#কি করিলে বলো পাইবো তোমারে
#পর্বঃ০৬
#লেখিকাঃঅনন্যা অসমি
তুমি আকাশের বুকে বিশালতার উপমা
তুমি আমার চোখেতে সরলতার প্রতিমা
আমি তোমাকে গড়ি ভেঙ্গেচুরে শতবার
রয়েছো তুমি বহুদূরে আমাকে রেখে ছলনায়
এ হৃদয় ভেঙ্গে গেলে জানো কি তা
লাগে না, লাগে না জোড়া
লাগে না, লাগে না
………………………………
এতোক্ষণ বারান্দায় দাঁড়িয়ে গানটা শুনছিলো আস্থা।কে গেয়েছে আস্থা তা জানেনা,কারণ কন্ঠস্বর সে ভালোভাবে শুনতে পাইনি।গানটা সে আন্দাজ করেছে গিটারের শব্দ শুনে।আস্থা আন্দাজ করে যা বুঝে শব্দটা উপর তলা থেকে এসেছে কারণ নিচের তালায় গিটার বাজানোর মতো কেউ নেয়।তার রুমের ঠিক উপরেই তাজের রুমটা।তাই আস্থা যা বুঝতে পারে এটা তাজ ছিল।কিন্তু আজ হঠাৎ এতো রাতে গিটার বাজিয়ে তাজের গান গাওয়ার কারণটা আস্থার ঠিক বোধগম্য হলোনা।
পরেরদিন বিকেলবেলা,
আজো আস্থা ছাদে এসেছে তবে আজ সে বই আনেনি।সে ফোনে গান ছেড়ে কানে হেডফোন গুঁজে গান শুনতে শুনতে নিচে রাস্তা দেখতে থাকে।
হঠাৎ করে আস্থা অনুভব করে তাকে কেউ ডাকছে।সে ঘাড় গুড়িয়ে পেছনে তাকাই কিন্তু হুট করে তাজকে যে সে ঘাবড়ে যায়।আস্থা তাড়াতাড়ি কান থেকে হেডফোন খুলে ফেলে।
” আপনি!আমি তো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।আপনার এই হুটহাট আগমনে কোনদিন না আমার হার্ট এট্যাক হয়।”
” দুঃখিত আমি তোমাকে ভয় লাগাতে চাইনি।আর তোমাকে আমি সেই কখন থেকে ডেকে চলেছিল কিন্তু তুমি তো আমার কথা শুনছিলেই না।”
” ও আসলে কানে হেডফোন ছিলো তো তাই শুনতে পাইনি।আপনি কি কিছু বলবেন?”
” তুমি কালকে ফ্রী আছো?”
তাজের কথা শুনে আস্থা শক খাই।সে জিভ দিয়ে ঠোঁটটা ভিজেয়ে নেয়।তার কেমন যেন অনুভূতি হচ্ছে।
” কি হলো?”
” না কিছু না।কিন্তু আপনি হঠাৎ এই প্রশ্ন করছেন যে?”
” তুমি না সেইদিন বলেছিলে বই পড়তে?আমি ভেবেছি এবার থেকে বই পড়ার অভ্যাস করবো।কিন্তু আমার তো বই সম্পর্কে কোন ধরণা নেই।তাই ভাবলাম তুমি যেহেতু বই পড়ো,তোমাকে নিয়ে কাল লাইব্রেরিতে যাবো বই কিনতে।তুমি কি যাবে আমার সাথে?”
তাজের কথা শুনে আস্থা কি বলবে ভাষা খুঁজে পাচ্ছেনা।সে কোনদিনও ভাবেনি তাজ তাতে এরকম কিছু কোনদিন বলবে।যে কারণেই হোক সে তার ভালোলাগার মানুষটার সাথে সময় কাটাতে পারবে,এরকম সুযোগ আস্থা কেন ছাড়বে।তাই সে খুশি মনে হ্যাঁ বলে দেয়।
” তাহলে কাল বিকেলবেলা যাবো।তুমি তৈরি থেকো।”
” আচ্ছা।”
হালকা হেসে তাজ নিচে নেমে যায়।আস্থা কিছু একটা ভেবে মাথা নিচু করে হাসে।
পরেরদিন বিকেলবেলা,
দুপুরের পর থেকেই আস্থা তৈরি হতে বসে পড়ে।সে কি পড়বেনা তা নিয়ে অনেকক্ষণ চিন্তা করে।অবশেষে আস্থা একটা কালো রঙের জামা পড়ে।চুলগুলো একপাশে এনে একটা বেনী করে নেয়,সাথে কানে মাঝারি সাইজের দুল করে।আয়নায় নিজেকে দেখে মুচকি হাসে আস্থা।বিছানা থেকে ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে পড়ে সে।আস্থা যখনই উপরে উঠতে যাবে তাজকে ডাকার জন্য তার আগেই সে নিচে নেমে আসে।
” ও আপনি চলে এসেছেন।আমি তো আরো আপনাকে ডাকার জন্য যাচ্ছিলাম।”
” যাওয়ার জন্য তৈরি?”
” একদম।”
” তাহলে চলো।”
আস্থা আগে আগে তার পেছন পেছন তাজ নিচে নেমে আসে।নিচে নেমে তাজ পার্কিং লটের দিয়ে যেতে নিলে আস্থা জিজ্ঞেস করে,
” কোথায় যাচ্ছেন?”
” বাইক আনতে?”
” উ….রিক্সা করে যাই?”
” রিক্সা?”
” হুম।চলুন না রিক্সা করে যায়।”
কিছুক্ষণ ভেবে তাজ উওর দেয়, “আচ্ছা চলো রিক্সা করে যায়।বলা তো যায় না যদি বাইক আবার মাঝরাস্তা খারাপ হয়ে যায়।তুমি দাঁড়াও আমি রিক্সা নিয়ে আসছি।”
আস্থা গেটের কাছে এসে দাঁড়ায়।কিছুক্ষণের মধ্যে তাজ রিক্সা নিয়ে এলে আস্থা তাতে উঠে বসে।রিক্সা আপন গতিতে তার গন্তব্যের উদ্দেশ্যে চলতে শুরু করে।আস্থা খেয়াল করে তাজ একদম কোণায় গিয়ে বসেছে।
” আপনি আরো এদিকে চেপে বসুন।পড়ে যাবেন তো।”
” না আমি ঠিক আছি।তুমি ঠিক করে বসো।”
” আমি তো খুব ভালো করে বসেছি।কিন্তু আপনি একদম কোণায় গিয়ে বসেছেন।যদি রিক্সা হুট করে কোথাও থামে বা উঁচু নিচু জায়গা দিয়ে যায় তাহলে পড়ে যাবে।তাই বলছি আরেকটু ভিতরের সাইডে চেপে বসুন।”
আস্থার কথা শুনে তাজ আর কিছু বলতে পারেনা।সে আরেকটা কাছে এসে বসে,তবে একদম আস্থার কাছাকাছি নয়।
কিছুক্ষণ পর,
” আচ্ছা আপনাকে একটা কথা বলবো?কিছু মনে করবেন নাতো?”
” বলো কি বলবে?”
” আচ্ছা আপনার কি কোন তাড়া আছে?”
” না সেরকম কিছু নেই।কিন্তু কেন?”
” সামনে একটা নদীর পাড় আছে।লাইব্রেরিতে যাওয়ার আগে ওখানে একটু নিয়ে যাবেন আমাকে?আমার না সময়ের অভাবে অনেকদিন আসা হয়নি।জায়গাটা আমার খুব পছন্দের।নিয়ে যাবে?বেশি সময় থাকবোনা,জাস্ট পনেরো মিনিট থেকে চলে আসবো।”
” আচ্ছা ঠিক আছে।এই যে মামা সামনে যে নদীর পাড়টা আছে ওখানে রিক্সা দাঁড় করিয়েন।”
কথাটা বলে তাজকে আস্থার দিকে তাকিয়ে তাকে একটা হাসি উপহার দেয়।তাজ যে তার আবদার পূরণ করেছে এতে আস্থা খুবই খুশি হয়েছে।
পাশাপাশি হাঁটছে তাজ আর আস্থা।যদিও বা আস্থার তাজের সাথে পা মিলিয়ে হাঁটতে কষ্ট হচ্ছে তাও সে খুশি মনে সেটাকে মেনে নিয়ে হাঁটছে।
” কেমন লাগছে এখানে এসে?”
” খুব ভালো লাগছে।আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আমাকে এখানে নিয়ে আসার জন্য।আর সরি আপনার সময় নষ্ট করছি আমি।”
” সরি বলার কি আছে?আমারো এখানে এসে খুব ভালো লাগছে।আসলেই জায়গা অনেক সুন্দর।”
” জায়গাটা পছন্দ হয়েছে আপনার?” উৎফুল্ল হয়ে প্রশ্ন করে আস্থা।
” হুম বলতে গেলে অনেকটাই।আসলেই তোমার চয়েস অনেক ভালো।”
” আচ্ছা আমাকে কেমন লাগছে বলুন তো?”
তাজ ঘাড় গুঁড়িয়ে আস্থাকে একবার দেখে নেয় তারপর মুখে হাসি রেখেই বলে,
” সত্যি বলছি তোমাকে এই কালো জামাতে খুবই সুন্দর লাগছে।এতো মনোমুগ্ধকর লাগছে যে দেখা যাবে এই নদীর পাড়েই কোন ছেলে তোমার মায়াতে পড়ে গিয়েছে।”
তাজের কথা শুনে আস্থা নিঃশব্দে হাসে।সে অন্যদিকে তাকিয়ে নিজের মনে মনে বলে, ” আমি তো চাই কেউ আমার মায়াতে পরুক,আমাকে ভালোবাসুক।এই পড়ন্ত বিকেলে আমার পাশে হাঁটুক।কিন্তু সেই কেউটা অন্য কেউ নয় আপনি।আমি তাই আমি আমাকে ভালোবাসুন।আচ্ছা আপনি কি শুধু আমার ভালোলাগা?আপনাকে কি আমি ভালোবাসতে পারিনা?আপনাকে ভালোবাসলে কি খুব বেশি ক্ষতি হয়ে যাবে?আমার তো মনে হয়না কোন ক্ষতি হবে।তাহলে আপনাকে ভালোবাসতে বাঁধা কিসের?এই পড়ন্ত বিকেলে নদীর পাড়ে একজন রমণী যে আপনার প্রেমে পড়েছে সেটা কি আধো কখনো আপনি জানতে পারবেন তাজ?আচ্ছা আমি কি আপনাকে আধোও নিজের করে পাবো?কি করিলে বলো পাইবো তোমারে?”
” এইযে কোথায় হারিয়ে গেলে?”
তাজের কথায় আস্থা নিজের ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসে।কবে যে তার চোখে পানি জমে গিয়েছে আস্থা সেটা বুঝতে পারেনি।তাজের আড়ালে আস্থা নিজের চোখটা মুছে নেয়।
” হুম বলুন।”
” কোথায় হারিয়ে গিয়েছিলে?”
” কোথাও না।আসলে আমি একটু অন্যমন্সক হয়ে গিয়েছিলাম।”
” পাগল মেয়ে,হাঁটার সময় কি মানুষ অন্যমন্সক হয় নাকি?এতে তো কতো বিপদ হতে পারে।আচ্ছা এগুলো বাদ দাও কি খাবে বলো?”
” কিছু খাবোনা।”
” ফুসকা খাবে?”
” না,আমি বাইরে ফুসকা খাই না।বাড়িতে মা বানালে তবে খাই।”
” আইসক্রিম?”
” না।আইসক্রিমও খেলে ঠান্ডা লেগে টলসির ফুলে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।”
” আচ্ছা তাহলে চলো বাদাম খাই।এবার এটা বলোনা বাদাম খেলে তোমার পেট ব্যথা করে।”
” হাহাহাহা…না বাদাম খাওয়াতে কোন বারণ নেই।চলুন বাদাম খাই।”
তাজ গিয়ে দু প্যাকেট বাদাম নিয়ে আসে।
” কেমন লাগছে এই পরিবেশটা আপনার?”
” খুবই ভালো।তোমার একটা ধন্যবাদ পাওয়া উচিত এতো সুন্দর একটা জায়গায় কিছু মুহূর্ত কাটানোর সুযোগ করে দেওয়া জন্য।আমি কখনো এখানে আসিনি।তুমি না বললে তো এই সুন্দর জায়গা আর মুহূর্তগুলো মিস করতাম।”
তাজের কথা শুনে আস্থার খুব ভালো লাগে।যাক তার জন্য তার ভালোলাগার মানুষটা কিছু সুন্দর মুহূর্ত উপভোগ করতে পেরেছে।
আরো কিছুক্ষণ হেঁটে আস্থা আর তাজ আবারো রিক্সায় উঠে বসে লাইব্রেরি যাওয়ার জন্য।
চলবে…..