#কি করিলে বলো পাইবো তোমারে
#পর্বঃ০৮
#লেখিকাঃঅনন্যা অসমি
আস্থাদের বিল্ডিংটা আজ আবারো বিভিন্ন ধরণের ছোট ছোট বাতি দিয়ে সাজানো হয়েছে।সন্ধ্যা হয়ে যাওয়ায় লাইটগুলোর কারণে দূর থেকেও বিল্ডিংটাকে দেখা যাচ্ছে।ছাদে ছোট করে স্টেজ বানানো হয়েছে।সবাই এদিকে ওদিকে বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত।
হলুদ একটা জামা পড়ে,চুলগুলো একসাইডে বেণি করে রেখে আস্থা।একহাতে ফোন অন্যহাতে অনিককে ধরে ছাদে উঠে আসে সে।আজ তাদের বিল্ডিং দোতলার ভাড়াটিয়ার মেয়ের হলুদ,যার কারণে এতোসব আয়োজন।আস্থা এখন আসতোনা কিন্তু অনিক জেদ ধরেছে যে সে এখনই যাবে।ছেলেকে আস্থার মা একা ছাড়তে চান না তাই আস্থাকে অনিকের সাথে পাঠালেন ছাদে।আস্থার মা নিচে বিভিন্ন কাজে ব্যস্থ।ছাদে এসেই অনিক তার সমবয়সী ছেলেদের সাথে খেলতে ব্যস্থ হয়ে গেলো।একটা চেয়ার টেনে আস্থা একদম ছাদের কোণায় গিয়ে বসে,তার এতো লোকজন কোন কালেই পছন্দ না।এরই মধ্যে আস্থার ফোনটা বেজে উঠে,কেউ তাকে ভিডিও কল করেছে।
” কিরে এই সময় ফোন দিলি যে?”
” ও মা তুই এতো সেজেগুজে কোথায় গিয়েছিস?” কথা জিজ্ঞেস করে।
” হ্যাঁরে আস্থু কোথায় গিয়েছিস শুনি?আমাদের তো কিছু বলিসনি।” নাইরা বলে।
” আরে ধুর,কোথায় যাবো?আমি তো বাসায় আছি।”
” হ্যাঁ তুই এভাবে সেজেগুজে বলবি বাসায় আছিস আর আমরাও বিশ্বাস করে নেবো।কি হতো আমাদের বললে যে তুই আজ কোথাও যাবি?আমরা কি তোর সাথে যেতাম নাকি?” মিথ্যা কান্না করতে করতে বলে কথা।
” আরে বাবা সত্যি বলছি।আমি আমাদের বিল্ডিং এর ছাদে আছি।”
” তাহলে এতো সেজেছিস কেন?” নাইরা জিজ্ঞেস করে।
” আরে আমাদের বিল্ডিং এক আপুর আজ হলুদের অনুষ্ঠান হচ্ছে।তার জন্যই এরকম ড্রেস পড়েছি।”
” আমার তোর কথায় কোন বিশ্বাস নেই।তুই দেখা আমাদের ব্যাক ক্যামেরা দিয়ে।” কথা বলে।
আস্থা একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে ব্যাক ক্যামেরা দিয়ে ওদের পুরো ছাদটা ঘুরিয়ে দেখায়।
” হলোতো এবার বিশ্বাস?”
” হুম হয়েছে হয়েছে।আচ্ছা তোর উনি কোথায়?আসেনি এখানো?” কথা বলে।
” উনিটা আবার কে?”
” আরে তোর নেয়া নেয়া প্রেমের মানুষটা আরকি।”
” এই চুপ কর।ফোন লাউডে আছে,কেউ শুনতে পেলে ঝামেলা হয়ে যাবে।”
” হাহাহা….তা বলনা আসেনি?”
” না এখনো পর্যন্ত তো দেখতে পাইনি।কিরে নাইরা তুই চুপ করে আছিস কেন?”
” কোথায় চুপ করে আছি?আচ্ছা আমার একটা প্রশ্নের উওর দেতো।”
” ঠিক আছে দেবো কিন্তু পড়াশোনা নিয়ে যদি কোন প্রশ্ন করেছিস তো তোর মাথা ফাটিয়ে দেবো।”
” আচ্ছা কেউ যদি আমাদের ভালোবাসে তাহলে আমাদেরও কি তাকেই ভালোবাসতে হবে?আমরা কি অন্যকাউকে ভালোবাসতে পারবোনা?আর আমি যাকে ভালোবাসি সে যদি অন্যকাউকে ভালোবাসে তাহলে আমার কি তাকে ছেড়ে দেওয়া উচিত?”
” এই নাইরা তুই এসব কি বলছিস?” কথা বলে।
” বলল না আমার প্রশ্নের উওর।”
” ধুর বাবা তোর কথার আগামাথা কিছুই আমি বুঝিনি তো উওর কি দেবো।এই আস্থু তুই কিছু বুঝেছিস?”
” পুরোটাতো বুঝিনি তবে এটা বুঝতে পেরেছি ও ভালোবাসা নিয়ে কিছু একটা বলেছে।নাইরু তুই আবার বলতো কি বলছিস।”
” কিছুনা বাদ দে।”
আস্থা,নাইরা আর কথা টুকটাক নিজের মধ্যে কথা বলছে আর হাসাহাসি করছে।
” তুমি ছাদের কর্নারে বসেছো কেন?”
হুট করে কারো আওয়াজ শুনে আস্থা ঘাবড়ে যায়।
” আবারো আপনি।আ….আমি তো আবারো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।”
” বুঝিনা আমি তোমাকে ডাকলেই তুমি ভয় পেয়ে যাও কেন।তুমি এই ভর সন্ধ্যা বেলা ছাদের কর্নারে বসে আছো কেন?”
” তো কি হয়েছে?”
” কি হয়েছে মানে?নিজের প্রাণের ভয় নেই নাকি?এখানে ছোট ছোট বাচ্চারা দৌড়াদৌড়ি করছে।যদি ভুলবশত তোমাকে ধাক্কা দিয়ে দেয় তাহলে তো সোজা নিচে গিয়ে পড়বে।তারপর দুনিয়ায় থেকে বাই বাই।”
” আচ্ছা ঠিক আছে ঠিক আছে।বুঝতে পেরেছি।”
” পরবর্তী থেকে নিজের খেয়াল রাখবে।বুঝিনা মানুষ এতো কেয়ারলেস কি করে হয়।”
” হয়েছে তো আর কত বকা দেবেন।”
” তো বকা দেবো না তো কি আদর করবো?তুমি যদি এখান থেকে পড়ে মারা যাও তাহলে তো পুলিশ এসে আমাদের ধরবে।তারপর সারাজীবন পুলিশ আমাদের পেছনে পড়ে থাকবে।”
” শুধু পুলিশের ঝামেলার কারণে আপনি আমাকে সর্তক করেছেন?”
” হুম আমার এতো শখ নেই পুলিশের ঝামেলায় পড়ার।পরবর্তী থেকে খেয়াল রাখবে।আমি ভালো মানুষ বলে সর্তক করেছি।”
তাজ বড় বড় পা ফেলে স্টেজের ওখানে চলে যায়।তাজের শেষের কথাগুলো শুনে আস্থার মন খারাপ হয়ে যায়।আস্থা আবারো বুঝতে পেরে গিয়েছে তার জন্য তাজের মনে কোন জায়গা নেই,সে শুধু একজন মানুষ হিসেবেই যা বলে তাকে।
” আস্থু মোবাইল সোজা কর।”
এতোক্ষণ ফোনের অপরপাশ থেকে আস্থা আর তাজের কথোপকথন শুনছিলো কথা আর নাইরা।
” কি হয়েছে?মুখটা এরকম করে রেখিছিম কেন?” কথা জিজ্ঞেস করে।
” কিছু না।”
” আমি জানি তাজ ভাইয়ার কথা শুনে তোর মন খারাপ কিন্তু তুই চিন্তা করিস না সব ঠিক হয়ে যাবে।”
” এইযে মিস আস্থা।”
তাজের এই হুটহাট আগমনে আস্থা সবসময় চমকে যায়।এবারো তার ব্যাতিক্রম হলোনা।
” আপনি একটু আগাম বর্তা দিয়ে আসতে পারেন না?প্রত্যেকবার আসবেন হুটহাট করে আর আমি প্রতিবারই ভয় পেয়ে যায়।না জানি কোনদিন আপনার এই হুটহাট ডাকাতে ভয়ে আমি হার্ট অ্যাটাক করে বসি।”
” তুমি এখন একটু বেশিই কথা বলছো।শোন তোমাকে আন্টি ডাকছেন দেখো কেন ডাকছেন।আমি আসতাম না।আন্টি বললেন বলে এলাম।তোমাকে বলার ছিল,বললাম।এবার কি করবে সেটা তোমার ইচ্ছে।”
এবারো বড় বড় পা ফেলে দ্রুত তাজ নিচে নেমে যায়।কথা আর নাইরা থেকে বিদায় নিয়ে আস্থা তাড়াতাড়ি তার মায়ের কাছে আসে।আস্থার মা তাকে একটা ফলমূলের প্লেট ধরিয়ে দিয়ে নিজের পেছন পেছন আসতে বলে।
সবাই এক এক করে মেয়েকে হলুদ লাগাচ্ছে।সবাই লাগাচ্ছে বিদায় বাধ্য হয়ে আস্থাও এগিয়ে আসতে হলো।হালকা করে হলুদ মুখে লাগিয়ে তাড়াতাড়ি স্টেজ থেকে নামে গিয়ে তাজের সাথে ধাক্কা লাগতে লাগতে বেঁচে যায় আস্থা।তাদের মাঝে এক আঙ্গুল মতো দূর বিদ্যমান।আস্থা ভয়ে ভয়ে তাজ থেকে পিছিয়ে আসে।
” এই মেয়ে দেখে শুনে চলতে পারোনা?এতো তাড়াহুড়োর কি আছে?আজ কি তোমার মাথা গিয়েছে?তখন একদম ছাদের কর্নারে গিয়ে বলেছিলে আর এখন তাড়াহুড়ো করে নামছো।শোন তুমি বাসায় গিয়ে ঘুমাও।এখানে তোমার কোন কাজ নেই।”
” সে আপনাকে বলতে হবেনা।আমি জানি আমার এখানে কোন কাজ নেই।আর আমারো এসব ভালোলাগেনা।আমি আসতামও না কিন্তু আমার মাকে কে বুঝাবে যে আমার এসব ভালোলাগেনা।মায়ের জন্যই তো এই এতোগুলা মানুষের মধ্যে এতোক্ষণ ধরে বসে থাকতে হয়েছে।”
” আচ্ছা তুমি যাও।বাসায় যেয়ে ঘুমিয়ে পড়ো।অনেক রাত হয়েছে।আন্টিকে দেখলে আমি বলে দেবো।”
” সত্যি বলবেন তো?”
” আরে বাবা হ্যাঁ বলে দেবো।তুমি যাও এখন।”
আস্থা আর দেরি না করে তাড়াতাড়ি রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে নেয়।এতোক্ষণে তার দেহে যেন প্রাণ ফিরে এসেছে।সে ফ্রেশ হয়ে এসে একটু পানি খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।
পরেরদিন,
ক্যাম্পাসে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে কথা বলছে আস্থা,নাইরা আর কথা।হুট করেই কথা বলে উঠে,
” আচ্ছা তোরা এই ছেলেটাকে চিনিস নাকি?”
” কোন ছেলেটা?” আস্থা জিজ্ঞেস করে।
” এইযে ওই ছেলেটা।কালো শার্ট পড়া।”
” কেন কি হয়েছে?”
” কেন যেন মনে হচ্ছে ছেলেটা আমাদের কেই দেখছে।”
” দূর আমাদের কেন দেখতে যাবো?হয়তো কারোর জন্য অপেক্ষা করছে।হয়তো সে আসছে নাকি তাই দেখছে।তুই একটু বেশি সন্দেহ করিস।চল এখন।”
” কিরে নাইরু দাঁড়িয়ে আছিস কেন?চল।”
” হুম তোরা যা আমি আসছি।”
আস্থা আর কথা আগে আগে হাঁটতে থাকে।নাইরা অগ্নির দিকে এগিয়ে আসে কি-না তার কাছে পৌঁছানোর আগেই অগ্নি সেখান থেকে চলে যায়।
চলবে…..