#কি করিলে বলো পাইবো তোমারে
#পর্বঃ০৭
#লেখিকাঃঅনন্যা অসমি
পড়ার টেবিলে বসে খাতায় ডিজাইন করছে আস্থা।এরিই মধ্যে সে শুনতে পাই মেসেজ আসার শব্দ তবে আস্থা তার কাজ ছেড়ে উঠেনা।সে পুরোটা শেষ করে আধাঘন্টা পর উঠে।বই খাতা সব গুছিয়ে রেখে ফোনটা হাতে নেয় সে।মেসেজ অপশনে যায় কিন্তু মেসেজটার দেখে তার চোখ বড় বড় হয়ে যায়।
” আস্থা,আমি তাজ।তোমার সাথে কিনে আনা বইগুলোর মধ্যে একটা পড়ে শেষ করলাম।খুব ভালো লেগেছে,তাই ভাবলাম তোমাকে একবার বলি।তোমার চয়েজ আসলেই ভালো।তুমি আসলেই ভালো জিনিস তোমার পছন্দের তালিকায় রাখো তা প্রমাণ পেয়ে গিয়েছি।তাই তো তুমি এতো সুন্দর গুছিয়ে যুক্তি দিয়ে কথা বলতে পারো।”
মেসেজটা দেখে আস্থা যে চোখের পলক ফেলতে ভুলে গিয়েছে।তাজ নিজে থেকে তাকে মেসেজ দিয়েছে,এটা আস্থার বিশ্বাস হচ্ছে না।আস্থা কিছুক্ষণ থম মেরে বসে থাকে।তারপর যখন তার হুস আসে সে তাড়াতাড়ি মেসেজ টাইপ করে।
” আপনার বইগুলো ভালো লেগেছে?”
মেসেজ দেওয়ার ২/৩ মিনিট পর ফিরতি বার্তা আসে।
” হুম।একটা পড়েছি,ভালো লেগেছে।আশা করি বাকিগুলোও ভালো লাগবে।ভাবছি এগুলো পড়া শেষ হলে তোমার সাথে গিয়ে আরো কিছু বই কিনবো?তখন কি তোমার সময় হবে?”
” আরে হবে না কেন?অবশ্যই হবে।আপনি শুধু বলবেন কখন যাবে।”
” আচ্ছা ঠিক আছে।তোমার পড়া শেষ?”
” হ্যাঁ কিছুক্ষন আগেই শেষ হলো।”
” রাতের খাবার খেয়েছো?”
” না এখনো নয়।আপনি?”
” হুম খেয়েছি।আচ্ছা তুমি যাও খেয়ে নাও।শুভ রাত্রি।”
” শুভ রাত্রি।”
তাজ মেসেজ সিন করে তবে আর কোন রিপ্লাই দেয়না।আস্থা কিছুক্ষণ বসে থাকে এই আশায় যে তাজ তাকে হয়তো আরো কিছু বলবে কিন্তু যখন দেখলো সে কোন মেসেজ দিচ্ছে না তখন কিছুটা হতাশ মন নিয়ে আস্থা ফোনটা রেখে দেয়।তবে সে মনে মনে এটা ভেবে খুশি যে তাজ তাকে নিজের থেকে মেসেজ দিয়েছে।হোক না সেটা ছোট কোন কারণে।
.
.
” তুই কাল মিস্টার তাজের সাথে কোথাও গিয়েছিলিস নাকি?”
” হুম গিয়েছিলাম তো।”
” কোথায় গিয়েছিলি?”
” ওই বই কিনতে।উনি বই পড়া শুরু করেছেন তার জন্য বই কিনতে গিয়েছি।”
” ও আচ্ছা।”
” কিন্তু তুই কিভাবে জানলি আমি ওনার সাথে কাল গিয়েছিলাম?”
” না আসলে কাল রাস্তায় তোদের দেখলাম রিক্সা করে কোথাও যাচ্ছিস।তাই জিজ্ঞেস করলাম।”
” আচ্ছা।জানিস কাল উনি না আমাকে নদীর পাড়ে ঘুরতে নিয়ে গিয়েছে।”
” নিজে থেকে?”
” না নিজে থেকে নয়,আমি ওনাকে বলেছিলাম আর উনিও না করেনি।জানিস নাইরু কাল আমি একটা জিনিস ফিল করেছি।”
” কি?”
” আমি তাজকে ভালোবেসে ফেলেছি।”
আস্থার কথা শুনে নাইরা কিছু একটা ভাবে তারপর বলে,
” সত্যি?নিজের মন থেকে ভালোবাসিস তো?”
” হুম সত্যি।আমি এখন বুঝতে পেরেছি আমি ওনাকে ভালোবাসি।”
” ওনাকে বলেছিস?”
” কি বলিস।ওনাকে কেন বলতে যাবো?”
” কেন বলবি মানে?তুই ওনাকে ভালেবাসিস,এটা ওনাকে বলবিনা?”
” ওনাকে বলেই বা কি লাভ?উনি আমাকে বুঝবে না।আমি জানি উনি এটা আমার আবেগ বলে দূরে ঠেলে দেবেন আমাকে।থাক না আমার ভালোবাসাটা আমার মধ্যেই।”
” এই যে মহারাণীরা আপনারা আমাকে ফেলে চলে এসেছেন কেন?” হাঁপাতে হাঁপাতে বলে কথা।
” তো কি করবো?তুমি তো মেয়ে লিখতে ব্যস্ত ছিলে তাই আমরা চলে এসেছি।” নাইরা বলে।
” তো লিখবোনা।”
” আসোনি কেন কাল?”
” আরে ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে গিয়েছিলো।”
” তো তোর দেরি হবে নাতো আমাদের হবে?রাতের দুটো-তিনটে পর্যন্ত যদি মোবাইল গুঁতান আপনি তাহলে কি করে তাড়াতাড়ি উঠতে পারবেন।”
” আরে বাবা তোরা দু’টো চুপ থাক তো।আর ঝগড়া করিস না।”
” করবো না।আগে আমাকে বল এতোক্ষণ কি কথা বলছিলি তোরা?আমি তখন মনে হয় শুনলাম তোরা ভালোবাসা নিয়ে কিছু একটা বলছিলি।এখন তাড়াতাড়ি বল কি বলছিলি।”
” আমাদের আস্থু প্রেমে পড়েছে।”
” কি?সত্যি নাকি?কে সে ব্যক্তি আমিও একটু শুনি।”
” তাজ।” মাথা নিচু করে বলে আস্থা।
” ওহো।আমি তো জানতাম,তুই একদিন না একদিন ঠিকই তাজ ভাইয়ার প্রেমে পড়বি।দেখছিস তো আমার কথায় মিলে গেলো।”
” আচ্ছা বাদ দে এখন ওসব।ওসব নিয়ে এখন আর কথা বলিস না অন্যকোন কথা বল।”
অন্যদিকে,
বিল্ডিং এর ডিজাইন নিয়ে বাকিদের সাথে আলোচনা করছে তাজ।এরই মাঝে তার ফোন বেজে উঠে।সবাইকে কাজ বুঝিয়ে দিয়ে তাজ সাইডে এসে ফোনটা রিসিভ করে।
” আচ্ছা আমি এখুনি আসছি।”
তাজ তাড়াতাড়ি ভার্সিটির গেটের দিকে আস্তে থাকে।মাজ রাস্তায় তার নাইরার সাথে দেখা হয়ে যায়।
” কোথায় যাচ্ছেন মিস্টার তাজ?”
” আপনি আমার নাম জানলেন কি করে?”
” জেনেছি কোন একভাবে।তা এতো তাড়াহুড়ো করে কোথায় যাচ্ছেন?”
” আমার একটা জরুরি কাজ আছে।সেখানেই যাচ্ছি।”
” ও আচ্ছা তাহলে যান।পরে কথা হবে।”
তাজ আর কিছু না বলে দ্রুতপায়ে বেরিয়ে পড়ে।
” নাইরা।”
নাইরা পেছন ফিরে দেখে অগ্নি দাঁড়িয়ে আছে।অগ্নি দেখে নাইরা বিরক্ত হয়।
” কি বলবেন তাড়াতাড়ি বলুন।”
” ওই লোকটা কে হয় তোমার?”
” তা জেনে আপনার কাজ কি?”
