#কালো_মেঘের_আভাস
[পঞ্চম পর্ব ]
লেখক – শহীদ উল্লাহ সবুজ
হঠাৎ করে কারোর ফিসফিস শব্দে ঘুম ভেঙে যায় মেঘলার। কেউ মেঘলার কানের কাছে ফিসফিস করে কিছু বলতে থাকে।
— মেঘলা, আমি চাইলে এক্ষনি তোমাকে শেষ করে দিতে পারি। কিন্তু এখন তোমাকে আমি কিছুই করব না। আমি তোমাকে কষ্ট দিয়ে মারব। এতো সহজে আমি তোমাকে মারতে চাইনা। তোমার সাথে আর কি কি হয় শুধুই ওটাই দেখো।
কেবিনের লাইট অফ থাকায় পুরো কেবিন ঘুটঘুটে অন্ধকার হয়ে আছে।
— কে আপনি?
লোকটা আর কোনো কথা না বলে বেরিয়ে পড়ে। কেবিন থেকে। নীলা মেঘলার শব্দ শুনে ওয়াশরুম থেকে তাড়াতাড়ি করে বেরিয়ে আসে। আর সে বের হয়ে দেখে রুমের লাইট অফ করা। নীলা আগে লাইট অন করে।
— মেঘলা কী হয়েছে তোর? তুই কার সাথে কথা বলছিস? আর রুমের লাইট অফ কেন?
— তুই এতোক্ষণ কোথায় চিলি? এই কেবিনে কেউ এসেছিলো আর আমার কানের কাছে এসে কিছু বলে চলে গেছে।
— এই কেবিনে এতো রাতে কে আসবে? আর দরজা তো অফ! তাহলে এখানে কে আসতে পারে?
— আরে আমি একটা ছেলের কণ্ঠ শুনেছি৷
মেঘলা নীলার কাছে সব কিছুই বলল। মেঘলার কথা শুনে নীলা বলল — আরে তুই হয়তো কোনো খারাপ স্বপ্ন দেখেছিস। এখন ঘুমিয়ে পড়।
— নিলয় কোথায়?
— নিলয়কে নিয়ে তোর চিন্তা করতে হবে না। নিলয় আমাদের বাসায় আছে। এখন তুই ঘুমিয়ে পড়।
মেঘলা এবার চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করে কন্তু তার চোখে ঘুম আসছেনা। বার বার অচেনা মানুষটির কথা তার কানে বেজেই চলছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুম নেমে আসে মেঘলার চোখে। দেখতে দেখতে সকাল হয়ে গেলো। নীলা মেঘলার জন্য খাবার নিয়ে আসে। খাওয়া দাওয়া শেষ করে নেয়। বিকালে মেঘলাকে নিয়ে হাসপাতাল থেকে চলে গেলো নীলা।
— নীলা তুই কাল থেকেই ভালো ভাবে ঘুমাতে পারিস নি। তুই তোর বাসায় চলে যা। আর বাসায় গিয়ে কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে নে। আমি আমার বাসায় চলে যাই।
— তুই একা যেতে পারবি?
— হুম আমার কোনো সমস্যা হবে না।
— আচ্ছা ঠিক আছে। আজকে বাসায় গিয়েরেস্ট কর। কাল মনে করে বিয়ের কাবিন নামা নিয়ে চলে আসিস আমাদের বাসায়। সবাই উপস্থিত থাকবে। আমি জানি তুই মিথ্যা কথা বলবিনা। কিন্তু প্রমাণের প্রয়োজন আছে।
— হুম।
— আচ্ছা ঠিক আছে তুই সাবধানে বাসায় যা। আর বাসায় গিয়ে ফোন করিস।
এবার দুজনে দুজনের বাসায় চলে গেলো। মেঘলা বাসায় এসে দেখে তার বাসার দরজা খোলা। মেঘলা তাড়াতাড়ি করে বাসার ভিতরে চলে গেলো। সেখানে গিয়ে দেখে মেঘলার জামাকাপড় সব এলোমেলো হয়ে পড়ে আছে। এটা দেখে মেঘলা অনেক বেশি ভয় পেয়ে যায়। মেঘলা আর দেরি না করে তার সেই কাবিন নামা খুজতে শুরু করে। অনেক খোজাখুজি করেও কাবিন নামা আর খুঁজে পায়নি। মেঘলা খাটের উপরে বসে কান্না করতে শুরু করে। কারণ অর্ণব যে তার স্বামী এটা প্রমাণ করার জন্য শুধুই এই কাবিন নামা আছে। আর কোনো প্রমাণ তার কাছে নেই। নেই কোনো অর্ণবের সাথে তার ছবি। বা অন্য কোনো প্রমাণ। মেঘলা কি করবে বুঝতে পারছেনা। সে অঝোরে কান্না করতে থাকে। বাসায় কেউ এসে হয়তো কাবিন নামা টা নিয়ে গেছে। বাসার সব কিছুই ঠিকঠাক ভাবেই আছে শুধুই কাবিন নামা টা নেই।
মেঘলা এবার নীলার নাম্বারে ফোন দেয়। নীলা ফোন রিসিভ করে।
— মেঘলা বাসায় গিয়েছিস?
মেঘলা কান্নার জন্য কোনো কথা বলতে পারছেনা।
— মেঘলা তুই কান্না করছিস কেন? কী হয়েছে তোর।
— নীলা আমি আমার বিয়ের কাবিন নামা খুঁজে,,,
এই কথা বলতেই ফোন কেটে যায়। মেঘলা আবার নীলার ফোনে ফোন দেয়। কিন্তু ফোন অফ হয়ে গেছে। মেঘলা বার বার কল দিতে থাকে।
ঐদিকে নীলার ফোন অফ হয়ে গেছে ফোনে চার্জ না থাকায়। কারণ দুই দিন হলো নীলা ফোনে চার্জ দিতে পারছেনা। নীলা ভাবতে থাকে বাসায় গিয়ে ফোন চার্জে বসিয়ে মেঘলাকে ফোন দিবে।
মেঘলা আবারও পুরো রুম খুজতে থাকে। কিন্তু সে তার বিয়ে কাবিন নামা খুঁজে পায়না।
ঐদিকে মেঘলা বাসায় পৌছে গেলো। বাসায় আসতেই নীলা সবার সাথে কথা বলতে বলতে ফোনের কথা ভুলেই গিয়েছে। নীলা নিজের রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। ক্লান্ত হওয়ার কারণে তার চোখে ঘুম নেমে আসে। এই দিকে মেঘলা বার বার নীলাকে ফোন করে।
দেখতে দেখতে রাত ১২ টা বেজে গেছে। নীলা এখনও ঘুমিয়ে আছে। নীলার বাবা নীলার রুমে আসে।
— নীলা, নীলা।
নীলার বাবার ডাকে ঘুম ভেঙে যায় নীলার।
— হ্যাঁ বাবা বলো।
— কিরে তোর ফোন অফ কেন? অর্ণব তোকে বার বার ফোন দিচ্ছে।
– উফফ আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম আমার ফোনে চার্জ শেষ হয়ে গিয়েছে। চোখে প্রচুর ঘুম ছিল তাই ঘুমিয়ে পড়ছি।
— এই নে অর্ণবের সাথে কথা বল।
নীলা ফোন হাতে নিতেই তার বাবা রুম থেকে বেরিয়ে চলে গেলো।
— নীলা তোমার ফোন অফ কেন? কখন থেকে ফোন দিচ্ছি। আমার তো খুব চিন্তা হচ্ছিলো তোমার জন্য।
— আর বলোনা ফোনের চার্জ কখন শেষ হয়ে গেছে বুঝতেই পারিনি। বাসায় এসেও ফোন চার্জ দেওয়ার কথা ভুলে গিয়েছি।
— বুঝতে পারছি। আচ্ছা মেঘলার কী অবস্থা এখন? মেঘলা কী তার বাসায় চলে গেছে নাকি তোমাদের বাসায় আছে।
— মেঘলা ওর নিজের বাসায় চলে গেছে।
মেঘলার কথা বলতেই নীলার মনে পড়ে যায় মেঘলা তাকে কল দিয়েছিল। নীলা এবার ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে রাত বারোটার বেশি বাজে।
— অর্ণব মেঘলা আমাকে কল দিয়েছিল। আমি তো ভুলেই গিয়েছি। ওর সাথে কথা বলার সময় ফোন কেটে গিয়েছে। কাবিন নামা নিয়ে কিছু বলছিল।
— ওহ। কথা বলোনি আর?
– কীভাবে বলব? আমি তো বাসায় এসেই ঘুমিয়ে পড়ছি। এখন আবার অনেক রাত হয়ে গেছে। এখন ফোন দেওয়াও ঠিক হবেনা। কালকেই তো মেঘলা আমাদের বাসায় আসবে তখন না হয় জেনে নেওয়া যাবে।
— তুমি খাবার খেয়েছো?
— না বাসায় এসেই ঘুমিয়ে পড়ছি। খাবারের কথা বলতেই আমার খিদে বেড়ে গিয়েছে। খেতে হবে এখন।
— আচ্ছা যাও তাহলে। খাবার খেয়ে এসে ঘুমিয়ে পড়বে। কাল দেখা হবে। বায় বায়।
— ওকে।
এবার নীলা গিয়ে খাবার খেয়ে নেয়। খেয়ে নিজের রুমে এসে ফোন চার্জে বসিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।
ঐদিকে কান্না করতে করতে ঘুমিয়ে পড়ে মেঘলা। আচমকা মেঘলা দেখতে পায় কেউ তার জানালার পর্দার আড়ালে দাঁড়িয়ে আছে। মেঘলা ভয়ে ভয়ে বিছানা থেকে নেমে দাঁড়িয়ে যায়।
— কে ওখানে? কে আছেন ওখানে বেরিয়ে আসুন।
জানালার পর্দার আড়াল থেকে কেউ বেরিয়ে আসে। কিন্তু মাক্স পড়া থাকায় মেঘলা লোকটার মুখ দেখতে পাচ্ছেনা।
— কে আপনি? আর আপনি কেন আমার রুমে এসে লুকিয়ে আছেন?
লোকটা একটা হাসি দিয়ে বলল — আমি তোর জম। আমি তোর মৃত্যু।
— মানে? কে আপনি? আমার কাছে কী চাই আপনার?
— আমাকে চেনার কোনো প্রয়োজন নেই। আর আমি তোর কাছে কি চাই তুই কি এখনও বুঝতে পারছিস না?
— না।
এবার লোকটা একটা চাকু বের করে মেঘলার দিকে এগিয়ে আসতে থাকে। মেঘলা চাকু দেখে ঘাবড়ে যায়। আর সে ভয়ে কান্না করতে শুরু করে।
— আমি আপনার কি ক্ষতি করেছি? আপনি কেন আমাকে মারতে চাইছেন? প্লিজ আমাকে কিছু করবেন না।
— তোকে এখনও ভালোই ভালোই বলছি। তুই অর্ণব আর নীলার জীবন থেকে সরে যাহ। নাহলে তোর কী অবস্থা হবে তুই বুঝতেও পারবিনা।
— অর্ণব আমার স্বামী।
— সেটা তুই ভুলে যা। যদি বেঁচে থাকার ইচ্ছে থাকে তাহলে তুই ভুলে যা অর্ণব তোর স্বামী।
চলবে??