#কুয়াশা_মিলিয়ে_যায়_রোদ্দুরে
#পর্ব_১৫
#লেখায়_নামিরা_নূর_নিদ্রা
“তুরাব!”
কুয়াশার মুখে তুরাবের নাম শুনে সাফওয়ান চকিত দৃষ্টিতে তাকায় তার দিকে। তুরাব এখনো বিষ্ময়কর চাহুনি নিয়ে তাকিয়ে আছে কুয়াশার দিকে। আর কুয়াশা! সে তো কথা বলার মত অবস্থাতেই নেই। এক প্রকার দৌড়ে বাইরে বের হয়ে যায় সে। সাফওয়ান পিছু নেয় তার।
“কুয়াশা, কুয়াশা আমার কথা শোনো। এমন করো না। থামো কুয়াশা।”
সাফওয়ানের কোনো কথায় যেন তার কর্ণকুহরে পৌঁছাচ্ছে না। সে নিজের মত ছুটে বের হয়ে যেতে চায়। ঠিক তখনই সাফওয়ান আচমকা কুয়াশার হাত ধরে ফেলে। ঘটনার আকষ্মিকতায় দু’জনেই অপ্রস্তুত হয়ে যায়। সাফওয়ান দ্রুত কুয়াশার হাত ছেড়ে দিয়ে বলে,
“দয়া করে আমাকে ভুল বুঝবে না কুয়াশা। আমি ইচ্ছাকৃতভাবে তোমার হাত ধরিনি। তোমাকে আটকানোর জন্য হাত ধরতে বাধ্য হয়েছি। আমি দুঃখিত!”
কুয়াশা কিছু বলে না। চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে। আজ তার কণ্ঠ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না। বেশ কিছুটা সময় অতিবাহিত হওয়ার পর কুয়াশা সাফওয়ানকে উদ্দেশ্য করে বলে,
“আমি আর এসব মেনে নিতে পারছি না সাফওয়ান। আর কত? এই ছেলেটা আমাকে কি একটুও ভালো থাকতে দিবে না? জীবনের নতুন একটা অধ্যায় শুরু করতে যাচ্ছি। সেখানেও তুরাব এসে হাজির। আমার প্রথম কেস কার হয়ে লড়ব? আমারই স্বামীর হয়ে? সেটাও কিনা মেয়ে ঘটিত ব্যাপার!”
“শান্ত হও কুয়াশা। আমি তোমার মনের অবস্থা বুঝতে পারছি।”
“না, তুমি বুঝতে পারছ না। এই কষ্ট কেবল মেয়েরা বুঝতে পারে। আমরা একসাথে থাকি না। হয়তো খুব তাড়াতাড়ি আলাদা হয়ে যাব। এই অবধি সব ঠিক আছে। কিন্তু এটা কী? তার আর কত নোংরামির সাক্ষী হতে হবে আমাকে? আমার জীবনে দু’জন পুরুষ এসেছিল। একজন প্রেমিক রূপে। আরেকজন স্বামী হয়ে। অথচ আমার ভাগ্য দেখ। একজনও আমাকে মানসিক শান্তি দিতে পারল না। জানো? গতকাল রাতে রায়াদের জঘন্য একটা কাজের সাক্ষী হতে হয়েছে আমাকে। সেই কষ্ট এখনো কমেনি। তার মধ্যেই তুরাবের এসব নিজ চোখে দেখতে হচ্ছে। আমি সত্যি আর পারছি না।”
“তোমাকে স্বান্তনা দেওয়ার মত ভাষা আমার নেই। তবে এটুকু বলতে পারি যে তুমি অনেক শক্ত মনের একজন মেয়ে। সর্বাবস্থায় নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার অন্যরকম এক ক্ষমতা আছে তোমার মধ্যে।”
“আমি শক্ত বলেই কি সবাই ইচ্ছামতো আঘাত করবে আমাকে? আমি কি মানুষ নই? আমার মধ্যে কি প্রাণ নেই? আমি জড়বস্তু? কোনো অনুভূতি নেই আমার মধ্যে তাই না?”
“আমি তা বলিনি কুয়াশা।”
“বলতে না চেয়েও বলে তো দিলে।”
“তোমার মা থা ঠিক নেই এখন। তুমি একটু শান্ত হও।”
“আমি এই কেস লড়ব না সাফওয়ান।”
“কেন?”
“নিজের স্বামীর এমন ঘৃণ্য কাজের হয়ে আমি কীভাবে লড়ব?”
