কিছু সমাপ্ত পূর্ণতার পর্ব-০১

0
2767

কিছু সমাপ্ত পূর্ণতার (পর্ব – ১)
সুমাইয়া আক্তার
__________________
মাঘ মাস। বাইরে এতটুকু দূরের কিছু চোখে পড়ছে না। সবকিছু ধোঁয়াশা, মলিন। বৈঠকঘরে ঠকঠক করে কাঁপতে কাঁপতে বসে আছে ছয় মাস পূর্বে বিবাহিত এক দম্পতি এবং প্রায় তেইশে পা পড়া এক অবিবাহিতা মেয়ে, আশফিয়া। যার গর্ভে একটা সন্তান বেড়ে উঠছে খুব ভালোভাবেই। আজকাল বিয়ের আগে এ ঘৃণিত কর্মকাণ্ড নাকি প্যাশন! বাংলাদেশটাও আমেরিকার মতো হয়ে যাচ্ছে, আফসোস।

নাহিদার বিরক্ত লাগতে শুরু করল। তাই সবকিছু স্বাভাবিকভাবে নেওয়ার ভঙি ধরে সামনে ধোঁয়া ওঠানো চায়ের দিকে দৃষ্টি ফেলল সে। এই ঠাণ্ডায় উষ্ণ কিছুকে কাছ-ছাড়া করতে ইচ্ছে করছে না। চায়ের কাপে মাত্র’ই চুমুক দিতে যাচ্ছিল নাহিদা—এমন সময় একটা কথা শুনে থমকে গেল।
আশফিয়ার স্বর ঘরে প্রতিধ্বনিত হলো, ‘আমার গর্ভে যে সন্তানটি আছে, সেটি তানজিমের।’
কিছু মহূর্ত নীরবে কেটে গেল তিনটি মানুষের। কথাটার আগা-মাথা যেন কিছুই বুঝা গেল না। কেউ লজ্জা, কেউ বিস্ময়, আর কেউ বিভ্রান্ত হয়ে দম বন্ধ করে রইল।
‘কী?’ অনেক্ষণ পরে পরিহাসের সুরে বলে উঠল নাহিদা। এই মহূর্তে নিজেকে সবচেয়ে বিভ্রান্ত আবিষ্কার করল সে। পাশের সোফায় বসে থাকা স্বামীর দিকে তাকাতেও ভুলে গেল যেন। আশফিয়া মেয়েটি কি পাগল, না কি নাহিদা কিছু ভুল শুনলো? এমন সময় নাহিদা হাসিতে কথাটা উড়িয়ে দিয়ে আবারও বলল, ‘কী বলছেন এসব?’
অবিবাহিতা আশফিয়া লজ্জায় মাথা নিচু করল। অস্পষ্ট স্বরে বলল, ‘সত্যি বলছি। সন্তানটি তানজিমের।’

নাহিদার চোখের বিস্ময়টুকু নিজের পরিধি বাড়িয়ে মহূর্তে সারা মুখে ছড়িয়ে পড়ল। হাত কাঁপতে লাগল। মনে হতে লাগল দূরের ওই আকাশটা এক মহূর্তের জন্য তার মাথায় ভেঙে পড়েছে। একজন অবিবাহিতা মেয়ে যখন গর্ভে সন্তান নিয়ে দাবি করে, গর্ভের সন্তান আরেক মেয়ের স্বামীর; তখন মেয়েটির ঠিক কেমন অনুভূতি হতে পারে তা জানা নেই নাহিদার। তবে এই মহূর্তে সে কোনো অনুভূতি টের পাচ্ছে না। নিজেকে পথে পড়ে থাকা কয়লার টুকরো মনে হচ্ছে। যার কোনো অনুভূতি নেই, শক্তিও নেই অনুভূতি ধারণ করার।

