#কুসুম_কাঁটা
#পর্ব-২৬
শিলা ভীষণ খুশি হলেন। চাকরি করতে গিয়ে স্বপ্নীলের নাজেহাল অবস্থা তার চোখে পড়েছে বারবার। কিন্তু বারন করতে পারেন নি। করা যায়ও না অবশ্য। জোর করে হলেও ওর উপর আরেকজনের দায়িত্ব আছে। শ্রাবণ্য ভীষণ ভালো মেয়ে। শিলার মনে হয় শুধু ভালো শব্দ টা দিয়ে শ্রাবণ্যকে বিশেষায়িত করলে কম করা হবে। স্বপ্নীলের সঙ্গে মানিয়ে নেবার ব্যাপার টুকুও ওর দারুন।শিলা জানতেন না যে শ্রাবণ্যকে ওর বাবা বিয়ে দিয়েছেন জোর করে। শুধু শিলা না, এই ব্যাপার টা কেউ ই জানে না। বাড়ির সবাই এই কথাটা যখন জেনেছে সবাই ই মর্মাহত হয়েছে। শিলা মুনসুর সাহেব কে জিজ্ঞেস করেছিল, ভাই মেয়ের বিয়েতে মত আছে তো। মুনসুর জবাবে বলেছেন,
“আছে। মেয়ে ভীষণ রক্ষনশীল। ওর ব্যাপারে আমার সিদ্ধান্ত ই সব। ”
শিলা মেনে নিয়েছে। এই যুগে এসব ব্যাপার যদিও খুব কম ই দেখা যায়। তবুও ব্যতিক্রম তো দুয়েকজন থাকেই। শ্রাবণ্যকে সেই ব্যতিক্রম দলের একজন ভেবেছিলেন। কিন্তু বিয়ের পর আসল ঘটনা জানতে পেরেছিল। শিলা শ্রাবণ্য কে জিজ্ঞেস করেছিল,
“তুমি কী চাও শ্রাবণ্য?”
শ্রাবণ্য কঠিন গলায় বলেছিল, আমার চাওয়া পাওয়ার আসলে কোনো দাম ই তো নেই।
“বাবা মায়ের কাছে না থাকলেও এখানে আছে। তুমি এখানে ঠিক সেরকম স্বাধীনতা পাবে, যেটা তুলি আর রঙ্গনা পেয়েছে। তবে আমি চাই স্বপ্নীল কে চিনতে জানতে তুমি সময় নাও। অন্তত ছয়মাস সময় নাও। স্বপ্নীল বুঝদার ছেলে। তুমি না চাইলে ও লিমিট ক্রস করবে না কখনো। আমি তোমাকে সময় দিলাম। ”
শ্রাবণ্য তখন বলেছিল,
“আমাকে আপনি গ্রাজুয়েশন শেষ হওয়া অবধি সময় দিন। ”
শিলা রাজী হয়েছে। দুজনের এই কথোপকথন আর কেউ জানেনা। শিলা লক্ষ্য করেছে শ্রাবণ্য দিন দিন কিভাবে স্বপ্নীলের একজন এই বাড়ির একজন হয়ে উঠেছে। আন্টি থেকে আম্মু সম্বোধনে নামতেও বেশী সময় লাগে নি। স্বপ্নীলের পাশে আছে ছায়া হয়ে।
শিলা মনে মনে ভাবেন, স্বপ্নীলের এই সাফল্যের কৃতিত্ব শুধু শ্রাবণ্য’র ই।
***
কথা ছিলো মিশুক দুই তিন দিন থেকে চলে যাবে। কিন্তু সেখানে চারদিন হয়ে গেছে এখনো যাওয়ার নাম করছে না। ওদিকে আপু দুলাভাই এর সঙ্গে একা আছে। দুলাভাই কে নিয়ে এখন এক আত্মীয়ের বাসায় উঠেছে। বাসাটা হসপিটালের কাছে বলে সেখানে ওঠা। রঙ্গনা মিশুক কে বলল,
“তুমি ঢাকায় কবে যাবে?”
