কালো মেঘের আভাস পর্ব-০৭

0
804

#কালো_মেঘের_আভাস
[পর্ব – ৭]
লেখক – শহীদ উল্লাহ সবুজ

মেঘলার অপেক্ষা করে সবাই বসে আছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই মেঘলা চলে আসে। আর সবার সামনে এসে মেঘলা মাথা নিছু করে দাঁড়িয়ে থাকে।

নীলা মেঘলার কাছে উঠে চলে গেলো। আর মেঘলার কাধের উপরে হাত রেখে বলল — কিরে তোকে এমন দেখাচ্ছে কেন? তোর মুখ এতো শুখনো দেখাচ্ছে কেন?

— কিছু হয়নি।

— আচ্ছা কাবিন নামা এনেছিস?

সাথে সাথে মেঘলা মাথা নিছু করে দাঁড়িয়ে থাকে নিশ্চুপ হয়ে।

— কিরে? কাবিন নামা দেখা।

— নীলা আমার বাসা থেকে আমার কাবিন নামা কেউ চুরি করে নিয়ে গেছে।

— কি?

— হুম।

অর্ণবের বাবা বলল — এই মেয়েটা আবার শুরু করছে নতুন নাটক। তোমার কাবিন নামা কেউ চুরি করে তার কী লাভ হবে? এটা কী বাড়ির দলিল নাকি? মানে তুমি আমাদের যা বলবে আমরা তাই বিশ্বাস করব? আমাদের বোকা পেয়েছ তুমি?

অর্ণব — বাবা। ওনাকে বলতে দাও।

অর্ণব এবার মেঘলার কাছে এসে বলল — আপনি আমাদের পুরো ঘটনা খুলে বলুন।

— কাল আমি আমার বাসায় গিয়ে দেখি আমার বাসার দরজা খোলা। কেউ চাবি দিয়ে আমার বাসার দরজা খুলে ভিতরে যায়। আর আমার বিছানার নিচেই ছিল আমাদের বিয়ের কাবিন নামা। আমি সব যায়গায় খুজলাম কিন্তু কোথাও খুঁজে পাইনি।

— আপনার বাসার চাবি কার কার কাছে থাকে?

— একটা তো আমার বাইয়ের কাছে থাকে। কারণ ও মাঝে মাঝে বাসায় আসে। হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করে। আর একটা আমার কাছে,,

এই কথা বলে মেঘলা কোমরে হাত দিয়ে দেখে তার কোমরের চাবিটা নেই।

— কি হয়েছে? আপনি খুজতেছেন?

— আমার চাবি! আমার চাবি তো সব সময় আমার কোমরে থাকে। এখন খুঁজে পাচ্ছিনা কেন?

— আসল কাহিনি এবার বুঝতে পারছি। আপনি নিজেকে অনেক চালাক ভাবেন তাইনা?

— অর্ণব আমাকে বিশ্বাস করো। আমি মিথ্যে কথা বলছিনা।

— বাবা, প্রমাণ হয়ে গিয়েছে। এখন আমার আর কোনো সন্দেহ নেই যে উনি মিথ্যা কথা বলছে না।

— অর্ণব!

— অনেক সহ্য করছি আর। আপনি আমাদের অনেক সময় নষ্ট করেছেন অহেতুক। বাবা কাজী সাহেবকে কল দিয়ে আসতে বলুন। আর নীলাকে বিয়ের জন্য রেডি করুন। আজকেই বিয়ে হবে।

নীলার বাবা নীলাকে নিয়ে ভিতরে চলে গেলো। নীলা খুব খুশি। অর্ণব রেগে অন্য একটা রুমে চলে গেলো। অর্ণবের বাবা ফোন নিয়ে বাহিরে চলে গেলো। মেঘলা দাঁড়িয়ে কান্না করতে থাকে। আর সে তার অতীতের কথা মনে করতে থাকে।

ফ্ল্যাশব্যাক
__________________

অর্ণব আর মেঘলার বিয়েটা পারিবারিক ভাবেই হয়। মেঘলা বাসর ঘরে বসে অপেক্ষা করছে অর্ণবের জন্য। সকল অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে অর্ণব বাসার ঘরে প্রবেশ করে। মেঘলা উঠে অর্ণবের পায়ে সালাম করে আবার খাটের উপরে গিয়ে বসে থাকে।
অর্ণব খাটের উপরে গিয়ে বসে। অর্ণব এবার মেঘলার ঘোমটা টা সরিয়ে মেঘলার দিকে তাকায়। তাকাতেই অর্ণব আর মেঘলার থেকে তার চোখ ফেরাতে পারছেনা।

— কী দেখছেন এই ভাবে?