তানজিমের দিকে বিভ্রান্তি নিয়ে তাকাল নাহিদা।
তানজিম বিস্ফোরিত চোখে পলকহীন আশফিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। মুখে বিস্ময়। পরক্ষণেই চোয়াল শক্ত হতে লাগল তার। জোর গলায় বলে উঠল, ‘তুমি কী পাগল হয়ে গেছ? আমরা শুধুমাত্র বন্ধু ছিলাম, ব্যাস। মানছি আমি তোমাকে পছন্দ করতাম। তারমানে এই নয় যে তুমি তার সুযোগ নিয়ে সন্তানটা আমার কাঁধে চাপিয়ে দেবে।’
ভীষণ আহত হলো আশফিয়া। ছলছল চোখে চেনা-অচেনায় মিশে থাকা তানজিমের দিকে তাকাল সে। বলল, ‘আমি কোনো সুযোগ নিচ্ছি না তানজিম। সন্তানটি সত্যিই তোমার। চাইলে তুমি পরিক্ষা করে দেখতে পার।’
‘প্রয়োজনে তা’ই করব আমি।’
হাসার চেষ্টা করে উঠে দাঁড়াল আশফিয়া। এক নজর দৃষ্টিসীমার মধ্যে আবদ্ধ দম্পতির দিকে তাকিয়ে পিছু ফিরল সে। বৈঠকখানা থেকে বের হতে গিয়ে দরজার হাতলে হাত রেখে বলল, ‘তানজিম, কিছু ভুলে যাচ্ছ না তো?’
বিরক্তে নাক-মুখ কুঁচকে গেল তানজিমের। রাগান্বিত গলায় বলে উঠল, ‘কী ভুলে যাব আমি?’ আশফিয়া কিছু বলতে চাইতেই থামিয়ে দিল তানজিম, ‘দয়া করে বেরিয়ে যাও।’
‘হয়তো কিছু ভুলে যাচ্ছ।’ বলে একটা ডায়েরি ছুড়ে দিয়ে আর দাঁড়াল না আশফিয়া। দ্রুত পায়ে বৈঠকঘর ত্যাগ করল সে।

টি-টেবিলে তিন কাপ ঠাণ্ডা চা অসহায় ভঙিতে পড়ে আছে। বাইরে হাড় কাঁপানো শীত, সাথে মৃদু বাতাস। জানালা দিয়ে সেটুকু প্রবেশ করে তানজিমকে কাঁপিয়ে দিচ্ছে। নাহিদার চোখে উপচে পড়া জল। গায়ে জড়ানো কম্বলটা কাঁধের নিচে পড়ে কোমরে আটকে আছে। শরীরে আর কোনোরকম শীতের পোশাক নেই তার। কম্বলটা যে পড়ে গেছে সে খেয়ালও নেই। আশফিয়া যে সোফায় বসে ছিল, সে সোফার দিকে তাকিয়ে আছে নাহিদা। চোখের জল এবার থুতনি বেয়ে গণ্ডদেশে গড়িয়ে গেছে।
তানজিম নিজের দিকে ফেরালো নাহিদাকে। চোখের জল মুছে দিয়ে বলল, ‘কেঁদো না প্লিজ। সব ঠিক করে দেব আমি। ওর নিশ্চয় কোথাও ভুল হচ্ছে।’
কিছু বলছে না নাহিদা। এহেন আঘাতে যেন বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেছে সে। তানজিম তাকে জড়িয়ে নিল। এই মেয়েটিকে বড্ড ভালোবেসে ফেলেছে সে। মা মারা যাওয়ার পর এই দৃঢ়, সুনিপুণ চরিত্রের মেয়েটিকে জীবনে জড়িয়ে দিয়ে বাবা নামক ছায়াও তার মাথার ওপর থেকে সরে গেছে। তাই ভালোবাসা বলতে এখন একমাত্র নাহিদা। সেজন্য হয়তো নাহিদার সামান্য কষ্টেও হৃদয়ে তুফান আসে, ভেঙে দেয় দক্ষ কারিগরদের গড়া শহর।

সহসা নাহিদা নিজেকে তানজিমের আলিঙ্গনমুক্ত করল। ম্লান মুখে কম্বলটা সোফায় ফেলেই ভঙ্গুর ভঙিতে ঘরে চলে গেল। তানজিম আহত হয়ে একা পড়ে রইল তিন কাপ ঠাণ্ডা চায়ের সাথে। ভেতর থেকে দীর্ঘশ্বাস এসেও কোথায় যেন আটকে গেল। শুকনো ঢোক গিলে নিজেকে সোফায় আছড়ে ফেলল সে।

ঘরের মধ্যে ঢুকেই সব পর্দাগুলো জানালার সামনে টেনে দিল নাহিদা। এখন সে অন্ধকার ঘরে চুপচাপ শুয়ে থাকবে। প্রচণ্ড মন খারাপ হলে এমনটা করে থাকে নাহিদা। আজও তার প্রচণ্ড মন খারাপ। বলতে গেলে, মোটামুটি এ দীর্ঘ জীবনে এমন মন খারাপ এই প্রথম। তাই ঘরটা সম্পূর্ণ অন্ধকার দরকার। কিন্তু দিনের কিছু দুষ্টু আলো উঁকিঝুঁকি দিয়ে নাহিদাকে বিরক্ত করছে। কম্বলটা মুখে টেনে দিয়ে ফুঁপিয়ে উঠল সে। এই তো কয়েক মিনিট আগেও সব ঠিক ছিল। প্রত্যেক সকালের মতো উঠে চা করে, আলতো স্বরে তানজিমের ঘুম ভাঙানো থেকে শুরু করে আশফিয়া আসার আগ পর্যন্ত। তারপর সব কেমন হয়ে গেল। সেই সময় তানজিমের পাস্তা খাওয়ার আবদার নিয়ে রান্নাঘরে আবদ্ধ নাহিদা। হঠাৎ বেল বাজতেই তানজিম পেপার ছেড়ে উঠে দরজা খোলে আর ঝড়ের তাণ্ডব নিয়ে প্রবেশ করে আশফিয়া। কে জানতো এমন হবে! নাহিদা আগে থেকে যদি জানতো তবে আজকের দরজাটা সে খুলতে দিত না।