“কুয়াশা তোমার মনে রাখতে হবে, এটা তোমার ব্যক্তিগত জীবন নয়। এটা তোমার পেশাগত জীবন। ব্যক্তিগত সমস্যার জন্য নিজের পেশাগত জীবনকে হুমকির মুখে ফেলতে চাও তুমি? জীবনের প্রথম কেসে এভাবে লড়াই না করেই হেরে যেতে চাও? এটা তো একজন আইনের কর্মীকে মানায় না। তোমার ব্যক্তিত্বের সাথে এটা একদম বেমানান কুয়াশা।”
সাফওয়ানের কথায় কুয়াশা কিছুক্ষণ ভেবে উত্তর দেয়,
“সত্যিই তো! এটা আমার পেশাগত জীবন। আমার এই জীবনের সাথে ব্যক্তিগত কোনেকিছুর সম্পর্ক থাকতে পারে না।”
“হ্যা তোমাকে লড়তে হবে। তুমি পারবে না সত্যের পথে চলে জয়ী হতে?”
“পারব। আমাকে পারতেই হবে।”
“তাহলে ভেতরে চলো।”
অতঃপর দু’জন ভেতরে গিয়ে নিজ নিজ আসনে বসে।
“কী ব্যাপার কুয়াশা? তুমি হঠাৎ এভাবে চলে গেলে কেন?”
“স্যার আসলে আমার শরীর একটু খারাপ লাগছিল। তাই বাইরে গিয়েছিলাম।”
“আচ্ছা তোমরা এখন কেসের ব্যাপারে আলোচনা করতে পারো।”
কুয়াশা তুরাবের দিকে তাকায়। তুরাবের দৃষ্টি নত। সে কুয়াশার চোখে চোখ রেখে কথা বলার অবস্থাতে নেই।
“আপনার নাম কী?”
কুয়াশার এহেন প্রশ্নে তুরাব অবাক দৃষ্টিতে তাকায়। কুয়াশা কোনো উত্তর না পেয়ে আবারো বলে,
“আপনার নাম কী?”
তুরাব হতাশ হয়ে উত্তর দেয়,
“তুরাব তৌহিদ।”
“মিস্টার তুরাব তৌহিদ আপনি সম্পূর্ণ ঘটনা খুলে বলুন। কী হয়েছে আপনার সাথে?”
তুরাব ধীর কণ্ঠে বলতে শুরু করে,
“আমি ঢাকার ছেলে। কিন্তু কিছু কারণে মাস কয়েক আগে বগুড়ায় চলে যাই। বগুড়ায় আমার কাজ শেষ হলে আমি গত মাসে ঢাকায় ফিরে আসি। এখানে ফিরে আসার পরপরই আমার পরিচয় হয় মিহি নামের একজন মেয়ের সাথে। শুরুতে এমনিই কথা হতো। কিছুদিন পর আমাদের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক তৈরি হয়। এরপর একদিন সে আমাকে দেখা করতে বলে। আমি তখন একটা কাজের জন্য যেতে পারিনি। পরবর্তীতে আমি সময় করে একদিন তার সাথে দেখা করি।”
“হুম তারপর?”
“মিহির সাথে আমি একটা ক্লাবে দেখা করি। সেখানে দু’জনেই বেশ অনেকটা ম দ্য পান করি। আমার নে শা হয়ে গিয়েছিল সেই সময়। আমি কখন ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম বুঝতে পারিনি। যখন চোখ খুললাম তখন একটা বদ্ধ ঘরে মিহির সাথে আপত্তিকর অবস্থায় নিজেকে আবিষ্কার করি।”
“তারপর কী হলো?”
কুয়াশাকে একদম স্বাভাবিক থাকতে দেখে তুরাব এক দৃষ্টে তাকিয়ে থাকে তার দিকে। কুয়াশা এসব দেখে বলে,
“আমার দিকে তাকিয়ে না থেকে পরের ঘটনা বলুন।”
“আমি ওর সাথে কিছু করিনি বিশ্বাস করুন। কিন্তু তার অভিযোগ তার সাথে আমার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এবং সেখান থেকেই আমরা শারীরিক সম্পর্কে চলে যায়। যা সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমি তো তাকে খুব বেশি দিন ধরে চিনিও না।”
“মেয়েটার দাবি কী?”
