#কুয়াশায় ঘেরা আধার
#লেখনীতে-জেনিফা চৌধুরী
#পর্ব-দুই
“যদি বাচ্চাটাকে নষ্ট করে ফেলার বিন্দু চেষ্টা করো তাহলে এর পরিনিতি কতটা ভয়াবহ হবে তুমি ভাবতেও পারছো না”
সারারাত ঘুম হয়নাই নুহার। কাল রাতে বিধ্বস্ত অবস্থায় বাসায় ফিরে এসে নিজের রুমের ছিলো। বাবা_মা হাজারটা প্রশ্ন করলেও নুহা একটা প্রশ্নের ও উওর দেয়নি। বাসায় ফিরেই নিজের রুমে ঢুকে দরজা লক করে দিয়েছিলো। সকাল হতেই নামাজ আদায় করে নুহা বেলকনিতে বসে ছিলো। তখনি ফোন স্কীনে আননোন নাম্বার থেকে উপরোক্ত ম্যাসেজ টা ভেসে উঠলো। নুহা ম্যাসেজার দিকে কিছুক্ষন বাকরুদ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলো। এই ম্যাসেজ টা কে দিতে পারে নুহার জানা নেই। হঠাৎ করেই নুহা আনমনে বলে উঠলো…
–নিহান দেয়নি তো….
বলেই চুপ করে গেলো। তারপর একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো….
—যে নিজের সন্তান কে নষ্ট করে ফেলতে বলেছে, যে নিজের সন্তান কে অস্বীকার করেছে, তার কাছ থেকে এই ম্যাসেজ আশা করাটা দিবারাত্রি স্বপ্ন দেখা ছাড়া আর কিছু নয়।
কথাটা বলতেই নুহার চোখের কোনে পানি জমে গেলো। নুহা দুইহাতে পানি টুকু মুছে নিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে পেটের উপর হাত রেখে বললো…..
–আমার গর্ভে যে আছে সে শুধু আর শুধুমাত্র আমার সন্তান। তোর উপর আর কারোর অধিকার নেই পুচকু সোনা। তুই শুধু মাত্র আমার অংশ, আমার প্রান। যারা তোকে অস্বীকার করেছে তোর মাকে ঠকিয়েছে তাদের ছায়া ও তোর উপর পড়তে দিব না আমি। আর রইলো আমাকে ঠকানোর শাস্তি সেটা না হয় আমি উপর ওয়ালার উপর ছেড়ে দিলাম।
বলেই ম্যাসেজটার কথা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে ফোন টাকে রেখে বাইরে চলে গেলো।
____________________________________________
নিহান ওয়াশরুম থেকে বের হতেই দেখলো তৃধা সোফার উপর বসে আছে। তৃধাকে দেখেই নিহানের মাথা অটোমেটিক গরম হয়ে গেলো। এই মুহূর্তে নিহানের হাতে কোনো রাস্তা নেই। তাই নিজেকে কন্ট্রোল করে তোয়ালে টা ছুড়ে মারতেই সেটা তৃধার মুখের উপর পড়লো। তৃধা রেগে কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেলো। নিহান শার্টটা গায়ে দিয়ে বোতাম লাগানোর জন্য হাত দিয়েই তৃধা এসে ওর হাতটা ধরে ফেললো। নিহানের ঠোঁটের উপর আঙ্গুল রাখতেই নিহান হাতটা সরিয়ে দিতেই তৃধা নিহান কে ঝাপটে ধরে বলে উঠলো…..
—কেনো দূরে সরিয়ে দিচ্ছো? কি হয় একবার আমাকে কাছে টেনে নিলে? আমি তোমাকে কতটা ভালোবাসি তুমি কেনো বুঝো না ? কেনো বুঝোনা?
তৃধার কথা শুনে নিহানের শরীর জ্বলে যাচ্ছে। শীতল রক্ত গুলো মুহূর্তেই টগবগ করে উঠলো। চোখ দুটো মুহূর্তেই লাল হয়ে উঠলো। নিহান তৃধাকে ধাক্কা দিতেই তৃধা খানিক টা পিছিয়ে গেলো। নিহান কিছু না বলে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই তৃধা ওর হাতটা ধরে ফেললো। তারপর বাঁকা হেসে বলে উঠলো…..
–কি ভেবেছো গ্রেট সিঙ্গার? তুমি আমাকে সরিয়ে দিবে আর আমি সরে যাবো।
বলেই শব্দ করে হাসলো তৃধা। তারপর শান্ত স্বরে বললো…..
—নো ম্যান নো। তুমি বোধহয় ভুলে যাচ্ছো তোমার এই নাম খ্যাতি সব আমি চোখের পলকে ধুলোয় মিশিয়ে দিতে পারি। তুমি ভুলে যাচ্ছো তোমার সন্তানের জীবন-ম’রন আমার হাতে।
তৃধার কথা শুনে নিহান দাতে দাত চেপে বললো….
—আমার সন্তানের ক্ষতি করার চেষ্টা করলে তোমার এই শরীরের একটা অংশ ও আস্ত থাকবে না। খুব শিঘ্রই তোমার সব খেলা শেষ করব আমি। মাইন্ড ইট।
বলেই নিহান বেরিয়ে গেলো। নিহান বেরিয়ে যেতেই তৃধা হা হা করে হেসে উঠলো। তারপর নিজে নিজেই বলতে লাগলো……
—তৃধা এতটাএ কাচা খেলোয়াড় নয় নিহান। তোমার জীবনে খুব শিঘ্রই কি ঝড় আসতে চলেছে তুমি কল্পনা ও করতে পারছো না।
বলেই একটা রহস্যময় হাসি দিয়ে উঠলো তৃধা।
____________________________________________
নিহান সিড়ি দিয়ে নিচে নেমে বাইরে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য পা দিতেই সিনথিয়া বেগম পেছন থেকে ডেকে উঠলো। সিনথিয়া বেগমের ডাক শুনে নিহান দাড়িয়ে গেলো। নাহ! মায়ের দিকে তাকানোর মতো সাহস ওর নেই। কোন মুখে তাকাবে ও? নিহান পেছন ফিরেই বলে উঠলো…..
–আমার কনসার্ট আছে আজ সন্ধ্যায় অনেক দূরের পথ আমাকে এখনি বেড়িয়ে যেতে হবে। আসচ্ছি।
সিনথিয়া বেগম শান্ত কন্ঠেই বলে উঠলো…..
–আমি যখন তোমাকে ডেকেছি তখন বিনা কারনে ডাকিনি সেটা তুমি বোধহয় জানো নিহান। তোমার মা অযথা সময় নষ্ট করেনা।
সিনথিয়া বেগমের কথা শুনে নিহান শান্ত কন্ঠেই বলে উঠলো….
–কি বলবে তাড়াতাড়ি বলো? আমার হাতে সময় নেই।
সিনথিয়া বেগম নিহানের সামনে এগিয়ে গিয়ে নিহানের সামনে একটা সাদা কাগজ ধরে বলে উঠলো….
—এটায় একটা সিগন্যাচার করে দাও।
নিহান ভ্রু যুগল কুচকে খানিকটা উচু গলায় জবাব দিলো…..
—এটা কিসের পেপার?
সিনথিয়া বেগম নিহানের হাতে পেপারটা ধরিয়ে দিতে দিতে শান্ত স্বরে বললো…..
—এটা তোমার আর নুহার ডির্ভোস পেপার।
ডির্ভোস পেপার শব্দ টা শুনতেই নিহান মুহূর্তেই চোখ বড় বড় করে ওর মায়ের দিকে তাকালো। ওর মাথায় বাজ ভেঙে পড়লো। নুহাকে ডির্ভোস দেওয়া ওর পক্ষে সম্ভব না।
—ইমপসিবল। কি বলছো তুমি মা? আমি নুহাকে ডির্ভোস দিব?
নিহান চেচিয়ে কথাটা বলে উঠতেই সিনথিয়া বেগম বললো…..
–প্রথম স্ত্রী থাকা স্বত্তেও তুমি দ্বিতীয় বিয়ে করেছো আর আমি একজন আইনের লোক হয়ে সেটা কি করে মেনে নিব বলো? আমি যেই ডিসিশন নেই সেই ডিসিশনেই এই বাড়িতে শেষ ডিসিশন। আই হোপ তুমি সেটা জানো নিহান।
সিনথিয়া বেগমের কথা শুনে নিহান ছলছল চোখে ওর মায়ের দিকে তাকাতেই ওর মায়ের শক্ত চেহারাটা দেখতে পেলো। সিনথিয়া বেগম উকিল হিসেবে যেমন কঠিন একজন মানুষ হিসেবে তার থেকেও বেশি কঠিন। নিহানের কথা বলার সাহস নেই। নিহান কি করে ওর মাকে বুঝাবে ও একটা রহস্যের জালে আটকে আছে। নিহান ওর মাকে পাশ কাটিয়ে বড় বড় পা ফেলে বেরিয়ে গেলো। সিনথিয়া বেগম নিহানের যাওয়ার পানে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে উঠলো……
—- আজ আমি স্বার্থপর। নিজের মেয়েকে বাঁচানোর জন্য আজ আমি বড় স্বার্থপর।
____________________________________________
নিহান জোরে গাড়ি চালাচ্ছে। ওর চোখের সামনে নুহার অসহায় মুখটা বার বার ভেসে উঠছে। নিহান অশ্রুসিক্ত চোখে আনমনে বললো….
” যেদিন কুয়াশায় ঘেরা আধার কাটিয়ে আলো ফুটবে চারপাশে। সেদিন সব রহস্যের জাল ভেদ করে, সব কালো ছায়ায় বিনাশ ঘটিয়ে আমরা আবার এক হবো”
নিহান গাড়িটা একটা বড় পুরনো দালানের নিচে এসে থামলো। দালানটা শেওলা দিয়ে আবৃত। নিহান গাড়ি থেকে বেরিয়ে সানগ্লাস টা চোখে পড়ে নিলো। সাদা শার্ট ইন করে পড়া। শার্টের হাতা গুলো কনুই অব্দি ফোল্ড করা। আর চুল গুলো এলোমেলো ভাবে কপালে ছড়ানো। নিহান চারপাশে একবার চোখ বুলিয়ে নিয়ে দালানের ভেতরে ঢুকে পড়লো। ভেতরে ঢুকতেই নিহানের বন্ধু ইমন নিহানের সামনে এগিয়ে এসে বলতে লাগলো…..
–বিগ মিস্টেক হয়ে গেছে মামা। এই তৃধা মেয়েটা অনেক চালাক। আমাদের সব কথা কি করে জেনে গেলো ও?
ইমনের কথা শুনে নিহান জোরে বলে উঠলো….
— হোয়াট? জেনে গেছে মানে? আমি তো শুধু তোকে বলেছিলাম কথাটা তাহলে ও জানলো কি করে?
ইমন কপালে স্লাইড করতে করতে বললো….
–ডোন্ট নো। তোর উপর ওর নজর নেই তো। আমি কি বোঝাতে চাচ্ছি বুঝতে পারছিস তুই?
নিহান ইমনের কথা শুনে কিছুক্ষন চুপ করে থেকে দেয়ালে ঘু’ষি মে/রে বলে উঠলো….
–ড্যাম ইট। আমি এতটা বো’কা কি করে হলাম। এই ব্যাপার টা একবার ও আমার মাথায় আসেনি কেনো?
#চলবে