মিশুক মাত্র ঘরে এসেছে। রঙ্গনা ড্রেসিং টেবিলের সামনে। চুলে ব্রাশ করছে। বিয়ের পর বোধহয় সাজগোজের ব্যাপারে একটু সচেতন হয়েছে। প্রায় ই সেজেগুজে থাকে।
মিশুক ভ্রু নাচিয়ে বলল,
“আমার বাড়ি থেকে আমাকেই বের করার প্ল্যান করছ?”
“তোমার বাড়ি? এটা তো বাবার বাড়ি।”
মিশুকের ভালো লাগলো, রঙ্গনার মুখে বাবা শব্দটা শুনে। বাবা, মাও অবশ্য রঙ্গনা কে মাথায় করে রাখছে। রাখার মতোই অবশ্য।
মিশুক বলল,
“বাই দ্য ওয়ে, আমাদের কিন্তু ঢাকায় ফ্ল্যাট নিতে হবে? কোথায় নিলে ভালো হবে তোমার জন্য? ”
“কেন? রঙতুলিতে সমস্যা কী?”
“ব্যাপার টা ঘর জামাই টাইপ হয়ে যায় না?”
“তাতে কী? আমি এখন রঙতুলিতে থাকব। ”
মিশুক মাথা নেড়ে বলল,
“আচ্ছা। ”
“তবে মাঝেমধ্যে এখানে এসেও থাকতে পারি। এই বাড়িটাও ভালো লাগছে। ”
মিশুক হাসলো। বলল,
“আমারও শাশুড়ী পরিবারের সঙ্গে থাকতে আপত্তি নেই। তারাও আমাকে যথেষ্ট স্নেহ করেন। ”
রঙ্গনা বাঁকা চোখে একবার মিশুক কে দেখলো।
বিছানায় দুজন দুইপাশে শুয়ে পড়লো। রঙ্গনা হঠাৎ বলল,
“আমার একটা কথা আছে। ”
মিশুক ওর দিকে না তাকিয়েই বলল,
“বলো। ”
“ব্যাপার টা আরও আগেই বলা উচিত ছিলো…
মিশুক থামিয়ে দিয়ে বলল,
“এক মিনিট! বাই এনি চান্স তুমি কী বলতে চাইছ, আমাকে মেনে নিতে পারবে না। তোমার মনে শুধু ওই লোক টাই আছে। কী যেন নাম…
রঙ্গনা স্থির চোখে কিছু সময় দেখে বলল,
“হ্যাঁ। ”
“ইশ! ভীষণ সস্তা ডায়লগ। আর এসব আমাকে বলেও লাভ নেই। ”
“কেন?”
“কেন মানে? আমি তো জানি কিভাবে মানিয়ে নিতে হয়।”
রঙ্গনা কিছু বলল না। চুপ করে রইলো। মিশুক একটু এগুতে গেলে রঙ্গনা শাসিয়ে বলল,
“একদম না। আমার সীমানায় আসবে না। ”
মিশুক হেসে ফেলল। ও সীমানা অতিক্রম করার আগেই নিচে হৈচৈ এর শব্দ হলো। দুজনেই দ্রুত নিচে নেমে এলো।
নিচে ভয়াবহ এক কান্ড ঘটে গেছে। স্বপ্নীলের আরও আগে আসার কথা ছিলো। ব্যস্ততার অজুহাতে আসে নি, সারপ্রাইজ দিবে শ্রাবণ্য কে। আজ এসে ফোন করেছে শ্রাবণ্য কে। শ্রাবণ্য কয়েক সিড়ি নামতেই স্বপ্নীল দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরলো। বেচারা এমন ভাবে জড়িয়ে ধরলো যে শ্রাবণ্যসহ পড়ে গেল। শব্দ পেয়ে বাড়ির সবাই ছুটে এসেছে। মিশুকের মা শ্রাবণ্য কে হাত ধরে ওঠাতে ওঠাতে বলল,
“আহারে! ব্যথা পাইছ?”
