কুসুম কাঁটা পর্ব-১৮+১৯

0
407

#কুসুম_কাঁটা
#পর্ব-১৮
বাড়িতে বিয়ের আমেজ শুরু হয়ে গেছে এক্ষুনি। দাদু নিজেও ভীষণ খুশি। তার ঘাড়ত্যাড়া নাতনিটি এবার সত্যিই বিয়ের পিড়িতে বসতে প্রস্তুত। দাদু এমনিতে গম্ভীর হলেও নাতি নাতনিদের ভীষণ ভালোবাসেন। তিন জন তিন স্বভাবের হলেও সবাই ই তার হৃদয়ের কাছের। স্বপ্নীল কে সে যতই গাধা, গরু বলুক মনে মনে চান এই ছেলেটা একদিন আদুরে খোলস টা ছেড়ে অন্য আর দশ টা ছেলের মতোই হোক। তুলির বিদেশে যাবার ব্যবস্থা কখনোই পাকাপোক্ত না হোক। একটা না একটা ঝামেলায় এভাবেই আটকে যাক। অন্তত তিনি যে কদিন বেঁচে থাকেন সেই কদিন থাকুক।

এমন ভরা সংসারে, সবার মধ্যে মরে যেতে চান তিনি।

রঙ্গনা বিয়ের প্ল্যান করছে নিজেই। নিজের রুমের দেয়ালের ডিজাইনগুলোও যত্ন করে করছে। পার্লারে এপোয়েনমেন্ট নিয়ে রাখছে আগেভাগে। শাড়ী, জুয়েলারি সমস্ত ডিজাইন দেখছে। এই নিয়ে হৈচৈ লেগে আছে বাড়িতে একের পর এক। ওর দুজন বন্ধু আসছে। শার্ট, প্যান্ট পরা ছোট চুলের মেয়ে হলেও মেয়েদুটো ভালো। বসে বসে হাসিমুখে দাদুর লেকচার শুনেছে। দাদুর এখন আর মেয়ে দুটোকে খারাপ লাগছে না। ওরাও বেশ মাতিয়ে রেখেছে।

সেদিন মিশুকের সঙ্গে দেখা হলো। দাদু সরু চোখে দেখলেন। ভালো করে কথাও বললেন না। এগ্রিমেন্ট শেষ হলে এই ব্যটাকে বাড়ি থেকে বিদায় দিবেন। ফাজিল ব্যটা তার নাতনিকে রিজেক্ট করার দু:সাহস করেছে। শেষ মাসে ওকে কঠিন শিক্ষা দিতে হবে। বেশী কিছু না, মন্টি রিন্টিকে লেলিয়ে দিলেই হবে। এই বাচ্চাদুটো হয়েছে বাপের মতো বজ্জাত। এরা লোকজন ভালো শায়েস্তা করতে পারে।

***
আকাশী এই প্রথম রঙতুলিতে এলো বড় হবার পর। ছোটবেলায় একবার এসেছিল। ভাসা ভাসা স্মৃতি মনে আসছে। গেট দিয়ে ঢুকতেই কুকুর টা দৌড়ে এলো। কুকুর টা রঙতুলিতে এসেছে কয়েকদিন হয়েছে। রঙ্গনা রাস্তা থেকে তুলে এনেছে। কারা যেন গরম পানি গায়ে ঢেলে দিয়েছিল। চিকিৎসা করিয়ে বাড়িতে এনে রেখেছে। মালেক মামা দেখেশুনে রাখছেন। রঙ্গনা অবশ্য নিজেই কুকুর টার জন্য আলাদা করে খাবার রান্না করে।

মালেক মামা এসে বললেন,

“আপনি কাকে খুঁজেন?”

আকাশী স্মিত হেসে বলল,

“আমি শ্রাবণ্যর আপু। ”

মালেক মামা আকাশীকে ভেতরে নিয়ে যায়। শ্রাবণ্য সামনেই ছিলো। তুলি মা’কে ডেকে নিয়ে এলো। শিলা এসে আকাশীকে দেখলেন। বললেন,

“কেমন আছ তুমি?”

আকাশী স্মিত হেসে বললেন,

“আমি ভালো। আপনি কেমন আছেন?”

শিলা আকাশীকে দেখলেন। সুন্দর মুখশ্রী তবে অযত্ন, মানসিক টেনশনে মুখের মলিনতা হারিয়ে গেছে। কী সুন্দর বুদ্ধিদীপ্ত চোখ। আহারে মেয়েটা! না বুঝে একটা ভুল করে কত মাশুল ই না গুনছে। শিলা কী ভেবে যেন আকাশীকে জড়িয়ে ধরলেন। আকাশী অপ্রস্তুত হলো। তবুও এই আদরে ওর চোখে পানি এসে গেল। শ্রাবণ্যর ভালো লাগলো।

আকাশীকে বাড়ির সবাই পছন্দ করলো। দাদুও পছন্দ করলেন। তিনি বললেন,

“শুনেছি তুমি নাকি তোমার বাবার অফার প্রত্যাখ্যান করেছ?”

আকাশী জবাব দিলো না। দাদু বললেন,

“এতো ছোট মেয়ে অথচ তোমার সাহসে আমি মুগ্ধ হয়েছি। ”

আকাশী হাসলো। বহুদিন পর কিছু মানুষ কে পেয়ে মনে হলো এরা দূরের কেউ না। এরা ওরই আপন মানুষজন।

দাদু আরও কিছুক্ষন লেকচার দিলেন। তবে কিছু কথা আকাশীর ভালো লাগলো।

“শোনো মেয়ে, মানুষ ছোট থেকে বড় হয়। একদিনে কেউ তালগাছে উঠতে পারে না। সময় লাগে। সামনের দিনে পরিশ্রম করে বড় হও। কারোর উপর নির্ভরশীল হবে না। আর যেখানে সম্মান না পেয়ে ফিরে এসেছ সেখানে ভুলেও ফিরে যাবে না। আরেকবার কারও হাত ধরলে দেখেশুনে বুঝে ধরবে। ”

***
শুভ বাড়িতে আসার পর মা নতুন চাল চালতে শুরু করেছেন। বড় বাড়ির মেয়েকে ভাগিয়ে আনায় বেশ খুশি ছিলেন। আজ নাহয় কাল মেনেই নিবে। না মেনে নিয়ে যাবে কই। কিন্তু দেখলেন সে আশায় গুড়ে বালি। তারপর শুভ কে কানপড়া দিলেন যেন একটা বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে নেয়। নাতির মুখ দেখলে আকাশীর বাপ, মা গলে জল হবে। কিন্তু আকাশী বড় শক্ত মেয়ে। তার সাফ কথা! আগে শুভ কাজে ভালো করে থিতু হোক। নিজেদের চলতেই হিমশিম খেতে হয় সেখানে আরেকটা প্রাণ পৃথিবীতে এনে কষ্ট দেবার কোনো মানে হয় না।

এতো অভাব, টানাটানিতে থেকেও বাপের কাছে হাত পাতে নি। বাপও ফিরে তাকায় নি। এতো চক্ষুলজ্জা থাকলে দুনিয়ায় থাকা যায় না।

আকাশীর এখন চলে যাওয়ায় শুভর মা ভীষণ খুশি হলেন। তার মাথায় অন্যকিছু চলছে। তার চাচাতো বোন জেসমিনের একটা মেয়ে আছে। আগে একবার বিয়ে হইছিল, জামাইর সঙ্গে বনিবনা হয় নি তাই ছাড়াছাড়ি হইছে। সেখান থেকে তিনলাখ টাকা পাইছে। টাকাটা পোস্ট অফিসে রাখছে ফিক্সড করে। মাসে সাতাশ’শ টাকা পায় সেখান থেকে। তাছাড়া একটা প্লাস্টিক কোম্পানিতে চাকরি করে। উপরি ইনকাম সহ আঠারো হাজার বেতন।
সব মিলিয়ে সোনার ডিম পাড়া হাঁস। এই হাঁস ঘরে ওঠানোর প্ল্যান চলতেছে। যেভাবে হোক এই মেয়েরে ঘরে ওঠাতে হবে।

***
রঙ্গনার বিয়ের কার্ড এখন মিশুকের হাতে। কার্ড দেখে ভ্রু কুঞ্চিত হলো কিছুটা। এরা এরমধ্যে কার্ড পর্যন্ত ছাপিয়ে ফেলেছে। এদিকে সেটা দেখে ওর বুকের মধ্যে চিনচিনে একটা ব্যথা অনুভব হচ্ছে। মনে হচ্ছে এক বুক জ্বালা নিয়েই ও’কে রঙ্গনার বিয়ে খেতে হবে। পালিয়ে থাকারও উপায় নেই। ওরা অন্যকিছু ভাবতে পারে।

চলবে……

#কুসুম_কাঁটা
#পর্ব-১৯
রঙতুলিতে আসার পর আকাশীর ভাগ্য খুলে গেছে বলা যায়। রঙ্গনা সাত টা শাড়ি ডিজাইনের অর্ডার দিয়েছে। হানিমুনে সাত রঙের শাড়ি পরবে। সেই সঙ্গে সাত টা পাঞ্জাবী। আকাশীর জন্য ব্যাপার টা ভীষণ চাপ ও আতঙ্কের হয়ে গেল। রঙ্গনা ব্যাপার টাকে ভীষণ সিরিয়াসলি নিয়ে নিলো। ও পার্লারের কাজ জানে শুনে বাড়ির সবাই মেহেদীর জন্য বুকড করে রাখলো। তুলি সহ রঙ্গনার অন্যান্য বন্ধুরা।

রঙ্গনা শাড়ির জন্য ও’কে এডভান্স টাকাও দিয়ে দিয়েছে। সবকিছু এতো তাড়াতাড়ি হচ্ছে যে ও নিজেও অনেক কিছু বুঝে উঠতে পারছে না।

শ্রাবণ্য আকাশীকে বলল,

“তুই এখানে থাকবি এই ক’দিন। তোর ভালো লাগবে। মন খারাপ করে থাকিস। ”

আকাশী রাজী হলো না। বলল,

“নারে। আমি মাঝেমধ্যে আসব। ”

শ্রাবণ্য বলে,

“মা তোকে কিছু বলেছে?”

আকাশী বুঝতে না পেরে বলল,

“কোন ব্যাপারে? ”

শ্রাবণ্য বুঝলো যে রেহানা তার ভয়ংকর কথাগুলো আকাশীকে বলেন নি। শ্রাবণ্য এড়িয়ে যায়। আকাশী তবুও জোর করে। শ্রাবণ্য বলতে চায় না। মা যে ভয়ংকর কথাগুলো আকাশীকে নিয়ে বলেছে সেগুলো কোনো মা মেয়েকে নিয়ে বলে না। ওদের মা ব্যতিক্রম। ব্যাপার টা এমন নয় যে তিনি খারাপ। ঘরে যারা কাজ করেন তাদের কে না দিয়ে কোনো ভালো জিনিস খান না। কারও অসুখ, বিসুখ কিংবা সংসারে টানাটানি শুনলে টাকা পয়সা ধার দেন। তার রুক্ষতা, নির্মম আচরণ টের পায় শুধু ওরা। আকাশী এই বাড়িতে এসেছে এই খবর টা শ্রাবণ্য বাবাকে বলেছিল। ওর উদ্দেশ্য ছিলো বাবার সঙ্গে বোনের মিল করিয়ে দেয়া। আকাশী মন ছোট করে থাকে। ও আফরিনের কাছেও শুনেছে যে সারাক্ষন মন খারাপ করে থাকে। মাঝেমধ্যে খাবার টা টেবিলে ডাকা পড়ে থাকে, আকাশী না খেয়ে ঘুমায়। মানুষের সবচেয়ে বড় অসুখ হচ্ছে মন খারাপের অসুখ। এটা এমন অসুখ যে না সাড়া অবধি সবকিছুতেই বিতৃষ্ণা লাগে।

রেহানা যখনই জানলো আকাশী এই বাড়িতে এসেছে তখনই শ্রাবণ্যকে ফোন করে বলল,

“আকাশীকে ডেকে নিয়ে মাথায় ওঠাচ্ছিস না। দেখবি এখন কী হয়! তোর সংসার ধ্বংস করবে। দেখ তোর স্বামীকে না আবার ওর মনে ধরে। ”

শ্রাবণ্য হতভম্ব গলায় বলল,

“কিসব আবোল তাবোল বলছ মা। আপু কী তোমার নিজের মেয়ে না? ”

“এইজন্যই তো বললাম যে কী বিষ পেটে ধরছি তা কেবল আমিই জানি৷ তুই তো মহান সাজার চেষ্টা করছিস। এরপর কাঁদতে কাঁদতে চোখে ঘা হবে। ”

শ্রাবণ্য রাগী গলায় বলল, ফোন রাখো মা। এরপর থেকে মেজাজ ঠান্ডা থাকলে ফোন করবে। নাহয় করবে না।

আকাশী আবারও জিজ্ঞেস করলো,

“কী বলেছে মা?”

শ্রাবণ্য হেসে বলে, মায়ের কথা বাদ দে। জানিস ই তো মা ভিনগ্রহের মানুষ। বাবা ছাড়া সবাইকে তার অসহ্য লাগে।

আকাশী আর কথা বাড়ায় না। স্মিত হাসে। বলে,

“এই বাড়ির মানুষজন ভালো। তুই মানিয়ে নিতে পারছিস তো?”

“কেন আমি কী খারাপ? ”

আকাশী হাসলো। বলল,

“নাহ! তোর অনেক বুদ্ধি। আমার মতো বোকা না তুই। ”

শ্রাবণ্য হাসে। আকাশীকে পৌছে দেবার জন্য শীলা স্বপ্নীল কে যেতে বলে। শ্রাবণ্য বারন করে। নিজের আচরণে বিরক্ত হয়। মায়ের কথার প্রভাব পড়লো নাকি৷ খারাপ জিনিসের প্রভাব বেশী পড়ে।

***
স্বপ্নীল প্রতিদিন এসে সিদ্ধান্ত নেয় আজকেই ওর অফিসে শেষ দিন। এরপর আর অফিসে যাবে না। ওই অফিসে একদল বজ্জাত লোক থাকে। যারা ও’কে মুরগী বলে ডাকে। যে গ্রুপে কাজ করে সেই গ্রুপের টিম লিডার শাফি ভাই৷ শাফি সবার সাথে ভালো ব্যবহার করে। তৃষা নামে একটা মিথ্যুক মেয়ে আছে, তার সঙ্গে কথা বলার সময় মুখ দিয়ে যেন মধু বেরোয়। আর ওর সঙ্গে কথা বলে ধমক দিয়ে। তৃষা নামে যে মেয়েটা আছে স্বপ্নীল কে উঠতে বসতে অপমান করে। সামান্য জিনিস নিয়েও অনেক কিছু শুনিয়ে দেয়। স্বপ্নীল চুপচাপ হজম করছে সবকিছু। দুটো মাস প্রায় হয়ে গেছে। আর একমাস বাকী।

সেদিন সফটওয়্যার আপডেট নিয়ে মিটিং হচ্ছিলো। সব কাজ গুছিয়ে ও করলো অথচ ক্রেডিট নিলো তৃষা। শাফি ভাই ওর দিকে তাকিয়ে দাঁত, মুখ খিচিয়ে বলল,

“খাওয়া, আর হাগা ছাড়া তুমি আর কী পারো? এইখানে যে তুমি কোনোভাবে পার্মানেন্ট হইতে পারবা না সেইটা কী বুঝতে পারছ!”