“সে আমাকে বিয়ে করতে চায়। আমি এটাতে আপত্তি জানালে সে পুলিশের কাছে গিয়ে আমার নামে অভিযোগ করে। সেখানে আমাকে একজন ধ,”
“বুঝতে পেরেছি। আর কিছু বলতে হবে না।”
তুরাব দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে কুয়াশার দিকে তাকায়। মেয়েটা আগের থেকেও অনেক বেশি মায়াবী চেহারার অধিকারী হয়ে উঠেছে। যার দিক থেকে চোখ সরানো কঠিন। এই মেয়েটার সাথে সে গত বছর বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিল। অথচ নিজের দোষে নিজের স্ত্রীকে হারিয়েছে সে। আর কখনো কি এই মায়াবিনী ফিরবে তার জীবনে?
“মিস্টার তুরাব আপনার কেস আমি হাতে নিব। তবে আমার উপযুক্ত তথ্য প্রমাণ চাই। তার জন্য আমাকে সহযোগিতা করতে হবে আপনাকে।”
কুয়াশার কথায় ঘোর কাটে তুরাবের। সে স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করে বলে,
“আমি আপনাকে সব রকম সাহায্য করতে রাজি আছি। আপনি শুধু আমাকে বাঁচান। আমি বিনা অপরাধে শাস্তি পেতে চাই না।”
কুয়াশা আনমনে ভাবে,
“আমার সাথে যে অন্যায় করেছেন তার শাস্তিই তো এখনো পাননি। বিনা অপরাধে শাস্তি পাওয়া তো অনেক দূর!”
“কিছু বললেন?”
“বলছি আজকের মত আপনি বাড়ি চলে যায়। আগামীকাল আপনাকে নিয়ে আমি ওই ক্লাবে যাব। বাকিটা আগামীকালই বলব। এখন আপনি আসতে পারেন।”
তুরাব কুয়াশার দিকে তাকিয়ে চলে যাওয়ার পর কুয়াশা তার স্যারকে বলে,
“স্যার আমি তাহলে এখন উঠি।”
“আচ্ছা যাও।”
সাফওয়ান উঠতে চাইলে স্যার বলে,
“তুমি বসো। তোমার সাথে আমার কথা আছে।”
সাফওয়ান চোখের ইশারায় কুয়াশাকে সাবধানে বাসায় চলে যেতে বলে। কুয়াশা বাইরে বের হওয়ার সাথে সাথে তুরাব কুয়াশার পথ আগলে দাঁড়ায়।
“কী সমস্যা? আমার পথ আগলে দাঁড়ালেন কেন?”
“কেমন আছ কুয়াশা?”
“সেই প্রশ্নের জবাব আমি আপনাকে দিতে বাধ্য নই।”
“আমি তোমার স্বামী হই।”
“স্বামী? কেমন স্বামী? যে পরনারীতে আসক্ত হয়ে এমন বাজে কেসে ফেঁসে যায়? যে বিয়ের মত পবিত্র সম্পর্ক নিয়ে খেলা করে একজন মেয়ের জীবন শেষ করে দেয়? যে দিনের পর দিন ভালোবাসার অভিনয় করে? যে হাজার নারীতে আসক্ত? যে প্রাক্তনের উপর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য নিরপরাধ একজনকে কষ্ট দেয়? সেই স্বামীর কথা বলছেন আপনি?”
তুরাব করুণ দৃষ্টিতে কুয়াশার দিকে তাকায়। কিন্তু সেই চাহুনি কুয়াশা দেখতে পায় না। কারণ ততক্ষণে সে চোখ সরিয়ে নিয়েছে তুরাবের দিক থেকে।
“আমি জানি আমি অনেক পাপ করেছি। কিন্তু এই কাজ আমি করিনি। ওই মেয়েকে আমি ছুঁয়েও দেখিনি। আর না তো তার সাথে আমার কখনো কোনো প্রেমের সম্পর্ক ছিল।”
“কোনটা সত্যি তা প্রমাণ করার জন্যই আমাকে ডাকা হয়েছে। সুতরাং আপনার মুখের কথায় আমি কিছু বিশ্বাস করতে পারব না। আর একটা কথা ভালো করে শুনে নিন। এখানে আমি একজন উকিল। আর আপনি আমার কাছে এসেছেন নিজের কেস লড়ার জন্য। তাই কোনো ব্যক্তিগত সম্পর্ক এখানে টেনে আনবেন না।”
কথাটা বলে কুয়াশা চলে যায়। কিন্তু তুরাব কোথাও যায় না। ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকে সেখানে।
চলবে??
