#কি করিলে বলো পাইবো তোমারে
#পর্বঃ০৪
#লেখিকাঃঅনন্যা অসমি
নিজের খাতা নেওয়ার জন্য টিচার্স রুম গিয়েছিলো আস্থা।খাতা নিয়ে ফিরে আসার সময় কাউকে দেখে আস্থা হুট করেই দাঁড়িয়ে পড়ে।সে নিজের চোখের পলক কয়েকবার ফেলে ভালো করে দেখে।না সে ঠিকই দেখেছে,তাজ তার থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে আছে।সে ভার্সিটির প্রিন্সিপালের সাথে কিছু নিয়ে কথা বলছে।আস্থা আশেপাশে একবার পরখ করে নেয়।তারপর দেয়ালের পেছন থেকে লুকিয়ে তাজকে দেখতে থাকে।
প্রায় অনেকক্ষণ দেয়ালের পেছনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তাজকে দেখে চলেছে আস্থা।তার এই কাজটা ভালোই লাগছে।এদিকে যে তার ক্লাসের টাইম চলে যাচ্ছে এতে তার কোন খেয়াল নেই।প্রিন্সিপাল স্যার চলে গেলে আস্থা দেয়ালের পেছন থেকে বেরিয়ে আসে।আর এমনভাবে তাজের সামনে গিয়ে দাঁড়ায় যেন সে হুট করেই তাজের সামনে চলে এসে।
” আরে মিস্টার তাজ আপনি?আপনি এখানে কি করছেন?ও বুঝতে পেরেছি নিশ্চয়ই তিথির কোন বিষয় নিয়ে কথা বলতে এসেছেন?”
” না আমি আমার কাজে এসেছি।”
” মানে?”
” তোমাদের ওই শেষেরদিকে বিল্ডিংটা ভেঙে নতুন বিল্ডিং তৈরি করা হবে তো জানোই?”
” হুম জানি তো সেটা।”
” আমি নতুন বিল্ডিং তৈরির ব্যপারে কথা বলতে এসেছি।কারণ আমাকে আবার অফিসে গিয়েও তো জানাতে হবে বিষয়টা।”
আস্থা মাথা নাড়িয়ে সায় দেয়।সে একবার চোখ তুলে তাজের দিকে তাকাই।তাজ রহমান,পেশায় একজন আর্কিটেক্ট।তাজ দেখতে মুলার মতো ধবধবে সাদা নয়,তার গায়ের রঙটা হচ্ছে উজ্জ্বল শ্যামলা রঙের।উচ্চতা,গড়ন স্বাভাবিক একজন পুরুষ মতো।তাজের মধ্যে অন্যকেউ বিশেষ কিছু দেখতে পাই কিনা তা আস্থার জানা নেই,তবে আস্থা দেখতে পাই।মানুষ বলে মেয়েদের মুখেই নাকি বেশি মায়া থাকে,যে মায়াতে ছেলেরা বাঁধা পরে।কিন্তু একটা ছেলেদের মুখেও যে মায়া থাকে সেটা আস্থা নিজের চোখে দেখেছে।আর সেই মায়াতেই তো আঁটকে পড়েছে আস্থা।
” তুমি ক্লাসে বাইরে কি করছো?”
তাজের কথা শুনে আস্থা নিজের ভাবনা বন্ধ করে বাস্তবে ফিরে আসে।
” হ্যাঁ?”
” বলছি তুমি ক্লাসের বাইরে কি করছো?সবাই তো এখন নিজের ক্লাসে।”
” আসলে..আসলে আমি আমার খাতা নিতে এসেছিলাম।”
” ও আচ্ছা।তাহলে যাও ক্লাসে যাও।নয়তো স্যার বা ম্যাডাম বকা দেবেন।”
” আরেকটু থাকি?” তবে কথাটা আস্থার মনের মধ্যেই রয়ে গেলো।মন না চাইলেও বাধ্য হয়ে তাকে যেতেই হলো।হবে যাওয়ার সময়টায় আস্থা বারবার পেছন ফিরে তাজকে দেখছিলো।
.
.
রিক্সার জন্য ভার্সিটি থেকে কয়েক পা দূরে গিয়ে অপেক্ষা করছে নাইরা।সে সহজে রিক্সায় যায় না তবে আজ তা শরীরটা ভালো নেই,হাঁটার শক্তি নেই আজ তার।তাই রিক্সা করে বাড়ি ফিরবে বলে সে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।দূর থেকে একটা রিক্সা আসতে দেখে নাইরা হাতে ইশারা করে সেটাকে থামায়।কিন্তু যখনই নাইরা উঠতে যাবে তার আগেই কেউ হুট করেই তাতে উঠে পড়ে।সেই ব্যক্তিটা হচ্ছে তাজ।
” মামা চলো তাড়াতাড়ি।”
” এক্সকিউজ মি,আমি রিক্সাটা দাঁড় করিয়েছি।আমার সাথে দরদামও হয়ে গিয়েছে।”
” আপনি প্লিজ অন্যকোন রিক্সা দেখবেন।আসলে আমার খুব জরুরি একটা কাজে যেতে হবে।”
নাইরার দাঁড়ানো শক্তিটুকু আর নেই।তাও সে খারাপ লাগাটা দমিয়ে রেখে বলে,
” আচ্ছা ঠিক আছে আপনি যান।আমি অন্য রিক্সা ডেকে নেবো।”
এটা বলেই নাইরা চলে যেতে নিলে তাজ হুট করে রিক্সা থেকে নেমে নাইরা ডাকে।
” এইযে শুনুন।আপনি যান এই রিক্সা করে আমি অন্য রিক্সায় চলে যাবো।”
” না না ঠিক আছে আপনি যান।আপনার তো জরুরি কোন কাজ আছে।”
” সমস্যা নেই থাক কাজ।আর রিক্সাটাতো আপনি থামিয়েছেন তাই আমার যাওয়াটা ভালো দেখায়না।আর আপনাকে দেখে আমি আন্দাজ করতে পারছি আপনার শরীর ভালোনা।তাই এই রিক্সা করে আপনি তাড়াতাড়ি বাসায় চলে যান।”
” ধন্যবাদ আপনাকে।”
নাইরা রিক্সায় উঠে বসে রিক্সা টানতে বলে।তাজ কয়েক সেকেন্ড রিক্সাটার দিকে তাকিয়ে থেকে অন্য রিকশায় উঠে বসে।
বিকেল বেলা,
আকাশের রঙটা কিছুটা কমলা রঙ ধারণ করেছে।সূর্যও সময়ের সাথে সাথে আস্তে আস্তে অস্ত যেতে শুরু করেছে।একটা বই আর কফির মগ নিয়ে ছাদে এসে বই পড়ছে আস্থা।
অফিস থেকে তাড়াতাড়ি ফিরে আসার কারণে বিকালে তাজের তেমন কোন কাজ ছিলনা।সকালে তার গাছে পানি দেওয়া হয়নি তাই এখন সে পানি দেওয়ার জন্য এসেছে।ছাদে এসে নিজের মতো গাছে পানি দিয়ে চলে যেতে নিলে তার চোখ পড়ে আস্থার ওপর।সে একদৃষ্টিতে বইয়ের দিকে তাকিয়ে আছে,পাশেই তার কফির কাপ।কিন্তু সে কফির কাপটা একদম বেঞ্জটার কর্নারে রেখেছে।তাজ এসে আস্থার কাছে দাঁড়ায়।
” এইযে শুনছো?”
হঠাৎ করেই তাজের গলার স্বর শুনতে পেয়ে আস্থা ভয় পেয়ে যায়।
” আস্তে পড়ে যাবে।”
” ও আপনি।সরি,আসলে হুট করে ডাকলেন তো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।”
” আমিও দুঃখিত,আসলে তোমার মগটা তুমি একদম কর্নারে রেখেছো।একটু হলেই পড়ে যাবে।সেটা বলার জন্যই তোমাকে ডেকেছি।”
তাজের কথা শুনে আস্থা টেবিলের দিকে তাকিয়ে দেখে আসলেই মগটা আরেকটু হলেই নিচে পড়ে যাবে।আস্থা তাড়াতাড়ি মগটা তুলে হাতে নেয়।
” ধন্যবাদ আপনাকে।ভাগ্যিস আপনি বলেছেন।না হলে যদি এটা ভেঙে যেতো,তাহলে তো মা আমার আস্ত রাখতো বলে মনে হয়না।”
” তা কি এতো মন দিয়ে পড়ছিলে যে মগ রাখাতে ধ্যান ছিল না?”
