#কি করিলে বলো পাইবো তোমারে
#পর্বঃ০৫
#লেখিকাঃঅনন্যা অসমি
” কিরে নাইরু কি হয়েছে?মুড অফ মনে হচ্ছে?” আস্থা জিজ্ঞেস করে।
” না কিছু না।আচ্ছা কথা এখনো আসেনি যে?”
” হয়তো আজ আসবেনা কারণ আসলে তো এতোক্ষণে চলে আসছো।”
নাইরা মাথা নাড়ায় তবে আর কিছু বলেনা।ব্যাগ থেকে বই করতে গেলে হঠাৎ নাইরার চোখ ক্লাসের বাইরে পরে।অগ্নি দাঁড়িয়ে একটা ছেলের সাথে কথা বলছে।নাইরা চোখ সরিয়ে নেয় তবে কিছুক্ষণ পর কেন যেন সে আবারো বাইরে থাকালো।কিন্তু অগ্নি সেখানে নেয়,নিজের এই কাজে নাইরা খুবই বিরক্ত হয়।সে দ্রুত চোখ সরিয়ে বইয়ে মনোযোগ দেয়।
.
.
” একটা কাজও ঠিক করে করতে পারেনা এরা।আমি যেদিকে নজর দেবোনা সেদিকেই কিছু না কিছু হবেই হবে।” সোফায় থাকা কাপড়গুলো ঠিক করতে করতে বললেন আস্থার মা।
” আবার কি হয়েছে?এতো চিৎকার করছো কেন?”
” তো চিৎকার করবো নাতো কি করবো?তোদের দিয়ে তো একটা কাজও হয়না।তোদের দিয়ে কোন কাজ করানোই বৃথা।তার থেকে দেরি করে হলেও নিজে করাই ভালো।এতে এককাজ তো আর দু’বার করতে হয়না।”
” আ…মা বলবে তো কি হয়েছে?”
” কি হয়েছে?ছাদ থেকে বিকেল বেলা কাপড় কে তুলে এনেছে?”
” আমি আর অনি তুলে এনেছি।তুমিই তো বললে নিয়ে আসতে।”
” সেটাই তো আমার দোষ।এইগুলো কি হ্যাঁ?”
” কাপড়।”
” কাপড় তো তা আমিও চোখে দেখতে পারছি কিন্তু এগুলো কাদের কাপড়?”
” এগুলো আমাদের না?”
” আজ্ঞে না মহারাণী,এগুলো আমাদের না।আর আপনি জানবেনই বা কি করে আমাদের কাপড় কোনগুলো।সারাদিন তো বইয়ের মধ্যে মুখ গুঁজে থাকেন।”
” আচ্ছা ঠিক আছে ভুল হয়ে গিয়েছে আমার।এদিকে দাও দেখি আমি কাপড়গুলো কাদের।”
আস্থা সোফা থেকে কাপড় গুলো উঠিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ে।এখানের মধ্যে দুটো কাপড় নিচের তলার ভাড়াটিয়াদের।বাকি অবশিষ্ট কাপড়টা নিয়ে আস্থা তাজের ফ্ল্যাটে আসে কারণ বাকি সবাইকে জিজ্ঞেস করা হয়ে গিয়েছে।
” আজ আবার কি নিয়ে এসেছিস শুনি?”
” আজ কিছু আনিনি আন্টি।আচ্ছা আন্টি দেখো তো এই প্যান্টটা তোমাদের নাকি?”
তাজের মা আস্থার হাত থেকে প্যান্টটা নিয়ে ভালো করে দেখেন।তারপর মুচকি এসে বললেন,
” হ্যাঁরে এটা তো তাজের প্যান্ট।কিন্তু এটা তোর কাছে কি করছে?”
তাজের প্যান্ট এটা শুনে আস্থার কিরকম যেন একটা অনুভূতি হয়।
” আসলে আন্টি ওটা আমি ভুলে ছাদ থেকে তুলে নিয়ে গিয়েছিলাম।সরি আন্টি।”
” আরে দুর পাগলি মেয়ে এতে সরি বলার কি আছে।এরকম ভুল সবার একটুআকটু হয়েই থাকে।আচ্ছা তুই ভেতরে আয় তো।আজ আমি খিচুড়ি বানিয়েছি খেয়ে বলতো কেমন হয়েছে।”
” না না আন্টি এই ভর সন্ধ্যাবেলা আমি কিছু খাবোনা।”
” আমি তোর কোন কথা শুনছিনা,তোকে তো খেতেই হবে।”
তাজের মা জোর করে আস্থাকে ভেতরে নিয়ে আসে।
” বাসায় কেউ নেই আন্টি?”
” নারে।তোর আঙ্কেল আর তাজ অফিসে,তিথি এখনো কোচিং থেকে ফেরেনি।আচ্ছা তুই বসে টিভি দেখ আমি তোর জন্য খাবার নিয়ে আসছি।”
লতা আন্টি রান্নাঘরে চলে গেলে আস্থা উঠে তাজের রুমের সামনে এসে দাঁড়ায়।পর্দা সরিয়ে রুমের ভেতরে প্রবেশ করে আস্থা।অন্যদিন রুমটা কিছুটা অগোছালো থাকলেও আজ তাজের রুমটা অনেকটাই গোছানো।আস্থা বিছানার পেছনে দেয়ালটার দিকে তাকাই আর তাকাতেই অজানা কারণে তার মুখে হাসি ফুটে উঠে।কারণ সেইদিনের দেখা ছবিটা আজ আর দেয়ালে নেই,জায়গাটা খালি।এদিক ওদিক দেখতেই হঠাৎ বিছানার পাশে ছোট টেবিলটায় একটা গিটার দেখতে পাই আস্থা।আস্থা ধীর পাশে গিটারটার কাছে এসে সেটাকে আলতোভাবে স্পর্শ করে।
” আচ্ছা উনি কি গিটারও বাজান নাকি?কই আজ পর্যন্ততো আমি কোনদিন শুনতে পেলাম না।” আনমনেই বলে আস্থা।
” আস্থা কোথায় তুই?”
” আসছি আন্টি।”
” এই নে।খেয়ে বল কেমন হয়েছে।”
” ভালো হয়েছে আন্টি।শোন তোমাকে একটা বুদ্ধি দিয়।তুমি আর মা মিলে একটা রেস্টুরেন্টে খুলে ফেলো।তোমাদের খাবারগুলো সব আমি টেস্ট করবো।তারপর তাতে যা লাভ হবে সেগুলো আমাকে দিয়ে দেবে,তা দিয়ে আমি কোথাও থেকে টুর করে আসবো।”
” হাহাহা,ভালো বুদ্ধি দিয়েছিস তো।”
হঠাৎ করে হাসি থামিয়ে আস্থা লতা আন্টিকে প্রশ্ন করে,
” আচ্ছা আন্টি একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?মন খারাপ করবেন নাতো?”
” বল না কি জিজ্ঞেস করবি?তুই তো আমার মেয়ের মতো,জিজ্ঞেস করতে হয় নাকি।”
” আচ্ছা আন্টি তাজ ভাইয়ার রুমে বিছানার পেছনের দেয়ালটাতে যে ছবিটা ছিলো ওটা কোথায়?না মানে আগের বার যখন এসেছিলাম তখন তো ছিল কিন্তু আজ দেখতে পেলাম না।”
লতা আন্টি একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বললেন,” ছবি তো তাজ নামিয়ে ফেলেছে।ফটোফ্রেমটা আমাকে দিয়ে ছবিটা ছিঁড়ে ফেলেছে।”
লতা আন্টির কথা শুনে একদিকে আস্থার খারাপ লাগলেও অন্যদিকে তার ভালোলাগছে,এটা ভেবে যে তাজের মনে বা ঘরে মেয়েটার জন্য কোন জায়গায় নেই।
” আচ্ছা আন্টি তন্বী মেয়েটা বিয়ে কেন ভেঙে দিয়েছে?মেয়েটা কি তার পরিবার জোর করে বিয়ে দিতে চাইছিলো?”
” না সেরকম কিছুনা,তন্বী তো বিয়েতে সম্পূর্ণ রাজি ছিলো কিন্তু কেন যে হুট করে বিয়ে ভেঙে দিয়েছে সেটা আমরা কেউই জানিনা,শুধু তাজ জানে।জানিনা বিয়ের আগে তাদের দু’জনের মধ্যে কি কথা হয়েছে?কথা শেষ করে বের হওয়ার পরেই তন্বী বলে সে এই বিয়ে করতে পারবেনা,আমরা ওদের অনেক বোঝানোর চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু তা মানেনি।তারপর তাজও বললো যে এই বিয়ে হবেনা,যেন আমরা আর কোন কথা না বাড়াই।তাই আমরাও আর কিছু না বলে চলে এসেছি।তুই জানিস মা,এই বিয়ে না হওয়ার কারণে লোকে আমাদের কত কথা বলে।হয়তো সামনাসামনি বলেনা কিন্তু আড়ালে ঠিকই সবাই আমাদের নিয়ে হাসিতামাশা করে।” কথাগুবলো বলতে বলতে লতা আন্টি কান্না করে দেন।
” আন্টি কান্না করোনা।দেখো যা হওয়ার তা হয়ে গিয়েছে।ভাগ্যে যদি ওনাদের দু’জনের মিল না থাকেন তবে এতে আমাদের কোন হাত নেই।তুমি চিন্তা করোনা দেখবে তাজ ভাইয়ার জীবনে এর থেকেও ভালো কেউ আসবে।”
” তাই যে হয়রে আস্থা।”
এরপর আরো কিছুক্ষণ কথা বলে আস্থা লতা আন্টি থেকে বিদায় নেয়।কিন্তু তার মাথা একটা কথা ঘুরছেপাক খাচ্ছে যে কেন তন্বী হুট করেই বিয়েটা ভেঙে দিলো।
.
.
” আপনি আজও এসেছেন?এখনো কি কাজ শেষ হয়নি?” আস্থা জিজ্ঞেস করে তাজকে।
” এখনো তো মাত্র কাজ শুরু হয়েছে,শেষ হতে তো আরো অনেক দেরি।”
” কতদিন লাগবে?”
” হয়তো ২ মাস বা ২ বছর।”
” তাহলে কি কাজ শেষ না হওয়ার পর্যন্ত আপনি প্রতিদিন এখানে আসবেন?” নিজের অজান্তেই জিব করে বসে আস্থা।
” কাজ শেষ না হলে তো অবশ্যই আসতে হবে।”
তাজের কথা শুনে আস্থা মনে মনে খুবই খুশি হয়।যাক এই কাজের বাহানায় তাজ তার আশেপাশে থাকবে,তাহলে কোন না কোনভাবে প্রতিদিন তাকে দেখা তো যাবে।আস্থা আর কিছু বলেছেন না দেখে তাজ তার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে যায়।সবসময়ের মতো আজো আস্থা মায়াভরা দৃষ্টিতে তাজের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ছিল।
” আস্থা।”
হুট করে কারো কন্ঠস্বর শুনে নিজের ভাবনা থেকে বেরিয়ে এলো।আস্থা পাশে তাকিয়ে দেখে নাইরা দাঁড়িয়ে আছে।
” ও তুই।কখন এলি?”
” কিছুক্ষণ আগে।তা যে লোকটার সাথে তুই কথা বলছিলি উনাকে চিনিস তুই?”
” হুম চিনি তো,খুব ভালো করেই চিনি।”
” কে হন উনি তোর?”
” তোকে তাজের কথা বলেছিলাম না?আমাদের উপরের ফ্ল্যাটে থাকেন?”
” যাকে তোর ভালো লাগে সেই তাজ?”
” হুম।ইনিই হচ্ছে সেই আর্কিটেক্ট তাজ রহমান।”
আস্থার কথা শুনে নাইরা কিছু একটা চিন্তা করে।তারপর আস্থাকে নিয়ে ক্লাস রুমের দিকে পা বাড়ায়।তাদের দু’জনকে চলে যেতে দেখে অগ্নি আড়াল থেকে বেরিয়ে আসে।সে নাইরার সাথে কথা বলতে এসেছিলো কিন্তু আস্থাকে দেখে সে আর এগিয়ে এলোনা।
চলবে….