শ্রাবণ্য লজ্জায় তাকাতে পারলো না। স্বপ্নীল নিজেও নাকে ব্যথা পেয়েছে। কিন্তু চোরের মতো এক কোনে দাঁড়িয়ে আছে। মিশুক রঙ্গনাকে ফিসফিস করে বলল,
“দেখো, স্বপ্নীল কয়েকদিন বউকে না দেখে অস্থির হয়ে গেছে! তোমার ভাই, দেখলে মনে হয় না।”
রঙ্গনা মিশুক কে কিলার টাইপ লুক দিয়ে স্বপ্নীল কে বলল,
“তুই এই কাজ টাও ঠিক করে করতে পারলি না! জড়িয়ে ধরার বদলে কী লাফিয়ে ওর গায়ে ওঠার চেষ্টা করেছিস। ”
স্বপ্নীল মাথা আরও নিচু করে ফেলেছে। মিশুক বলল,
“স্বপ্নীল কে এই ব্যাপারে আমি বুঝিয়ে বলব। তুমি যাও। ”
মন্টি, রিন্টিও উঠে এসেছে। ওরা শ্রাবণ্যর ঘরে ছিলো। ওরা বলল,
“মনি আমরা তোমার ঘরে ঘুমাই। মামা যদি রাতে আবার লাফিয়ে পড়ে। ”
রঙ্গনা দুজন কে কঠিন এক ধমক দিতে যাবে তখনই মিশুক হেসে ফেলল।
***
রাফাত প্লেটে আরও ভাত নিলো। সঙ্গে ঝোলে মাখা এক টুকরো রুই মাছের পেটি। খেতে খেতে বলল,
“আকাশী, তুমি চাইলে ভাতের হোটেল দিতে পারো। চমৎকার রান্না কিন্তু তোমার। ”
আকাশী স্মিত হাসলো। ও এদিক ওদিক তাকিয়ে ঘরটা দেখছে। দুই রুমের ফ্ল্যাটে তেমন আসবাব নেই। কিছু বইপত্র, দেয়ালে হ্যাংগার ঝুলিয়ে জামাকাপড় রাখা। আর ছোট টেবিলে প্রয়োজনীয় জিনিস।
“আপনি এখানে একা থাকেন?”
“হ্যাঁ। ”
“ভয় লাগে না?”
“হ্যাঁ লাগে। রাতে দেখলাম ভীষণ মোটা একটা টিকটিকি লাফিয়ে গায়ে পড়লো। ভয়ে এক চিৎকার দিলাম। ”
আকাশী হেসে ফেলল। রাফাত বলল,
“তুমি রান্না কার থেকে শিখেছ?”
“কারোর থেকে না। করতে করতে শিখেছি। ”
রাফাত খাওয়া বন্ধ করে অবাক চোখে আকাশীকে দেখে বলল,
“স্ট্রেঞ্জ! এতো কঠিন বিষয় একা একা শিখেছ! তুমি তো ব্রিলিয়ান্ট। ”
আকাশীর বুকে একটা ধাক্কার মতো লাগলো। শুভর সঙ্গে থাকার সময় প্রায় ই একটা কথা শুনতো, রান্না এ আর এমন কী! ভাব করছ যেন হিল্লিদিল্লি জয় করে ফেলছ! আকাশীর ভীষণ মন খারাপ হতো। ও রাঁধতে পারে না প্রথমে সেটা শুনেও শুভ বলেছিল, এতো সহজ জিনিস টাও পারো না। বাড়িতে মোমের পুতুল হয়ে ছিলে! আকাশী দীর্ঘশ্বাস ফেলল। মানুষে মানুষে কত তফাৎ!
চলবে….
