#কি করিলে বলো পাইবো তোমারে
#পর্বঃ১৫(১ম অংশ)
#লেখিকাঃঅনন্যা অসমি
প্রায় ১ মাস পর,
অফিস থেকে ফিরে বাসায় ঢুকেই অনাকাঙ্ক্ষিত দু’জন মানুষকে দেখে থমকে যায় তাজ।সোফায় বসে আছে আস্থার মা আর বাবা।দু’জনের মুখ কেমন যেন চিন্তা দেখাচ্ছে।তাজ দু’জনকে সালাম দিয়ে জিজ্ঞেস করে হঠাৎ এখানে আসার কারণ।আস্থা মা কান্নার কারণে কিছুই বলতে পারছেনা।আস্থার বাবা তাজের সামনে এসে তার হাত ধরে বলে,
” আমি জানিনা কেন তুমি এরকম করেছো তবে বিশ্বাস করো আমার মেয়েটা খুব ভালো।আমি বাবা বলে বলছিনা আমার মেয়েটা আসলেই খুব ভালো মনের।”
” আপনি কি বলছেন আঙ্কেল?আমি তো কিছু বুঝতে পারছিনা।”
আস্থার বাবা একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলে,
” কথা মামণি আমাকে বলেছে সব।আমি জানিনা কেন তুমি আমার মেয়ের ভালোবাসাটাকে গ্রহণ করলেনা।কিন্তু তোমার রিজেক্ট করার কারণে আমার মেয়েটা যেন কেমন হয়ে গিয়েছে।আগে থেকেও বেশি চুপচাপ হয়ে গিয়েছে।নিজেকে আরো গুটিয়ে নিয়েছে।ঠিকমতো কথা বলেনা,ঠিকমতো খায়না,সারাদিন বই নিয়ে বসে থাকে।তুমি জানো কিনা জানিনা কিন্তু তার এতো অনিয়মের কারণে কিছুদিন আগে তাকে স্যালাইন দিতে হয়েছে।”
” কি বলছেন আঙ্কেল আপনি?স্যালাইন কেন দিতে হয়েছে?”
” পর্যাপ্ত খাবার না খাওয়ার কারণে তার শরীর দুর্বল হয়ে গিয়েছিলো।যার কারণে মাথাঘুরে পড়ে গিয়েছিলো।”
কিছুক্ষণ চুপ থেকে তাজ প্রশ্ন করে,
” আস্থা এখন কোথায়?”
” ওর রুমে দরজা বন্ধ করে বসে আছে।”
তাজ আর কিছু না বলে সিঁড়ি দিয়ে নেমে নিচে চলে আসে।
” আস্থা দরজা খোলো।আস্থা?”
আরো দু’তিন দরজায় বারি দিতেই আস্থা দরজা খুলে দেয়।আস্থাকে দেখে তাজ একটা ধাক্কা খায়।এই কয়েকদিনে মেয়েটা নিজের কি অবস্থা করে।আগের থেকেও আরো শুকিয়ে গিয়েছে,চোখের নিচে কালো হয়ে গিয়েছে।আস্থা দরজার সামনে থেকে সরে ভিতরে গিয়ে একটা চেয়ারে বসে পড়ে।তাজ ভিতরে এসে হালকা করে দরজাটা চাপিয়ে দেয়।
” কি সমস্যা তোমার?এরকম কেন করছো তুমি?”গম্ভীর গলায় বলে তাজ।তবে আস্থা কোন উওর দেয় না।
” কি হলো কথা বলছো না কেন?”
” আমার ইচ্ছে আমি কি করবো না করবো।তাতে আপনার কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়।” কাঠ কাঠ গলায় উওর দেয় আস্থা।
” অবশ্যই আমার সমস্যা আছে।আঙ্কেল-আন্টি যে এখন আমাদের দোষারোপ করছে।”
” দুঃখিত আপনাকে বিরক্ত করার জন্য।আমি আমার বাবা-মায়ের তরফ থেকে ক্ষমা চাইছি।আপনাকে আমি আর বিরক্ত করবোনা।আপনাকে আমি আর আমার চেহারাও দেখবোনা,নিশ্চিন্তে থাকতে পারেন।এবার আপনি আসুন।”
আস্থার কথাগুলো তাজের বুকে সুঁচের মতো বিঁধছিল।সে মনের মধ্যে পাথর চাপা রেখে রুম বেরিয়ে পড়ে।
তাজ বেরিয়ে যেতেই আস্থা চিৎকার করে কান্না করতে শুরু করে।এতোদিনের জমা চোখের জল আজ সে নির্ধায় বিসর্জন দিচ্ছে।কিন্তু এরমাঝে হুট করেই কোথা থেকে তাজ এসে আস্থাকে জরিয়ে ধরে।সেও কান্না করছে।আস্থা তাজকে জরিয়ে ধরে আরো জোরে জোরে কান্না করতে থাকে।
” কি করে আমি আপনাকে পাবো তাজ?কি করলে আপনি আমার ভালোবাসা গ্রহণ করবেন?” কান্না করতে করতে বলে আস্থা।আস্থার কথা শুনে তাজের ধ্যান ভাঙে।সে নিজেকে শক্ত করে আস্থাকে ছেড়ে দিতে চাইলে আস্থা তাকে আরো শক্ত করে জরিয়ে ধরে।
” আমাকে ছাড়ো আস্থা।”
” না আমি আপনাকে ছাড়বোনা।আপনাকে বলতেই হবে কেন আপনি আমাকে প্রত্যাখান করছেন?কেন আমার ভালোবাসাকে মেনে নিচ্ছেন না?”
” আমি পারবোনা তোমাকে নিজের জীবনের সাথে জরাতে,আর আমি চায়না তুমি আমার জীবনে আসো,আমার জীবনের সাথে তোমাকে আমি জড়াতে চায়না।”
” কেন চান না বলুন?আপনি কি অন্যকাউকে ভালোবাসেন?” তাজের চোখের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে আস্থা।
” না।” অন্যদিকে তাকিয়ে উওর দেয় তাজ।
” তাহলে কেন এরকম করছেন বলুন?কেন আমাকে বারবার ফিরিয়ে দিচ্ছেন?আমি দেখতে সুন্দর নয় বলেই কি আপনি আমাকে ফিরিয়ে দিচ্ছেন?”
” না সেরকম কিছু না।আর আমার কাছে রুপ নয়,গুণটায় বেশি মূল্যবান।”
” তাহলে সমস্যাটা কোথায়?”
” আমার সাথে থাকলে তুমি কোনদিনও সুখী হতে পারবেনা।তোমার পুরো জীবনটা নষ্ট হয়ে যাবে যদি আমি তোমাকে আমার জীবনের সাথে জড়ায়।”
” আপনার ভুল ধারণ এটা।আমার জীবন নষ্ট হবেনা বরং আমি আরো সুখে থাকবো।”
” না যাই হয়ে যাক না কেন আমি তোমাকে নিজের সাথে জরাবোনা।ছাড়ো আমাকে।”
তাজ আস্থাকে ঠেলে দূরে সরিয়ে দেয়।তাজ রুম থেকে বের হতে নেবে কিন্তু আস্থার কথা শুনে থেমে যায়।
” আমাকে বলুন না কেন আপনি এরকম করছেন?আপনার মনে কি আমার জন্য বিন্দুমাত্র জায়গায় নেই।আমি কি করলে আপনাকে পাবো বলুন না,কি করলে আপনি আমাকে মেনে নেবেন।”
তাজ এসে আস্থার পায়ের কাছে বসে।সে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
” তুমি কেন এরকম করছো বলো তো?তুমি এভাবে নিজেকে কষ্ট দিলে আমার মোটেও ভালো লাগছেনা।তোমাকে কষ্ট পেতে দেখে আমারো যে কষ্ট হচ্ছে।বোঝ না কেন তুমি?”
” আপনার কষ্ট হচ্ছে?” হেসে জিজ্ঞেস করে আস্থা।আস্থার হাসির পেছনে তিরস্কারটা তাজ বেশ ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছে।
” আচ্ছা সত্যিই আপনার আমার জন্য কষ্ট হচ্ছে?আমার তো মনে হয়না সেটা।আপনার যদি আমার জন্য একটু হলেও কষ্ট হতো তাহলে আপনি আমাকে ফিরিয়ে দিতেন না।”
” তুমি বোঝার চেষ্টা করো।তুমি আমার সাথে থাকলে কখনই সুখি হতে পারবেনা।তোমার পুরো জীবনটা অন্ধকারে ছেয়ে যাবে।”
” কেন?কেন আপনি এরকম বলছেন?”
তাজ কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে,
” তুমি জানো তন্বী কেন বিয়ের দিন বিয়েটা ভেঙে দিয়েছিলো?”
” না জানিনা,আর জানতেও চায়না।আমার ওসব জানার দরকার নেই।আমার শুধু আপনাকে চায়।”
আস্থার কথা শুনে তাজ হেসে তার দিকে তাকাই।
” কি হলো হাসছেন কেন?”
” এইযে তুমি বলছো তোমার আমাকে চায়,তুমি যেকোন মূল্যে আমাকে পেতে চাও।আমি যদি তন্বীর বিয়ে ভেঙে দেওয়ার কারণটা বলি তাহলে আমাকে তোমাকে দূরে সরিয়ে দিতে হবেনা,তুমি নিজে থেকেই সরে যাবে আস্থা।”
তাজের কথা শুনে আস্থার মনে ভয় হতে শুরু করে যে কি কথা যেটা জানতে পারলে সে নিজেই তাজকে দূরে সরিয়ে দেবে।
” কিসব বলছেন আপনি?আমি তো কিছুই বুঝতে পারছিনা।প্লিজ আমাকে খুলে বলুন।”
” আচ্ছা এটা বলো তুমি কি শুধু আমাকে ভালোই বাসবে নাকি সেটাকে বিয়েতেও রূপ নিবে?”
” অবশ্যই আমি আপনাকে বিয়ে করবো।ভালো তো দূর থেকেও বাসা যায় কিন্তু আমি আমাকে নিজের কাছে রেখে বৈধ ভাবে ভালোবাসতে চায়।”
” কিন্তু আমাকে বিয়ে করলে যে তুমি সুখী হতে পারবে না।আমাকে বিয়ে করলে তোমাকে তোমার খুব মূল্যবান জিনিস হারাতে হবে।”
” আপনি কি বলছেন দয়া করে একটু খুলে বলুন আমাকে।”
” আমাকে বিয়ে করলে তুমি কখনই মা হতে পারবে না আস্থা।”
তাজের কথা শুনে আস্থার শরীর কেঁপে উঠে।সে কাঁপা কাঁপা গলায় প্রশ্ন করে,
” মানে?”
” মানে আমি কখনই বাবা হতে পারবোনা আস্থা।”
” আপনি আমার সাথে মজা করছেন তাই না?আমাকে দূরে সরিয়ে দেওয়ার জন্য মিথ্যা বলছেন তাই না?”
” না আস্থা আমি তোমাকে মিথ্যা বলছিনা,এটাই সত্যি।আর এই সত্যিটার কারণেই তন্বী সেদিন বিয়ের আসরে বিয়ে ভেঙে দিয়েছিলো।”
তাজের কথা শুনে আস্থা তাজকে জরিয়ে ধরে তবে কান্না করেনা।কিছুক্ষণ পর সে তাজকে ছেড়ে দিয়ে উঠে দাঁড়ায়।
” আমি বলেছিলাম তোমাকে এই সত্যিটা জানার পর তুমি নিজেই আমাকে দূরে সরিয়ে দেবে।অবশ্য ভালোই হয়েছে আমাকে আর কষ্ট করতে হয়নি।আমার জন্য কেন তুমি তোমার মা হওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে।”
আস্থা একবার তাজের দিকে তাকিয়ে রুমে থেকে বাইরে বেরিয়ে আসে।বাইরে এসে আস্থা দেখে তার আর তাজের বাবা-মা বাইরে বসে আছে।
” মা-বাবা,আঙ্কেল-আন্টি আপনারা বিয়ের ব্যবস্থা করুন।আমি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ওনাকে বিয়ে করতে চায়।”
” আস্থা তুমি এসব কি বলছো?পাগল হয়ে গিয়েছো?এতো বড় কথা জানার পরেও তুমি কেন এমন পাগলামী করছো?”
আস্থা তাজের থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নেয়।
” আমি যা বলেছি প্লিজ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আয়োজন করো তোমরা।”
” প্লিজ তোমরা কেউ ওর কথায় রাজি হয়ও না।আমাকে বিয়ে করলে যে ওর জীবন শেষ হয়ে যাবে।ও কখনোই মা হতে পারবে না আমাকে বিয়ে করলে।”
তাজের কথা শুনে আস্থা বাদে সবাই চমকে যায়।তাজের বাবা-মা নিজেদের ছেলের কথা শোনে প্রচুর ভেঙে পড়ে।আর আস্থার বাবা তো রেগে সরাসরি মানা করে দেন যে তিনি কোনভাবেই আস্থার সাথে তাজের বিয়ে দেবেন না।
” মা-বাবা আমি বিয়ে করলে ওনাকেই করবো,নয়তো সারাজীবন কুমারিই থেকে যাবো।”
কথা বলেই আস্থা রুমের দরজা বন্ধ করে দেয়।তাজ অসহায় চোখে আস্থা যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।
চলবে…….