” আসলে বই পড়ছিলাম,তাই খেয়াল করিনি বিষয়টা।”
” খুব বই পড়ো বুঝি?”
” না তেমন একটা না।ওই সময় পেলে ১/২ পৃষ্টা পড়ে থাকি।আপনি বুঝি পড়েন না?”
” না আমার তেমন একটা বই পড়া হয়না।আর সময়ই বা কোথায় থাকে।দিনের অর্ধেক সময়তো কাজের মধ্যে চলে যায়,বাকি কিছুটা সময় পেলে কাজের সাথে সম্পর্কিত বইগুলো পড়ে থাকি।”
” সত্যি বলতে সময় আমরা আসলেই কখনো পাইনা।আমাদের ওই কাজটার জন্য সময়টা বের করে নিতে হয়।এই যেমন আমাকেই দেখুন পড়াশোনাটাকে সামনে রেখে অন্যকোন বই পড়ার সময়টা করতে পারিনা।তবে যেদিন আমি খুব করে চায় বই পড়তে,সেদিন যদি আমি ভালো করে ভাবি তাহলে বই পড়ার জন্য আমি পর্যাপ্ত পরিমাণ সময় ঠিকই বের করতে পারি।আসলে আমাদের ওই বিষয়টার প্রতিদিন ইচ্ছা,আগ্রহ যদি থাকে তাহলে সময় বের করাটা বড় কোন ব্যপার নয়।”
” বাহ্ তুমি তো দেখি খুব যুক্তি দিয়ে কথা বলতে পারো,কথাটা তুমি মন্দ বলি।দেখি এবার থেকে আমিও বই পড়া অভ্যাস করবো।”
” বাহ্,তাতো খুবই ভালো কথা।যদি এই বিষয়ে কোন কিছু জানতে হয় আমাকে বলবেন।আমি যথাসম্ভব সাহায্য করবো।”
এরপর আরো দু-চারটা কথা বলে তাজ চলে যায়।তাজ যাওয়ার কয়েক মিনিট পর আস্থাও নেমে পড়ে,তাকে আবার টিউশনে যেতে হবে।
.
.
” কেমন আছেন আপনি?শরীর ঠিক আছে এখন?” তাজ জিজ্ঞেস করে নাইরাকে।
” আমি ঠিক আছি ধন্যবাদ জিজ্ঞেস করার জন্য।কিন্তু আপনি এখানে?কোন কাজে এসেছেন বুঝি?”
” হুম।আমি একজন আর্কিটেক্ট।আপনাদের ভার্সিটির নতুন বিল্ডিং এর কাজের জন্য এসেছি।আপনাকে দেখলাম যেতে,ভাবলাম একবার জিজ্ঞেস করেনি আপনি কেমন আছেন।আচ্ছা তাহলে আমি আজ আসি,ভালো থাকবেন।”
নাইরা মাথা নাড়িয়ে তাজের কথায় সম্মতি জানায়।তাজ চলে যায় তবে নাইরা কয়েক পা এগোতেই থেমে যায়।সামনে থাকিয়ে নাইরা দেখে অগ্নি তার পথ আঁটকে দাঁড়িয়ে আছে।নাইরা পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিলে অগ্নি হাত দিয়ে বাঁধা দেয়।
” কি সমস্যা আপনার?” কিছুটা বিরক্ত নিয়ে বলে নাইরা।
” ওই লোকটার সাথে তোমার এতো কি?কে হয় লোকটা তোমার?কালও দেখলাম আবার আজও দেখলাম লোকটার সাথে কথা বলছো।”
” আমার মুখ,আমার ইচ্ছে আমি কার সাথে কথা বলবো।আপনাকে কেন কৈফিয়ত দিতে যাবো আমি?কে হন আপনি আমার?আমার কাছের বা পরিচিত কেউ তো নন আপনি।তাহলে আপনাকে কেন এতো কথা বলতে যাবো আমি?আমাকে যেতে দিন,পথ আটকাবেন না।”
অগ্নি আর পথ আঁটকালো না,নাইরা দ্রুত পায়ে স্থানটা ত্যাগ করে।অগ্নি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।নাইরা এই ধরনের ব্যবহারে অগ্নি কষ্ট পেয়েছে।
চলবে…….