#কুসুম_কাঁটা
#পর্ব-২৭
শুভ দাঁড়িয়ে আছে আকাশীর কলেজের সামনে। এর আগেও দুদিন দাঁড়িয়ে ছিলো। আকাশীর দেখা পায় না। যেখানেই থাকুক, পড়াশোনা নিশ্চয়ই ছেড়ে দেয় নি। পড়াশোনা নিয়ে হঠাৎ ভীষণ সিরিয়াস হয়ে উঠেছিল। গত বছরও খুব পড়াশোনা করেছে। রান্না, বান্না, পার্লারের কাজ সব শেষ করে পড়তে বসতো। মোবাইলের লাইট জ্বালিয়ে রাতের অধিকাংশ সময় পড়েছে। ফজরের নামাজের পর ঘন্টা দুয়েক ঘুমিয়ে আবার কাজে ছুটেছে। শুভ ভীষণ অবাক হতো, প্রকাশ করতো না। একটা মানুষ এতটা কাজের উদ্দীপনা কোথা থেকে পায়!
আকাশীকে দেখা গেল। আগের থেকে রোগা হলেও গায়ের রঙ উজ্জ্বল হয়েছে। মুখের ত্বক চকচকেও। শুভ’র বুকের ভেতর একটু চিনচিনে ব্যথা হলো। আকাশী তাহলে ভালোই আছে৷ না ভীষণ ভালো আছে।
শুভ নাম ধরে ডাকলো।
“আকাশী….!”
আকাশী থমকে দাঁড়ালো। পরিচিত কন্ঠস্বর। শুভ সামনে এসে দাঁড়ালো। শক্ত চোখ, মুখের পরিবর্তে অন্য এক মানুষ কে দেখলো আকাশী। নির্লিপ্ত গলায় জিজ্ঞেস করলো,
“এখানে কেন এসেছ?”
“এতটা স্বার্থপর সত্যিই কী তুমি আকাশী? আমার বিশ্বাস হয় না। ”
“না হবার তো কিছু নেই। আমি স্বার্থপর ই। বাবা, মা’কে নাহলে কেন ছেড়েছি। ”
শুভর গলার স্বর খুবই মিঠা। বলল,
“আমাকে ভালোবেসে ছেড়েছিলে। আমি জানি সেটা। কিন্তু তাই বলে এতো অভিমান! কতগুলো মাস তোমার আমার দেখা হয় না।”
“দেখার দরকার আছে শুভ? ”
“কেন? সব কী শেষ হয়ে গেছে? ”
রাস্তায় দাঁড়িয়ে মৃদুস্বরে কথাগুলো হচ্ছিলো। আকাশী আশেপাশে দেখলো। কেউ কেউ ও’কে চিনে এখানে। এসব প্লেসে সিন ক্রিয়েট করার আসলে কোনো মানে হয় না। আকাশী শুভ কে বলল,
“তোমার সঙ্গে আমার আর কথা নেই। আমি আমার মতো গুছিয়ে নিচ্ছি। তুমি ডিভোর্স পেপার পাঠিয়ে দিও। সাইন করে দেব। ”
শুভ যতটুকু নরম আচরণ দেখাচ্ছে সেটুকু স্রেফ নাটক ছাড়া আর কিছুই না। জেরিন নামের কাঁটা টা ওর জীবনে না আসলে ও বুঝতেই পারতো না আকাশী ওর জীবনে খাটি সোনা ছিলো।
শুভ কঠিন গলায় বলল,
“বাহ! ডিভোর্স পর্যন্ত চলে গেছ? তা হঠাৎ জীবনে কী এমন সোনার হরিন পেলে যে আমাকে ছুড়ে ফেলতে চাইছ!”
আকাশী স্বাভাবিক গলায় বলল,
“সোনার হরিন তো তুমি পেয়েছ শুভ। সেই সোনার হরিনের নাম তো জেরিন তাই না?”
শুভ হকচকিয়ে গেল। বলল,
“আমি সব বুঝিয়ে বলছি তোমাকে…. যা শুনেছ সেটা পুরোটা সত্যি না। ”
আকাশী রুক্ষ গলায় বলল,
“আমি কিছু শুনতে চাই না৷ যদি চাইতাম তাহলে তোমার সামনে যেতাম। তোমার সঙ্গে সেদিন ই সব কিছু শেষ হয়ে গেছে যেদিন ঘর ছেড়েছি৷ রোজ রোজ ঘর ছাড়ার মেয়ে যে আমি নই সেটা তোমার বোঝা উচিত অন্তত।”
আকাশীকে শুভ’র বিয়ের খবর শ্রাবণ্য জানিয়েছে টেক্সট করে। ফোনে কিংবা সামনাসামনি বলতে ওর অস্বস্তি হচ্ছিলো বোধহয়। আশ্চর্য ব্যাপার হলো আকাশীর তাতে দু:খবোধ হবার বদলে নির্ভার লেগেছে। নিজেকে মুক্ত পাখির মতো মনে হয়েছে। খাঁচা ছাড়া পাখিরা যেমন হয় তেমন।
শুভ নরম গলায় বলল,
“আমি বিপদে পড়েছি আকাশী। তুমি প্লিজ আমার কথা শোনো। ”
“আমি কিছু শুনতে চাই না। তুমি জেনে দু:খ পেতে পারো, তবুও বলি বাবার সঙ্গে আমার সম্পর্ক এখন সহজ। তোমাকে ছেড়েছি বলেই সে আমাকে আরেকটা সুযোগ দেবার কথা ভেবেছে। তোমার ধারণা ঠিক। আমি আসলেই স্বার্থপর। আমি সেই সুযোগ গ্রহন করেছি।”
শুভ বিস্মিত গলায় বলল,
“তার মানে তোমার জীবনে আমার আর কোনো গুরুত্ব নেই। ”
“হ্যাঁ নেই। তোমারও তো নেই। তুমিও তো তোমার মায়ের পছন্দের পাত্রীকে বেছে নিয়েছ। আমি কিন্তু কোনো ঝামেলা করি নি। পুলিশ, কানুন সব তো আমার পক্ষে থাকবে তাই না!”
শুভ স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। জেরিন নামের যে মেয়েটা ওর গলার কাঁটা হয়ে আছে সেই মেয়েটার আসল পরিচয় হলো সে ডিজিটাল প্রস্টিটিউট। প্রায় ই বসের সাথে রিসোর্টে যায়। বিনিময়ে দামী গিফট, গয়না টাকা পয়সা হাতিয়ে নেয়। এই নিয়ে বিন্দুমাত্র লজ্জা নেই। নির্লজ্জের মতো বলে, আরেকজনের সঙ্গে শুইলে কী সমস্যা? তোমার কাছে যখন আসব তখন তো গোসল করেই আসব। গোসল করলেই তো পরিষ্কার। এই কথা শোনার পর শুভর ভীষণ বমি পেল। ছি:! এমন মেয়েও হয়। এই মেয়ের হাত থেকে নিস্তার পেতে হলে শুভ কে পাঁচ লাখ টাকা দিতে হবে। কোথায় পাবে এতো টাকা ও!
***
রঙ্গনা আর মিশুকের রিসিপশনের অনুষ্ঠানের জন্য কার্ড ছাপানো হলো। স্বপ্নীল অফিসে অনেকগুলো কার্ড নিয়ে এসেছে। সবাই কে দিলো। কেউই প্রশ্ন করলো না৷ শাফি ভাই শেয়ালের মতো হেসে বলল(শেয়ালের মতো হাসি স্বপ্নীলের মনে হয়। ও শেয়াল দেখে নি তবুও মনে হয়।)
“তোমার বোনের বিয়েতে না ঝামেলা হইছিল?”
স্বপ্নীল রাগী গলায় বলল,
“তাতে আপনার কী সমস্যা? ”
শাফি ভাই স্বপ্নীলের রাগ দেখে মিইয়ে গেল। বলল,
“আরে মিয়া সমস্যা হবে কেন? এমনিই জিজ্ঞেস করি। ভাই ব্রাদার রা জিজ্ঞেস করতে পারে না!”
“না পারে না। এগুলো অভদ্রতা। আমি কখনো অভদ্র আচরণ করি? তৃষাকে নিয়ে কখনো কিছু বলেছি!”
এক অফিস লোকের সামনে শাফি ভাই জবাব না দিয়ে পালালো যেন। স্বপ্নীল উঠে গিয়ে এক গ্লাস পানি খেল। নিজের সাহসে নিজেই স্তম্ভিত। দিতি আপা হেসে স্বপ্নীল কে বলল,
“ওয়েলডান ম্যান। তোমাকে ট্রেনিং যে দিচ্ছে তার জন্য আমার তরফ থেকে কফি ট্রিট আছে।”
স্বপ্নীল হাসলো। বিশ্বজয়ী হাসি।
***
শ্রাবণ্যর আগের সেমিস্টারের সিজি ভালো এসেছে। অনেক ভালো। কেউ কেউ বলছে লাস্ট পর্যন্ত এমন ধরে রাখতে পারলে ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডির জন্য রেফার করবে। আফরিন বলল,
“কিরে তুই বিদেশ যাবি তো। ”
শ্রাবণ্য জবাব দিতে পারে না। দেশের বাইরে পড়াশোনা, চাকরির স্বপ্ন সেই কবে থেকে। তবুও খুশি হতে পারে না। স্বপ্নীলের মুখ টা মানসপটে ভেসে ওঠে। স্বপ্নীল দিন দিন ওর উপর নির্ভরশীল হয়ে উঠছে। কীভাবে এই মায়া কাটিয়ে দূরে যাবে।
ইউনিভার্সিটি থেকে বেরিয়ে শ্রাবণ্য বাসার দিকে না গিয়ে স্বপ্নীলের অফিসে গেল। এর আগে গেট পর্যন্ত গিয়েছে শুধু। আজ একদম ফ্লোরে চলে গেল। যেতে অসুবিধে হয় নি। স্বপ্নীলের থেকে শুনতে শুনতে অলিগলি সব মুখস্থ।
স্বপ্নীল শ্রাবণ্যকে দেখে এতো খুশি হলো! চোখ, মুখ আনন্দে ঝলমল করছিল। অন্যরাও সবাই ও’কে ভালোভাবে ওয়েলকাম করলো। দিতি আপা, রোজ আপু উঠে এসে বলল,
“আজ ই তোমার কথা হচ্ছিলো। আজ ই তুমি এসে গেলে। ”
শ্রাবণ্যরও ভালো লাগলো। ঘন্টা দুয়েক সেখানে থেকে শ্রাবণ্য চলে এলো। স্বপ্নীল রিকশায় উঠিয়ে দিয়েছে। সেই বিকেলে শ্রাবণ্য বুঝলো ওর জীবনে স্বপ্নীল আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে গেছে। শ্রাবণ্যর স্বপ্নের পুরুষ মোটেও এমন ছিলো না। সিনেমার নায়ক দের মতো ছিলো। তারা কেউ আর স্বপ্নে আসে না। স্বপ্নে আসে বোকাসোকা ছেলেটা। যে জড়িয়ে ধরতে পর্যন্ত পারেনা ভালো করে।
***
“এই শাড়িটা তোমাকে ভালো লাগছে না রঙ্গনা। ”
রঙ্গনা বাঁকা চোখে মিশুক কে দেখলো। শপিংমলে এসেও আঠার মতো লেগে আছে। রঙ্গনা শাড়ি দেখতে দেখতে বলল,
“আমি কী কিছু জিজ্ঞেস করেছি তোমাকে?”