কান্না থামানোর হাজারও চেষ্টা একে একে ব্যর্থ হচ্ছে নাহিদার। চিৎকার করে কাঁদলে বোধহয় ভালো হতো। কিন্তু বয়সটা এমন হয়েছে যে চিৎকার করে কাঁদার উপায় কেড়ে নিয়েছে। তাই গুমরে গুমরে কাঁদতে হচ্ছে। এতে যেন মনের শহরে কালো মেঘের ঘনোঘটা আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। মেয়েদের এই এক সমস্যা, প্রিয়জনের ভাগ তারা করতে পারে না, জানেও না। তাই কষ্টটা তাদেরকেই বেশি পোহাতে হয়।

বিকেল হতে চলেছে প্রায়। বৈঠকঘরের দেয়াল ঘড়িটা টং টং করে চারবার শব্দ করে থেমে গেল। তখনও সোফায় চুপচাপ শরীর এলিয়ে আছে তানজিম। হাতে আশফিয়ার রেখে যাওয়া ডায়েরি। কাঁচা হাতে এলোমেলো লেখা একগুচ্ছ শব্দ। কপালে মোটা ভাজ ফেলে সবটুকু পড়ছে তানজিম। সারা ডায়েরিতে মাত্র তিনটি পাতায় লেখা কিছু কথা। অন্তিম পাতায় লেখা আছে একটা তারিখ—উনিশে নভেম্বর। মাত্র একটা তারিখ’ই পুনরায় মনে করিয়ে দিল আদ্যন্ত কিছু ঘটনা। যেগুলো মনে পড়তেই নাহিদার মতো তানজিমও বিভ্রান্ত হয়ে গেল। ডায়েরিতে লেখা কথাগুলোর সাথে তানজিমের মনের কথাগুলোর মিল নেই। হয়তো সেদিন আশফিয়ার প্রতি প্রচণ্ড দুর্বল হয়ে পড়েছিল সে, কিন্তু জল এতদূর গড়ায়নি বলেই তার ধারণা। যদিও সম্পূর্ণ কোনোকিছুই মনে পড়ছে না তার। কেন তা কে জানে! এখন আশফিয়াকে ফোন করে আচ্ছামতো ঝাড়ি দিতে ইচ্ছে করছে তানজিমের। আশফিয়া নামটাকে সে তো ভুলতেই বসেছিল। আজ হঠাৎ ছয় মাস পরে কেন তাকে ফিরতে হলো? নাহিদা হয়তো খুব কষ্ট পেয়েছে। কিন্তু আসলেই আশফিয়ার কথার মতো কিছু ঘটেছিল কী?

সোফা থেকে উঠে সকালের চা-গুলো সরিয়ে ঘরের দিকে পা বাড়ালো তানজিম। সেই সকালে ঘরে ঢুকেছে নাহিদা; এখন পর্যন্ত একবারও বাইরে বেরোয়নি সে। দুপুরের ভাতও খায়নি। তানজিমও খায়নি অবশ্য। কিন্তু সাহস হয়নি নাহিদাকে একবার ডাকার। রাগ, বিরক্ত, চিন্তায় মাথা ফেটে যাচ্ছে তানজিমের। তারউপর বুকের মধ্যে কষ্ট বেড়েই চলেছে। একজন স্ত্রী কখনো এমন পরিস্থিতির স্বীকার হলে কী হতো তানজিম জানে না, কিন্তু সে এমন পরিস্থিতির স্বীকার হয় লজ্জিত, কুণ্ঠিত। এতদিন গর্ব করে নাহিদা বলত, ‘আমি আদর্শ একজন স্বামী পেয়েছি। যার মতো আমাকে কেউ ভালোবাসতে পারে না।’
আজ নাহিদার কথাগুলো কেমন হবে? সে হয়তো ভাবছে তানজিমের সম্পর্কে জেনে আসা তথ্যগুলো ভুল। তানজিমের প্রতি অনুভূতি সত্য হলেও মানুষটি ভুল। আসলেই কী এমন?

অন্ধকার ঘরে আলোর কিছু টুকরোর ছিনিমিনি খেলা। তারমধ্যে দুই টুকরো আলো নাহিদার পাতলা ঠোঁট ছুঁয়ে দিচ্ছে। শুকনো ঢোক গিলে এগিয়ে গেল তানজিম। হাঁটু গেড়ে বসল, তাকিয়ে থাকল ঘুমন্ত নাহিদার তৈলাক্তভাব ফর্সা মুখটার দিকে। গালে আলোর টুকরোর ছটায় চকচক করছে। কৃষ্ণবর্ণ চোখের বড় বড় পাতায় নাহিদার সংগোপনে আছড়ে পড়েছে ভেজা কালো চুল। একটু আগেই হয়তো গোলস করেছে সে।
নাহিদার চুলগুলো সরিয়ে দিতেই বুক কেঁপে উঠল তানজিমের। নাহিদার চোখে জলের শুকনো চিহ্ন। এমনিতেই কষ্টে বুকটা ভার হয়ে আছে, তারউপর নাহিদার চোখে জলের শুকনো চিহ্ন রিতীমত কান্নার দোরে টেনে নিয়ে গেল তানজিমকে। কিন্তু সে কাঁদতে পারছে না। কাঁদলে মনটা হালকা হতো। কোথায় যেন সে পড়েছিল, আবেগ থেকে যে কান্নার সৃষ্টি হয় তাতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে স্ট্রেস হরমোন এবং টক্সিন থাকে, যা শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। এই কান্না মূলত শরীরকে এক প্রকার বিষমুক্ত করে ফেলে। পাশাপাশি এন্ডরফিন হরমোন তৈরি হয়, যা মনকে সতেজ করে তোলে। ফলে পূর্ববর্তী সময়ের থেকে পরবর্তী সময়ে কষ্ট কম হয়ে ভালো অনুভব হয়। তাই বর্তমানে কান্না করা খুব দরকার তানজিমের। কিন্তু পুরুষ বলে কান্না এসেও আসছে না। তার বাবা বলত, পুরুষদের না কি কাঁদতে নেই। কষ্টেও কান্নাগুলো বুকে জমা করে রাখতে হয়। আচ্ছা এমন পরিস্থিতিতে তার বাবা কী করত? কাঁদত না?

তানজিম চোখের কার্ণিশ মুছে ঘর থেকে বেরোতেই নাহিদা চোখ খুলল। এতক্ষণ জেগেই ছিল সে। নাক টেনে চোখের ভেজা পাপড়ি মুছে নিল নাহিদা। এরমধ্যেই গলাটা কেমন ভেঙে গেছে। হৃদয়ের ভাঙনটা যে আরও বেশি হয়েছে তা চেপে রাখার চেষ্টায় মত্ত সে। তখন’ই হঠাৎ বালিশের নিচে ফোনটা ভাইব্রেট করতেই বাম হাতের উল্টোপাশ দিয়ে চোখ মুছল নাহিদা—তানজিমের ফোন। নাহিদা কিছু না ভেবে বালিশের নিচ থেকে বের করল সেটা। দেখল, স্ক্রিনে ভেসে আছে ‘নাহার’ নাম। লম্বা একজোড়া নিঃশ্বাস নিয়ে যতটা সম্ভব স্বাভাবিক হলো সে। অতঃপর ফোনটা কানে ধরল।
প্রথমে সব চুপচাপ। পরে ওপাশ থেকে ভেসে এলো আশফিয়ার কণ্ঠস্বর, ‘তুমি একবারও ফোন করলে না যে? না কি নাহিদা এখনও পাশে আছে? ওকে ছাড়বে তো তানজিম? তোমার এই নাহারকে আগলে নেবে তো? না কি শেষমেশ আমাকে আর আমার সন্তানকেই পথে ফেলে দেবে?’
বিস্ময়ের শেখরে পৌঁছালো নাহিদা। দুই ঠোঁট আলাদা হলো তার। অস্ফুট স্বরে বলে উঠল, ‘আশফিয়া, তুমিই সেই নাহার?’
ওপাশ থেকে তৎক্ষনাৎ কল কেটে দেওয়া হলো। আবারও নাহিদার চোখের সামনে সব ঘোলা। চোখ ভরে উঠল জলে। আজকের পর হয়তো এই চোখগুলো আর শুকনো থাকবে না। কিন্তু এই চোখের জল কার জন্য? ভুল মানুষটার জন্য! কেন ভুল মানুষের জন্য কাঁদবে নাহিদা? তার অনুভূতি তো মূল্যহীন নয়! জল উপচে পড়া চোখগুলো পরক্ষণেই রাগান্বিত চিত্র করায়ত্ত করল। ফোনটা বিছানায় ছুড়ে আলমারির সব কাপড়চোপড় বের করল নাহিদা। এক ছাদের নিচে ভুল মানুষটার সাথে আর নয়!

(চলবে)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে