কুসুম কাঁটা পর্ব-০২

0
478

#কুসুম_কাঁটা
#পর্ব-২
(কপি করা নিষেধ )
স্বপ্নীলদের বাড়িতে সদস্য সংখ্যা আট জন। স্বপ্নীলের মা শিলা, বোন তুলি, তুলির দুটো বাচ্চা মন্টি আর রিন্টি। স্বপ্নীলের দাদি, দাদু আর মালেক মামা। এখন যুক্ত হলো শ্রাবণ্য। সেই হিসেবে বাড়ির সদস্য সংখ্যা নয় জন। তবে অস্থায়ী সদস্য আছে কয়েকজন। স্বপ্নীলের আরেক বোন রঙ্গনা আর মালেক মামার বউ বিউটি মামী।

স্বপ্নীলের দাদু এককালে জাঁদরেল পুলিশ অফিসার ছিলেন। বাবার একমাত্র ছেলে ছিলেন বলে স্বভাবটাও একগুয়ে ছিলো। স্বপ্নীলের বাবা অবশ্য সেরকম ছিলেন না। বিচক্ষন, ধীর স্থির স্বভাবের।

স্বপ্নীলের মা কলেজে ইতিহাস পড়ান। স্বভাবে তিনিও ভীষণ শান্ত। তবে ছেলেকে ভীষণ ভালোবাসেন। রঙ্গনা আর তুলির বয়সের ব্যবধান উনিশ মাসের। তুলি বড়। হাসিখুশি প্রানবন্ত, বুদ্ধিমতি মেয়ে। কিন্তু তার স্বামী রোমেল একদম ব্যতিক্রম। বোকা, রাগী, জেদি। ফিনল্যান্ডে একটা ইউনিভার্সিটিতে পড়ায়। তুলিরও বাচ্চাসমেত ওখানে যাবার কথা ছিলো। একটা না একটা ঝামেলায় যাওয়া টা আটকে যায়।

রঙ্গনা ছোট। স্বভাব পেয়েছে দাদুর মতো। নিজে যেটা ঠিক মনে করে সেটা একশ শতাংশ ভুল হলেও সেটাই ওর অভিধানে ঠিক বলে বিবেচিত। এখনো পর্যন্ত বিয়ে করে নি। দাদু যে জোর টা স্বপ্নীলের ক্ষেত্রে খাটাতে পেরেছেন সেটা রঙ্গনার ক্ষেত্রে পারে নি। রঙ্গনা বাসার বাইরে থাকে বন্ধুদের সঙ্গে ফ্ল্যাট ভাড়া করে। সেখানে ঝগড়া হলে বাড়ি আসে। যতদিন না বাড়ির কারোর সঙ্গে ঝগড়া হয় ততদিন বাড়িতে থাকে। তারপর আবার চলে যায়। আর প্রত্যেকবার যাবার সময় বলে যায় আর আসবে না, সম্পত্তির ভাগ চাইতেও আসবে না, মরে গেলেও আসবে না।

রঙ্গনার ডাক নাম রঙ। স্বপ্নীলের বাবা তুলির সঙ্গে মিলিয়ে নাম রেখেছেন। স্বপ্নীলের নাম টাও তার রাখা। কিন্তু এই ছেলেমেয়ে গুলো বড় অভাগা। বাবার সান্নিধ্যে বেশী সময় থাকতে পারে নি।

স্বপ্নীল স্বভাব পেয়েছে বাবা মা দুজনেরটাই। শান্ত, ধীর স্থির, মিশুকে স্বভাবের হলেও কেন যেন ওর তেমন বন্ধু হতো না। সহপাঠীরা ও’কে কেমন যেন এড়িয়ে চলতো। যত বড় হতে লাগলো বিষয় টা ততো বাড়তে লাগলো। স্বপ্নীল ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেছে আহসানউল্লাহ ইউনিভার্সিটি থেকে৷ আপাতত বেকার। তবে দাদু হুকুম দিয়েছেন অতি জলদি একটা চাকরি যোগাড় করার।

স্বপ্নীলের দাদু আফতাব হোসেন শ্রাবণ্যকে বিয়ের দুদিন পর ডাকলেন। শ্রাবণ্যর তুলির সঙ্গে গেল। দাদু একটা বই পড়ছিলেন। শ্রাবণ্যকে বসিয়ে রাখলেন দশ মিনিট। দশ মিনিট পর বইটা বন্ধ করে তুলির দিকে তাকিয়ে বললেন,

“তুমি যাও। ওর সঙ্গে আমার কথা আছে। ”

শ্রাবণ্য ভীত চোখে তুলির দিকে একবার তাকালো। ও চোখের ইশারায় আশ্বস্ত করে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।

দাদু শ্রাবণ্য’র সঙ্গে কথা বললেন গম্ভীর স্বরে। জিজ্ঞেস করলেন,

“কেমন আছ?”

শ্রাবণ্য মাথা নেড়ে বলল,

“ভালো। ”

“কেউ কেমন আছ জিজ্ঞেস করলে, তাকেও জিজ্ঞেস করতে হয়। ”

শ্রাবণ্য শুকনো ঢোক গিলে বলল,

“আপনি কেমন আছেন?”

“আমি তোমার কী হই?”