“না জিজ্ঞেস করলেও বলা উচিত। তাই বললাম।”
রঙ্গনা সেই শাড়িটা নিলো। বলল,
“তুমি মনে হয় কিপটে। রাফাত কিন্তু কিপটে ছিলো না। ও আমাকে বলতো, যা ভালো লাগে নিয়ে নাও। তোমাকে সব কিছুতে ভালো লাগে।”
মিশুকের কথাটা পছন্দ হলো না। বলল,
“আমি তো রাফাত না। ”
এরপরের পুরো সময়টা মিশুক চুপ করে রইলো। রঙ্গনারও মনে হলো একটু বাড়াবাড়ি হয়ে গেছে৷ ও তো রসিকতা করতে চেয়েছিল।
ঘন্টাখানেক কেনাকাটার পর ওরা কফিশপে গেল। মিশুক সেখানেও নিশ্চুপ। রঙ্গনা বলল,
“তোমার ম্যুড ঠিক আছে? ”
মিশুকের চোখের দৃষ্টি কোল্ড কফির গ্লাসে। বলল,
“আমি তো আর আকাশ না যে ম্যুড চেঞ্জ হবে। ”
রঙ্গনা বুঝলো ভাবওয়ালা ভদ্রলোক এবার সত্যিই রেগে গেছে।
“আচ্ছা ঠিক আছে আমি আমার ভুল মেনে নিচ্ছি। আই এম সরি।”
মিশুক তাকালো। রেগে থাকার অভিনয় আর হলো না। মুচকি হেসে বলল,
“আমি ওই শাড়িটা নিতে বারন করেছি একটা কারনে। তুমি নিজেই তো রঙধনু। সব রঙ তো তোমায় মানাবে না। ”
রঙ্গনা নিজেও হাসলো। এখন যা হচ্ছে একটু তাড়াতাড়িই হচ্ছে, মনে হচ্ছে ভালোই হচ্ছে।
***
আকাশীর মন মেজাজ বিক্ষিপ্ত। রুমে এসে শুয়ে থেকেছে৷ কিছু খায়ও নি। আফরিন এসে খোঁজ নিয়েছে। আবার শরীর খারাপ হলো কিনা। আকাশীর এই সময় টা ভালো যাচ্ছে। সব ভালো মানুষ দের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। আফরিনও সেই দলের একজন।
বিকেলে রাফাত ফোন করলো। আকাশী ফোন ধরতেই বলল,
“তুমি ব্যস্ত?”
“না ভাইয়া।”
“আমি একটা ব্যাপার ভেবেছি। তোমার বিজনেসে পার্টনার হবো। ”
আকাশী বুঝতে না পেরে বলল,
“বুঝতে পারছি না ভাইয়া।”
“আরে রঙ্গনা সব জিনিসপত্র পাঠিয়েছে। শাড়ি, লেহেঙ্গা, টপ সব। এগুলো কী করব! ও বলল বেঁচে দিতে।”
আকাশী হেসে ফেলল। রাফাত বলল,
“ভাবছি তোমার সঙ্গে ডিসকাস করব৷ তুমি তো ব্যবসায়ী মানুষ। ”
আকাশী হাসলো। রাফাতের কথাগুলো শুনতে ভালো লাগছে। রাফাত বলল,
“তুমি খুব বেশী ব্যস্ত না হলে ধানমন্ডিতে চলে আসো। বিজনেস নিয়ে একটা প্ল্যান করলাম, তোমাকে ট্রিটও দিলাম। তুমি আমাকে রুই মাছের চমৎকার প্রিপারেশন টা খাইয়েছিলে।”
“ট্রিট লাগবে না। আমি এমনিই আসব।”
“আচ্ছা আসো। আমি খাব, তুমি নাহয় বসে বসে দেখো। ”
আকাশী হাসলো।
রাফাত ফোন রাখলো৷ ওর আসলে কথা বলার এখন তেমন কেউ নেই। বেকার মানুষ দের তেমন কেউ দাম দেয় না। এই ব্যাপার টা টের পাচ্ছে। আকাশী ভেরি গুড লিসেনার। কথা কম বললেও কথা বলে আরাম পাওয়া যায়।
চলবে….