#কুয়াশা_মিলিয়ে_যায়_রোদ্দুরে
#পর্ব_১৬
#লেখায়_নামিরা_নূর_নিদ্রা
“কুয়াশা!”
তুরাবের ডাকে পেছন ফিরে তাকায় কুয়াশা। সাফওয়ানের সাথে কথা বলার সময়ে আগমন ঘটেছে মিস্টার তুরাব তৌহিদের।
“মিস্টার তুরাব তৌহিদ আপনি এখন আমাদের সেই ক্লাবে নিয়ে যাবেন যেখানে আপনার সাথে ওই ঘটনা ঘটেছিল।”
“আমাদের মানে?”
“আমি একা তো যাব না। আমার সাথে পুলিশ অফিসারও যাবে তার বাহিনী নিয়ে।”
“আমরা কি ওখানে হা ম লা করতে যাচ্ছি?”
“আমি উকিল। পুলিশ নই। তাই তাদের সাথেই আমাকে যেতে হবে। বুঝতে পেরেছেন?”
“আচ্ছা চলো।”
“এক মিনিট। তুমি করে নয়, আপনি করে বলুন। ভুলে যাবেন না আপনার সাথে এখানে আমার কোনো ব্যক্তিগত সম্পর্ক নেই। তাই যথাযথ সম্মান দিয়ে কথা বলুন।”
“নিজের বউকে এখন আপনি করে বলতে হবে?”
“কী বললাম শোনেননি? এখানে কোনো ব্যক্তিগত সম্পর্ক টানা যাবে না। আপনি কি কথা কম বোঝেন হ্যা?”
“আচ্ছা আমি দুঃখিত। পরবর্তীতে বিষয়টা খেয়াল রাখব। আশা করছি এমন আর হবে না।”
“না হলেই ভালো। সাফওয়ান চলো আমরা যাই এবার।”
“উনি কেন যাবেন?”
“উনিও উকিল তাই।”
“কিন্তু আমার কেস তো আপনি সামলাচ্ছেন।”
“এত প্রশ্ন করবেন না। সামনেই পুলিশের গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। ওদিকে চলুন।”
তুরাবকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে কুয়াশা সামনে এগিয়ে যায়। তুরাবও পেছন পেছন গাড়িতে গিয়ে বসার পর কুয়াশা তুরাবকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“আপনি কোন ক্লাবে গিয়েছিলেন? নাম কী ক্লাবের?”
“স্কাই ভিউ ক্লাব।”
নাম শোনার পর ড্রাইভার গাড়ি চালাতে শুরু করে। আধ ঘন্টার মধ্যেই সবাই সেখানে গিয়ে উপস্থিত হয়। পুলিশকে দেখে প্রথমে ক্লাবের মানুষজন ঘাবড়ে গেলেও পরবর্তীতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য পুলিশ অফিসার বলে,
“আপনাদের ভয় পাওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। আমরা এখানে একটা কেসের ব্যাপারে কথা বলতে এসেছি। আশা করছি, আপনারা আমাদেরকে সহযোগিতা করবেন।”
ক্লাবের ম্যানেজার অফিসারকে আশ্বস্ত করে বলে,
“আমরা অবশ্যই আপনাদের সহযোগিতা করব। বলুন কী সাহায্য লাগবে?”
কুয়াশা এবার নিজের মুখ খোলে।
“আপনাদের এখানে সিসি টিভি ক্যামেরা আছে তো?”
“হ্যা আছে।”
“গত মাসের ২৭ তারিখ রাতের ফুটেজ দেখতে চাই আমরা।”
“একটু অপেক্ষা করতে হবে।”
“সমস্যা নেই। আমরা অপেক্ষা করছি।”
মিনিট দশেক পর ম্যানেজার কম্পিউটারে কিছু একটা দেখিয়ে বলল,
“এই যে সেদিন রাতের ফুটেজ।”
স্ক্রিনে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে একটা মেয়ের সাথে তুরাব বেশ ঘনিষ্ঠ হয়েই নাচানাচি করছে। কিছুক্ষণ পর একজন ওয়েটার এসে তুরাবের হাতে একটা গ্লাস তুলে দিলো। যেটাতে মূলত অ্যালকোহল ছিল। তুরাব সেটা এক নিশ্বাসে খেয়ে নিয়ে হঠাৎ করেই একটা চেয়ারে বসে পড়ার পর মেয়েটা আশেপাশে তাকিয়ে তাকে নিয়ে উপরে চলে যায়। যেখানে অনেক ছেলেমেয়ে একান্তে সময় কাটায়।
এটুকু দেখার পর কুয়াশা বলে উঠল,
“আপনাদের ওই ঘরে কোনো গোপন ক্যামেরা আছে?”
ম্যানেজার আমতা আমতা করে উত্তর দেয়,
“হ্যা আছে।”
“বাহ্! সর্বত্র ক্যামেরা আছে দেখছি।”
ম্যানেজারের মুখ শুকিয়ে যাওয়া দেখে কুয়াশা হেসে বলে,
“আপাতত আপনাদের নিয়ে কথা বলব না। আপনি আমাদের ওই ঘরের ফুটেজ দেখান এখন।”
কিছুক্ষণ পর ফুটেজ হাতে পাওয়া মাত্রই সবাই খুব মনোযোগ দিয়ে ফুটেজ দেখতে শুরু করে। কুয়াশা এক জায়গায় ভিডিয়ো থামাতে বলে।
“অফিসার এই দেখুন এখানে একটু ভালো করে খেয়াল করলেই বোঝা যাবে ছেলেটার চোখ বন্ধ। তার হাত বারবার মেয়েটার শরীর থেকে পড়ে যাচ্ছে। যদিও এডিট করলে এসব বোঝা যাবে না। কিন্তু এটা তো আসল ভিডিয়ো। এতে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে ছেলেটা এখানে অবচেতন অবস্থায় বিছানায় পড়ে আছে। তাহলে এই ছেলে কীভাবে মেয়েটার ইজ্জত নষ্ট করতে পারে?”
কুয়াশার কথায় পুলিশ অফিসার খানিক্ষণ ভেবে বলে,
“সত্যিই তো। এখানে তো মিস্টার তুরাবের জ্ঞান নেই।”
“মেয়েটা খুব সম্ভবত এসব সম্পর্কে জ্ঞানত নয়। যার ফলে এমন কাঁচা কাজ করে ফেলেছে। আপনি কেসটা কোর্টে তুলুন। বাকিটা আমি দেখে নিব।”
এর মধ্যেই মিহি কল দেয় পুলিশ অফিসারকে। কল দিয়ে কন্দনরত অবস্থায় জিজ্ঞেস করে,
“স্যার ওই ছেলের কি কোনো শাস্তি হবে না? আমার এত বড়ো সর্বনাশ করে সে কি স্বাধীন হয়ে ঘুরে বেড়াবে? আমাকে প্রেমের জ্বালে ফাঁসিয়ে আমার সবকিছু কেঁড়ে নিলো। কিন্তু আমাকে বিয়ে করল না। আপনারা কিছু করুন। নয়তো আমার ম রে যাওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না।”
“আপনি চিন্তা করবেন না। আমরা খুব শীঘ্রই এই কেস কোর্টে তুলব। আপনাকে কল করে আমরা সব জানিয়ে দিব।”
“ঠিক আছে। কিন্তু স্যার দেখবেন উনি যেন কোনোভাবে বেঁচে না যায়।”
“হ্যা হ্যা দেখব। আপনি এখন কলটা রাখুন।”
কথাটা বলে পুলিশ অফিসার কল কেটে দেয়। এরপর কুয়াশাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
“আপনার আর কোনো সহযোগিতা লাগবে?”
“অফিসার আমার এই ফুটেজগুলো লাগবে। আপনি এই ফুটেজগুলো আমার ফোনে পাঠানোর ব্যবস্থা করুন।”
“আচ্ছা আপনি এখন বাসায় যান। বাকিটা আমরা দেখছি।”
“আসছি তাহলে।”
কুয়াশা আর সাফওয়ান কিছুটা এগিয়ে যেতেই পিছু ডাকে তুরাব।
“কুয়াশা দাঁড়াও। তোমার সাথে আমার কথা আছে।”
কুয়াশা সাফওয়ানকে ইশারায় দূরে গিয়ে দাঁড়াতে বলে। তারপর তুরাবের কাছে এসে প্রশ্ন করে,
“কী বলতে চান? বলুন।”
“তুমি কেন আমাকে এভাবে এড়িয়ে যাচ্ছ?”
“আপনাকে এড়াতে যাব কেন? কে আপনি?”
“আমি কে সেটা বারবার মনে করিয়ে দিতে হবে তোমাকে?”
