#কুয়াশায় ঘেরা আঁধার
#লেখনীতে-জেনিফা চৌধুরী
#পর্ব-আট
পর পর দুইটা থা’প্পড় খেয়ে গা’লে হাত দিয়ে রাগান্বিত চোখ তাকিয়ে আছে তৃধা। নিহান তৃধাকে আরেকটা থা’প্পড় দিতে যাবে তখনি নুহা নিহানের হাত ধরে ফেললো। তৃধা রাগে ফোসফোস করছে। একটা ভাঙ্গা বিল্ডিং পরিত্যাক্ত রুমে তৃধা কে চেয়ারের সাথে বেধে রাখা হয়েছে। তৃধার সামনে দাড়িয়ে আছে চারজন ব্যাক্তি। নিহান, নুহা, আবরার, আলিশা। আলিশা একটু ভী’তু টাইপের তাই আলিশা আবরারের হাত ধরে আবরারের সাথে লেগে দাড়িয়ে আছে। নিহান নুহার দিকে রাগী চোখে তাকাতেই নুহা বললো……
—আমি জানি তৃধা এসব কিছুর পেছনে তুমি একা না। তোমার সাথে অন্য কেউ আছে। তার নামটা বলো?
নুহার কথা শুনে উপস্থিত সবাই নুহার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। নিহানের রাগে শরীর জ্বলে যাচ্ছে। ওর মন চাচ্ছে এক্ষুনি তৃধাকে মে/রে ফেলতে। নুহার কথা শুনে তৃধা রাগী গলায় বলে উঠলো..
—নুহা তুমি কত বড় ভুল করছো তুমি নিজেও জানো না। আমি জানি, আমার নিহান কে পাওয়া হবে না। তাই এখন আমার বেঁচে থাকার কোনো ইচ্ছে নেই। তোমরা আমাকে মে/রে ফেললেও আমি কোনো দিন সত্যি টা বলবো না। শুধু একটা কথা শুনে রাখো তোমাদের জীবনে খুব বড় ঝড় আসতে চলেছে। আর সেই ঝড়ে তোমাদের সবাইকে বিচ্ছিন্ন করে দিবে।
বলেই তৃধা পাগলের মতো হেসে উঠলো। নিহান রাগে তৃধার গাল চে’পে ধরে বলে উঠলো…..
—তুই আমার সন্তান কে আমার থেকে কেড়ে নিয়েছিস। তুই আমাকে সারাজীবনের জন্য বাবা ডাক শোনার থেকে বঞ্চিত করেছিস। তোকে আমি…..
বলেই তৃধার গ/লা চে/পে ধরলো নিহান। তৃধা একবার ও ছাড়ানোর চেষ্টা করছে না শুধু ছলছল চোখে নিহানের দিকে তাকিয়ে কাশতে লাগলো। আবরার নিহান কে টেনে ছাড়িয়ে নিলো। নুহার কেনো যেনো মনে হচ্ছে তৃধা শুধু মাত্র গুটি কিন্তু চাল অন্য কেউ দিচ্ছে কিন্তু কে? তৃধা কাশতে কাশতে হঠাৎ করেই হাউমাউ করে কেঁদে ফেললো। তৃধার কান্নায় নুহা সহ বাকিরা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো ওর দিকে। তৃধা কাঁদতে কাঁদতে বলে উঠলো…..
–আমার কি দোষ ছিলো নিহান। আমি তো শুধু তোমাকে ভালোবাসি। কি হতো একবার আমাকে ভালোবাসলে। আমার কি নেই নিহান। টাকা,বাড়ি,গাড়ি,রুপ,সৌন্দর্য কি নেই বলো? তাও কেনো ভালো বাসলে না আমাকে? কেনো বলো?
নিহান রেগে তৃধার দিকে তাকিয়ে চেচিয়ে বললো……
—তোর মতো নিকৃষ্ট একটা মেয়েকে কারোর পক্ষে ভালোবাসা সম্ভব না। একটা বাচ্চা পৃথিবীর আলো দেখার আগেই তুই ওকে কেড়ে নিয়েছিস? কতটা জ’ঘ’ন্য কাজ করেছিস তুই একবার ও ভেবেছিস?
নিহানের কথা শুনে তৃধা অসহায় কন্ঠে বলে উঠলো….
—বিশ্বাস করো নিহান আমি এইসব কিছু করিনি। আমি তো শুধু মাত্র তোমাকে পাওয়ার জন্য চুপ করে ছিলাম। এসব কিছু পেছনে রয়েছে স…….