স্বপ্নীল তাকিয়ে রইলো ফ্যালফ্যাল করে খানিকক্ষণ। বাইরে তখন মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। ও ভিজতে ভিজতে বাসায় চলে এলো। মা, ছোটপা, বুবুরা শপিংমলে গেছে। বাসায় শ্রাবণ্য আর দাদী ছিলো। দাদী স্বপ্নীল কে ভেজা দেখে অস্থির হয়ে মাথা মুছিয়ে দিতে গেলেন। ও সরিয়ে দিয়ে চলে গেল। এমন কখনো করে না। শ্রাবণ্য দাদীকে বলল,

“দাদী বম দেখি। ”

শ্রাবণ্য ঘরে গেল। স্বপ্নীল ওয়াশরুমে। শাওয়ারের শব্দ টের পাওয়া যাচ্ছে। এতটা ভেজার পরও শাওয়ার ছেড়ে ভিজছে! এরপর তো জ্বর হবে৷ এমনিতেই ম মাস্বপ্নীলের ঠান্ডার ধাত আছে৷

শ্রাবণ্য ডাকলো,

“স্বপ্নীল শুনছেন? বেরিয়ে আসুন। কী হয়েছে আপনার? ”

স্বপ্নীল বেরিয়ে এলো দশ মিনিট পর। চুল ভালো করে মুছে বের হয় নি। শ্রাবণ্য বলল,

“এতো ভিজে এসেছেন তার উপর এত সময় ধরে শাওয়ার নিলেন। ”

স্বপ্নীল উত্তর দিলো না। শ্রাবণ্য আবারও জিজ্ঞেস করলো,

“চা খাবেন? ”

“না।”

“কিছু হয়েছে মন খারাপ? ”

স্বপ্নীল শ্রাবণ্যর দিকে তাকালো। ওর চোখ লাল। ভাঙা গলায় বলল,

“শ্রাবণ্য, আমি কী সত্যিই লুজার?”

শ্রাবণ্য তাকিয়ে রইলো। এতবড় একটা ছেলে এভাবে দুহাতে মুখ ঢেকে কাঁদছে। ও স্বপ্নীলের কাঁধে হাত রাখলো। স্বপ্নীল কাঁদছে, বাচ্চাদের মতো। শ্রাবণ্যর ভীষণ অসহায় লাগলো। মা কিংবা বুবু কেউ একজন থাকলে ভালো হতো। স্বপ্নীল কে সামলাতে পারতো। শ্রাবণ্য দুর্বল গলায় বলল,

“কাঁদবেন না…. প্লিজ কাঁদবেন না। ”

স্বপ্নীল শ্রাবণ্য কে জড়িয়ে ধরলো। শ্রাবণ্যর মনে হয়তো কোনো অনুভূতি তৈরী হয় নি, কিংবা অজান্তেই তৈরী হয়েছে যেটা ও বুঝতে পারছে। স্বপ্নীলের আলিঙ্গনে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।

***
রাফাত ছেলে হিসেবে সাধারণ পর্যায়ের। সাধারণেরও সর্বনিম্ন স্তরের। ওর এর আগে তিনজন গার্লফ্রেন্ড ছিলো তারা কেউই স্থায়ী হয় নি ওর স্বভাবের কারনে। যেমন ওর ইনকাম ছয় ডিজিটের। তবুও সারাবছর ঘুরিয়ে ফিরিয়ে তিনটা শার্ট, প্যান্ট আর চারটা টিশার্টে চালিয়ে নেয়। একটা জুতাই সব পোশাকের সঙ্গে পরে। এমন না যে ব্যাংকে প্রচুর টাকা জমাচ্ছে। টাকা পয়সা বিভিন্ন জন কে দিয়ে বেড়াচ্ছে। রাস্তায় কোনো ফকির কে খালি হাতে ফেরায় না। ওর মা ছাড়াও অন্যান্য মানুষজনকেও টাকা পয়সা দিয়ে রাখছে। আত্মীয়দের কারো বিপদ শুনলে আগ বাড়িয়ে টাকা দিয়ে আসে। তাদের আসলেই দরকার কিনা সেটার হিসাব করে না।

প্রথম গার্লফ্রেন্ড ও’কে ছেড়ে গেছে কারন রিলেশনশিপে ও নাকি পজেসিভ ছিলো না। দিনে আট, নয়বার ফোন করা উচিত কিন্তু সেটা ও করে না।

দ্বিতীয়জন একটু বেশী সাজুগুজু করতো। সে চাইতো ও একেক দেশ থেকে ব্র‍্যান্ডেড মেকাপ প্রোডাক্ট আনুক। ডেটে আসলে তার প্রধান কাজ ছিলো একটু পর পর কম্প্যাক্ট লাগানো। ব্যাপার টা রাফাতের খুব ই বিরক্ত লাগতো। আরে আল্লাহ যে চেহারা দিয়েছেন সেটা নিয়ে এতো অসন্তুষ্টি কিসের।

তিন নম্বর জন অবশ্য গার্লফ্রেন্ড না। মা, খালারা মিলে বিয়ে ঠিক করেছিল। মেয়েটা সাউথ ইস্টে পড়ে। রেস্টুরেন্টে ইচ্ছেমতো খাবার নষ্ট করতো। রাফাতের সেটা ভালো লাগে নি। একদিন বলল, যতটুকু খেতে পারবে ততটুকু খাবার নিবে। মেয়েটা মাইন্ড করলো। মা, খালারা খুব রাগ করলেন। ওর মা রেগে গিয়ে অনেক কিছুর বাচ্চা বলেও গালি দিলো।

মেয়েটার সঙ্গে তারপরও কথাবার্তা এগোলো। মেয়েটা একদিন জানালো ওর ফোন টা পুরোনো হয়ে গেছে। এটার মানে হলো তাকে একটা ফোন কিনে দেয়া উচিত। কিন্তু রাফাত দেখলো ওর ফোন টা ঠিক ই আছে। ওর নিজের আগের ফোন টাই ছয় বছর ব্যবহার করেছে।

একদিন সেই মেয়েটাকে নিয়ে শপিংমলে গেল। সাড়ে তিন ঘন্টা লাগিয়ে জুতা, জামা, জুয়েলারি কিনে বিল দেবার সময় রাফাতের দিকে তাকালো। রাফাত ভ্রু নাচিয়ে বলল,

“আমার দিকে কেন তাকাচ্ছ? তুমি বিল পে করো। ”

বিয়েটা ভেঙে গেল। রাফাত কে ফকিরের বাচ্চা বলেও মেসেজ করেছিল মেয়েটা। তার কিছুদিন পর রাফাত শীতে গরীব দু:খীদের কম্বল দিচ্ছিল। সেটা সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করার পর কমেন্টে লিখলো, ওদের একজন কে বিয়ে করে রাস্তায় থাকুন। বন্যরা বনে সুন্দর, রাফাতরা রাস্তাঘাটে।

রঙ্গনাকে বিয়ে করতে চাওয়ার একমাত্র কারণ, স্বাধীন, আত্মপ্রত্যয়ী দৃঢ় স্বভাবের কারনে। প্রথম যেদিন রেস্টুরেন্টে দেখা হলো সেদিন তিন ঘন্টা বিরক্তিহীন আলাপে শাড়ি, গয়না, মেকাপের আলাপ হয় নি। একবারও রঙ্গনা আয়নায় নিজেকে দেখে নি। খাবার পর বাকী খাবার টা ফয়েল পেপারে মুড়ে বিড়াল, কুকুর দের জন্য।

রাফাত অমন সংসারী টাইপের ছেলে না, দেশ বিদেশ ঘুরে বেড়াতে ভালো লাগে। মাঝেমধ্যে বাড়ির কথা মনে পড়লে আসে। রঙ্গনাও প্রায় তেমনই। টিপিক্যাল বউ সেও হতে পারবে না।

এদিকে রাফাতের বাড়ির লোকের ধারণা রঙ্গনাই একমাত্র মেয়ে যে রাফাত কে সাইজ করতে পারবে।

এখন দেখা যাক এদের বিয়ের গল্প কতদূর এগোয়…..!

চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে