কুয়াশার আড়ালে সূর্য
৮.
সকালে সূর্য ও কুয়াশাকে ডেকে তুলে অহনা। দশটা বেজে চলল এখনো বিছানায় শুয়ে আছে দেখে সূর্য তড়িৎগতিতে রেডি হয়ে নেয়। কোনমতে নাস্তা করে বেরিয়ে যায়। কুশায়কে বলে যাওয়া হয় না। নিচে এসে সূর্যকে দেখেনা। তবে তার ফোনে টেক্সট পাঠিয়ে দেয়। কুয়াশা তাতেই সন্তুষ্ট।
আব্দুল আহাদ কাজে যুক্ত হয়েছে। সূর্য আলামিনকে বলে বুঝিয়ে দিচ্ছে সব। মূলত তার জন্যই আজ তড়িঘড়ি আসা।
আলামিনের বোঝানো কাজে আব্দুল আহাদ প্রথমে ভালোভাবে কাজ করতে সক্ষম হয়। সূর্য মনিটরে সব পর্যবেক্ষণ করছে।
হঠাৎ কাল রাতের একটি ব্যাপার মাথায় আসে। তবে সেটি এতটাও গুরুত্ব দেয় না। কুয়াশাকে জানিয়ে দেয় আজ সে বাসায় আসবে না লাঞ্চ করতে। একেবারে সন্ধ্যায় আসবে।
কুয়াশা কিচেনে এসে একথা জানায় অহনাকে।
‘ওর বড়ো ভাই তো আমায় কিছু বলল না।’
‘তাহলে মনে হয় আপনার দেবরই আসবে না। বাবা আর বড়ো ভাইয়া আসবে।’
‘আমি তাকে জিজ্ঞেস করব।’
‘আচ্ছা।’
‘শোনো কুয়াশা। আমি একটু মার্কেটে যাব। তুমি বাড়িতে একা থাকতে পারবে তো?’
‘হ্যাঁ, পারব। তুমি কী এখন যাবে?’
‘এখনই যাব। মরিয়ম রান্না করে নিবে। তুমি ওপরে গিয়ে বোসো।’
‘সমস্যা নেই আমি সাহায্য করছি তাকে।’
‘হুম।’ বলে অহনা কিচেন থেকে বেরিয়ে এলো। তৈরি হয়ে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেল অহনা। শফিকুল ইসলাম ও আকাশ বাড়িতে ফিরার পূর্বে অহনা বাড়ি ফিরে আসে। কুয়াশার রুমে এসে একটি সবুজ রঙের গারারা তাকে উপহার হিসেবে দেয়।
তার খুব পছন্দ হয়। কুয়াশা ভাবতে পারেনি অহনা তার জন্যও একই রকম ড্রেস কিনে আনবে। দুপুর খাবার পর সূর্যের সাথে চ্যাটিং হয় তার। কী করছেন, খেয়েছেন? এই ধরনের হালকা কথা বলে কুয়াশা ঘুমায়। মাগরিবের সময় ঘুম ভাঙে তার। উঠে দেখে সূর্য এখনো বাড়ি ফিরেনি। নামাজ শেষ করে নিচে এসে একত্রে দু’জনে টিভি দেখছে ও চা খাচ্ছে। সেই সময়ে কুয়াশার ফোনে কল আসে। আব্দুল আহাদ নামটি স্ক্রীনে ভেসে উঠে দেখেই কপাল ঘুচে এলো তার। ফোন নিয়ে ওপরে এসে রিসিভ করে কুয়াশা। বলিষ্ঠ কণ্ঠে সালাম দেয়। আব্দুল আহাদ উত্তর নিয়ে বলল,
‘আশা করছি ভালো আছো?’
‘জি, আলহামদুলিল্লাহ! আপনারা ভালো আছেন?’
‘হ্যাঁ। হঠাৎ কল দেবার জন্য দুঃখিত। একটা কাজ অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে এর জন্য কল দেওয়া।’ সে থামে। কুয়াশা মনোযোগ দিকে তার কথা শুনে। তবে কিছু বলে না।
আব্দুল আহাদ হালকা কেশে ফের বলল,
‘কিছু অন্যায়ের ক্ষমা হয় না। জানি আমি অনেক বড়ো ভুল করেছি। পারলে আমায় ক্ষমা করে দিও কুয়াশা। নতুন জীবনে সুখী হও। আল্লাহ হাফেজ।’ কথাগুলো বলেই নিজ থেকে ফোন রেখে দেয় সে। কুয়াশা কান থেকে ফোন সরিয়ে নিস্তব্ধ হয়ে রইলো। চোখের কোণা বেয়ে এক ফোটা পানি গড়িয়ে গালে আসার পূর্বেই মুছে ফেলে সে। অনেক আগেই তাকে মাফ করে দিয়েছে। এখন আর তার প্রতি কোনো রাগ-ক্ষোভ অবশিষ্ট নেই। চোখ বন্ধ করে কথাগুলো ভেবে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। পরপরই অতীত পিছনে ফেলে রুম ত্যাগ করে ছাদে এসে বসলো। নয়টার দিকে সূর্য সহ তারাও বাড়ি ফিরে আসে। সূর্য একা ড্রইংরুমে বসে ছিল। অহনা তাকে দেখে এগিয়ে এসে বলল,
‘আজ বেশি ক্লান্ত মনে হচ্ছে?’
