কিছু সমাপ্ত পূর্ণতার (পর্ব – ৯)
সুমাইয়া আক্তার
__________________
বৈঠকঘরে বসে আশফিয়ার মাথায় তেল ঘষে দিচ্ছে নাহিদা। চুলের গোড়ায় গোড়ায় বিলি কেটে দিচ্ছে। এই ভ্যাপসা গরমে ঠাণ্ডা তেলের মালিশ আরামদায়ক। সেই আরামে চোখ বন্ধ করে আছে আশফিয়া। কেউ দেখলে বলবে, দুই বোন মুখে কিঞ্চিৎ হাসি ঝুলিয়ে বসে আছে। ইয়াসমিন আজকাল এমন দৃশ্য দেখে খুব’ই অবাক হন। যাদের মাঝে মারমার সম্পর্ক ছিল বুঝা যেত, তাদের এমন মিল দেখে তিনি হতবাক—রাগান্বিতও বটে। তানজিম তো এমন ঘটনাগুলোর সম্মুখীন হয়ে বোধ-বুদ্ধি হারিয়ে ফেলার উপক্রম। মেয়েরা তো খুব’ই হিংসুক হয়। স্বামীর ভাগ করার কথা এক সেকেণ্ড ভাবতে পারে না। ঠিক তেমন’ই ছিল নাহিদা। কিন্তু দুই মাস যেতে না যেতেই তার এমন পরিবর্তন তানজিমকে ক্রোধান্বিত করছে, কষ্ট দিচ্ছে। এখন আশফিয়ার প্রতি সে আরও বেশি রাগ করে থাকে। এক দুইবার তার গায়ে হাতও তুলেছিল তানজিম। আশফিয়া কিছু বলেনি, কিন্তু নাহিদা প্রতিবাদ করেছিল। সেদিন থেকে নাহিদার প্রতিও এক প্রকার রাগ এসে জেঁকে বসেছে। আশফিয়ার প্রতি নাহিদার এত ভাবনা দেখে মহা ভাবনায় পড়েছে তানজিম নিজও। গতকাল বৈশাখের প্রথম দিন ছিল। তানজিমকে না জানিয়ে দু’জনে গেছিল বৈশাখ পালন করতে। বিকেলে বাসায় ফিরেছে মেয়ে বাচ্চার একগাদা কাপড় নিয়ে। হয়তো নাহিদা মা হতে পারবে না ভেবেই আশফিয়ার সন্তানের প্রতি এত টান তার! কিন্তু এই টান তানজিমের নেই। তারউপর আবার অপু নামের ছেলেটা! প্রায়’ই এসে নাহিদার সাথে বসে আড্ডা দেয়। নানানভাবে ফ্লার্ট করে। একদিন শার্টের কলার ধরেছিল তানজিম। দাঁত চিবিয়ে বলেছিল, ‘আমার স্ত্রী’র সাথে এভাবে কথা বললে খুন করে ফেলব তোকে।’
তবুও অপুর লজ্জা হয় না।
‘নাহিদা, আজকের তারিখটা দেখেছ?’
আশফিয়ার কথায় সাদা দেওয়ালে ঝুলতে থাকা ক্যালেন্ডারের দিকে তাকাল নাহিদা। এতদিনে ক্যালেন্ডারের তারিখ উল্টে পাল্টে বৈশাখে এসে থেমেছে। আজ বৈশাখের দ্বিতীয় দিন এবং তানজিমের জন্মদিন।
আশফিয়া হেসে বলল, ‘তুমিও মনে রেখেছ?’
‘কলেজের কাছের বন্ধু বলে কথা!’ কিছু বলল না নাহিদা। আশফিয়া আবারও বলল, ‘কোনো প্ল্যান করেছ?’
‘আজকাল ও আমার সাথে ঠিকমতো কথাই বলে না। কী আর প্ল্যান করব?’
‘অন্তত ছোট একটা সারপ্রাইজ বেচারাকে দাও।’
‘বলছো?’