আর বলতে পারলো না। ঝড়ের গতিতে একটা বু’লেট এসে তৃধার কপালে লাগতেই তৃধা মুখ থু’বড়ে নিচে পড়লো। চোখের পলকে হুট করে কি ঘটে গেলো উপস্থিত একজন ও বুঝতে পারলো না। আলিশা র’ক্ত দেখেই জোরে চিৎকার করে আবরারের বুকে মুখ লুকালো। নুহা ভয় পেয়ে নিহানের হাত চেপে ধরলো। নিহান আর আবরার দুজনেই স্তব্ধ হয়ে তৃধার র’ক্তা’ক্ত চেহারার দিকে তাকিয়ে রইলো। আবরারের টনক নড়তেই আবরার আলিশাকে ছাড়িয়ে বাইরে ছুটে গেলো। নিহান আর নুহা দুজনেই হাটু ভেঙে বসে তৃধার মাথাটা কোলে তুলে নিলো। নিহান তৃধার পার্লস চেক করে ভয়ার্ত চোখে নুহার দিকে তাকাতেই নুহা ফুঁপিয়ে কেঁদে
উঠলো। নিহান এক হাতে নুহার মাথাটা বুকে জড়িয়ে নিয়ে ছলছল চোখে তৃধার লা/শের দিকে তাকিয়ে রইলো। ওর মাথা কিছুতেই কাজ করছে না? নুহা কিছু বলতে যাবে আর আবরার ভেতরে ঢুকেই দৌড়ে তৃধার সামনে এসে বসে নিহানের দিকে তাকাতেই নিহান মাথা নাড়াতেই আবরার বলে উঠলো…..
—আমরা এখানে আছি আমরা চারজন ছাড়া কেউ জানেনা। তাহলে এই কাজ টা কে করলো? তৃধা কোন সত্যি বলতে যাচ্ছিলো যার কারনে ওকে এভাবে ম/রতে হলো?
ওরা চারজনেই বাকরুদ্ধ হয়ে বসে রইলো। কারোর মাথা কাজ করছে না। হঠাৎ কি হয়ে গেলো?
____________________________________________
আলিশা সকালের ঘটনাটার পর দূর্বল হয়ে পড়েছে। তাই আবরার আলিশাকে নিয়ে লং ড্রাইভে বের হয়েছে। আবরার নিজেও এই ঘটনাটা নিয়ে বড্ড ভয়ে আছে কিন্তু আলিশাকে স্বাভাবিক করার জন্য আবরার আলিশাকে নিয়ে বের হয়েছে। চারদিকে ঘন অন্ধকার। সিনথিয়া বেগম নিজের কাজে বাড়ির বাইরে গিয়েছে। বাড়িতে শুধু নুহা, নিহান আর স্মৃতি। নুহা সকাল থেকে নিস্তব্দ হয়ে বসে আছে। একটাও কথা বলছেনা। নিহান সোফায় বসে ল্যাপটপ ঘাটছে। অনেক রহস্য উদ্ধার করা বাকি। নুহা নিরবতা ভেঙে বলে উঠলো….
—তৃধা তো তোমাকে ভালোবাসতো নিহান। ওর পরিনিতি এতটা বা’জে না হলেও পারতো৷ আমি ওর মৃ/ত্যুটা কিছুতেই মেনে নিতে পারছিনা নিহান। চোখ বুঝলেই ওর অসহায় কন্ঠের আওয়াজ শুনতে পারছি। আমার কি মনে হচ্ছে জানো? সব রহস্য #কুয়াশায়_ঘেরা_আধার ঢেকে আছে। এই রহস্যের খোঁজ আমরা কি করে করব? আমার সব কিছু বিষাক্ত লাগছে…..
বলতে বলতেই নুহার গলা আটকে এলো। নুহা ডু্ঁকরে কেঁদে উঠলো। নিহান একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। এর উওর ওর নিজের ও জানা নেই? আজ বাড়িটা অন্য দিনের তুলনায় একটু বেশিই নিরব লাগছে নুহার। ওর মন টা ভীষন কু গাইছে। নিহান নুহার পাশে বসতেই নুহা গা হেলিয়ে দিলো নিহানের বুকে। নিহান নুহার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো…..
–জীবনে এমন কিছু অধ্যায় আসবে যেখানে সব জটিলতা দিয়ে ভরপুর। জটিল সমস্যা জটিল ভাবে না ভেবে সহজ করে এর সমাধান করার চেষ্টা করো দেখবে সব জটিলতা নিমিশেই উধাও হয়ে যাবে। আমাদের ঘিরে অনেক বড় একটা খেলা চলছে কিন্তু কি সেটা আমরা কেউ জানিনা? আমাদের ঠান্ডা মাথায় এই পরিস্থিতি থেকে বের হওয়ার রাস্তা খুঁজতে হবে।
নুহা কিছু না বলে চুপ করে রইলো। হঠাৎ করেই নুহা আর নিহানের অদ্ভুত ভাবে গরম লাগতে শুরু করলো। রুমে এসি চলছে তাও নুহা আর নিহান ঘামছে। বাড়ির ছাদটা দিয়ে মনে হচ্ছে আগুনের ধোয়া বের হবে। এতটা গরম লাগার কারন ওরা দুজনের একজন ও খুঁজে পেলো। নুহা আর নিহান দুজনেই লাফিয়ে উঠে দাড়াতেই দেখলো মেঝে সহ গরম হয়ে আছে। নুহার পায়ে গরমের ছ্যাকা লাগতেই নুহা লাফিয়ে খাটের উপর উঠে দাড়িয়ে চেচিয়ে বলতে লাগলো…..
—কি হচ্ছে এইসব নিহান? এত গরম হয়ে গেলো কেনো সব কিছু।
নিহান কি উওর দিবে ভেবে পাচ্ছে। ওর বুকের মধ্যে ভয়েরা এসে গ্রাস করছে। নিহান বাইরে বের হওয়ার জন্য পা বাড়াতেই দরজার সামনে আগুন দাউদাউ করে জ্বলে উঠলো। নুহা চিৎকার করে নিহানকে জড়িয়ে ধরলো। নিহান নিস্তব্দ হয়ে তাকিয়ে দেখছে। হঠাৎ আগুন আসলো কি করে? ভয়ে নিহানের মুখ দিয়ে শব্দ বের হচ্ছেনা। ওদের সব স্বপ্ন, সব রহস্য কি আজকেই শেষ? ওদের পথ চলা কি এখানেই সমাপ্ত? নিহান আর ভাবতে পারছেনা। শক্ত করে নুহাকে চেপে ধরে আছে। স্মৃতির কথা মনে উঠতেই নিহান আর নুহা দুজনেই স্মৃতির নাম ধরে জোরে ডাকতে শুরু করলো। কিন্তু কোনো সাড়া শব্দ আসলো না। নিহান চারদিকে চোখ বুলাচ্ছে। বাইরের থেকে চেচামেচির শব্দ নিহানের কানে আসলো। নিহান আর নুহা দুজনেই জানালা দিয়ে নিচে তাকিয়ে দেখলো বাসার নিচে মানুষেরা ভীড় জমিয়ে আ’গুন আ’গুন বলে চেচাচ্ছে। নিহান জোরে চেচিয়ে বলে উঠলো……
—আমরা এখানে আটকে পড়েছি। আমাদের প্লিজ হেল্প করুন।
কিন্তু নিহানের কথা নিচে থাকা মানুষের কানে পৌঁছালো না। নিহান আর নুহা দুজনেই চেচিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সবার চেচামেচিতে কারোর কানে যাচ্ছেনা ওদের চিৎকার। এখান থেকে কি করে বেদ হবে ওরা দুজন? ওরা বেঁচে থাকার জন্য চিৎকার করে যাচ্ছে। ওদের হৃদয় বিদারক চিৎকার কারোর কানে যাচ্ছেনা। আগুন ক্রমশ ওদের দিকে এগিয়ে এসে নিমিশেই পুরো রুমটা দাউদাউ করে আগুন জ্বলতে লাগলো।
____________________________________________
চারদিকে ভোরের আলো ফুটতেই পুলিশ আগুনে জ্বল’সানো বি’ভৎ’স দুটো লা/শ বের করে আনলো। লা/শ দুটো দেখেই সিনথিয়া বেগম গগন কাঁপানো চিৎকার করে জ্ঞা’ন হারালেন। কাল রাতে বাসায় ফিরে নিজের স্বপ্নের বাড়িটায় দাউদাউ করে আগুন জ্বলতে দেখে পা”গলে”র মতো করে ও শেষ রক্ষা করতে পারেনি। চোখের সামনে নিজের স্বপ্নের বাড়িটাকে পু’ড়ে ছাড়’খাড় হয়ে যেতে দেখছে। ফায়ার সার্ভিস এসে ও শেষ রক্ষা করতে পারিনি। পরিবেশ নিয়ন্ত্রণে এনে সকালে পুলিশ দুটো পু/ড়ে যাওয়া লাশ বের করে আনতেই আলিশা পা’গলের মতো করতে লাগলো। দৌড়ে লা/শ দুটোর সামনে এসে হাটু ভেঙে বসে পা/গলের মতো বিলাপ শুরু করলো। আবরার কিছুতেই ধরে রাখতে পারছেনা আলিশাকে। আলিশা চিৎকার করে বলে যাচ্ছে…..
—ভাইয়া তুই আমাকে ছেড়ে চলে যেতে পারিস না ভাইয়া। এই ভাইয়া এই চোখ খোল না প্লিজ। এই বউ মনি চোখ খুলো। তুমি এমন করে ঘুমিয়ে আছো কেনো? তোমাদের এই বি’ভৎ’স চেহারা আমি সহ্য করতে পারছিনা। ভাইয়া আমার ভীষন ভয় করছে ভাইয়া। তুই আমাকে একা ফেলে এইভাবে ঘুমাতে পারিস না ভাইয়া। এই ভাইয়া এই……..
আলিশার বুক কাঁপানো চিৎকারে উপস্থিত সবার চোখে পানি। আবরার আলিশার পাশে বসে নিঃশব্দে চোখের পানি ফেলছে।
#চলবে…….