” আমার তোমাকে অন্যকারো সাথে দেখলে ভালো লাগেনা,কষ্ট হয় আমার।”
” আপনার ভালো লাগুক আর না লাগুক তাতে আমার কিছু যায় আসেনা।”
” সত্যি কিছু যায় আসেনা তোমার?”
” না কিছু যায় আসেনা।”
” নাইরা তুমি কি বুঝোনা?নাকি বুঝেও না অবুঝের মতো থাকো?” অসহায় কন্ঠে বলে অগ্নি।সে নাইরার এই অবহেলা আর নিতে পারছেনা।
” কি বুঝবো?”
” ভ….” বলতে চেয়েও অগ্নি আর কিছু বললোনা।
” কি হলো চুপ করে গেলেন কেন?কি বলতে চেয়েছিলেন?”
” কিছু না।ভালো থেকো।”
চোখে জল নিয়ে নাইরার সামনে থেকে চলে যায় অগ্নি।
.
.
বিকেল বেলা ছাদে যাওয়ার জন্য আস্থা ঘর থেকে বের হলে দেখতে পাই তাজ সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে আসছে।তাজকে দেখে আস্থা থেমে যায়।তাজের মুখটা আস্থার কাছে কিরকম যেন শুকনো শুকনো লাগছিলো।
” কোথা থেকে আসছেন আপনি?”
” কাজ ছিল একটা।” গম্ভীর স্বরে বলে তাজ।
” ও আচ্ছা।আচ্ছা আপনার বই পড়া শেষ?কবে যাবেন আবার বই কিনতে?”
” জানিনা।”
আস্থা আর কিছু বলবে তার আগেই তার উপরে চলে যায়।আস্থা তাজের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো।
” ওনাকে এরকম লাগছে কেন?ওনার কি কিছু হয়েছে?” মনে মনে ভাবে আস্থা।
আস্থা আর ছাদে গেলোনা।উল্টো পায়ে দৌড়ে ঘরে চলে এলো।
” মা?ও মা?মা?”
” কি হয়েছে কি?এভাবে চিৎকার করছিস কেন?”
” শোন আজ স্পেশাল কিছু বানাও।”
” মানে?এখন আবার তোর কি খেতে মন চাইছে?”
” যেকোন কিছু একটা বানাও।এই যেমন পায়েস,বিরিয়ানি,কাবাব এরকম কিছু।”
” এখন এগুলো বানানোর মতো কিছু বাড়িতে নেই।তোর খেতে হলে অন্যকিছু খা।আমি কাল তোকে এসব বানিয়ে দেবো।”
” কাল বানিয়ে কি হবে?আমার তো আজ এখনই চায়।আচ্ছা তুমি যাও আমিই কিছু করছি।”
” এই মেয়েটার মাথায় কখন যে কি আসে ও নিজেও জানেনা।”
দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আস্থা চিন্তা করতে থাকে কি করা যায়।হুট করেই কিছু মনে পড়তেই আস্থা দৌড়ে রান্নাঘরে চলে যায়।
আধাঘন্টা পর,
অবশেষে নুডুলস বানাতে সক্ষম হয়েছে আস্থা।অন্যসময় আস্থা লুকিয়ে নিজের জন্য রান্না করে নিজেই খেতো কিন্তু এখন সে অনেক যত্ন করে বানিয়েছে।চারটা বাটিতে নুডুলসগুলো নিয়ে আস্থা উপরের তলায় চলে আসে।
মূলত আস্থা রান্না করেছে তাজের বাসায় আসার জন্য মূলত এটাই তার এখানে আসার একমাত্র পথ।
” এগুলো তুই খাবার কি নিয়ে এসেছিস?”
” নুডুলস।নাই ট্রে-টা ধরো।”
” তোর মাও না।”
” না আন্টি মা বানাইনি আমি বানিয়েছি।”
” কি বলিস কি?তুই বানিয়েছিস।বাহ্ তাহলে তো খেয়ে দেখতে হবে আমাদের আস্থা কেমন রান্না করতে পারে।”
” আচ্ছা আন্টি বাসায় আর কেউ নেই?”
” আছে তো।আয় ভেতরে আয়।”
জুতো খুলে আস্থা তাড়াতাড়ি তাজের বাসায় ঢুকে পড়ে।
চলবে……