মুখ তুলে নাহিদার মুখে তাকাল আশফিয়া, ‘হুম।’
মাথায় তেল দেওয়া শেষে আশফিয়া উঠে দাঁড়াল। ধীরে ধীরে নিজের ঘরে যেতে লাগল। প্রথম সন্তান বলে তার ভয়টা একটু বেশি। মাঝে মাঝে হাঁটতেও চায় না, যদি বাচ্চাটির কোনো ক্ষতি হয়! আশফিয়ার প্রায় নয় মাস চলছে। পেটটা আগের থেকে বড় দেখায় তার। অদ্ভুত হলেও সত্যি, আশফিয়া এত ভয় ও চিন্তার মাঝেও বেশ সুন্দরী হয়েছে। তার মুখের দিকে তাকালেই মায়া হয়। গর্ভাবস্থায় প্রত্যেক নারী আরও সুন্দর ও কোমল হয়। তাদের রূপ গোধূলি সন্ধ্যার মতো ঠিকরে বেরোয়। তেমনি নির্ঘুম রাত, চিন্তায় চোখের নিচে কালি, ঠিকমতো খেতে না পারার যন্ত্রণা—সব ছাপিয়ে আশফিয়ার রূপও দিন দিন ঠিকরে বেরোচ্ছে। গতকাল নাহিদা নিজে আশফিয়াকে নিয়ে চেকআপ করাতে গেছিল। তানজিমের কাছে আশফিয়া আজকাল সুরক্ষিত নয়। যখন-তখন চড়, থাপ্পড় দেয়। সুযোগ পেলে মেরে ফেলে এমন অবস্থা।
আশফিয়ার মেয়ে পেটে একদম সুস্থ, সবল আছে। তার সন্তানের এমন উন্নতির জন্য নাহিদার প্রতি কৃতজ্ঞ আশফিয়া।
তানজিমের জন্মদিনের ব্যাপারটা আবার মাথায় এলে নাহিদা ভাবতে বসল কী করা যায়। তানজিমের প্রতি রাগ যেমন, তেমন’ই ভালোবাসা। তাই তার জন্মদিনে কিছু করাটা দায়িত্ব। কিন্তু একা কিছু করা অসম্ভব। আশফিয়া তো বেলুন ফুলানো ছাড়া অন্যকিছু করতে পারবে বলে মনে হয় না! তৎক্ষনাৎ অপুর চিন্তাটা মাথায় এলো। নিজের প্রতি একটু বিরক্ত হলো নাহিদা। তবে অপু ছাড়া আর কাউকে কিছু বলাও যাবে না। কারণ, কারো সাথে তেমন চেনাজানা নেই। অবশ্য একটু বিরক্ত লাগলেও অপুকে ঘৃণা করে না আশফিয়া। মেয়েরা চায়, তাকে কেউ সুন্দরী বলুক, কেউ তার প্রশংসা করুক—এ ব্যাপারে অপু একদম মহাসমুদ্র! সারাক্ষণ তার মুখে প্রশংসার ঢেউ উঠতে থাকে। নাহিদাও একটি মেয়ে, তাই তারও এসব ভালো লাগে। তবে অপু খুব বেশি বাড়াবাড়ি করলে সরাসরি বারণও করে দেয়।
অপু! অপু ছাড়া আর কেউ সাহায্য করার মতো মানুষ নেই। মোবাইল অন করে অপুর নাম্বারে কল করল নাহিদা। নাম্বারটা এতদিন ফোনবুকে অযথা পড়ে ছিল। এতদিন পর কাজে এলো!
একবার রিং হতেই ওপাশ থেকে শোনা গেল, ‘হ্যালো, মিস বাংলাদেশ!’
নিঃশব্দে হাসল নাহিদা, ‘কোথায় আছ?’
‘নিজের ঘরে। কেন? কোথাও বেরোবে?’
কোথাও বেরোনোর কথা শুনেই হৃদয় কেঁপে উঠল নাহিদার। দুই মাস আগের ঘটনাটা সে ভোলেনি। অপুর সাথে বের হয়ে যাওয়ার পর শপিংমল, কফিশপে সময় কাটিয়ে সন্ধ্যার সময় ফিরেছিল তারা। নাহিদা বাড়িতে এসে দেখে তানজিম বসে আছে। হাতের পাশে থাকা টেবিল ল্যাম্পের সুইচটা অন-অফ করছে। শপিংব্যাগগুলো রেখে চলে যায় অপু।
উঠে দাঁড়ায় তানজিম। নাহিদার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করে, ‘শপিং করলে?’
তানজিমের ঠাণ্ডা স্বর শুনেই নাহিদার গলা শুকিয়ে যায়। নাহিদা কিছু বলার পূর্ব মহূর্তেই একটা জোরদার থাপ্পড় এসে গালে আছড়ে পড়ে। এমন কাণ্ডে হতবাক নাহিদা। কারণ তানজিমের এই রূপ সে কোনোদিন দেখেনি। সেদিন নাহিদার গায়ে প্রথম হাত তুলেছিল তানজিম। আর খুব ভালোভাবেই হাত তুলেছিল। নাহিদা কিচ্ছু বলেনি। আশফিয়ার গালেও সেদিন কয়েকটা থাপ্পড় দিয়েছিল তানজিম। সেদিনের পর থেকে নাহিদা-আশফিয়ার সম্পর্ক আরও বেশি ভালো—এক গোয়ালের গরু হলে যেমন হওয়ার কথা, ঠিক তেমন তাদের অবস্থা। তারপর থেকে অপুর সাথে মাপজোক করে কথা বলে নাহিদা।
‘হ্যালো—’ অপুর জোরালো গলা, ‘তুমি শুনতে পাচ্ছ?
জোরালো কণ্ঠস্বরে আঁতকে উঠল নাহিদা, ‘হ্যাঁ, হ্যাঁ বলো।’
‘কোথাও বেরোবে?’
‘না। তুমি একটু এসো তো। দরকার আছে।’ বলে দ্রুত কল কেটে দিল নাহিদা।
__________
দরজায় বারবার আঘাত করছে তানজিম। কিন্তু ভেতর থেকে কেউ দরজা খুলছে না। দাঁড়িয়ে থেকে থেকে পা-গুলো ব্যথা করছে। এমনিতেই আজ অতিরিক্ত কাজের চাপ ছিল। সেসব শেষ করতে গিয়ে ফিরতে দেরি হলো। কাল আবার একগাদা কাজ ধরিয়ে দিয়েছে অফিসের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। সেই টেনশনে মাথা ফেটে যাচ্ছে তানজিমের। তারউপর দরজার সামনে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকা তার জন্য কষ্টের। আরেকবার ধুমধাম করে আওয়াজ করতেই দরজা খুলে গেল। দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করল তানজিম। সমস্ত জায়গায় অন্ধকার বিরাজ করছে।
তানজিম গলা উঁচু করে ডাকল, ‘নাহিদা।’
কেউ উত্তর দিল না। তানজিম ফোন বের করে আলো জ্বালানোর পূর্বেই ঘরের আলো জ্বলে উঠল। চমকে চারিদিকে তাকাল তানজিম। ফ্লোরে নানান রঙের বেলুন পড়ে আছে। দেওয়ালে দেওয়ালে কিছু নকল ফুল, রঙিন কাপড়। বৈঠকঘরের মাঝখানে ছোট একটা টেবিল। তারউপর একটা কেক রাখা। তানজিম ভ্রু কুঁচকে ফেলল। তখন নাহিদা, আশফিয়া, অপু, ইয়াসমিন সবাই বের হলো আড়াল থেকে। অপু আর আশফিয়াকে দেখে রেগে গেল তানজিম। ভ্রু আরও কুঁচকে গেল। তানজিমের মুখ দেখেই নাহিদা বুঝল তার অসন্তোষ। নাহিদা আর আগ বাড়িয়ে কিছু বলল না। তানজিম সবার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রেখে ঘরে চলে গেল। ইয়াসমিন হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে থাকলেন। এই ছেলে তো এমন ছিল না! হঠাৎ কী হলো?
ইয়াসমিন নাহিদার পাশে এসে বসলেন, ‘কী হয়েছে তানজিমের?’
‘কাজের চাপ হয়তো।’
নাহিদার উত্তর পছন্দ হলো না ইয়াসমিনের—মনে হলো যেন কবিতার ছন্দপতন। তিনি অপুর দিকে তাকালেন৷ অপু কিসের যেন আশ্বাস দিল।
অপু নাহিদার পাশে দাঁড়িয়ে বলল, ‘তানজিম ভাইয়ার সাথে তোমার একবার কথা বলা উচিৎ। আমরা এত কম সময়ে, এত কষ্ট করে সাজসজ্জা করিয়ে তার জন্মদিন সেলিব্রেট করতে চাইলাম, আর সে এমন আচরণ করবে তা মানা যায় না। তুমি একটু কথা বলো।’
ঘরের দরজা খুলতেই পেছন ফিরল তানজিম। নাহিদা এসেছে। তার মুখে একটু ভয় আর চিন্তা। হাতগুলোও কাঁপছে অল্প অল্প। দেখেই বুঝা যায়, সে ইতস্তত করছে। পাত্তা না দিয়ে নিজের কাজ করতে থাকল তানজিম। নাহিদার এখন মোটেও ইচ্ছে করছে না তানজিমের সাথে কথা বলতে। কেমন একটা সংকোচ এসে আঁকড়ে ধরছে। বিরক্ত লাগছে। তবুও ভেতরের সব অস্বস্তি, বিরক্ত একপাশে রেখে বিছানায় বসল নাহিদা। আর একবারও মুখ তুলল না তানজিম। নাহিদা কী বলে শুরু করবে ভেবে পেল না, শুধু তানজিমের দিকে তাকিয়ে থাকল। যেন কতদিন দেখেনি!
অবশেষে তানজিম নিজেই বিরক্ত হয়ে জিজ্ঞাসা করল, ‘কী দেখছ? কিছু বলবে?’
‘হ্যাঁ।’ চোখ ফিরিয়ে নিল নাহিদা, ‘তুমি ওভাবে চলে এলে কেন?’
‘তো কী করতাম? যাদের আমি পছন্দ করি না, তারাই সামনে এসে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাচ্ছে। সুচ হয়ে ঢুকে ফাল হয়ে বেরোতে চাইছে প্রত্যেকজন।’
‘ওরাই কিন্তু তোমার জন্মদিনের আয়োজন করেছে।’
‘এই ব্যাপার?’
নাহিদাকে কিছু বলতে না দিয়ে বেরিয়ে গেল তানজিম। বৈঠকঘরে থাকা বড় স্ট্রবেরি ফ্লেভাবের কেকটাকে প্লাস্টিকের ছুরি দিয়ে নষ্ট করে ফেলতে লাগল। বৈঠকঘরে হওয়া এ হাস্যকর তাণ্ডবে সবার বাকশক্তি লোপ পেল যেন। কেক নষ্ট করে ঘরের সব সাজগোজ নষ্ট করে ফেলল তানজিম। তানজিমের এমন আচরণে অপমানবোধ করে ইয়াসমিন বেরিয়ে গেলেন।
নাহিদা একটু রেগে গেল। তানজিমকে ধাক্কা দিয়ে গলা উঁচিয়ে বলল, ‘তোমার সমস্যা কী? আমরা সবাই এত কষ্ট করে তোমার জন্মদিনে এসব করলাম, আর তুমি নষ্ট করে দিলে?’
অপু এসে নাহিদার হাত ধরে পেছনে নিয়ে যেতে লাগল, ‘বাদ দাও।’
মাথা আরও বিগড়ে গেল তানজিমের। রাগে হাতের মুষ্টি শক্ত হলো। দাঁতে দাঁত চিবিয়ে অপুর উদ্দেশ্যে বলল, ‘ওর হাত ছাড়।’
অপু নাহিদার হাত ছাড়ার পূর্বেই একটা ঘুষি তার ঠোঁটের নিচ বরাবর পড়ল। সোফায় উল্টে পড়ল অপু। ঠোঁটের পাশটা ঝমঝম করছে। মহূর্তে মুখের ভেতরটা নোনতা হয়ে গেল। সে ঠোঁটে হাত দিয়ে দেখল, রক্ত বেরোচ্ছে। নাহিদার বাঁধা উপেক্ষা করে অপুকে পরপর কয়েকটা ঘুষি আর থাপ্পড় দেয় তানজিম। কিন্তু অপু কিচ্ছু বলে না।
অনেক কথা কাটাকাটি, আঘাত, ক্ষত দিয়ে শেষ হলো তানজিমের জন্মদিন। প্রচণ্ড হতাশ হয়ে বসে আছে নাহিদা। আশফিয়া হতাশ হলেও মুখে তার একটু খুশির চিহ্ন। অপুর গালে, ঠোঁটে কেটে গেছে। সে চুপচাপ নাহিদার লাগিয়ে দেওয়া ঔষধরের তেজ সহ্য করে যাচ্ছে। তানজিম বেরিয়ে গেছে; এক ঘণ্টার মতো হলো তার পাত্তা নেই।
অপুর সুন্দর চেহারায় আঘাতের চিহ্ন বেশ বেমানান। তারউপর মলিন মুখ। নাহিদার কিচ্ছু ভালো লাগছে না।
অপু উঠে দাঁড়াল, ‘আমি আসি। তুমি খেয়েদেয়ে শুয়ে পড়।’
নাহিদা অপুকে যেতে দিল না। ইয়াসমিন অপুর এমন অবস্থা দেখলে আজকেই তাদের ঘর থেকে বের করে দেবেন। এই অবস্থায় নতুন কোনো ঝামেলা চাইছে না নাহিদা। তাই অপুকে কৌশলে আটকে দিল। আজকের রাতটা সে এখানেই থাকবে। সংবাদটা শুনে বিরক্ত হলো আশফিয়া। চুপচাপ না খেয়ে ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করল সে।
রাত বারোটা।
ঘুম ভেঙে গেল আশফিয়ার। ক্ষুধায় পেট মোচড় দিচ্ছে তার। বাচ্চার কথা না ভেবে রাগ আর জিদ ধরে বড় ভুল করে ফেলেছে সে। এই সময় বাচ্চাকে একদম কষ্ট দেওয়া যাবে না। আসলে রাগটা ছিল অপুর ওপর। অপুর থেকে বারবার আড়ালে থাকতে চেয়েছিল সে। কিন্তু তা হয়নি। সন্ধ্যার সময় অপু আর আশফিয়া মুখোমুখি পড়ে যায়। অপু অবাক হয়ে যায়। পরক্ষণেই পরিস্থিতি সামলে নিয়ে একটা ডিল করে। তারা দু’জন দু’জনকে চেনে, তা কাউকে বলবে না। অপু ছেলেটা বেশি সুবিধার নয় ভেবে সাময়িকভাবে রাজি হয়ে যায় আশফিয়া। মনে মনে বলতে থাকে, ‘চান্দু, অপেক্ষা করো। নাহিদাকে একটু একা পেলেই সব জানাব’। কিন্তু নাহিদাকে আর একা পাওয়া হলো না! অপু সবসময় চেপটে থাকল। নোংরা ছেলে একটা!
আস্তে আস্তে উঠে দরজা খুলল আশফিয়া। চারপাশ নিকষ কালো অন্ধকার। প্রতিদিন আলো জ্বালানো থাকে, আজ হঠাৎ আলো বিহীন! হাতড়ে সুইচ পেয়ে জিরো বাল্ব জ্বালালো সে। এই অসময়ে কারো ঘুম নষ্ট হোক, তা কাম্য নয়। রান্নাঘরে খাবার ঢেকে রাখা আছে। খাবারটুকু খেয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তুলে ঘরে ফেরার জন্য পা বাড়ালো আশফিয়া। এমন সময় একটা অবয়ব এসে তার পাশে দাঁড়াল। অবয়বটা তানজিমের। তানজিম মুখটা উপরে তুলতেই ভয় পেল আশফিয়া। তানজিম হাজারও আক্রোশ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
নাহিদার রাতগুলো আজকাল নিদ্রাহীন কাটে। ঘুম আসে না। আগে তানজিম জোর করে হলেও জড়িয়ে ঘুমাতো। এখন সেটাও করে না। এত বিরক্ত? এখন জাফরিনের সাথে কথা বলার প্রয়োজনীয়তা বোধ হচ্ছে। ফোনের স্ক্রিনে বারোটা বেজে সতেরো মিনিট। এত রাতে নিশ্চয় তিনি ঘুমিয়েছেন। গতকাল তিনি কল করেছিলেন। অনেক অনুপ্রেরণা দিয়েছেন। একটি মেয়ের জীবনে স্বামী, সংসার কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা বুঝিয়েছেন। মায়ের জন্যই আজও এক ঘরে তানজিমের সাথে থাকা হয় নাহিদার। নইলে সে যেমন মেয়ে, এতদিন টিকে থাকতে পারত না। চিৎ হয়ে চোখ বন্ধ করল নাহিদা। তখন’ই আওয়াজটা এলো—একটা আত্মচিৎকার! ধড়ফড় করে উঠে বসল নাহিদা। এটা তো আশফিয়ার চিৎকার। ডান পাশে তানজিমের অনুপস্থিতি আর আশফিয়ার চিৎকারের সংযোগ ঘাবড়ে ফেলল নাহিদাকে। দ্রুত সে বাইরে এলো। আশফিয়ার ঘরে ঢুকল। সেখানে আশফিয়া নেই। বৈঠকঘর, ডাইনিং সাইট সব দেখে রান্নাঘরে এগোলো সে। রান্নাঘরে ঢুকতে না ঢুকতেই হালকা সবুজ আলোয় কালচে তরলের ধারা দেখে আঁতকে উঠল নাহিদা। দেখল, আশফিয়ার দেহটা আড়া-আড়ি ভাবে রান্নাঘরে পড়ে আছে!
(চলবে)