“আমার মস্তিষ্ক যথেষ্ট ভালো। সবকিছুই মনে রাখতে পারি আলহামদুলিল্লাহ। আর এজন্যই আমি পুরোনো ঘটনাগুলো খুব ভালোভাবে মনে রেখেছি। এই যেমন মেয়ে নিয়ে হোটেলে গিয়ে আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন আপনি। এমন আরো অনেক ঘটনা মনে আছে আমার। আমি কিছুই ভুলিনি।”
“আমি মানছি আমি মেয়েদের সাথে অনেকবার ঘনিষ্ঠ হয়েছি। কিন্তু এতে ওই মেয়েদের আপত্তি ছিল না। আমি কারোর অনুমতি ব্যতিত কখনো কাউকে স্পর্শ করিনি।”
“বাহ্! কি সুন্দর কথা বললেন আপনি। আমার এখন ইচ্ছা করছে আপনার এই কেসটা একদম ঘুরিয়ে দিতে। বউয়ের বাপের বাড়িতে তো জামাই আদর ভালোই পেয়েছেন। এবার গারদের ভেতরে জামাই আদর পেলে খুব ভালো হবে তাই না?”
“কুয়াশা!”
“একদম চুপ করুন। আপনার মত চরিত্রহীন ছেলের সাথে কথা বলতে রুচিতে বাঁধছে আমার। কিন্তু কী করব বলুন? একজন আইনের লোক হিসেবে আমি বিনা দোষে কাউকে শাস্তি দিতে পারি না। এখানে আপনি নির্দোষ। তাই না চাইলেও আপনাকে আমার বাঁচাতে হবে। আপাতত এই মুহূর্তে আপনি দয়া করে আমার চোখের সামনে সরে যান।”
“আমার কথাটা,”
“আর একটাও কথা নয়। চলে যান আপনি। থাক, আপনার যেতে হবে না। আমিই যাচ্ছি।”
দ্রুত পায়ে রাস্তার আরেক পাশে চলে যায় কুয়াশা। যেখানে সাফওয়ান তার জন্য অপেক্ষা করছে। তুরাব দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে নিজ বাড়ির দিকে হাঁটা দেয়। পথিমধ্যে তুরাবের ফোন একটা কল আসে। সে ফোন হাতে নিয়ে দেখে একটা অচেনা নাম্বার থেকে তাকে কল করা হয়েছে। সে কল রিসিভ করে বলে,
“আসসালামু আলাইকুম। কে?”
“মিহি!”
মিহির নাম শুনে তুরাব রাগে চিৎকার করে ওঠে।
“কীসের জন্য কল দিয়েছ তুমি আমাকে?”
“আরে তুরাব এত রেগে যাচ্ছ কেন তুমি?”
“আমার নামে এত নোংরা কথা বলে কেস করার সময় মনে ছিল না আমি রাগ করব?”
“জানি তো তোমার রাগ হচ্ছে। কিন্তু আমি কী করব? তুমিই তো আমাকে বিয়ে করতে রাজি হলে না। এখনো সময় আছে। আমাকে বিয়ে করতে রাজি হয়ে যাও। তাহলে আমি কেসটা তুলে নিব।”
“কখনোই না। আমি বিবাহিত এটা ভুলে যেয়ো না।”
“আচ্ছা বিয়ে করতে হবে না। তাহলে আমাকে দশ লাখ টাকা দাও।”
“মানে?”
“মানে টাকা দিয়ে মামলা মিটিয়ে নাও।”
“ছিঃ মিহি! তোমার মত এত নিচ মানসিকতার মেয়ে আমি আর একটা দেখিনি।”
“দেখার কথাও না। কারণ আমি তো একজনই। আমার মত দ্বিতীয় আর কেউ হতে পারবে না।”
“তুমি টাকার জন্য নিজের ইজ্জত নিয়ে মিথ্যা বললে?”
“এত কথা না বলে কোনটা করবে সেটা বলো। এক আমাকে বিয়ে করবে। নতুবা আমাকে দশ লাখ টাকা দিবে। একটাও না করলে জেলে পঁচে ম রা র জন্য তৈরি হও।”
“কার কি হবে সেটা তো সময় বলবে। আমার তোমার সাথে কথা বলতেও লজ্জা করছে। আর কখনো কল দিবে না আমাকে। তোমার মত মেয়েদের কিভাবে শায়েস্তা করতে হয় সেটা আমি জানি। অপেক্ষা করো তুমি। তোমার সাথে সামনে যা হবে তা কল্পনাও করতে পারবে না তুমি। বেয়াদব মেয়ে কোথাকার!”
চলবে??