#কালো_মেঘের_আভাস
[চতুর্থ পর্ব ]
লেখক – শহীদ উল্লাহ সবুজ
নীলা আর অর্ণব কিডন্যাপারের দেওয়া ঠিকানায় পৌছে গেলো। কিন্তু তারা সেখানে আশেপাশে কাওকে দেখছে না। পুরো সুনসান এলাকা। আশেপাশে কোনো মানুষজন দেখা যাচ্ছেনা।
— অর্ণব আমার খুব ভয় করছে। এখানে তো কোনো মানুষের আনাগোনা ও নেই।
— ভয় পাচ্ছ কেন? আমি তো আছি এখানে। আচ্ছা তুমি ঐ নাম্বারে এখন একটা কল দাও। দেখো ওদের ফোন অন আছে কি-না।
নীলা ফোন বের করে কল দিতে যাবে এমন সময় নীলার ফোন বেজে ওঠে। নীলা দেরি না করে ফোন রিসিভ করে।
— হ্যালো আমরা তো চলে আসছি। কিন্তু এখানে তো কাওকে দেখতে পাচ্ছিনা।
— আপনাদের পিছনে একটা কালো গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে দেখুন। ওখানে গিয়ে টাকার বেগ রেখে সোজা সামনের দিকে চলে যাবেন।
— মেঘলা কোথায় আগে আমরা মেঘলাকে দেখতে চাই। আমরা আগে দেখব মেঘলা ঠিক আছে কিনা। আপনি যে মেঘলার সাথে খারাপ কিছু করেননি আমরা বিশ্বাস করব কীভাবে?
— মেঘলা ঠিক আছে ওনার কোনো কিছু হয়নি। চিন্তা করবেন না। গাড়িতে টাকা রেখে সোজা সামনের দিকে এগিয়ে গেলেই একটা বাড়ি দেখতে পাবেন ওখানেই মেঘলা আছে।
এই কথা বলে লোকটা ফোন কেটে দেয়। এবার অর্ণবের কাছে থাকা খালি বেগ গাড়ির ভিতরে রেখে দিতেই কেউ গাড়ি চালিয়ে চলে যায়। গাড়িতে থাকা কালো গ্লাস এর জন্য গাড়ির ভিতরে থাকা লোকটাকে কেউ চিনতে পারেনি। এবার দুজনেই সামনের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। কিছুদূর যেতেই একটা পরিত্যক্ত বাড়ি দেখতে পায় । বাড়িটির দিকে তাকালেই বোঝা যাচ্ছে বহুদিন ধরেই এই বাড়িতে কেউ থাকেনা। অর্ণব আর নীলা কোনো কিছু চিন্তা না করেই বাড়ির ভিতরে চলে গেলো। বাহিরের থেকে ভিতরে অবস্থা আরো খারাপ। বাসার ভিতরে মাকড়সার জালে পুরো বাড়ি ঘিরে আছে। অর্ণব আগে আগে থেকে মাকড়সার জাল গুলো সরিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। কিন্তু কোথাও মেঘলার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাচ্ছেনা।
— অর্ণব আমার খুব ভয় করছে। এই বাড়িটা কেমন অদ্ভুত। পুরো সুনসান পরিবেশ। মেঘলাকে ও তো কোথাও খুঁজে পাচ্ছিনা নাকি ওরা আমাদের মিথ্যে কথা বলেছে?
— তুমি একটা কাজ করো, মেঘলার নাম্বারে ফোন দাও। হয়তো ওরা ফোন এখানে কোথাও রেখে গেছে।
নীলা এবার মেঘলার নাম্বারে ফোন দেয়, মেঘলার ফোন বাজার শব্দ তাদের কানে আসে। এবার দু’জনেই সেই শব্দ শুনে এগিয়ে যায়। একটা রুম থেকে ফোনের শব্দ ভেসে আসছে। সেই রুমের ভিতরে গিয়ে দেখে মেঘলাকে অজ্ঞান করে হাত পা বাধা অবস্থায় ফেলে রেখেছে।
নীলা তাড়াতাড়ি করে মেঘলার কাছে চলে গেলো। আর সে মেঘলাকে বার বার ডাকতে থাকে কিন্তু মেঘলা কোনো রেসপন্স করছেনা। মেঘলার এমন অবস্থা দেখে নীলা কান্না করতে শুরু করে।
— অর্ণব মেঘলার কিছু হয়ে যায়নি তো?মেঘলা কোনো কথা কেন বলছেনা? ঐ মেঘলা কথা বল প্লিজ। কি হয়েছে তোর মেঘলা!
