সাহেব। জাস্ট ১মিনিট।”
জি, বলুন…..(বাঁধন)
আপনার কেন মায়ার প্রতি এমন বিরুপ ধারনার জন্ম হলো? ও কি বলছে কখনো আপনাকে ভালোবাসে না???
নুসরাতের এরূপ প্রশ্নের জবাবে মুখ খুলে বাঁধন। বলা শুরু করে, সব কথা মুখে বলতে হয় না মিস নুসরাত। কিছু কথা বুঝে নিতে হয়। আমিও বুঝে নিয়েছি। মায়া ওর কর্মকান্ড দ্বারা আমায় বুঝিয়ে দিয়েছে ও আমায় ভালোবাসে না। ভালোবাসলে আমি যেদিন সুদূর ঢাকা থেকে ওর কাছে ছুটে গিয়েছিলাম, সেদিন ঠিক আমার সামনে আসত। আমায় এভাবে ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড় করিয়ে রাখত না অচেনা জায়গায়। ও আমায় ভালোই বাসে নি…..
Wow!
মেয়েটি আপনার সামনে আসেনি আর আপনি ওমনি ভেবে নিয়েছেন ও আপনাকে ভালোবাসে না? ও আপনাকে ছবি দিতে অনিহা প্রকাশ করেছে আর এতেই আপনার মনে হলো ও আপনাকে ভালোবাসে না?
মিস্টার বাঁধন সাহেব!
আপনি কি কখনো ওকে জিজ্ঞেস করেছেন ও কেন আপনাকে ছবি দিতে চাই না, আপনার কাছে আসতে চাই তো না? ভালোবাসার দোহাই দিয়ে জিজ্ঞেস করেছিলেন কি কখনো কেন বলত ও আপনাকে দূর থেকেই ভালোবেসে যাবে?!!!
নুসরাতের প্রশ্নের জবাবে বাঁধন বলে উঠে__
ভালোবাসার দোহাই কেন দিব? আমি তো বুঝেই গিয়েছি ও আমার সাথে Time pass করেছে। Just time pass…..
চুপ, একদম চুপ! আর একটা কথাও শুনতে চাই না আমি মায়া সম্পর্কে। বাঁধনের করা মন্তব্যে রাগান্বিত হয়ে কথাটা বলে উঠে নুসরাত। বাঁধনও উত্তেজিত হয়ে বলে—
” আমার ঠ্যাকা পরেছে ফালতু মেয়েকে নিয়ে কথা বলতে….”!!!!
অত্যাধিক মাত্রায় রেগে যায় নুসরাত।
বাঁধনের পথ আগলে দাঁড়ায় সে।
” ঐ ব্যাটা?!!! আমার স্ট্যাটাসে হুটহাট মন্তব্য করে চলে যাচ্ছিস কোথায়? মন্তব্যের রিপ্লাই নিয়ে যাবি না?????”???
চলবে……