‘প্রচুর টায়ার্ড। তোমার ছোট জা কোথায়?’
‘ছাদে। আমি সেখান থেকেই আসলাম মাত্র। ডাকবো ওঁকে?’
‘না থাক। তুমি কঁড়া করে এক কাপ চা বানিয়ে দেও।’
‘বোসো, আনছি।’ সূর্য সোফায় মাথা ঠেকিয়ে রাখলো। মিনিট কয়েক পর অহনা চায়ের কাপ হাতে কিচেন থেকে বের হয়।
সূর্যের দিকে এগিয়ে দিয়ে পাশে বসল। বলল,
‘হানিমুনে যাবে না তোমরা?’
‘হুম যাব।’
‘কবে যাচ্ছো?’
‘দেখি।’
অহনা চুপ হয়ে গেল। সূর্য চা সম্পূর্ণ করে রুমে এলো। কোটটি সোফায় রেখে পায়ের মুজা খুলে বিছানায় চিৎ হয়ে শোয়। এক পর্যায় চোখ লেগে আসে। ঘুমিয়ে যায় সে। কুয়াশা রুমে এসে সূর্যকে ঘুমাতে দেখে কয়েক বার ডাকে। কেননা সে পোশাক পরিবর্তন না করেই ঘুমিয়েছে। কয়েক বার ডাকার পরও সূর্য তেমন রেসপন্স না করে উল্টোদিকে ফিরে ঘুমালো।
কুয়াশা নিচে এলো অহনার কাছে।
‘সে কী খেয়েছে?’
‘নাহ! এক চা খেয়েই চলে গেল। বোধহয় বাহির থেকে খেয়ে এসেছে। তুমি বরং খেয়ে নেও।’
কুয়াশা রাতের আহার শেষ করে রুমে এসে দেখে সূর্য তখনো ঘুমে কাঁদা। পুনরায় না ডেকে সূর্যের পাশে ঘুমায় সে।
সকালে ঘুম ভাঙার পর সূর্য খেয়াল করে কাল রাতে পোশাক না পাল্টেই শুয়েছে। উঠে আগে গোসল করে নেয়। বের হয়ে দেখে কুয়াশা বিছানায় বসে আছে। সূর্য এক গাল হেসে বলল,
‘গুড মর্নিং কুইন।’
কুয়াশা নরম ভঙ্গিতে একবার তাকিয়ে বিনাবাক্যে বাথরুমের পানে এগিয়ে গেল। তার চুপ থাকার কারণ সে বুঝতে পারছে না। তবে নিশ্চিত কালকের জন্য কিঞ্চিৎ রেগে আছে।
বের হবার পরপরই সূর্য পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে কাঁধে থুতনি রাখে কুয়াশার। সে কিছুটা হতবিহ্বল হয়ে যায়। সূর্য হেসে হেসে বলে,
‘বউটা আমার রাগ করেছে।’
‘আমি রাগ করিনি।’
‘তবে মুড অফ কেন?’
‘কাল আব্দুল আহাদ কল দিয়েছিল আমাকে।’
সূর্যের হাত কিছুটা আলগা হয়ে আসে। তবে পুরোপুরি হবার আগেই আগের ন্যায় ধরে বলল,
‘আমার তোমার ওপর আস্থা আছে। এসব না বললেও চলবে। চাইলেই মাঝেসাঝে কথা বলতে পারো তুমি। আমার কোনো আপত্তি নেই।’
‘আপনি এত ভালো কেন? কেন আপনার সাথে আমার প্রথম দেখা হলো না? এত কষ্টের পর আপনাকে আমি পেয়েছি। এটা আল্লাহর নেয়ামত।’ মনে মনে কথা গুলো বলে চোখ জোড়া বন্ধ করে ফেললো কুয়াশা। সূর্য কানে আলতো ফু দিয়ে চৈতন্য ফিরালো তার। নিজেকে ছাড়ানোর জন্য মোচড়াচ্ছে কুয়াশা। সূর্য হেসে হেসে বলে,
‘আহা! নড়ে না।’
‘ছাড়েন নিচে যাব।’
‘পালাতে চাও কেন?’
‘ধরে রাখতে চান বলে।’
‘এটা তো আমার অপরাধ না।’
‘সেই তালিকায় পড়ে।’
‘না….’
বলে বাকিটা শেষ করার পূর্বেই অহনার ডাক পড়ে। নাস্তার জন্য ডাকছে। সূর্য কিছুটা বিরক্ত হয়ে কুয়াশাকে ছেড়ে দেয়। ফিক করে হেসে দেয় কুয়াশা। দরজা খুলে বেরিয়ে যায় সে।
সূর্যও রেডি হয়ে নিচে চলে আসে।
দিন যতো যাচ্ছে তাদের সম্পর্কের উন্নতি হচ্ছে। কুয়াশা এখন পুরোপুরি স্বাভাবিক। অতীত থেকে বেরিয়ে এসেছে সূর্যের সাহায্যে। তার জীবনে নেমে আসা কুয়াশার ছায়া বিলুপ্ত হবার উপক্রম।
চলবে?
®সুমাইয়া মনি