অর্ণব মেঘলার কাছে গিয়ে নীলাকে বলল — নীলা ওনাকে এক্ষনি হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। আমাদের এখানে সময় নষ্ট করা ঠিক হবেনা।
এই কথা বলে অর্ণব আর দেরি না করে মেঘলোক কোলে তুলে নেয়৷ আর তারা এই বাড়ি থেকে বেরিয়ে সোজা হাসপাতালে চলে গেলো। মেঘলাকে একটা কেবিনে নিয়ে যাওয়া হলো। ডাক্তার সবাইকে বাহিরে চলে যেতে বলল। ডাক্তার মেঘলাকে দেখেই বুঝতে পেরেছে মেঘলাকে অনেক গুলো ঘুমের ওষুধ এক সাথে খাইয়ে দিয়েছে। ডাক্তার এবার মেঘলার কেবিন থেকে বেরিয়ে আসে।
নীলা ডাক্তারকে দেখে ডাক্তারের কাছে গিয়ে বলল — ডাক্তার সাহেব মেঘলার জ্ঞান ফিরে এসেছে?
— না রোগীর অবস্থা খুব ক্রিটিকাল। ওনাকে এক্ষনি অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যেতে হবে। ওনাকে ওভার ডোজ ঘুমের ঔষধ দেওয়া হয়েছে। এখন সব ঔষধ বের করে আনতে হবে।
— ডাক্তার আপনার যেটা ভালো মনে হয় সেটাই করুন মেঘলা যেনো ঠিক হয়ে যায়। টাকা নিয়ে চিন্তা করবেন না। যত টাকা লাগবে আমরা দেবো।
— তাহলে আমরা অপারেশনের ব্যবস্থা করছি।
এই কথা বলে চলে গেলো। কিছুক্ষণের মধ্যেই মেঘলাকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হলো। ভিতরে মেঘলার চিকিৎসা শুরু হয়ে গেলো। আর বাহিরে নীলা আর অর্ণব দাঁড়িয়ে আছে। নীলা কান্না করেই যাচ্ছে। এদিকে নীলার বাবাও হাসপাতালে চলে আসেন। (নীলা তার বাবাকে আগেই ফোন করে জানিয়ে দিয়েছে তারা হাসপাতালে আছে।)
নীলা কান্না দেখে অর্ণব নীলাকে সান্ত্বনা দেয়। নীলার বাবা এসে নীলাকে বলল — নীলা মেঘলার এখন কি অবস্থা?
— বাবা জানিনা কিছু ভিতরে চিকিৎসা চলছে। অনেক সময় হয়ে গেলো ডাক্তার কেন বের হয়ে আসছেনা?
— চিন্তা করিস না মা। মেঘলা ঠিক হয়ে যাবে।
— বাবা সব কিছুর জন্য আমিই দ্বায়ী। আমি তখন কেন মেঘলাকে একা ছেড়ে দিলাম। আমার জন্য মেয়েটা কতো কষ্ট পাচ্ছে। মেঘলার জন্য আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে বাবা।
— মারে এখানে তোর কোনো দোষ নেই। মাথা ঠান্ডা রাখ। দেখবি সব ঠিক হয়ে গেছে। আল্লাহ ভরসা।
নীলা তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে থাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই ডাক্তার অপারেশন থিয়েটার থেকে বেরিয়ে আসে। নীলার বাবা ডাক্তারের কাছে চলে গেলেন।
— ডাক্তার সাহেব রোগীর কী অবস্থা এখন?
— এখন আর ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। উনি এখন সম্পুর্ণ সুস্থ আছে। রোগীকে কিছুক্ষণ পরে কেবিনে নিয়ে আসা হবে তখন দেখা করতে পারবেন। আর হে রোগীকে কাল বিকালে নিয়ে যেতে পারবেন।
এই কথা বলে ডাক্তার চলে গেলো। ডাক্তারের কথা শুনে নীলা অনেক বেশি খুশি হয়ে যায়। ঘড়িতে রাত ১১ টা বাজে। মেঘলাকে কেবিনে নিয়ে আসা হলো।
এবার সবাই মেঘলার কেবিনে যায়। শুধুই অর্ণব বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে। নীলা মেঘলার দিকে তাকিয়ে দেখে মেঘলার চোখের কোণে পানি জমে আছে। নীলা গিয়ে মেঘলার কপালে হাত রাখতেই মেঘলা চোখ খুলে তাকায়।
— মেঘলা তুই ঠিক আছিস তো?
— হুম।
— কীভাবে হলো এসব?
— আমি রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলাম। রাস্তায় একটা গাড়িও পাচ্ছিলাম না। সেই জন্য হাটা শুরু করলাম। একটু যেতেই একটা কালো গাড়ি এসে দাঁড়িয়ে যায় আমার সামনে। তারপর ওরা আমাকে গাড়ি তে তুলে একটা পুরোনো বাড়িতে নিয়ে এসে আমাকে অনেক গুলো ঘুমের ঔষধ খাইয়ে দেয়। তারপর আমার আর কিছুই মনে নেই। আমি পারিনি দোস্ত প্রমাণ করতে। আমাকে ক্ষমা করে দিস। আমি কথা দিচ্ছি আমি আর কোনো দিন তোদের মাঝে বাধা হয়ে আসবো না। আমি অনেক দূরে চলে যাবো।
— একদম চুপ। তুই কোথায় যাবি? কে আছে তোর? আর তুই কি করে ভাবিস আমি তোকে দূরে চলে যেতে দেব? আর আমি এতোটাও স্বার্থপর না যে তোকে ছাড়া বিয়ে করে নেব।
মেঘলা কোনো কথা বলল না। এবার মেঘলাকে রেস্ট করতে বলে নীলা বাহিরে চলে আসে। মেঘলার সাথে কিছু কথা বলে নীলার বাবাও বেরিয়ে চলে আসে।
এবার সবাই বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে। নীলা অর্ণবের কাছে এসে বলল — অর্ণব তোমাকে ধন্যবাদ। আজ যদি তুমি আমার পাশে না থাকতে তাহলে আমি এসব কিছুই করতে পারতাম না।
অর্ণব একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলল — দূর পা*গ*লি এখানে ধন্যবাদ দেওয়ার কী আছে? আমি তোমার পাশে দাঁড়াতে পারছি সেটাই আমি অনেক খুশি। আর আমি চাই মেঘলা খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠুক।
অর্ণবের কথা শুনে নীলা খুশি হয়ে যায়। আর সে অর্ণবকে বলে — অর্ণব তোমার উচিৎ মেঘলার সাথে একবার দেখা করা।
— এটা ঠিক হবেনা। কারণ উনি আমাকে দেখলে হয়তো উত্তেজিত হয়ে যেতে পারে। তার ছেয়ে ভালো আমার সাথে দেখা না হওয়া।
নীলার বাবা বলল — অর্ণব ঠিক কথাই বলেছে।
— আচ্ছা বাবা আর অর্ণব তোমরা বাসায় চলে যাও। অনেক রাত হয়েছে।
— তুই বাড়ি যাবিনা?
— না বাবা। মেঘলার কাছে আমার থাকাটা জরুরী। নাহলে মেয়েটা তো একা হয়ে যাবে।
কী আর করার। এবার নীলার থেকে বিদায় নিয়ে অর্ণব আর নীলার বাবা হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে চলে গেলো। নীলার বাবাকে অর্ণব একটা গাড়িতে তুলে দেয়।
এই দিকে নীলা মেঘলার কেবিনে চলে গেলো। একটা চেয়ার টেনে মেঘলার পাশে বসে নীলা। নীলা মেঘলার দিকে তাকিয়ে দেখে ঘুমিয়ে আছে। নীলার চোখেও ঘুম নেমে আসছে। রাত প্রায় তিনটা বাজে। হঠাৎ করে নীলার ঘুম ভেঙে যায়। নীলা ঘুমঘুম চোখে ওয়াশরুমের ভিতরে চলে গেলো। হঠাৎ করে মেঘলার কেবিনের লাইট অফ হয়ে গেলো। পুরো রুম ঘুটঘুটে অন্ধকার হয়ে যায়। কারোর নিশ্বাসের শব্দে ঘুম ভেঙে যায় মেঘলার। মেঘলা কারোর গরম নিশ্বাস অনুভব করতে পারে। আর তার কানের কাছে এসে কেউ কিছু বলতে থাকে।
চলবে??