— তোমাকে। আমার ঘর তোমার আলোয় আলোকিত হয়ে গিয়েছে।

অর্ণবের কথা শুনে মেঘলা লজ্জা পেয়ে যায়। এবার অর্ণব মেঘলাকে বলল — মেঘলা আমি চাই তুমি আমার এই পরিবারকে আলোকিত করে রাখবে। সবার মন যুগিয়ে থাকবে। আমার পরিবার খুব একটা বড়না। শুধুই আমার বাবা-মা আছে। তুমি তাদের নিজের মা-বাবার মতো দেখবে। দুজনেই মাটির মানুষ। তুমি তাদের সাথে থাকলেই বুঝতে পারবে। দুজনেই আমাকে খুব বেশি ভালোবাসে। আমি চাই তারা তোমাকেও ভালো বাসুক। তারা তোমাকে বউ মনে না করে মেয়ে মনে করুক। মেঘলা আমি জানি তুমি পারবে।

— হ্যাঁ। আমি চেষ্টা করব। আপনি শুধুই আমার পাশে থাকবেন। আমার ভুল দেখলে আমার ভুল গুলো ধরিয়ে দিবেন।

— আচ্ছা এবার তোমার কথা বলো। আর হ্যাঁ! তুমি আমাকে তুমি করেই বলবে। আপনি করে বলার কোনো প্রয়োজন নেই।

— আমি বেশি কিছু চাইনা। আমি তোমার ভালোবাসা সম্মান এগুলো চাই। আমার তার চেয়ে বেশি কিছু দরকার নেই। তুমি আমার পাশে থাকলেই হবে।

— হ্যাঁ, আমি তোমার আসি। আর সারাজীবন আমি তোমার লাশে থাকব।

দু’জনে আরো কিছুক্ষণ নিজেদের মধ্যে কথা বলে ঘুমিয়ে পড়ে। দেখতে দেখতে বিয়ের কয়েকদিন কেটে যায়। মেঘলা এই পরিবারকে নিজের পরিবারের মতো ভালোবাসে। আর অর্ণবের বাবা-মা ও নীলাকে তাদের মেয়ের মতই দেখে। দুপুরে সবাই খাবার খেতে বসে। মেঘলা সবার জন্য খাবার রেডি করে দিচ্ছে।

হেলাল সাহেব বলল — বউমা তুমিও আমাদের সাথে বসে খাবার খেয়ে নাও।

— না বাবা আপনারা খেয়ে নিন আমি একটু পরে খাবো।

সবাই খাওয়া দাওয়া শেষ করে যে যার রুমে চলে গেলো। দেখতে দেখতে বিয়ের তিন মাস পার হয়ে গেলো। মেঘলা এই বাসায় অনেক বেশি খুশিতে আছে। বাসার সবাই মেঘলার খুব কেয়ার করে। এমন একটা পরিবার পেয়ে মেঘলা নিজেকে ভাগ্যবতী মনে করে। যেমন স্বামী তেমন শ্বশুর শ্বাশুড়ি। হঠাৎ করে অর্ণব রাতে ঘুমানোর সময় মেঘলাকে বলল — মেঘলা আমাকে কিছুদিনের জন্য অফিসের কাজে চট্রগ্রাম যেতে হবে। ওখানে গেলে কয়েকদিন থাকতে হবে।

অর্ণবের কথা শুনে মেঘলার মন খারাপ হয়ে গেলো। ব্যাপারটা বুঝতে পেরে অর্ণব মেঘলার গালে হাত দিয়ে বলল — মন খারাপ করার কি আছে? মাত্র কয়েকটি দিনের ব্যাপার। আমি তো আবার ফিরে আসবো।

— আমার কেন জানি ভালো লাগছেনা। না গেলে হয়না?