শ্রাবণ্য অস্বস্তিতে পড়ে গেল। বলল,

“দাদু। ”

“হ্যাঁ৷ শোনো, গরুটা তোমার সঙ্গে কথাবার্তা বলছে? ”

“হ্যাঁ। ”

শ্রাবণ্যর বুঝতে বাকী রইলো না যে গরুটা আসলে স্বপ্নীল।

“এই বাড়িতে সবকিছু কঠিন নিয়মে চলে। নিয়মের কোনো হেরফের আমি পছন্দ করি না। এই বাড়ির সবাই শিক্ষিত৷ পড়াশোনার ব্যাপারে কোনো আলসেমি করবে না। তোমাকে ঘরের কাজ করতে হবে না। আপাতত তোমার কাজ গরুটাকে দেখে রাখা আর পড়াশোনা করা। ”

দাদু এতবার স্বপ্নীল কে গরু বলছে যে শ্রাবণ্যর এখন নিজেকে গোয়ালিনী মনে হচ্ছে।

দাদুর হাত থেকে নিস্তার পেল দাদির কারনে৷ দাদু ঠিক যতটা গম্ভীর, দাদী ততটাই মিষ্টি। শ্রাবণ্যর ওনাকে প্রথম দিন দেখেই ভালো লাগছে। দাদী ও’কে নাম ধরে না ডেকে ভাবী বলে ডাকছে।

স্বপ্নীলের মা, তুলি আপুকেও শ্রাবণ্যর ভালো লাগছে। তবুও দুদিনে তো আর মানুষ চেনা যায় না৷ মায়ের কথা টা কানে বাজে। শ্বশুর বাড়ি কখনো মধুর হাড়ি হয় না।

***
স্বপ্নীল আর শ্রাবণ্য একসাথে হোস্টেলের দিকে যাচ্ছে। স্বপ্নীল বলল,

“আমাদের বাসা থেকে তোমার ইউনিভার্সিটি কী দূরে হবে? ”

“একটু দূরে হবে। হোস্টেলে থাকলে আমার জন্য ভালো হতো। এখন তো ঘুম থেকে উঠেই বাস ধরতে হবে। ”

“হ্যাঁ। দাদু রাজী হবে না। ”

স্বপ্নীল কে শ্রাবণ্যর অতো খারাপ লাগছে না। হয় ছেলেটা সোজাসাপটা, নাহয় বুদ্ধি কম। কাল ও’কে নীলার গল্প বলেছে। দাদু কীজন্য এতো তাড়াহুড়ো করে ওর বিয়ে সেটাও বলেছে। শ্রাবণ্য অবশ্য নিজের কথা বলে নি। স্বপ্নীল এই বিয়ে নিয়ে খুব অনুতপ্ত। ওর জন্য শ্রাবণ্যকেও বিপদে পড়তে হয়েছে। তবে ও বলেছে, শ্রাবণ্যকে আর বিপদে ফেলবে না। যতরকম সাহায্য দরকার ও করবে। শ্রাবণ্যর ভালো লাগলো। শঙ্কা, ভীতি যা ছিলো তা অনেকটাই কম মনে হচ্ছে।

***
আফরিন সাকিব কে পেল টিএসসিতে। দাঁড়িয়ে বার্গার খাচ্ছিলো। বলল,

“তাড়াতাড়ি খাওয়া শেষ কর। কথা আছে জরুরী। ”

সাকিব মুখভর্তি খাবার নিয়ে প্রশ্ন করলো,

“শ্রাবণ্য এসেছে?”

“হ্যাঁ। ”

“কি করছে এখন?”

আফরিন সাকিব কে দেখলো কঠিন চোখে। এই ছেলেটাকে কষিয়ে একটা থাপ্পড় দিতে পারলে ওর ভালো লাগতো। কিন্তু সেটা করার সাহস নেই। ও জবাব দিচ্ছে না বলে সাকিবও আর প্রশ্ন করলো না। ধীরে, সুস্থে বার্গার শেষ করে লাচ্ছি নিলো। আফরিনের দিকে লাচ্ছি এগিয়ে দিতেই ও বলল,

“আমার লাগবে না। তুই খা। ”

“কী যেন বলবি? শ্রাবণ্যর কোনো সমস্যা আছে?”

“শ্রাবণ্য সমস্যায় থাকলে তোর খুব ভালো লাগে?”

সাকিব বিচিত্র ভঙ্গিতে হাসলো। আফরিন বলল,

“শ্রাবণ্য দের বাড়িতে তুই ফোন করে ঘুরতে যাবার ব্যাপার টা জানিয়েছিস, তাই না?”

“নাহ!”

“তাহলে কে জানিয়েছে!”

সাকিব ভাবলেশহীন গলায় বলল, আমি কী জানি!

“সাকিব শোন, তুই নিজেকে খুব চালাক ভাবিস তাই না? তবে একটা ব্যাপার জেনে রাখ, তুই চালাক না। তুই রামবলদ। শ্রাবণ্য হোস্টেলে এসে সব জিনিসপত্র নিয়ে গেছে। যেদিন ও চলে গিয়েছিল, সেদিন সন্ধ্যায় ই ওর বিয়ে হয়েছে। এই খবর টা জানাতেই আমি এসেছি। ”

আফরিন আর দাঁড়ালো না। চলে গেল ঝড়ের গতিতে। যাবার সময় হাতে রাখা লাচ্ছিটা ছুড়ে ফেলে দিলো। সাকিব স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এটা কী হয়ে গেল! ও তো চেয়েছিল শ্রাবণ্যকে একটা শিক্ষা দিতে। শ্রাবণ্য ওর ভালোবাসা প্রত্যাখ্যান করায় একটা ছোট শিক্ষা দিতে চেয়েছিল। কিন্তু এখন! এখন যে ও একদম ধরা ছোঁয়ার বাইরে চলে গেল।

চলবে….
সাবিকুন নাহার নিপা

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে