কৃষ্ণকলি
পর্ব- ০৩
লেখা- অনামিকা ইসলাম।
মিনিট পাঁচেকের মধ্যে পৌঁছে গেলাম কাঙ্খিত গন্তব্যে। আমার স্বপ্নের সুখের নীড়ে।
যে নীড়কে নিয়ে একটা সময় রাতভর স্বপ্ন দেখতাম;
স্বপ্ন দেখতাম আমার থাকবে একটা সাজানো ছোট্ট সংসার।
যেখানে মা সমতুল্য শাশুড়ি , বন্ধু ভাবাপণ্ন শ্বশুর আর বোনের মত একটা ছোট্ট ননদ থাকবে। ওদেরকে নিয়ে হৈহুল্লুর করে কেটে যাবে আমার দিন, আমার রাত।
আমার স্বপ্নগুলো আজ যেন স্বপ্ন হয়ে’ই রয়ে গেল। পূরণ আর হলো না….
মিষ্টি মা!
আমাদের বাড়িটা কি পছন্দ হয়েছে?
~মিষ্টি???(আমি)
হুম, মিষ্টি। এত মিষ্টি দেখতে যে তাকে মিষ্টি বলব না তো কি বলব, হুহ্?
আজ থেকে তোর নাম মিষ্টি। তুই আমার মিষ্টি মা। আগে পরে কি নাম ছিল সেসব ভুলে যা। মনে করবি,
তুই সদা বর্তমানে ছিলি, আছিস, থাকবি।
কি!!!
মনে থাকবে আমার কথা?
– হুম।
সুইটি একটু এদিকে আয়’তো!
বাঁধনের মায়ের ডাকে বাঁধনের ছোট বোন সুইটি ছুঁটে আসল। মিষ্টি করে সালাম দিয়ে আমাকে ওর রুমে নিয়ে গেল।
ফ্রেস হয়ে রেস্ট নেবার জন্য বলল। ফ্রেশ হয়ে এসে ব্যাগ থেকে কাপড়-চোপড় বের করছিলাম, এর’ই মাঝে মিস সুইটি ওর রুমের প্রতিটি কোণায়-কানায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা আসবাবপত্রের বর্ণনা দিতে লাগল। এমনভাবে সব কিছুর বিশ্লেষণ করছে মনে হচ্ছে ও যেন কোনো দোকানের মালিক। আর আমি সেখানকার একমাত্র ক্রেতা।
যায় হোক!
আধঘন্টা এভাবে অনর্থক পেঁচাল পারল।
তারপর মনে হয় হাফিয়ে গিয়েছিল।
আপু তুমি বসে রেস্ট নাও, আমি আসছি বলে চলে গেল সুইটি
উফ!!!
পারেও বটে।
কিছু সময়ের ব্যবধানে’ই বুঝে গেলাম মেয়েটা ভিষণ ছটফটে আর চঞ্চল। সারাক্ষণ ছুটোছুটো করাটাই যার স্বভাব। সুইটি যাওয়ার পর বিছানায় একটু গা এলিয়ে দিয়েছিলাম, ঠিক তখন’ই রুমে বাঁধনের আগমন। একবাটি নুডলস হাতে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে সে। অনুমতি নিয়ে’ই তবে রুমে প্রবেশ করে।
নুডলস খান বলে আমার দিকে নুডলসের বাটি”টা বাড়িয়ে দেই বাঁধন।
আমি নুডলস খাই.. না এটুকু শুধু বলছিলাম, তখন’ই ও বলে উঠে-
নিজ হাতে বানিয়েছি।
গ্রহণ করলে ভালো লাগত।
এবার আর ফিরিয়ে দিতে পারিনি। বাঁধনের হাত থেকে নুডলসের বাটিটা নিয়ে ডকডক করে গিলতে লাগলাম, যদিও নুডলস আমার ভিষণ অপছন্দের খাবারের তালিকায় পরে।
জীবনের প্রথম অপছন্দের কোনো খাবার খেলাম।
নাহ, পূর্বের ন্যায় কোনো বমি কিংবা অস্বস্তি লাগে নি। কেন যেন মনে হচ্ছে,
অপছন্দের কোনো খাবার নয়, আমি যেন কোনো অমৃত খাচ্ছি।
এমন অনুভূতির কারণ’টা কি সত্যি’ই ওর রান্নার জন্য নাকি প্রিয় কারো হাতের খাবারের জন্য সেটা জানা নেই আমার….
খাওয়া শেষ করতে’ই জিজ্ঞেস করে বাঁধন, কেমন হলো জানাবেন না???
বাঁধনের দিকে তাকিয়ে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিলাম।
ওর প্রশ্নের কোনো উত্তর না দিয়ে প্রশ্নের পিঠে প্রশ্ন করলাম-
” আপনি রান্না পারেন আগে কখনো বলেন নি তো?!!!”
বাঁধন আমার দিকে চোখ বড় বড় করে জিজ্ঞাসো দৃষ্টি নিয়ে তাকালো। মনে মনে নিজের বোকামির জন্য নিজেকে’ই গালি দিচ্ছিলাম। প্রশ্ন করে বাঁধন__
” আগে বলব মানে?”
– স্যরি, মজা করলাম। তবে যায় হোক!
আপনার নুডলস রান্না’টা কিন্তু বেশ হয়েছে।
আমার দিকে তাকিয়ে একটা মৃদু হাসি দিয়ে বলে_
” শুনে ধন্য হলাম…..”
বাঁধন রুমে চলে যায়।
রাত্রে খাওয়া-দাওয়া শেষে অনেক কথা-বার্তা হলো সবার সাথে।
এতে এটুকু বুঝলাম যে_
” আমার ধারণা’টা মনে হয় একটু ভুল। বাঁধন শান্ত নয়, এখনো আগের মত’ই অশান্ত ভাবটা ওর মধ্যে আছে।”
মাঝরাত্রে খুব ভেঙ্গে যায়।
স্মৃতি’রা এসে মনের জানালায় কড়া নাড়ে। ভিতরে অস্থিরতার সৃষ্টি হয়।
অস্থিরতা থেকে মুক্তির উপায় হিসেবে নামাজকে’ই উত্তম মনে হলো।
ওযু করে বসে গেলাম নামাজের বিছানায়।
আদায় করে নিলাম তাহাজ্জদ।
নামাজ শেষে কুরআন নিয়ে বসে পরলাম।
কুরআন পাঠে এতটাই মগ্ন ছিলাম যে মনে’ই ছিল না এখন রাত্রী গভীর।
এদিকে গভীর রজনীতে তেলাওয়াতের আওয়াজে ঘুম ভেঙে যায় বাঁধনের মায়ের। বিছানা থেকে নেমে ঘড়ির দিকে তাকান ওনি। রাত্রী তখন ৩টা।
এত রাত্রে কুরআন তেলাওয়াত???
বাঁধনের মা নামাজ কক্ষের সামনে এসে দাঁড়ালো। রুমে দরজা আটকানো। কিন্তু এ রুম থেকে’ই তেলাওয়াতের আওয়াজ’টা আসছে সেটা ওনি বুঝতে পারলেন। জানালার পর্দা আংশিক ফাঁক করে রুমের ভিতর তাকালেন ওনি।
ওনার মুখে হাসির রেখা ফুটে উঠল।
– এত সুন্দর সুরেলা কন্ঠে তেলাওয়াত তাহলে এই মেয়ে’ই করছে। মিষ্টি হেসে রুমে চলে গেলেন বাঁধনের মা….
পরদিন সকালবেলা ব্রেকফাস্ট করে আন্টিকে(বাঁধনের মা) বলতে গেলাম যে, বাইরে যাচ্ছি। গিয়ে দেখলাম ওনি আধ শুয়া হয়ে হাদিসের বই পড়ছেন। আমাকে দেখে সোজা হয়ে বসলেন ওনি। জিজ্ঞেস করলেন-
কোথাও যাবি মা?
– জি, আন্টি। কলেজে যাচ্ছি।
~ কলেজে? কেন কোনো দরকার মা???(আন্টি)
আন্টি কলেজে আমার চাকুরী হয়েছে…..
– আলহামদুলিল্লাহ! শুনে খুশি হলাম। তা কোন কলেজে চাকুরী হয়েছে তোমার মা?
~ গার্লস স্কুলের সাথে যে কলেজ’টা আছে সে কলেজ’টাই আন্টি।
– কিহ? তুমি মহিলা কলেজের কথা বলছ?
আশ্চর্য হয়ে বাঁধনের মা প্রশ্ন করে আমায়। ওনার প্রশ্নের জবাবে ছোট্ট করে বললাম__
জি আন্টি….
বাঁধনের মা মিষ্টি হেসে বলল__
সেখানে তো সুইটিও পড়ে মা….
ভালো’ই তো হলো।
ও তাহলে এখন থেকে আমার সাথে’ই যেতে পারবে।
‘ হুম, একহিসেবে ভালো’ই হয়েছে আমার মাথার বোজা কমল, ভিষণ থেকে বলে উঠল বাঁধন………’
চলবে…….