— আমি না গেলে হবেনা। আমাকেই যেতে হবে। তোমাকে রেখে আমার ও যেতে ইচ্ছে করছেনা। কিন্তু কি করব বলো? যেতে হবেই। কয়েকটি দিন,তারপর আমি আবার তোমার কাছে ফিরে আসবো।

মেঘলার মন ভালো করার জন্য মেঘলার কপালে একটা চুমু খায় অর্ণব।

— মা-বাবা আছে তাদের খেয়াল রাখবে। একটা কথা মনে রাখবে তারা যেনো কখনও তোমার ব্যবহারে কোনো কষ্ট না পায়। আর তুমিও নিজের খেয়াল রাখবে।

— তুমি কবে যাবে?

— কাল সকালে। আসলে আজকেই হঠাৎ করে বলল। আমিও আগে থেকে জানতাম না।

কিছুক্ষণ পরে দু’জনেই ঘুমিয়ে পড়ে। পরের দিন সকালে রেডি হয়ে অর্ণব তার বাবা মায়ের থেকে বিদায় নিয়ে মেঘলার কাছে আসে।

–মেঘলা আসছি আমি। নিজের খেয়াল রাখবে। সময় মতো খাবার খেয়ে নিবে।

— হুম, তুমি ঠিক টাইমে খাবার খেও। আর হে পৌছেই কিন্তু ফোন দিবে।

— ঠিক আছে।

অর্ণব এবার মেঘলার কপালে একটা চুমু দিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে পড়ে। হেলাল সাহেব মেঘালাকে নাস্তা খাওয়ার জন্য ডাক দেয়। মেঘলা সেখানে চলে গেলো।

— বাবা আমাকে ডেকেছেন?

— হুম নাস্তা করবেনা? কয়টা বাজে দেখেছো?

— বাবা আপনি আর মা খেয়ে নিন। আমার খিদে নেই।

— এমন করে না মা, আমি জানি তোমার মন খারাপ। কিন্তু তুমি খাবার না খেলে যে অসুস্থ হয়ে পড়বে।

অর্ণবের আম্মু এবার মেঘলাকে তার কাছে ডেকে নিয়ে গেয়ে তার নিজের হাতে খাবার খাইয়ে দেয়। খাবার খেয়ে মেঘলা তার নিজের রুমে চলে গেলো। মেঘলার কাছে কেমন যেনো লাগছে। তার কাছে কিছু ভালো লাগছেনা। মেঘলা এবার অর্ণবের নাম্বারে ফোন দেয়। কিন্তু অর্ণবের নাম্বারে ফোন ঢুকছেনা। ফোন অফ দেখাচ্ছে। অর্ণবের ফোন অফ পেয়ে মেঘলার চিন্তা বাড়তে শুরু করে। মেঘলা কিছুতেই স্থির থাকতে পারছেনা। মেঘলা এবার তার শ্বাশুড়ির কাছে চলে গেলো।

— মা। অর্ণবের নাম্বার অফ কেন? বাবা কোথায়? ওনাকে একটু বলেন অর্ণবের নাম্বারে বা ওর সাথে কাজ করে এমন কাওকে একটা কল দিতে।

— অর্ণবের বাবা তো একটু আগে বেরিয়ে গিয়েছে। একটা ফোন পেয়েই বাসা থেকে বেরিয়ে চলে গেলো। আমাকেও কিছু বলে যায়নি।

মেঘলা এবার অর্ণবের বাবার নাম্বারে ফোন দেয়।

— হ্যালো বাবা, আপনি কোথায়? অর্ণবের নাম্বার বন্ধ কেন?

অর্ণবের বাবা কোনো কথা বললনা। উনি চুপ হয়ে রইলেন।

— বাবা কি হয়েছে আপনি কথা বলছেন না কেন?

— আমি বাসায় এসে কথা বলছি। আমি বাসার দিকে আসছি।

এবার সবাই হেলাল সাহেবের আসার অপেক্ষা করতে থাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই এম্বুল্যান্স এর শব্দ কানে ভেসে আসে মেঘলার। মেঘলা আর তার শ্বাশুড়ি দরজা খুলে বেরিয়ে চলে আসে। বাহিরে এসে দেখে হেলাল সাহেব এম্বুল্যান্স এর ভিতর থেকে বেরিয়ে আসে। মেঘলার বুকের ভিতর কেঁপে ওঠে। মেঘলা এবার হেলাল সাহেবের কাছে গিয়ে বলল — বাবা গাড়ির ভিতরে কে আছে?

হেলাল সাহেব কোনো কথা বললেন না। নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন। মেঘলা গাড়ির দিকে ছুটে গেলো।

চলবে??

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে